পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু কেন্দ্র করে ইরানে ব্যাপক জনবিক্ষোভ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে দেশটির অভিজাত রাজনীতিকদের কপালে। দেশকাঁপানো এই বিক্ষোভ বিদেশি গোয়েন্দা ষড়যন্ত্রের ফসল, নাকি পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেটের প্রভাব তা নিয়ে বিতর্ক চলছে বিশ্লেষকদের মধ্যে। তরুণ প্রজন্ম ইসলামি বিপ্লবের মূল্যবোধ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কি না, তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত নিবন্ধ ভাষান্তর করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।
নানা বিতর্কে ঘেরা এই আলোচনাটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে নির্ধারিত হবে ইরানের রাজনৈতিক ওপরমহল এখন কী করবে। তারা বিক্ষোভকারী ও বাইরের শক্তির ওপর ক্র্যাকডাউন চালিয়ে প্রতিশোধের পথ বেছে নেবে, নাকি নেতৃত্বহীন তরুণদের সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপে বসবে।
প্রথম পদক্ষেপটি নিলে এবং তারপরও বিক্ষোভ বাড়তে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করার পশ্চিমা দাবি আরও সংকুচিত হয়ে আসবে। ইরানের চলতি সরকার সংস্কারে সক্ষম কি না, সেটিরও পরীক্ষা হবে।
ইরান সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন এমন কয়েকজন পর্যবেক্ষক বর্তমানে দেশটির নৃশংসতার মাত্রায় নমনীয়তা দেখছেন। তারা বলেছেন, চলমান বিক্ষোভে ২০০ জনের বেশি প্রাণ হারালেও এই সংখ্যা ২০০৯ সালের বিক্ষোভে কয়েক দিনের মধ্যে ৪০০ জন নিহত হওয়ার তুলনায় কম। তারা এটাও মনে করাচ্ছেন, ২০০৯ সালের বিক্ষোভের পর শত শত মানুষকে কাহরিজাক কারাগারে নির্যাতন করা হয়।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস যে অঞ্চলকে বিচ্ছিন্নতাবাদীপ্রবণ বলে মনে করে সেই কুর্দিস্তান মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কাজে লাগাচ্ছে। গত মাসে নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাহসা মারা যান। এরপর ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ।
চলমান বিক্ষোভ ঘিরে অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হলো ইরান সরকার বিশ্বাস করে, নেতৃত্বহীন এসব বিক্ষোভ মিইয়ে যাবে। সরকারের দাবি, মাত্র ৮০ হাজার লোক রাস্তায় নেমেছে এবং প্রতিবাদকারীদের বিপ্লব সংঘটন বা নেতা তৈরির সামর্থ্যের অভাব রয়েছে।
এই দাবির সঙ্গে বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশ একমত। তবে পশ্চিমাদের অধিকাংশই নারীর বৃহত্তর ব্যক্তিগত স্বাধীনতার দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। একজন পশ্চিমা পর্যবেক্ষক এমন মন্তব্যও করেছেন, তাদের (বিক্ষোভকারী) ‘কোনো ম্যান্ডেলা নেই, অং সান সু চি নেই’।
রেভল্যুশনারি গার্ডরা এ বিক্ষোভকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখতে চাইছেন না। তাদের মতে, এটি পশ্চিমা ও সৌদি মদতে চলা ইরান ইন্টারন্যাশনাল চ্যানেলের ষড়যন্ত্র।
রেভল্যুশনারি গার্ডকে সমর্থনকারী সংবাদপত্র জাভান বলছে, এ ষড়যন্ত্রের হোতা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের সাবেক প্রধান স্টেফানি আল-কাক।
পত্রিকাটির দাবি, আল-কাক দাঙ্গা শুরুর কয়েক দিন আগে ইরানে আসেন ও পরিস্থিতির ব্যবস্থাপনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। রয়টার্স ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন কর্মী হিসেবে তার অতীতের রেকর্ডের দিকে ইঙ্গিত করে পত্রিকাটি বলেছে, আল-কাক ‘একজন সংযোগকারী ও দেশের অভ্যন্তরে বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি সাম্প্রতিক গোলমালের নির্দেশনা দিয়েছেন ও মিডিয়ার ফিল্ড অপারেশন নির্ধারণে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’
তেহরানে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সাইমন শেরক্লিফ অবশ্য এ দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেন সালামিও দাবি করছেন, বিক্ষোভের পেছনে উসকানিদাতাদের ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের রাস্তা থেকে সাম্প্রতিক অস্থিরতার শিকড় ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, লন্ডন, তেল আবিব ও রিয়াদের কেন্দ্রে নিয়ে যাব।’
