ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ২১ জুলাই ১০ দিন বিরতির পর নডস্ট্রিম-১ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে রাশিয়া। তবে রুশ জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম বলেছে, গ্যাসপাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজের কারণে তার প্রধান পাইপলাইনের মাধ্যমে ইইউতে আবারও ব্যাপকভাবে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নর্ডস্ট্রিম-১ পাইপলাইনে আরেকটি টার্বাইন বন্ধ করলে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে, যা বর্তমানে সরবরাহকৃত গ্যাসকে অর্ধেকে নামিয়ে আনবে।
তবে গ্যাজপ্রমের পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণের দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে জার্মানি। দেশটির সরকার বলছে, গ্যাস সরবরাহ সীমিত করার কোনো প্রযুক্তিগত কারণ নেই।
গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ কমানো হলে শীতের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গ্যাসের মজুত করা আরো কঠিন হবে। শীতকালে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কারণ নাগরিকদের আবাসনগুলো গরম রাখার জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
রাশিয়া এরই মধ্যে রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে রাজি না হওয়ায় পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর একের পর এক অবরোধ আরোপের জবাবে প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
এদিকে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। সেখানে গ্যাসের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সেই হাওয়া লেগেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।
রাশিয়ার গ্যাস উত্তোলন ও বিতরণকারী সরকারি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের একটি প্রকল্প নর্ড স্ট্রিম এজি পাইপলাইন। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া; পরে জার্মানির কাছ থেকে সেই গ্যাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। ২০০৫ সাল থেকে চালু হয় এই প্রকল্প।
গত মাসে রাশিয়া জার্মানিতে সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। তখন বলা হয়, টারবাইনে সমস্যা থাকার কারণে গ্যাসের প্রবাহ কমে গেছে।
সে সময় গ্যাজপ্রম দাবি করে, টারবাইন মেরামতের জন্য কানাডার একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু সেই কোম্পানি ঠিক সময়ে টারবাইন মেরামত করতে পারেনি।
তবে সে সময়ই জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক দাবি করেছিলেন, এটি একটি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’।
জার্মানির ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সির প্রধান ক্লাউস ম্যুলার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, এমন হতে পারে যে, রাশিয়া নর্ডস্ট্রিম-১ পাইপলাইন দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে।
সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, গ্যাসলাইনটিকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে ১০ দিন সময় প্রয়োজন তা দীর্ঘায়িত করতে পারে রাশিয়া। আর তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হতে পারে।
আরও পড়ুন:অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের জন্য দারুন খবর নিয়ে এল একটি পর্যটন সংস্থা। বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত শহর দেখার পাশাপাশি লড়াইরত যোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও দেশটির নাম শুনলে হয়ত অনেকেই সরে আসবেন পরিকল্পনা থেকে।
কথা হচ্ছে ইউক্রেন নিয়ে। দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ছয় মাস চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে অভিযান জোরদার করেছে পুতিন বাহিনী। মৃত্যু ও ধ্বংসের ঢেউ উড়িয়ে ইউক্রেনে পর্যটকদের আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ভিজিট ইউক্রেন নামের প্রতিষ্ঠানটি।
গত মাসে প্রতিষ্ঠানটি এই ট্যুর প্ল্যান চালু করে। বলা হচ্ছে, ইউক্রেনীয় সেনারা যেসব দখল শত্রুমুক্ত করেছে, সেসব শহরের অবস্থা সরাসরি দেখার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে প্ল্যানে। ট্যুর কোম্পানির ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, ‘এখনই অদম্য ইউক্রেনে ভ্রমণ শুরু করুন।’
ইউক্রেন ভ্রমণে আন্তর্জাতিক সতর্কতা সত্ত্বেও সংস্থাটি বলছে, এ পর্যন্ত ১৫০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে নিরাপদ ভ্রমণের তথ্য সরবরাহ করে প্রতি মাসে ১৫ লাখ হিট পাচ্ছে তারা। যা রুশ অভিযানের আগের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ট্যুরের জন্য সাইন আপ করা যে কেউ বোমায় ধ্বংসাবশেষ, বিধ্বস্ত ভবন, ক্যাথেড্রাল এবং স্টেডিয়ামগুলোর মধ্য দিয়ে হাঁটার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া সামরিক হার্ডওয়্যার এবং বিমান হামলার সাইরেনগুলোতে স্বচক্ষে দেখে আসতে পারবেন পর্যটকরা।
