সম্ভাব্য বিক্ষোভের মুখোমুখি যুক্তরাজ্যে সেনা মোতায়েন এবং পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে ইরান সরকার। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি রোববার মানবাধিকার প্রশ্নে পশ্চিমাদের দ্বৈত মানদণ্ডের জন্য নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমাদের অপছন্দের কোথাও দাঙ্গা হলে, তখন সেটাকে তারা ভালো চোখে দেখে এবং সমর্থন দেয়।
জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর দাবিতে যুক্তরাজ্যে অনেকদিন ধরেই বিক্ষোভ করে আসছেন বিভিন্ন সেক্টরের কর্মীরা।
ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান নাদিম জাহাউই বলেছেন, বড়দিন ঘিরে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলার ধাঁচ কমাতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বিবেচনা করছে সরকার।
জাহাউই স্কাই নিউজের সোফি রিজ অন সানডে প্রোগ্রামকে জানান, প্রস্তাব অনুযায়ী সামরিক কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্স চালানোর পাশাপাশি সীমান্তেও দায়িত্ব পালন করবেন।
ব্রিটিশ সরকার বলছে, বড়দিন ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সামরিক বাহিনী, সাধারণ নাগরিক এবং স্বেচ্ছাসেবকরা বিমান ও সমুদ্রবন্দরের দায়িত্ব পালন করবেন। এ জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
ঘোষাণাটি এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক মন্দা এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। বিভিন্ন সেক্টরে হাজার হাজার মানুষ এমন একসময়ে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দাবিতে ধর্মঘটে যাচ্ছে, যখন সরকার বারবার বলছে ধর্মঘটে যাওয়ার সময় এখন না।
জাহাউই স্কাই নিউজকে বলেছেন, ‘এখন ধর্মঘটের সময় না।
‘আপনি যদি মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করে কিছু ক্ষেত্রে অর্থ প্রদান করেন, তবে তা হবে ভুল সিদ্ধান্ত। এতে মুদ্রাস্ফীতি দীর্ঘায়িত হবে। কম আয়ের লোকজন সবচেয়ে বিপদে পড়বে। ইউনিয়নগুলোকে তাই বলতে চাই, এখন যে ধর্মঘটের সময় না সেটা আপনারা ভালো করেই জানেন। এখন সময় চেষ্টা করার, আলোচনায় বসার।’
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তার দাবি, প্রতিবাদকারীদের স্বার্থপর সংখ্যালঘু। তারা আইন ভঙ্গ করছে। তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা উচিত।
১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে এক বৈঠকের পর দেয়া বক্তব্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমার কথা হচ্ছে যারাই আইন ভাঙবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করা উচিত।
"ইতোমধ্যে পুলিশকে ‘অবৈধ’ বিক্ষোভ দমন করার জন্য ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পুলিশের প্রতি সরকারের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।"
বিক্ষোভের প্রতি ব্রিটিশ দৃষ্টিভঙ্গি ইরানের পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছে। তারা তেহরান এবং লন্ডন কীভাবে অস্থিরতা মোকাবিলা করছে, তার মধ্যে তুলনা করেছে। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর গত দুই মাস ধরে ইরানে অস্থিরতা চলছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী সহিংস অস্থিরতা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করছে। তারপরও অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ইরান পুলিশের ক্ষমতা সীমিত করেছে।
ইরান সরকারের মানবাধিকার বিষয়ে সমালোচনা করছে পশ্চিমারা, বিশেষ করে জার্মানি। দেশটি জাতিসংঘে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে শুরু থেকেই পশ্চিমাদের সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইরান।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি রোববার মানবাধিকার প্রশ্নে পশ্চিমাদের দ্বৈত মানদণ্ডের জন্য নিন্দা করেছেন।
যুক্তরাজ্যের পুলিশকে নতুন ক্ষমতা দেয়ার ঘটনায় দেশটির সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কানানি টুইটারে বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় জনগণের বিক্ষোভগুলো একদমই অযৌক্তিক। এগুলোকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। তবে এসব দেশের অপছন্দের কোথাও দাঙ্গা হলে, তারা তখন সেটাতে সমর্থন দেয়। ভালো বলে।’
এ সময় তিনি একটি বিখ্যাত ফার্সি প্রবাদও ব্যবহার করেন; বাংলায় অনুবাদ করলে যার মানে দাঁড়ায়- ‘মৃত্যু ভালো তবে তা প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে হলেই’। এটি এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে লোকেরা অন্যদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া খারাপ কিছুতে আনন্দ পায়।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে দীর্ঘ যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সৌদি আরবে এ বৈঠক হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গেল তিন বছর ধরে চলা আমেরিকান নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছেন তিনি।
অ্যাসোসিয়েটে প্রেসের খবরে জানানো হয়, স্থানীয় সময় বুধবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ‘এ যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করতে পুতিন ও আমি একমত।’
এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা হবে বলে জানান ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনও সমানভাবে অংশীদার হবে কি না, সে বিষয়ে তার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা শান্তি অর্জনের পথে রয়েছি। আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও শান্তি চান।
‘আমিও শান্তি চাই। আমি কেবল দেখতে চাই, লোকজনের প্রাণহানি হচ্ছে না।’
পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিনের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জনগণ সত্যিকার অর্থে জানেন না। কিন্তু আমি মনে করি, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, তিনিও এ যুদ্ধের অবসান দেখতে চান। কাজেই সেটা ভালো এবং আমরা এ যুদ্ধ বন্ধের দিকে যাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব।’
