সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাস বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের (এসএসি) চেয়ারম্যান জেনারেল মিন অং হ্লাইং।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমের সোমবারের খবরে বলা হয়, সামরিক বাহিনীর অধীন জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কাউন্সিল জরুরি অবস্থা বাড়ানোর প্রস্তাবে ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ সায় দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াচ্ছেন মিন অং হ্লাইং।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসেন সেনারা। সে সময় প্রথমবারের মতো জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেয় এসএসি।
দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণার খবর জানানো হয় ‘গ্লোবাল নিউ লাইট’ নামের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রে। এতে মিন অং হ্লাইংকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “এ দেশে আমাদের অবশ্যই ‘প্রকৃত ও নিয়মতান্ত্রিক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’কে মজবুত করা অব্যাহত রাখতে হবে, যেটি চায় জনগণ।”
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ক্ষমতাসীন এসএসি গত মাসে সু চির ঘনিষ্ঠ একজনসহ চার অভ্যুত্থানবিরোধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এর রেশ না কাটতেই জরুরি অবস্থা বাড়ানোর ঘোষণা এলো।
নতুন এ ঘোষণার মজবুত আইনি ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন অধিকারকর্মীদের সংগঠন জাস্টিস ফর মিয়ানমারের মুখপাত্র ইয়াদানার মং।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই ভাঁওতাবাজিকে (জরুরি অবস্থার ঘোষণা) প্রত্যাখ্যান করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বাস্তবিক পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি অব্যাহত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য একে দায়ী করলে, সেটি হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশ্ববাজারে আরও কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। সোমবার ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেল ৩ ডলার করে কমে ৯০ ডলারের নিচে নেমেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ চীনে চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ এবং ইরানের পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাবের পর দেশটি থেকে তেল রপ্তানি বেড়ে গেছে। এর ফলেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরেক দফা কমেছে।
সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারে দাম ৩ দশমিক ৪৯ ডলার বা ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৯৪ দশমিক ৬৬ ডলারে নেমেছে, যা গত শুক্রবারের চেয়ে দেড় শতাংশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে অপরিশোধিত তেলের দাম ৩ দশমিক ৩২ ডলার বা ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেলে দাম এখন ৮৮ দশমিক ৭৭ ডলার, যা ২ দশমিক ৪ শতাংশ আগের সেশন থেকে কম।
চীন সরকারের এক তথ্য বলছে, গত মাস থেকে দেশটির অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে ধীর হয়ে এসেছে। এতে তেল শোধনাগারগুলোতে উৎপাদন দিনে ১ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেলে নেমে এসেছে, যা ২০২০ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন।
আইএসজি ব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে বলছে, ২০২২ সালে চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ হবে, যা আগে ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
পাশাপাশি করোনাভাইসের কারণে চীনের মূল ভূখণ্ডে কমে গেছে কর্মসংস্থানও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবে ২০১৫ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। ফলে ইরান থেকে তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে। আর সেটি উঠে গেলে ইরান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তেল আমদানি করতে পারবে।
এমন অবস্থায় বিশ্ববাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং তেলের দাম কমে গেছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআব্দুল্লাহিয়ান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরমাণু চুক্তি বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপে তারা সোমবারই সাড়া দেবে। তবে পরমাণু চুক্তিটি এখানেই রফাদফা হতে পারে যদি যুক্তরাষ্ট্র তিনটি বিষয়ে ইরানের প্রস্তাব রাখে।
