শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের পিএমএলএ আদালতের বিচারপতি জীবন কুমার সাধু শুক্রবার এই নির্দেশ দেন।
ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির তদন্তকারীরা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে অভিযান চালায় ২৩ জুন। একই সঙ্গে অভিযান চলে তার আত্মীয়-পরিজনদের বাড়িতে। ইডির ১১টি দল তল্লাশি চালায় এসব স্থানে।
অভিযান ও তল্লাশির সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে ৬০ কোটি টাকাসহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। অভিযুক্ত মডেলের বাড়িতে কোটি কোটি টাকা থাকার এ ঘটনায় শুধু তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইমেজ নয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির এখন টালমাটাল হাল। রাজ্য সরকার দায় এড়াতে নিচ্ছে নানা কৌশল। বক্তব্যে সতর্ক সবাই।
তৃণমূলের মহাসচিব ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এরই মধ্যে দল ও সরকারের সব পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পার্থের পাপের দায় দলের নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি বড় ঘটনা এবং তাতে তৃণমূল কংগ্রেস দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন রাজ্যের বিরোধী নেতারা। তারা মমতা-মোদি বৈঠকের প্রতি ইঙ্গিত করে সেখানে ‘সমঝোতা’ হচ্ছে বলেও অভিমত দিচ্ছেন।
দুর্নীতির দায়ে পার্থ ও অর্পিতাকে গ্রেপ্তারের পর প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ) কোর্টে হাজির করে ইডি তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। দুই দফায় ১২ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার তাদের আদালতে তোলা হয়।
পিএমএলএ কোর্টের বিচারক এ পর্যায়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এ সময়ে ইডির তদন্তকারীরা জেলে গিয়ে তাদের জেরা করতে পারবেন, বয়ান নথিভুক্ত করতে পারবেন।
এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রেসিডেন্সি জেলে এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে আলিপুর নারী জেলে পাঠানো হয়। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে ১৮ আগস্ট।
তদন্তকারীরা পার্থ ও অর্পিতার নামে নতুন করে ৫০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে। সে বিষয়ে তথ্য তালাশের জন্য ফের তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান ইডির আইনজীবী।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী আদালতে বয়স ও অসুস্থতার কথা বলে জামিনের আবেদন জানান। অন্যদিকে অর্পিতার আইনজীবী প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা পেতে আবেদন করেন। বিচারক তাদের আবেদনে সাড়া দেননি।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনাকে ‘ভয়ানক’ ও ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।
ইমরান বলেছেন, রুশদির লেখা বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিয়ে মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ বোধগম্য, তবে এটি হামলার ন্যায্যতা দিতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘রুশদি বুঝতে পেরেছিলেন, কারণ তিনি নিজেও মুসলিম পরিবার থেকে এসেছেন। তিনি আমাদের হৃদয়ে নবীর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বিষয়ে জানেন। তিনি এটা জানতেন’
তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং রাগটা আমি বুঝতে পেরেছি, কিন্তু আপনি যা ঘটেছে তা সমর্থন করতে পারেন না।’
দশ বছর আগেই, ইমরান খান ভারতে আয়োজিত একটি ইভেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করেছিলেন কারণ সেখানে রুশদির উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল।
তবে ইমরানের পক্ষ থেকে রুশদির প্রতি সহিংস পদক্ষেপকে কখনও সমর্থন করতে দেখা যায়নি।
যদিও পাকিস্তানের নেতাদের রুশদির ওপর হামলার নিন্দা জানাতে দেখা যায়নি। সেখানে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী, যিনি কিনা তার রাজনৈতিক অবস্থান টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, তার পক্ষ থেকে এমন নিন্দা জানানোর বিষয়টি এক অর্থে অপ্রত্যাশিত।
বুকার জয়ী লেখক সালমান রুশদির ওপর হওয়া হামলার নিন্দা ইমরান খান করলেও এই ঘটনার প্রশংসা করেছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
অনলাইনে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে এই হামলার প্রশংসা করার পাশাপাশি তার পূর্বসূরি আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির ফতোয়ার কথাও স্মরণ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, 'ফতোয়াটি ছিল এমন এক বুলেট ছোড়ার মতো, যা তার লক্ষ্যে আঘাত করা না পর্যন্ত ছুটতেই থাকত।'
৩৩ বছর আগেই স্যাটানিক ভার্সেস বইয়ে ইসলাম ধর্মকে হেয় করার অভিযোগে তৎকালীন ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রহুল্লাহ খোমেনি তার ও তার বইয়ের প্রকাশকদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন, কেউ রুশদিকে হত্যা করতে গিয়ে নিহত হলে সে শহীদ, সে জান্নাতে যাবে।
