ইরাকের পার্লামেন্টে আবার জোরপূর্বক প্রবেশ করেছে প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদরের সমর্থকরা।
স্থানীয় সময় শনিবার সদর সমর্থকরা হানা দেয় পার্লামেন্টে, যার জেরে আহত হয় কমপক্ষে ১২৫ জন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, আল-সদর ও তার সদরি আন্দোলনের হাজার হাজার সমর্থক গতকাল বাগদাদের গ্রিন জোনের কংক্রিটের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। এরপর তারা পার্লামেন্টে প্রবেশ করে।
গত বুধবারও সদর সমর্থকরা একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, তবে এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ২৫ সদস্য ও কমপক্ষে ১০০ বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে।
পার্লামেন্টে প্রবেশের আগে সদর সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাথর ছোড়ে। তাদের ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ।
মুক্তাদা আল-সদরের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও জাতীয় পতাকা হাতে পার্লামেন্টে অবস্থান নিতে আসা আবু ফুয়াদ নামের একজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা দুর্নীতিমুক্ত সরকার চাই…এবং এটি জনগণের দাবি।’
সদর সমর্থকদের পার্লামেন্টে অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি দিয়েছে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-কাজিমির সংবাদমাধ্যম দপ্তর। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।
পশ্চিম তীরের নাবলুসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় সিনিয়র এক কমান্ডারসহ তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে খবর ছিল শহরের একটি ভবনে অবস্থান করছে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের কমান্ডার ইব্রাহিম আল-নাবুলসি। তারা সেখানে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। কয়েক ঘণ্টার বন্দুকযুদ্ধে ইব্রাহিমসহ তিনজন নিহত হন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৩০ বছরের ইব্রাহিম আল-নাবুলসির সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন ইসলাম সাব্বুহ এবং হুসেইন জামাল তাহার নামে দুই সঙ্গী। অভিযানে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন, চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আল জাজিরার জন হলম্যান বলেন, ‘আল-নাবুলসি নিহত হওয়ার আগে ‘আত্মসমর্পণ’ করতে অস্বীকার করেছিলেন।
‘ওনাকে ধরার চেষ্টা এটাই প্রথম না। আগেও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। সবশেষ জুলাইয়ে একটি অভিযান চালিয়েছিল তেল আবিব। ওই অভিযানে দুজন নিহত হন।’
আল-নাবুলসি ‘নাবলুসের সিংহ’ নামে পরিচিত। অনেক দিন ধরেই তিনি পলাতক ছিলেন। ইসরায়েলের একাধিক হত্যাচেষ্টা থেকেও বেঁচে ফিরেছিলেন। সহকর্মীদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তার প্রকাশ্য উপস্থিতি ইসরায়েলি বাহিনীর ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিবৃতিতে জানিয়েছে, সন্ত্রাসী ইব্রাহিম আল-নাবুলসিকে নাবলুস শহরে হত্যা করা হয়েছে। সেই বাড়িতে থাকা আরেক সন্ত্রাসীও মারা গেছে।
আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড হলো ফাতাহর সশস্ত্র শাখা, যে আন্দোলন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের পশ্চিম তীরে সীমিত স্ব-শাসন রয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আল-নাবুলসির একটি অডিও ক্লিপ। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে এটি তিনি রেকর্ড করেছিলেন।
এতে আল-নাবুলসিকে বলতে শোনা যায়, ‘মাতৃভূমির যত্ন নিন। আমি এখন ঘেরাও। তবে শহীদ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করব। আমি আমার মাকে ভালোবাসি, অস্ত্র ছেড়ে দিও না।’
ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দলগুলো এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। এ পদক্ষেপকে ‘কাপুরুষ’ বলে অভিহিত করেছে তারা।
ফাতাহ মুখপাত্র মুনথার আল-হায়েক বলেন, ‘আমরা আমাদের শহীদ ইব্রাহিম আল-নাবুলসি, ইসলাম সাব্বুহ এবং হুসেন তাহার জন্য শোক জানাচ্ছি।
‘হত্যার এই কাপুরুষোচিত অপরাধটি ইসরায়েলের দখলদারত্বের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে জনগণের দৃঢ় সংকল্পকে বাড়িয়ে তুলবে।’
الشهيد إبراهيم النابلسي (اب فتحي) في لباسه العسكري محمولاً على الاكتاف بعد اخراجه من المنزل الذي كان يتحصن به هو ورفيقه الشهيد اسلام ابو صبح.