আরও পড়ুন:সার্চ ইঞ্জিন গুগলে কত কি না খুঁজে বেড়ায় মানুষ। গুগলও হতাশ করে না। প্রশ্ন যত উদ্ভটই হোক, গুগলের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে উত্তর দেয়ার। আর এ কাজ করতে গিয়ে বিপত্তিও ঘটে অনেক।
তবে এখন থেকে গুগলকে বাজে প্রশ্ন করে সহজে উত্তর পাওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিষেবা উন্নত করতে ‘বৈশিষ্ট্যযুক্ত স্নিপেট’ যুক্ত হয়েছে এই সার্চ ইঞ্জিনে। ফলে বোকাসোকা প্রশ্নের উত্তর সহজে মিলবে না।
ধরা যাক গুগলকে আপনি প্রশ্ন করলেন, স্নুপি (কার্টুন চরিত্র) কখন আব্রাহাম লিঙ্কনকে হত্যা করেছিল? জবাবে গুগল এতদিন যেভাবেই হোক একটি বর্ণনা হাজির করত যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো সংযোগই নেই। এই দোষটা গুগলের নয়, এটি দায় আসলে অর্থহীন প্রশ্নটির।
এবার সেই অর্থহীন প্রশ্নকে শনাক্ত করে নিশ্চুপ থাকবে গুগল।
গুগলের অনুসন্ধানপ্রধান পান্ডু নায়ক বলেন, ‘আমরা আমাদের সিস্টেমগুলোকে এ ধরনের প্রশ্ন শনাক্তের উপযোগী করেছি। তবে এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে এটি কার্যকর নয়। আমরা ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটিয়েছি।’
২০১৭ সালে ভুয়া খবর প্রচারের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছিল গুগল।
একজন প্রশ্ন করেছিলেন, ওবামা কি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছেন? উত্তরে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট কৌতুক করে বলেছিল, ‘ওবামা আসলে ২০১৬ সালে তার মেয়াদ শেষে একটি কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
গুগল এখন থেকে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেবে অনেক ভেবেচিন্তে। এ ছাড়া ‘অ্যাবাউট দিস রেজাল্ট’ নামে একটি অপশনও চালু হচ্ছে। এটি ক্ষেত্রবিশেষে আজেবাজে প্রশ্নকারীদের সতর্ক করবে।
পান্ডু নায়ক বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে কোনো সহায়ক তথ্য পাওয়া যাবে না। আপনি সব সময় আপনার প্রশ্নের ফলাফল দেখতে পারেন, এমনকি সতর্কতা জারির পরও।’
সুতরাং পরের বার যখন গুগলকে জিজ্ঞাসা করবেন, কীভাবে ইলুমিনাতির সঙ্গে যোগাযোগ করব?
জবাবে ‘ধনী হতে চান? আজই আবেদন করুন এবং ইলুমিনাতিতে যোগ দিন’- এমন উত্তরের চেয়ে আরও ভালো কিছু আপনাকে জানাবে গুগল।
আরও পড়ুন:ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বাসযোগ্য শহরের বার্ষিক তালিকায় এবারও একেবারে নিচের দিকে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
ইআইইউ গত বৃহস্পতিবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটি অনুযায়ী, ১৭২টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬তম। ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯ দশমিক ২।
ঢাকার নিচে রয়েছে পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোর্সবি, পাকিস্তানের করাচি, আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, লিবিয়ার রাজধানী শহর ত্রিপোলি, নাইজেরিয়ার লাগোস এবং সবশেষে সিরিয়ার দামেস্ক, যার স্কোর ৩০ দশমিক ৭।
বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে এবার রয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী শহর ভিয়েনা। ভিয়েনার স্কোর ৯৯ দশমিক ১। ৯৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এবং ৯৬ দশমিক ৩ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ।
কয়েকটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘দ্য গ্লোবাল লিভাবিলিটি ইনডেক্স ২০২২’ প্রকাশ করেছে ইআইইউ। এগুলো হলো স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো।
সূচকে ১৬৬ নম্বরে থাকা ঢাকার মোট পয়েন্ট ৩৯.১। মানদণ্ডগুলোর মধ্যে স্থিতিশীলতায় ঢাকা পেয়েছে ৫৫ পয়েন্ট। অন্যদিকে স্বাস্থ্যে ২৯.২, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৪০.৫, শিক্ষায় ৪১.৭ ও অবকাঠামোতে ২৬.৮ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী।
২০২১ সালে এ তালিকার ১৪০টি শহরের মধ্যে ১৩৭ নম্বরে ছিল ঢাকা।
এবারের তালিকায় বাসযোগ্য শহরের শীর্ষে থাকা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার পয়েন্ট ৯৯.১। শহরটি স্থিতিশীলতা ও স্বাস্থ্যসেবায় শতভাগ স্কোর পেয়েছে। সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৯৬.৩, শিক্ষা ও অবকাঠামোতেও ১০০ করে পয়েন্ট পেয়েছে।
ইআইইউ বলছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা দিতে শহরগুলো কতটা সক্ষম ছিল, সেটি জরিপে এবার অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
