ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বাসিন্দাদের আজ সকালে ঘুম ভেঙেছে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে। বাগদাদের গ্রিন জোনে সহিংসতায় এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
ইরাকের চিকিৎসা বিভাগের এক সূত্রের বরাতে এমনটাই জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সূত্রটি জানিয়েছে, ৩০ জন নিহত ছাড়াও শুধু গ্রিনজোনেই আরও ৭০০ জন আহত হয়েছেন, এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন ১১০ জন।
দুবাইভিত্তিক এমিরেটস এয়ারলাইনস বাগদাদ বিমানবন্দরে মঙ্গলবারের সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাগদাদে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত গ্রেগোরি গ্যালিগান।
তুরস্ক সব পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার রাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষে সুরক্ষিত ও কূটনৈতিক এলাকা গ্রিন জোন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ এখনও একই মাত্রায় চলছে।
দেশটির শিয়া ধর্মীয় গুরু ও রাজনীতিবিদ মুকতাদা আল-সদর তার সমর্থকদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে অনশন শুরু করেছেন।
এর আগে সহিংসতা বন্ধ ও শান্তির স্বার্থে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন এই শিয়া ধর্মগুরু। সেই সঙ্গে সারা দেশে তার দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেয়ারও ঘোষণা দেন তিনি। তার রাজনীতি থেকে অব্যাহতির এই ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সমর্থকরা।
বিদেশিরা ছাড়ছে ইরাক
রাজধানী বাগদাদে কুয়েতের দূতাবাস সে দেশে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের ইরাক ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
রয়টার্সের বরাত দিয়ে কুয়েতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কুনা জানিয়েছে, যাদের ইরাকে যাওয়ার কথা ছিল, তাদের এখন সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
সহিংসতার মধ্যে নাগরিকদের ইরাকে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তেহরান।
সেই সঙ্গে ইরাকমুখী সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করেছে প্রতিবেশী ইরান।
ইরাকের সঙ্গে স্থলবন্দরও বন্ধ করে দিয়েছে তেহরান।
ইরাকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংঘাতে জড়িয়ে পরা সব দলকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত ২৮ জুলাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রধানমন্ত্রী পদে মোহাম্মদ আল-সুদানির মনোনয়নের বিরোধিতা করে ইরাকের শিয়া ধর্মগুরু মুকতাদা আল সদরের সমর্থকরা বাগদাদের উচ্চ নিরাপত্তা এলাকা ভেঙে ইরাকের পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে।
যখন শত শত বিক্ষোভকারী পার্লামেন্টে প্রবেশ করে, তখন সেখানে কোনো পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন না।
বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করলেও পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ আটকাতে পারেনি।
গত বছর ১২ অক্টোবর ইরাকের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগণনায় প্রাথমিকভাবে বড় ব্যবধানে যান শিয়া ধর্মীয় নেতা মুকতাদা আল-সদরের দল।
ইরানপন্থি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠী নির্বাচনের প্রাথমিক ফল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ভোট কারচুপির অভিযোগ করে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল রেকর্ড নিম্ন ৪১ শতাংশ। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযানে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেটি পঞ্চম সাধারণ নির্বাচন।
আরও পড়ুন:Deeply alarmed by clashes across #Iraq this evening. The situation is very dangerous and could quickly spiral beyond control. Canada urges all parties to take steps to quickly deescalate the situation and to resolve differences through negotiation for the benefit of all Iraqis.