আরও পড়ুন:তীব্র দাবদাহের পর এবার মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে আঘাত করা শক্তিশালী ঝড়ে ৩ শিশুসহ অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইতালি, অস্ট্রিয়া ও ফরাসি দ্বীপ কর্সিকাতে এই মৃতের ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে গাছ পড়ে।
প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে ইতালির ভেনিসের ক্যাম্পসাইটগুলো উড়ে গিয়েছে।
ফ্রান্সের কর্সিকায় ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো হাওয়ায় অনেক গাছ উপড়ে গেছে এবং মোবাইল টাওয়ারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে একটি গাছ পড়ে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন কর্সিকাতে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেছেন এবং এই দ্বীপেই ৬ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থল ও সমুদ্রভাগে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঝড়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল এবং কোনো সতর্কতা দেয়া হয়নি।
কর্সিকার এক রেস্তোরাঁর মালিক প্রত্যক্ষদর্শী একজন সেড্রিক বোয়েল বলেন, ‘আমরা এমন ঝড় এর আগে কখনও দেখিনি।’
ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মার্সেইর রাস্তাগুলোও প্লাবিত হয়েছে।
অস্ট্রিয়ার ক্যারিন্থিয়াতেও প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানে একটি হ্রদের কাছে গাছ পড়ে দুই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
ইতালির তাসকানি দ্বীপে পৃথক ঘটনায় একজন নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দাবদাহ, খরা, ঝড়ের মতো ভীতিকর ঘটনাগুলো ঘটছে।
আরও পড়ুন:আবগারি শুল্কনীতি-সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়ার বাসাসহ ২১টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে রাজধানী শহরে এ তল্লাশি চালানো হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় দিল্লি আবগারি শুল্কনীতি বিভাগের ইনচার্জ ও উপমুখ্যমন্ত্রী সিসোদিয়া বলেন, ‘আমরা সিবিআইকে স্বাগত জানাই। অনুসন্ধানে পূর্ণ সহায়তা করব, যাতে করে সত্য দ্রুতই প্রকাশ পায়।
‘এখন পর্যন্ত আমার নামে অনেক মামলা হয়েছে, তবে কিছুই বের হয়নি। এটাতেও (তল্লাশি) কিছু বের হবে না। দেশের সুশিক্ষার জন্য আমার কাজ বন্ধ করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের দেশে যারা ভালো কাজ করেন, তাদের এভাবে হেনস্তা করা হয়। এ কারণে আমাদের দেশে এক নম্বর হতে পারেনি।’
মনীষ সিসোদিয়ার বাড়িতে এমন সময়ে অভিযান চালানো হলো যখন দিল্লির স্কুলগুলো ঢেলে সাজানোয় আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে তাদের আন্তর্জাতিক সংস্করণে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও এএপির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালও সিবিআইয়ের তল্লাশিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এতে পূর্ণ সহায়তা করা হবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে কেজরিওয়াল বলেন, ‘যেদিন দিল্লির শিক্ষার মডেল প্রশংসা পেয়েছে এবং আমেরিকার সর্ববৃহৎ সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রথম পাতায় মনীষ সিসোদিয়ার ছবি ছাপা হয়েছে, সেদিন কেন্দ্রীয় সরকার তার বাড়িতে সিবিআই পাঠিয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাস্তার মধ্যে চেয়ারে বসে মদ্যপান, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ এবং পুলিশকে হুমকি দেয়ায় ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একজন ইনফ্লুয়েন্সারকে গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছে দেশটির পুলিশ।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের রাজধানী দেরাদুনে মহাসড়কে চেয়ার ফেলে রাস্তা বন্ধ করে মদপান করেছিলেন ববি কাটারিয়া।
ববি গুরগাওয়ের বাসিন্দা এবং তার ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যা ৬ লাখ ৩০ হাজার।
ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি) ও আইটি আইনের প্রাসঙ্গিক ধারার অধীনে তার বিরুদ্ধে পুলিশ একটি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, জেলা আদালত থেকে ববির বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্ট পেয়েছে তারা এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দলকে হরিয়ানা ও অন্যান্য স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
এর আগেও ববি কাটারিয়ার বিরুদ্ধে স্পাইসজেটের একটি ফ্লাইটে ধূমপানের অভিযোগ ছিল।
সে সময় তিনি দাবি করেন, বিমানে লাইটার নিয়ে সিগারেট ধরানো অসম্ভব। এটি ছিল দুবাইয়ের থেমে থাকা বিমানের ভেতর করা শুটিংয়ের একটি অংশ।