— شجاعية (@shejae3a) August 9, 2022
تصوير @HShaqrah pic.twitter.com/AXc7afIhqf
বামপন্থি পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) গ্রুপ বলছে, নিহতদের প্রতিরোধ ইসরায়েলের ব্যর্থতার প্রকাশ। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম যোদ্ধাদের ‘মহাকাব্য বীরত্ব’কে স্বাগত জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পশ্চিম তীরে প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় শুক্রবার ইসলামিক জিহাদের অবস্থানগুলোতে আর্টিলারি বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মিশরের মধ্যস্থতায় রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ফলে তিন দিনের তীব্র লড়াইয়ের অবসান ঘতেছিল। ওই লড়াইয়ে ১৬ শিশুসহ ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়, আহতের সংখ্যা ৩৬০।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবের মক্কায় ক্লক টাওয়ারে বজ্রপাতের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্ষার সন্ধ্যায় বজ্রপাতটি ঘটার সময় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো আকাশ।
মুলহাম এইচ নামে একজন টুইটারে ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করেন। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল: ‘কয়েকদিন আগে, মক্কায় বৃষ্টির সময় বুর্জ আল-সা-তে বজ্রপাত হয়।’
ভিডিওটি সোমবার পর্যন্ত দেখেছেন ১৩ লাখের বেশি মানুষ।
রিটুইট করে একজন লিখেছেন, এ সুন্দর দৃশ্যে আমরা বিস্মিত।
একজন লেখেন, ‘নিউরনের সঙ্গে বজ্রপাতের আকর্ষণীয় সাদৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করে।’
قبل قليل صاعقة تضرب #برج_الساعة مع #أمطار_مكة جعلها الله صيبا نافعا للبلاد والعباد #مكه_الان pic.twitter.com/y9ZziH2dn3
— الفلكي مُلهَم هندي (@MulhamH) August 4, 2022
কয়েকদিন ধরে সৌদি আরব ও প্রতিবেশী দেশে মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছে। আল আরাবিয়ার খবরে বলা হয়, প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কিছু অংশে ‘দশকের মধ্যে সবচেয়ে আর্দ্র আবহাওয়া’ অনুভূত হচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি (এনসিএম) বলছে, জুলাইয়ে প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে আর্দ্র আবহাওয়া ছিল।
আমিরাত এবং সৌদিতে মুষলধারে বৃষ্টিকে ‘ভারতীয় বর্ষা’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে বজ্রপাত এবং একটি ঝলসানো গাছের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার কয়েক দিনের মধ্যে মক্কার ভিডিওটি ভাইরাল হলো। ওহাইওতে বজ্রপাতের পর আগুন পুরোপুরি নেভাতে গাছটি কেটে ফেলতে হয়েছে।
বজ্রপাত অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও দূর থেকে এই প্রাকৃতিক ঘটনা সবসময়ই মানুষকে মুগ্ধ করে। চলতি বছরের শুরুতে, আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বজ্রপাতের একটি ভিডিও টুইটারে ভাইরাল হয়।
I just captured the most insane strike of lightning I’ve ever caught on camera.. 😳😱⚡️ @weatherchannel @KSNNews @KWCH12 @KAKEnews @JimCantore pic.twitter.com/17TxaFiyXk
— Taylor Vonfeldt (@therealskicast) March 30, 2022
ভিডিওতে, একটি আলোক শিখাকে দিগন্তসীমা থেকে পুরো আকাশে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সাধারণত এমন দৃশ্য বেশ বিরল। কোনো অঞ্চলের কাছাকাছি পজিটিভ ক্লাউড-টু-গ্রাউন্ড ফ্ল্যাশ থাকলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় ইসরায়েল ও ইসলামিক জিহাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় ১৫ শিশুসহ কমপক্ষে ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩৬০ জনের বেশি আহত হওয়ার তিন দিন পর স্থানীয় সময় রোববার রাত সাড়ে ১১টায় অস্ত্রবিরতিতে যায় দুই পক্ষ।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় পারস্পরিক ও ব্যাপক অর্থে যুদ্ধবিরতি পালনে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মিসর।
মিসরের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা মেনার খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি ইসরায়েলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনি খলিল আওয়াওদেহকে মুক্তি ও হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করছে মিসর। বন্দি আরেক ফিলিস্তিনি বাসাম আল সাদিকেও মুক্ত করার চেষ্টা করছে দেশটি।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদের জ্যেষ্ঠ সদস্য মোহাম্মদ আল হিন্দি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুত সাবুসোলু ও গাজার শাসক দল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনের উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা এবং আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের জোরপূর্বক প্রবেশের বিষয়ে ফোনালাপ করেছেন।
