ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে কনজারভেটিভ পার্টি ডানপন্থি রাজনীতিবিদ লিজ ট্রাস। ৪৭ বছর বয়সী ট্রাস পার্লামেন্টে আসেন ২০১০ সালে। চার বছর এমপি পদে থাকার পর মন্ত্রিসভায় স্থান করে নেন ট্রাস। দায়িত্ব পালন করেন ডেভিড ক্যামেরন সরকারের পরিবেশ, খাদ্য এবং গ্রামীণবিষয়ক সচিব হিসেবে।
পরে টেরিজা মে সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন ট্রাস। ২০২১ সালে হন পররাষ্ট্র সচিব।
ট্রাস অবশ্য শুরু থেকেই রক্ষণশীল ছিলেন না। বামপন্থি মা-বাবার কাছে তার বেড়ে ওঠা। ছিলেন মধ্যপন্থি লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের কিশোরী সদস্য। মাত্র ১৯ বছর বয়সে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ রাজনীতির লেকচারার ডেভিড জেফরি বলেন, বর্তমানে ট্রাস যে পার্টি করছেন (কনজারভেটিভ) তা সহজাত স্বাধীন মুক্তবাণিজ্যকে সমর্থন করে না। এটা আসলে অসমতা কমানোর লক্ষ্যে জনসন কর্তৃক প্রচারিত একটি নীতিকে নির্দেশ করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ নিয়ে ২০১৬ সালের জুনে হওয়া গণভোটে বরিস জনসনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। ট্রাস চাইছিলেন ব্লকে থেকে যেতে।
জেফরি বলেন, ‘তিনি (ট্রাস) গণভোটে “রয়ে যাওয়া” সমর্থন করেছিলেন। এ অবস্থানে তার দৃঢ়-ত্যাগী রাজনীতিবিদের তকমা জুটেছিল।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ট্রাসের কাজ অপ্রীতিকর ছিল বলে মনে করেন ডেভিড জেফরি।
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে ট্রাসের কার্যকাল বেশ কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি একজন অত্যন্ত সক্রিয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচিব ছিলেন। তবে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে তাকে বিবর্ণ মনে হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেসের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছিলেন।’
প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাকের তুলনায় ট্রাস মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের মধ্যে ছিলেন, যারা এ মাসের শুরুতে জনসনের প্রতি অনুগত ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সে সময় দলীয় বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
এতে এটা স্পষ্ট যে আনুগত্যের জন্য দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন ট্রাস। নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এই আনুগত্য বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ট্রাস ওয়ালেসসহ শীর্ষস্থানীয় রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের সমর্থন পাচ্ছেন। এমনকি তাকে সমর্থন দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলা টম টুগেনধাতও।
কিছু দিনের মধ্যেই জনসনের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা।
ইউগোভ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩১ শতাংশ সুনাককে ভোট দেয়ার পক্ষে; যেখানে ৪৯ শতাংশ ট্রাসকে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা করেছে৷
এখানে একজনের জয় অনেকটা নিশ্চিত মনে হচ্ছে। তবে এখনই কিছু চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সিনিয়র লেকচারার অ্যালান কনভারি।
তিনি বলেন, ‘তিনি (ট্রাস) শক্তিশালী অবস্থান থেকে শুরু করেছেন। কনজারভেটিভ সদস্যদের মতামত জরিপ দেখায়, তিনি এগিয়ে আছেন। যা-ই হোক, তাকে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। সদস্যপদে আবেদন করার জন্য সুনাক তার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।’
পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে ট্রাস আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাজ্যের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার জন্য ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ প্রচার করেছিলেন।
২০২১ সালে ট্রাস চ্যাথাম হাউসে একটি বক্তৃতার সময় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তার বোঝার রূপরেখা দিয়েছিলেন। রাশিয়া ও চীনের মতো স্বাধীনতা এবং স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে একটি আদর্শিক লড়াইকে চিহ্নিত করেছিলেন।