ভিজিট ইউক্রেনের প্রতিষ্ঠাতা আন্তন তারানেঙ্কো বলেন, ‘অনেকের কাছে এমন ছুটি ভয়ংকর মনে হতে পারে। তবে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন এটা “ডার্ক ট্যুরিজম” নয়, যেখানে কেবল মৃত্যু, বিপর্যয়ের মতো দৃশ্যগুলো দেখানো হয়।
তারানেঙ্কো আরও বলেন, ‘এই সফরগুলো ইউক্রেনের জন্য তার নাগরিকদের ভালোবাসার মনোভাব তুলে ধরার পাশাপাশি বহির্বিশ্বকে এটা দেখানোর সুযোগ রয়েছে যে যুদ্ধের মধ্যেও জীবন থেমে থাকে না।
‘ইউক্রেনে যা ঘটছে তার মধ্যেও কীভাবে লোকেরা মানিয়ে নিচ্ছে, একে অপরকে সাহায্য করছে সেসব দেখার সুযোগ থাকছে। বোমা হামলায় বিধ্বস্ত দোকান ফের চালুর পর সেখানে বসে বন্ধুদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো চেখে দেখতে পাবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেনে ‘লেভেল ফোর সতর্কতা জারি করেছে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে আমেরিকান নাগরিকদের ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কিয়েভে বাইডেন প্রশাসন দূতাবাসে কার্যক্রম স্থগিতের পর সাফ জানিয়ে দিয়েছে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কোনো কনস্যুলার সহায়তা দেয়া হবে না।
অন্যান্য দেশও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে। যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস বলছে, শহর ও অঞ্চলে হামলার কারণে “জীবনের জন্য প্রকৃত ঝুঁকি” রয়েছে।
তবুও তারানেঙ্কো আশায় বুক বাঁধছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি আমাদের ধ্বংস হওয়া শহর এবং সাহসী লোকদের যুদ্ধ দেখতে চান, তবে দয়া করে এখনই আসুন। তবে আপনাদের সর্তক থাকতে হবে। কারণ ইউক্রেন এখনও শতভাগ নিরাপদ না।’
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির ধ্বংসপ্রাপ্ত পর্যটন শিল্পকে রক্ষা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও, ইউক্রেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ ট্যুরের অনুমোদন দেয়নি।
ইউক্রেনের স্টেট এজেন্সি ফর ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের চেয়ারপার্সন মারিয়ানা ওলেস্কিভ বলেন, ‘এখন পরিদর্শনের উপযুক্ত সময় নয়। তবে আমরা জয়ী হওয়ার পর মানুষকে ইউক্রেন দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাব।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের জাপোরিজ্জাতেই রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইউক্রেনে সাম্প্রতিক রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরুর দিকেই বেলারুশ হয়ে রুশ সেনারা প্রবেশ করে জাপোরিজ্জার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
সে সময় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গোলাবর্ষণ করেছিল।
তবে পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার পর ইউক্রেনীয় কর্মীদের রুশ বাহিনী রেখে দেয়। তবে ইউক্রেনের অভিযোগ, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার পর এটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রুশ সেনারা। সেখানে গোলাবারুদ মজুদ করছে এবং সেখান থেকে ইউক্রেনের অনেক বেসামরিক স্থাপনায় হামলা করছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার রাশিয়ার রকেট হামলায় পারমাণবিক স্থাপনার গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তিনটি তেজস্ক্রিয় শনাক্তকরণ যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যে কোনো তেজস্ক্রিয় লিকের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় তা শনাক্তকরণ ও বিকিরণ প্রতিরোধ অসম্ভব হয়ে গেছে।
কিয়েভ বলছে, এবার ভাগ্যক্রমে পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলেও বার বার ভাগ্য সহায় হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে আইএইএ প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি বলেছেন, ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গোলাগুলির খবরে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের আণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএইএ) ইউক্রেনের জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে যে কোনো ধরণের সামরিক পদক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গ্রসি বলেছেন, শুক্রবারের হামলা পারমাণবিক বিপর্যয়ের সত্যিকারের ঝুঁকি তৈরি করেছে যা ইউক্রেন এবং এর বাইরে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় কর্মীদেরর অবশ্যই হুমকি ও চাপ ছাড়াই তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে এবং আইএইএকে প্রযুক্তিগত সহায়তার অনুমতি দেয়া উচিত।
