ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর সাতটি গ্রামের শত শত বাসিন্দা পিঁপড়ার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তারা বলছেন, পিঁপড়ার দল তাদের গবাদিপশুকে আক্রমণ করছে। তাদের ফসলি জমি, তাদের ঘরবাড়ি কিছুই উপদ্রব থেকে বাদ পড়ছে না।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার অনুসারে, হলুদ পিঁপড়া বা ইয়েলো ক্রেজি অ্যান্ট বিশ্বের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। এই প্রজাতির পিঁপড়া কামড় দেয় না। তবে তারা এক ধরনের ফরমিক অ্যাসিড ছোড়ে, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই পিঁপড়ার বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানোপ্লোলেপিস গ্র্যাসিলিপস। এদের বাস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে। তারা অনিয়মিত, সমন্বয়হীনভাবে চলাফেরা করে। তবে চলাফেরার সময় তারা কোনো বাধা পেলে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রজাতির পিঁপড়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। তারা দেশীয় বন্য প্রাণীর প্রচুর ক্ষতি করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার অনেক অংশে এই পিঁপড়ার উপদ্রবের খবর পাওয়া গেছে।
ড. প্রণয় বৈদ্য একজন কীটবিজ্ঞানী। তিনি হলুদ পিঁপড়ার ওপর অনেক গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই প্রজাতির পিঁপড়া সুবিধাবাদী।
কোনো একটা খাবার তারা বেশি পছন্দ করে এমনটি নয়। তারা সবকিছুই খায়। এই হলুদ পিঁপড়ারা অন্য প্রজাতির পিঁপড়া, মৌমাছি কোনো কিছু খেতেই বাদ রাখে না।
তামিলনাড়ুর ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো ডিন্ডিগুল জেলার কারান্থামালাই বনের চারপাশে একটি পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষিকাজ করেন অথবা গবাদিপশুর মালিক।
তামিলনাড়ুর সেলভাম নামের এক কৃষক বলেছেন, হলুদ পিঁপড়ার উপদ্রবে তারা বনের কাছাকাছি কাজ করতে পারছেন না।
৫৫ বছর বয়সী সেলভাম বলেন, ‘বনের কাছাকাছি গেলেই পিঁপড়া আমাদের গা বেয়ে উঠতে শুরু করে। আমরা খাবার তো দূরের কথা, পানি পর্যন্ত সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি না। পিঁপড়া পানির পাত্রের মধ্যে গিয়েও বসে থাকে। আমরা জানি না এই উপদ্রব থেকে কীভাবে মুক্তি পাব।’
গ্রামবাসী জানান, তারা কয়েক বছর ধরে আশপাশের জঙ্গলে এই পিঁপড়া দেখছেন। কিন্তু সম্প্রতি গ্রামের মধ্যেও তাদের উপদ্রব বেড়েছে। পিঁপড়ার দল তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
বনের আশপাশে বসবাসকারী গবাদিপশু পালকরা বলছেন, উপদ্রবের কারণে তারা সেসব স্থান ছেড়েছেন।
নাগাম্মল নামের এক বাসিন্দা ছাগল পোষেণ। তার খামারের ছাগলগুলোকে পিঁপড়ার দল আক্রমণ করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে এই পিঁপড়ার দল হানা দিয়েছিল। তাই আমি গ্রামে চলে এসেছি। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। তাদের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছেই।’
স্থানীয় বন কর্মকর্তা প্রভু বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে কথা বলতে পারব।’
ডা. সিঙ্গামুথু একজন সরকারি পশু চিকিৎসক। তিনি বলেছেন, পিঁপড়াগুলো সাধারণ পিঁপড়ার মতোই দেখতে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না কেন পিঁপড়ার সংখ্যা এত পরিমাণে বাড়ছে। তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব সেটিও বুঝতে পারছি না। গ্রামবাসীকে আপাতত বনে গবাদিপশু চড়াতে মানা করা হয়েছে।’
গ্রামবাসীর অভিযোগ, পিঁপড়ার আক্রমণে শুধু গবাদিপশু নয়, ইতোমধ্যে সাপ এবং খরগোশও মারা গেছে।
কীটবিজ্ঞানী ড. প্রণয় বৈদ্য বলেছেন, শত শত পিঁপড়া যে ফরমিক অ্যাসিড ছুড়ে দেয় তা প্রাণীর চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে তারা বিশেষভাবে চোখকে লক্ষ্য করে কি না তা রেকর্ড করা হয়নি। এই অ্যাসিড মানুষের দেহে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তবে এটি প্রাণঘাতী না-ও হতে পারে।
পোকামাকড়ের এই বিস্তার অঞ্চলটির পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ড. বৈদ্য জানান, এই পিঁপড়াগুলো প্রথম অস্ট্রেলিয়ার ক্রিসমাস দ্বীপে আক্রমণ করে। তারা প্রথম সেখানকার স্থানীয় পিঁপড়াদের আক্রমণ করে এবং তাদের খাদ্যের উৎস দখল করে নেয়। স্থানীয় পিঁপড়াদের স্থানচ্যুত করে। সেই সঙ্গে দ্বীপের লাখ লাখ লাল কাঁকড়াকে অন্ধ করে মেরে ফেলে।
