জ্বালানির জন্য আসন্ন শীতে নিশ্চিতভাবে ভুগতে যাচ্ছে ইউরোপ। এটা মেনে নিয়েই সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে তাদের ‘ওয়ার গেইমড’ নামে বিশেষ পরিকল্পনা করেছে; যার অধীনে কমপক্ষে সাত দিন বিদ্যুৎহীন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেবে ব্রিটিশ জনগণ।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের হাতে এসেছে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনার নথিগুলো। তারা বলছে, ‘অফিশিয়াল সেনসেটিভ’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে নথিগুলোকে। ‘যৌক্তিক সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে’ পরিবহন, খাদ্য, পানি, যোগাযোগ, জ্বালানিসহ প্রায় সব খাত অন্তত সাত দিন পর্যন্ত ‘গুরুতরভাবে ব্যাহত’ হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে এসব নথিতে।
এতে আরও বলা হয়, ‘ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস এই বলে সতর্ক করেছে যে দেশ যদি ব্ল্যাকআউটে পড়ে তবে এই শীতে চরম ঝুঁকিতে পড়বে জনগণ। সেই পরিস্থিতিতে তরুণ, বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা খাদ্য, পানি এবং আশ্রয়ের মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে সরকারের সহায়তা পাবেন।’
হোয়াইটহলের কর্তারা এখন স্ট্রেস টেস্টিং প্রোগ্রাম-ইয়ারো নিয়ে ব্যস্ত, যেটি বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ঘটনা মোকাবিলায় গোপনীয় পরিকল্পনার অংশ। এটি নিয়ে তারা সরকারি দপ্তর এবং কাউন্সিলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক অনুশীলন করেছে।
ক্রস-গভর্নমেন্ট ব্লুপ্রিন্টটি তৈরি হয় ইউক্রেন যুদ্ধের আগে, ২০২১ সালে। ন্যাশনাল গ্রিডে বড় কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে, পরিকল্পনা ও স্থিতিস্থাপকতার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে এটি তৈরি হয়েছিল। আসন্ন শীত ঘিরে জাতীয় গ্রিডের জ্বালানি দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই।
তারপরও যুদ্ধের কারণে ব্ল্যাকআউটের প্রভাব নিয়ে যুক্তরাজ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন, জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় ওই পরিকল্পনাগুলো আমলে নেয়া হয়েছে।
ব্রিটেনের ছায়া জলবায়ুমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বলেন, ‘সব সরকারই সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির জন্য কনটিনজেন্সি প্ল্যানিং করে। সত্যি বলতে, দশক ধরে রক্ষণশীলদের ‘ব্যর্থ’ জ্বালানিনীতির কারণে আজ আমরা একটি দুর্বল দেশে পরিণত হয়েছি।
‘জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ কমিয়ে আনা, পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত এবং গ্যাস সঞ্চয় বন্ধ করার ফলে আজ এসবের ব্যয় আকাশে ঠেকেছে। গ্যাসের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে আমাদের ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছেন পুতিন।’
বন্যার ক্ষতি বা সাবস্টেশনে বজ্রপাতের বিষয়গুলোও আছে সরকারি পরিকল্পনাবিদদের পরিকল্পিত প্রযুক্তিগত ত্রুটিতে। উপসমুদ্রের বিদ্যুতের তারে যেকোনো হামলাকেও কভার করবে এই পরিকল্পনা।
সম্ভাব্য বিপর্যয় নিয়ে সোমবার নিরাপত্তামন্ত্রী টম তুগেনধাত সবাইকে সতর্ক করেছিলেন। এর পরেই নথিগুলো ফাঁস হয়। যেখানে বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘আরও ঝুঁকিপূর্ণ’ হয়ে উঠেছে ব্রিটেন।
পরিকল্পনায় বর্ণিত সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে অ্যানালগ এফএম রেডিওগুলোর মাধ্যমে কেবল বিবিসি রেডিও ২ এবং ৪ ব্রডকাস্টিং কাজ করবে। কারণ কয়েক ঘণ্টার জেনারেটর ব্যাকআপের কারণে স্থানীয় রেডিও স্টেশনগুলো অনিশ্চয়তায় থাকবে।
অক্টোবরে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবিসি গোপন কিছু স্ক্রিপ্ট তৈরি রেখেছে, যেগুলো আসন্ন শীতে জ্বালানি ঘাটতির কারণে ব্ল্যাকআউট বা গ্যাস সরবরাহের ক্ষতি হলে প্রকাশিত হবে।
একটি সূত্র বলেছে, ‘সরকার ইয়ারো নিয়ে কোনো প্রচার চাচ্ছে না। কারণ, তারা চায় না এটিকে ইউক্রেন, জ্বালানি সরবরাহ এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে দেখা হোক। তবে আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে আমরা মানুষকে সাহায্য করতে পারি। সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের সামনে সত্যিকারের উদ্বেগ অপেক্ষা করছে এবং এটি ঘটতে পারে।’
মন্ত্রিপরিষদ অফিস অবশ্য এই দাবিকে স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ, তাদের পরিকল্পনার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ-সম্পর্কিত নয়।
