গণছাঁটাই শুরু করেছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার। এরইমধ্যে টুইটারে কর্মরত ভারতীয়দের ব্যাপকহারে ছাঁটাই করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাতে শুক্রবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে টুইটার অফিসের মার্কেটিং ও কমিউনিকেশন্স বিভাগের গোটা দলকেই ছাঁটাই করা হয়েছে। দেশটিতে টুইটারে কাজ করা ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী ইতোমধ্যে চাকরি হারিয়েছেন।
কদিন আগে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কেনেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। এর কিছুদিন পর আমেরিকান সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাড়ে ৭ হাজার কর্মীর মধ্যে অর্ধেকই ছাঁটাই করবেন নতুন টুইটার প্রধান।
ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের কাছে পাঠানো একটি মেমো তাদের ইমেইলে পাঠায় টুইটার। সেখানে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানকে সঠিক পথে রাখার জন্য শুক্রবার থেকে আমরা বিশ্বব্যাপী কর্মশক্তি কমানোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে টুইটার। আপনি যদি অফিসে থাকেন বা অফিসের পথে থাকেন, তাহলে দয়া করে বাড়িতে ফিরে যান।
ইতোমধ্যে টুইটারের অফিসগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। গ্রাহকদের তথ্যের নিরাপত্তার খাতিরে কর্মীদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়েছে।
মাস্কের দাবি, টুইটার কিনতে তাকে বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে। সেই খরচ তোলার জন্যই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
কেবল কর্মী ছাঁটাই নয়, টুইটারের ‘ব্ল-টিক’ বা ভেরিফিকেশনের জন্য মাসিক ফি নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন ইলন মাস্ক। তিনি জানান, এখন থেকে ব্লু-টিকের জন্য মাসে ৮ ডলার করে দিতে হবে টুইটার ব্যবহারকারীদের।
টুইটারের খরচ কমানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানায়, প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অবকাঠামোগত খরচ সাশ্রয়ের উপায় খুঁজতে ইতোমধ্যে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মাস্ক।
মাস্ক টুইটার কেনার পরই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পরাগ আগারওয়াল, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা নেড সিগাল, আইন ও নীতিমালাবিষয়কপ্রধান বিজয়া গাড্ডেকে বরখাস্ত করেন।
এদিকে পর্যাপ্ত নোটিশ না দিয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার অভিযোগে টুইটারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে টুইটারের কিছু কর্মী। তারা বলছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার আইন না মেনে টুইটার গণছাঁটাই করতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। সান ফ্রান্সিস্কোর ফেডারেল আদালতে বৃহস্পতিবার মামলা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী, গণছাঁটাইয়ের ৬০ দিন আগে কর্মীদের নোটিশ দিতে হয়।
এ নিয়ে টুইটারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিখিল গুপ্তা নামের ওই ব্যক্তিকে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সূত্র: বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর এ নিয়ে যে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে তাতে লেখা হয়েছে- গ্রেপ্তার হওয়া ওই ভারতীয় নাগরিক হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিক অভিযোগপত্র প্রকাশ করার পরই ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তা ধরা পড়েন চেক প্রজাতন্ত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে ৫২ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখনও ওই দেশেই আটক রয়েছেন।
নিখিল গুপ্তা নগদ এক লাখ ডলার দিয়ে ভাড়াটে খুনিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য নিয়োগ করতে যাচ্ছিলেন। তবে সেই ভাড়াটে খুনি আসলে ছিলেন একজন ছদ্মবেশী ফেডারেল এজেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর অবশ্য এটা উল্লেখ করেনি যে কাকে হত্যার পরিকল্পনার জন্য ওই ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
তবে কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমস খবর দেয় যে ভারতে ঘোষিত সন্ত্রাসী গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আরও এক দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ পৌঁছেছে সপ্তম দিনে।
