ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রেনের লাইনচ্যুত বগিতে যাত্রীবাহী অপর ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ২৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন।
ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা বার্তা সংস্থা এএনআইকে শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে প্রদীপের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, দুই ট্রেনের পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হয় মালবাহী একটি ট্রেনও।
ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী এ দুর্ঘটনায় পড়ে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস ও মালবাহী একটি ট্রেন।
ওড়িশার মুখ্যসচিব জানান, কলকাতা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তরে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় পড়া যাত্রীদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে। আশপাশের জেলাগুলোর সব হাসপাতালকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
মুখ্যসচিব জানান, ঘটনাস্থলে রাখা হয়েছে ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার রেসপন্স ফোর্সের তিন ইউনিট, ওড়িশা ডিজ্যাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের ৪ ইউনিট, ফায়ার সার্ভিসের ১৫টির বেশি উদ্ধারকারী দল, ৩০ জন চিকিৎসক, ২০০ পুলিশ সদস্য ও ৬০টি অ্যাম্বুলেন্স।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবিন পট্টনায়েক রাজ্যে এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক পোস্টে জানান, উদ্ধার তৎপরতায় সাহায্য করতে বিমান বাহিনীকে ডাকা হয়েছে।
ক্ষতিপূরণ
রেলমন্ত্রী জানান, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো প্রত্যেকের পরিবার পাবে ১০ লাখ রুপি। মারাত্মক আহত ব্যক্তিদের ২ লাখ রুপি এবং সামান্য আহত যাত্রীদের ৫০ হাজার রুপি করে দেয়া হবে।
দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, রেল মন্ত্রণালয় প্রদেয় অর্থের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল (পিএমএনআরএফ) থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি করে এবং আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার রুপি করে দেয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে জানান, তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং মুখ্যসচিব ও অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
আরও পড়ুন:ভারতের গুজরাটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে শনিবার রাতে বিদেশি মুসলিম ছাত্রদের ওপর উচ্ছৃঙ্খল লোকজন হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, রমজানে তারাবির নামাজ পড়ায় এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন ছাত্ররা। ওই হামলায় আহত হন পাঁচ ছাত্র।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, হামলায় আহত ছাত্ররা আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের।
গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি গুজরাটের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিদেশি ছাত্রদের ভাষ্য, আহমেদাবাদে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে মসজিদ নেই। এ কারণে তারা হোস্টেলের ভেতর তারাবির নামাজ পড়তে জড়ো হন।
তাদের অভিযোগ, নামাজের জন্য জড়ো হওয়ার পরপরই লাঠি ও ছুরি হাতে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক হোস্টেলে ঢুকে তাদের ওপর হামলা চালান এবং কক্ষ ভাঙচুর করেন।
তারা আরও জানান, হোস্টেলের নিরাপত্তারক্ষী উচ্ছৃঙ্খল লোকজনকে আটকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
আফগানিস্তান থেকে ভারতে পড়তে যাওয়া এক ছাত্র বলেন, উচ্ছৃঙ্খল লোকজন স্লোগান দিতে থাকেন এবং ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করেছেন যে, হোস্টেলের ভেতর তাদের নামাজ পড়ার অনুমতি কে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা কক্ষের ভেতরেও আমাদের ওপর হামলা চালান। তারা ল্যাপটপ, ফোন ভেঙে ফেলেন এবং বাইকের ক্ষয়ক্ষতি করেন।’
ওই ছাত্র বলেন, আহত ছাত্রদের একজন করে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও তুর্কমেনিস্তানের। বাকি দুজন আফ্রিকার দুটি দেশের।
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ আসার পর উচ্ছৃঙ্খল লোকজন পালিয়ে যান। আহত ছাত্ররা হাসপাতালে আছেন এবং তারা দূতাবাসকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।’
হায়দরাবাদের এমপি ও অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হস্তক্ষেপ করবেন কি না, তা জানতে চেয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে তিনি লিখেন, ‘কী লজ্জার। মুসলিমরা শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মচর্চা করলেই আপনাদের ভক্তি ও ধর্মীয় স্লোগান চলে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদির রাজ্য। শক্ত বার্তা দেয়ার জন্য তারা কি হস্তক্ষেপ করবেন?’