যখন এ বছরের জরিপ কাজ শুরু করে তার মাঝামাঝি সময় ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর ইআইইউ ইউক্রেনের শহর কিয়েভে শেষ পর্যন্ত আর জরিপ পরিচালনা করেনি। তবে রাশিয়ার মস্কো এবং পিটার্সবার্গে জরিপ পরিচালিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার রাশিয়ার শহর মস্কো ১৫ এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ ১৩ ধাপ নিচে নেমে গেছে।
অবশ্য রাশিয়ায় চলমান অস্থিরতার কারণে পশ্চিমাদের দেয়া অর্থনৈতিক অবরোধে সেখানে দেয়া বিভিন্ন ধরনের সেন্সরশিপ সংস্কৃতি ও পরিবেশে প্রভাব ফেলেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
গত বছর ১৪০ শহরের ওপর জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও এবার ৩৩টি শহর বেশি নেয়া হয়। অবশ্য জরিপ পরিচালনা করার সময় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে কিয়েভকে পরে বাদ দেয়া হয়েছে তালিকা থেকে।
আরও পড়ুন:ভারতে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ-আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় হামলার শিকার হন রুশদি। এতে গুরুতর আহত লেখককে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে বেশ কিছু পোস্ট করেন তসলিমা।
প্রথম টুইটে তসলিমা লেখেন, ‘এইমাত্র জানলাম, নিউ ইয়র্কে হামলার শিকার হয়েছেন সালমান রুশদি। আমি সত্যিই স্তম্ভিত। এমনটা হবে, তা কখনোই ভাবিনি।
‘তিনি পশ্চিমে বসবাস করে আসছিলেন এবং ১৯৮৯ সাল থেকেই তিনি সুরক্ষায় আছেন। যদি তার ওপর হামলা হয়, তাহলে ইসলামের সমালোচনা করা যে কেউ হামলার শিকার হতে পারেন। আমি উদ্বিগ্ন।’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুকার পুরস্কারজয়ী রুশদিকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তার ওপর এ হামলার কারণ নিয়ে আরেক টুইটে তসলিমা লেখেন, ‘লোকজন বলছে, মন্তব্য করার আগে চলুন জেনে নিই কেন হামলা হয়েছে রুশদির ওপর। যেহেতু তিনি ইসলামপন্থিদের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন, সেহেতু তাকে কোনো ইসলামপন্থি যে হত্যাচেষ্টা করতে পারে, সেটি কল্পনা করা কি খুব কঠিন?’
সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় হাদি মাতার নামের একজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
এ নিয়ে করা টুইটে তসলিমা লেখেন, ‘২৪ বছর বয়সী ইরানীয়-আমেরিকান হাদি মাতার রুশদির ওপর হামলা করেছেন। হাদি মাতারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আয়াতুল্লাহ খোমেনির ছবি ছিল, যিনি ১৯৮৯ সালে রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন…এখন হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে ধারণা করতে পারেন।’
আরও পড়ুন:ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার জয়ী লেখক সালমান রুশদি ছুরি হামলায় আহত হয়ে এখন নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৩৩ বছর আগেই স্যাটানিক ভার্সেস বইয়ে ইসলাম ধর্মকে হেয় করার অভিযোগে ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রহুল্লাহ খোমেনি তার ও তার বইয়ের প্রকাশকদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন, কেউ রুশদিকে হত্যা করতে গিয়ে নিহত হলে সে শহীদ, সে জান্নাতে যাবে। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বইটি নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো নিউজবাংলা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সেপ্টেম্বর ২৬, ১৯৮৮: ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হয়।
ফেব্রুয়ারি ১২, ১৯৮৯: যুক্তরাষ্ট্রে এই বই বিক্রির প্রতিবাদে পাকিস্তানে আন্দোলন শুরু হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯৮৯: ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রহুল্লাহ খোমেনি বিশ্বের সব মুসলিমকে রুশদিকে হত্যা করার আহ্বান জানান।
ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৮৯: প্রায় ১০ হাজার বিক্ষোভকারী ভারতের মুম্বাইতে ব্রিটিশ হাইকমিশনের দিকে রওনা দিলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি করে। সেখানে পুলিশের গুলিতে ১২ জন মারা যান।
মে ২৭, ১৯৮৯: ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের প্রতিবাদে প্রায় ৩০ হাজার ইরাকপন্থি ও ইরানপন্থি জড়ো হলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯: ব্রিটেনের প্রকাশক সংস্থা পেঙ্গুইন পাবলিশার্স যারা রুশদির বইটি প্রকাশ করেছিল, তাদের একটি বইয়ের দোকানের বাইরে ৪টি বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল।
জুলাই ৩, ১৯৯১: স্যাটানিক ভার্সেসের ইতালীয় ভাষায় অনুবাদকারী ইত্তোরে ক্যাপরিওলোকে তার ফ্ল্যাটেই ছুরি নিয়ে আক্রমণ করা হয়। আক্রমণকারী ছিলেন একজন ইরানি।
