যে করেই হোক দাঁড়াতে হবে পরিবারের পাশে। দরকার অর্থ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের বাসিন্দা আবদুর মনে এ অনুভূতি আসে ২০২০ সালের শুরুতে।
দেরি না করে ২৫ বছরের এ যুবক ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দেন রাজধানী শহর সানা থেকে উত্তরে।
‘হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তাই বছরের শুরুতে কাজের সন্ধানে সৌদি আরব যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই’, বলেন আবদু।
বিদ্রোহী দমনে ধনী প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব বছরের পর বছর ধরে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইয়েমেনে।
হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় সৌদি আরবে ওয়ার্ক ভিসার আবেদন করেননি আবদু। সৌদির দক্ষিণের শহর খামিস মুশাইত ছিল তার গন্তব্য। অন্য অনেকের মতো, ১২ ঘণ্টার এ যাত্রায় তিনি পাচারকারীদের সাহায্য নেন।
এ নিয়ে আবদু বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সেখানে পৌঁছাই। ৪১ হাজার টাকায় রাখালের কাজ নিই।’
২০২২ সালের এপ্রিলে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এর ফলে সৌদি বিমান হামলাও বন্ধ হয়ে যায়; অনেকাংশে কমে যায় যুদ্ধ। দীর্ঘদিন চলা সংকট সাময়িকভাবে কাটিয়ে ওঠেন সাধারণ ইয়েমেনিরা।
বারবার লঙ্ঘন সত্ত্বেও ছয় মাসের জন্য যুদ্ধবিরতিটি কার্যকর ছিল। এ সময়ে হুতি নিয়ন্ত্রিত হোদেইদাহ বন্দরে জ্বালানি জাহাজ আসা চার গুণ বেড়ে যায়। সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো ফের চালু হয়। এতে হাজার হাজার যাত্রী, বিশেষত রোগী ও শিক্ষার্থীরা বিদেশে যেতে কিংবা দেশে ফিরতে পারেন।
শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের হিসাব অনুযায়ী, সংঘাত বন্ধ হওয়ায় শিশুমৃত্যুর হার ৩৪ শতাংশে নেমে যায়। বাস্তুচ্যুতির সংখ্যাও অর্ধেকে নামে।
আবদু বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবর শোনার পর বাবাকে ফোন করেছিলাম। তিনি খুব খুশি ছিলেন। কারণ জ্বালানি জাহাজ আসতে চলেছে। বিমান হামলা বন্ধ হয়েছে।
‘আমার বাবা বাসচালক। তার জন্য জ্বালানির দাম কমা অনেক বড় খবর। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরবে ভেবে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি।’
বাবার সঙ্গে কথা বলার পর আর দেরি করেননি আবদু। জমানো ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।
এ যুবক বলেন, ‘একটা পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরি। জমানো টাকায় একটা মিনিবাস কিনে সানায় থাকব। বাবার মতো বাসচালক হব।’
এখন পর্যন্ত ইয়েমেনে ফিরে আসা নিয়ে আবদুর অনুশোচনা নেই। কারণ যে পরিস্থিতিতে আবদু সানা ছেড়েছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেকটাই ভালো। যুদ্ধ মোটামুটি নেই বলেলেই চলে। জ্বালানিও পাওয়া যাচ্ছে প্রয়োজনমতো।
তারপরও অনিশ্চিত ভবিষ্যত প্রায়ই ভাবায় আবদুকে। কখন আবার যুদ্ধে বেধে যায়, আবার কবে থেকে জ্বালানি সংকট দেখা দেবে, সে ভাবনায় ঘুম আসতে চায় না তার।
ভেস্তে গেল যুদ্ধবিরতি
গত বছরের অক্টোবরে ইয়েমেনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হ্যান্স গ্রুন্ডবার্গ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে ব্যর্থ হন। সরকার চাইলেও হুতিরা যুদ্ধবিরতিতে আর রাজি হয়নি।
এরপর সর্বাত্মক যুদ্ধে না জড়ালেও হুতিরা সরকার নিয়ন্ত্রিত হাদরামাউট গভর্নরেটের আল-ধাব্বা তেল টার্মিনালে ড্রোন হামলা চালায়। এতে ফের আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচনার শিকার হয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।
ইয়েমেনের রাজনৈতিক গবেষক ও লেখক আদেল দাশেলা জানান, ইয়েমেনে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা শেষ পর্যন্ত অধরাই রয়ে গেছে।
নতুন বছরে তিনি ইয়েমেনের জন্য তিনটি ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন।
এ গবেষকের ভাষ্য, ‘আঞ্চলিক শক্তিগুলো সর্বসম্মতভাবে ইয়েমেনের যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে স্থায়ী শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আলোচনায় বসতে চাপ দিতে পারে, তবে হুতিদের একগুঁয়েমি ও দক্ষিণের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নমনীয়তার কারণে তা আলোর মুখ নাও দেখতে পারে।
