ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি এমন দাবি করেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
পুতিন অভিযোগ করেন, রাশিয়াকে দুর্বল করতে ইউক্রেনকে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।
রুশ প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধ যত দ্রুত শেষ হবে, ততই মঙ্গল। আলোচনার মাধ্যমে কোনো না কোনোভাবে সব যুদ্ধই শেষ হয়ে যায়। আমাদের প্রতিপক্ষ (ইউক্রেন) যত দ্রুত বুঝবে, ততই ভালো হবে।’
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী এখন পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানকার বাখমুত শহর যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। কূটনৈতিক দরজা বন্ধ করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি দায়ী।
এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে বীরোচিত সংবর্ধনা পেয়েছেন জেলেনস্কি। স্থানীয় সময় বুধবার বাইডেন ইউক্রেনকে আরও ১৮০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফর যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘যারা এটা করছে তারা বৃথাই করছে। এটা শুধু দ্বন্দ্বকে দীর্ঘায়িত করছে; এটুকুই।’
এর আগে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়ার উদ্বেগে কর্ণপাত করছেন না বাইডেন ও জেলেনস্কি।
ইউক্রেন যুদ্ধে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। এ অবস্থায় দেশটিতে শিগগিরই আরও চার লাখের বেশি সেনা পাঠাতে চায় ক্রেমলিন।
মস্কোর এই পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চালাতে এ বছরই আরও চার লাখের বেশি সেনাকে ইউক্রেনে পাঠাতে চাইছে রাশিয়া।
তবে রুশবিরোধী কিছু কর্মকর্তা এ পরিকল্পনাকে অবাস্তব বলে মনে করছেন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া প্রায় চার লাখ সেনা নিয়ে ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরু করে। আবার নতুন করে এই পরিমাণ সেনা নিয়োগ দেয়া রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রুশ সেনা সক্ষমতাবিষয়ক সাবেক বিশ্লেষক দারা ম্যাসিকট বলেন, যুদ্ধকালীন অর্থনীতি এবং সামরিক আইনের দিকে ধাবিত না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনে আরেকটি বড় সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা দেখছি না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ায় আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। এর আগে ইউক্রেনে আরও সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত নন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রুশ সেনা বিশেষজ্ঞ পাভেল লুজিন ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন, আগের বছরগুলোর মতো এবার আর যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে পারছে না রাশিয়া।
তবে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু গত বছরের ডিসেম্বরে জানিয়ে ছিলেন, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়ার ৫ লাখ ২১ হাজার চুক্তিবদ্ধ সেনা ইউক্রেনে থাকবে, যা যুদ্ধের শুরুতে ছিল চার লাখ পাঁচ হাজার।
পুতিনও গত বছর রুশ সেনার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৫ লাখ করার পরিকল্পনায় অনুমোদন দেন। ২০২৬ সালের মধ্যে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় ক্রেমলিন। এছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, তাদের কাছে আড়াই কোটি সেনা রিজার্ভ রয়েছে।
এদিকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে বলে মনে করছেন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। তাদের মতে, মস্কোর অস্ত্রের মজুত কমে যাচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের অস্ত্র সংগ্রহ করার সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের সেনা গোয়েন্দা বিভাগের উপপ্রধান ভাদিম স্কিবিটস্ক জানান, তারা এ যুদ্ধ ২০২৩ বা সর্বোচ্চ ২০২৪ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারে।
ইউক্রেনে জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিমান, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ আধুনিক অস্ত্র পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের আহ্বান জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এমনটি না হলে দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ বয়ে বেড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হবে।
ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ট্রেনে রাজধানী কিয়েভে ফেরার সময় জেলেনস্কি এ কথা বলেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে দুই দিন অবস্থান করেন জেলেনস্কি। ফেরার পথে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের একটি সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি নিয়ে আবেগঘন বর্ণনা দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