আরও পড়ুন:লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ভারত। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এ ভোটগ্রহণ আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে চলবে ১ জুন পর্যন্ত। ফলাফল ঘোষণা হবে আগামী ৪ জুন।
শনিবার ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজিব কুমার এ ঘোষণা দেন।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ হবে ১৯ এপ্রিল, দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ ২৬ এপ্রিল, তৃতীয় দফা ৭ মে, চতুর্থ দফা ১৩ মে, পঞ্চম দফা ২০ মে, ষষ্ঠ দফা ২৫ মে এবং সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১ জুন।
আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গিয়েছে, প্রথম দফায় (১৯ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিসগড়, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, লক্ষদ্বীপ, আন্দামান নিকোবার, বিহার, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম ও অরুণাচলপ্রদেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় দফায় (২৬ এপ্রিল) ভোট হবে কেরালা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, আসাম, মণিপুর ও ত্রিপুরায়।
তৃতীয় দফায় (৭ মে) জম্মু ও কাশ্মীর, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ছত্তিসগড়, গোয়া, দাদরা-নগর হভেলি ও দমন-দিউয়ে নেয়া হবে ভোট।
চতুর্থ দফায় (১৩ মে) মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তেলাঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ভোটগ্রহণ হবে।
পঞ্চম দফায় (২০ মে) ভোট হবে লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও মহারাষ্ট্রে।
ষষ্ঠ দফায় (২৫ মে) দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায় ভোট হবে।
সপ্তম দফায় (১ জুন) হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, চণ্ডীগড়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, বিহার, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ুসহ একাধিক রাজ্যের ২৬টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে ওই সময়ের মধ্যে।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর প্রচারের বিরুদ্ধে শক্ত বার্তা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা উচিত।
রাজিব কুমার বলেন, ভুয়া খবর প্রচার আইন অনুযায়ী কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯ (৩) (বি) ধারা প্রতিটি রাজ্যের নোডাল অফিসারদের বেআইনি বিষয়বস্তু অপসারণের ক্ষমতা দিয়েছে।
২০১৯ সালের নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তারা জয় পায় ৩০৩টি আসনে। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পায় ৩৫৩ আসন। ওই নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৯ সালের পর ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল এত বেশি ভোট আর পায়নি।
ওই নির্বাচনে মাত্র ৫২ আসনে জয় পেয়েছিল শতাব্দীপ্রাচীন দল কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট জিতেছিল ৯৮ আসনে।
আরও পড়ুন:ভারতে চলতি বছর অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে শনিবার বিকেলে।
দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) শুক্রবার এ তথ্য জানায় বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসিআইয়ের পোস্ট করা সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়, লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে অনুষ্ঠেয় চার বিধানসভা নির্বাচনের তারিখও আজ ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সময় থেকে নির্বাচনি আচরণবিধি কার্যকর হবে।
এর আগে ২০১৯ সালে সাত ধাপে ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মের মধ্যে লোকসভা নির্বাচন হবে। এর চার দিন পর ফল ঘোষণা করা হয়।
এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে যেসব রাজ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, সেগুলো হলো অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা ও সিকিম। এর বাইরে চলতি বছরের শেষের দিকে ভোট হওয়ার কথা আছে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও সিকিমে।
পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে মঙ্গলবার বেতন না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি।
দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য বেতন না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জারদারি। দেশে দূরদর্শী আর্থিক ব্যবস্থাপনায় উৎসাহ দিতে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় কোষাগারকে চাপমুক্ত রাখাটা জরুরি মনে করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। এ কারণে তিনি বেতন না নেয়াটাকে বেছে নিয়েছেন।
গত ১০ মার্চ পাকিস্তানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন আসিফ আলি জারদারি।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নেয়া মহসিন নাকভিও তার মেয়াদকালে বেতন না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মঙ্গলবার নাকভি লিখেন, চ্যালেঞ্জিং সময়ে সম্ভাব্য সব উপায়ে জাতির সেবা দিতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ।