‘দ্বিতীয়ত, স্থিতাবস্থার স্থায়িত্ব। হুতিরা ইয়েমেনের উত্তরে শাসন করছে আর সরকার এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দক্ষিণে। এই পরিস্থিতিতে সহিংসতার আশঙ্কা অনেক কম বলে মনে হচ্ছে, তবে এতে দেশে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব আরও শক্ত ও বিস্তৃত হবে।
‘সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যাওয়া হলো তৃতীয় দৃশ্যকল্প। এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক। এতে ইয়েমেন আরও বিধ্বস্ত হবে। মোটকথা, আঞ্চলিক পক্ষগুলোর আধিপত্যের কারণে ইয়েমেনে সহজে শান্তি ফিরবে না।’
উদ্বেগ নিয়েই স্বপ্ন দেখেন
এসব সত্ত্বেও আবদু এখনও মনে করেন, তার ইয়েমেনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবাজরা কয়েক মাস বা বছর ধরে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। এতে আমি কিছু মনে করব না। আমি কেবল যুদ্ধ বা জ্বালানি সংকটকে ভয় করি।
‘২০২২ সাল ভালোই কেটেছে। জানি না ২০২৩ সালে কী ঘটতে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে শুক্রবার ইহুদি বসতিতে সম্প্রদায়টির উপাসনালয় সিনাগগের কাছে বন্দুকধারীর হামলায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে বৃহস্পতিবার শরণার্থী ক্যাম্পে দেশটির সেনাদের তল্লাশির সময় ৯ জন নিহত হওয়ার পরের দিন বন্দুক হামলার ঘটনাটি ঘটে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে পূর্ব জেরুজালেমের হামলাকারী নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম জানায়, বন্দুকধারীর গুলিতে আহত ১০ জনকে তারা চিকিৎসা দিচ্ছে, যাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
হামলাস্থল ইসরায়েলের অবৈধ বসতি নেভে ইয়াকুব থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক জেমস বেইজ জানান, তার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, সিনাগগের সামনে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গুলি চালান বন্দুকধারী, যাতে কমপক্ষে সাতজন প্রাণ হারান।
পুলিশের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, সন্দেহভাজনের ইতোপূর্বে নিরাপত্তা লঙ্ঘনজনিত কোনো রেকর্ড নেই।
তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো পক্ষ।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থার মতে, গুলিতে ১০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭০ বছর বয়সী এক পুরুষ ও ১৪ বছরের এক কিশোর রয়েছে।
সিনাগগের কাছাকাছি জায়গার বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সী ম্যাটানেল আলমালেম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি অনেক গুলির শব্দ শুনেছি।’
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে বৃহস্পতিবার দেশটির সেনাদের গুলিতে এক বৃদ্ধাসহ ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জনই জেনিনের শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা ছিলেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ সমর্থিত সশস্ত্র মিলিশিয়া আল-আকসা মার্টিয়ারস’ ব্রিগেড জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইজ আল-দিন সালাহাত নামে তাদের এক যোদ্ধা রয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গুলিতে আহত ২৪ বছর বয়সী সায়েব আজরিকির মৃত্যু হয় হাসপাতালে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি খুবই জটিল ছিল। আহত ব্যক্তিরা একের পর এক হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালে প্রবেশের পথে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বাধা দিচ্ছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
জেনিন পাবলিক হাসপাতালের প্রধান উইসাম বাকের আল জাজিরাকে বলেন, ব্যাপকতা ও আহতের দিক থেকে হামলাটি ছিল নজিরবিহীন।
বাংলাদেশের প্রতিবাদ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জেনিন শরণার্থী ক্যাম্পে ইসরায়েলি সহিংসতা ও নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যার (যাদের মধ্যে নারীও রয়েছে) তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যার পাশাপাশি অনেককে আহত করা হয়েছে। জেনিন হাসপাতালে হামলা চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে জেনিন শরণার্থী ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও চুক্তিগুলোর বারবার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন:চলতি বছর হজে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ। জেদ্দায় হজ মেলা ২০২৩ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সোমবার তিনি এমনটি জানান।