— Gregory Galligan 🇨🇦 (@Greg_Galligan) August 29, 2022
সৌদি আরবে পৌঁছানোর আগে ও পরে করণীয় বিষয়ে হজযাত্রীদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।
গালফ নিউজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে।
হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হজব্রত পালনকে নির্বিঘ্ন করতে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নিজ দেশের বিমানবন্দরে করণীয়
১. ভ্রমণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র নিয়ে বিমানবন্দরে যেতে হবে।
২. যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস লাগেজ বা নির্ধারিত ব্যাগে রাখতে হবে।
৩. প্রতিটি লাগেজ নির্ধারিত আকারের হতে হবে। উড়োজাহাজে তোলার আগে প্রতিটি লাগেজ আলাদাভাবে শনাক্ত করার চিহ্ন থাকতে হবে।
যেসব সামগ্রী বহন করা যাবে না
১. প্লাস্টিক ব্যাগ, পানির বোতল, তরল বস্তু এবং মোড়ানো বা বাঁধা নয় এমন লাগেজ বা ব্যাগ বহন করা যাবে না।
২. কাপড়ে মোড়ানো ও ঢাকা বাক্স বহন করা যাবে না।
সৌদিতে আগমনের পর
১. সৌদিতে পৌঁছার পর কোনো হজযাত্রীর কাছে ৬০ হাজার রিয়ালের বেশি নগদ অর্থ কিংবা এর চেয়ে বেশি মূল্যের সামগ্রী থাকলে, সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি মুদ্রা, উপহারসামগ্রী, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, অলংকার ও মূল্যবান ধাতু।
২. সৌদি আরবে প্রবেশ কিংবা দেশটি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে শুল্ক ঘোষণাপত্র পূরণের ওপর জোর দিয়েছে হজ মন্ত্রণালয়। যেসব হজযাত্রী ৬০ হাজার রিয়ালের বেশি বিদেশি মুদ্রা কিংবা এর চেয়ে বেশি মূল্যের সামগ্রী বহন করবেন, তাদের ক্ষেত্রে শুল্ক ঘোষণা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
৩. হজ মন্ত্রণালয় কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, যেসব হজযাত্রী শুল্ক ঘোষণাপত্র পূরণে ব্যর্থ হবে, তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।
আরও পড়ুন:এক দশকের বেশি সময়ের বিচ্ছিন্নতার পর আরব লিগে স্বাগত জানানো হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে।
সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে আরব লিগে দেশটির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। ওই ঘটনার অনেক বছর পর স্থানীয় সময় শুক্রবার সৌদি আরবের বন্দরনগরী জেদ্দায় আরব লিগের ৩২তম সম্মেলনে যোগ দেন আসাদ।
সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে বাশার আল-আসাদ বলেন, আরব ভাষাভাষী দেশগুলোতে সংকট তুলে ধরতে সম্মেলন একটি ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’। যদিও সম্মেলনে তার আগমনের প্রতিবাদে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে প্রতিবাদ করেছেন শত শত মানুষ।
সম্মেলনে আগত অতিথিদের উদ্দেশে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের মধ্যে সংহতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আমাদের অঞ্চলে যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিবর্তে শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য এটি (সিরিয়াকে ফিরিয়ে আনা) আরব তৎপরতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা।’
তিনি আরও বলেন, সিরিয়া সবসময় নিজেদের আরব বিশ্বের অংশ মনে করেছে।
ওই সময় আরব রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানান তিনি।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বিষয় দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। নিজেদের বিষয় তারাই সবচেয়ে ভালোভাবে সমাধান করতে সক্ষম।’
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নিহত বেড়ে ৩০ জন এবং আহত হন ৯০ জন।
উপত্যকায় নিহতদের মধ্যে ছয় শিশু ও তিন নারী রয়েছেন।
অপরদিকে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েল ভূখণ্ডে ছোড়া রকেট হামলায় বৃহস্পতিবার একজন নিহত হন।
হামাসের মুখপাত্র সালামা মারুফ জানান, গাজার পাঁচটি ভবন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০০টি ফ্ল্যাট। গাজার বিভিন্ন প্রবেশপথ ইসরায়েলের সেনারা বন্ধ করে রাখায় আহতদের অন্য জায়গায় স্থানান্তর এবং জরুরি দ্রব্যও আনা-নেয়া করা যাচ্ছে না।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গাজায় সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ করে রাখায় ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত রোগীরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। কারণ গাজায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভিডিওবার্তায় আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমরা ওফেনসিভ ও ডিফেনসিভভাবে আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের ক্ষতি করতে যেই আসবে, তাকে রক্ত দিয়ে খেসারত দিতে হবে।’