আরও পড়ুন:ব্যাপক কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে অবশেষে মালদ্বীপ থেকে সৈন্য ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে ভারত। ১০ মার্চ ২৫ জন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে, বাকিদের মার্চ মাস শেষ হওয়ার আগেই ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানা গেছে।
মালদ্বীপভিত্তিক দৈনিক মিহারুর বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
দুপক্ষের সমঝোতা অনুসারে যদিও ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর কথা ছিল আগামী ১০ মে। কিন্তু তার আগেই সৈন্যদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি।
ভারত মহাসাগরের পূর্ব-পশ্চিম শিপিং রুটের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের প্রভাব বজায় রেখেছিল ভারত।
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের সম্মতিতে দেশটিতে ৮৯ জন ভারতীয় সেনা মোতায়েন করে ভারত। ভারত মহাসাগরে চীনের তৎপরতার ওপর নজরদারি করাই ছিল এই সেনা মোতায়েনের মূল উদ্দেশ্য।
মালদ্বীপকে তার সমুদ্রসীমা পর্যবেক্ষণে দুটি হেলিকপ্টার ও একটি প্লেন দিয়েছিল ভারত। সেগুলো পরিচালনায় সাহায্য করতেই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ৮৯ জন সেনা পাঠায় নয়াদিল্লি।
এর পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি, মালদ্বীপের জনবসতিপূর্ণ দ্বীপগুলোতে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয়ার কাজও কছিলেন ওই সেনারা।
কিন্তু ভারতীয় সেনাদের উপস্থিতি মালদ্বীপের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন দেশটির অন্যতম নেতা ও চীনপন্থী রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ মুইজ্জু। এরপর গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মালদ্বীপ থেকে নিজ সেনা সদস্যদের ফিরিতে নিতে ভারতকে আহ্বান জানান তিনি।
সেই সঙ্গে সময়সীমা বেঁধে দেন যে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে ভারতকে তার সব সেনা মালদ্বীপ থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে। পরে এ বিষয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে এক বৈঠকের পর এই সময়সীমা ১০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করেন তিনি।
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে কৌশলগত দিক থেকে নয়াদিল্লির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল মালদ্বীপ। তবে মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর থেকে একদিকে এই সম্পর্কে শীতলতা এসেছে, অন্যদিকে বেড়েছে এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা।
গত জানুয়ারিতে চীন সফরে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ মুইজ্জু। সেখানে বেইজিংয়ের সঙ্গে মালদ্বীপের অবকাঠামো, জ্বালানি, সমুদ্র গবেষণা ও কৃষি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষ করে এসেছেন তিনি।
অন্যদিকে ভারত গত মাসে ঘোষণা দিয়েছে এখন থেকে নিজেদের লাক্ষাদ্বীপ অঞ্চলে নৌবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করবে দেশটি।
মালদ্বীপ থেকে লাক্ষাদ্বীপের দূরত্ব মাত্র ১৩০ কিলোমিটার।
মালদ্বীপ বা ভারতের কর্তৃপক্ষগুলো থেকে এখন পর্যন্ত সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তবে মিহারু দাবি করেছে, মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন:ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশজুড়ে বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। দেশটির সংসদে এ বিষয়ক একটি বিল পাস হওয়ার চার বছর পর তা কার্যকর করা হচ্ছে।
সোমবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সিএএ কার্যকর করার কথা জানায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ পাস করে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় চান, তাহলে তা দেবে ভারত। তবে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, কেবল তারাই পাবেন এ সুবিধা।
আনন্দবাজার অনলাইনের খবরে বলা হয়, আইনে পরিণত হলেও প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে সিএএ আইনে ধারা-উপধারা যুক্ত হয়নি। ফলে বাস্তবে এ আইন কার্যকরও হয়নি।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের ছয় মাসের মধ্যে আইনের নির্দিষ্ট ধারা-উপধারা যুক্ত করতে হয়। অন্যথায় লোকসভা কিংবা রাজ্যসভার নির্দিষ্ট কিছু কমিটির কাছ থেকে আইনটি পাস করতে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়।
সে সময় সংসদের দুই কক্ষেই পাস হওয়ার পর ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও সিএএ বিলে অনুমোদন দিয়েছিলেন। আইনটি কার্যকর করতে ২০২০ সাল থেকে সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে আসছিল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বিজেপি সরকারকে কটাক্ষও করছিল বিরোধী দলগুলো।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশটিতে সিএএ কার্যকর হবে। শুধু তা-ই নয়, শিগগিরই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি কথা জানান তিনি।