গাজায় তিন দিনের যুদ্ধে অনেক ফিলিস্তিনি হতাহত হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম সমন্বয়কারী লিন হেস্টিংস রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি এরই মধ্যে শোচনীয়।
বিবৃতিতে তিনি গাজায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়া রোধ এবং সংঘর্ষ দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামলার নিন্দা জানিয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেছেন, নৃশংসতার জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে ইসরায়েলকে।
স্থানীয় সময় শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের মহাসচিব জিয়াদ আল-নাখালাহর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রেস টিভির খবরে বলা হয়, গাজায় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলার এক দিন পর সালামির সঙ্গে বৈঠক হয় জিয়াদের। শনিবার পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ছয় শিশুসহ কমপক্ষে ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
জিয়াদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইআরজিসির প্রধান বলেন, গাজায় হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া নতুন যুগের সূচনার প্রমাণ। সাম্প্রতিক অপরাধের জন্য জায়নবাদী শক্তিকে (ইসরায়েল) আরও একবার চড়া মূল্য দিতে হবে।
সালামি আরও বলেন, অতীতের তুলনায় সামর্থ্য বেড়েছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের। বড় ধরনের যুদ্ধ সামলাতে পারার সক্ষমতা অর্জন করেছেন তারা।
ইসলামিক জিহাদের মহাসচিব জিয়াদ বলেন, ইসলামিক জিহাদ ও অন্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ‘উল্লেখযোগ্য’ সামরিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারা ইসরায়েলি হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত।
আরও পড়ুন:গাজা উপত্যকায় দ্বিতীয় দিনের মতো ইসরায়েলের বিমান হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি শিশুসহ অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি ছিটমহল নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছে স্থানীয় সময় শনিবার ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানের হামলায় নিহত ২৪ জনের মধ্যে ৬ শিশুও রয়েছে। এ ঘটনায় এককভাবে তারা ইসরায়েলকে দায়ী করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য এর দায় অস্বীকার করেছে। বাহিনীটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক জিহাদ’ এর ছোড়া একটি রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে শরণার্থী শিবিরের কাছে আঘাত হানে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দিনের সংঘর্ষে অন্তত ২০৩ জন আহত হয়েছে।
গাজার আশপাশে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ অবস্থা শুক্রবার থেকে ফের অস্থিরতায় রূপ নেয়। সেদিন সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের একজন সিনিয়র কমান্ডারকে ইসরায়েল সুর্নিদিষ্ট হামলার মাধ্যমে হত্যা করে। এর পর পাল্টা হামলা শুরু করেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সদস্যরা।
ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র গাজার বাড়িঘর, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ধ্বংস করা শুরু করে। এ সময় এটি আঘাত হানে শরণার্থী শিবিরের কাছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সতর্ক করেছে, ইসলামিক জিহাদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান এক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।
ইসরায়েলি অভিযানে নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৭৩ বছর বয়সী উম ওয়ালিদ, যিনি তার ছেলের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বেইট হ্যানউন শরণার্থী শিবিরে একটি গাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন ওই নারী।
ফিলিস্তিনির যোদ্ধারা গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের স্থাপনা লক্ষ্য করে অন্তত ৪০০ রকেট ছুড়েছে। তবে এদের অধিকাংশ আটকে দিয়েছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর শীর্ষ কমান্ডারসহ আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় ৪ জন ইসলামিক জিহাদের সদস্যসহ মারা গেছেন শীর্ষ কমান্ডার তাইসির জাবারি।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ১০ জন নিহতের মধ্যে ৫ বছর বয়সী এক মেয়েও রয়েছে।
