কিশোর হত্যাকাণ্ডে বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্সের দাঙ্গা স্তিমিত হয়ে আসছে। সহিংসতা শুরুর পাঁচ দিন পর দেশটির পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার আভাস মিলছে। নাতির মৃত্যুতে দেশের পরিস্থিতি এমন উত্তাল হয়ে ওঠায় বিব্রত হয়ে পড়েছেন নাহেলের দাদীও। বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার ফ্রান্সের এফএম টিভিকে দেয়া সাক্ষাতকারে নাহেলের দাদী নাদিয়া বলেন, ‘বিক্ষেভের নামে যারা ভাংচুর করছে, তারা আসলে নাহেলের মৃত্যুকে অজুহাত বানিয়ে এগুলো করছে। আমি তাদের বলছি, এগুলো বন্ধ করুন।’
নাদিয়া বলেন, ‘প্রাইভেট কারগুলো তো কারও কিছু করেনি। বাসগুলোও নির্দোষ। আপনারা দয়া করে স্কুলগুলোর ক্ষতি করবেন না। যে বাসগুলো ভাঙছেন, সেগুলোতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মায়েরা চলাফেরা করেন।’
নাহেল হত্যাকাণ্ডে তার ও তার মেয়ের (নাহেলের মা) ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেলেও ওই পুলিশ সদস্যদের কোনো অমঙ্গল তিনি চাননি বলে জানান।
নাতি হত্যায় ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার আস্থা আছে। এমন নৃশংস কাজ যে পুলিশ অফিসার করেছে, তার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। তাই বলে দেশের পুরো পুলিশ বিভাগকে এর জন্য দায়ী করা উচিত নয়।’
‘এ ঘটনায় আমি সত্যিই ব্যথিত!’
সোমবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতা, লুটপাট এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রোববার রাতেও ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ফ্রান্সের পুলিশ। শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৭০০ জনকে।
রোববার প্যারিসের একটি সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দাঙ্গাকারীরা। ওই আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী পুড়ে মারা যান।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৈঠক করেন প্যারিসের মেয়ররা। পরে এক যৌথ বিবৃতিতে সাধারণ জনগণকে দাঙ্গাবিরোধী মিছিলে নামার আহ্বান জানান তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত পাঁচদিন ধরে ভয়াবহ সহিংসতা হচ্ছে দেশজুড়ে। দাঙ্গাকারীরা চুড়ান্ত সহিংস মনোভাব নিয়ে প্রজাতন্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক ধ্বংসের নেশায় মেতে উঠেছে।
‘আমরা স্বীকার করছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনও সমাজ থেকে বৈষম্য নির্মূল করতে পারিনি। কিন্তু এটাও সত্য— দাঙ্গাকারীদের হাতে আমরা দেশকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। ফ্রান্সের শান্তিকামী জনগণ নিশ্চয়ই সেটি চায় না।’
২৭ জুন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপশহর নতেঁ পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাহেল এম.। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছেলেটি বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোয় পুলিশের নজরে পড়ে। সে সময় তাকে থামার ইঙ্গিত দিলেও সে ট্রাফিক চৌকি অতিক্রমের চেষ্টা করে। তারপর চৌকির এক পুলিশ সদস্যের গুলিতে নিহত হয় নাহেল।
নাহেল নিহতের ঘটনায় সেদিন থেকেই শহরটিতে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। সেদিন বিকেলে এক ভিডিওবার্তায় নাহেলের মা মুনিয়া তার ছেলেকে হত্যাকারী পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করেন। ফ্রান্সের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে মুহূর্তেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। পরে রাজধানী প্যারিসসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করে ফ্রান্স সরকার, কিন্তু বিক্ষোভ দাঙ্গায় রূপ নিলে ওই বাহিনীও অপর্যাপ্ত বলে মনে হয়।
পুলিশের বরাতে বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভের পাঁচ দিনে দাঙ্গাকারীরা অন্তত ১০টি শপিং মল, ২০০ সুপারমার্কেট, ২৫০টি তামাকজাত পণ্যের দোকান, ২৫০টি ব্যাংক ও শত শত সরকারি ভবনে হামলা-ভাংচুর ও লুটাপাট চালিয়েছে।
এর মধ্যে শনিবার রাত দেড়টার দিকে প্যারিসের আরেক উপশহর লিলেস রোজেসের মেয়র ভিনসেন্ত জ্যঁব্রুনের বাসভবনে হামলা চালায় একদল দাঙ্গাকারী। গেট ভেঙে মেয়রের বাড়িতে ঢুকে প্রথমে তারা গাড়ি ভাংচুর করে, তারপর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
সেসময় এক জরুরি বৈঠকে টাউন হলে ছিলেন মেয়র। বাড়িটিতে ৫ ও ৭ বছর বয়সী দুই সন্তানসহ ঘুমিয়েছিলেন তার স্ত্রী। দাঙ্গাকারীদের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্তানদের নিয়ে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় এক সন্তান ও তিনি আহত হন।
বিবৃতিতে ঘটনাটি উল্লেখ করে বলা হয়, ‘ফ্রান্স আজ বিপন্ন। দেশের শান্তিকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দাঙ্গাবিরোধী শান্তিকামী মিছিল বের করুন।’
মেয়রদের ওই বিবৃতির পর বিক্ষোভ খানিকটা শান্ত হয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে যেখানে ১৯০০ গাড়ি জ্বালিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা, সেখানে রোববার রাতে গাড়ি জ্বালানোর সংখ্যা নেমে আসে ২৯৭টিতে। বৃহস্পতিবার ৫০০টি ভবনে ভাংচুর ও জ্বালাও-পোড়াও হলেও রোববার ৩৪টি ভবনে ভাংচুর চালায় দাঙ্গাকারীরা।
