গত কয়েক দিনে ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। তীব্র হামলায় মরিয়া ইউক্রেনীয় সেনারা শক্ত প্রতিরোধের পাশাপাশি পাল্টা হামলায় জবাব দিচ্ছে।
এ অবস্থায় শুক্রবার মস্কো দাবি করেছে, ইউক্রেনের হামলায় তাদের দখল করা এলাকার একটি কারাগারের ৪০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সেখানে বন্দি ছিলেন, অর্থাৎ সবাই ইউক্রেনপন্থি।
দোনেৎস্কের ওলেনিভকার জেল ক্যাম্পে রকেট হামলায় আরও ৭৫ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে রাশিয়া। তবে স্বাধীনভাবে এ দাবি যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
মারিউপোলের আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্টে দীর্ঘ অবরোধের পর রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করা অনেক ইউক্রেনীয় সেনাকে এই কাগাগারে রাখা হয়েছিল।
ওলেনিভকা কারাগার। ফাইল ছবি
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী হামলার কথা অস্বীকার করেছে। কারাগারে হামলার জন্য তারা উল্টো রাশিয়াকে দুষেছে। বলছে, অপরাধের প্রমাণ ঢাকতে চাইছে পুতিনের বাহিনী।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করা, দখলদার প্রশাসনের আদেশ এবং ফেডারেশনের সশস্ত্র বাহিনীর অপরাধকে আড়াল করার জন্য এসব করছে রাশিয়ান দখলদাররা।
‘প্রপাগান্ডা রাশিয়ার পুরোনো অস্ত্র। এবারও তারা সে পথে হাঁটছে। তথ্যযুদ্ধ করছে। নিজেদের ঘৃণ্য কাজগুলোর দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচাতির ফুটেজে দেখা গেছে, একটি ভবনের কিছু অংশ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে ধোঁয়া উঠছে।
বিবিসি স্বাধীনভাবে ফুটেজটি যাচাই করতে পারেনি। তবে বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে হামলায় নিয়মিত আর্টিলারি ব্যবহার হয়নি।
রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ডোনেটস্ক পিপলস রিপাবলিকের মুখপাত্র ড্যানিল বেজসোনভ বলেন, ‘হামলার লক্ষ্যই ছিল বন্দিশিবির। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হিমার্স আর্টিলারি দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে উসকানি দেয়ার অভিযোগ তুলেছে মস্কো।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কোনাশেনকভও বলেন, ‘হামলায় কারাগারের আটজন নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বিশ্বকে ইসরাইলের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় ইসরাইল যখন বিধ্বংসী যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে ‘ক্রমাগত দখল’ চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি এ আহ্বান জানালেন।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে, ইসরাইল পশ্চিম তীর দখল ঘোষণার হুমকি দিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, আমাদের প্রতিশোধের আশঙ্কায় ভীত হওয়া উচিত নয়। কারণ আমরা কাজ করি বা না করি, ইসরাইল এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। অন্ততপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করা যায়, যাতে এসব না ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল ধীরে ধীরে পশ্চিম তীরে দখল বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে তারা গাজায় সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেস বলেন, আমি মহাসচিব হিসেবে কিংবা জীবনেও কখনো এ রকম মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি।
তিনি জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ বর্ণনাতীত দুর্ভিক্ষ, স্বাস্থ্যসেবার সম্পূর্ণ অভাব ও পর্যাপ্ত আশ্রয় ছাড়া সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো বেঁচে আছে।
তবে তিনি ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা থেকে বিরত থাকেন।
গুতেরেস বলেন, গণহত্যার আইনগত সংজ্ঞা দেওয়া আমার এখতিয়ার নয়। আসল বিষয় শব্দ নয়, আসল বিষয় হচ্ছে সেখানে যা ঘটছে।
এদিকে, চলতিসপ্তাহে ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং কয়েক দিন ধরে স্থানীয়দের দক্ষিণে চলে যেতে বলছে।
কিন্তু অনেক ফিলিস্তিনি জানাচ্ছেন যে এ যাত্রা ব্যয়বহুল এবং তারা কোথায় যাবেন, তা তারা জানেন না।
পরমাণু কর্মসূচির জেরে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোট গ্রহণের ঘটনায় আজ নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। এতে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্কও করেছে মস্কো।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেন, রাশিয়া বরাবরই ইরান পারমাণবিক চুক্তিতে (জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন) অংশগ্রহণকারী ইউরোপীয় দেশগুলোর উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড ও অবৈধ আচরণের ব্যাপারে কথা বলেছে।