শীর্ষ কমান্ডারকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫৫ জন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, আইডিএফ মনে করছে, হামলায় ইসলামিক জিহাদের অন্তত ১৫ সদস্য নিহত হয়েছেন।
হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ বলেছেন, এই সপ্তাহের শুরুতে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) একজন সদস্য গ্রেপ্তার হলে তাৎক্ষণিক হুমকির প্রতিক্রিয়ায় এই অভিযান চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি আরব ও ফিলিস্তিনিদের ধারাবাহিক হামলায় ১৭ জন ইসরায়েলি ও ২ জন ইউক্রেনীয় নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছিল ইসরায়েল। এর মধ্যে হামলাকারী ২ জন এসেছিল পশ্চিম তীরের জেনিন শহর থেকে।
চলমান এই গ্রেপ্তার অভিযানেই গত সোমবার পশ্চিম তীরের ইসলামিক জিহাদের প্রধান বাসেম সাদিকে জেনিন থেকে গ্রেপ্তার করে আইডিএফ।
বাসেম সাদিকে গ্রেপ্তারের পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকার সঙ্গে যুক্ত এলাকাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করেছিল। যদিও ইসলামিক জিহাদের কমান্ডারের মৃত্যুর পর নতুন করে ইসরায়েল ও ইসলামিক জেহাদের লড়াইয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি ভূখণ্ডে শতাধিক রকেট নিক্ষেপ করেছে ইসলামিক জিহাদ। অধিকাংশ রকেটই ইসরায়েলি আয়রন ডোম প্রতিহত করেছে। এ সময় ইসরায়েলের অনেক শহরে সাইরেন বেজে ওঠে।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, রকেট হামলার প্রতিক্রিয়া শুক্রবার গভীর রাতে ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীদের স্থাপনায় পুনরায় হামলা শুরু করেছে তারা।
এর আগে ২০১৯ সালে ইসরায়েলি হামলায় ইসলামিক জিহাদের এক শীর্ষ নেতা নিহত হলে আইডিএফ ও ইসলামিক জিহাদ ৫ দিনের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে ৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং আহত হন ১১১ জন, বিপরীতে ইসরায়েলের ৬৩ জনের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
ইসরায়েল সে সময় বলেছিল, নিহত ৩৪ জন ফিলিস্তিনির মধ্যে ২৫ জনই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য।
আরও পড়ুন:উগ্রবাদীগোষ্ঠী আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে সুনির্দিষ্টভাবে হত্যার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণার প্রতি স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে এ খবর প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে সৌদি রাজতন্ত্র জানিয়েছে, আল-জাওয়াহিরিকে সন্ত্রাসীদের শীর্ষ নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ২০০১ সালে তাদের নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে সবচেয়ে ভয়াবহ ও ঘৃণ্য হামলা চালানো হয়েছিল। সেই হামলায় সৌদি নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশ-ধর্ম-বর্ণের কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
এ সময় সন্ত্রাসবাদ উৎখাত ও এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্রদেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব।
রাজধানী রিয়াদ বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হামলা থেকে নিরাপরাধ মানুষকে রক্ষায় বিশ্বের সব দেশের সরকারকে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আফগানিস্তানে আল কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির নিহতের পরপরই এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মিত্রদেশ সৌদি আরব।
এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক ঘোষণায় জাওয়াহিরির নিহতের ঘটনাটি জানিয়েছেন।
জো বাইডেন ঘোষণায় বলেন, ‘আমি একটি নির্ভূল হামলা অনুমোদন করেছি, যা তাকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে একেবারে এবং আজীবনের জন্য সরিয়ে দিয়েছে।’
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাওয়াহিরি তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য কাবুলের কেন্দ্রস্থলে এসেছিলেন। সেখানেই তার ওপর ড্রোন হামলা চালানো হয়।
১১ বছর আগে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলের এক অভিযানে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহতের পর আয়মান আল জাওয়াহিরিই আল কায়েদা প্রধান ও সংগঠনটির আন্তর্জাতিক মুখপাত্র হয়ে উঠেছিলেন। এই আয়মান আল-জাওয়াহিরি ওসামা বিন লাদেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য