কর্মস্থলে জনবল কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বছরে প্রায় ছয় গুণ অভিবাসী নেবে অস্ট্রেলিয়া। সেই সঙ্গে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অপেক্ষার সময়ও কমাবে দেশটি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ক্যানবেরায় সরকারি চাকরির সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নেইল।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর দেশটিতে অভিবাসন প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ থাকার পাশাপাশি কঠোর অভিবাসন প্রক্রিয়ার কারণে সেখানে কর্মীর সংখ্যা কমে গেছে।
চলতি বছর অভিবাসীর সংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার করবে ওশেনিয়ার এই দেশটি। গণনার যন্ত্রে এ হিসাব দাঁড়ায় প্রায় ৬ গুণের (৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ) সমান।
চলতি বছর ব্যাপকসংখ্যক নার্স ও ইঞ্জিনিয়ার নেবে দেশটি। দেশটিতে বেকারত্বের হার গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩.৪ শতাংশে নেমেছে।
সরকারের ১৪০ প্রতিনিধি, শ্রমিক ইউনিয়ন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানার মালিকরা দুই দিনের এ সম্মেলনে যোগ দেন।
তিনি বলেন, এই সুযোগ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তীব্র জনবল সংকটে আমাদের নার্সদের গত দুই বছর দুই বা তিন শিফটেও কাজ করতে হচ্ছে। গ্রাউন্ড স্টাফের অভাবে অনেক ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। কর্মীর অভাবে গাছ থেকে ফল নামানো যাচ্ছে না। এতে করে অনেক ফল বাগানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
মহামারির কারণে বিপর্যস্ত দেশটিতে কর্মীর ঘাটতে দেখা দেয়ার ফেডারেল সরকারের দৃষ্টি এখন শিক্ষিত ও দক্ষ অভিবাসীদের দিকে।
গত বছর ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকারের ট্রেজারার জোস ফ্রাইডেনবার্গ জানান, দেশের অর্থনীতিকে জাগাতে হলে এবং দক্ষ জনগোষ্ঠীর ঘাটতি পূরণে সহায়তা করতে স্থায়ী অভিবাসী ৩৫ হাজার থেকে বছরে এক লাখ ৬০ হাজার পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
মহামারির কারণে বিপর্যস্ত দেশটিতে কর্মীর ঘাটতে দেখা দেয়ায় ফেডারেল সরকারের দৃষ্টি এখন শিক্ষিত ও দক্ষ অভিবাসীদের দিকে।
আরও পড়ুন:কর্মসংস্থানের জন্য ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গমনেচ্ছুদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছে ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশন।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হাইকমিশন লক্ষ্য করেছে যে, কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ায় কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আগ্রহীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
দেশটিতে চাকরি পেতে আগ্রহীদের কাজের ভিসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করার জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। খবর বাসসের।
এতে আরও বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ায় অস্থায়ী ও স্থায়ী ভিসায় কর্মী নেয়ার জন্য ‘টেম্পোরারি স্কিল শর্টেজ সাবক্লাস ৪৮২’ নামে একটি ভিসা চালু রয়েছে। এই ভিসার ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও পেশাদার কর্মীদের অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য যাওয়ারর সুযোগ রয়েছে। এই ভিসা পাওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার অনুমোদিত একজন স্পন্সর (নিয়োগকারী) প্রয়োজন হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পেশার শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিশেষ করে ট্রেড পেশার জন্য অস্ট্রেলিয়ান কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী সার্টিফিকেট-৩/৪ অথবা ডিপ্লোমা প্রয়োজন হয়। স্কিল লেভেল ১ মাত্রার পেশার জন্য ব্যাচেলর বা মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। যেকোনো পেশার ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন থেকে চার বছরের পূর্ণকালীন কাজের অভিজ্ঞতা দরকার হয়।
