জাপানের ইয়ামাগুচিতে শহরে তিন সপ্তাহ ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছিল বানরের একটি দল। এ কদিনে তাদের হামলায় আহত হয়েছেন শহরের অন্তত ৫০ বাসিন্দা। অবশেষে সে দলের একটিকে ধরতে পারে শিকারিরা। পরে সেটিকে মেরে ফেলা হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বানর দলের সব সদস্য ম্যাকাক প্রজাতির। পুরুষ প্রাইমেটটিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে বিশেষভাবে কমিশনপ্রাপ্ত শিকারিরা ধরে ফেলে।
শুরুতে বানরটিকে শান্ত করার চেষ্টা করে তারা। তবে যখন তারা নিশ্চিত হয় যে এই বানরটি সেই হামলাকারী দলের সদস্য, তখন সেটিকে মেরে ফেলা হয়।
প্রায় তিন সপ্তাহ আগে শহরের বয়স্ক ও শিশুদের ওপর হামলা চালাতে শুরু করে বানরের এ দলটি। বেশির ভাগ আঘাতই হালকা আঁচড় এবং কামড়ের। সে থেকে এগুলোকে ধরতে অভিযান শুরু করে শহর কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দলের অন্য সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে।
‘প্রত্যক্ষদর্শীরা নানা আকারের বানরের বর্ণনা দিয়েছেন। ধরা পড়ার পরও, নতুন হামলার খবর পাচ্ছি।’
ধরা পড়া বানরটির বয়স চার বছর। এটি প্রায় আধা মিটার লম্বা (এক ফুট ৭ ইঞ্চি) বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাপানজুড়ে ম্যাকাক প্রজাতির বানরের সংখ্যা অসংখ্য। কিছু কিছু এলাকায় এগুলোকে কীটপতঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়। এরা ফসল খায়; কখনও কখনও বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তবে ইয়ামাগুচিতে হামলা অস্বাভাবিক।
শহরের এক কর্মকর্তা বানরটিকে আটকের আগে জানিয়েছিলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে এত হামলার ঘটনা আসলেই বিরল।’
শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, শুরুতে শিশু এবং নারীদের ওপর হামলা হতো। সম্প্রতি বয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরাও হামলার শিকার হচ্ছেন।
ফাঁদ দিয়ে দলটিকে ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় স্থানীয় পুলিশ। জুলাইয়ের শুরুতে তাদের ধরতে পুলিশি টহল বাড়ানো হলেও, কোনো কাজ হয়নি। বানরগুলো আবাসিক ভবন এমনকি কিন্ডারগার্টেন স্কুলেও হামলা চালাতে শুরু করে।
একসময় বিরল হলেও, সময়ের সঙ্গে ম্যাকাক প্রজাতির বানরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়তে শুরু করে জাপানে।
ইয়ামাগাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, মানুষের সঙ্গে ‘গুরুতর দ্বন্দ্ব’ সৃষ্টি করেছে বানরগুলো। মানুষের আচরণ এবং বন্য পরিবেশের পরিবর্তন এর একটি কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজার ও পার্বত্য বনাঞ্চলে এশিয়ান বন্য হাতি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবাসস্থল ধ্বংস, করিডর বন্ধসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি বলে মনে করছেন তারা।
এ কারণে হাতির আবাসস্থল ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন।
বিশ্ব হাতি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের তারকামানের হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এ তাগিদ দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর আয়োজিত সেমিনারে জেলায় বিপন্ন প্রাণীর সংরক্ষণ এবং মানব-হাতি সংঘর্ষ কমাতে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশ বন বিভাগের সহায়তায় আইইউসিএন হাতির সংখ্যা জরিপ, আবাসিক ও পরিযায়ী হাতিদের চলাচলের পথ এবং করিডরের ম্যাপিং পরিচালনা করেছে।
২০১৬ সালে পরিচালিত সর্বশেষ হাতির সংখ্যা জরিপ অনুসারে, যে প্রজাতি একসময় দেশে ব্যাপক ছিল, এখন বেশির ভাগই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সীমাবদ্ধ।
কক্সবাজার অঞ্চলেও হাতির আবাসস্থল খণ্ডিতকরণ, বন উজাড় ও বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে এই প্রাণী।
২০১৭ সালে শরণার্থীদের আগমনের পর থেকে বনভূমি ধ্বংসের কারণে হাতির আবাসস্থল এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বন্য হাতি। আবাসস্থলের অবক্ষয় এবং চলাচলে বাধার কারণে রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় মানব-হাতি সংঘর্ষ শুরু হয়।