প্রোগ্রাম ইয়ারো এমন একটি পরিস্থিতির জন্য তৈরি করা, যখন প্রচণ্ড শীতে কোনো সতর্কতা ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ব্যাকআপ জেনারেটরও কাজ করবে না। প্রোগ্রামটি বলছে, বিদ্যুতের চাহিদার ৬০ ভাগ ব্ল্যাকাউটের ‘২ এবং ৭ দিনের মধ্যে’ মেটানো হবে। এই দুই দিন পরিবার এবং ব্যবসায়ীরা রেশন সুবিধা পাবেন।
জ্বালানি নিয়ন্ত্রক অফগেম এবং ন্যাশনাল গ্রিডের মধ্যে একটি চুক্তিতে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ পর বিদ্যুতের চাহিদার শতভাগ পুনরুদ্ধার করতে হবে। সরকার আশা করছে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতেও সেই লক্ষ্য পূরণ হবে।
নথিতে বলা হয়, ‘যোগাযোগ, পরিবহন নেটওয়ার্ক, জ্বালানি সরবরাহ, খাদ্য, পানি সরবরাহসহ সব খাত এই বিপর্যয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
ইয়ারো পরিকল্পনাগুলো গত মাসে ন্যাশনাল গ্রিডের গত মাসের রূপরেখার চেয়ে আরও গুরুতর পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা। যেখানে সতর্ক করা হয়, তাপমাত্রা যদি দ্রুত কমে যায় এবং রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে ব্রিটিশরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে তিন ঘণ্টা রোলিং ব্ল্যাকআউটের মুখোমুখি হতে পারে।
বিদ্যুৎ সরবরাহের জরুরি নীতির অধীনে, পরিবার এবং ব্যবসায়ীদের একটি পরিকল্পিত বিভ্রাটের ২৪ ঘণ্টার নোটিশ দেয়া হবে। পরিকল্পনাটি রোলিং ভিত্তিতে এক সপ্তাহ আগে প্রকাশ হতে পারে।
‘নিয়ম করে সংযোগ বিচ্ছিন্নের পরিকল্পনা’ সারা দেশে সমানভাবে প্রয়োগের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। শুরুতে দিনে একবার তিন ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা উচিত। কারণ, পুনরায় দিতে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আসলে এটা জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতির তীব্রতার ওপর নির্ভর করবে।’
এনার্জি থিঙ্কট্যাঙ্কের রেগুলেটরি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্টের ইউরোপ ডিরেক্টর জ্যান রোসেনো বলেন, ‘একসঙ্গে অনেকগুলো হুমকি আসছে। গ্যাসের ঘাটতি, উচ্চ দাম, ফ্রান্সের পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা... এগুলো সরকারের উদ্বেগের কারণ। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় পরিকল্পনা করা বিচক্ষণতার লক্ষণ। তবে এটা লজ্জাজনক, সংকট না এলে এসব তৈরি হয় না।’
সরকারি এক মুখপাত্র বলেন, ‘দায়িত্বশীল সরকার হিসেবে আমরা সব ধরনের সম্ভাব্য পরিস্থিতির প্রস্তুতি নিই। অল্প সময়ে একটি টেকসই পরিকল্পনা প্রস্তুত ও তা প্রয়োগে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করি। এটি ধারাবাহিকভাবে চলছে। আসলে এটা আমাদের জাতীয় স্থিতিস্থাপকতা পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
আরও পড়ুন:গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেয়া বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ ব্রিটন জন টিনিসউড জানালেন তার ১১১ বছরের দীর্ঘ জীবনের রহস্য।
টিনিসউডকে উদ্ধৃত করে শনিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, টিনিসউড মনে করেন, এত বছর বেঁচে থাকাটা তার ভাগ্যে ছিল। তার ডায়েটে বিশেষ কোনো গোপনীয়তা ছিল না। প্রতি শুক্রবার টিনিসউডের প্রিয় খাবার মাছ এবং চিপস।
এর আগে ১১৪ বছরের দীর্ঘজীবন শেষে ২ এপ্রিল মারা যান বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ হুয়ান ভিসেন্তে পেরেজ মোরা। ‘তিও’ ডাকনামে পরিচিত এ ব্যক্তি ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার নাগরিক।
ভিসেন্তে পেরেজ মারা যাওয়ায় উত্তরাধিকারসূত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসটি পান ব্রিটন জন টিনিসউড।
উত্তর ইংল্যান্ডের মার্সিসাইডে ১৯১২ সালে জন্মগ্রহণ করেন টিনিসউড। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং প্রাক্তন ডাক পরিষেবা কর্মী। টিনিসউডের বয়স ১১১ বছর এবং ২২২ দিন।
দীর্ঘায়ুর রহস্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আপনার আয়ু হয়ত দীর্ঘ হবে অথবা কম হবে। এখানে আপনার কিছুই করার নেই।’
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন বেঁচে ছিলেন। সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী এবং সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হলেন স্পেনের মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। তার বয়স বর্তমানে ১১৭ বছর।