অভিজ্ঞতা প্রমাণের জন্য চাকরির নিয়োগপত্র, বিগত দুই বছরের বেতন বিবরণী, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী প্রয়োজন হয়। সংশ্লিষ্ট পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে পাঁচ থেকে ছয় বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। তবে সংশ্লিষ্ট পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে রিকগনিশন অব প্রায়োর লারনিংয়ের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় নিদিষ্ট সংখ্যক কলেজ থেকে পেশা সংক্রান্ত শিক্ষাগত সনদ অর্জন করা যায়। পেশা বিবেচনায় আইইএলটিএসের স্কোর প্রয়োজন হয় ৫ থেকে ৬। আইইএলটিএস ছাড়াও অন্যান্য স্বীকৃত পরীক্ষা যেমন টোফেল, পিটিই গ্রহণযোগ্য।
বিজ্ঞতিতে জানানো হয়, বিদেশি কর্মীদের কাজের দক্ষতা অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই করাতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের কয়েকটি পেশার জন্য দক্ষতা যাচাই করানোর প্রয়োজন হয় না। সেগুলো হলো-অটোমোটিভ ইলেকট্রিশিয়ান, ক্যাবিনেট মেকার, কারপেন্টার, কারপেন্টার ও জয়েনার, ডিজেল মোটর মেকানিক, ইলেকট্রিশিয়ান (জেনারেল), ইলেকট্রিশিয়ান (স্পেশাল ক্লাস), ফিটার (জেনারেল), ফিটার ও টারনার, ফিটার-ওয়েল্ডার, জয়েনার, মেটাল ফেবরিকেটার, মেটাল মেকানিস্ট (ফার্স্টক্লাস), মোটর মেকানিক (জেনারেল), প্যানেল বিটার, পেস্ট্রিকুক, সিটমেটাল ট্রেড ওয়ার্কার, টুলমেকার, ওয়েল্ডার (ফার্স্টক্লাস)। টেম্পোরারি স্কিল শর্টেজ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া কর্মীদের বার্ষিক বেতন কমপক্ষে ৭০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
এ ভিসার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে অস্ট্রেলিয়ার হোম অফিসের লিংকে।
আরও পড়ুন:দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় লিবিয়ায় গিয়ে আটকে পড়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর নয়জন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বজনরা গত রোববার বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন।
আটকে পড়া নয়জন হলেন গন্ডামারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শহীদ উল্লাহের ছেলে রুকনুল ইসলাম, নুরুল আমিনের ছেলে মোরশেদুল আলম, আহমদ কবিরের ছেলে মোহাম্মদ কাউছার মিয়া, আবদুল মোনাফের ছেলে আজগর হোসেন, আবদুল মজিদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন, মৃত অলি আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আশেক ও তার ভাই ইব্রাহিম খলিল, বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত ওমর আলীর ছেলে আইয়ুব আলী ও কাথরিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বাগমারা এলাকার আবু আহমদের ছেলে মোহাম্মদ করিম।
আটকে পড়া নয়জনের পারিবারিক সূত্র জানায়, ভালো চাকরি ও কর্মসংস্থানের কথা বলে মানবপাচারকারী দালালেরা তাদের লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে সেখানকার সন্ত্রাসী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। লিবিয়ার সন্ত্রাসীরা তাদের সেখানে কোনো কাজকর্ম কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেনি, উল্টো তাদের বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় এবং দেশে স্বজনদের কাছে মোবাইলে মুক্তিপণ দাবি করে।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে দেশীয় দালালদের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা পাঠানো হলেও ওই নয়জনকে দেশে ফেরানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বর্তমানে তারা বেনগাজীর শেরা অ্যালবাম নামক এলাকার পাহাড়ে দিন পার করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীদের স্বজনরা।
সূত্র আরও জানায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওই নয়জনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বজনরা প্রশাসনিক সহযোগিতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে বাঁশখালী ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন করেন।
এ বিষয়ে বাঁশখালীর ইউএনও জেসমিন আক্তার বলেন, ‘দালালের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়ে নয়জন আটকে পড়ায় তাদের পরিবার প্রশাসনিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হবে।’