২০১৫ সালে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন নামে ইরান পরমাণু চুক্তিতে তেহরান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পাঁচটি দেশ ছিল। তারা এই চুক্তির ফলে ইরানকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেয় এবং এর বিনিময়ে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে থাকা পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
চুক্তিবদ্ধ তিন দেশের অভিযোগ, চুক্তিতে থাকা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ইরান। যদিও ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় তা কার্যত মৃতপ্রায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এটি ঘটেছিল।
ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর চাপে জাতিসংঘে গতকাল শুক্রবার ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই পদক্ষেপগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই এবং এর ফলে কেবল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনা বাড়বে।
আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটির ইতিহাস যুদ্ধ, কূটনীতি ও বৈশ্বিক শক্তির নাট্য মঞ্চ। এটি ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত বাহিনীর আফগানিস্তান দখলকালে এই ঘাঁটিই ছিল তাদের প্রধান বিমান ঘাঁটি। মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার সামরিক অভিযান এখান থেকেই পরিচালিত হয়।
ড. নজিবুল্লাহ সরকারের পতনের পর এবং গৃহযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপটে বাগরাম একাধিকবার বিভিন্ন যুদ্ধরত গোষ্ঠীর হাতে হাত বদল হয়।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশ করার পর ঘাঁটিটি পুনরায় সক্রিয় করা হয়। ধীরে ধীরে এটি বিশ্বে অন্যতম কৌশলগত ও শক্তিশালী সামরিক স্থাপনায় রূপ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে বাগরাম পরিণত হয় একপ্রকার সামরিক শহরে। যেখানে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি রানওয়ে ছিল—যেগুলো থেকে যুদ্ধবিমান, বোমারু ও বিশাল পরিবহন বিমানের চলাচল হতো। ঘাঁটির ভেতরে তৈরি হয় ব্যারাক, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, দোকান ও এমনকি জিম পর্যন্ত।
অনেক মার্কিন সেনার জন্য বাগরাম ছিল একটি দ্বিতীয় বাড়ি। যদিও কংক্রিট প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া সব সময় যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিতো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফজল মনাল্লাহ মমতাজ বলেন, বাগরাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটি ছিল। সোভিয়েতদের সময়েও এটি কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং আমেরিকার জন্যও তাই।
গত দুই দশকে তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট—জর্জ ডব্লিউ. বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগরাম সফর করেন। জো বাইডেনও ২০১১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ঘাঁটিটি পরিদর্শন করেন।
২০২১ সালের গ্রীষ্মে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার ঠিক আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করেই রাতের আঁধারে বাগরাম ত্যাগ করে। পরদিন সকালে হতবাক আফগান সেনা ও স্থানীয়রা একটি ফাঁকা ঘাঁটি দেখতে পান—যেটি দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিক উপস্থিতির প্রতীক ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সায়েদ আবদুল্লাহ সাদেক বলেন, আফগানিস্তান নিজেই একটি কৌশলগত স্থান, আর বাগরাম ছিল সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিগুলোর একটি।
তবে বাগরাম কেবল সামরিক ঘাঁটি ছিল না। এর ভেতরে থাকা একটি কারাগার আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়।
সেখানে শত শত আফগান, যাদের আল-কায়েদা বা তালেবানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করা হতো, বন্দি রাখা হতো এবং কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হতো।
সামরিক বিশ্লেষক আহমদ খান আনদার বলেন, এই ঘাঁটির ভেতরেই তারা একটি কারাগার নির্মাণ করে, যেখানে আল-কায়েদা ও তালেবান সংশ্লিষ্টদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা এটিকে আফগানিস্তানের গুয়ানতানামো নামে আখ্যায়িত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার (২০ বারেরও বেশি) দাবি করেছেন যে, বাগরাম কখনোই ত্যাগ করা উচিত ছিল না।