ট্রাস ১১টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাজ্যের মধ্যে ব্যাপক ও প্রগতিশীল বাণিজ্য চুক্তিকে (সিপিটিপিএ) সামনে এনেছেন, যেটিকে তিনি চীনের বিরুদ্ধে একটি বাধা হিসেবে বিবেচনা করেন। জানিয়েছিলেন, লন্ডনের এতে যোগ দেওয়া উচিত।
ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ট্রাস আসলে থ্যাচারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের প্রশংসা করতে কখনই ক্লান্ত হতে দেখা যায়নি ট্রাসকে।
কয়েক মাস ধরে ট্রাস ব্রিটিশদের পেশাদারভাবে স্টাইল করা ফটো দিয়ে বিনোদন দিচ্ছেন, যা প্রায় থ্যাচারের মুহূর্তগুলোর কার্বন কপি। যেমন যখন তিনি মস্কো গিয়েছিলেন, তখন একটি লম্বা কোট এবং পশমের টুপি পরেছিলেন, ঠিক ৩৫ বছর আগে থ্যাচার যেমনটা করেছিলেন।
ট্রাস ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড (৩৭ বিলিয়ন ডলার) ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অনেকটা থ্যাচারের মতো। থ্যাচার ১৯৮০-এর দশকে ব্যক্তিগত আয়কর কমিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলায় অবিলম্বে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ট্রাসের মতে, এই পদক্ষেপ মুদ্রাস্ফীতিকে লাগাম টেনে ধরতে পারবে।
‘ট্রুসোনোমিকস’ হলো ট্রাসের প্রস্তাবের জন্য ব্যবহৃত শব্দ। সরবরাহ-সদৃশ অর্থনীতির তার নিজস্ব সংস্করণ। এটা থ্যাচারের অর্থনৈতিক নীতির একটি মূল বৈশিষ্ট্য।
ট্রাসের পরিকল্পনার মধ্যে আছে করপোরেট আয়করের পরিকল্পিত বৃদ্ধি প্রত্যাহার এবং সামাজিক নিরাপত্তা হারের সাম্প্রতিক বৃদ্ধিকে ফিরিয়ে আনা। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে ‘পরিচয়ের রাজনীতির’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ট্রাস।
জেফরি বলেন, ‘কোনো প্রশ্নই নেই যে ট্রাস মাঝেমধ্যে নিজেকে থ্যাচার মনে করেন। থ্যাচারের একটি পরিষ্কার ধারণা ছিল যে তিনি দেশটিকে কেমন দেখতে চান। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে ট্রাসের দৃষ্টিভঙ্গি একই।’
থ্যাচার ছাড়াও বরিস জনসন-পরবর্তী ধারাবাহিকতাও মেনে চলতে চান ট্রাস। বিশেষ করে ব্রেক্সিট-সংক্রান্ত ইস্যুগুলো।
তবে যখন তাকে ব্লকের সঙ্গে কঠিন আলোচক হিসেবে দেখা যায়, তখন মনে হয় এ ইস্যুতে সমস্যার সমাধানে তিনি আগ্রহী না।
২০১৭ সালে তার ইউ-টার্ন (প্রো-রেমেন থেকে প্রো-লিভ পর্যন্ত) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ট্রাস জানিয়েছিলেন, ‘বড় বড় অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়নি। সেই সুযোগগুলো খুঁজছি।’
ট্রাস ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুনাকের চেয়ে জনসনের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করছেন মিনিস্টার ফর ব্রেক্সিট অপরচুনিটি অ্যান্ড গভর্মেন্ট অ্যাফইসিএন্সি কনভারি।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (ট্রাস) ডাউনিং স্ট্রিট অপারেশনে জনসন-যুগের আনফোর্সড ত্রুটিগুলো দূর করতে চাইবেন। ব্রাসেলসকেও সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করবেন। যা-ই হোক, যদি তিনি ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন, তবে অর্থনৈতিক মন্দাও কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়বে।’
পশ্চিমা বাধা উপেক্ষা করে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চালানোয় একের পর এক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া মস্কো জ্বালানিকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। বন্ধু নয়, এমন দেশকে রাশিয়ার জ্বালানি কিনতে হলে দাম পরিশোধ করতে হবে রুবলে, এমন শর্তজুড়ে দেয় ক্রেমলিন।
ওয়েল প্রাইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ৪ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর রাশিয়ার গ্যাস তুরস্কের রুবলে কেনার বিষয়টি জানিয়েছেন রাশিয়ার সহকারী প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া সফর করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দুই নেতার বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন উভয় নেতা।
তুরস্ক তার চাহিদার প্রায় অর্ধেক গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করে।
সম্প্রতি ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্ততার ভূমিকা পালন করে তুরস্ক। এর মধ্যে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে শস্যবাহী জাহাজ বন্দর ছেড়ে গেছে।
এর পাশাপাশি দুই নেতা সিরিয়া ও কুর্দিসংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনাও করেছে।