নতেঁ উপশহরটিতে মূলত আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মরক্কো থেকে আসা অভিবাসীদের বাস। নাহেল ও তার মা মুনিয়াও আলজেরীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম। দুই-তিন প্রজন্ম ধরে ফ্রান্সে বসবাস করলেও এ অভিবাসীদের বরাবরের অভিযোগ- তারা বৈষমের শিকার।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশটির শরণার্থীবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মন্ত্রী হাক্কানি ছাড়া আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
তালেবানের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মন্ত্রী নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম এপিকে জানিয়েছেন, আত্মঘাতী হামলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
তবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, কাবুলের শরণার্থী মন্ত্রণালয়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর হাক্কানি শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি হাক্কানি নেওয়ার্কেরও একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলেন।
আরও পড়ুন:সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আবু মোহাম্মদ আল জোলানি। হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) প্রধান বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শাসক বাশার আল আসাদের অনুগতদের নির্মূলের মাধ্যমে নির্মূলের মাধ্যমে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে।
সূত্রের উল্লেখ করে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে এইচটিএস নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে জোলানির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সরাসরি যোগাযোগ হয়েছিলো কিনা তা জানাতে পারেনি বার্তা সংস্থাটি।
এইচটিএস, সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসসহ সিরিয়ায় সশস্ত্র ইসলামী গোষ্ঠীগুলোর এক ও অভিন্ন শত্রু ছিলেন বাশার আল আসাদ। আসাদ পরিবারের শেষ প্রেসিডেন্টের পতনের পর এখন তাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জাতি ও গোত্রগত বিভেদ ভুলে সিরিয়াকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তোলা।
রাজধানী দামেস্কে থেমে থেমে বিজয় উল্লাস চলছে। এর মাঝেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও কাজ করছে। কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের মাঝে একটি সমন্বয় গড়ে তোলা যায় সেটিই সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের।
তাছাড়া বিদ্রোহীদের মাঝে ঐক্য ধরে রাখাও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস দেরাজোর প্রদেশের কিছুটা অংশ দখল করে তুর্কিয়ে সমর্থিত মিলিশিয়াদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছে। এর মাঝেই পিবিএস নিউজ বলছে, পেন্টাগনের শীর্ষ এক জেনারেল যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি যোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এসব ঘটনা থেকে এমনটা আশঙ্কা করা অমূলক নয় যে ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই বড় আকার নিতে পারে।
ইদলিব-ভিত্তিক ‘সিরিয়ান স্যালভেশন’ সরকারের প্রধান মোহাম্মদ আল-বশিরকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো। এ অবস্থায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া, হিজবুল্লাহ ও বাশার আল আসাদের অনুগতদের নির্মূলের মাধ্যমে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেন আবু মোহাম্মদ আল জোলানি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে কুর্দিদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না তাহরির আল শাম। তারা সহিংসতা এড়িয়ে দেশটিকে গড়ে তোলার ব্যাপারে আশাবাদী।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ব্লিংকেন তাকে জানিয়েছেন- দামেস্কে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমারা ভবিষ্যতে এইচটিএস প্রধান আবু মোহাম্মদ আল জোলানির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
গত দুই দিনে সিরিয়ায় ৪৮০টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
বিদ্রোহীদের মাত্র ১২ দিনের তীব্র হামলায় পতন ঘটেছে ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটল আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের।
স্বৈরাচার পতনের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও উচ্ছ্বসিত সিরিয়ার বাসিন্দারা, তবে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তির বদলে দানা বেধেছে উদ্বেগের।
গত দুই দিনে ৪৮০ বার দেশটির কৌশলগত বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এরমধ্যে ১৫টি নৌযান, বিমান-বিধ্বংসী ব্যাটারি এবং বেশ কয়েকটি শহরে অস্ত্র উৎপাদনকারী কেন্দ্রও আছে।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, অস্ত্রের গুদাম, গোলাবারুদের গুদাম, বিমানবন্দর, নৌঘাঁটি ও গবেষণা কেন্দ্রসহ সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, আসাদ সরকারের পতনের পর অস্ত্র যাতে ‘চরমপন্থিদের হাতে’ না যায়, সে জন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি প্রতিরক্ষা অঞ্চল গড়ে তুলতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অধিকৃত গোলান মালভূমিতে উপস্থিতি আরও জানান দিতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:সামরিক আইন পরিচালনায় ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে জেলহাজতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন।
বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার এএফপি এ খবর জানায় ।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করেন এবং সংসদে সেনা ও হেলিকপ্টার পাঠান, কিন্তু পরে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন।
বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় উপর্যুপরি বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দেশটির একাধিক সেনা ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামরিক ট্যাংক দামেস্কের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক ও কাতার পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গোলান মালভূমি একটি আরব ভূখণ্ড এবং ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ড সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। মুখপাত্র এসমাইল বাঘায়ি সতর্ক করে বলেছেন, এই আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ গুরুতর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসী কর্মকাণ্ড সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের প্রতি স্পষ্ট আঘাত। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসরায়েলের দখলদারত্বের নীতি মধ্যপ্রাচ্যে আরও সহিংসতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
এদিকে ইসরায়েল দাবি করছে, বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অস্ত্র যাতে অন্য কোনো শত্রুর হাতে না যায় সে লক্ষ্যে ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকার নির্ধারিত বাফার জোনের বাইরে সিরীয় ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রবেশ করেনি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা বলেছেন, দামেস্ক অভিমুখে ইসরায়েলি ট্যাংকের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব প্রতিবেদন মিথ্যা। আইডিএফের সৈন্যরা বাফার জোনে অবস্থান করছে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাত চায় না। তবে সিরিয়ার সামরিক অস্ত্র যাতে শত্রুর হাতে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে গত তিনদিন ধরে সিরিয়াজুড়ে সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা।
সোমবার রাতে সিরিয়ায় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে দু’শতাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
তবে মঙ্গলবার অন্তত তিনটি নিরাপত্তা সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা বাফার জোন অতিক্রম করেছে।
সিরীয় একটি সূত্র বলেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা ইতোমধ্যে কাতানা শহরে পৌঁছে গেছে। এই শহরটি বাফার জোন থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে ও দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
হোয়াইট হাউসে রোববার দেয়া বক্তব্যে জো বাইডেন বাশারের ক্ষমতাচ্যুতিকে সিরিয়ার রাজনৈতিক উত্থান হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ পুনর্গঠনে সিরীয় নাগরিকদের সামনে ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে। এই কাজে সিরীয় নাগরিকদের সহযোগিতা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।’
সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন সতর্ক করে বলেন, ওয়াশিংটনকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর উত্থানের বিরুদ্ধে সব সময় সজাগ থাকতে হবে।
জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী নতুন করে হামলা চালিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘সিরীয় সরকারের পতন ন্যায়বিচারের মৌলিক ফল। সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ভোগান্তিতে থাকা জনগণের জন্য এই বিজয় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’
পালিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নেয়া প্রেসিডেন্ট বাশারের পরিণতি কী হওয়া উচিত- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেছেন, ‘বাশার আল আসাদকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
আরও পড়ুন:বর্তমানে বিশ্বে মাত্র দু’জন নেতা আছেন। তাদের একজন আমি নিজে এবং অন্যজন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোয়ান এমনটা মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা ইতার তাস।
এরদোয়ান বলেছেন, ‘আমি এটা বলছি না যে কারণ তাদের মধ্যে আমিও একজন আছি। ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় আছি, পুতিনের প্রায় কাছাকাছি। অন্যরা চলে গেছেন। এবং আমরা চাই আমাদের মধ্যে সংলাপ অব্যাহত থাকবে।
‘রাজনীতিতে সংলাপ অব্যাহত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরুন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের পদত্যাগের পর জার্মানিতে রাজনীতিও শেষ হয়ে গেছে।’
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডারকে আমি খুব সম্মান করতাম। আমাদের প্রতিও তার সম্মানবোধ ছিল ভিন্ন রকমের। সত্যিই তিনি ছিলেন খুব ভালো একজন নেতা। ‘যেমন ধরুন- রমজানের সময় তিনি আমাদের ইফতারির টেবিলে বসে কখনও বিয়ার পান করতেন না। তিনি মুসলমানদের প্রতি খুব সম্মান দেখাতেন।’
এরদোয়ান আরও বলেন, ‘শ্রোয়েডারের সঙ্গে আমাদের সংলাপ এখনও চলে এবং তিনি মাঝে মাঝে তুরস্ক সফরে এলে তখনও তার সঙ্গে আমাদের সংলাপ বা আলাপ-আলোচনা হয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য