গ্রসি আরও বলেন, ইউক্রেন এবং অন্যত্র একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক দুর্ঘটনা থেকে জনগণকে রক্ষা করার স্বার্থে আমাদের মতভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আইএইএর পক্ষ থেকে প্ল্যান্টটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলার পরই ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাপোরিজ্জায় গোলাবর্ষণের অভিযোগ আনলো।
তবে মস্কোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
জাপোরিজ্জায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রুশ প্রধান ইয়েভজেনি বালিতস্কি রোবরার টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেলের মজুত লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে নিরপেক্ষভাবে কিয়েভ ও মস্কোর দাবির সত্যতাই যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
যেহেতু পারমাণবিক প্রকল্পটি রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে এবং সেখানে রুশ সেনারাই অবস্থান করছে, তাহলে ঠিক কী কারণে রুশ সেনারাই সেখানে হামলা চালাবে তা স্পষ্ট করেনি কিয়েভ।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘পারমাণবিক প্রকল্পে যে কোনো বোমা হামলা নির্লজ্জ অপরাধ, সন্ত্রাসের কাজ।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত সপ্তাহের শুরুর দিকে অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর জন্য এই প্ল্যান্টটিকে নিরাপদ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা থাকায় ইউক্রেনীয় সেনারা সেখানে গোলা বর্ষণ করতে পারবে না।
গত মার্চে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের মধ্যেই দেশটিতে অবস্থিত ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জাতে হামলা চালায় রুশ সেনারা। ইউক্রেন সে সময় দাবি করে, রুশ গোলার আঘাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আগুন ধরে যায়।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছিলেন, এই কেন্দ্রের চুল্লি গলে যাওয়া চেরনোবিলের থেকে ১০ গুণ বেশি ভয়াবহ হতে পারে।
এর আগে ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিলে সোভিয়েত আমলে এক পারমাণবিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পারমাণবিক প্রযুক্তির ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ২০ বছরে তেজস্ক্রিয়তার পরোক্ষ প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:পশ্চিমা বাধা উপেক্ষা করে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চালানোয় একের পর এক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া মস্কো জ্বালানিকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। বন্ধু নয়, এমন দেশকে রাশিয়ার জ্বালানি কিনতে হলে দাম পরিশোধ করতে হবে রুবলে, এমন শর্তজুড়ে দেয় ক্রেমলিন।
ওয়েল প্রাইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ৪ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর রাশিয়ার গ্যাস তুরস্কের রুবলে কেনার বিষয়টি জানিয়েছেন রাশিয়ার সহকারী প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া সফর করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দুই নেতার বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন উভয় নেতা।
তুরস্ক তার চাহিদার প্রায় অর্ধেক গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করে।
সম্প্রতি ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্ততার ভূমিকা পালন করে তুরস্ক। এর মধ্যে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে শস্যবাহী জাহাজ বন্দর ছেড়ে গেছে।
এর পাশাপাশি দুই নেতা সিরিয়া ও কুর্দিসংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনাও করেছে।
মার্চের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুবলে গ্যাস বিক্রির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করার ফলে ওই দেশগুলোর মুদ্রার ওপর মস্কোর আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই রাশিয়া লেনদেনের ক্ষেত্রে ওই সব দেশের মুদ্রা নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করছে।
পুতিন বলেন, ‘আমি অল্প সময়ে লেনদেনে পরিবর্তন আনতে কিছু ব্যবস্থা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মস্কোর বন্ধু নয় এমন দেশগুলোতে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস রুবলের বিনিময়ে সরবরাহ করা হবে। আমাদের পণ্য ইইউ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে ডলার বা ইউরোতে লেনদেনের কোনো মানে হয় না।’
তবে মস্কোর বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও রুবলে আগ্রহ দেখিয়েছে আগেই। বেলারুশ জানিয়েছে, এরই মধ্যে রুবলে রাশিয়ার গ্যাস কেনা শুরু করেছে দেশটি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময়বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া।