রাখঢাক না রেখে দেয়া দীর্ঘ বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, জোট হিসেবে রাশিয়াকে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত ইইউকে নিতে হবে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া, যেটিকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একে অন্যায্য আগ্রাসন মনে করা পশ্চিমারা ইউক্রেনকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত দেশটিতে কামানের ১০ লাখ গোলা পাঠাতে ইইউ যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলেনস্কি, তবে যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার সেনাদের পিছু হটাতে অধিকতর কার্যকর হবে বলে মনে করছেন তিনি। বক্তব্যে এ দুই সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
জেলেনস্কির বক্তব্যে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি হতাশা ফুটে ওঠে।
তার অভিযোগ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে দৃশ্যত তাড়া নেই ইইউর।
ইইউ নেতাদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউরোপ বসে থাকলে অপশক্তি হয়তো পুনঃসংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে এবং দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। একে মোকাবিলা করা আপনাদের ওপর নির্ভর করছে।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) জারি করা পরোয়ানা অনুযায়ী কোনো দেশ তাকে গ্রেপ্তার করলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ।
পুতিনের এই সহযোগী বুধবার এমন হুঁশিয়ারি দেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বরাবরই আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা মেদভেদেভ।এরমধ্যে পরমাণু হামলারও হুমকি ছিল।
পুতিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মেদভেদেভ বলেন, ‘আসুন কল্পনা করা যাক । এটা স্পষ্ট যে, পুতিনকে গ্রেপ্তার করা এমন একটি পরিস্থিতি যা কখনই ঘটবে না , কিন্তু ধরুন সে যদি জার্মানিতে যায় ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাহলে কি হলো? রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’
‘যদি এমনটি হয় তাহলে আমারা সর্বশক্তি দিয়ে তাদের চ্যান্সেলরের অফিসে হামলা করব। ’
গত শনিবার ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজ দেশে থাকতে পুতিনের গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নেই। যদি ক্রেমলিন তাকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করে তবে পুতিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব। তবে রাশিয়ার বাইরে কোনো দেশ চাইলে পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
ইউক্রেনে এক বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই করছে রুশ সেনারা। এসময়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলেও মস্কো তা অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেনের অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে খরচ হবে ৪১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, সময়ও দরকার হবে অন্তত ১০ বছর।
বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বৃহস্পতিবার এ তথ্য দিয়েছে।
অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে যে অর্থ খরচ হবে তার একটি বড় অংশই যাবে বিভিন্ন শহর ও এলাকায় ধসে পড়ে ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরাতে বা পরিষ্কার করতে। এতেই লাগবে ৫ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, ন্যূনতম হিসাবে এ অর্থ খরচ হবে বলে ধরা হয়েছে। তবে যুদ্ধ যতদিন চলতে থাকবে খরচও বাড়বে।
গত সেপ্টেম্বরে অবশ্য এই খরচ ধরা হয়েছিল ৩৪৯ বিলিয়ন ডলার। এরপর এবার বিশ্ব ব্যাংক, ইউক্রেন সরকার, ইউরোপিয়ান কমিশন ও জাতিসংঘ এবার নতুন করে খরচের হিসাব দিলো।
প্রতিবেদন বলছে, যুদ্ধে ইউক্রেনের ২০ লাখ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ৬৫০টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৬১টি শিশুসহ ৯৬৫৫ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট আনা বজেরদে বলেন, ইউক্রেনের পুনর্গঠনে কয়েক বছর সময় লাগবে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনও। যুদ্ধে প্রতিদিনই আসছে প্রাণহানির খবর।
পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়াকে এই হামলা বন্ধের অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া দেননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এ ছাড়া কয়েক দফা দুই দেশের বৈঠকেও আসেনি কোনো সমাধান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে। বেড়েছে জ্বালানি, খাদ্যপণ্যসহ নানা পণ্যের দাম। ইউক্রেন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে অসংখ্য মানুষ।
আরও পড়ুন:চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের রাশিয়া সফরে ইউরোপের পরাশক্তিটির সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত হয়েছে পূর্ব এশিয়ার বৈশ্বিক শক্তিটির।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যৌথ বিবৃতিতে সমালোচনা করেছেন পশ্চিমের।
