ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় চলমান বিক্ষোভ পঞ্চম সপ্তাহে গড়িয়েছে। এদিকে বিক্ষোভ দমনে সরকারের পদক্ষেপ কী হতে পারে তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দেশটির আইনপ্রনেতারা। অনেকেই বিক্ষোভরত নারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলছেন।
বিক্ষোভ এরই মধ্যে পোশাকের স্বাধীনতার ইস্যুকে ছাড়িয়ে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষও হচ্ছে।
অনেক আইনপ্রণেতাই হিজাবের পক্ষে কঠোর পন্থা অবলম্বনের প্রতি জোর দিয়েছে এবং বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে অনেক আইনজীবীই চাইছেন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মেনে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার উপায় খুঁজতে।
ইরানের আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতা মোজতাবা জোলনৌরি বলেন, ‘যে নারীরা তাদের চুল ঢেকে রাখে না তাদের ৭৪টি বেত্রাঘাতের শাস্তি হওয়া উচিত। যেসব নারী তাদের হিজাব খুলে ফেলে, তাদের জন্য নৈতিকতা পুলিশের একটি নোটিশ যথেষ্ট না।’
পাশাপাশি যেসব আইনপ্রণেতা নৈতিকতা পুলিশকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাদেরও সমালোচনা করেছেন মোজতাবা জোলনৌরি।
তিনি বলেন, ইরানিদের তার মিশনের (নৈতিকতা পুলিশের) পেছনে যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। তিনি অভিযোগ করেন যে আইনপ্রণেতারা নৈতিকতা পুলিশের সমালোচনা করছেন, তারা জনসাধারণের মানসিক শান্তি নষ্ট করছেন।
জোলনৌরি ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সদস্য।
আরেক কট্টরপন্থি আইনপ্রণেতা মুসা গাজানফরাবাদি বলেছেন, যে নারীরা বাধ্যতামূলক হিজাব নিয়ম লঙ্ঘন করে তাদের মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিহ্নিত করা উচিত এবং পরবর্তীতে সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত।
এদিকে ইরানের পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতা হোসেন নুশাবাদি মনে করেন, সরকারের এমন কিছু স্থান ঠিক করে দেয়া উচিত যেখানে বিক্ষোভকারীরা দমন-পীড়নের ভয় ছড়াই শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারে।
তিনি দাবি করেন, গত ৩০ বছরে বারবার এই আহ্বান জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো সরকারই বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে আইনপ্রণেতা হাসান আসফারির অবস্থান পুরোপুরি বিক্ষোভকারীদের প্রতি। আইএলএনএকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘বিক্ষোভ সমাবেশ করার জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতির প্রয়োজন নেই। মজলেসে (পার্লামেন্ট) নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্ব্যবহারের জন্য কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রস্তাব পেশ করছি।’
প্রতিবাদ করার অধিকার ইরানের সংবিধানের ২৭তম অনুচ্ছেদে স্বীকৃত। কিন্তু গত চার দশকে ইরানের বিভিন্ন সরকার এই অধিকারকে সমর্থন এবং সাংবিধানিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে অস্বীকার করেছে।
তবে প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য আইনে নির্ধারিত একমাত্র শর্ত হল বিক্ষোভকারীদের সশস্ত্র হওয়া উচিত নয় এবং প্রতিবাদ ইসলামের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত নয়।
আসাফারির মতে, ইরানে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন না হলে জনগণের প্রতিবাদ করার অধিকার সম্পর্কে সরকারকে বোঝানো কঠিন।
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর পর রাস্তায় বিক্ষোভের পাশাপাশি ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর সঙ্গে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে বালুচ কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনা ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের চাবাহার শহরের পুলিশপ্রধানের হাতে ওই কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে সেখানেও চলছে প্রবল বিক্ষোভ।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
একেবারে শুরু থেকেই বিভিন্ন সময়ে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করছেন ইরানি নারীরা।
হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধের শঙ্কার মধ্যে ইহুদি রাষ্ট্রটিতে সেনা ও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ব্যবস্থা পাঠানো হবে বলে রোববার জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ১ অক্টোবর ইরান থেকে ইসরায়েলে ১৮০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর তেল আবিবের পাল্টা হামলার পরিকল্পনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা পাঠানোর এ ঘোষণা দিল।
রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে সেনা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননের পর মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ ঠেকাতে ইসরায়েলকে ভেবেচিন্তে পাল্টা হামলা করতে গোপনে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রকাশ্যে দেয়া বক্তব্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিরোধিতা এবং জ্বালানি অবকাঠামোতে আক্রমণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার সেনা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনকে দেশটির সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যে বৃহত্তর সমন্বয় করেছে, তার অংশ হিসেবে আখ্যা দেন।
তার ভাষ্য, সামরিক এ সহায়তার উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে সমর্থনের পাশাপাশি ইরান এবং তেহরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের রক্ষা।
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন একটি ভবন ধসে জিদান (২২) নামের এক বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