প্রায় প্রতিবারই বাগরামের প্রসঙ্গে তিনি চীনের নাম উল্লেখ করেন এবং বলেন, ঘাঁটিটি এখন চীনের হাতে চলে গেছে। যদিও তালেবান এই দাবি অস্বীকার করেছে এবং এখন পর্যন্ত এর কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরে পাওয়ার আশা নাকচ করল আফগানিস্তান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন।
কিন্তু তালেবান এক শীর্ষ কর্মকর্তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত জাকির জালাল বলেন, তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় দেশটিতে কোনো সামরিক উপস্থিতির সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে নাকচ করা হয়েছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, আফগানিস্তানে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনরায় নেওয়া সম্ভব হতে পারে, কারণ তারা আমাদের কাছ থেকে কিছু চায়।
আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে ন্যাটো বাহিনীর কেন্দ্র ছিল এই বাগরাম ঘাঁটি। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে এটি আফগান সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা ২০২১ সালে জো বাইডেনের প্রশাসনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
তবে ট্রাম্প এর আগেও বলেন, তিনি বাগরাম বিমানঘাঁটি রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন আফগানিস্তানের কারণে নয়, বরং চীনের কারণে।
গত বৃহস্পতিবার তিনি আবারও এর ভৌগলিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বাগরাম ঘাঁটি পুনরুদ্ধারের কারণগুলোর একটি হলো, এটি চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জায়গা থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে।
তবে ট্রাম্প ঠিক কোন এলাকার কথা বলছেন তা স্পষ্ট নয়। বিবিসির ‘ভেরিফাই’ বিভাগ জুলাই মাসে একটি অনুসন্ধানে জানায়, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে যা বাগরাম থেকে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দূরে।
গত শুক্রবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, চীন আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। তাছাড়া আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ শুধুই আফগান জনগণের হাতে থাকা উচিত।
জাকির জালাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেন, ইতিহাসজুড়ে আফগানরা কখনো কোনো সামরিক উপস্থিতি মেনে নেয়নি। দোহা চুক্তি ও আলোচনায় এই সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করা হয়েছিল। তবে অন্যান্য সম্পর্কের দরজা এখনো খোলা রয়েছে।
গাজা ও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষার অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান লঙ্ঘনের মুখে বিশ্ব নীরব থাকতে পারে না।
কাতারের দোহায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব লীগের যৌথ বিশেষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর স্ত্রীর এ উদ্যোগে যোগ দেন এরদোয়ানও।
সম্মেলনের সাইডলাইনে তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির মা এবং ‘এডুকেশন অ্যাবোভ অল ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরবর্তীতে ফাউন্ডেশনটি ‘সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসরত শিশুদের শিক্ষার এক ভয়াবহ বছর’ শিরোনামে একটি ঘোষণা প্রকাশ করে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষা সুরক্ষা দিবসে প্রকাশিত হয়। এতে এরদোয়ান, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এবং শীর্ষ আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা স্বাক্ষর করেন।
এ ঘোষণায় শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় এবং চলমান লঙ্ঘন বন্ধে জরুরি বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।
ঘোষণায় বলা হয়, ২০২৪ সাল সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শিশুদের শিক্ষার অধিকারের জন্য ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গাজা, সুদান, ইউক্রেন, মিয়ানমার, কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শিশু হত্যা, অনাহার, আঘাত ও মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে—বিশেষত শিক্ষার অধিকার থেকে। এতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘এডুকেশনসাইড’ বা পরিকল্পিতভাবে স্কুল, গ্রন্থাগার ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়।