সেমিনারে ওই বছরের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানব-হাতি সংঘর্ষে ১২ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। তাই এ ধরনের সংঘর্ষ প্রশমিত করতে আইইউসিএন বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং এর আশপাশে ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য মানবিক-সংরক্ষণ কর্ম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এর ফলে শরণার্থী শিবিরের আশপাশে হাতির অনুপ্রবেশের প্রায় ৩৭৫টি ঘটনা ঘটলেও হাতি বা মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ ছাড়া, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে, হোস্ট এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা ২১১টি মানব-হাতি সংঘর্ষ প্রশমিত করেছে।
সেমিনারে দেশে বন্য হাতির অবস্থা, বণ্টন, আবাসস্থলের অবস্থা এবং বিদ্যমান হুমকির বিষয়ে আলোচনা করা হয়, যাতে এ অঞ্চলের অবশিষ্ট এশিয়ান হাতিদের রক্ষায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণে তাগিদ দেয়া যায়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদৌজা নয়ন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সারওয়ার আলম, ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা লুয়ান ওসমানী ও আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন। এ ছাড়া সরকারি দপ্তর, মানবিক সংস্থা ও পরিবেশবিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এশীয় ও আফ্রিকান হাতির গুরুত্ব ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও হাতিদের সাহায্য করতে বিশ্বকে একত্রিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস পালন করা হয়।
আরও পড়ুন:পারফ্লুরোঅ্যালকাইল ও পারফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্ট্যান্স (পিএফআইএস) রাসায়নিকটি ফায়ার সার্ভিসের ফোম তৈরিতে ও টেক্সটাইল শিল্পে ব্যাপক ব্যবহার হয়। তবে মানবদেহের জন্য এই রাসায়নিক খুবই ক্ষতিকর।
পিএফআইএস এমন এক রাসায়নিক পদার্থ, যা মানবদেহে ক্যানসার সৃষ্টি করে। একে ‘ফরেভার কেমিক্যাল’ও বলা হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফরেভার কেমিক্যাল এবার বিশ্বের সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বৃষ্টির পানিতেও পাওয়া গেছে।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে প্রকাশিত এক জার্নালে বলা হয়েছে, "আমাদের বায়ুমণ্ডলে এই ‘ফরেভার কেমিক্যাল’ এত বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে যে নতুন এক নির্দেশিকায় বৃষ্টির পানিকে এখন পান করার ক্ষেত্রে অনিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছে।"
পিএফএএসের কারণে কোলেস্টেরেল বৃদ্ধি, লিভারের এনজাইমে পরিবর্তন, শিশু জন্মের সময় কম ওজন, শিশুদের দেহে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে সমস্যা ও ক্যানসারও দেখা দিতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, মানবসৃষ্ট পারফ্লুরোঅ্যালকাইল সাম্প্রতিক দশকগুলোতে পানির গতিপথে, মহাসাগরে, ভূগর্ভস্ত পানিতে ও বায়ুমণ্ডলসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। আন্টার্কটিকা থেকে তিব্বত মালভূমি পর্যন্ত এই পদার্থ এখন পাওয়া যাচ্ছে।
স্টকহোম ইউনিভার্সিটি ও ইটিএইচ জুরিখ ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, বৃষ্টির পানিতে এই বিপজ্জনক রাসায়নিকের মাত্রা নিরাপদ সীমার ওপরে উঠে গেছে।
স্টকহোম ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক ইয়ান কাজিন বলেন, ‘গত ২০ বছরে পানীয় জলে পারফ্লুরোঅ্যালকাইলের নির্দেশিকার মানগুলোর বিস্ময়কর অবনতি ঘটেছে।’
বিশ্বের অনেক মানুষই এখনও বৃষ্টিকে নিরাপদ পানীয় জলের উৎস মনে করে। তবে কাজিনের মতে এখন আর তা নিরাপদ নয়।
এমনিতেই বিশ্বের অনেক দেশেই নিরাপদ পানির সংকট রয়েছে। সেসব দেশে সুপেয় পানির উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানিকেই বিবেচনা করা হত। এখন সেই পানিকেও অনিরাপদ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবের মক্কায় ক্লক টাওয়ারে বজ্রপাতের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্ষার সন্ধ্যায় বজ্রপাতটি ঘটার সময় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো আকাশ।