জুলাই ১২, ১৯৯১: বইটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকারী হিতোশি ইগারাশিকে টোকিওতে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয় এবং হত্যাকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। হিতোশি ছিলেন তুলনামূলক সংস্কৃতির একজন স্কলার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। যিনি সত্তরের দশকে ইরানে পড়াশোনা করেন।
সেপ্টেম্বর ৭, ১৯৯৫: খোমেনির দেয়া ফতোয়ার ৬ বছর পর লন্ডনে প্রথম জনসমক্ষে বের হন সালমান রুশদি।
ফেব্রুয়ারি ১২, ১৯৯৭: ফতোয়ার ৮ বছর পর ইরানের বিপ্লবী ১৫তম খোরদাদ ফাউন্ডেশন রুশদির মাথার জন্য ঘোষিত পুরস্কার বৃদ্ধি করে ২৫ লাখ ডলার করে।
সেপ্টেম্বর ২২, ১৯৯৮: ইরানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি রুশদির ফতোয়ার বিষয়টি এক অর্থে বাতিল করে দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি শেষ।’
সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৯৮: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল খাররাজি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিন কুকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রুশদির জীবনের জন্য হুমকি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না ইরান। এমনকি কাউকে এমন কিছু করতে উৎসাহিতও করবে না।
সেপ্টেম্বর ২৮, ১৯৯৮: ইরানের গণমাধ্যম জানায়, ৩ জন ইরানি ধর্মগুরু ইসলামের অনুসারিদের ফতোয়ার অধীনে রুশদিকে হত্যার আহ্বান জানান।
অক্টোবর ৪, ১৯৯৮: ইরানের ১৬০ জন পার্লামেন্ট মেম্বার এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, রুশদির বিরুদ্ধে দেয়া ফতোয়া জারি থাকবে।
অক্টোবর ১০, ১৯৯৮: ইরানের ছাত্ররা রুশদির হত্যার পুরস্কার দিতে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ডলার সংগ্রহ করে।
ফেব্রুয়ারি ৩, ১৯৯৯: মুম্বাইয়ে জন্ম নেয়া রুশদিকে ভারত ভিসা প্রদান করে। সে সময় দেশটির মুসলিমরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে।
জুন ১৫, ২০০৭: সাহিত্যে অবদানের জন্য রুশদিকে নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত করেন ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথ। পাকিস্তান, ইরান ও মালয়েশিয়া এর কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানায়।
জানুয়ারি ২০, ২০১২: ভারতের জয়পুরে একটি সাহিত্য উৎসবে সালমান রুশদির উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কয়েকটি মুসলিম গোষ্ঠীর প্রতিবাদের মুখে তিনি উৎসবে আর যোগ দেননি।
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১২: ইরানের একটি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন তার মাথার জন্য ৩৩ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
জুন ২০, ২০১৪: অন্য লেখকদের সাহায্য করার জন্য এবং বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখায় তাকে পেনটার (পেন) প্রাইজ দেয়া হয়।
অক্টোবর ১৩, ২০১৫: ফ্রাঙ্কফ্রুট বইমেলায় রুশদির উপস্থিতির জন্য ইরানের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় সেই বইমেলা থেকে নিজেদের অংশগ্রহণ প্রত্যাহার করে নেয়।
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬: ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া আউটলেট রুশদিকে হত্যার জন্য ৬ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
জুন ১, ২০২২: ব্রিটিশ রানীর জন্মদিনে রুশদিকে ‘কম্পানিয়ন অফ অনার’ করা হয়।
আগস্ট ১২, ২০২২: পশ্চিম নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় সালমান রুশদির ওপর হামলা চালায় এক তরুণ। আহত রুশদির কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সার্জারির পর তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার বইয়ের এজেন্ট এন্ড্রু ওয়াইলি এক মেইলে জানিয়েছেন, সালমান সম্ভবত এক চোখ হারিয়েছেন, তার নার্ভেও আঘাত লেগেছে, তার লিভার ছুরির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের বিশদ সামরিক মহড়া দ্বীপরাষ্ট্রটিতে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের নজিরবিহীন সামরিক ও রাজনৈতিক হুমকি হলেও এটি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে।
কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ভাষ্য, গত সপ্তাহে চার দিনের নিবিড় মহড়া এবং চলতি সপ্তাহে সেটির সময় বাড়ানোর ফলে শত্রুর মোকাবিলায় চীন কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহের সুযোগ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে এটি চীনের যুদ্ধ পরিচালনা ও যোগাযোগব্যবস্থা বোঝারও সুযোগ করে দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়, তাইওয়ানে হামলার বিকল্প কিংবা আগের পর্যায় হিসেবে চীন যে দ্বীপটি অবরোধ করতে পারে, তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক মহড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, চীনের সামরিক মহড়া থেকে প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করা হচ্ছে, তবে এ থেকে গভীরতর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সুযোগ নেই হয়তো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মহড়াটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের কথা জানে চীন। এ কারণে এতে সর্বোত্তম কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা দেখানোর কথা নয় দেশটির।
ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, চীন যেসব ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, তার প্রায় সবই যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের কাছে দৃশ্যত পরিচিত। এ কারণে গত কয়েক সপ্তাহে চীনের সামর্থ্য নিয়ে কতটা বাড়তি তথ্য পাওয়া গেছে, তা নিশ্চিত নয়।
এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক কলিন কোহ রয়টার্সকে বলেন, অস্ত্রের পরিবর্তে এই মহড়া চীনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অনুষঙ্গগুলো (সংস্কারকৃত ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড, রকেট বাহিনী ও কৌশলগত সহায়তা বাহিনী) পর্যবেক্ষণের বড় সুযোগ করে দিয়েছে।
কোহর আশা, মহড়া থেকে চীনের সংকেত, যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এত বড় সুযোগ হাতছাড়া করার মতো নয়।
চীনের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি চলতি মাসের শুরুতে তাইওয়ান সফর করে। তার এ সফরের জবাবে তাইওয়ানকে ঘিরে জল ও আকাশপথে মহড়া শুরু করে চীন। শুরুতে এ মহড়া চার দিনে শেষ করার কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা বাড়ায় বৈশ্বিক পরাশক্তিটি।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে তথ্য ছড়িয়ে পড়া এবং অসংখ্য মামলার মুখোমুখি হওয়ার পর এবার বিশ্বজুড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক স্বাস্থ্যসেবা পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসনের শিশুদের জন্য তৈরি ট্যালকম পাউডার।
উৎপাদক দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবশ্য আগেই বন্ধ হয়েছে এই পণ্য বিক্রি, এবার অন্য দেশেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। ২০২৩ সাল থেকে এই পাউডার আর বাজারে মিলবে না।
সারাবিশ্বের পরিস্থিতি মূল্যায়নের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার জনসন অ্যান্ড জনসনের বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী বাজার মূল্যায়নের অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে এই পাউডার বিক্রি করা হয়েছে৷
এর আগে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জনসনের ট্যালকম পাউডারের একটি নমুনা পরীক্ষা করলে তাতে কার্সিনোজেনিক ক্রিসোটাইল ফাইবারের অস্তিত্ব মেলে। এটি এক ধরনের অ্যাসবেস্টস, যা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজার থেকে ট্যালকমভিত্তিক বেবি পাউডার প্রত্যাহার করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
জনসন অবশ্য দাবি করে, ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই বাধ্য হয়েই পণ্য প্রত্যাহার করা হয়।
জনসন কোম্পানির শিশুদের তৈরি সাবান, শ্যাম্পু, লোশন ও পাউডারসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়। অনেকে নিরাপদ মনে করেই এসব পণ্য কেনেন। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপে যে পাউডার বিক্রি হয় তা মূলত তৈরি হয় ভারতে।
বেবি পাউডার বিক্রি করতে গিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে জনসনকে। গুনতে হয়েছে জরিমানাও। তবে বরাবরের মতো এবারও অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জনসন বিবৃতিতে বলেছে, কয়েক দশকের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এই পাউডারকে নিরাপদ এবং অ্যাসবেস্টস মুক্ত বলে প্রমাণ করেছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বেশ কয়েক দফা পরীক্ষায় অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি ধরা পড়লেও তা গোপন করে বিক্রি চালিয়ে গেছে জনসন অ্যান্ড জনসন।
১৮৯৪ সাল থেকে বিক্রি শুরু হওয়া জনসনের বেবি পাউডার বিশ্বজুড়ে বহু পরিবারের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
মন্তব্য