ভারতে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনে কোনো জোটের সঙ্গে না গিয়ে এককভাবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলোর জোট গড়া নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জনগণের সমর্থন নিয়ে এককভাবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেয়া মমতা কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী) তথা সিপিএম ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির অভিযোগ করেন।
পশ্চিমবঙ্গের সাগরদিঘিতে (যেখানে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে তৃণমূলকে হারিয়েছে কংগ্রেস) কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির পাশাপাশি সিপিএম ও কংগ্রেস ‘সাম্প্রদায়িকতার কার্ড’ খেলেছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূলপ্রধান।
তার ভাষ্য, বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার কার্ড খেলেছে প্রকাশ্যে। আর কংগ্রেস ও সিপিএম আরও বড় পরিসরে এ খেলা খেলেছে।
ওই নির্বাচন তৃণমূলের জন্য শিক্ষা জানিয়ে দলটির প্রধান বলেন, কংগ্রেস বা সিপিএমের কথা আর শোনা যাবে না। যারা বিজেপির সঙ্গে জোট করে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া যাবে না।
বিবৃতিতে মমতা আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে আমরা জনগণের সঙ্গে তৃণমূলের ঐক্য দেখব। আমরা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যাব না। জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা এককভাবে লড়ব।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন এনেছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ইমরান খানের পর এবার দলটির নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন ব্যারিস্টার গহর আলী খান। ইমরান খান নিজেই ব্যারিস্টার খানকে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করার কয়েকদিন পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন তিনি।
শনিবার তার দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি জানায় পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওমর আইয়ুব খান।
দলের কয়েকটি পদে নেতাদের দায়িত্ব দিতে শনিবার পিটিআইয়ে ভোটাভুটি হয়। পরে পিটিআইয়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়াজুল্লাহ নিয়াজি নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন।
পিটিআই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পেশাওয়ারে এক ভাষণে গহর আলী খান বলেন, ‘ইমরান খানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘১৯৬০ সাল থেকে পাকিস্তানে বিদ্যমান ১৭৫টি রাজনৈতিক দলের সবাই পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনকে তাদের আন্তঃদলীয় নির্বাচনের বিবরণ প্রদান করে আসছে। তবে কোনো নির্বাচনে কোনো দলকে পিটিআইয়ের মতো এতটা চুলচেরা যাচাই করা হয়নি।
‘জনগণ সবই দেখছে; তারাই এ নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে পিটিআই এবং এই সংগ্রাম করতে গিয়েই আজ কারাগারে বন্দি ইমরান খান।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘নির্বাচনে আমরা সবাইকে পরাজিত করব।’
কেন্দ্রীয় দুই নেতার পাশাপাশি কয়েকটি প্রদেশেও নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছে দলটি। এর মধ্যে বালুচিস্তান প্রদেশে পিটিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মুনির আহমেদ বালুচ, সিন্ধ প্রদেশে হালীম আদিল শেখ, পাখতুনখাওয়া প্রদেশে আলী আমিন গেন্দাপুর খাইবার এবং পিটিআইয়ের পাঞ্জাব প্রদেশের সভাপতি হয়েছেন ইয়াসমিন রশিদ।
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। ক্ষমতা হারিয়েই দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে শতাধিক মামলার শিকার হন তিনি। এর মধ্যে তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় এ বছরের ৫ আগস্ট তিন বছরের কারাদণ্ড হয় ইমরানের। যদিও এ মামলায় তার সাজা স্থগিত রয়েছে, তবে কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁসের আরেক মামলায় বর্তমানে কারাবন্দি তিনি।
আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে ইমরানের মুক্তি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় তার নেতৃত্বে পিটিআইয়ের নির্বাচনে অংশ নেয়া-না নেয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গহর খানকে দলটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:বয়সে সবচেয়ে বড় তাই বিপদেও যেন বড় দায়িত্ব পালন করলেন ভারতের উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে আটকা পড়া গব্বর সিংহ নেগি। সুড়ঙ্গ থেকে একে একে ৪০ জন বেরিয়ে আসার পর, সবার শেষে বেরোলেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার পর উদ্ধারকারীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে গব্বর সিংহের প্রশংসা। তাকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাকি শ্রমিকরাও।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ১৭ দিনের বন্দিদশায় বাকিদের যোগাসন শিখিয়েছেন বয়োজ্যেষ্ঠ গব্বর। বিপদ এবং আতঙ্কের মধ্যেও শ্রমিকরা যাতে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকেন, তা সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গব্বর। সেখানেই তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলছিল।