তার যুক্তি হলো, এই সংঘাতকে একটি সফল ইসলামি বিপ্লব ও ঈর্ষান্বিত পতনশীল পশ্চিমের মধ্যে লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, বিক্ষোভকারীদের প্রতিটি মোলোটভ ককটেলের জন্য ৫০ হাজার তোমান (দেড় ডলার বা প্রায় ১৬০ টাকা) দেয়া হয়েছে।
৮৩ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, আলি খামেনি সংলাপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং বিক্ষোভকে ‘ছোট ঘটনা’ ও ‘বিচ্ছিন্ন দাঙ্গা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিন দশক ধরে খামেনির বৈধতা ও উত্তরাধিকারকে চ্যালেঞ্জ করা যাচ্ছে না। তারা মাহসার মৃত্যুকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং সরকারি তদন্তে দাবি করা হয়েছে মাহসার মৃত্যু স্বাভাবিক। তবে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ইরান ধর্মনিরপেক্ষকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার রাস্তা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। প্রায় ৩০ লাখ ইরানি বার্ষিক আরবাইন তীর্থযাত্রায় ইরাকে গেছেন। এর আনুষ্ঠানিকতা ইমাম হুসেইনের হত্যাকে স্মরণ করে ৪০ দিনের শোকের সমাপ্তি চিহ্নিত করে। এই ধর্মানুরাগ দেখে ইরানের আলেমরা আনন্দিত।
চলমান বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স প্রায় ২০-এর আশপাশে। এ নিয়ে আলেমদের বক্তব্য হলো, কীভাবে তারা দেশের তরুণদের একটি অংশকে হারিয়েছেন সে সম্বন্ধে আত্ম-অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
ইরানে ইন্টারনেট নিয়ে বিবাদ অনেক দিনের। পশ্চিমা ইন্টারনেটের অনুপ্রবেশকে ঐতিহ্যগত ইসলামি মূল্যবোধে আঘাত ও ব্যবহারকারীদের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তনের জন্য দায়ী করছেন দেশটির অনেক রক্ষণশীল। এই সপ্তাহে একজন আলেম দাবি করেছেন, ইন্টারনেট ক্রমশ ন্যাটো সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
জাভান দাবি করেছে, কোভিড লকডাউনের সময় ‘কিছুসংখ্যক হাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবসায় যুক্ত হন। তাদের পেজগুলো জনপ্রিয় হওয়ার কারণে প্রচুর বিজ্ঞাপন পান এবং আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করেন। তারা তাদের পরিবারের আর্থিক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন তারা আরও কর্তৃত্ব নিয়ে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন এবং আরও স্বাধীন হয়ে উঠেছেন।’
রক্ষণশীলদের মতে, পশ্চিমা ইন্টারনেট ইরানের যুবাদের নৈতিকতাকে বিপথে চালিত করছে। ইরানওয়্যারের কাছে ইমাম সাদিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদেগ কুশাকি দাবি করেন, ‘বিক্ষোভকারীদের একমাত্র দাবি ছিল সুইমিং পুল, হিজাব অপসারণ ও ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে পার্টির স্বাধীনতা।’
পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য হামিদ রাসাই সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, “গুটিকয়েক ব্যক্তি রাস্তায় মাথার স্কার্ফ নেড়েছে তাদের চাওয়া কী বলে আপনাদের মনে হয়? তারা একমাত্র যে ‘স্বাধীনতা’ চায় তা হলো প্রতি রাতে ভিন্ন কারও সঙ্গে কাটানো ও পশুর মতো আচরণ করা।”
শাসকদের কট্টর বিরোধী পক্ষ ও আবেগপ্রবণ আন্দোলনকারীদের মধ্যে দেশটির বিচার বিভাগ একটি ভ্রান্তিকর পার্থক্য তৈরি করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিক্ষামন্ত্রী ইউসেফ নুরি নিশ্চিত করেছেন, কিছু স্কুলছাত্রকে সত্যিই আটক করা হয়েছে এবং তাদের ‘মনস্তাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠানে’ রাখা হয়েছে।
নুরি বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের ‘অসামাজিক’ আচরণ প্রতিরোধ করে তাদের মন সংস্কার ও পুনর্শিক্ষিত করা।”
এ সমাধান আদতে নৈতিকতা পুলিশের পুনর্শিক্ষা কর্যক্রম থেকে আলাদা কিছু নয়।
গ্রেপ্তার শিশুদের বাবা-মাকেও আটক করা হচ্ছে। অনেককে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ‘যথাযথ’ আচরণের শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেয়া হচ্ছে।
ইরানে নির্বাচনে টানা হার ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরমাণু চুক্তি-সংক্রান্ত বিশ্বাসঘাতকতার কারণে দেশটির সংস্কারপন্থিরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। তাদের অভিযোগ, রক্ষণশীলরা এখন তাদের বোনা তিক্ততার ফসল কাটছে।
পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, মিডিয়াকে শৃঙ্খলিত করা ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বন্দি করার পর তরুণ ইরানিদের নিজেদের মুক্তির জন্য অন্য পথ খুঁজতে হয়েছে।
