আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে স্পিন বোল্ডাক ও চামন শহরের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং ফের চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল পাকিস্তান, তবে ১৩ নভেম্বর আন্তসীমান্ত গোলাগুলিতে পাকিস্তানের এক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হলে সে প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
এর কয়েক দিন পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে কাবুল সফর করতে দেখা যায়, যা আফগান তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের অবনতিশীল সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা
বিতর্কিত আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তান দখলে নেয়ার পর থেকেই এ ধরনের সংঘর্ষ বেড়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানকে সীমান্ত সংঘাত বন্ধে উদ্যোগী হতে দেখা যায়। কূটনৈতিকভাবে সংকট নিরসনের আহ্বানও জানিয়েছে ইসলামাবাদ, তবে পশতু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে যে অস্থিরতা বাড়ছে, সেটি ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
আফগানিস্তানের পাকতিয়া প্রদেশের ডান্ড পাটানের কাছে ১৯ নভেম্বর তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীদের উত্তেজনার পর দেশটির মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী সাজিদ হোসেন তুরি টুইটারে লেখেন, ‘কুররাম সীমান্তে আফগানিস্তান আইন লঙ্ঘন করেছে। সীমান্তে বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্যবস্তু বানানো নিন্দনীয়।’
আফগানিস্তানে তালেবান শাসকরা ইসলামি শাসন কায়েম করেছে। তার পরও আফগানিস্তান-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো কাটছে না।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার আন্তর্জাতিক সীমানা হিসেবে ডুরান্ড লাইনকে মেনে নেয়ার বিষয়টি কাবুল প্রত্যাখ্যান করে আসছে, যাতে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে।
ক্ষমতা দখলের পর স্বস্তিতে নেই আফগান শাসকরা। তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, মানবিক সহায়তা, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, নারী শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান প্রভিন্সের (আইএসকেপি) হুমকি মোকাবিলায় শক্ত চ্যালেঞ্জে পড়েছে।
পাকিস্তানে যারা শরিয়া আইন চালু করতে চান, আফগানিস্তানের তালেবানকে দেখে তারা অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। ডুরান্ড লাইনের ওপারে আফগান তালেবানের হামলা নিয়ে পাকিস্তানি রাষ্ট্রের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পাকিস্তানে এখন ‘জিহাদি বাহিনীর’ সমর্থন হু হু করে বাড়ছে।
যে আদর্শগত সংযোগ আফগানিস্তান তালেবানকে নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে, তা বুমেরাং হয়েছে। পাকিস্তানেই এখন ইসলামপন্থি মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
ইসলামপন্থি ও জিহাদি শক্তিগুলো এখন আর ভারতের বিরোধিতায় ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে না। তারা এখন ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য পাকিস্তান সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
পরিবর্তনশীল সম্পর্ক
তালেবানের ভারতবিরোধী নীতিতে লাভবান হচ্ছিল পাকিস্তান, তবে তালেবান এখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায়। ভারতবিরোধী হয়ে সরকার চালানো সহজ হবে না, এমনটি ভালোভাবেই বুঝতে পারছে তারা। আফগানিস্তান পুনর্গঠনে ভারতের আর্থিক সহায়তাও চাইতে পারে তালেবান।
কাবুলের তালেবান-নেতৃত্বাধীন শাসনের প্রধান সুবিধাভোগী পাকিস্তান হলেও এটি ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে, রাশিয়া, চীন, কাতারসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোও তালেবানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছিল। আফগানিস্তান শাসনে পাকিস্তানের নির্দেশনা যে খুব একটা আমলে নেয়া হচ্ছে না, তালেবান সে ইঙ্গিত এরই মধ্যে দেয়া শুরু করেছে।
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের জনপ্রিয়তা কমছে। এতে ইসলামাবাদের পুতুল হিসেবে নিজেদের দেখা এড়াতে শুরু করছে তালেবান।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এক ক্রিকেট ম্যাচে আফগানিস্তানের পরাজয় দুই জনগোষ্ঠীর শত্রুতাকে প্রকাশ্যে আনে, যার ফলে হতাশ আফগানভক্তরা পাকিস্তানি সমর্থকদের দিকে প্লাস্টিকের চেয়ার ছুড়ে মারার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তপ্ত বিতর্কে জড়ান।
কয়েক দশক ধরে শরণার্থী হিসেবে পাকিস্তানে অনেক আফগান বসবাস করে আসছে। সে বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে পাকিস্তানি সমর্থকরা পুরো আফগান জাতিকে নামাক হারাম (বিশ্বাসঘাতক) বলে অভিহিত করেছিল। জবাবে অনেক আফগান গোটা পাকিস্তানিদের ‘সন্ত্রাসী’ অ্যাখ্যা দেয়।
আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান দুই দেশেই তালেবান আন্দোলনের কিছু শিকড় রয়েছে। মূলত পশতুন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এখন ইসলামাবাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দারিয়েছে। তালেবান তাদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে এই পশতুন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তান উভয় দেশেই তালেবান আন্দোলনের শিকড় রয়েছে। আর এই শিকড় হলো পশতু জাতিগোষ্ঠী। এই পশতুরা আবার তালেবানবিরোধীদের (ইসলামাবাদ) ব্যাপক দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে তালেবান এখন পশতুদের জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করছে ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় আছে।
উজ্জীবিত পাকিস্তান তালেবান
আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে ব্যাপক খুশি পাকিস্তানি তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। তারা আফগান তালেবানকে রোল মডেল ঘোষণা করেছে।
শুধু তা-ই নয়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে নিজেদের ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে টিটিপি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানও শুরু করেছে।
পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে টিটিপির পাঁচ মাসের যুদ্ধবিরতি শেষ হয় গত ২৮ নভেম্বর। এর ঠিক দুই দিন পর বেলুচিস্তান প্রদেশে পুলিশের ট্রাকে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়, যাতে অন্তত তিনজন নিহত এবং ২০ নিরাপত্তাকর্মীসহ ২৮ জন আহত হন।
হামলার দায় স্বীকার করে টিটিপি। তারা জানায়, আগস্টে আফগানিস্তানে তাদের সিনিয়র কমান্ডার আব্দুল ওয়ালি ওরফে ওমর খালিদ খোরাসানিকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
এখন যেহেতু টিটিপির সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই, তাই টিটিপি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় প্রাণঘাতী হামলা আরও হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টিটিপির সঙ্গে যুদ্ধবিরতিটি এমন সময়ে শেষ হয়, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পরিবর্তন আসছিল। জেনারেল আসিম মুনির আহমেদ সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। টিটিপির সঙ্গে শান্তি আলোচনার বিষয়ে মুনিরের নীতি কী হবে, তা এখন দেখার বিষয়।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এখন টিটিপির সরাসরি হামলার সম্মুখীন হচ্ছে। এতে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়ে অভিযোগ করতে বাধ্য হচ্ছে পাকিস্তান সরকার।
এমন প্রেক্ষাপটে আফগান ও পাকিস্তানি তালেবানের মধ্যে জোট আগের চেয়ে শক্তিশালী বলে মনে করা হচ্ছে। ডুরান্ড লাইনের ওপারে তাদের একীভূত হওয়ার লক্ষণও প্রবল হচ্ছে।
সীমান্তে পাকিস্তানের বেড়া নির্মাণকে মেনে নেয়নি আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান। তারা এ প্রকল্পকে ‘একতরফা’ ও ‘অবৈধ’ বলে বর্ণনা করে। ডুরান্ডলাইন বরাবর অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া তালেবান যোদ্ধারা সরিয়ে নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পাকিস্তানের একটি থিঙ্ক ট্যাংকের মতে, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে অঞ্চলটিতে সন্ত্রাসী হামলা ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যা দ্রুত অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ধনীদের পাশাপাশি স্থানীয় আইনপ্রণেতাদেরও তালেবান ব্ল্যাকমেইল করছে। গত কয়েক মাসে করাচিতে টিটিপির চাঁদাবাজি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
যদিও পাকিস্তানের নেতৃত্বে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, আফগান তালেবান টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে, তবে আফগান তালেবান পাকিস্তানে তাদের আদর্শিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কাজ করেনি।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছিলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত আইএস, আল কায়েদা, আইএসআইএল-কে এবং টিটিপির মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পাকিস্তানকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছে।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সম্প্রতি শেহবাজের কথায় সুর মিলিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের ভূমিকা
আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানের ওপর হোয়াইট হাউসের নির্ভরতা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। পাকিস্তান এখন আফগানিস্তানে তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধে পাকিস্তান এখন আর ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্র নয়। যদিও ২০২১ সালের আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের অসামঞ্জস্যতা ও অসংগতিগুলো কমিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদ।
ওয়াশিংটন ও কাবুলের মধ্যে সংলাপের সুবিধার্থে পাকিস্তানের ভূমিকার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন আফগানিস্তানে আমেরিকার বিশেষ প্রতিনিধি টমাস ওয়েস্ট।
আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি নিজেদের (আমেরিকার) ‘সামর্থ্যের’ ওপর জোর দেন।
পাকিস্তানি কূটনীতিক-বিশ্লেষকদের ভাষ্য
পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতারা এখন দাবি করেছেন, তারা আফগানিস্তানের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসছে, তবে এটা সত্যি যে ভারতের সামরিক হামলা প্রশ্নে আফগানিস্তানের ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। এ কারণে আফগানিস্তানে ইসলামাবাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে অনেকের সন্দেহ রয়েছে।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের এক বছরেরও বেশি সময় পর সাবেক এক পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের উচিত আফগানদের আশ্বস্ত করা। তাদের বোঝাতে হবে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।’
পাকিস্তানের এক বিশ্লেষকও তার সরকারকে বলেছেন, আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা তালেবান আর অতীতে যে তালেবানকে ইসলামাবাদ মোকাবিলা করেছে, তারা এক নয়।
আরও পড়ুন:ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হ্যাটট্রিক তথা টানা তৃতীয় জয়ের সম্ভাবনার মধ্যে শুক্রবার দেশটিতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের ২১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে আজ ভোট হচ্ছে।