পশ্চিমা ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। এমনকি এর বাইরে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক কোনো দেশের ওপরও হামলা চালাবে না তারা। তবে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রাশিয়ার এসব অঞ্চলের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘এ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও কোনো আগ্রাসন দেখানো হবে না। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে যেসব কথা রটানো হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে সমর্থন করার অভিযোগ এনে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ কারণেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর যে সম্পর্ক, তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পাল্টাবে না। আর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও রকেট লঞ্চারের মতো ওগুলোকেও (এফ-১৬) আমরা ধ্বংস করব।’
তিনি বলেন, ‘এসব যুদ্ধবিমান যদি ইউক্রেনের বাইরের কোনো দেশ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে, তবে সেসব স্থানও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তা সে যে স্থানই হোক না কেন।’
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে বলে এ সময় সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার মস্কোতে গত শুক্রবার কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করলেও এ ধরনের আক্রমণের সামর্থ্য জঙ্গি সংগঠনটির আছে বলে বিশ্বাস করে না রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার তার দেশের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাখারোভা বলেন, মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আইএসের আছে, এমনটি বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন।
সাম্প্রতিক ওই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১৪৩ জন। আহত অনেককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় ইউক্রেনের জড়িত থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যদিও এ দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি।
রাশিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর দায় স্বীকার করে আইএস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলাটি চালায় আইএসের আফগান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে ইউক্রেন, তবে জাখারোভার ভাষ্য, ইউক্রেনকে হামলার দায় থেকে বাঁচাতে ত্বরিত গতিতে আইএসের ওপর দায় চাপায় পশ্চিমা দেশগুলো।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উপকণ্ঠে শুক্রবার রাতে কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী বন্দুক হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়ার অভ্যন্তরে দুই দশকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় শোক পালনের অংশ হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় চার ব্যক্তিকে।
বন্দুক হামলার পর জড়িত সবাইকে শাস্তির আশ্বাস দিয়ে রোববারকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কনসার্ট শুরুর আগে হলে আগত লোকজনের ওপর ওই হামলায় প্রাণ যায় তিন শিশুসহ ১৩৭ জনের। এ ঘটনায় আহত হন ১৮২ জন।
হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি এখনও হাসপাতালে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
বন্দুক হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় মস্কোর বাইরে নিজ বাসভবন এলাকার একটি গির্জায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন পুতিন।
এর আগে ঘটনাস্থল ছয় হাজার ২০০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্রোকাস সিটি হলের বাইরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রুশ নাগরিকরা। এ হলে সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ড ‘পিকনিক’ পারফর্ম শুরু করার আগে হামলা চালান চার বন্দুকধারী।
বিশ্বজুড়ে নিন্দিত ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), তবে পুতিন তার বক্তব্যে জঙ্গি সংগঠনটির কথা উল্লেখ না করে বলেছেন, হামলাকারীরা পালিয়ে ইউক্রেন যেতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে যে চার বন্ধুকধারী হামলা চালিয়েছে সেই চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৩৩ জনকে হত্যা ও ১৪০ জনের বেশি মানুষকে আহত করার ওই হামলার দায় নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেন জড়িত।
পুতিন বলেছেন, সবমিলিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন বন্ধুকধারী ইউক্রেনে যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার হয়েছে।
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, হামলাকারীদের ইউক্রেনে সরিয়ে নেয়ার জন্য সীমান্তে প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল।
ভয়াবহ এ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুতিন।
