ইরানে নতুন বছরের প্রথম ২৬ দিনে ৫৫ জনের ফাঁসি কার্যকরা হয়েছে বলে জানিয়েছে নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর)। সংস্থাটি বলছে, পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরতদের ভয় দেখাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে তেহরান।
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে সম্প্রতি ইরানে তিন যুবকের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে একজনের বয়স মাত্র ১৮।
আইএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের প্রথম ২৬ দিনে মাদক মামলার ৩৭ আসামিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। এছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ইরানে ১০৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে আইএইচআর-এর পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোঘদ্দাম বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে ইরান সরকার। কোনো ফাঁসি বরদাস্ত করা হবে না, তা সে রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক।’
সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু হয় গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন থেকেই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে।
বিক্ষোভ থামাতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইরান সরকার ধরপাকড় চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ সংখ্যা উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চীনের মধ্যস্থতায় সাম্প্রতিক মতৈক্যের পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুলাজিজ আল সৌদ।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে রোববার এক পোস্টে আমন্ত্রণের বিষয়টি জানান ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির রাজনীতিবিষয়ক ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ মোহাম্মদ জামশিদি।
তিনি বলেন, এক চিঠিতে ইরানের প্রেসিডেন্টকে সফরের আমন্ত্রণ জানান সৌদি বাদশাহ।
টুইটে জামশিদি লিখেন, ‘প্রেসিডেন্ট রাইসিকে দেয়া চিঠিতে সৌদি আরবের বাদশাহ বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যকার চুক্তিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তাকে (ইরানের প্রেসিডেন্ট) রিয়াদ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’
তিনি লিখেন, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান।
ইরানের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সালমানের আমন্ত্রণকে স্বাগত জানিয়েছেন রাইসি।
শিয়া ও সুন্নি দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় ছিল সৌদি আরব ও ইরান। চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের পর সে শত্রুতা কমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ বাদশাহ সালমান যে চিঠি দিয়েছেন, তাকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
টানা কয়েক দিন বড় পরিসরে আলোচনার পর গত ১০ মার্চ ইরান, সৌদি আরবকে নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয় চীন।
এ চুক্তির আওতায় মধ্যপ্রাচ্যের বড় দুই শক্তি কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপনের পাশাপাশি দূতাবাস ও মিশনগুলো দুই মাসের মধ্যে ফের চালু করতে সম্মত হয়।
আরও পড়ুন:ইউক্রেন সংকট নিরসনের যৌক্তিক পথ খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বলেছেন, এ সমস্যার সমাধান সহজ হবে না।
সোমবার রাশিয়ার মস্কোতে পা রাখার আগে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রুশ সংবাদপত্র রশিসকায়া গ্যাজেটায় লেখা নিবন্ধে তিনি এ কথা বলেন।
শিকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলার পর সৃষ্ট সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের আলোচনার ভিত্তি হতে পারে গত মাসে প্রকাশিত চীনের ১২ দফা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত দফাগুলোতে সব দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান, স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা পরিহার, যুদ্ধবিরতি, শান্তি আলোচনা শুরু, মানবিক সংকট নিরসনসহ বিভিন্ন আহ্বান জানানো হয়।
শি বলেন, ‘(ইউক্রেন) সংকটের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো ও এর রাজনৈতিক সমাধানকে ত্বরান্বিত করতে এই নথি (১২ দফা প্রস্তাব) ইতিবাচক বিষয় হিসেবে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জটিল সমস্যার সহজ কোনো সমাধান নেই।’