সংস্কারপন্থি পত্রিকা ইতেমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস হজরাতি ১৩ অক্টোবর এক খোলা চিঠিতে লিখেছেন, ‘বিবিসি ও ইরান ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রতিটি ইরানি ... ইরানের রাষ্ট্রীয় সেন্সরের কারণে যুক্ত হয়েছেন।’
ইন্টারনেট যেভাবে ইরানি যুবাদের পালটে ফেলছে ও একটি অপূরণীয় জেনারেশন গ্যাপ তৈরি করছে তা উল্লেখ করে পত্রিকাটি একটি সতর্কতা বার্তা আবার ছাপিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘তাদের মা-বাবার ভূমিকা খুবই দুর্বল। শিক্ষক ও মা-বাবার মতো ঐতিহ্যগত শিক্ষাব্যবস্থা, হাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তাদের আনুগত্য দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।’
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে ঘিরে রয়েছে মশাদ শহরের রাজনৈতিক গোষ্ঠী, যাদের মধ্যে আছেন তার শ্বশুর আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আহমদ আলামলহোদা।
তারাই মূলত নৈতিকতা পুলিশকে হিজাব পরানোর জন্য চাপ বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইরানের রাজনৈতিক শ্রেণি যে আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে তাতে সাড়া দেয়ার দক্ষতা তাদের আছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। তবে এ মুহূর্তের জন্য, প্রমাণ ও অতীতের ঘটনাবলির বিবেচনায় বলা যায়, যারা বহিরাগতদের দোষারোপ ও দমন-পীড়নের পক্ষে তারাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করে ২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন অর্থনীতিবিদ।
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, এবার অর্থশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে ড্যারন আচেমোগলু, সাইমন জনসন ও জেমস রবিনসনকে। তারা প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে গড়ে ওঠে এবং সমৃদ্ধিতে কীভাবে প্রভাব রাখে, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন।
সাইটে উল্লেখ করা হয়, নোবেলজয়ী তিনজন উদ্ভাবনী গবেষণা করেছেন, যাতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলা বিষয় উঠে এসেছে।
তিনজনের গবেষণার বিষয়ে সাইটে আরও বলা হয়, সমৃদ্ধিতে প্রতিষ্ঠানের প্রভাব নিয়ে তাদের অন্তর্দৃষ্টি অনুযায়ী, গণতন্ত্র সহায়ক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধের শঙ্কার মধ্যে ইহুদি রাষ্ট্রটিতে সেনা ও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ব্যবস্থা পাঠানো হবে বলে রোববার জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ১ অক্টোবর ইরান থেকে ইসরায়েলে ১৮০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর তেল আবিবের পাল্টা হামলার পরিকল্পনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা পাঠানোর এ ঘোষণা দিল।
রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে সেনা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননের পর মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ ঠেকাতে ইসরায়েলকে ভেবেচিন্তে পাল্টা হামলা করতে গোপনে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রকাশ্যে দেয়া বক্তব্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিরোধিতা এবং জ্বালানি অবকাঠামোতে আক্রমণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার সেনা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনকে দেশটির সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যে বৃহত্তর সমন্বয় করেছে, তার অংশ হিসেবে আখ্যা দেন।
তার ভাষ্য, সামরিক এ সহায়তার উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে সমর্থনের পাশাপাশি ইরান এবং তেহরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের রক্ষা।
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন একটি ভবন ধসে জিদান (২২) নামের এক বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