আরও পড়ুন:একটি ফাঁস হওয়া ভিডিওতে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সানা মারিনকে উদ্দাম নাচতে দেখা যাওয়ায় দেশটিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ফাঁস হওয়া ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী ও তার বন্ধুদের নাচতে ও গাইতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ফিনিশ সেলিব্রেটিরাও রয়েছেন।
ভিডিও ফাঁসের পর সমালোচনার মুখে পড়েছেন সান্না মারিন।
এরই মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতা রিক্কা পুররা প্রধানমন্ত্রীর মাদকাসক্তি বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তার ড্রাগ টেস্টের দাবি জানিয়েছেন।
একসময় মারিনের হয়ে কোয়ালিশন সরকারে কাজ করা পার্লামেন্ট সদস্য মিক্কো কারনাও বলেছেন, এটি বুদ্ধিমানের কাজ হবে যদি মারিন নিজে থেকে ড্রাগ টেস্ট করতে যায়।
তবে ৩৬ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন মাদকাসক্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। মারিনের দাবি, তিনি শুধু মদ পান করেছিলেন এবং হইচই করে পার্টি উদযাপন করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, তিনি জানতেন যে ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে এবং তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন যে ভিডিও জনসমক্ষে প্রকাশ পেতে পারে।
মারিন বলেন, ‘আমি নেচেছি, গেয়েছি, পার্টি করেছি। এগুলো সবই বৈধ এবং আমি কখনই কোনো ড্রাগ সেবন করিনি। আমার পারিবারিক জীবন আছে। আমার কাজ আছে এবং অবসর সময়ও আছে। আমার বয়সী মানুষেরা যেভাবে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটায়, আমিও একইভাবে সময় কাটাই।’
তবে একই সঙ্গে মারিন জানিয়েছেন, টেস্ট করতে তার কোনো আপত্তি নেই এবং তিনি তার ব্যবহার, চালচলন পরিবর্তন করতেও রাজি নন।
মারিন আশা করেন, সবাই এটি স্বাভাবিকভাবেই নেবে।
বর্তমান বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান এবারই প্রথম বিতর্কের জন্ম দেননি তিনি। গত বছর কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পরেও তিনি ক্লাবে গিয়েছিলেন। পরে এই জন্য তিনি ক্ষমাও চান।
গত সপ্তাহে জার্মান নিউজ আউটলেট বিল্ড তাকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো প্রধানমন্ত্রী আখ্যা দিয়েছে।
আরও পড়ুন:ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জা নিয়ে ইউক্রেনীয় ও রুশ সেনাদের লড়াইয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাপোরিজ্জা নিয়ে যেকোনো সম্ভাব্য ক্ষতি আত্মহত্যার শামিল।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব ইউক্রেন সফরে এসে লেভিভে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সেনাদের গোলা বিনিময়ের ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর জাতিসংঘ-প্রধান ও জেলেনস্কির এই প্রথম বৈঠক।
রুশ অভিযান শুরুর পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও প্রথমবারের মতো ইউক্রেন সফর করছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টও জাতিসংঘ প্রধানের সুরেই কথা বলেছেন। তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরেকটি চেরনোবিল বিপর্যয়ের বিপদ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিলে সোভিয়েত আমলে এক পারমাণবিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পারমাণবিক প্রযুক্তির ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ২০ বছরে তেজস্ক্রিয়তার পরোক্ষ প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
তিন নেতাই রাশিয়ার প্রতি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি ইচ্ছাকৃতভাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রুশ হামলার সমালোচনা করেন।
তবে রাশিয়া বলছে ইউক্রেনের হামলাই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে হুমকিতে ফেলছে।
গত ১১ আগস্ট জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছিলেন, কিয়েভের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড বিশ্বকে বড় পারমাণবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি সে সময় বলেন, ‘আমরা বারবার আমাদের পশ্চিমা সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছি যে, তারা কিয়েভের সঙ্গে কথা বলতে ব্যর্থ হলে এটি সবচেয়ে জঘন্য ও বেপরোয়া পদক্ষেপ নেবে, যার পরিণতি ইউক্রেনের বাইরেও পড়বে।’
ভ্যাসিলি এ সময় পশ্চিমাদের উদ্দেশে বলেন, যেকোনো পারমাণবিক বিপর্যয়ের জন্য কিয়েভের পশ্চিমা সমর্থকদেরই দায় বহন করতে হবে।
তার মতে, পারমাণবিক অবকাঠামোতে কিয়েভের অপরাধমূলক আক্রমণ বিশ্বকে একটি পারমাণবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে, যা চেরনোবিলের মতো ঘটনার জন্ম দেবে এবং ইউরোপকে সবচেয়ে বড় তেজস্ক্রিয় দূষণের দিকে নিয়ে যাবে। এর প্রভাব রাজধানী কিয়েভসহ অন্তত আটটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারে।