মুলহাম এইচ নামে একজন টুইটারে ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করেন। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল: ‘কয়েকদিন আগে, মক্কায় বৃষ্টির সময় বুর্জ আল-সা-তে বজ্রপাত হয়।’
ভিডিওটি সোমবার পর্যন্ত দেখেছেন ১৩ লাখের বেশি মানুষ।
রিটুইট করে একজন লিখেছেন, এ সুন্দর দৃশ্যে আমরা বিস্মিত।
একজন লেখেন, ‘নিউরনের সঙ্গে বজ্রপাতের আকর্ষণীয় সাদৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করে।’
قبل قليل صاعقة تضرب #برج_الساعة مع #أمطار_مكة جعلها الله صيبا نافعا للبلاد والعباد #مكه_الان pic.twitter.com/y9ZziH2dn3
— الفلكي مُلهَم هندي (@MulhamH) August 4, 2022
কয়েকদিন ধরে সৌদি আরব ও প্রতিবেশী দেশে মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছে। আল আরাবিয়ার খবরে বলা হয়, প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কিছু অংশে ‘দশকের মধ্যে সবচেয়ে আর্দ্র আবহাওয়া’ অনুভূত হচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি (এনসিএম) বলছে, জুলাইয়ে প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে আর্দ্র আবহাওয়া ছিল।
আমিরাত এবং সৌদিতে মুষলধারে বৃষ্টিকে ‘ভারতীয় বর্ষা’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে বজ্রপাত এবং একটি ঝলসানো গাছের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার কয়েক দিনের মধ্যে মক্কার ভিডিওটি ভাইরাল হলো। ওহাইওতে বজ্রপাতের পর আগুন পুরোপুরি নেভাতে গাছটি কেটে ফেলতে হয়েছে।
বজ্রপাত অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও দূর থেকে এই প্রাকৃতিক ঘটনা সবসময়ই মানুষকে মুগ্ধ করে। চলতি বছরের শুরুতে, আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বজ্রপাতের একটি ভিডিও টুইটারে ভাইরাল হয়।
I just captured the most insane strike of lightning I’ve ever caught on camera.. 😳😱⚡️ @weatherchannel @KSNNews @KWCH12 @KAKEnews @JimCantore pic.twitter.com/17TxaFiyXk
— Taylor Vonfeldt (@therealskicast) March 30, 2022
ভিডিওতে, একটি আলোক শিখাকে দিগন্তসীমা থেকে পুরো আকাশে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সাধারণত এমন দৃশ্য বেশ বিরল। কোনো অঞ্চলের কাছাকাছি পজিটিভ ক্লাউড-টু-গ্রাউন্ড ফ্ল্যাশ থাকলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম উপায়ে ফোটানো অজগরের ১১টি বাচ্চাকে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে এগুলোকে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাৎ হোসেন শুভ।
তিনি জানান, গত ২০ জুন ১৫টি ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে ১১টি বাচ্চা ফোটানো হয়। ইনকিউবেটরে ৬৫ দিন রাখার পর এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে। এর মধ্যে ১১টি বাচ্চা বেঁচে ছিল। রোববার এগুলোকে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়েছে।
এ সময় সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম, মো. আলাউদ্দিন, অসীম কান্তি দাসসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০১৯ সালে প্রথমবার অজগরের ২৫টি ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় আরও ২৮টি বাচ্চা ফোটানো হয়। ওই বাচ্চাগুলোকেও পরে বনে অবমুক্ত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:হাতিরঝিল ধরে হাঁটছিলেন আল ফারুক। গাছের ছায়াঘেরা ফুটপাত পেরিয়ে যখন এফডিসিসংলগ্ন সেতুতে ওঠেন, তখন তীব্র রোদে গরমে পুড়তে হয় তাকে।
বর্ষার এই সময়ে চৈত্রের কাঠফাটা রোদ যেন- নিউজবাংলাকে বলছিলেন ফারুক। বলেন, ‘সামান্য দুই থেকে তিন শ মিটার পথ হাঁটতে গিয়ে আমি ঘেমে একাকার। মাথা ভিজে পুরো চুপচুপে হয়ে গেছে।’