মার্চের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুবলে গ্যাস বিক্রির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করার ফলে ওই দেশগুলোর মুদ্রার ওপর মস্কোর আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই রাশিয়া লেনদেনের ক্ষেত্রে ওই সব দেশের মুদ্রা নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করছে।
পুতিন বলেন, ‘আমি অল্প সময়ে লেনদেনে পরিবর্তন আনতে কিছু ব্যবস্থা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মস্কোর বন্ধু নয় এমন দেশগুলোতে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস রুবলের বিনিময়ে সরবরাহ করা হবে। আমাদের পণ্য ইইউ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে ডলার বা ইউরোতে লেনদেনের কোনো মানে হয় না।’
তবে মস্কোর বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও রুবলে আগ্রহ দেখিয়েছে আগেই। বেলারুশ জানিয়েছে, এরই মধ্যে রুবলে রাশিয়ার গ্যাস কেনা শুরু করেছে দেশটি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময়বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া।
শুক্রবার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ। সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান সেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ল্যাভরভ।
মাদকের মামলায় রুশ আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের নারী বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় তাকে ফেরত পাওয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটনের তোড়জোড়ের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান ল্যাভরভ।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গ্রিনারের দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও তাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ল্যাভরভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া। উভয় দেশের সম্মতিতে কূটনৈতিকভাবে হবে এমন সংলাপ। (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন) উভয় প্রেসিডেন্ট যেভাবে সম্মত হবেন সে অনুযায়ীই এগুবে সংলাপ। কেউ কিভাবে মন্তব্য করছে তা বিষয় নয়। আলোচনার এই পথ সবসময় চালু থাকবে।’
‘আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে উভর প্রেসিডেন্টের সম্মতি অনুযায়ী প্রস্তাবিত কাঠামো মতে,’ যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মাদকের মামলায় বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় মস্কোর একটি আদালত।
৩১ বছর বয়সী গ্রিনার গাঁজার তেল রাখার কথা স্বীকার করলেও, আদালতকে বলেছিলেন, তিনি সরল মনে ভুলটি করেছেন।
তবে আদালত এতে সন্তুস্ত হতে পারেনি। চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য রাখার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেন বিচারক।
গ্রিনার দুইবার অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেন। তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন বলে মনে করা হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর কাছে একটি বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়। সে সময় তার লাগেজে গাঁজার তেলযুক্ত ভ্যাপ কার্তুজ পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অফ-সিজনে ক্লাব বাস্কেটবল খেলতে রাশিয়া এসেছিলেন তিনি।
কয়েকদিনের মধ্যেই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এখন মামলাটি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে হাই-প্রোফাইল কূটনীতির বিষয় হয়ে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক গিনিপিগ’ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে গ্রিনারকে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই রায়কে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘রাশিয়া বা অন্য যে কোনো দেশ অন্যায়ভাবে কাউকে আটকে রাখার এমন ঘটনা বিদেশে বসবাসকারী প্রত্যেকের নিরাপত্তার জন্য হুমকির প্রতিনিধিত্ব করে।’
গ্রিনারকে যখন আদালত থেকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি।’
এটা স্পষ্ট নয় যে তিনি আসলে কতদিন কারাগারে কাটাবেন।
কারণ যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া এখন কার্যত বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারেনি।