এ ছাড়া লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক ছাড়াও মলদোভা, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও বেলারুশেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনীয় শহর এনারগোদারে অবস্থিত জাপোরিজ্জা প্ল্যান্টটি কয়েক সপ্তাহ যাবৎ ধারাবাহিক হামলার শিকার হচ্ছে।
চীন সমস্যা সমাধানে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতির জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করছে।
গত ৬ আগস্ট ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার রাশিয়ার রকেট হামলায় পারমাণবিক স্থাপনার গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তিনটি তেজস্ক্রিয় শনাক্তকরণ যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যেকোনো তেজস্ক্রিয় লিকের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় তা শনাক্তকরণ ও বিকিরণ প্রতিরোধ অসম্ভব হয়ে গেছে।
কিয়েভ বলছে, এবার ভাগ্যক্রমে পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলেও বারবার ভাগ্য সহায়ক হবে না।
জাতিসংঘের আণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএইএ) ইউক্রেনের জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে যেকোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে মস্কোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
জাপোরিজ্জায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রুশ প্রধান ইয়েভজেনি বালিতস্কি রোবরার টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেলের মজুত লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে নিরপেক্ষভাবে কিয়েভ ও মস্কোর দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
যেহেতু পারমাণবিক প্রকল্পটি রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে এবং সেখানে রুশ সেনারাই অবস্থান করছে, তাহলে ঠিক কী কারণে রুশ সেনারাই সেখানে হামলা চালাবে তা স্পষ্ট করেনি কিয়েভ।
গত মার্চে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের মধ্যেই দেশটিতে অবস্থিত ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জাতে হামলা চালায় রুশ সেনারা। ইউক্রেন সে সময় দাবি করে, রুশ গোলার আঘাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আগুন ধরে যায়।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছিলেন, এই কেন্দ্রের চুল্লি গলে যাওয়া চেরনোবিলের থেকে ১০ গুণ বেশি ভয়াবহ হতে পারে।
আরও পড়ুন:গরু পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (সিবিআই) হেফাজতে আছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। তার কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিবিআই।
সুকন্যার বিপুল সম্পদের উৎস জানতে বুধবার ৪ সদস্যের সিবিআই টিম হানা দিয়েছিল বীরভূমের নিচুপট্টির বাড়িতে। দলে একজন নারী তদন্তকারীও ছিলেন। তারা সরাসরি বাড়ির দোতালায় উঠে যান।
সুকন্যার নামে একাধিক সম্পত্তি, কোম্পানি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি দেখিয়ে তদন্তকারীরা জানতে চান তার উৎস। পেশায় শিক্ষিকা সুকন্যা সব শুনে নিশ্চুপ থাকেন। এক পর্যায়ে কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন, মা মারা গেছেন। বাবা সিবিআই হেফাজতে। এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মত মানসিক পরিস্থিতি তার নেই।
মানবিক ইস্যু সামনে আসায় মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তদন্তকারী দল কেষ্ট মন্ডলের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এর আগে ‘অসুস্থতার’ অজুহাত তুলে ৯ বার সিবিআই নোটিশ এড়িয়ে যান কেষ্ট। দশমবারে তাকে সুযোগ না দিয়ে সিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করে ১০ দিনের হেফাজতে নিয়েছে।
কেষ্টকে গ্রেপ্তারের পর পরই সুকন্যার বিপুল সম্পত্তির উৎস জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছিল সিবিআই। তিনিও জেরা এড়াতে বাবার পথে হাটেন মানসিক কষ্টের কথা জানিয়ে।
তদন্ত সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, এএনএম অ্যাগ্রোচেন ফুডস এবং নীড় ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল ও তার স্বজনদের নামে। কয়েক কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে।
এদিকে সুকন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে শিক্ষকতা পেশায় তার নিয়োগ বিষয়ে। টেট পাশ না করেই তিনি পেশায় যোগ দেন এবং প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে অবৈধভাবে বেতন তোলেন। তার জন্য হাজিরা খাতা বাড়িতে আনা হতো বলেও অভিযোগ আছে। এসব বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার তাকে হাইকোর্টে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। সুকন্যা সেখানে গেলে অবশ্য বিচারক তাকে চলমান মামলায় হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।
অনুব্রত মণ্ডল কেষ্টকে রাখা হয়েছে কলকাতার নিজাম প্যালেসের ১৪ তলায় সিবিআই গেস্ট রুমে। সেখানেই তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য