ঘোষণায় বলা হয়, ‘আজ আমরাও এই গণহত্যা বন্ধের আন্দোলনে শরিক হচ্ছি এবং শিক্ষা সুযোগ প্রদান ও শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের সুস্থ হয়ে ওঠায় আমাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করছি।’
এতে এমিন এরদোয়ান, শেখ মোজা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার মিরেলা বেচিরোভিচ, কলম্বিয়ার ভেরোনিকা আলকোসের গার্সিয়া, গাম্বিয়ার ফাতুমাতা বাহ-ব্যারো, সিয়েরা লিওনের ফাতিমা মাদা বায়ো, জর্ডানের প্রিন্সেস দানা ফিরাস, মালয়েশিয়ার ওয়ান আজিজাহ ইসমাইল এবং স্কটল্যান্ডের সাবেক ফার্স্ট মিনিস্টার হুমজা ইউসুফ স্বাক্ষর করেছেন। ঘোষণাটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিক্ষা ও মর্যাদা রক্ষার পক্ষে একতাবদ্ধ অবস্থানকে প্রতিফলিত করেছে।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এরদোগান ধারাবাহিকভাবে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন এবং নিরীহ ফিলিস্তিনিদের কষ্ট লাঘব ও তাদের জীবন ও শিক্ষার অধিকার প্রতিটি প্রচেষ্টাকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেছেন।
ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে সৌদি আরবকে পাশে পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। এ সময় তিনি এই সপ্তাহের শুরুতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ‘কৌশলগত পারস্পরিক সহায়তা’ চুক্তির ওপর জোর দেন।
ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে সৌদি আরব পাকিস্তানের পাশে থাকবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের জিও টিভিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
ন্যাটো চুক্তির ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে এর তুলনা টেনে খাজা আসিফ বলেন, ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা’র কথা। অর্থাৎ এক সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণকে জোটের সবার ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে।
তবে পাকিস্তানের মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে এই চুক্তি আক্রমণাত্মক নয় বরং প্রতিরক্ষামূলক। আবারও ন্যাটোর সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘যদি সৌদি আরব বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হয়, আমরা যৌথভাবে প্রতিরক্ষা করব।’
এই চুক্তি কোনো আগ্রাসনে ব্যবহারের ইচ্ছে নেই বলে রয়টার্সকে জানান খাজা আসিফ। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি কোনো পক্ষ হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে স্পষ্টতই এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে উঠবে।’
তিনি আরও নিশ্চিত করেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র সৌদি আরবের ব্যবহারের জন্য থাকবে, যদিও পাকিস্তানের ঘোষিত নীতি অনুসারে এই পারমাণবিক অস্ত্রগুলো কেবল ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য।
খাজা আসিফ বলেন, ‘এই চুক্তির অধীনে আমাদের সরঞ্জাম অবশ্যই তাদের জন্য থাকবে।’ তিনি আরও জানান, পাকিস্তান সব সময় তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে এবং কখনো কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেনি।
এই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান এখন পারমাণবিক সুরক্ষা দিতে বাধ্য কি না জানতে চাইলে এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি একটি সর্বাত্মক প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি, যা সব ধরনের সামরিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে।’
এ সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের রিয়াদ সফরের সময় এই ‘পারস্পরিক প্রতিরক্ষা’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো, ‘যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে।’
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তান-সৌদির এই চুক্তি আসলে দুই দেশের দীর্ঘদিনের ব্যবস্থাকেই আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে এবং এর প্রভাবগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি কার্যত রিয়াদের অর্থ আর ইসলামাবাদের পরমাণু শক্তিকে একীভূত করছে, যা উভয় পক্ষের জন্য বড় সাফল্য বলা যায়।