এদিকে, কারাবন্দি রুশ অস্ত্র পাচারকারী ভিক্টর বাউটকে চুক্তির অংশ হিসেবে রুশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে ওয়াশিংটন। ভিক্টর ‘ডেথ অফ মার্চেন্ট’ হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য সোচিতে শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে শস্য চালান চুক্তিতে মধ্যস্থতার পর রাশিয়ায় যাচ্ছেন তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার কৃষিপণ্য রপ্তানিতে চুক্তির পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে এরদোয়ানের। এমন বাস্তবতায় তিনি দেখা করতে যাচ্ছেন পুতিনের সঙ্গে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৯ সালের পর এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো মুখোমুখি হচ্ছেন এ দুই রাষ্ট্রপ্রধান। এর আগে গত মাসে তেহরানে বৈঠক করেছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
তুরস্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন পুতিন ও এরদোয়ান। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়েও আলাপ করবেন তারা।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সম্ভাব্য সামরিক অভিযান শুরুর আগে রাশিয়া সফর করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এ নিয়ে বিশ্লেষকদের ভাষ্য, সফরে এরদোয়ানের মূল নজর থাকবে উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের বিষয়ে রাশিয়ার সম্মতি আদায় কিংবা বিরোধিতা ঠেকানো।
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মূল পৃষ্ঠপোষক রাশিয়া। উত্তর সিরিয়ার আকাশসীমার বেশির ভাগ অংশে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটির।
আরও পড়ুন:খাদ্যশস্য বোঝাই আরও তিনটি জাহাজ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছাড়বে শুক্রবার। গত সোমবার শস্যবোঝাই ১৬টি জাহাজ দেশটির ওডেসা বন্দর ছেড়ে যায়।
জাতিসংঘের সমঝোতায় ও তুরকিয়ের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের নৌযানের ওপর রাশিয়ার দেয়া অবরোধ তুলে নেয়ার পর শুরু হয় রপ্তানির প্রক্রিয়া।
তুরকিয়েভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদৌলু এজেন্সির বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
তুরকিয়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘শুক্রবার এই তিনটি জাহাজ ইউক্রেন থেকে যাত্রা শুরু করবে। প্রথম জাহাজটি ২৬ হাজার টন ভুট্টা নিয়ে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ইস্তানবুল হয়ে লেবাননের উদ্দেশে যাবে।’
সিয়েরালিয়নের পতাকাবাহী রাজনি নামের জাহাজটি বসফরাস প্রণালি পাড়ি দেয়ার সময় বুধবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার পরিদর্শকদল এটিকে পর্যবেক্ষণ করবে।
জাহাজের যাত্রার পুরো পথটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদল, তুরকিয়ে ও জাতিসংঘের সদস্যরা নজরদারিতে রাখবেন।
পর্যবেক্ষকদল জানিয়েছে, এই জাহাজের সফল ও নিরাপদ যাত্রাই বলে দেবে যুদ্ধরত দুই পক্ষ তাদের মধ্যকার চুক্তির বিষয়ে কতটা শ্রদ্ধাশীল।
তুরকিয়ে জানিয়েছে, এই চুক্তির যথাযথ কার্যকারিতাই পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সহায়তা করবে।
তুরকিয়ের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আজ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। এ সময় যুদ্ধবিরতির বিষয় জোর প্রচেষ্টা চালাবেন এরদোয়ান।
এ সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেন জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী খাদ্যশস্য বোঝাই ১৬টি জাহাজ ওডেসা বন্দর ছেড়ে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। প্রথমটি গত সোমবার ওডেসা বন্দর ছেড়ে যায়। তবে হামলার ভয়ে এসব জাহাজের যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় ইউক্রেন থেকে গমসহ খাদ্যপণ্য রপ্তানি। এই দেশ দুটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। এতে বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়ে যায় গোটা বিশ্ব।
তবে ২২ জুলাই বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট সমাধানে প্রতীক্ষিত এক চুক্তিতে পৌঁছায় রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই চুক্তির আওতায় কৃষ্ণসাগরে অবরোধ তুলে নেয় রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্য রপ্তানির পথে আর কোনো বাধা নেই।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির কার্যালয় জানিয়েছে, খাদ্যশস্য নিয়ে ওইসব জাহাজ যেকোনো সময় রওনা হতে পারে।