আরও পড়ুন:রিক্রুটিং এজেন্সির জরিমানা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের জবাবদিহিতার বিধান রেখে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী (সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন বৈদেশিক ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। বিলের ওপর আনা বিরোধী সদস্যদের জনমত যাচাইবাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলের সংজ্ঞায় ‘সাব এজেন্ট বা প্রতিনিধি’ সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সাব এজেন্ট বা প্রতিনিধি অর্থ এই আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোনো ব্যক্তি, যিনি কোনো রিক্রুটিং এজেন্টের সাব–এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য এই এজেন্টের চাহিদা অনুযায়ী অভিবাসী কর্মী সংগ্রহ করেন।
এতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থার অতিরিক্ত হিসেবে অপরাধ সংঘটনের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। তদন্ত ও শুনানি ছাড়া অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় রিক্রুটিং লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত করার বিধান করা হয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের রিক্রুটিং প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার লক্ষ্যে সাব-এজেন্ট বা প্রতিনিধি নিয়োগ এবং সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্বের বিধান সংযোজন করা হয়েছে ।
এছাড়া বিলে অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে ব্যাংক ঋণ, কর রেয়াত, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৃত্তি দেওয়া ইত্যাদি প্রবর্তন ও সহজ করার ব্যবস্থা করার বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘নারীরা লাশ হয়ে ফিরে আসছেন। কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দিচ্ছে। দেশে মরদেহ আসার পর পোস্টমর্টেম করা উচিত। এভাবে গিয়ে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণের চেয়ে দেশে কাজের সুযোগ করে দেয়া উচিত। যারা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যান, এয়ারপোর্টে তারা এমনভাবে নিগৃহীত হন যেন তারা অপরাধী। আসার সময়ও হয়রানির শিকার হন। এয়ারপোর্টে তাদের জন্য আলাদা ডেস্ক করা দরকার।’
জাতীয় পার্টির এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে আসতে হবে। এই রেমিট্যান্স বাদ দিলে কী আছে? গার্মেন্টস ৮০ ভাগ কাঁচামালে চলে যায়। একমাত্র রেমিট্যান্স সরাসরি রিজার্ভে যোগ হয়। তাদের বরাদ্দ খুবই কম। এয়ারপোর্টে হয়রানি হচ্ছে। তাদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ হওয়া দরকার।’
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ‘নারী শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যে যান। তাদের দুরবস্থার কথা সবার জানা। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ দূতাবাস নেয় কি না তা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।’
আরও পড়ুন:ভূমধ্যসাগরীয় প্রলয়ংকরী ঝড় ‘দানিয়েল’-এর আঘাতে বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যায় লিবিয়ার পূর্ব উপকূলীয় শহর দারনায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বুধবার জানায়, এ দুর্যোগে নিখোঁজ হয়েছেন কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ। বন্যায় ভেসে গেছে অনেক ভবন; নিশ্চিহ্ন হয়েছে শহরের এক-চতুর্থাংশ এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয় সময় ১০ সেপ্টেম্বর রাতে লিবিয়ার ত্রিপলী শহর থেকে ১৩৪০ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী উপকূলীয় শহর দারনায় সাইক্লোন দানিয়েল আঘাত হানে। এতে দেশটির বেনগাজী, আল-মারজ, শাহাত, আল-বাইদা এবং দারনা শহর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহরের সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক আল-খারাজের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সাইক্লোনে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর এই সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, উপকূলীয় শহর দারনায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থা জানার জন্য ত্রিপলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, আইসিআরসি ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