ড. প্রিয়দর্শন ধর্মরাজন একজন কীটতত্ত্ববিদ। তিনি বলেছেন, এই পিঁপড়ার ফসলের রসচোষক ক্ষুদ্র এক ধরনের পোকা এফিডের সঙ্গে সহজীবী সম্পর্ক রয়েছে। এফিড রস চুষে ফসলের ক্ষতি করে।
ধর্মরাজন বলেছেন, ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পিঁপড়ার আক্রমণ এখন আরও বাড়তে পারে। কারণ যখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের হজমক্ষমতা বাড়ে। যার ফলে তারা আরও বেশি খায়। এটি একটি কারণ হতে পারে।
তবে তিনি এও বলেছেন, এটি ধারণামাত্র। এ ব্যাপারে এখনও কোনো তথ্য আমরা পাইনি। আমাদের সংক্রমণের এলাকার আবহাওয়ার ধরন সম্পর্কিত আরও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং এটি বিশ্লেষণ করতে হবে। তারপরই নিশ্চিত করে বলা যাবে।
ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী টাটা সানসের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস বিখ্যাত শিল্পপতি রতন নাভাল টাটার মৃত্যু হয়েছে, যার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
টাটা সানসের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন বুধবার রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে মৃত্যুর বিষয়টি জানান।
এনডিটিভির খবরে জানানো হয়, দুই দিন আগে সোমবার নিজের স্বাস্থ্য ঘিরে জল্পনা নাকচ করে রতন টাটা জানিয়েছিলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন তিনি।
বিবৃতিতে চন্দ্রশেখরন বলেন, ‘টাটা গ্রুপের জন্য টাটা সাহেব ছিলেন চেয়ারপারসনের চেয়ে বেশি কিছু। আমার কাছে তিনি ছিলেন পরামর্শদাতা, পথপ্রদর্শক ও বন্ধু। তিনি নজিরের মাধ্যমে উৎসাহ জোগাতেন।’
দাতব্য কাজে টাটার অবদান স্মরণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে তার উদ্যোগগুলো গভীর প্রভাব রেখে গেছে, যার সুফল মিলবে অনাগত ভবিষ্যতেও।
রতন টাটার মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শোক প্রকাশ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ।
প্রয়াত শিল্পপতিকে ‘দয়াময় আত্মা’ ও ‘অসাধারণ মানুষ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে মোদি বলেন, রতন টাটা ছিলেন স্বপ্নদর্শী ব্যবসায়ী নেতা। ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থিতিশীল নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের সরকারকে এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কামাল হোসেন। এ ঘটনার পর বুধবার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সীমান্ত হত্যা ‘শূন্যের কোঠায়’ নামিয়ে আনতে বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে, সীমান্ত হত্যার এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অযৌক্তিক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ১৯৭৫ সালের যৌথ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকার শর্তাবলীর লঙ্ঘন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৩১ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। তাদের মধ্যে ২৮ জনই বিএসএফের গুলিতে নিহত হন।
এতে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিএসএফের হাতে নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬৩ জন।
আরও পড়ুন:ভারতের মহারাষ্ট্রে সচিবালয় ভবন থেকে লাফ দিয়েছেন রাজ্যটির ডেপুটি স্পিকারসহ তিনজন সংসদ সদস্য। শুক্রবার দুপুরের দিকে ভবনটির তিনতলা থেকে তারা লাফ দেন। তবে ভবনের নিচে জাল থাকায় তারা রক্ষা পেয়েছেন।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মহারাষ্ট্র রাজ্যের ধাঙড় গোষ্ঠীকে তফসিলি জনজাতির (এসটি) অন্তর্ভুক্ত করার দাবির প্রতিবাদে ডেপুটি স্পিকার নরহরি জিরওয়াল এবং অন্য তিনজন আদিবাসী সংসদ সদস্য সচিবালয়ের তিনতলা থেকে ঝাঁপ দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ভবনটির নিচে থাকা জালের ওপর তারা। কারও তেমন কোনো আঘাত লাগেনি। তাদেরকে নিরাপদে জাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সচিবালয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধের চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে এই জাল স্থাপন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনজন এমপি জাল থেকে নেমে আবার সচিবালয় ভবনে উঠছেন। চলতি বছরের শেষে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এমন ঘটনা মহারাষ্ট্রে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পশ্চিম মহারাষ্ট্র ও মরাঠাওয়াড়া অঞ্চলে ধাঙড় জনগোষ্ঠীর বসবাস। কয়েক বছর ধরেই তারা ভারত সরকারের কাছে জনজাতির স্বীকৃতি চেয়ে আন্দোলন করে আসছে। গত মাসেই ধাঙড় গোষ্ঠীর এক নেতা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হলে তাদেরও শিন্ডেকে প্রয়োজন নেই।
মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার ও দেবেন্দ্র ফড়নবিশসহ মন্ত্রিসভার অন্য কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার তফসিলি জনজাতি (এসটি) বিষয়ে বৈঠক করেন। এ সময় কয়েকজন আদিবাসী এমপি সচিবালয় কমপ্লেক্সে বিক্ষোভ করেন। ধাঙড় জনগোষ্ঠী বর্তমানে অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) বিভাগে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা এসটি বিভাগে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে।
নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ১৯৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত অবস্থায় ৯৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ৩১ জন।
সোমবার দেশটির পুলিশ জানায়, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী কাঠমান্ডু। শহরটিতে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সূত্র: সিনহুয়া/ইউএনবি
নেপালের ৮০টি জাতীয় মহাসড়কের মধ্যে ৪৭টি বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ভৌত অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়।
এছাড়াও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সেচ সুবিধা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আনুমানিক পরিমাণ তিন কোটি ২৬ লাখ ডলার।
জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শুক্র ও শনিবার টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগে জলবিদ্যুৎ ও সঞ্চালন প্রকল্পে আনুমানিক তিন বিলিয়ন রুপি (২২.৫ মিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে নদী নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্পে আনুমানিক ১.৩৫ বিলিয়ন রুপি (১০.১ মিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হয়েছে।
কর্মকর্তা আরও জানান, বন্যায় ৬২৫.৯৬ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১১টি চালু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রও বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, যা দেশের চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়াও নির্মাণাধীন ১৫টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে।
তবে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ দ্রুতগতিতে শুরু হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বন্যা ও ভূমিধসে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হবে এবং নিহতদের পরিবার ও আহতদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
উদ্ভূত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেশের সব স্কুল-কলেজ তিনদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে টানা চার দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে এ সময়ে বেনাপোল শুল্ক ভবন ও বন্দরে পণ্য উঠানামা, খালাস এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘শারদীয় দূর্গাপূজার সরকারি ছুটির কারণে ৯ অক্টোবর বুধবার থেকে ১২ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত পেট্রাপোল বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তাই এ সময় বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। তবে ইলিশের চালান গ্রহণ করা হবে। ১৩ অক্টোবর রোববার সকাল থেকে আবারও আমদানি-রপ্তানি চালু হবে।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, ‘দুর্গাপূজার ছুটির কারণে চারদিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে বলে ওপারের ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পত্র দিয়ে আমাদেরকে অবহিত করেছে।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির বলেন, ‘দুর্গাপূজার ছুটির বিষয়টি ওপারের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও এপারের বন্দরে পণ্য উঠানামা, খালাস ও পণ্যের শুল্কায়ন কাজকর্ম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসের পর ভারতীয় ট্রাক দেশে ফিরে যেতে পারবে।’
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি ইমতিয়াজ ভুইয়া বলেন, ‘পূজার ছুটিতে দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও এ সময় দুদেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে।’