গত ২২ জুলাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শস্যপণ্য রপ্তানি নিয়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সব মিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য পাঠানো হবে ইউক্রেন থেকে।
এসব খাদ্যশস্য যাবে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাহাজগুলোর জন্য নিরাপদ চ্যানেল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার ওডেসার চেরনোমর্স্ক বন্দর পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। খাদ্যশস্য বহনের দায়িত্বে থাকা নাবিকদের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেন উপকূলের কাছে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া নৌ অবরোধ দিলে মুখ থুবড়ে পড়ে ইউক্রেনের রপ্তানি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন বেশ কয়েকটি জাহাজে খাদ্যশস্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ইউক্রেনের পক্ষে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে এসব জাহাজ রওনা হতে না পারলে খাদ্যসংকেটে ভোগা দেশগুলো আরও দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে পারে।
খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দুই দেশের হওয়া চুক্তিটি ১২০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। চুক্তির মেয়াদ আরও আলোচনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
যুদ্ধে বহু মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এরই মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে চুক্তি হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও।
আরও পড়ুন:আটলান্টিকে উল্টে যাওয়া নৌকার ভেতরের বাতাসের বাবল ব্যবহার করে ৬২ বছর বয়সী এক ফরাসী নাবিক ১৬ ঘণ্টা বেঁচেছিলেন।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে যাত্রা শুরু করা ১২ মিটারের লম্বা নৌকাটি সোমবার সন্ধ্যায় স্পেনের উত্তর পশ্চিম গ্যালিসিয়া অঞ্চলের কাছে সিসারগাস দ্বীপপুঞ্জের থেকে ১৪ মাইল (২২.৫ কিলোমিটার) দূরে সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৮টা ২৩ মিনিটে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে একটি বিপদসংকেত পাঠায়।
স্প্যানিশ কোস্ট গার্ড সঙ্গে সঙ্গেই নৌকার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে এবং নৌকাটিকে আটলান্টিকে উল্টো অবস্থায় ভাসমান দেখতে পায়।
পাঁচ ডুবুরি নিয়ে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ও ৩টি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
একজন ডুবুরি নৌকা আরোহী বেঁচে আছেন কি না তা জানতে উল্টে যাওয়া নৌকায় লাফ দিয়ে পড়েন। সেই নাবিকও ভেতর দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সাড়া দেন।
কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। সমুদ্র তখন উত্তাল এবং সূর্যও ডুবে গেছে। ফলে সেই ফরাসি নাবিককে উল্টো নৌকাতেই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
নৌকাটি যাতে উত্তাল ঢেউয়ে ডুবে না যায় সেই জন্য কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারীরা নৌকাটিতে বেলুন সংযুক্ত করেছিল।
কোস্ট গার্ড ডুবুরিরা বলছেন, নাবিকের বেঁচে থাকার বিষয়টি ছিল প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভবটাই সম্ভব হয়েছে।
পরের দিন সকালে নৌকা উল্টানোর ১৬ ঘণ্টা পরে দুজন ডুবুরি সাঁতরে তার কাছে গেলে তিনি নিজেই উল্টে থাকা নৌকা থেকে বের হয়ে আসেন।
কোস্ট গার্ড ফরাসি নাবিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তবে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
এই ঘটনার বিষয়ে এক টুইটবার্তায় স্পেনের মেরিটাইম সেফটি অ্যান্ড রেসকিউ সোসাইটি বলেছে, ‘প্রতিটি জীবন বাঁচানোই আমাদের জন্য বড় পুরস্কার।’
ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য এবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘বিখ্যাত প্রেমিকা’ এলিনা মারাতোভনা কাভায়েভার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট থেকে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জয়ী জিমন্যাস্ট এলিনা কাভায়েভার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের কথা বহুদিন ধরেই চর্চিত। তবে রুশ গণমাধ্যমগুলোকে এ সংবাদ বরাবরই এড়িয়ে চলতে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন এসবের রাখঢাক না করে শিরোনামেই লিখেছে ‘পুতিনের বিখ্যাত প্রেমিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিনের সঙ্গে রোমান্টিকতার সম্পর্কে জড়িত এলিনাকে একজন নেতা, কর্মকর্তা, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার, বা রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে জো বাইডেন প্রশাসনের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে পুতিনের সঙ্গে ৩৯ বছর বয়সী এলিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উল্লেখ করে তার পরিচয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়ার জাতীয় গণমাধ্যম বিভাগের প্রধান।
যুক্তরাষ্ট্রের আগে অবশ্য একই ইস্যুতে পুতিনের এই প্রেমিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যও।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
রাশিয়া ইউক্রেনের হামলা শুরুর পর থেকেই একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসছে বিভিন্ন দেশ থেকে। প্রেসিডেন্ট পুতিনসহ দেশটির বহু নেতা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা কিছুর ওপর এসেছে নিষেধাজ্ঞা।
যুদ্ধে বহু মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এরই মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে চুক্তি হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও।
কে এই কাভায়েভা
৬৯ বছর বয়সী ভ্লাদিমির পুতিনের কথিত প্রেমিকা এলিনা কাভায়েভা। গুজব রয়েছে, কাভায়েভা পুতিনের বেশ কয়েক সন্তানের মা।
এক সুইডিশ পত্রিকার দাবি, ২০১৫ সালে লেক লুগানোর একটি ক্লিনিকে তিনি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। এ ছাড়া ২০১৯-এও তিনি সন্তানের জন্ম দেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, ২০১৯-এ তিনি মস্কোতে যমজ সন্তানের মা হয়েছেন।
কাভায়েভা একজন সাবেক অলিম্পিক জিমন্যাস্ট, মিডিয়া বস, রাজনীতিবিদ এবং গুজব যদি সত্যি হয়, তিনি পুতিনের একের অধিক সন্তানের মা।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বরাবরই নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে গণমাধ্যমের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছেন। তাকে পারিবারিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি সব সময় তা এড়িয়ে গেছেন। বরাবরই তিনি আলিনা কাভায়েভার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন।
২০০৮ সালে মস্কোভস্কিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তিনি তার তৎকালীন স্ত্রী লিউদমিলাকে তালাক দিয়ে কাভায়েভাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছেন। সে সময় দুজনই বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন।
এরপরে রুশ কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটিই বন্ধ করে দেয়। যদিও এর ঠিক পাঁচ বছর পরে লিউদমিলার সঙ্গে তার বিয়েবিচ্ছেদ হয়। সে সময় কাভায়েভা একজন সফল ক্রীড়াবিদ থেকে রাজনীতিকে পরিণত হচ্ছিলেন। যার ঝুলিতে ছিল এথেন্স অলিম্পিকের স্বর্ণপদকের পাশাপাশি ১৮টি শীর্ষ চ্যাম্পিয়নশিপ পদক ও ২৫টি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পদক।
বলা হয়ে থাকে, তার সময়ে তিনিই ছিলেন সেরা জিমন্যাস্ট, যা তাকে একজন ধনী নারীতে পরিণত করে। তাকে বলা হতো রাশিয়ার সবচেয়ে নমনীয় নারী।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার প্রথম কবে সাক্ষাৎ হয়েছিল তা স্পষ্ট জানা না গেলেও দেশের শীর্ষ একজন ক্রীড়াবিদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ অস্বাভাবিক কিছু না।
কাভায়েভার জন্ম ১৯৮৩ সালে। মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে তিনি জিমন্যাস্টিকস শুরু করেন। তার প্রশিক্ষক ইরিনা ভিনার বলেছিলেন, ‘আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, যখন আমি তাকে প্রথম দেখেছিলাম। মেয়েটির ছন্দোবদ্ধ জিমন্যাস্টিকসে গুরুত্বপূর্ণ দুটি গুণের বিরল সমন্বয় ছিল- নমনীয়তা ও তৎপরতা।’
১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্ট হিসেবে অভিষেক হয়েছিল এবং ১৯৯৮ সালে তিনি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী হন। এভাবেই তার উত্থান। তবে জিমন্যাস্ট থেকে অবসরের পর তিনি রাজনীতি ও মিডিয়ায় মন দেন। ২০১৪ সালে তিনি রাশিয়ার ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের প্রধান হন। এই মিডিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে ইউক্রেন ইস্যুতে অপপ্রচার ও গুজব চালানোর অভিযোগ করে আসছে পশ্চিমারা।