দারনা হাসপাতালে কর্মরত বাংলাদেশি একজন নার্সের মাধ্যমে পাওয়া খবরে জানা যায়, ওই শহরে সাইক্লোন ‘দানিয়েল’-এর আঘাতে ৬ বাংলাদেশি নাগরিক মারা গেছেন। তাদের মধ্যে চারজনের নাম-ঠিকানা জানা গেছে। তারা হলেন- রাজবাড়ী জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জের মামুন ও শিহাব।
অপর দুজনের বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, এলাকাটি দুর্যোগকবলিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মারা যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের মরদেহ সংরক্ষণ এবং আটকেপড়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন, আইসিআরসি ও আইওএম-এর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
এছাড়াও মারা যাওয়া অজ্ঞাত দুই বাংলাদেশির নাম ও ঠিকানা জানার জন্য দূতাবাস থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দুর্যোগকবলিত এলাকায় সরেজমিনে যাওয়ার জন্য ত্রিপলিতে লিবিয়া সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে দূতাবাস। অনুমতি পেলেই দূতাবাস থেকে একটি প্রতিনিধি দল দুর্যোগকবলিত ওই উপকলীয় এলাকায় যাবে। সে জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সন্তানসহ এক বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী বর্তমানে আইসিউতে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে দেশটির লেস্টার সিটির হিংলি এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন ৩০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন সাজু এবং ৯ ও ৪ বছর বয়সী তার দুই সন্তান জাকির হোসেন ও মাইরা হোসেন।
তাদের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে। তারা বার্মিংহাম শহরের নিকটবর্তী ওয়ালসালের প্লেক শেরিডান স্ট্রিট শহরে বসবাস করতেন।
সপরিবারে বার্মিংহাম থেকে লেস্টার শহরে ঘুরতে গিয়ে শুক্রবার ওই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরউদ্দিন চৌধুরী বুলবুল জানান, লেস্টার থেকে বার্মিংহাম ফেরার পথে তাদের বহনকারী বিএমডব্লিউ কারটির সঙ্গে একটি লরির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন আলমগীর হোসেনের স্ত্রী। তিনি সেখানকার একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:ওমানে আরব সাগরের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
আল শিফা সৈকতে স্থানীয় সময় রোববার মধ্যরাতে তারা পানিতে তলিয়ে গেলে সোমবার সকালে ওমানের রয়েল পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত দুই ভাই হলেন- চট্টগ্রামের নাজিরহাট পৌরসভার প্রয়াত আহমদ সওদাগরের ছেলে ১৮ বছর বয়সী মো. আব্বাস ও ১৬ বছর বয়সী আজাদ হোসেন।
নিহত দুজন দেশটির রাজধানী মাস্কাটের একটি স্কুলে পড়াশোনা করতেন এবং পরিবারসহ ওমানের রাজধানীতে হামিরিয়া এলাকায় বসবাস করতেন।
ওমানের বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা সেলিম পারভেছ বলেন, ‘রোববার রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিহতদের আরেক সহোদর আরাফাতসহ পাঁচজন মিলে সৈকতে ঘুরতে যায়। সেখানে হাঁটু পানিতে নামলে জোয়ারের সময় ভেসে যায় তারা। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের পাওয়া যায়নি। পরদিন তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ওমান রয়েল পুলিশ।’
বর্তমানে তাদের মরদেহ ওমানের রাজধানীর কুরুম রয়েল পুলিশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নাজিরহাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহাজান বলেন, ‘নিহতরা ৬ ভাই। বাবা-মাসহ ওমানে থাকতেন তারা। তবে মাস ছয়েক আগে তাদের বাবা অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে দেশে আসেন বড় তিনভাই ও মা। সম্প্রতি দেশে তাদের বাবা মারা যান। তাদের বড় তিন ভাই ও মা এখনও দেশেই আছেন।’