মিরপুর থেকে বাইকে করে বাড্ডায় আসা নাহিয়ান আরেফিন বলেন, ‘গরমের কথা কী আর বলব? রোদে এতটা গরম হয়েছিল যে সিটে বসার সাহস পাচ্ছিলাম না। সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে বাইক চালাতাম। এই সময়ে জীবনেও এমন গরম দেখি নাই।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যানের বাতাসটাও গরম লাগে বাসায়। বাইরে বের হলে মনে হয় পৃথিবী আর সূর্যের মাঝখানে বাংলাদেশকে রেখে দিছে।’
এবারের বর্ষা শীতলতা আনেনি। বরং গ্রীষ্মের মতো উত্তাপ ছড়িয়ে মানুষের ঘাম ঝরাচ্ছে। ঢাকা মহানগর যেন উত্তপ্ত কড়াই।
তাপমাত্রা মাপার পারদে রোববার দুপুরে বাড্ডা এলাকায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর দেখাচ্ছিল সে সময় ঢাকার গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি।
তবে পারদে যতটা তাপ দেখায়, মানুষের মধ্যে গরমের অনুভূতি থাকতে পারে তার চেয়ে বেশি।
আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদারের হিসাবে বাড্ডায় তখন তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছিল ৪১ ডিগ্রি। এটাকে বলে রিয়েল ফিল, মানে আসলে কত ডিগ্রির সমান তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে।
একই সময়ে মরুভূমির দেশ সৌদি আরবের অন্যতম বড় ও ব্যস্ত শহর জেদ্দার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানেও রিয়েল ফিল ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সেখানকার পূর্বাভাস অনুযায়ী সর্বোচ্চ মাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। তখন রিয়েল ফিল থাকবে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অ্যাকুওয়েদারের পূর্বাভাস অনুযায়ী দিনের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। তখন অনুভূত হবে ৪২ ডিগ্রির মতো।
সাধারণত কোনো এলাকার আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্ন অবস্থা এবং বৃষ্টি ও বাতাসের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে অনুভূত তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
৪২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি
বর্তমান প্রজন্ম তো বটেই, আগের কয়েক প্রজন্ম এমন বৃষ্টিহীন বর্ষা দেখেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য-উপাত্ত বলছে, এবার জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত গত ৪২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। স্বাভাবিকভাবে গরমটাও বেশি। তবে আগামী দুই দিনের মধ্যে বৃষ্টির মৌসুমি বায়ু সৃষ্টি হতে পারে।
বৃষ্টিহীন বর্ষায় এমন তীব্র গরমকে অস্বাভাবিক আবহাওয়া বলছেন খোদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবদুল মান্নান। বলেছেন, ‘এবারের আবহাওয়াটা তো একটু অন্য রকম।’
তিনি জানান, জুলাই মাসে দেশে গড়ে ৪৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও এবার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে ২১১ মিলিমিটার, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যা ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম।
নিউজবাংলাকে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘এখন আবহাওয়া অনেকটা অসহনীয়। রোববার বিকেল পর্যন্ত ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের কোনো কোনো স্থানে ৩৬ ডিগ্রির ওপরে আছে। এমন আবহাওয়া বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই হচ্ছে।
‘বৃষ্টি কেন হচ্ছে না’- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতীতেও বর্ষা কখনও বৃষ্টিহীন গেছে। তবে এবার ব্যতিক্রম। এবার দীর্ঘ সময় ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে না। আর বৃষ্টি হলেও তার পরিমাণ খুবই অল্প। যার কারণে গরম আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একটি উচ্চ তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়েছে।’
এমন হওয়ার কারণ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে মেঘমালা সেটা এবার নেই। বঙ্গোপসাগরে এই বর্ষার উৎপত্তি। সেখান থেকে এবার পর্যাপ্ত শক্তি না পাওয়ার কারণেই এবার বর্ষা দুর্বল। মানে এবার বর্ষাকাল তেমন বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম হয়নি।’
এ থেকে উত্তরণের কি কোনো আভাস নেই?