ওই সময় শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানান ট্রাম্প। বৈঠকটি সৌদি আরবে হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার মাধ্যমে এ আভাসই দেওয়া হচ্ছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ওয়াশিংটন ও মস্কো একটি চুক্তি পৌঁছাতে একমত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিয়েভও যে পরিপূর্ণ একটি অংশীদার হবে বলে মনে করত জো বাইডেন প্রশাসন, সেখান থেকে সরে এসেছে ওয়াশিংটন।
ইউক্রেনও এ যুদ্ধের সমান অংশীদার হতে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘খুবই চমৎকার প্রশ্ন। আমি মনে করি তারাও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান।’
এ ছাড়া ইউক্রেন যে পশ্চিমাদের সঙ্গে আরও ঘেঁষতে চাইছে, সে প্রত্যাশায় আরেকটি আঘাত করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেগসেথ।
ব্রাসেলসে ন্যাটোর প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর সদস্য হওয়া বাস্তবসম্মত নয়।’
পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘হেগসেথ যে কথা বলেছেন, সেটিই সত্য বলে আমি মনে করি।’
ইউক্রেনে ২০২২ সালে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা এ সামরিক জোটের সদস্য হওয়া অপরিহার্য।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
তার ভাষ্য, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি ‘সামগ্রিক সমাধান’ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া চুক্তি সম্পর্কে পুতিন বলেন, ‘আমরা আশা করি এটি মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি এবং (মধ্যপ্রাচ্য) অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।’
তিনি ক্রেমলিনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলোচনার সময় উল্লেখ করেন, ‘একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি সামগ্রিক সমাধানের প্রচেষ্টা দুর্বল না করা গুরুত্বপূর্ণ।’
সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিক সেক্রেটারির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ নিজেই এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন।
টিউলিপ এক্স হ্যান্ডেলে (সাবে টুইটার) তার পদত্যাগের কথা জানান। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রের ছবিও পোস্ট করেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেন, অভিযোগ পর্যালোচনার পর ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর (স্ট্যান্ডার্ডস ওয়াচডগ) স্যার লাউরি ম্যাগনাস নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি মন্ত্রী হিসেবে কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেননি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় টিউলিপকে লেখা স্টারমারের একটি চিঠি প্রকাশ করেছে। সেখানে তিনি লিখেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পাশাপাশি আমি এটাও স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্বাধীন উপদেষ্টা হিসেবে স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, তিনি মন্ত্রী হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন ও আর্থিক অনিয়মের কোনো অভিযোগের ঘটনা পাননি।’
তিনি মন্ত্রী থাকলে সরকার তার কাজে মনযোগ দিতে পারবেন না এমন কথা উল্লেখ করে টিউলিপ বলেন, ‘এ কারণে আমি আমার মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।
গত আগস্টে শেখ হাসিনা গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকেরও নাম আসে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ওই অভিযোগ তদন্ত করছে।
দুদকের এ তৎপরতা আলোচনায় আসার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
২০১৩ সালে শেখ হাসিনার মস্কো সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের সময় টিউলিপ সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন। বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম তার সে ছবি ওই সময় ফলাও করে প্রচার করে।
কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি বেইডনকসহ বেশ কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতা টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর ও সম্পাদকীয় প্রকাশ হতে থাকে।
এর মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সম্পত্তি টিউলিপের ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এ প্রেক্ষাপটে টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি (রেফারেল) লিখেন।
মন্ত্রীদের আচার-আচরণ, নীতিনৈতিকতা বিষয়ে ম্যাগনাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে থাকেন।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, পেনশনমন্ত্রী এমা রেনল্ডস টিউলিপ সিদ্দিকের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন:জার্মানিতে ক্রিসমাসের মার্কেটে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে দুজনকে হত্যা ও ৬৮ জনকে আহত করেছেন এক সৌদি নাগরিক।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জাক্সেন আনহাল্ট অঙ্গরাজ্যের মাগদেবুর্গের একটি ব্যস্ততম বাজারে এ হামলা হয়।
ওই সময় স্থানীয় লোকজন বড়দিনের জিনিসপত্র কেনায় ব্যস্ত ছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থলের সামান্য দূরে গাড়ি থামিয়ে ওই সৌদি নাগরিককে আটক করে।
জার্মানির মাগদেবুর্গ থেকে এএফপি এসব তথ্য জানায়।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, মাগদেবুর্গ শহরটি বার্লিন থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। নিহত দুজনের মধ্যে এক শিশুও ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার সময় এলাকার ব্যস্ততম মার্কেটে পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেন এক ব্যক্তি। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন প্রাণ হারান। আহত হন অনেকে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে।