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশটির ১২ দফায় যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন শি চিনপিং।
ইউরোপের দুই প্রতিবেশীর সংঘাতে চীন নিজেকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে, তবে দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বজায় রেখেছে।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর প্রথম কোনো বিশ্বনেতা হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শি চিনপিং।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ধার দেয়া হয়েছে। জরুরি তহবিল হিসেবে গত সপ্তাহে এই পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়। সূত্র: এপি
ধার হিসেবে দেয়া এই অর্থের প্রায় অর্ধেক ১৪৩ বিলিয়ন ডলার গত সপ্তাহে ব্যর্থ হওয়া দুটি প্রধান ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংকের হোল্ডিং কোম্পানির কাছে গেছে, যা আর্থিক বাজারে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে৷ তহবিলের বাকি অর্ধেক অন্য কোন কোন ব্যাংক পেয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।
ফেডারেল ব্যাংক জানিয়েছে, দুটি ব্যর্থ ব্যাংকের হোল্ডিং কোম্পানিগুলো ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি) স্থাপন করেছিল, যা উভয় ব্যাংকের দখল নিয়েছে৷ তারা যে অর্থ ধার করেছিল তা তাদের বীমাবিহীন আমানতকারীদের অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। উভয় ব্যাংকের মালিকানাধীন বন্ডগুলো জামানত হিসেবে পোস্ট করা হয়েছিল। এফডিআইসি ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়েছে।
ব্যাংকগুলো বাকি টাকা ধার করেছিল নগদ সংগ্রহের জন্য। অন্তত আংশিকভাবে আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধ করার জন্য, যারা তাদের টাকা তোলার চেষ্টা করেছিল। অনেক মেগা ব্যাংক, যেমন ব্যাংক অফ আমেরিকা গত সপ্তাহান্তে ব্যাংকের ব্যর্থতার পর থেকে ছোট ব্যাংকগুলো থেকে তহবিল প্রাপ্তির প্রতিবেদন করেছে৷
গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে অতিরিক্ত ১৫৩ বিলিয়ন ডলার ধার এসেছে ‘ডিসকাউন্ট উইন্ডো’ নামে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এটি সেই প্রোগ্রামের জন্য একটি রেকর্ড স্তরের পরিমাণ। ব্যাংকগুলো ডিসকাউন্ট উইন্ডো থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত ধার নিতে পারে।
সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সপ্তাহে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাত্র চার বিলিয়ন থেকে পাঁচ বিলিয়ন ধার করা হয়।
ফেডারেল রিজার্ভ রোববার ঘোষণা করা একটি নতুন ঋণ সুবিধা থেকে অতিরিক্ত ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ধার দিয়েছে। নতুন প্রোগ্রামটি ব্যাংকগুলোকে নগদ অর্থ সংগ্রহ ও উত্তোলনকারী যে কোনো আমানতকারীর অর্থ দিতে সক্ষম করে৷
জেপি মরগানের একজন অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি তার গবেষণা নোটে বলেছেন, ‘ফেডারেলের সহায়তা এখন পর্যন্ত ১৫ বছর আগে আর্থিক সংকটের সময় যা ছিল তার প্রায় অর্ধেক। তবে এটি এখনও একটি বড় সংখ্যা।’
ফেডারেল ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া গত সপ্তাহের জরুরি ঋণ দুটি ব্যাংকের পতনের একটি প্রধান কারণকে মোকাবিলা করতে চায়- সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক বিলিয়ন ডলারের আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ ট্রেজারি এবং অন্যান্য বন্ডের মালিকানা যা কম সুদের হার প্রদান করে।
গত বছর ধরে ফেড ক্রমাগতভাবে তার বেঞ্চমার্ক সুদের হার বাড়ানোয় দীর্ঘমেয়াদি ট্রেজারি ও অন্যান্য বন্ডের সমর্পণ বেড়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত নিম্ন-উৎপাদন ট্রেজারিগুলোর মূল্য কমে এসেছে। ফলে ব্যাংকগুলো তাদের ট্রেজারি বিক্রি থেকে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ সংগ্রহ করতে পারেনি।
ফেডের বিশেষ নতুন ঋণদান কর্মসূচির সুবিধা রোববার উদ্বোধন করা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জামানত হিসাবে বন্ড পোস্ট করতে এবং সেগুলো বিক্রির পরিবর্তে তাদের বিপরীতে ঋণ নিতে সক্ষম করে।