মান্নান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দুই দিন পরে বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। তখন বৃষ্টিপাত একটু বাড়বে।’
এই সময়ে এত গরম স্বাভাবিক নয়
আরেক আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, বর্তমানে যে তাপমাত্রা, সেটি বছরের এই সময়ের স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসে দিনে বাংলাদেশে অন্য মাসগুলোর চেয়ে গড়ে ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি বেশি ছিল। গত বছরগুলোতে এর চেয়ে তাপমাত্রা কম ছিল। এটি রেকর্ড।’
এবার আবহাওয়া এমন রুক্ষভাব দেখাচ্ছে কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে তাপমাত্রা বেশি। এটা শুধু বাংলাদেশ না, অনেক দেশেই বেশি। তবে এটা মরু আবহাওয়ার মতো নয়। মরুভূমির প্রেক্ষাপট আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।’
আরও পড়ুন:জলবায়ু পরিবর্তনে পুড়ছে বিশ্ব। মানুষ, পশু-পাখি, গাছপালা কিছুই রেহাই পাচ্ছে তীব্র গরম থেকে। কদিন আগেই, ব্রিটেনের একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শূকরদের গরম থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন মাখিয়েছিল খামারিরা।
ইউরোপের হাওয়া লেগেছে পূর্ব এশিয়াতেও। গ্রীষ্মের অসহ্য গরমে শীতল থাকার জন্য কুকুরের গায়ে আটকানো যায় এমন ফ্যান (ওয়ারেবল ফ্যান) কেনায় মেতে উঠেছেন জাপানের কুকুর মালিকরা।
ওয়ানসি নামের ফ্যানটি একটি জালের সাথে সংযুক্ত। এটি পোষা প্রাণীর পশমের নিচের স্তরও ঠান্ডা রাখে।
হিকারু উজাওয়া সুইট মাম্মি নামে একটি মাতৃকালীন পোশাকের দোকানমালিক। তিনি বলেন, ‘আমার কুকুর বাইরে হেঁটে আসার পর হাঁপাত। অসহ্য গরমে সে দুর্বল হয়ে যেত। এ ফ্যান ব্যবহারের পর সে হাঁপানো বন্ধ করে দিয়েছে।’
ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে হিকারু উজাওয়ার এই বিশেষ ফ্যান। ১ জুলাই দোকানটি উদ্বোধনের পর অন্তত ১০০টি অর্ডার পেয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া এবং ইতালি থেকেও আসছে চাহিদা।
কেবল কুকুরের শরীর ঠান্ড রাখে, তা কিন্তু নয়। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাও ঠিকঠাক আপনাকে জানিয়ে দেবে হিকারুর এই বিশেষ ফ্যান।
জুলাইয়ের শুরুতে রাজধানী টোকিওর বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হয়। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। অবস্থা বেগতিক দেখে দিনের বেলা বাইরে যাওয়া এবং ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকার জন্য জনগণকে অনুরোধ জানায় কর্তৃপক্ষ।
সারা বিশ্বেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ইংল্যান্ডে ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়; যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জারি হয় ‘চরম তাপ সতর্কতা’। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এই গ্রীষ্ম মৌসুমে তাপজনিত মৃত্যুর কারণে শত শত মানুষ মারা যেতে পারে।
হিকারু বলেন, ‘গরম থেকে বাঁচাতে আমার চিহুয়াহুয়া ও সোয়ানের (কুকুর) জন্য বহনযোগ্য পাখা তৈরি করেছি।’
হিকারুর এ ধরনের ফ্যানের ধারণা আসে তিন বছর আগে, ২০১৯ সালে। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন গ্রীষ্মে হাঁটার পর সোয়ান অনেক ক্লান্ত হয়ে যায়।
হিকারু বলেন, ‘কাজের সময়সূচির কারণে আমার জন্য তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা কঠিন ছিল। তাই মধ্যাহ্নের গরমেই ওদের হাঁটাতে নিয়ে যেতাম।
পশু চিকিৎসকদের সাহায্যে এই ফ্যান তৈরি করেন হিকারু। এখন পাঁচটি ভিন্ন আকারের ফ্যান বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিটির দাম নিচ্ছেন ৯ হাজার ৯০০ ইয়েন; অর্থাৎ ৭৪ ডলারের কাছাকাছি।