হামলার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে নামে এবং ঘটনাস্থল থেকে সামান্য দূরে গাড়ি থামিয়ে হামলাকারীকে আটক করে।
জার্মানির সংবাদমাধ্যম জানায়, হামলাকারী সৌদি নাগরিক তালেব (৫০) একজন চিকিৎসক। ২০০৬ সাল থেকে জার্মানির স্থানীয় একটি ক্লিনিকে মানসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত তিনি। কালো রঙের ‘বিএমডব্লিউ’ গাড়িটিতে তিনি একাই ছিলেন। পুলিশ তাকে পেছনে দুই হাত বেঁধে নিয়ে যায়।
এই হামলার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর, দেশটির স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।
হামলার ঘটনায় এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ এলাকাটি ঘিরে রেখেছে। হামলায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ হতাহত হননি বলে জানিয়েছেন কমিউনিটির নেতারা।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
হামলায় ছয়টি বিদেশি দূতাবাস ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকালে রাশিয়া দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে কিয়েভে। একের পর এক শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। কিয়েভের আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা গেছে।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় কিয়েভে অবস্থিত আলবেনিয়া, আর্জেন্টিনা, উত্তর মেসিডোনিয়া, ফিলিস্তিন, পর্তুগাল ও মন্টিনিগ্রোর কূটনৈতিক মিশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হামলায় একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
ইউক্রেনের সামরিক প্রশাসনের প্রধান সেরহি পপকো বলেন, শুক্রবার সকালে ইউক্রেনের রাজধানীতে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া।
তিনি আরও বলেন, সকালের ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভের বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরে যায়।
হামলায় একটি অফিস ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রুশ বাহিনী হাইপারসনিক কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র ও ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
কিয়েভের সামরিক বাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি জানায়, স্থানীয় সময় সকাল সাতটার দিকে এ হামলা চালানো হয়।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুবাহিনীর হামলায় আহত দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিয়েভের চারটি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রের ধংসাবশেষ পড়ে গাড়ি ও ভবনে আগুন ধরে যায়। সব জায়গাতেই জরুরি বিভাগের কর্মীরা কাজ করেন।
অবশ্য হামলার আগেই ইউক্রেনের বিমান বাহিনী কিয়েভের বাসিন্দাদের সতর্ক করেছিল। তারা বলেছিল, উত্তর দিক থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে আসছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আরও বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন ও আরও কয়েকটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে খেরসনে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
রাশিয়া বলেছে, তাদের বাহিনী চলতি সপ্তাহে রোস্তভ অঞ্চলে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনায় দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে আঘাত হানে।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব মস্কোর একটি আবাসিক ভবনের কাছে মঙ্গলবার সকালে বিস্ফোরণে জ্যেষ্ঠ জেনারেলসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মস্কো থেকে এএফপি জানায়, মস্কোর রিয়াজানস্কি অ্যাভিনিউতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় একটি ফৌজদারি তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, আবাসিক ভবনের কাছে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলমান।
পুলিশের একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল আরটি জানায়, নিহত দুজন হলেন উচ্চ পদস্থ রাশিয়ার জেনারেল এবং তার ডেপুটি। পুলিশ সূত্র জানায়, বিল্ডিংয়ের কাছে পার্ক করা একটি বৈদ্যুতিক স্কুটারে রাখা বাড়িতে তৈরি ডিভাইস বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
নির্বাচনি প্রচারণাকালে কয়েক দফা হামলা এবং তার প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্তদের ওপর বোমা হামলার হুমকির পর পুতিন ট্রাম্পকে নিয়ে বেশ চিন্তিত বলে জানিয়েছে তার এক নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
স্কাই ও ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে শুক্রবার এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে পুতিন নবনির্বাচিত আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে একজন অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান রাজনীতিক হিসেবে উল্লেখ করেন।
কাজাখস্তানে গতকাল একটি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন এমন মন্তব্য করেন।
স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জুলাইয়ে নির্বাচনি প্রচারকালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে ট্রাম্প আহত হন। আরেকবার ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের গলফ কোর্স থেকে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে অপর এক বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুতিন বলেন, ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনি লড়াইয়ে সম্পূর্ণ বর্বরোচিত এবং অসভ্য আচরণ করা হয়েছিল। আমার মতে তিনি এখনও নিরাপদ নন। দুর্ভাগ্যবশত, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে।’
পুতিন আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ট্রাম্প বুদ্ধিমান এবং আশা করি তিনি সাবধানে থাকবেন এবং বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য