ইসরায়েলের দাবি, গাজায় যুদ্ধবিমানের লক্ষ্যবস্তু সাধারণ নাগরিক নয়; ইসলামিক জিহাদের রকেট হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েলের হামলায় ইসলামিক জিহাদের রকেট ইউনিটের কমান্ডারসহ শীর্ষ পাঁচ নেতা নিহত হন। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনটিও তা স্বীকার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রকেট হামলা জোরাল করার ঘোষণা দিয়েছে।
কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি হামলায় গাজা উপত্যকায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান অনবরত গাজার আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ছে। এতে হতাহত বেসামরিক বাসিন্দা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে উপত্যকাটি।
এদিকে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালাচ্ছে মিসর, তবে এখন পর্যন্ত দুই পক্ষকে রাজি করাতে পারেনি দেশটি।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত করে রাজনৈতিক কার্যক্রম সচল করতে মিসরের প্রচেষ্টায় এখনও কোনো ফল আসেনি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে ইসরায়েলের একতরফা পদক্ষেপ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
এ অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে তিনি শান্তিকামী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান।
আরও পড়ুন:একের পর এক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের ছোড়া বোমার আঘাতে কেঁপে উঠছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোর হামলায় ইসলামিক জিহাদের রকেট ইউনিটের কমান্ডার নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি তার নেতৃত্বে ইসরায়েলে রকেট হামলা হয়।
ইসলামিক জিহাদের ঘাঁটি ধ্বংসের অজুহাতে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে গাজার আবাসিক এলাকায় শুরু হওয়া বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যাই বেশি।
এদিকে রকেট ছুড়ে জবাব দেয়ার চেষ্টা করছে গাজার সশস্ত্র সংগঠনগুলো। এক হিসাবে এ কয় দিনে ৪০০টির বেশি রকেট ইসরায়েল ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে, যার বেশির ভাগই আঘাত হানার আগেই ইসরায়েলের মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, গাজার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে একটি ভবনে বৃহস্পতিবার ভোরে বিরোধীদের রকেট ইউনিট লক্ষ্য করে হামলা করা হয়।
খাদের আদনানের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ইসরায়েলে রকেট হামলার পেছনে আলী ঘালি জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
আলী ঘালি ইসলামিক জিহাদের রকেট ইউনিটের প্রধান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে লক্ষ্য করে হামলা করে ইসরায়েল। সেই হামলায় বেঁচে যান তিনি।
তার মৃত্যুতে ফিলিস্তিনে উত্তজনা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার বিশেষ সমন্বয়কারী টর ওয়েন্সল্যান্ড বিবৃতিতে গাজায় বেসামরিক নাগরিক নিহতের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
টর ওয়েন্সল্যান্ড বলেন, ‘ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের ঘটনায় শোক জানাই। এ ধরনের কাজ অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযমের মাধ্যমে উত্তেজনা এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করছি।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব বেসামরিক নাগরিক ও নারী-শিশুদের নিহতের ঘটনায় শোকাহত। এ ধরনের কাজ তিনি সমর্থন করেন না এবং শিগগির হামলা বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজার বিভিন্ন এলাকায় এই বিমান হামলা হয় বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে নিহতদের মধ্যে ৯ জন বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া মিসাইল হামলায় ২০ জন বাসিন্দা আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল বলছে, ইসলামিক জিহাদের সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকরা যেন স্বীকৃত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের কারাগারে অনশনরত ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের নেতা খাদের আদনানের মৃত্যু হয়। এর জেরে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে রকেট হামলা চালায় সংগঠনটি।
পাল্টাপাল্টি হামলায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েলসহ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনগুলো। এর এক সপ্তাহ না পেরোতেই বিমান হামলা করল ইসরায়েল।
ইসলামিক জিহাদের তিন নেতা নিহত
মঙ্গলবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইসলামিক জিহাদের তিন নেতা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
তারা হলেন জিহাদ আল ঘান্নাম, খলিল আল বাহতিনি, তারিক ইজ-আদ-দ্বীন।
লক্ষ্য ছিল আবাসিক ভবন
গাজায় অবস্থানরত আল জাজিরার প্রতিবেদক ইউমনা আল-সাঈদ জানান, গাজা শহরের মধ্যবর্তী একটি আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান বোমা নিক্ষেপ করে।
