দীর্ঘ ৭০ বছর ব্রিটিশ রাজত্বের মুকুট মাথায় ধারণ করা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন গত ৮ সেপ্টেম্বর। এর প্রায় দেড় বছর আগে ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল মারা যান তার জীবনসঙ্গী প্রিন্স ফিলিপ।
১৯৪৭ সালে বিয়ে হয় তখনকার প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং ডেনমার্ক ও গ্রিসের প্রিন্স ফিলিপের। দ্বিতীয় এলিজাবেথের বয়স তখন ২১ বছর, আর তার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় ছিলেন ফিলিপ। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথ হন ইংল্যান্ডের রানি আর ফিলিপ হন কুইন কনসর্ট।
ফিলিপের সঙ্গে তার প্রায় ৭৪ বছরের দাম্পত্য জীবনের শুরুটা ত্রিশের দশকের শেষে।
দ্বিতীয় এলিজাবেথ মাত্র তখন কৈশোর ছুঁইছুঁই। ১৯৩৯ সালের ২২ জুলাই ১৩ বছর বয়সে তিনি প্রেমে পড়েন প্রিন্স ফিলিপের।
পরম কাঙ্ক্ষিত ফিলিপও রাজবংশের সদস্য। এলিজাবেথের ভাষায়, ‘উজ্জ্বল চুলের একটা ছেলে, অনেকটা ভাইকিংদের মতো, চোখা চেহারা, হৃদয়ভেদী গভীর চোখ।’
ভালোবাসার এই মানুষটি ছিলেন গ্রিস ও ডেনমার্কের প্রিন্স। এলিজাবেথের মতো তিনিও রানি ভিক্টোরিয়ার প্রোপৌত্র।
এলিজাবেথ ও তার পরিবারের সদস্যরা ১৯৩৯ সালে গিয়েছিলেন ডার্থমাউথের রয়্যাল নেভাল কলেজ পরিদর্শনে। সেখানেই নৌবাহিনীর তরুণ ক্যাডেট ফিলিপের ওপর ছিল রাজকন্যাদের দেখভালের দায়িত্ব।
প্রিন্স ফিলিপ রাজকন্যাদের জিঞ্জার বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করেন, খেলনা রেলগাড়ি দিয়ে কিছুক্ষণ খেলাধুলাও করেন। টেনিস কোর্টে নিজের দক্ষতা দেখান। টেনিস কোর্টে তিনি সারাক্ষণ নেটের ওপর দিয়ে লাফঝাঁপ করছিলেন। এসবই জয় করে নেয় টিনএজ এলিজাবেথের হৃদয়।
রাজকন্যাদের দেখভালকারী ম্যারিয়ন ক্রফোর্ডকে এলিজাবেথ ভালোবেসে ক্রফি ডাকতেন। পরে এক আত্মজীবনীমূলক বইয়ে ওই সময়ের ঘটনা নিয়ে ম্যারিয়ন লেখেন, ‘সে (এলিজাবেথ) তার (ফিলিপ) ওপর থেকে চোখ সরাতে পারছিল না।’
ম্যারিয়নকে মুগ্ধকণ্ঠে এলিজাবেথ বলেছিলেন, ‘ও (ফিলিপ) কী দারুণ ক্রফি! কতটা উচুঁতে লাফাতে পারে!’
দ্বিতীয় এলিজাবেথও পরে তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জকে নিয়ে লেখা বইয়ে বলেছিলেন, তিনি প্রথম দেখাতেই ফিলিপের প্রেমে পড়েন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন জড়িয়ে যাওয়ার পর ফিলিপ নৌবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে চলে যান। তবে এলিজাবেথ ও ফিলিপের চিঠি বিনিময় চলত। আর ছুটির সময়টা ফিলিপ রাজপরিবারের সঙ্গে কাটাতেন।
১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সময় এলিজাবেথ ও তার বোন মার্গারেট বালমোরালের কাছে ক্র্যাথি চার্চে কাজ করতেন। বড়দিনের পর এলিজাবেথ ও মার্গারেট উইন্ডসরে চলে আসেন। ওই এলাকা লন্ডনের চেয়ে অনেকটাই নিরাপদ ছিল।
যুদ্ধের সময় রাজকন্যাদের ভূমিকা সে সময় নিরলসভাবে ছেপে গিয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিল উদ্ধার করা ফরাসি শিশুদের মাঝে চকোলেট বিতরণ এবং যুদ্ধরত সৈনিকদের সিগারেট সরবরাহের জন্য ওভার সিজ লিগ টোব্যাকো ফান্ডে অর্থ সহায়তা করা।
১৯৪০ সালের এপ্রিলে এলিজাবেথের ১৪তম জন্মদিনে কাটা হয় আইসিং ছাড়া একটি সাধারণ স্পিঞ্জ কেক। এ থেকে সংযমের সঙ্গে আনন্দ উদ্যাপনের নতুন এক ধারা শুরু হয়।
ওই বছর যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে রাজা-রানি উইন্ডসর প্রাসাদে বেশি বেশি সময় কাটাতে থাকেন। তারা রাতে সেখানে থাকতেন। জনগণকে আশ্বস্ত করতে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদে রাজার পতাকা উড়ত ঠিকই।
নিরাপত্তার খাতিরে এলিজাবেথ ও মার্গারেটের বাইরে বের হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তবে ডাচ ও নরওয়েজিয়ান রাজপরিবারের সদস্যদের মতো যুদ্ধের সময়টা কানাডায় কাটানোর মতো সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধী ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা।
রাজপরিবারের সুরক্ষায় উইন্ডসর ক্যাসেলের ব্রুনসউইক টাওয়ারের নিচে বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়। সেখানে ছিল দীর্ঘ দেয়াল এবং চার ফুট পুরু কংক্রিট ও গার্ডারের ছাদ।
অক্টোবরে জার্মান বিমান হামলার মাঝেই বিবিসি রেডিওর চিলড্রেনস আওয়ারে বক্তব্য রাখেন এলিজাবেথ। নিরাপত্তার কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকা শিশুদের উদ্দেশে দেয়া তার এ বক্তব্য বিশ্বজুড়ে প্রচারিত হয়।
১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজা জর্জ তার মেয়ের ১৬তম জন্মদিনের উপহার হিসেবে তাকে গ্রেনাডিয়ার গার্ডস রেজিমেন্টের কর্নেল হিসেবে নিয়োগ দেন।
এসবের মাঝেই রাজপরিবারের সঙ্গে ফিলিপের কাটানো সময়টুকু উপভোগ করতেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৪২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ম্যারিয়নকে লেখেন, ‘তিনিই (ফিলিপ) তার বিশেষজন।’