এ দুর্ঘটনায় আহত হন দুই পাকিস্তানি নাগরিক।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দেশটির মেলাকা রাজ্যের বান্দা হিলিরের জালান বুকিত সেনজুয়াংয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মেলাকার সহকারী পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টোফার প্যাটিট বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ কমিশনার জানান, ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকের দুর্ঘটনার সময় ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী তিন শ্রমিক কংক্রিটের বাঁধন খোলার কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে ভবনটি ধসে পড়লে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন বাংলাদেশি শ্রমিক জিদান।
নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ওই দিন রাত ১০টার দিকে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার করা হয়।
পাকিস্তানি দুই শ্রমিক জুবায়ের আহমেদ (৩২) ও আব্বাস গুলমকে (৪৯) উদ্ধার করা হয়।
বেঁচে যাওয়া দুই পাকিস্তানিকে সফলভাবে সরানো হলেও আঘাতের কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের মেলাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন:শান্তিতে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া জাপানিদের সংগঠন ‘নিহন হিদানকিও’।
পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছে সংগঠনটি।
নরওয়ের অসলোতে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শান্তিতে নোবেলজয়ী হিসেবে নিহন হিদানকিওর নাম ঘোষণা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসন বলেন, নিহন হিদানকিওর প্রচার ‘পারমাণবিক ট্যাবু’ প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রেখেছে।
নিহন হিদানকিও নামের সংগঠনটি হিবাকুশা নামেও পরিচিত। ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে নিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব অর্জনের প্রচেষ্টায় ‘পারমাণবিক অস্ত্র আর কখনও ব্যবহার করা উচিত নয়’ ধরনের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে সংগঠনটি পাচ্ছে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর অর্থমূল্য প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও একটি মেডেল, সনদপত্র দেয়া হবে।
গত বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কারাবন্দি মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী।
চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ২৮৬ প্রার্থীর নাম নিবন্ধিত হয়েছিল, যার মধ্যে ১৯৭ জন ব্যক্তি ও ৮৯টি সংস্থা।
ডিসেম্বরের ১০ তারিখ আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিবসে বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:সাহিত্যে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার জিতেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান ক্যাং।
সুইডেনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা একটা (বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক হ্যান্স এলেগ্রেন ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
একাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হানকে পুরস্কার দেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, তার ঐকান্তিক কাব্যিক গদ্য ঐতিহাসিক মর্মাঘাত সামনে নিয়ে আসে। এগুলো মানবজীবনের ভঙ্গুরতা উন্মোচন করে।
হান ক্যাং ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার শহর গোয়াংজুতে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে সিউল চলে আসেন।
সাহিত্যিক বেষ্টিত পরিবেশে জন্ম নেন হান। তার বাবাও নামী ঔপন্যাসিক।
আরও পড়ুন:ভুয়া তথ্য নিয়ে বিরোধের কারণে ব্রাজিলে ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সের (সাবেক টুইটার) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তবে মোটা অঙ্কের জরিমানা দেয়ার পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
রায়ে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরায়েস বলেন, ‘অবিলম্বে ব্রাজিলে এক্সের কার্যক্রম পুনরায় শুরুর অনুমতি দিতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এজন্য যোগাযোগ কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়া হলো।’
আল জাজিরার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, কয়েক মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেয়ার পর আদালত এই রায় দিয়েছে।
তবে জরিমানার পরিমাণ ঠিক কত, তা প্রকাশ করা হয়নি।