তিনি বলেন, `আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে হামলা হলে সব সময়ই সাধারণ নাগরিক হতাহত হয়।‘
হামলায় ইসরায়েলে ৪০ বিমান, ছিল ড্রোন
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সূত্র জানায়, অভিযানে ৪০টি যুদ্ধ বিমান ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। অস্ত্র উৎপাদন ও সামরিক ঘাটি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন ১০টি স্থানে হামলা করা হয়।
এসব ঘনবসতি এলাকায় অবস্থিত হলেও সাধারণ নাগরিক তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল না বলে দাবি ইসরায়েলের।
এদিকে ইসরায়েলকে হামলার উচিত মূল্য দিতে হবে, এমন হুশিয়ারি দিয়ে বরাবরের মতো বিবৃতি দিয়েছে হামাস।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনে আগামী মাস থেকে খাদ্যসহায়তা বন্ধ করে দিচ্ছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
সংস্থাটি তহবিল সংকটে থাকায় এ ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
দেশটিতে নিযুক্ত ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সামের আবদেলজাবের রোববার জেরুজালেম থেকে মোবাইল ফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘তীব্র তহবিল সংকটের মুখে কষ্টের এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ডব্লিউএফপি। জুন থেকে দুই লাখ মানুষকে দেয়া সহায়তা স্থগিত করা হবে। সংখ্যাটা সুবিধাভোগীদের ৬০ শতাংশ।’
এসব সুবিধাভোগীর বেশির ভাগ গাজা ও পশ্চিম তীরের বাসিন্দা। তারা বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর হওয়ায় হঠাৎ এ সিদ্ধান্তে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।
গাজা ২০০৭ সাল থেকে হামাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় ২৩ লাখ বাসিন্দার ৪৫ শতাংশ বেকার এবং ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। ইসরায়েল উপত্যকাটি এক প্রকার অবরুদ্ধ করে রাখায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাতিসংঘ দরিদ্র ফিলিস্তিনিদের মাসে জনপ্রতি ১০ দশমিক ৩০ ডলারের ভাউচার অথবা খাবারের ঝুড়ি দেয়। এ দিয়ে জীবন চলে তাদের। সহায়তা বন্ধ হলে এসব মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সামের আবদেলজাবের বলেন, ‘খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে লাখো মানুষ সহায়তার ওপর নির্ভর করে। তাদের সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার ফলাফল ডব্লিউএফপি বুঝতে পারে, তবে যারা খাদ্য না পেলে বাঁচতেই পারবে না, তাদের টিকাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
তহবিল সংগ্রহে ব্যর্থ হলে আগস্টের মধ্যে খাদ্য ও অর্থসহায়তা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে।
প্রতিবাদে বিক্ষোভ
সহায়তা বন্ধের খবরে গাজায় অবস্থিত ডব্লিউএফপির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ফিলিস্তিনিরা।
এ সময় তাদের ‘নো টু হাঙ্গার’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া ফারাজ আল মাসরি বলেন, ‘ভাউচারই (অর্থসহায়তা) জীবন। এখানে অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই। এ সিদ্ধান্ত আমাদের মৃত্যুর সমান।’
দুই সন্তানের বাবা ফারাজের পরিবার মাসে প্রায় সাড়ে ৪২ ডলারের অর্থ সহায়তা পায়।
উত্তর গাজা উপত্যকার জাবালিয়ার বাসিন্দা জামালাত এল-দাবর বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ ও বেকার। আমরা না খেয়ে মারা যাব।’
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে উপত্যকার সশস্ত্র একাধিক সংগঠন ও ইসরায়েল।
স্থানীয় সময় বুধবার ভোর থেকে তা কার্যকর হয়েছে বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের কারাগারে অনশনে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের আলোচিত নেতা খাদের আদনানের মৃত্যু হয় মঙ্গলবার। এর জেরে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট ছোড়ে ইসলামিক জিহাদ। জবাবে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইসলামিক জিহাদের মুখপাত্র তারেক সেলমি জানান, দুই পক্ষ একই সময়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। বুধবার ভোর থেকে সংঘাত বন্ধ রয়েছে।
ফিলিস্তিনের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, গাজায় ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন’ বন্ধে মিসর, কাতার ও জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করেছে উপত্যকার শাসক দল হামাস।
এর আগে খাদের আদনানের মৃত্যুর পর যৌথ বার্তায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে, রকেট হামলা প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র। এর জন্য ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সূত্রের ভাষ্য, গাজা থেকে কমপক্ষে ৩০টি রকেট ছোড়া হয়েছে। এতে ইসরাইলের তিন নাগরিক আহত হন।
গাজার বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য