ভারত ভ্রমণে ভিসার জন্য জমা দেয়া ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে ঢাকায় দেশটির হাইকমিশন।
সোমবার ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়।
প্রতিবেদনে সূত্রের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ, প্রতিবাদ এবং হুমকিমূলক ই-মেইল দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়। ওই সময়ের মধ্যে ভিসার জন্য আবেদন করা বাংলাদেশিদের পাসপোর্টগুলো ভারতীয় হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে ছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসিনা সরকারের পতনের পর দু’দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারতীয় হাইকমিশন। অবশ্য উভয় দেশের সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
ভিসা পরিষেবা স্থগিত করার পর এক পর্যায়ে সীমিতসংখ্যক জরুরি ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে ভারতীয় হাইকমিশন। এর মধ্যে মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি, স্টুডেন্ট এবং তৃতীয় দেশে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ডাবল-এন্ট্রি ভিসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আর এ কারণে হতাশাগ্রস্ত আবেদনকারীদের অনেকেই ব্যাপকভাবে হাইকমিশনে ই-মেইল করছেন, এমনকি কিছু ই-মেইলে ভাঙচুরের হুমকিও রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভিসা আবেদন কেন্দ্রের সদস্যরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো জনগণের অসন্তোষ প্রকাশের স্থানে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, বাংলাদেশ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিসা আবেদনকারী দেশ। শুধু ২০২৩ সালেই প্রায় ১৬ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা ইস্যু করে ভারত, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে চার লাখ ভিসা ইস্যু হয়েছিল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে।
তবে দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার কারণে সাবধানতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছে হাইকমিশন। অস্থায়ী ভিসা প্রদানে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কারণ ভিসার অপব্যবহারের কিছু ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসা ভিসায় ভ্রমণকারীরা স্বাস্থ্যসেবার জন্য নয়, অন্য উদ্দেশ্যে ভারত ভ্রমণ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক মিশনের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তাই বাংলাদেশিরা প্রায়ই ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে ভিসার জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে দুর্গাপূজা ঘনিয়ে আসায় পশ্চিমবঙ্গে পূজা উৎসবে যোগ য়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভিসার আবেদন বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে বৈঠকে দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
দুই নেতা আলোচনার সময় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, সার্ক সক্রিয়করণ, জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণায় সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা মালদ্বীপের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্কের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর প্রভাবসহ অনেক বিষয়ে মিল আছে।
জলবায়ু সংকটের কারণে উদ্ভূত বিপদের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের পুরো অস্তিত্বই ঝুঁকির মুখে।’
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট দেশের নির্মাণ ও পর্যটন খাতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
মোহাম্মদ মুইজু বলেন, উভয় দেশ পর্যটন, মৎস্যসম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণায় একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
তিনি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে তা দুই দেশের মানুষের জন্য উপকারী হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি সার্কের সক্রিয়তাকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ঘনিষ্ঠ সংহতকরণের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখতে চান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা কাছাকাছি থাকব। আমাদের দূরে থাকা উচিত নয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য