১৯৪৩ সালের বড়দিন উইন্ডসর প্রাসাদেই কাটান ২২ বছর বয়সী ফিলিপ। ম্যারিয়ন পরে লিখেছেন, ১৭ বছর বয়সী এলিজাবেথ ফিলিপের সফরের পুরো সময়টা খুশিতে ‘ঝলমল’ করছিলেন।
তবে তার মা-বাবা বিষয়টিকে তখনও গুরুত্ব দেননি। ১৯৪৪ সালের মার্চে রাজা তার মাকে লেখেন, ‘এলিজাবেথ বিয়ের জন্য এখনও ছোট।’
পরের মাসে এলিজাবেথ ১৮ পূর্ণ করেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের যুদ্ধে সহায়তায় নামতে তিনি জোরাজুরি করছিলেন। তবে রাজা ষষ্ঠ জর্জ চাচ্ছিলেন, তার মেয়ে সিংহাসনের জন্য প্রস্তুত হোক। দেশের যেকোনো কর্মকাণ্ডের চেয়ে সেটাই বেশি জরুরি মনে হচ্ছিল।
জনসম্পৃক্ত কাজে খুব শিগগির দ্বিতীয় এলিজাবেথ যোগ দিতে শুরু করেন। তার মায়ের নামে তৈরি কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল ফর চিলড্রেনে তিনি ভাষণ দেন এবং ন্যাশনাল সোসাইটি ফর প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু চিলড্রেনের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য রাখেন।
দ্বিতীয় এলিজাবেথের ১৯তম জন্মদিনের কয়েক সপ্তাহ পর ব্রিটেন যুদ্ধে জয়ী হয়।
উৎফুল্ল জনতা
বাকিংহাম প্রাসাদের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথ উৎফুল্ল জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই রাতে মার্গারেট ও দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রাসাদ থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দেন। বহু বছর পর রানি এলিজাবেথ ওই রাতটিকে তার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় হিসেবে উল্লেখ করেন।
পরের সন্ধ্যাতেও দুই বোন প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে যান। এলিজাবেথ তার ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘ট্রাফালগার স্কয়ার, পিকাডিলি, পলমল, মাইলের পর মাইল হেঁটেছি। রাত সাড়ে ১২টায় মা-বাবাকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। খেলাম, পার্টি করলাম। ঘুমাতে গিয়েছি রাত ৩টায়।’
আরও পড়ুন:নথিপত্রবিহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠাতে আইন পাস করেছে যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অফ লর্ডসের বিরোধিতা এবং নানা বিতর্কের পর পার্লামেন্টে মঙ্গলবার সকালে এ সংক্রান্ত বিলটি পাস করে আইনে পরিণত করা হয় বলে জানায় বিবিসি।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসে বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ৩১৭টি এবং বিপক্ষে ভোট পড়ে ২৩৭ টি। মোটামুটি বড় ব্যবধানেই বিলটি পাস হয়।
এ আইনে রুয়ান্ডাকে একটি নিরাপদ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেখানে কিছু আশ্রয়প্রার্থী পাঠানো সরকারের পরিকল্পনার একটি মূল অংশ।
হাউস অব লর্ডস থেকে এই বিলের বিষয়ে দুটি আপত্তি জানানো হয়। সেই বিষয়ে হাউস অব কমনসে বিতর্ক শুরু হয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে। পরে দীর্ঘ বিতর্ক শেষে মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে বিলটি পাস হয়।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সোমবার জানান, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর ফ্লাইট ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই শুরু করতে চান। প্রথম ফ্লাইট জুলাইয়ে রুয়ান্ডায় রওনা হবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার ঋষি বলেন, ‘আমরা বিমানঘাঁটি প্রস্তুত রেখেছি। বাণিজ্যিক বিমান ভাড়া করেছি এবং অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদেরকে পাহারা দিয়ে রুয়ান্ডায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫০০ স্টাফকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আর কোনো যদি এবং কিন্তু নেই। ফ্লাইটগুলো রুয়ান্ডায় যাচ্ছে। আমরা প্রস্তুত, ফ্লাইটগুলো পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’
এর আগে নথিপত্রবিহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় স্থানান্তরের জন্য দেশটির সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাজ্য। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিনসেন্ট বাইরুতার সঙ্গে এ বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নিজ দেশের অভিবাসী কেন্দ্রগুলো থেকে সব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে রুয়ান্ডা পাঠাবে ব্রিটেন। সেই সঙ্গে ব্রিটেন থেকে যাওয়া অভিবাসীদের অন্য কোনো দেশে পাঠানো যাবে না বলে রুয়ান্ডারকে শর্ত দেয়া হয়েছে।
ওই সময় চুক্তিতে মতানৈক্য থাকায় যুক্তরাজ্যের অভিবাসনমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন রবার্ট জেনরিক।
আরও পড়ুন:গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেয়া বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ ব্রিটন জন টিনিসউড জানালেন তার ১১১ বছরের দীর্ঘ জীবনের রহস্য।