তবে সম্প্রতি মতুয়া অধ্যুষিত নদীয়া এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার সভায় এসে সিএএ নিয়ে মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অবশ্য বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, ‘ভোটের আগেই সিএএ কার্যকর হচ্ছে। ভোট ঘোষণার এক-দুদিন আগে হলেও এটি কার্যকর হবে।’
এর আগে পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সিএএ-এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াই অনলাইনে হবে। সেখানে আবেদনকারীদের শুধু জানাতে হবে তারা কবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।’
সিএএ কার্যকর করা নিয়ে দীর্ঘ দিন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেই টালবাহানা চলছিল। করোনা মহামারীর আগে থেকেই ভারতের নানা প্রান্তে সিএএ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনে ভারতজুড়ে শতাধিক মানুষ হারান।
বিজেপি সরকারের বিরোধী দলগুলোই প্রধানত এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল। পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলো ‘ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে’ এ আইন কার্যকরের ঘোর বিরোধী।
এখন পর্যন্ত লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি ভারতের নির্বাচন কমিশন। তার আগেই সিএএ কার্যকর করল দেশটির সরকার।
বেটিংয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবারই জড়িয়েছে বাংলাদেশি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নাম। এবার এমন এক কাণ্ডে যুক্ত হলো তার বোনের নামও।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে ও আজ তাক-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রচলিত ‘ইলেভেন উইকেট ডট কম’ (11wicket.com.bd) নামে একটি অনলাইন বেটিং অ্যাপে বিনিয়োগ করেছেন সাকিবের ছোট বোন জান্নাতুল ফেরদৌস রিতু।
অ্যাপটির অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী হলেন ভারতীয় বাজিকর সুরুজ চোখানি। তার সঙ্গেই অংশীদার ছিলেন জান্নাতুল। সুরুজ চোখানি বর্তমানে ভারতে আটক রয়েছেন। সে দেশের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাকে গ্রেপ্তার করেছে। ইডির জেরার মুখে জান্নাতুলের নাম প্রকাশ করেছেন তিনি।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইডি জানায়, গিরিশ তালরেজা এবং সুরাজ চোখানি নামে আরও দু’জনকে তারা ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। বাংলাদেশে ‘ইলেভেন উইকেট ডট কম’ অ্যাপে বিনিয়োগ করেন চোখানি, যেখানে তার সঙ্গী ছিলেন সাকিবের বোন।
ইডি আরও জানায়, চোখানি তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে টিবরেওয়ালস শেয়ারে কয়েক শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কাঠমান্ডুতে ক্যাসিনোতেও বিনিয়োগ রয়েছে তার। দুবাইয়ে হাওয়ালা অপারেটর হরি শঙ্করের খুবই ঘনিষ্ঠ এই চোখানি।
ভারতের ছত্তিশগড় পুলিশের নথিভুক্ত এফআইআর-এর ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ইডি। এক পর্যায়ে বিশাখাপত্তম পুলিশ এবং অন্যান্য রাজ্যের দায়ের করা এফআইআরগুলোও তদন্তের আওতায় আনে তারা।
ইডি দাবি করেছে, কালো টাকা পাচারে মহাদেব অ্যাপের হাত রয়েছে। বেআইনি বেটিং কারবারে এই অ্যাপ যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া ইডি জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া গিরিশের লোটাস ৩৬৫ ব্যবসায় অংশীদারত্ব ছিল মহাদেব অ্যাপের একটি সহায়ক সংস্থার। রতন লাল জৈন ওরফে আমন এবং সৌরভ চন্দ্রকর নামে দুই ব্যক্তি অংশীদার ছিলেন। পুনেতে ওই সংস্থার অফিস ছিল। প্রতি মাসে ওই শাখা থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা লেনদেন করা হতো। ওই শাখায় তল্লাশির সময় এক কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এছাড়া হরিশঙ্কর টিবরেওয়াল বেটিং ওয়েবসাইট ‘স্কাইএক্সচেঞ্জ’-এর জন্য বেআইনি বেটিং অপারেশনে মহাদেব অনলাইন বুকার প্রচারকারীদের সঙ্গে অংশীদারত্বও করেন।
এসব সংস্থা থেকে ভারত এবং ভারতের বাইরে বেশ কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করেছে ইডি।
এর আগে মামলার সঙ্গে জড়িত আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, মহাদেব অনলাইন বেটিং এবং গেমিং অ্যাপ মামলায় অর্থ পাচারের তদন্তে নিতিন তিব্রেওয়াল এবং অমিত আগরওয়াল নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে ইডি।
ইডি জানায়, মহাদেব অ্যাপ একটি হাই-প্রোফাইল কেলেঙ্কারি যা একটি অনলাইন বেটিং প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন গেম যেমন- পোকার, তাস গেম, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, ফুটবল এবং ক্রিকেটের ওপর এই অ্যাপে অবৈধ জুয়া খেলা হয়। এই অ্যাপ দৈনিক ২০০ কোটি রুপি আয় করেছে বলে জানা গেছে।
এই প্ল্যাটফর্মটি নতুন ব্যবহারকারীদের নথিভুক্ত করতে, আইডি তৈরি করতে এবং বেনামি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের একটি অবৈধ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থ পাচার করতে ব্যবহার করা হয়।
মন্তব্য