এই চুক্তিতে পাকিস্তানের জন্য ইতিবাচক দিক হলো, শক্তিশালী আর্থিক সমর্থন আর একটি ‘আরব দেশ জোট’ গঠনের সম্ভাবনা। অন্যদিকে সৌদি আরবের জন্য এর অর্থ একটি ‘পারমাণবিক ঢাল’। এই অঞ্চলের এত দিনকার একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রপ্রাপ্ত দেশ ইসরায়েল এই চুক্তির ভবিষ্যতের ওপর নজর রাখবে, ইরানও তাই করবে।
বৃহত্তর ‘আরব জোট’ গঠনের প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শুধু বলেন, ‘দরজা এখনো বন্ধ হয়নি। আমি এখনই এর চূড়ান্ত উত্তর দিতে পারছি না। তবে আমি মনে করি এখানে দেশগুলো ও জনগণের, বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার আছে তাদের অঞ্চলকে যৌথভাবে রক্ষা করার।’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বিশ্বকে ইসরাইলের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় ইসরাইল যখন বিধ্বংসী যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে ‘ক্রমাগত দখল’ চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি এ আহ্বান জানালেন।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে, ইসরাইল পশ্চিম তীর দখল ঘোষণার হুমকি দিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, আমাদের প্রতিশোধের আশঙ্কায় ভীত হওয়া উচিত নয়। কারণ আমরা কাজ করি বা না করি, ইসরাইল এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। অন্ততপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করা যায়, যাতে এসব না ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল ধীরে ধীরে পশ্চিম তীরে দখল বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে তারা গাজায় সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেস বলেন, আমি মহাসচিব হিসেবে কিংবা জীবনেও কখনো এ রকম মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি।
তিনি জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ বর্ণনাতীত দুর্ভিক্ষ, স্বাস্থ্যসেবার সম্পূর্ণ অভাব ও পর্যাপ্ত আশ্রয় ছাড়া সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো বেঁচে আছে।
তবে তিনি ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা থেকে বিরত থাকেন।
গুতেরেস বলেন, গণহত্যার আইনগত সংজ্ঞা দেওয়া আমার এখতিয়ার নয়। আসল বিষয় শব্দ নয়, আসল বিষয় হচ্ছে সেখানে যা ঘটছে।
এদিকে, চলতিসপ্তাহে ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং কয়েক দিন ধরে স্থানীয়দের দক্ষিণে চলে যেতে বলছে।
কিন্তু অনেক ফিলিস্তিনি জানাচ্ছেন যে এ যাত্রা ব্যয়বহুল এবং তারা কোথায় যাবেন, তা তারা জানেন না।
আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। গতকাল শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোভিয়েত আমলে নির্মিত এই ঘাঁটিটি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ঘাঁটি ছিল। তবে ২০২১ সালে মার্কিনসেনাদের প্রত্যাহারের পর তালেবানরা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এটি ফেরত পেতে চাই। আমরা সেই ঘাঁটিটি চাই, কারণ এর অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত- চীনের খুব কাছেই।’
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
২০ বছর পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী দেশটি থেকে সরে দাঁড়ায়। দীর্ঘ এই যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন নিহত হন। সেনা প্রত্যাহারের পরপরই তালেবানরা ফের আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
‘অটুট বন্ধন’
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন সম্পর্ককে ‘অটুট বন্ধন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি ও প্রধানমন্ত্রী স্টারমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও পারমাণবিক জ্বালানি খাতে বৃহৎ প্রযুক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
স্টারমার বলেন, এটি ব্রিটিশ ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্যাকেজ, যার আকার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ড (২০৫ বিলিয়ন ডলার)। বিনিয়োগে যুক্ত রয়েছে মাইক্রোসফট, গুগল ও ব্ল্যাকস্টোনের মতো মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরা।
ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘খুব বড়’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ব্রিটেন আমাদের প্রধান ন্যাটো মিত্র। আমাদের সম্পর্ক অটুট, আজ আমরা যাই করি না কেন।’
এর আগে উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজকীয় আয়োজন শেষে ট্রাম্প বিদায় নেন এবং রাজা তৃতীয় চার্লসকে ‘মহান ভদ্রলোক ও মহান রাজা’ বলে উল্লেখ করেন।
মন্তব্য