সাত ধাপের এ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সব আসনে ভোট হচ্ছে তামিলনাড়ু (৩৯), রাজস্থান (১২), উত্তর প্রদেশ (৮), উত্তরাখণ্ড (৫), অরুণাচল প্রদেশ (২), মেঘালয় (২), আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (১), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), পুদুচেরি (১), সিকিম (১) ও লাক্ষাদ্বীপে (১)। এর বাইরে আসাম ও মহারাষ্ট্রের পাঁচটি করে আসনে, বিহারের চারটি, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি, মণিপুরের দুটি এবং ত্রিপুরা, জম্মু-কাশ্মীর ও ছত্রিশগড়ের একটি করে আসনে ভোট হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই চার রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমে আজ ভোট।
ভারতে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের জন্য বড় পরীক্ষার এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে ৩৭০টিতে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স তথা এনডিএ ৪০০টি আসনে জয়ী হোক, এমনটি চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লোকসভায় ৩৫৩টি আসন পায় এনডিএ, যেখানে বিজেপির একক আসনের সংখ্যা ৩০৩টি।
লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোট ১ জুন।
আরও পড়ুন:ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। লোকসভার ৫৪৩টি আসনে সাত দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে ৪২টি আসন। শুরুর দিনে এই রাজ্যে তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। আসন তিনটি হলো-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার।
বাকি ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একইসঙ্গে এদিন ভোটগ্রহণ হবে অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভার ৬০টি ও সিকিমের ৩২টি আসনে।
ভারতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো হলো- পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, সিকিম, রাজস্থান, পদুচেরি, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০৩, কংগ্রেস ৫২, সমাজবাদী পার্টি ৫, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ ও টিডিপি ২টি আসনে জয় পেয়েছিল।
গত নির্বাচনে গোটা দেশে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির ৪০ জন, তৃণমূলের ৯ জন, কংগ্রেসের ৬ জন, ওডিশার বিজেডির ৫ জন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৮ জন।
এ বছর ভারতে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন (১৮-১৯ বছর বয়সী) এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার।
ঝড়ের সময় বজ্রপাত ও প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় সীমান্তবর্তী দুই দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে কমপক্ষে ৮৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে আল জাজিরা।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানজুড়ে ঝড়ে কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ প্রাণহানি হয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায়, যেখানে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ভূমিধসে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উপড়ে যায় গাছ।
দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিতে ধসে যায় বিপুলসংখ্যক বাড়িঘর।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র জানান, অঞ্চলটিতে বৃষ্টিজনিত কারণে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও বৃষ্টি হতে পারে।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও ব্যাপক বৃষ্টি হয়। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে বন্যায় সাতজন প্রাণ হারান।
বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ার এবং বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কুয়েটার সড়ক।
এমন বাস্তবতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন।
আফগানিস্তানে বন্যা
দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, মৌসুমি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ৩৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দেশটিতে আহত হয়েছেন ২৭ জন।
তিনি জানান, বন্যায় ছয় শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ২০০ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে।
ওই মুখপাত্র জানান, বন্যায় বিপুল কৃষিজমির পাশাপাশি ৮৫ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন:ঈদের দিন সকালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে একটি স্কুলবাস উল্টে ৬ শিশু নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০ জন।
মহেন্দ্রগড় জেলার কানিনা শহরের কানিনা-দাদরি সড়কে বৃহস্পতিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বাসটি জিএল পাবলিক স্কুল নামের স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের ছিল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ঈদের দিন সরকারি ছুটি থাকা সত্ত্বেও স্কুলটি খোলা ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতকের খবরে বলা হয়, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো শিশু ছিল। দুর্ঘটনার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ৬ জনকে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৫ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি একজনকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণ পর তারও মৃত্যু হয়।
বাসচালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায় পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগের পর চালক মদ্যপ ছিলেন কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১২ আহত শিক্ষার্থীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রোহতকের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মহেন্দ্রগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ধারণা, বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা মারে। তিনি মদ্যপ থাকার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মহেন্দ্রগড় জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা আরশ ভার্মা বলেছেন, ‘বাসচালকের (মদ্যপ থাকার) বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার একটি মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে।’
সরকারি নথি থেকে এনডিটিভি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পরে তা আর নবায়ন করা হয়নি।
দুর্ঘটনার খবরে শোক প্রকাশ করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সাইনি।
এক এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কানিনায় স্কুলবাস দুর্ঘটনায় আমি শোকাহত। যারা নিষ্পাপ শিশুদের হারাল, ওইসব পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
ছুটির দিনেও কেন স্কুলটি খোলা ছিল, তার তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী সীমা ত্রিখা।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে মাজারে যাওয়ার পথে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রাক খাদে পড়ে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে বেলুচিস্তানের হাব জেলায় শাহ নুরানী মাজারে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জিও নিউজ জাানিয়েছে।
বেলুচিস্তান সরকারের একজন মুখপাত্র জি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
সিন্ধুর ঠাট্টা থেকে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী ট্রাকটি খুজদার জেলার শাহ নুরানি মাজারে যাওয়ার সময় হাব জেলায় খাদে পড়ে যায়।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি জেলা প্রশাসনকে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মিয়ানমারে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার প্রায় সাত বছর পর এখন তাদেরই সাহায্য নিচ্ছে দেশটির সামরিক জান্তা।
রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিবিসি সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে সাম্প্রতিক সপ্তাহে যুদ্ধরত জান্তার পক্ষে লড়াই করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে বিবিসি।
৩১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ভীত ছিলাম, কিন্তু আমাকে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।’
রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছের একটি শিবিরে থাকেন তিনি। এক দশক ধরে বাস্তুচ্যুত অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা এ ধরনের শিবিরে থাকছেন।
গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একদিন রাতে মোহাম্মদের কাছে আসেন এক শিবিরনেতা। তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে জানান ওই নেতা।
মোহাম্মকে তখন বলা হয়েছিল, এটা সেনাবাহিনীর আদেশ। আদেশ পালন না করলে তার পরিবারের ক্ষতি করা হবে।
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, সেনা কর্মকর্তারা শিবিরগুলোর (ক্যাম্প) আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। তারা তরুণ রোহিঙ্গাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীতে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
২০১২ সালে রাখাইনের বসতি থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়। এরপর অনেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন শিবিরে থাকতে শুরু করেন। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও নিধন অভিযান শুরু করলে ওই সময় সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
ওই সময় মিয়ানমারে হাজারো রোহিঙ্গা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
সম্প্রতি আরাকান আর্মি নামক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে রাখাইনে বিশাল এলাকা হারানোর পর একই সেনাবাহিনী এখন রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করছে।
দেশটির অন্য অংশে বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জান্তাও বিপুল সংখ্যক সৈন্য হারিয়েছে। তারা নিহত ও আহত হয়েছে এবং অনেক আত্মসমর্পণ করেছে।
আরও পড়ুন:দাবদাহ মোকাবিলায় ভারতের মুম্বাইয়ের নগর কর্তৃপক্ষ শহরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীদের জন্য কোল্ড রুমের ব্যবস্থা করেছে এবং সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ হিট স্ট্রোকের ওষুধ মজুত রেখেছে।
তীব্র দাবদাহ ও গরম বাড়তে পারে এমন শঙ্কা থেকে কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে শুক্রবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়।
কোল্ড রুম এমন একটি কক্ষ যেটি কম তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী শহর মুম্বাইয়ের গভর্নিং সিভিক বডি বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বলছে, তারা শহরের ১০৩টি ওষুধের দোকান শীতাতপনিয়ন্ত্রীত করা হয়েছে।
সিভিক বডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হিট স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৪টি বড় হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের কোল্ড রুমে দুটি করে শয্যা থাকবে। হিট স্ট্রোক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য মেডিক্যাল অফিসার এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এপ্রিল এবং মে থেকে তুলনামূলকভাবে গরম বাড়তে থাকে। তাই এ সময় হিট স্ট্রোকের প্রবণতাও বেড়ে যায়।
নাগরিক সংস্থাটি হিট স্ট্রোক এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য