আগের দু দফার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ছিল ছয় দিন, সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার। এরপর বৃহস্পতিবার আরও একদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস বলেছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সপ্তম দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সম্মত হয়েছে।
এর আগে অবশ্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো কথা জানালেও, ঠিক কতদিন তা বাড়বে তা জানায়নি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একজন সিনিয়র উপদেষ্টা বলেছেন, যারা ছয় দিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে চান তাদের অবশ্যই হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
মার্ক রেগেভ বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক যতদিন পর্যন্ত হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে থাকবে। হামাসের ওপর চাপ দিতে হবে। যদি তারা জিম্মিদের মুক্তি দিতে থাকে, তাহলে বিরতি চলতে পারে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, সর্বশেষ ইসরায়েল আরও ৩০ ফিলিস্তিনি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। আর হামাস ছেড়ে দিয়েছে আরও ১০ জনকে।
দেড় মাসের বেশি সময় গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর গত শুক্রবার থেকে সোমবার নাগাদ চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে যায় দুই পক্ষ।
সেই যুদ্ধবিরতি আরও দুই দিন বাড়িয়ে বুধবার পর্যন্ত করতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। সেটিকে স্থায়ী রূপ দিতে চাপ দিচ্ছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল।
ইসরায়েলে ঢুকে হামাস গত ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় টানা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামলা শুরুর পর ৯ অক্টোবর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
টানা হামলার শিকার গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কদিন আগে মিশরের রাফা ক্রসিং দিয়ে কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে ওই উপত্যকতায়।
এতদিন গাজায় জ্বালানি প্রবেশে ইসরায়েলের অনুমতি ছিল না। বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে সম্প্রতি শুধু হাসপাতাল ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর জন্য জ্বালানির অনুমতি দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ঢুকেছে কয়েকটি জ্বালানিবাহী ট্রাক।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিশরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন।
কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে নিজ বাড়িতে ১০০ বছর বয়সে তিনি মারা যান বলে স্থানীয় সময় বুধবার রাতে কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
তবে তার মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি এতে। ১৯২৩ সালে জার্মানিতে জন্ম নেয়া কিসিঞ্জিার পরিবারের সঙ্গে ১৯৩৮ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের প্রশাসনের সময় আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কূটনীতির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কয়েক দশকের কর্মজীবনের কিসিঞ্জার সুনামের পাশাপাশি বিতর্কের মুখেও পড়েন।
১৯৬৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন কিসিঞ্জারকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন, সে সময় দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলেন তিনি।
নিক্সন প্রশাসনের সময় সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে এবং পরে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের অধীনে কিসিঞ্জার চীনের প্রতি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি ইসরায়েল এবং এর প্রতিবেশীদের মধ্যে ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপপুর যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সাহায্য করেছিলেন এবং প্যারিস শান্তি চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ, চিলি ও আর্জেন্টিনায় সামরিক অভ্যুত্থান ছাড়াও ১৯৭৫ সালে পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার রক্তক্ষয়ী অভিযানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিবেচিত হন অনেকের কাছেই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান নেয়ায় কিসিঞ্জারকে এখনও এ দেশে ধিক্কার দেয়া হয়।