এ দুর্ঘটনায় আহত হন দুই পাকিস্তানি নাগরিক।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দেশটির মেলাকা রাজ্যের বান্দা হিলিরের জালান বুকিত সেনজুয়াংয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মেলাকার সহকারী পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টোফার প্যাটিট বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ কমিশনার জানান, ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকের দুর্ঘটনার সময় ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী তিন শ্রমিক কংক্রিটের বাঁধন খোলার কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে ভবনটি ধসে পড়লে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন বাংলাদেশি শ্রমিক জিদান।
নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ওই দিন রাত ১০টার দিকে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার করা হয়।
পাকিস্তানি দুই শ্রমিক জুবায়ের আহমেদ (৩২) ও আব্বাস গুলমকে (৪৯) উদ্ধার করা হয়।
বেঁচে যাওয়া দুই পাকিস্তানিকে সফলভাবে সরানো হলেও আঘাতের কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের মেলাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন:শান্তিতে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া জাপানিদের সংগঠন ‘নিহন হিদানকিও’।
পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছে সংগঠনটি।
নরওয়ের অসলোতে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শান্তিতে নোবেলজয়ী হিসেবে নিহন হিদানকিওর নাম ঘোষণা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসন বলেন, নিহন হিদানকিওর প্রচার ‘পারমাণবিক ট্যাবু’ প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রেখেছে।
নিহন হিদানকিও নামের সংগঠনটি হিবাকুশা নামেও পরিচিত। ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে নিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব অর্জনের প্রচেষ্টায় ‘পারমাণবিক অস্ত্র আর কখনও ব্যবহার করা উচিত নয়’ ধরনের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে সংগঠনটি পাচ্ছে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর অর্থমূল্য প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও একটি মেডেল, সনদপত্র দেয়া হবে।
গত বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কারাবন্দি মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী।
চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ২৮৬ প্রার্থীর নাম নিবন্ধিত হয়েছিল, যার মধ্যে ১৯৭ জন ব্যক্তি ও ৮৯টি সংস্থা।
ডিসেম্বরের ১০ তারিখ আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিবসে বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:সাহিত্যে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার জিতেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান ক্যাং।
সুইডেনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা একটা (বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক হ্যান্স এলেগ্রেন ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
একাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হানকে পুরস্কার দেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, তার ঐকান্তিক কাব্যিক গদ্য ঐতিহাসিক মর্মাঘাত সামনে নিয়ে আসে। এগুলো মানবজীবনের ভঙ্গুরতা উন্মোচন করে।
হান ক্যাং ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার শহর গোয়াংজুতে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে সিউল চলে আসেন।
সাহিত্যিক বেষ্টিত পরিবেশে জন্ম নেন হান। তার বাবাও নামী ঔপন্যাসিক।
আরও পড়ুন:ভুয়া তথ্য নিয়ে বিরোধের কারণে ব্রাজিলে ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সের (সাবেক টুইটার) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তবে মোটা অঙ্কের জরিমানা দেয়ার পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
রায়ে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরায়েস বলেন, ‘অবিলম্বে ব্রাজিলে এক্সের কার্যক্রম পুনরায় শুরুর অনুমতি দিতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এজন্য যোগাযোগ কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়া হলো।’
আল জাজিরার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, কয়েক মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেয়ার পর আদালত এই রায় দিয়েছে।
তবে জরিমানার পরিমাণ ঠিক কত, তা প্রকাশ করা হয়নি।
এই রায়ের বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং স্বঘোষিত ‘বাক-স্বাধীনতা নিরঙ্কুশবাদী’ ইলন মাস্ক।
এর আগে ব্রাজিলে ভুয়া তথ্য প্রচারে অভিযুক্ত অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করতে এক্সকে নির্দেশ দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। তবে বাক-স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার কারণ দেখিয়ে আদালতের রায় মানবেন না বলে জানিয়েছিলেন মাস্ক।
এমনকি আইনি লড়াইয়ের জন্য আদালতের দেয়া সময়সীমাও লঙ্ঘন করে সামাজিক প্ল্যাটফর্মটি। এরপর ব্রাজিলে এক্সের কার্যক্রম ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত এক্স বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পর বিচারপতি দে মোরায়েসকে ‘শয়তান স্বৈরশাসক’ আখ্যা দেন মাস্ক। সে সময় ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সমর্থকদের প্রতিও সহানুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