করোনাভাইরাস মহামারির পর সীমিত করে দেয়া হয়েছিল হজ অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা। অবশেষে তিন বছর পর এ বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হচ্ছে।
সৌদির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে যাবে হজে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা । এ ছাড়া বয়সের ক্ষেত্রেও কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে না।’
২০১৯ সালে হজে অংশ নিয়েছিল ২৫ লাখ মানুষ। করোনার কারণে গত দুই বছর সীমিত সংখ্যা অংশগ্রহণকারী হজে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। গত বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ হজ পালন করার সুযোগ পান। কিন্তু সে সময় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী সুস্থ মানুষই হজ করার সুযোগ পান। এ ছাড়া হজে অংশগ্রহণকারীদের জন্য করোনার ভ্যাকসিন নেয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
চলতি বছর হজে পূর্ণ কোটা পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী মে মাসের শেষ সপ্তাহে উড়বে হজের প্রথম ফ্লাইট। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হাজিদের বিড়ম্বনা লাঘবে সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার প্রায় ৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করবেন। এর মধ্যে বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় ২০ লাখ মুসলমান হজে অংশ নেবেন। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে ১০ লাখের মতো মুসলমান হজে অংশ নেবেন।
সৌদি আরব সফরে গেছেন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকা পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির।
গত নভেম্বরে দায়িত্ব নেয়ার পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর। এক সপ্তাহের এ সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতেও যাবেন মুনির।
এর আগেও দায়িত্ব নেয়ার পরপরই সৌদি সফরে যেতে দেখা যায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধানদের।
এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, সেনাপ্রধান উভয় দেশের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পারস্পরিক স্বার্থ, সামরিক সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।
সৌদির বার্তা সংস্থা এসপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রিয়াদে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান।
এ নিয়ে টুইটে প্রিন্স খালিদ লেখেন, ‘আমরা দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের ওপর জোর দিয়েছি, দ্বিপক্ষীয় সামরিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। পাশাপাশি আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।’
পাকিস্তানের তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সৌদি সফরে রয়েছেন আসিম মুনির।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির বর্তমান রিজার্ভ ৬০০ কোটি ডলারের কম, যা গত আট বছরে সর্বনিম্ন। এ ছাড়া পাকিস্তানে গত বছরের ভয়াবহ বন্যার পর মূল্যস্ফীতিও ব্যাপক বেড়েছে। বন্যায় দেশটিতে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার সংবাদ সম্মেলনে জানান, অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি দিতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আমানত হিসেবে কিছু অর্থ রাখবে সৌদি আরব।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে সৌদির সাহায্য প্রয়োজন পাকিস্তানের। ২০২১ সালের নভেম্বরে ইমরান খানের শাসনামলে ইসলামাবাদকে ৩০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয় রিয়াদ। গত কয়েক মাসে পাকিস্তানকে আরও অর্থ দিয়েছে সৌদি।
গত এপ্রিলে ক্ষমতা নেয়ার পর অর্থনৈতিক সহায়তা ও বিনিয়োগের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সফর করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
ইসলামাবাদ জানিয়েছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানকে ৯০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে সৌদি। এ ছাড়া দেশটি থেকে ৫০ কোটি ডলারের তেল আমদানি করেছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে ৩০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কাতারও।