টিনিসউডকে উদ্ধৃত করে শনিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, টিনিসউড মনে করেন, এত বছর বেঁচে থাকাটা তার ভাগ্যে ছিল। তার ডায়েটে বিশেষ কোনো গোপনীয়তা ছিল না। প্রতি শুক্রবার টিনিসউডের প্রিয় খাবার মাছ এবং চিপস।
এর আগে ১১৪ বছরের দীর্ঘজীবন শেষে ২ এপ্রিল মারা যান বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ হুয়ান ভিসেন্তে পেরেজ মোরা। ‘তিও’ ডাকনামে পরিচিত এ ব্যক্তি ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার নাগরিক।
ভিসেন্তে পেরেজ মারা যাওয়ায় উত্তরাধিকারসূত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসটি পান ব্রিটন জন টিনিসউড।
উত্তর ইংল্যান্ডের মার্সিসাইডে ১৯১২ সালে জন্মগ্রহণ করেন টিনিসউড। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং প্রাক্তন ডাক পরিষেবা কর্মী। টিনিসউডের বয়স ১১১ বছর এবং ২২২ দিন।
দীর্ঘায়ুর রহস্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আপনার আয়ু হয়ত দীর্ঘ হবে অথবা কম হবে। এখানে আপনার কিছুই করার নেই।’
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন বেঁচে ছিলেন। সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী এবং সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হলেন স্পেনের মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। তার বয়স বর্তমানে ১১৭ বছর।
পশ্চিমা ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। এমনকি এর বাইরে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক কোনো দেশের ওপরও হামলা চালাবে না তারা। তবে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রাশিয়ার এসব অঞ্চলের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘এ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও কোনো আগ্রাসন দেখানো হবে না। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে যেসব কথা রটানো হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে সমর্থন করার অভিযোগ এনে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ কারণেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর যে সম্পর্ক, তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পাল্টাবে না। আর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও রকেট লঞ্চারের মতো ওগুলোকেও (এফ-১৬) আমরা ধ্বংস করব।’
তিনি বলেন, ‘এসব যুদ্ধবিমান যদি ইউক্রেনের বাইরের কোনো দেশ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে, তবে সেসব স্থানও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তা সে যে স্থানই হোক না কেন।’
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে বলে এ সময় সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার মস্কোতে গত শুক্রবার কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করলেও এ ধরনের আক্রমণের সামর্থ্য জঙ্গি সংগঠনটির আছে বলে বিশ্বাস করে না রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার তার দেশের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাখারোভা বলেন, মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আইএসের আছে, এমনটি বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন।
সাম্প্রতিক ওই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১৪৩ জন। আহত অনেককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় ইউক্রেনের জড়িত থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যদিও এ দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি।
রাশিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর দায় স্বীকার করে আইএস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলাটি চালায় আইএসের আফগান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে ইউক্রেন, তবে জাখারোভার ভাষ্য, ইউক্রেনকে হামলার দায় থেকে বাঁচাতে ত্বরিত গতিতে আইএসের ওপর দায় চাপায় পশ্চিমা দেশগুলো।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উপকণ্ঠে শুক্রবার রাতে কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী বন্দুক হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়ার অভ্যন্তরে দুই দশকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় শোক পালনের অংশ হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় চার ব্যক্তিকে।
বন্দুক হামলার পর জড়িত সবাইকে শাস্তির আশ্বাস দিয়ে রোববারকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কনসার্ট শুরুর আগে হলে আগত লোকজনের ওপর ওই হামলায় প্রাণ যায় তিন শিশুসহ ১৩৭ জনের। এ ঘটনায় আহত হন ১৮২ জন।
হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি এখনও হাসপাতালে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
বন্দুক হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় মস্কোর বাইরে নিজ বাসভবন এলাকার একটি গির্জায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন পুতিন।