একজন রাজনীতিবিদ, নিম্নকক্ষের সাবেক সদস্য ও মিডিয়ায় তার অবস্থান তাকে একজন ধনী নারীতে পরিণত করেছে। ফাঁস হওয়া এক নথিতে দেখা গেছে, তিনি বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার আয় করেন।
আরও পড়ুন:যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর খাদ্যশস্য নিয়ে একটি জাহাজ ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে গেছে। এই বার্তা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে খাদ্যসংকটে থাকা বিশ্বের অনেক দেশকে।
স্থানীয় সময় সোমবার ইউক্রেনের খাদ্যশস্য নিয়ে একটি জাহাজ দেশটির ওডেসা বন্দর ছেড়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, সিয়েরা লিওনের পতাকাবাহী রজনী নামের জাহাজটি খাদ্যশস্য নিয়ে লেবানন যাচ্ছে।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন থেকে ২৬ হাজার টনের বেশি ভুট্টা নিয়ে বন্দর ছেড়েছে জাহাজটি।
সুরক্ষিত জাহাজ ট্র্যাকারে সোমবার সকালে একটি টাগ বোটের পাশাপাশি রজনী জাহাজটিকে ওডেসা বন্দর থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
তুরস্কের মন্ত্রণালয় বলছে, মঙ্গলবার জাহাজটি ইস্তাম্বুলে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে পর্যবেক্ষণের পর বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এর আগে শনিবার কর্তৃপক্ষ জানায়, খাদ্যশস্য বোঝাই ১৬টি জাহাজ ওডেসা বন্দর ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে রুশ হামলার ভয়ে এসব জাহাজের যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
আল জাজিরার তথ্যানুযায়ী, রুশ বাহিনীর আচমকা হামলা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে অপেক্ষায় থাকা জাহাজগুলোর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় ইউক্রেন থেকে গমসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানি। এতে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে অনেক দেশ।
তবে এ মাসে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট সমাধানে প্রতীক্ষিত এক চুক্তিতে পৌঁছায় রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই চুক্তির আওতায় কৃষ্ণ সাগরে অবরোধ শিথিল করেছে রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্যশস্য রপ্তানির পথে বাধা দূর হয়েছে।
অবশ্য চুক্তিতে এসব কথা থাকলেও বাস্তবে যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে আগের মতোই ভয়াবহতা আচ্ছন্ন করে আছে ইউক্রেনকে। এরই মধ্যে কারাগারে যুদ্ধবন্দিদের হত্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন সংকট।
গত ২২ জুলাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শস্যপণ্য রপ্তানি নিয়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সবমিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য পাঠানো হবে ইউক্রেন থেকে। এসব খাদ্যশস্য যাবে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাহাজগুলোর জন্য নিরাপদ চ্যানেলও নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার ওডেসার চেরনোমর্স্ক বন্দর পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। তিনি খাদ্যশস্য বহনের দায়িত্বে থাকা নাবিকদের প্রস্তুতি দেখেন।
তবে প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করার পরও অনিশ্চয়তায় বন্দর ছাড়ছিল না জাহাজগুলো। পানিতে হামলা এবং নাবিকরা হতাহত হতে পারেন- এমন শঙ্কা এখনও কাটেনি।
পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেন উপকূলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া নৌ অবরোধ দিলে মুখ থুবড়ে পড়ে ইউক্রেনের রপ্তানি কার্যক্রম।
খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দুই দেশের হওয়া চুক্তিটি ১২০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। চুক্তির মেয়াদ আরও আলোচনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
যুদ্ধে বহু মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এরই মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে চুক্তি হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য