হিরোকো মুরায়ামা তার দুটি ইয়র্কশায়ার টেরিয়ার অ্যান এবং ননের জন্য ওয়ানসি কিনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম যে ফ্যানের ঘূর্ণায়মান শব্দ তারা অপছন্দ করতে পারে। তবে এমনটা হয়নি। প্রতিদিন সকালে হাঁটার সময় তারা এগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকে।’
হিকারু বলেন, ‘চাহিদা থাকায় আরও দুটি পরিধানযোগ্য ফ্যানের মডেল তৈরি হচ্ছে। একটি শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত, অন্যটি পরিধানযোগ্য। এখন কুকুররা উত্সবে গেলেও শান্ত থাকবে।’
আরও পড়ুন:বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসেও তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ। শ্রাবণের প্রায় পুরোটা কেটেছে কাঠফাটা রোদে। ছেড়া ছেড়া বৃষ্টি নামলেও তাতে গরম কমেনি। আগামী দিনগুলোর জন্যও কোনো সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আগামী তিন দিনে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যার ফলে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে। তবে সারা দেশে এর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম।
জুলাই মাসে দেশে গড়ে ৪৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও এবার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে ২১১ মিলিমিটার, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যা ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম। আলাদাভাবে প্রতিটি বিভাগেই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। শুধু ব্যতিক্রম সিলেট অঞ্চল, সেখানে বৃষ্টি হয়েছে এ মৌসুমের গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ কম।
চলতি আগস্ট মাসেও দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরিচালক আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত আগস্ট মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্ভাবাস বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়।
জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৩৬৮ মিলিমিটার। তবে এবার এ মাসে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ১৪৬ মিলিমিটার। ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৪২৭ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও ২০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সেখানে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭২০ মিলিমিটারের বিপরীতে ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।
শুধু সিলেটেই এবার প্রায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুলাই মাসে ৫৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে এ বিভাগে, তবে সেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ৫৭৯ মিলিমিটার। রাজশাহীতে ৩৬২ মিলিমিটার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের জায়গায় ১৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৪২৭ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও রেকর্ড হয়েছে ২৯৯ মিলিমিটার। খুলনায় ৩৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টির জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে ১২০ মিলিমিটার। দক্ষিণের বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৫১৯ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও রেকর্ড করা বৃষ্টির পরিমাণ মাত্র ১৮৩ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, বায়ুমণ্ডলে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি, প্রখর সূর্যকিরণ এবং মৌসুমি বায়ু দুর্বল থাকায় এবার রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
চলতি আগস্ট মাসেও সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা পরে মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য