হাসপাতালের বাইরে থেকেই গব্বরের ভাই জয়মল সিংহ নেগি এনডিটিভিকে বলেন, দাদা বাকিদের বলেছিল, আমি সবার বড়। আমি সবার শেষে সুড়ঙ্গ থেকে বেরোব। দাদা ফিরে আসায় তিনি এবং তাদের পরিবার যে খুশি, সে কথাও জানান জয়মল।
উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গমুখ থেকে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দূরে উত্তরাখণ্ডের পাওড়ি গঢ়ওয়াল জেলায় গব্বরের বাড়ি। তার সাহসিকতার প্রশংসা শোনা গিয়েছে বড়ির লোকেদের কাছ থেকেও।
প্রথমে পাইপের মাধ্যমে, পরে ফোনের মাধ্যমে কয়েক দিন ধরেই গব্বরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন ভাই জয়মল। তার কথায়, দাদা খুব সাহসী। দাদাকে বললাম, উদ্ধারকাজ শুরু হলে তো হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যাবে। তখন কী করবে? বলল, আমি বড়। আমি সবার শেষে বেরোব।
১৭ দিন পর মঙ্গলবার রাতে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪১ জন শ্রমিককে। সবাই সুস্থ রয়েছেন। তবে দীর্ঘ দিন সুড়ঙ্গে বন্দি থাকার কারণে তাদের মনের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সুড়ঙ্গের বাইরে গড়ে তোলা হয়েছিল অস্থায়ী হাসপাতাল। মঙ্গলবার রাতে সুড়ঙ্গ থেকে বের করার পর শ্রমিকদের সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা চলে।এর পর তাদের ৩০ কিলোমিটার দূরে চিনিয়ালিসৌর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই ৪১টি শয্যা তৈরি ছিল। প্রত্যেক শয্যায় ছিল অক্সিজেনের ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন:১৭ দিন ধরে আটকে থাকার পর অবশেষে ভারতের উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হয়েছেন ৪১ শ্রমিক। একটা সময় হয়তো তারা ধরেই নিয়েছিলেন, আর বেঁচে ফেরা হবে না তাদের। তবে সব আশঙ্কা দূর করে একে একে বেরিয়ে এসেছেন তারা।
কীভাবে কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে এই শ্রমিকরা আটকে পড়ে সময় কাটিয়েছেন, কী খেয়েছেন এ কদিন ধরে- এসব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছে তারা।
ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলা থেকে শ্রমিক হিসেবে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী জমরা ওঁরাও। ধস নামার কারণে বাকি শ্রমিকদের সঙ্গে তিনিও সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় জমরা জানান, ১২ নভেম্বর ভোরে সুড়ঙ্গে কাজ করার সময় একটা বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। তাদের চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ।
জমরার কথায়, আমরা প্রাণ বাঁচাতে পড়িমরি করে দৌড়েছিলাম। লাভ হয়নি। কেউ বেরোতে পারিনি। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকে পড়েছি। সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। খুব খিদে পেয়েছিল। ভয় গ্রাস করছিল। সাহায্যের জন্য প্রার্থনা শুরু করি। কিন্তু আশা ছাড়িনি।
জমরা জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর টানা ২৪ ঘণ্টা অভুক্ত থাকতে হয়েছিল তাদের। তার পর খাবার পাঠায় প্রশাসন। প্রথম বার খাবার হিসেবে এসেছিল মুড়ি এবং এলাচ। সেই খাবার খেয়েই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছিলেন বলে জানান জমরা।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা পর যখন আমরা প্রথম খাবার খেলাম, তখন উপলব্ধি হলো যে বেঁচে আছি। আমরা বুঝতে পারি যে, কেউ ঠিক আমাদের কাছে পৌঁছাবে। আমাদের উদ্ধার করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। আমাদের আশা আরও বাড়ে।
জমরা আরও জানিয়েছেন, কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে সময় পার করতে মোবাইলের গেমই ছিল তাদের ভরসা। মোবাইলে লুডো খেলে অনেকটা সময় পার হয়েছে তাদের। বাইরে থেকে চার্জার পাঠিয়ে দেয়ায় ফোন চার্জ করতে অসুবিধা হয়নি। তবে নেটওয়ার্ক না থাকায়, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। মোবাইলে গেম খেলা ছাড়া একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলে এবং মনোবল বাড়িয়েও সুড়ঙ্গের মধ্যে তারা সময় কাটিয়েছিলেন বলে জমরা জানিয়েছেন।
উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে যে ৪১ জন আটকে ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক। তাদের মধ্যেই ছিলেন জমরা। জমরা জানিয়েছেন, স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে রেখে মাসে ১৮ হাজার টাকার জন্য তিনি ওই সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন।
১৭ দিন পর খোলা আকাশে নিশ্বাস নেয়ার পর জমরা বলেন, ‘আমি ভাল আছি। আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং ঈশ্বর আমাদের শক্তি দিয়েছেন। এটাও বিশ্বাস রেখেছিলাম যে, যেহেতু ৪১ জন আটকে রয়েছি, তাই কেউ ঠিক আমাদের উদ্ধার করবে। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করছিলাম। যারা ১৭ দিন ধরে লাগাতার পরিশ্রম করে আমাদের উদ্ধার করেছেন, তাদের ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন:
মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে নির্মাণাধীন ভবন ধসে তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ আছেন চারজন।
নিউ স্ট্রেইট টাইমসের বুধবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, পেনাংয়ের বাতু মংয়ে ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ড অফিসের কাছে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পেনাংয়ের ডেপুটি পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ উসুফ জান মোহাম্মাদ জানান, ভবনে ১৮ জন কর্মী নিযুক্ত ছিলেন। শ্রমিকরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।
তিনজনের মধ্যে ঘটনাস্থলে দুইজনের মৃত্যু হয় এবং পেনাং হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আরেকজনকে মৃত বলে জানান চিকিৎসক। উদ্ধারকারী দল এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া বাকি চারজনকে খুঁজছে।
ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ অপারেশনের সহকারী পরিচালক খায়েরি সুলাইমান বলছেন, ‘বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও চারজন আটকে আছেন বলে আমাদের ধারণা, তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
সবাইকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা অভিযান বন্ধ করব না, তবে বৃষ্টি বা প্রতিকূল আবহাওয়া থাকলে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।’
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তরাখণ্ডে টানেলে ধসের ১৭ দিন পর অবশেষে মুক্তি। একে একে বের হরে আনা হলো ৪১ শ্রমিকের সবাইকে।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে প্রথম শ্রমিককে বের করে বন্দিদশা থেকে মুক্ত বাতাসে নিয়ে আসা হয়। আর সর্বশেষ জনকে বের করে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টানা হয় রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে।
শুরুতে উদ্ধারকারী দলের কর্মকর্তারা জানান, একেজনকে বের করতে মোটামুটি পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মতো লাগছে। সবাইকে টানেল থেকে বের করতে সব মিলিয়ে তিন ঘণ্টার মতো লেগে যাবে। তবে এক ঘণ্টার মধ্যেই তারা কাজ সমাপ্ত করতে সমর্থ হন।
ঘটনাস্থলে আটকে পড়াদের স্বজনসহ উপস্থিত ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বের করে আনতে ৬০ মিটার লম্বা একটি পাইপ স্থাপন করা হয়। এই পাইপের মধ্যে দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি চাকাচালিত স্ট্রেচারে করে শ্রমিকদের বাইরে নিয়ে আসা হয়।
শ্রমিকদের উদ্ধারে প্রথমে ওই পাইপ দিয়ে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কয়েকজন উদ্ধারকারী টানেলের ভেতরে পৌঁছান। বিশেষ ওই স্ট্রেচারে করে কীভাবে বের হতে হবে- সে ব্যাপারে আটকে পড়া শ্রমিকদের নির্দেশনা দেন তারা। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করেন তারা। পরে শ্রমিকদের একেক করে স্ট্রেচারে শুইয়ে দেওয়া হয় আর বাইরে থেকে স্ট্রেচার টেনে টেনে তাদের বের করে আনা হয়।
গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামে। এ ঘটনায় ভেতরে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। এতদিন ধরে তাদের বের করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে তাদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই।
খোঁড়ার সময়ে গত শুক্রবার নতুন বাধা আসে। ধ্বংসস্তূপের ভেতরের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায় আমেরিকান খননযন্ত্র। ফলে উদ্ধারকাজ থমকে যায়।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুসারে, উদ্ধার করার আগপর্যন্ত সুড়ঙ্গের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল। পাইপের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা চলছিল; পৌঁছে দেয়া হচ্ছিল খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
সুড়ঙ্গে থাকাকালে উত্তরকাশীর শ্রমিকদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ্যে আসে গত মঙ্গলবার। পাইপের মাধ্যমে ক্যামেরা পাঠান উদ্ধারকারীরা। সেখানেই দেখা যায় সুড়ঙ্গের ভিতর কীভাবে, কোন অবস্থায় রয়েছেন তারা।