শনিবার টেলিগ্রামে আইএসের প্রচারমাধ্যম আমাক চার মুখোশধারীর একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেছে এরাই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। অবশ্য আইএসের দাবি নিয়ে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর শুক্রবারের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আসা লোকজনের ওপর গুলি ছোড়ে বন্দুকধারীরা। ‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা হয়।
আরও পড়ুন:রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত হওয়া কনসার্টে ভয়াবহ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় তিনি রোববার দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।
টেলিভিষণে দেয় ভাষণে পুতিন বলেন, ‘হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলার পর চার বন্দুকধারী ইউক্রেন সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। সীমান্তে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে তারা ধরা পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তথ্য অনুসারে তারা ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছিল, তাদের সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি রাখা ছিল।
‘তারা যে-ই হোক, যারাই তাদের নির্দেশ দিক, আমি আবারও বলছি, যারা সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দিয়েছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করব; তাদের শাস্তি দেব।’
দেশের জনগণের উদ্দেশে পুতিন বলেন, ‘শত্রুরা আমাদের বিভক্ত করতে পারবে না।’
রাশিয়ার এফএসবি নিরাপত্তা সার্ভিসের দাবি, হামলাকারীরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টার আগে ইউক্রেনে নিজেদের লোকজনের সঙ্গে ‘সংযুক্ত’ ছিল।
তবে রাশিয়ার এ দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে কিয়েভ। অবশ্য তাদের আশঙ্কা, এ ঘটনার পর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে।
শুক্রবার ক্রোকাস সিটি কমপ্লেক্সের কনসার্ট হলে বন্দুক হামলা চালান ছদ্মবেশী হামলাকারীরা। গুলি করার পর ভবনের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক ছিটিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কনসার্টে আসা লোকজনের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান বন্দুকধারীরা, যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, (মুসলিম বিরোধী) বিভিন্ন দেশে তাদের নিয়মিত হামলার অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে আইএসের কোন আঞ্চলিক সংগঠনটি এ হামলা করেছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করেনি সংগঠনটি।
ভেরিফায়েড ভিডিওতে দেখা যায়, হলে নিজেদের আসন গ্রহণ করছেন লোকজন। এরপর আর্তচিৎকারের সঙ্গে গুলির মুহুর্মুহু আওয়াজ পাওয়া যায়। ওই সময় লোকজনকে দৌড়ে বের হতে দেখা যায়।
অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কিছু মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন বন্দুকধারীরা। ওই সময় কনসার্ট হলে রক্তের মধ্যে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর গতকালের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।
মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আগত লোকজনের ওপর গুলি ছোড়েন বন্দুকধারীরা।
‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা চালানো হয়।
আরও পড়ুন:কনসার্ট হলে মুখোশ পরা বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জনে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার এ তথ্য বিশ্ব মিডিয়াকে জানিয়েছে।
তদন্তকারী কমিটি আরও জানিয়েছে, এখনও ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চলছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উৎসবের আমেজে চলছিল কনসার্ট। সেখানে হামলা হয় দুর্বৃত্তদের। রাশিয়ার মস্কোর এই ঘটনায় পুরো বিশ্ব হতবাক। এই হামলাকে পরিকল্পিত বলছে রাশিয়া।
এদিকে ক্রেমলিনের বরাতে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দুকধারীরা কনসার্ট হলে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকেন।
এর আগে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, হামলায় এখন পর্যন্ত ১১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তার আগে, নিহতের সংখ্যা ৯৩ জন বলে জানানো হয়েছিল।
এ ঘটনাকে ‘রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলা’ উল্লেখ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ হামলায় কারা জড়িত তেমন কিছুই নিশ্চিত করেনি।
কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি এটি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, কিউবাসহ বিশ্বনেতারা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য