নতুন ঋণ সুবিধার জন্য ফেড বলেছে যে এটি জামানত হিসেবে ১৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন পেয়েছে। এটি ধার দেয়া ১১ দশমিক ৯ বিলিয়নের চেয়ে বেশি। ব্যাংক কখনও কখনও ঋণ নেয়ার আগে ফেড জামানত দেয়। এটি পরামর্শ দেয় যে অতিরিক্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দুই ব্যাংক সংকটে পড়ার মধ্যেই সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন হয়েছে।
সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক নতুন তহবিল দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর পরই বুধবার ব্যাংকটির ২০ শতাংশের বেশি শেয়ারের দরপতন হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এক সাক্ষাৎকারে সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আম্মার আল খুদাইরি বলেন, ক্রেডিট সুইসে অংশীদারত্ব বাড়ানো হবে না। আমরা ব্যাংকের ৯ দশমিক ৮ শতাংশের মালিক। আমরা নতুন ব্যবস্থায় যেতে আগ্রহী নই।
বেশ কিছু ভুল পদক্ষেপে গত কয়েক বছরে ক্রেডিট সুইসের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। গত বছর ১৩৩ বিলিয়ন ডলার ক্রেডিট সুইস থেকে তুলে নেন বিনিয়োগকারীরা। সবমিলিয়ে ব্যাংকটির বার্ষিক ক্ষতি ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার সকালে ইউরোপজুড়ে ক্রেডিট সুইচের শেয়ারসূচক নেমে আসে ২ দশমিক ৫ শতাংশে। মঙ্গলবার ব্যাংকের নিরীক্ষক পিডব্লিউসি আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা চিহ্নিত করার পর থেকে শুরু হয় এই সংকোট। সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করে সৌদির ন্যাশনাল ব্যাংক।
এর আগে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি বিপর্যয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাততে চলে যায় এই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংকও।
আরও পড়ুন:সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়া ২২ হাজার নাগরিককে ক্ষমা করে দিয়েছে ইরান।
স্থানীয় সময় সোমবার দেশটির প্রধান বিচারপতি গোলামহোসেইন মোহসেনি এজেই এ তথ্য জানিয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত মাসের শুরুতে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ‘হাজার হাজার’ বিক্ষোভকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, যাদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতরাও রয়েছেন।
ইরানের প্রধান বিচারপতি এজেই বলেন, এখন পর্যন্ত ৮২ হাজার মানুষকে ক্ষমা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২২ হাজার বিক্ষোভকারী রয়েছেন।
এ ক্ষমার মেয়াদ কত দিন এবং বিক্ষোভকারীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাননি এজেই।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ইরানীয় কুর্দি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানজুড়ে।
এ বিক্ষোভে অংশ নেয় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, যা ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরে ৫ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে নীতির সংস্কার করবে চীন। এক্ষেত্রে বড় বড় নীতির মধ্যে সমন্বয়ের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা আরও প্রসারিত করা হবে। একইসঙ্গে নতুন নতুন খাতের উদ্ভাবন এবং ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধ ও কমিয়ে আনা হবে।
চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার এমন রূপরেখা তুলে ধরেন। দেশটির চতুর্দশ জাতীয় গণ-কংগ্রেস সোমবার সকালে বেইজিংয়ে শেষ হয়েছে।
স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় বেইজিংয়ে গণমহাভবনে এই সংবাদ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন লি কিয়াং। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরিবেশ আরও উন্নত করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের কোম্পানিকে সমান সুযোগ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যোক্তা বা উদ্যোগগুলো যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় তার জন্য একটি ভাল পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। আমরা সব ধরনের বাজার সত্তার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করব। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
চীনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে লি কিয়াং বলেন, ‘২০২৩ সালের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ। তবে এটা পূরণ করা সহজ হবে না। কেননা বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও আশাব্যঞ্জক নয়।’