ইসলামাবাদভিত্তিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ ফয়সাল মনে করেন, জেনারেল মুনিরের সফরকে অবশ্যই অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখা উচিত। কারণ এ সফর বিশেষভাবে দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পাকিস্তানকে গত আগস্টে ১১৭ কোটি ডলারের ঋণ দেয়। সংস্থাটি আরও ১১৮ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা থাকলেও ইসলামাবাদ এটি পেতে এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ঋণ দেয়ার জন্য আইএমএফ পাকিস্তানকে জ্বালানির দাম বাড়ানোর শর্ত দেয়। এ শর্তে একমত না হয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদত্যাগ করেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন, পাকিস্তানও শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। এটি কেবল অর্থনৈতিক দক্ষতার সঙ্গে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
পাকিস্তানভিত্তিক বিশ্লেষক মোহাম্মেদ ফয়সাল মনে করেন, কৌশলগত দিক থেকে পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সৌদি আরব। সে জন্যই তারা দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়।
ফয়সাল আল জাজিরাকে বলেন, ‘পাকিস্তান বৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। ইসলামের পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনার অভিভাবক হওয়ার সৌদি দাবিকে সমর্থন করে ইসলামাবাদ।’
ক্ষমতা নেয়ার পর শাহবাজ শরিফ ও ইমরান খান উভয়ই সৌদি আরব সফর করেছেন। এ ছাড়া পাকিস্তানের সাবেক দুই সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, জেনারেল রাহিল শরিফও দায়িত্ব পাওয়ার পর রিয়াদ সফর করেছেন।
রাহিল ২০১৬ সালে দায়িত্ব পাওয়ার আগে সৌদি নেতৃত্বাধীন ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশনের কমান্ডার হন।
সৌদি আরবে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত শহিদ এম আমিন বলেন, ‘এ দুই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। পাকিস্তান অর্থনৈতিক সহায়তা পায় এবং নিরাপত্তা সহায়তা দেয়।’
গত পাঁচ দশকে সৌদির উন্নয়নে পাকিস্তানের জনশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলেও দাবি করেন শহিদ।
আরও পড়ুন:মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৩১ বছর বয়সী মারিয়াম রাদকে জামিন দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত।
স্থানীয় সময় শুক্রবার তাকে জামিন দেয়া হয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, আইএসে যোগ দিতে ২০১৪ সালে স্বেচ্ছায় স্বামীর সঙ্গে সিরিয়ায় যান মারিয়াম। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৮ সালে মারিয়ামের স্বামী সিরিয়ায় মারা গেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার আইন অনুযায়ী, সরকারঘোষিত সন্ত্রাসীদের এলাকায় থাকলে ১০ বছরের জেল হতে পারে।
রাদের জামিনের শর্তে বলা হয়, তাকে প্রত্যেক সোমবার পুলিশের কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যাবে না।
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আল রোজ ক্যাম্প থেকে অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরেন রাদ। ওই সময় তার সঙ্গে আরও ১৬ নারী ও শিশুকে সিরিয়া থেকে ফিরিয়ে আনে অস্ট্রেলীয় সরকার। আগামী ১৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার আদালতে তাদের বিচার শুরু হবে।
ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এ নিয়ে বৈঠকের পর নিরাপত্তা পরিষদ এমন উদ্বেগের কথা জানায় বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বৈঠকে জাতিসংঘ আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছে। আল আকসা মসজিদটি মুসলমান ও ইহুদিদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, মসজিদটিতে শুধু মুসলমানরাই প্রার্থনা করতে পারেন।
এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেন গভির আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে গেলেও প্রার্থনা করেননি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য ইসরায়েলি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান, তবে যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবে ভেটো দেন।
রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স ও ব্রিটেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে মনসুর বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের আর কি করতে হবে তা নিরাপত্তা কাউন্সিলকে বলতে হবে। যথেষ্ট হয়েছে।’
জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা খালেদ খিয়ারি নিরাপত্তা কাউন্সিলকে বলেন, ‘২০১৭ সালের পর গভিরই প্রথম ইসরায়েলি মন্ত্রী যিনি আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছেন। যদিও এই সফরটির কারণে কোনো সহিংসতা হয়নি, তবে বেন গভিরের অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে এ নিয়ে আপত্তি উঠেছে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পবিত্র স্থান এবং এর আশপাশে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইহুদিরা তাদের পবিত্র স্থানে যেতে পারবে। এ অধিকার সব ইহুদির রয়েছে। ইসরায়েল আল আকসা মসজিদের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যাঘাত ঘটায়নি।’
আরও পড়ুন:কাতার বিশ্বকাপের সময় ড্রোনের ওপর দাঁড়িয়ে সৌদি আরবের পতাকা নাড়ছেন এক ব্যক্তি, এমন একটি ভিডিও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ভিডিওটি ১৪ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
ভিডিওটি আসলে সৌদি আরবে ধারণ করা। ২০১৯ সালের মে মাসে স্থানীয় কিংস কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের সময়।
গত বছরের ২২ নভেম্বর ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার হয়। সেখানে ১৪ লাখের বেশিবার এটি দেখা হয়েছে।
ভিডিওর সঙ্গে উর্দু ভাষার ক্যাপশন বাংলায় করলে দাঁড়ায়, ‘কাতারে ফিফা বিশ্বকাপ চলাকালীন ড্রোনে থাকা এক ব্যক্তি কালেমা তাইয়্যেবা লেখা পতাকা নেড়ে বিশ্বকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেটা হলো, কেবল এই পতাকাটিই ইসলামিক বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে উড়বে।’
কালেমা বা কালিমা (আরবি: ٱلكَلِمَات) ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সংবলিত কয়েকটি আরবি পঙক্তির নাম। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ শাহাদাহ্ পূর্ণতা পায়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাক্যের অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ বা উপাস্য নেই। এটি ইসলামের চূড়ান্ত কালেমা। সৌদি আরবের পতাকার মাঝখানে এটি লেখা থাকে।
ক্লিপটি ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং টিকটকে শত শত বার শেয়ার হয়েছে।
প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করে কাতার। এ সময় লাখ লাখ দর্শক আরব দেশটিতে আসে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসলাম ধর্মের প্রচার করে কাতার কর্তৃপক্ষ।
তবে ভিডিওটি কাতারে ধারণ করা হয়নি।
২০১৯ সালে সৌদি টুর্নামেন্ট
বিপরীত চিত্র এবং কীওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সৌদি ক্রীড়া প্ল্যাটফর্ম ডাওরি প্লাস ২০১৯ সালের ২ মে টুইটারে এমন একটি ভিডিও পোস্ট করে।
আরবি ভাষার লেখা টুইটটি বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘উড়ন্ত মানুষ বিশাল এই শোডাউনের উদ্বোধন করছে। এরপর লেখা- #আল-তাওউন_আল-ইত্তিহাদ
#কাস্টোডিয়ান_অফ_দ্য_টু_হোলি_মস্ক_কাপ #দাওরি_প্লাস।’
ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগগুলো দুটি পবিত্র মসজিদ কাপ বা কিংস কাপের কাস্টডিয়ানকে নির্দেশ করে, যেখানে আল-তাওউন দল ২০১৯ সালের ২ মে ফাইনালে আল-ইত্তিহাদকে পরাজিত করেছিল।
এদিন সৌদি সংবাদপত্র আরব নিউজের খবরে বলা হয়, ‘বাদশাহ সালমান টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন। বিজয়ী দলকে তিনি ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন। সেবার প্রথমবারের মতো কিংস কাপ ট্রফি জেতে ফুটবল দল আল-তাওউন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক আবুধাবি স্পোর্টস পরদিন ইউটিউবে সে ম্যাচের একটি ডিভিও আপলোড করে। ক্লিপ্টির ৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে একই রকম দৃশ্য দেখা যায়।
নিচে একটি স্ক্রিনশট দেয়া হল, যার মধ্যে ভুয়া পোস্টের (বামে) দৃশ্যের তুলনা করা হয়েছে দাওরি প্লাসের (ডানে) সঙ্গে।
ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্যাক্টক্রেসেন্ডোও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য