এমন বাস্তবতায় সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। রাশিয়ার সঙ্গে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধরত দেশটিতে দ্রুত সময়ে ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়া সফরে মঙ্গলবার বন্ধুত্বের বেশ কিছু নিদর্শন দেখিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। শি ও পুতিন পরস্পরকে প্রিয় বন্ধু হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে বলে দাবি করেছেন।
দুই নেতার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে ম্লান করছে এবং ন্যাটো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নাক গলাচ্ছে।
ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে গত মাসে প্রকাশিত চীনের ১২ দফা প্রস্তাবের প্রশংসা করে সেটি প্রত্যাখ্যান করায় কিয়েভ ও পশ্চিমা মিত্রদের সমালোচনা করেন পুতিন। অন্যদিকে শি যুদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ করেননি বললেই চলে। তিনি এ সংঘাতে চীন নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
রাশিয়া ও চীনের এমন অবস্থানের সময় আইএমএফ জানিয়েছে, ইউক্রেনকে চার বছরে ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার দিতে প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে সংস্থাটি। এ অর্থ বিধ্বস্ত অবকাঠামো মেরামত ও অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবনে কাজে লাগানো হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার জানিয়েছেন, ৩১টি আব্রামস ট্যাংক দ্রুত ইউক্রেনের কাছে পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইউক্রেন সংকট নিরসনের যৌক্তিক পথ খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বলেছেন, এ সমস্যার সমাধান সহজ হবে না।
সোমবার রাশিয়ার মস্কোতে পা রাখার আগে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রুশ সংবাদপত্র রশিসকায়া গ্যাজেটায় লেখা নিবন্ধে তিনি এ কথা বলেন।
শিকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলার পর সৃষ্ট সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের আলোচনার ভিত্তি হতে পারে গত মাসে প্রকাশিত চীনের ১২ দফা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত দফাগুলোতে সব দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান, স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা পরিহার, যুদ্ধবিরতি, শান্তি আলোচনা শুরু, মানবিক সংকট নিরসনসহ বিভিন্ন আহ্বান জানানো হয়।
শি বলেন, ‘(ইউক্রেন) সংকটের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো ও এর রাজনৈতিক সমাধানকে ত্বরান্বিত করতে এই নথি (১২ দফা প্রস্তাব) ইতিবাচক বিষয় হিসেবে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জটিল সমস্যার সহজ কোনো সমাধান নেই।’
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশটির ১২ দফায় যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন শি চিনপিং।
ইউরোপের দুই প্রতিবেশীর সংঘাতে চীন নিজেকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে, তবে দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বজায় রেখেছে।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর প্রথম কোনো বিশ্বনেতা হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শি চিনপিং।
আরও পড়ুন:কৃষ্ণ সাগর দিয়ে নিরাপদে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির চুক্তির মেয়াদ আরও ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন বিশ্ববাজারে শস্যের সরবরাহ কমায় দাম বেড়ে যায়। সংকট নিরসনে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে প্রথম এ চুক্তি হয়। ওই সময় চুক্তির মেয়াদ ছিল ১২০ দিন।
মাঝে চুক্তি থেকে বের হয়ে যায় রাশিয়া। তবে অনেক আলোচনার পর নভেম্বরেও আবারও চুক্তি নবায়ন করা হয়। যেটির মেয়াদ ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ শেষ হয়।
রাশিয়া বলেছে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হলে কিছু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কমাতে হবে।
শনিবার জাতিসংঘ ও তুরস্ক চুক্তি নবায়নের কথা জানালেও মেয়াদ কতদিন বাড়ল তা সুনির্দিষ্ট করে বলেনি।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্ববাজারে রাশিয়ার খাদ্যপণ্য এবং সারের প্রসারের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি দ্য ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ নামের চুক্তিটি বিশ্বের বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সরবরাহকারী দেশ। আবার রাশিয়া শীর্ষস্থানীয় সার রপ্তানিকারক দেশও।
ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী মিকোলা সোলস্কি জানিয়ুএছেন, জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মসূচির জন্য তার দেশ প্রায় ৫ লাখ টন গম সরবরাহ করেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য