১৯৭৩ সালে উত্তর ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে কিসিঞ্জারকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। লি ডাক এ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে তখন পদত্যাগ করেন নোবেল কমিটির দুই সদস্য।
গাজার শাসক দল হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সাময়িক যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয় জানিয়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব।
সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে এ আহ্বান জানান বলে বুধবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে সৌদির সর্বোচ্চ কূটনীতিক বলেন, বর্তমানে গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী যাচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।
তিনি বলেন, ‘বিপদের বিষয় হলো যদি এই…যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যায়, তাহলে আমরা ফের আগের দেখা হত্যাযজ্ঞে ফিরব, যা অসহনীয়।’
সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা এখানে স্পষ্ট বক্তব্য দিতে এসেছি যে, সাময়িক যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়। দরকার যুদ্ধবিরতি।’
দেড় মাসের বেশি সময় গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর গত শুক্রবার থেকে সোমবার নাগাদ চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে যায় দুই পক্ষ। সেই যুদ্ধবিরতি আরও দুই দিন বাড়িয়ে বুধবার পর্যন্ত করতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। সেটিকে স্থায়ী রূপ দিতে চাপ দিচ্ছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল।
আরও পড়ুন:বয়সে সবচেয়ে বড় তাই বিপদেও যেন বড় দায়িত্ব পালন করলেন ভারতের উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে আটকা পড়া গব্বর সিংহ নেগি। সুড়ঙ্গ থেকে একে একে ৪০ জন বেরিয়ে আসার পর, সবার শেষে বেরোলেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার পর উদ্ধারকারীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে গব্বর সিংহের প্রশংসা। তাকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাকি শ্রমিকরাও।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ১৭ দিনের বন্দিদশায় বাকিদের যোগাসন শিখিয়েছেন বয়োজ্যেষ্ঠ গব্বর। বিপদ এবং আতঙ্কের মধ্যেও শ্রমিকরা যাতে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকেন, তা সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গব্বর। সেখানেই তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলছিল।
হাসপাতালের বাইরে থেকেই গব্বরের ভাই জয়মল সিংহ নেগি এনডিটিভিকে বলেন, দাদা বাকিদের বলেছিল, আমি সবার বড়। আমি সবার শেষে সুড়ঙ্গ থেকে বেরোব। দাদা ফিরে আসায় তিনি এবং তাদের পরিবার যে খুশি, সে কথাও জানান জয়মল।
উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গমুখ থেকে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দূরে উত্তরাখণ্ডের পাওড়ি গঢ়ওয়াল জেলায় গব্বরের বাড়ি। তার সাহসিকতার প্রশংসা শোনা গিয়েছে বড়ির লোকেদের কাছ থেকেও।
প্রথমে পাইপের মাধ্যমে, পরে ফোনের মাধ্যমে কয়েক দিন ধরেই গব্বরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন ভাই জয়মল। তার কথায়, দাদা খুব সাহসী। দাদাকে বললাম, উদ্ধারকাজ শুরু হলে তো হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যাবে। তখন কী করবে? বলল, আমি বড়। আমি সবার শেষে বেরোব।
১৭ দিন পর মঙ্গলবার রাতে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪১ জন শ্রমিককে। সবাই সুস্থ রয়েছেন। তবে দীর্ঘ দিন সুড়ঙ্গে বন্দি থাকার কারণে তাদের মনের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সুড়ঙ্গের বাইরে গড়ে তোলা হয়েছিল অস্থায়ী হাসপাতাল। মঙ্গলবার রাতে সুড়ঙ্গ থেকে বের করার পর শ্রমিকদের সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা চলে।এর পর তাদের ৩০ কিলোমিটার দূরে চিনিয়ালিসৌর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই ৪১টি শয্যা তৈরি ছিল। প্রত্যেক শয্যায় ছিল অক্সিজেনের ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শাসক দল হামাস এবং ইসরায়েলের চার দিনের যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় শুরু হয় শুক্রবার। এর পর সোমবার এ কার্যক্রম বাড়ানো হয় আরও দুই দিন, অর্থাৎ বুধবার পর্যন্ত।
হামাস সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, কাতার ও মিসরের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সাময়িক যুদ্ধবিরতি দুই দিন বাড়ানো হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি দুই দিন বাড়ানোর চুক্তির মধ্যে রয়েছে হামাসের কাছে থাকা ইসরায়েলের ২০ বন্দি এবং ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৬০ ফিলিস্তিনির মুক্তির বিষয়টি।
