শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে মিয়ানমারে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৫ জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ১১৭ জনই মুসলিম রোহিঙ্গা সদস্য।
শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ তথ্য জানিয়েছে বলে ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে মৃতের এই তথ্য পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড় মোখায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাখাইন। তবে দেশের অন্যান্য অংশে ঝড়ের কারণে কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা জানা যায়নি।
এতে আরও বলা হয়েছে, আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যোগাযোগের অসুবিধা এবং স্বাধীন তথ্যপ্রবাহের ওপর সামরিক সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে ঘূর্ণিঝড়ে হতাহতের হিসাব ধীরগতিতে হচ্ছে।
সামরিক সরকার জানায়, অনানুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়ানোর তথ্যটি মিথ্যা।
তবে স্বাধীনভাবে নিশ্চিতকরণের অভাবে হতাহতের এবং ধ্বংসের প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
দুর্বল হওয়ার আগে মোখা প্রতি ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার (১৩০ মাইল) বেগে গত রোববার বিকেলে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে শহরের কাছের স্থলভাগে আঘাত হানে।
এই ঘূর্ণিঝড়টি অন্তত এক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দুর্যোগ। এর ফলে আকস্মিক প্রবল বন্যা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, প্রবল বাতাসে ভবনের ছাদ ভেড়ে পড়া এবং সেলফোন টাওয়ারগুলো ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ধ্বংসাবশেষ সড়ানো এবং ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুচ্যূতদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এখন ব্যাপক প্রচেষ্টা চলছে।
তারা আরও জানিয়েছে, রাখাইন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে এবং কাচিনেও (রাজ্য) কিছু ক্ষয়ক্ষতিরও খবর পাওয়া গেছে।
এমআরটিভি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের শুক্রবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনে ১১৭ জন রোহিঙ্গা ছাড়াও চার সেনা এবং ২৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা নিহত হয়েছেন। ঝড় আঘাত হানার আগে কর্তৃপক্ষের সতর্কতা সত্ত্বেও তারা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে অস্বীকার করাকে তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে।
এমআরটিভি জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সিটওয়েসহ ১৭টি টাউনশিপের ১৭টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া এক লাখ ২৫ হাজার ৭৮৯ রোহিঙ্গার মধ্যে ৬৩ হাজার ৩০২ জনকে সরিয়ে নিয়েছে।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সরকারিভাবে সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর সদস্যদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
রোহিঙ্গারা প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে, তবে তারা মিয়ানমারে সরকারিভাবে সংখ্যালঘু হিসেবে স্বীকৃত নয় এবং নাগরিকত্ব ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত।
ঝড়ের কবলে পড়া রোহিঙ্গারা বেশিরভাগই জনাকীর্ণ বাস্তুচ্যুত শিবিরে বসবাস করতেন। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নেতৃত্বে ২০১৭ সালের একটি নৃশংস ‘বিদ্রোহী বিরোধী অভিযানে’ তাদের বাড়িঘর হারানোর পরে তারা ওই স্থানে স্থানান্তরিত হয়েছিল। রোববার ঝড়ের তাণ্ডবে নিচু জমিতে তাদের অস্থায়ী বাসস্থানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০১৭ সালে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
ওসিএইচএ-এর প্রতিবেদনে ঝড়ের জন্য মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি, তবে বলা হয়েছে যে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিসহ হতাহত এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের এখনও তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য হেডওয়ে শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক থেইন শোয়ে শুক্রবার বলেছেন, ৩২ শিশু এবং ৪৬ জন নারীসহ ১৫টি ক্যাম্প ও গ্রামের অন্তত ১১৬ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ কেউ ঝড়ের আগে নিজ বাড়ি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এ তথ্য সঠিক।
যদিও কর্তৃপক্ষ কিছু খাদ্য ও বাসস্থান সহায়তা দিয়েছে, তকে আরও অনেক সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বেসরকারি দাতাদের কাছ থেকে এখনও সাহায্য আসেনি।
থেইন শোয়ে বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষ যদি শিগগিরই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমোদন দেয়, তাহলে এখানকার রোহিঙ্গারা দ্রুত সাহায্য পাবে। যদি প্রবেশের অনুমোদন সীমিত হয়, তাহলে এখানকার মানুষদের আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ওসিএইচএ বলেছে, স্বাস্থ্য ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানির সরবরাহ জরুরি।
সংস্থাটি আরও জানায়, কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের ফলে মিয়ানমারে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ একটি উদ্বেগের বিষয়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছে-আশ্রয়, খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসা সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা। এছাড়া প্লাবিত এলাকায় জলবাহিত রোগের বিস্তার এবং ল্যান্ডমাইন চলাচলের বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