এর আগে ঘটনাস্থল ছয় হাজার ২০০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্রোকাস সিটি হলের বাইরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রুশ নাগরিকরা। এ হলে সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ড ‘পিকনিক’ পারফর্ম শুরু করার আগে হামলা চালান চার বন্দুকধারী।
বিশ্বজুড়ে নিন্দিত ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), তবে পুতিন তার বক্তব্যে জঙ্গি সংগঠনটির কথা উল্লেখ না করে বলেছেন, হামলাকারীরা পালিয়ে ইউক্রেন যেতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে যে চার বন্ধুকধারী হামলা চালিয়েছে সেই চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৩৩ জনকে হত্যা ও ১৪০ জনের বেশি মানুষকে আহত করার ওই হামলার দায় নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেন জড়িত।
পুতিন বলেছেন, সবমিলিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন বন্ধুকধারী ইউক্রেনে যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার হয়েছে।
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, হামলাকারীদের ইউক্রেনে সরিয়ে নেয়ার জন্য সীমান্তে প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল।
ভয়াবহ এ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুতিন।
শনিবার টেলিগ্রামে আইএসের প্রচারমাধ্যম আমাক চার মুখোশধারীর একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেছে এরাই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। অবশ্য আইএসের দাবি নিয়ে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর শুক্রবারের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আসা লোকজনের ওপর গুলি ছোড়ে বন্দুকধারীরা। ‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা হয়।
আরও পড়ুন:রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত হওয়া কনসার্টে ভয়াবহ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় তিনি রোববার দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।
টেলিভিষণে দেয় ভাষণে পুতিন বলেন, ‘হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলার পর চার বন্দুকধারী ইউক্রেন সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। সীমান্তে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে তারা ধরা পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তথ্য অনুসারে তারা ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছিল, তাদের সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি রাখা ছিল।
‘তারা যে-ই হোক, যারাই তাদের নির্দেশ দিক, আমি আবারও বলছি, যারা সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দিয়েছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করব; তাদের শাস্তি দেব।’
দেশের জনগণের উদ্দেশে পুতিন বলেন, ‘শত্রুরা আমাদের বিভক্ত করতে পারবে না।’
রাশিয়ার এফএসবি নিরাপত্তা সার্ভিসের দাবি, হামলাকারীরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টার আগে ইউক্রেনে নিজেদের লোকজনের সঙ্গে ‘সংযুক্ত’ ছিল।
তবে রাশিয়ার এ দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে কিয়েভ। অবশ্য তাদের আশঙ্কা, এ ঘটনার পর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে।
শুক্রবার ক্রোকাস সিটি কমপ্লেক্সের কনসার্ট হলে বন্দুক হামলা চালান ছদ্মবেশী হামলাকারীরা। গুলি করার পর ভবনের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক ছিটিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কনসার্টে আসা লোকজনের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান বন্দুকধারীরা, যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, (মুসলিম বিরোধী) বিভিন্ন দেশে তাদের নিয়মিত হামলার অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে আইএসের কোন আঞ্চলিক সংগঠনটি এ হামলা করেছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করেনি সংগঠনটি।
ভেরিফায়েড ভিডিওতে দেখা যায়, হলে নিজেদের আসন গ্রহণ করছেন লোকজন। এরপর আর্তচিৎকারের সঙ্গে গুলির মুহুর্মুহু আওয়াজ পাওয়া যায়। ওই সময় লোকজনকে দৌড়ে বের হতে দেখা যায়।
অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কিছু মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন বন্দুকধারীরা। ওই সময় কনসার্ট হলে রক্তের মধ্যে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর গতকালের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।
মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আগত লোকজনের ওপর গুলি ছোড়েন বন্দুকধারীরা।
‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা চালানো হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য