বন্দি বিনিময় শুরু হওয়ার পঞ্চম দিন মঙ্গলবার ৩০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। হামাস মুক্তি দিয়েছে ১০ জিম্মিকে।
আল জাজিরার বুধবারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাঁচ দিনের এই বন্দি বিনিময়ে ইসরায়েল নারী ও শিশুসহ মোট ১৮০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
হামাস মুক্তি দিয়েছে ৮১ জিম্মিকে, যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলি নাগরিক।
ইসরায়েলে ঢুকে গত ৭ অক্টোবর হামাসের প্রাণঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় গাজায় প্রাণ যায় কমপক্ষে ১৪ হাজার ৮৫৪ ফিলিস্তিনির। অন্যদিকে হামাসের হামলায় প্রাণ যায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলির।
দু্ই পক্ষের ব্যাপক প্রাণহানি ও গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে শুক্রবার থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও হামাস।
আরও পড়ুন:১৭ দিন ধরে আটকে থাকার পর অবশেষে ভারতের উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হয়েছেন ৪১ শ্রমিক। একটা সময় হয়তো তারা ধরেই নিয়েছিলেন, আর বেঁচে ফেরা হবে না তাদের। তবে সব আশঙ্কা দূর করে একে একে বেরিয়ে এসেছেন তারা।
কীভাবে কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে এই শ্রমিকরা আটকে পড়ে সময় কাটিয়েছেন, কী খেয়েছেন এ কদিন ধরে- এসব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছে তারা।
ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলা থেকে শ্রমিক হিসেবে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী জমরা ওঁরাও। ধস নামার কারণে বাকি শ্রমিকদের সঙ্গে তিনিও সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় জমরা জানান, ১২ নভেম্বর ভোরে সুড়ঙ্গে কাজ করার সময় একটা বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। তাদের চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ।
জমরার কথায়, আমরা প্রাণ বাঁচাতে পড়িমরি করে দৌড়েছিলাম। লাভ হয়নি। কেউ বেরোতে পারিনি। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকে পড়েছি। সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। খুব খিদে পেয়েছিল। ভয় গ্রাস করছিল। সাহায্যের জন্য প্রার্থনা শুরু করি। কিন্তু আশা ছাড়িনি।
জমরা জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর টানা ২৪ ঘণ্টা অভুক্ত থাকতে হয়েছিল তাদের। তার পর খাবার পাঠায় প্রশাসন। প্রথম বার খাবার হিসেবে এসেছিল মুড়ি এবং এলাচ। সেই খাবার খেয়েই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছিলেন বলে জানান জমরা।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা পর যখন আমরা প্রথম খাবার খেলাম, তখন উপলব্ধি হলো যে বেঁচে আছি। আমরা বুঝতে পারি যে, কেউ ঠিক আমাদের কাছে পৌঁছাবে। আমাদের উদ্ধার করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। আমাদের আশা আরও বাড়ে।
জমরা আরও জানিয়েছেন, কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে সময় পার করতে মোবাইলের গেমই ছিল তাদের ভরসা। মোবাইলে লুডো খেলে অনেকটা সময় পার হয়েছে তাদের। বাইরে থেকে চার্জার পাঠিয়ে দেয়ায় ফোন চার্জ করতে অসুবিধা হয়নি। তবে নেটওয়ার্ক না থাকায়, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। মোবাইলে গেম খেলা ছাড়া একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলে এবং মনোবল বাড়িয়েও সুড়ঙ্গের মধ্যে তারা সময় কাটিয়েছিলেন বলে জমরা জানিয়েছেন।
উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে যে ৪১ জন আটকে ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক। তাদের মধ্যেই ছিলেন জমরা। জমরা জানিয়েছেন, স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে রেখে মাসে ১৮ হাজার টাকার জন্য তিনি ওই সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন।
১৭ দিন পর খোলা আকাশে নিশ্বাস নেয়ার পর জমরা বলেন, ‘আমি ভাল আছি। আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং ঈশ্বর আমাদের শক্তি দিয়েছেন। এটাও বিশ্বাস রেখেছিলাম যে, যেহেতু ৪১ জন আটকে রয়েছি, তাই কেউ ঠিক আমাদের উদ্ধার করবে। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করছিলাম। যারা ১৭ দিন ধরে লাগাতার পরিশ্রম করে আমাদের উদ্ধার করেছেন, তাদের ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য