এই রায়ের বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং স্বঘোষিত ‘বাক-স্বাধীনতা নিরঙ্কুশবাদী’ ইলন মাস্ক।
এর আগে ব্রাজিলে ভুয়া তথ্য প্রচারে অভিযুক্ত অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করতে এক্সকে নির্দেশ দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। তবে বাক-স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার কারণ দেখিয়ে আদালতের রায় মানবেন না বলে জানিয়েছিলেন মাস্ক।
এমনকি আইনি লড়াইয়ের জন্য আদালতের দেয়া সময়সীমাও লঙ্ঘন করে সামাজিক প্ল্যাটফর্মটি। এরপর ব্রাজিলে এক্সের কার্যক্রম ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত এক্স বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পর বিচারপতি দে মোরায়েসকে ‘শয়তান স্বৈরশাসক’ আখ্যা দেন মাস্ক। সে সময় ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সমর্থকদের প্রতিও সহানুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
২০২২ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে নির্বাচন সম্পর্কে যাচাইবিহীন তথ্য প্রচারের অভিযোগ ওঠে বলসোনারোর বিরুদ্ধে। এরপর ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি বলসোনারোর পরাজয় ঠেকাতে সামরিক অভ্যুত্থানের ডাক দিয়ে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোর ওপর হামলা চালায় তার অনুসারীরা। পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে ভাঙচুর করে তারা।
ওই ঘটনায় উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য বলসোনারোকে দায়ী করা হয় এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত তাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় অযোগ্য ঘোষণা করে দে মোরায়েসের আদালত। তার পর থেকে মাস্কের মতো তিনিও বিচারপতি দে মোরায়েসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছেন।
লেবাননের ভূখণ্ডে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে ২৬১ জন নারী ও ১২৭টি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আল-জাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৫১। এ নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতেও রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলোতে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে ইসরায়েলি হামলার মুখে লেবাননে ১২ লাখের বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। অব্যাহত বিমান হামলার মুখে রাজধানী বৈরুতের হাজারও বেসামরিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ গত বছর থেকে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গোষ্ঠীটির ওপর পাল্টা আক্রমণ চালাত ইসরায়েলও। তবে সম্প্রতি হিজবুল্লাহর ওপর হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল বাহিনী। গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর লেবাননজুড়ে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটায় ইসরায়েল।
বিবিসি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজারে একযোগে বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। ওই বিস্ফোরণে নিহত কয়েকজনের জানাজার সময়ও সেখানে কিছু বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া ওয়াকিটকিসহ যোগাযোগের নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণে নিহত হয় ২০ জন। আহত হয় ৪৫০ জনের বেশি।
এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করল হিজবুল্লাহ
লেবাননের সীমান্ত গ্রাম আদাইসেহতে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার দাবি করেছে হিজবুল্লাহ বাহিনী। মধ্যরাতে আদাইসেহ নামের ওই গ্রামে হিজবুল্লাহর প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
লেবাননে প্রবেশ করতে গত তিন-চারদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলের সেনারা। তারা শুক্রবার রাতে আদাইসেহ নামের ওই সীমান্তবর্তী গ্রাম দিয়ে আবারও প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এতে আদাইসেহ গ্রামে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই হয়। ওই সময় ইসরায়েলি সেনারা পিছু হটে।
আদাইসেহ গ্রামের লড়াই নিয়ে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। তবে এ ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য জানাতে রাজি হয়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য