তিনি জানান, চীন এ বছর অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। অনেক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান। অনিশ্চিত ও অপ্রত্যাশিত অনেক কারণও সামনে এসেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে অর্থনীতি স্থিতিশীল হচ্ছে।
মোট দেশজ উৎপাদন বা প্রবৃদ্ধি কীভাবে স্থিতিশীল করা যায় তা বিশ্বের সব দেশের জন্যই একটি পরীক্ষা বলে মনে করেন লি কিয়াং। তিনি বলেন, ‘এ বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হবে না। এই জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে হবে বলেও মনে করি।’
স্পষ্ট করে জানান, অবশ্যই ম্যাক্রো নীতিগুলোর ভালোভাবে সমন্বয় করা জরুরি। অভ্যন্তরীণ যে বড় চাহিদা তা আরও প্রসারিত করতে হবে।
লি কিয়াং বলেন, চীনের আছে বিশাল বাজার ও চাহিদা। তবে নতুন খাত নির্দিষ্ট করে সেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন করতে হবে। আশা করা যায়, বেসরকারি উদ্যোক্তারা দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবেন।
তিনি জানান, বাজারজাত, আইন প্রণয়ন ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া সব ধরনের কোম্পানির সঙ্গে সমান আচরণ করবে চীন। আইন অনুযায়ী কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, চীন সরকার ন্যায্য প্রতিযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানির উন্নয়নে জোর দেবে।
প্রশ্নের জবাবে রূপরেখা নিয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির নীতি স্পষ্ট।
গেল বছর বেসরকারি অর্থনীতির বিকাশের বিষয়ে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ছিল; যা কিছু উদ্যোক্তাকে উদ্বিগ্ন করেছে। এবার বেসরকারি অর্থনীতির পরিবেশ আরও উন্নত হবে এবং এর জন্য আরও নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে।’
চীনের আজকের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার জন্য বেশ কয়েকটি অনুকূল অবস্থার উল্লেখ করেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘চীনের রয়েছে একটি অতি-বৃহৎ বাজার। রয়েছে একটি কার্যকরী শিল্প ব্যবস্থা, মানব সম্পদের সমৃদ্ধ সরবরাহ, একটি শক্তিশালী উন্নয়ন ভিত্তি এবং উল্লেখযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি। এসব বিষয়ের ওপর ভর করে অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার জানান দেবে চীন।’
২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে লি বলেন, ‘চীনা অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল এবং তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থাও এ বছর চীনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার জন্য তাদের পূর্বাভাস পরিবর্তন করেছে।’
আরও পড়ুন:নিরাপত্তাকে উন্নয়নের মূলনীতি আখ্যা দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বলেছেন, সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত স্থিতিশীলতা।
চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনের শেষ দিন সোমবার তিনি এ কথা বলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বক্তব্যে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করায় প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান ৬৯ বছর বয়সী শি চিনপিং। ওই সময় তিনি দেশের প্রয়োজনকে নিজের মিশন হিসেবে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
শি বলেন, ‘উন্নয়নের মূলনীতি নিরাপত্তা, যেখানে সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত স্থিতিশীলতা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনীগুলোর আধুনিকায়নকে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি জনগণের সশস্ত্র বাহিনীকে ইস্পাতের মহাপ্রাচীর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে এটি কার্যকরভাবে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থগুলোর রক্ষাকবচ হতে পারে।’
তৃতীয় মেয়াদে চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া শি বলেন, ‘আমাকে এগিয়ে নেয়ার সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি জনগণের আস্থা। এটি একই সঙ্গে আমার কাঁধে বহন করা অনেক বড় দায়িত্বও।
‘চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবন অপরিবর্তনীয় ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে।’
চীনের পার্লামেন্টে বার্ষিক অধিবেশনের সমাপনী দিনে যোগ দিয়েছেন দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য