২০২২ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে নির্বাচন সম্পর্কে যাচাইবিহীন তথ্য প্রচারের অভিযোগ ওঠে বলসোনারোর বিরুদ্ধে। এরপর ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি বলসোনারোর পরাজয় ঠেকাতে সামরিক অভ্যুত্থানের ডাক দিয়ে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোর ওপর হামলা চালায় তার অনুসারীরা। পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে ভাঙচুর করে তারা।
ওই ঘটনায় উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য বলসোনারোকে দায়ী করা হয় এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত তাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় অযোগ্য ঘোষণা করে দে মোরায়েসের আদালত। তার পর থেকে মাস্কের মতো তিনিও বিচারপতি দে মোরায়েসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছেন।
লেবাননের ভূখণ্ডে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে ২৬১ জন নারী ও ১২৭টি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আল-জাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৫১। এ নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতেও রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলোতে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে ইসরায়েলি হামলার মুখে লেবাননে ১২ লাখের বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। অব্যাহত বিমান হামলার মুখে রাজধানী বৈরুতের হাজারও বেসামরিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ গত বছর থেকে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গোষ্ঠীটির ওপর পাল্টা আক্রমণ চালাত ইসরায়েলও। তবে সম্প্রতি হিজবুল্লাহর ওপর হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল বাহিনী। গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর লেবাননজুড়ে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটায় ইসরায়েল।
বিবিসি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজারে একযোগে বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। ওই বিস্ফোরণে নিহত কয়েকজনের জানাজার সময়ও সেখানে কিছু বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া ওয়াকিটকিসহ যোগাযোগের নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণে নিহত হয় ২০ জন। আহত হয় ৪৫০ জনের বেশি।
এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করল হিজবুল্লাহ
লেবাননের সীমান্ত গ্রাম আদাইসেহতে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার দাবি করেছে হিজবুল্লাহ বাহিনী। মধ্যরাতে আদাইসেহ নামের ওই গ্রামে হিজবুল্লাহর প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
লেবাননে প্রবেশ করতে গত তিন-চারদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলের সেনারা। তারা শুক্রবার রাতে আদাইসেহ নামের ওই সীমান্তবর্তী গ্রাম দিয়ে আবারও প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এতে আদাইসেহ গ্রামে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই হয়। ওই সময় ইসরায়েলি সেনারা পিছু হটে।
আদাইসেহ গ্রামের লড়াই নিয়ে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। তবে এ ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য জানাতে রাজি হয়নি।
আরও পড়ুন:ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টা হিসেবে ইরানে পরমাণু স্থাপনায় কোনো ধরনের হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের প্রতি সাড়া দিয়ে পাল্টা আঘাত না হানার কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি ইসরায়েল। এ অবস্থায় পরমাণু শক্তিধর হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা ইরানে যেকোনো সময় ইসরায়েল হামলা চালাতে পারে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তার বরাতে এমন তথ্য দিয়েছে সিএনএন।
ধারণা করা হচ্ছে ৭ অক্টোবর (সোমবার) হামাসের হামলার বর্ষপূর্তির দিনে তেহরানে আঘাত হানতে পারে তেল আবিব।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডিফেন্স সেক্রেটারি মার্ক এসপার বলছেন, ইরানের শাসক গোষ্ঠীর পতন চাইলে রাজধানী তেহরানে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কার্যালয় টার্গেট করবে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ)। অন্যথায় দেশটির সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাবে ইসরায়েল।
ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে- দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ করে আসছে পশ্চিমারা। এবার ফক্স নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেললগ বলেছেন, ‘তেহরান পরমাণু শক্তিধর হতে মাত্র ৪০ থেকে ৪৮ ঘণ্টার দূরত্বে রয়েছে।’
সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেসের সাবেক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস জানান, ইরানের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে তার দেশ। কারণ তাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে যে ১৫টি বোমা বানানোর মতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে ফেলেছে ইরান। তাই যে কোনো সময় পাল্টা হামলা হতে পারে।
এদিকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তদন্ত ব্যুরো-এফবিআই ও ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক বার্তা দিয়েছে বলেছে, ‘আগামী সোমবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে বিদেশি সন্ত্রাসীরা। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনালয়গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।’
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতা ঘিরে ওই অঞ্চলে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে পেন্টাগন। ডিফেন্স সেক্রেটারি লয়েড অস্টিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চলে রণতরি এবং ডেস্ট্রয়ার পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য