খননযন্ত্র ভেঙে যাওয়ায় দুইভাবে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ নতুন করে শুরু হয়। খননযন্ত্রের সব টুকরোগুলো সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনার পর খনি শ্রমিকরা সেখানে ঢুকে যন্ত্র ছাড়াই খোঁড়া শুরু করেন। ১০-১২ মিটার পথ সেভাবেই খুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা ছিল। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘ইঁদুর-গর্ত’(র্যাট হোল) প্রক্রিয়া। ইঁদুরের কায়দায় গর্ত খুঁড়ে সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের বের করার পরিকল্পনা করা হয়।
এ ছাড়া সুড়ঙ্গের উপর দিক থেকে উল্লম্বভাবে খোঁড়ার কাজও শুরু হয়েছিল। ৮৬ মিটারের মধ্যে মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল ৪২ মিটার।
পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স, ওষুধপত্র আগে থেকেই শ্রমিকদের জন্য ঘটনাস্থলে মজুত রয়েছে; প্রস্তুত রয়েছে অস্থায়ী হাসপাতালও।
দরকার হলে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাদের ঋষিকেশ এমসে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। ৪১ জনের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলেই জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ভারতের উত্তরাখণ্ডে সুড়ঙ্গ ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপের ৫৭ মিটার খুঁড়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছেছেন উদ্ধারকারীরা।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির বরাত দিয়ে এনডিটিভির মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ধসে পড়া টানেলের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে ৯০ সেন্টিমিটার ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে একে একে বের করা হবে শ্রমিকদের। আশা করা হচ্ছে ৪১ জন শ্রমিকের সবাই সুস্থ আছেন।
টানেলের প্রবেশ মুখে একটি অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি শ্রমিককে পরীক্ষা করা হবে এবং প্রয়োজনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হবে।
ধসে পড়া টানেলের মধ্য দিয়ে শনিবার ড্রিলিং করার সময় অগার মেশিনের ব্লেডগুলো ধ্বংসস্তূপে আটকে যায়। এর পর কর্মীরা শাবল-গাঁইতি ব্যবহার করে খননকাজ শুরু করেন বলে জানায় দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ড্রিলিং মেশিনের যে টুকরোগুলো সুড়ঙ্গে আটকে ছিল সোমবার সকালে তা সরানো হয়। এর পর শাবল-গাঁইতি নিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকেন উদ্ধারকারীরা।
চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেলের ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি অংশ গত ১২ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে ভেঙে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে থানায় খবর দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত দেয় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তরাখণ্ডে সুড়ঙ্গ ধসের ঘটনায় ধ্বংসস্তূপের আর মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিটার পথ খুঁড়লেই ভেতরে আটকা পড়া ৪১ শ্রমিকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির বরাত দিয়ে হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, টানেলের প্রবেশপথ থেকে প্রায় ৫৭ মিটার খনন করে ভেতরে একটি পাইপ প্রবেশ করিয়ে আটকা পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাতে হবে। মঙ্গলবার সকালে উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের প্রায় ৫২ মিটার খনন করতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত রাতে (সোমবার) সফলভাবে কাজ করেছেন কর্মীরা, খননকাজে কোনো বাধা ছিল না। এখন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মিটার যেতে হবে। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে শনিবার ধসে পড়া টানেলের মধ্য দিয়ে ড্রিলিং করার সময় অগার মেশিনের ব্লেডগুলো ধ্বংসস্তূপে আটকে যায়। এর পর কর্মীরা শাবল-গাঁইতি ব্যবহার করে খননকাজ শুরু করেন বলে জানায় দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ড্রিলিং মেশিনের যে টুকরোগুলো সুড়ঙ্গে আটকে ছিল সোমবার সকালে তা সরানো হয়। এর পর শাবল-গাঁইতি নিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকেন উদ্ধারকারীরা।
চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেলের ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি অংশ গত ১২ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে ভেঙে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে থানায় খবর দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত দেয় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য