আরও পড়ুন:প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এই আয়োজনকে একটা মিলনমেলা বললেও ভুল হবে না। সাংস্কৃতিক আয়োজন যে কতটা মনোমুগ্ধকর হতে পারে, এ যেন তারই চিত্র। সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরের ধারা অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে করেছিল এই আয়োজন।
সম্প্রতি সিডনির ক্যাসুলা পাওয়ার হাউস আর্টস সেন্টারে এ সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। সিডনির প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপভোগ করেন অনুষ্ঠানটি।
আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গান শোনান জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা। স্বামী সঙ্গীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খানের সঙ্গে সিডনিতে পৌঁছে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
সুরের ধারা-এর আয়োজনে ‘হারানো সুর’ শীর্ষক সঙ্গীতসন্ধ্যার অনুষ্ঠান শুরু হয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার কিছু পর। প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শক–শ্রোতায় কানায় কানায় ভরে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ।
সিডনির সরোদশিল্পী তানিম হায়াত খান ও তবলাবাদক অভিজিৎ দানের অভূতপূর্ব পরিবেশনায় অনুষ্ঠানের শুরু হয়।
এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন সিডনির পরিচিত সংগীত জুটি শিল্পী মামুন হাসান খান ও সৃজনী ঘোষ।
দর্শকদের করতালিতে তাদের পরিবেশনা সমাপ্তির পর মঞ্চে আসেন কনকচাঁপা।
একের পর এক জনপ্রিয় বাংলা গান দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। রাত ১২টা নাগাদ অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনায় শিল্পী থেকে দর্শক—সবাই অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খানের ‘যেই দেশেতে শহীদ মিনার’ গানে।
এ ছাড়া কামরুল আহম্মদের বাঁশির সুর মোহিত করে উপস্থিত দর্শক স্রোতাদের।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছিল প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খানের পরিচালনায় অর্কেস্ট্রা দিয়ে। প্রায় ছয় মিনিটের আয়োজনটি মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে হল ভর্তি দর্শকদের।
এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা সুরের ধারার প্রতিষ্ঠাতা মামুন হাসান খান, যার দীর্ঘদিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল ছিল এই আয়োজন। তাই আমন্ত্রিত অতিথিরাও প্রসংশায় সিক্ত করেন তাকে।
আয়োজকদের প্রসংশা করতে গিয়ে কনক চাপা বলেন, ‘মামুন! জয়া! আমি গনক নই,কনক। কিন্তু তবুও নিশ্চিত জানতাম এমনটাই হবে, এতোটা সুন্দর, রুচিসম্মত, প্রাণবন্ত এবং সফল। আমার মন বলছিল, তৃতীয় মন।’
আমি বিস্মিত তোমার ও জয়ার স্পিরিট দেখে, গানের প্রতি ভালোবাসা দেখে। এ যেন তোমরা আমার ওই গানের কথার উল্টোটা বলছো যে "তোমায় নিয়ে যায় তো ধরা বাজীর সব তাস" নিজের সাথে নিজেদের ভালোবাসার সাথে কিছুটা বৈরী ( নিন্দুকের মুখে ছাই? নাহ,ওর ও আজকাল দাম আছে)আবহাওয়ায় যত সুন্দর সুরের সুললিত ধারা প্রবাহিত করে দিলে, তা অবশ্যই বিস্ময় মিশ্রিত প্রশংসার দাবিদার।’
কনক চাপা আরও বলেন, ‘একটু দম নিয়ে সুরের ধারা আরও সুদীর্ঘ পথের পানে হাঁটুক। আমার হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা ফোঁটা ফোঁটা দোয়া সবসময় তোমাদের জন্য, তোমাদের সবকিছুর জন্য। আনন্দিত থেকো।’
মামুন হাসান খান বলেন, ‘আমি গানের মানুষ। বাংলা গান আমার প্রাণ। তাই প্রবাস জীবনেও গানকে ভুলতে পারিনি।‘
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের মধ্যে বাংলা গানের প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এ আয়োজন। আয়োজনটি যে সবার ভালো লেগেছে সেটিই আমাদের সার্থকতা।’
আয়োজনের এক পর্যায়ে দেখা হয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের। তাই বহু বছর পর বিদেশের মাটিতে দুজন দেখা করতে পেরে উল্লাস প্রকাশ করেন। ভক্তদের উদ্দেশে শাবনূর তার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভেও আসেন কিছুটা সময়।
শাবনূর বলেন, ‘কনক আপু, আমরা হলাম দুই দেহে এক প্রাণ। ওনার গাওয়া কত গান আমি উপস্থাপন করেছি, আমার সাফল্যের একটা বড় অংশে আছেন কনক আপু।’
মন্তব্য