তারা বলছে, ‘ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যার জন্য নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
রাখাইন রাজ্যের মুখপাত্র এবং অ্যাটর্নি-জেনারেল হ্লা থেইন বৃহস্পতিবার বলেছেন, স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য পাঠানোর ওপর কোনও বিধিনিষেধ নেই।
তবে এতথ্যের সত্যতা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।
২০০৮ সালে মিয়ানমারে আঘাত হানান ঘূর্ণিঝড় নার্গিস ইরাবতি নদীর ব-দ্বীপের আশেপাশের জনবহুল এলাকাগুলোকে বিধ্বস্ত করে। সেসময় কমপক্ষে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায় এবং কয়েক হাজার বাড়ি এবং অন্যান্য ভবন বিধ্বস্ত হয়।
২০২১ সালে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা সামরিক সরকারের ত্রাণ দেয়া কর্মসূচির ব্যাপক কভারেজ করেছে স্টার মিডিয়া।
ভারত, জাপান, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে রোববারের ঘূর্ণিঝড় থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য আর্থিক বা বস্তুগত সহায়তা ঘোষণা করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর বলেছেন, ত্রাণ সামগ্রী বহনকারী তিনটি ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে পৌঁছেছে এবং শুক্রবার একটি চতুর্থ জাহাজ পৌঁছানোর কথা ছিল। ইয়াঙ্গুন ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত এলাকার দক্ষিণ-পূর্বে এবং এখানে একটি প্রধান আন্তর্জাতিক বন্দর রয়েছে।
জয়শঙ্কর টুইটারে পোস্ট করা এক বার্তায় বলেছেন, ‘জাহাজগুলোতে জরুরি খাদ্য সামগ্রী, তাঁবু, প্রয়োজনীয় ওষুধ, পানির পাম্প, বহনযোগ্য জেনারেটর, জামাকাপড়, স্যানিটারি ও স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী রয়েছে।’
আরও পড়ুন:‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হারনাই জেলায় শুক্রবার শ্রমিক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
দেশটির কোয়েটা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা শাহজাদ জাহরি এএফপিকে জানান, হারনাই জেলায় এ বোমা বিস্ফোরণে ১০ খনিশ্রমিক নিহত হন।
একই জেলার আরেক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সেলিম তারিন এএফপিকে বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজের জায়গা থেকে বাজারে কেনাকাটার জন্য যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তাদের গাড়িটি আক্রমণের শিকার হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ছিল একটি আইইডি বিস্ফোরণ।আমরা হামলার তদন্ত করছি।’
হারনাই দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জেলা।
কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে বেলুচ লিবারেশন আর্মি প্রায়ই অন্যান্য প্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বা পাকিস্তানিদের, বিশেষ করে বেলুচিস্তানের পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক হামলার দাবি করে।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সেনাবাহিনীর আলাদা তিন অভিযানে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী প্রদেশের লাক্কি মারওয়াত, কারাক ও খাইবার জেলায় অভিযান চালায়।
এতে আরও বিবৃতিতে বলা হয়, লাক্কি মারওয়াতে অভিযানে ১৮ সন্ত্রাসী নিহত ও ছয়জন আহত হন। কারাক জেলায় আরও ৮ সন্ত্রাসী নিহত হন।
সেনাবাহিনী আরও বলেছে, তাদের তৃতীয় অভিযানটিতে গোষ্ঠীটির নেতাসহ ৪ সন্ত্রাসী নিহত ও দুজন আহত হন।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
এলাকায় অন্য সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নির্মূল করতে একটি ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালানো হচ্ছে।
সেনাবাহিনী বলেছে, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিপদ নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
আরও পড়ুন:ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে।
তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
পুলিশ জানায়, একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহকর্মীর কাজ করতেন ওই নারী। বৃহস্পতিবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
বাহিনীটি আরও জানায়, শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা একটি নির্জন এলাকায় নারীর মৃতদেহ দেখতে পান। তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেন।
কর্ণাটক থেকে পিটিআই শনিবার এ খবর জানায়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রাণ হারানো নারী বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি ছয় বছর ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন।
তার কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তবে তার স্বামীর বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে এবং তিনি মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।
ওই নারী বৃহস্পতিবার তার সহকর্মীকে বলেছিলেন, তার কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে এবং দেরি হতে পারে। তাই সহকর্মীকে বলেন তাকে ছাড়াই চলে যেতে। তবে বাড়ি ফিরতে নারীর দেরি হলে তার স্বামী রামমূর্তি নগর থানায় অভিযোগ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী স্বেচ্ছায় কোনো নির্জন জায়গায় গিয়েছিলেন পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার মাথায় গুরুতর জখমের চিহ্ন ছিল।
তথ্য পাওয়ার পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পূর্ব বিভাগ পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) দেবরাজ।
আরও পড়ুন:ভারতের মধ্যাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১২ মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।
নয়াদিল্লি মাওবাদীদের দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা দমনে পদক্ষেপ জোরদার করেছে। শুক্রবার পুলিশ এই খবর জানায়।
কয়েক দশকের মাওবাদী সহিংসতায় ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হন।
বিদ্রোহীদের দাবি, তারা প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সহিংসতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছত্রিশগড়ের বিজাপুর জেলার বন-জঙ্গলে বৃহস্পতিবার এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পি. এএফপিকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১২ মাওবাদী নিহত হয়েছে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই শতাধিক মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সরকার আশা করছে ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্রোহীদের দমন করা সম্ভব হবে।
বিদ্রোহীরা গত কয়েক বছরে সরকারি সেনাদের টার্গেট করে বেশ কিছু প্রাণঘাতী হামলা চালায়।
চলতি মাসের গোডার দিকে রাস্তায় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ৯ ভারতীয় সেনা নিহত হন।
আরও পড়ুন:ভারতের মুম্বাইয়ে নিজ বাসায় অনুপ্রবেশকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সাইফ আলী খান।
স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রাত আড়াইটায় একজন অনুপ্রবেশকারী বাসায় ঢুকে সাইফ আলীকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করে। বর্তমানে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার চলছে।
হাসপাতালকর্মীরা বলছেন, সাইফ আলী খান এখন বিপদমুক্ত। রাতে তার নিউরো সার্জারি করা হয়েছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি চলছে।
এ ঘটনায় বান্দ্রা থানায় একটি এজাহার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, সাইফ আলী যখন বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন একজন অনুপ্রবেশকারী চুপিসারে তার বাসায় ঢোকেন। এ সময়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সাইফের হাতাহাতি হয়।
এরপর সাইফ আলী খানকে ছয়বারের বেশি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান অনুপ্রবেশকারী।
এক বিবৃতিতে লীলাবতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয়টি আঘাতের মধ্যে দুটি তার মেরুদণ্ডের কাছে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
এরই মধ্যে তার বাসার তিন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত করছে মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
এক বিবৃতিতে সাংবাদিক ও ভক্তদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে সাইফ আলী খান টিম।
এতে বলা হয়, ‘এটি এখন পুলিশের কাজ। আমরা আপনাদের হালানাগাদ তথ্য জানিয়ে দেব।’
কারিনা কাপুর খান টিমও একই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো আছেন।’
আরও পড়ুন:নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই শনিবার বলেছেন, তিনি তার জন্মভূমি পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে ‘অভিভূত’ ও ‘আনন্দিত’।
ইসলামি বিশ্বে নারী শিক্ষাবিষয়ক বিশ্বব্যাপী এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।
ইসলামাবাদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ২০১২ সালে স্কুলছাত্রী মালালাকে পাকিস্তানি তালেবানরা গুলি করে এবং এরপর তিনি বিদেশে চলে যান। বিদেশে যাওয়ার পর মাত্র কয়েকবার তিনি দেশে আসেন।
রাজধানী ইসলামাবাদে সম্মেলনে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে আমি সত্যিই সম্মানিত, অভিভূত ও আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দুই দিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন শনিবার সকালে। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একত্রিত হবেন।
স্থানীয় সময় রোববার ইউসুফজাইয়ের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এক্সে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমি সকল মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকার রক্ষার বিষয়ে কথা বলব। আফগান নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য কেন তালেবান নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে, সে ব্যাপারেও বলব।'
দেশটির শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্দিকী এএফপিকে জানান, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তালেবান ইসলামাবাদের এ আমন্ত্রণে কোনো সাড়া দেয়নি।
আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে কঠোরভাবে ইসলামী আইন আরোপ করেছে। জাতিসংঘ একে ‘লিঙ্গ বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তান তীব্র শিক্ষা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। দেশটিতে দুই কোটি ৬০ লাখের বেশি শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে। তাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যের কারণে স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রত্যন্ত সোয়াত উপত্যকার একটি স্কুল বাসে ২০১২ সালে পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের হামলার পর ইউসুফজাই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।
পরবর্তী সময়ে তিনি নারী শিক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য