শুক্রবার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ। সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান সেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ল্যাভরভ।
মাদকের মামলায় রুশ আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের নারী বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় তাকে ফেরত পাওয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটনের তোড়জোড়ের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান ল্যাভরভ।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গ্রিনারের দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও তাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ল্যাভরভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া। উভয় দেশের সম্মতিতে কূটনৈতিকভাবে হবে এমন সংলাপ। (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন) উভয় প্রেসিডেন্ট যেভাবে সম্মত হবেন সে অনুযায়ীই এগুবে সংলাপ। কেউ কিভাবে মন্তব্য করছে তা বিষয় নয়। আলোচনার এই পথ সবসময় চালু থাকবে।’
‘আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে উভর প্রেসিডেন্টের সম্মতি অনুযায়ী প্রস্তাবিত কাঠামো মতে,’ যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মাদকের মামলায় বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় মস্কোর একটি আদালত।
৩১ বছর বয়সী গ্রিনার গাঁজার তেল রাখার কথা স্বীকার করলেও, আদালতকে বলেছিলেন, তিনি সরল মনে ভুলটি করেছেন।
তবে আদালত এতে সন্তুস্ত হতে পারেনি। চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য রাখার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেন বিচারক।
গ্রিনার দুইবার অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেন। তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন বলে মনে করা হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর কাছে একটি বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়। সে সময় তার লাগেজে গাঁজার তেলযুক্ত ভ্যাপ কার্তুজ পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অফ-সিজনে ক্লাব বাস্কেটবল খেলতে রাশিয়া এসেছিলেন তিনি।
কয়েকদিনের মধ্যেই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এখন মামলাটি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে হাই-প্রোফাইল কূটনীতির বিষয় হয়ে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক গিনিপিগ’ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে গ্রিনারকে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই রায়কে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘রাশিয়া বা অন্য যে কোনো দেশ অন্যায়ভাবে কাউকে আটকে রাখার এমন ঘটনা বিদেশে বসবাসকারী প্রত্যেকের নিরাপত্তার জন্য হুমকির প্রতিনিধিত্ব করে।’
গ্রিনারকে যখন আদালত থেকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি।’
এটা স্পষ্ট নয় যে তিনি আসলে কতদিন কারাগারে কাটাবেন।
কারণ যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া এখন কার্যত বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারেনি।
এদিকে, কারাবন্দি রুশ অস্ত্র পাচারকারী ভিক্টর বাউটকে চুক্তির অংশ হিসেবে রুশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে ওয়াশিংটন। ভিক্টর ‘ডেথ অফ মার্চেন্ট’ হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য সোচিতে শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে শস্য চালান চুক্তিতে মধ্যস্থতার পর রাশিয়ায় যাচ্ছেন তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার কৃষিপণ্য রপ্তানিতে চুক্তির পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে এরদোয়ানের। এমন বাস্তবতায় তিনি দেখা করতে যাচ্ছেন পুতিনের সঙ্গে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৯ সালের পর এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো মুখোমুখি হচ্ছেন এ দুই রাষ্ট্রপ্রধান। এর আগে গত মাসে তেহরানে বৈঠক করেছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
তুরস্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন পুতিন ও এরদোয়ান। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়েও আলাপ করবেন তারা।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সম্ভাব্য সামরিক অভিযান শুরুর আগে রাশিয়া সফর করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এ নিয়ে বিশ্লেষকদের ভাষ্য, সফরে এরদোয়ানের মূল নজর থাকবে উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের বিষয়ে রাশিয়ার সম্মতি আদায় কিংবা বিরোধিতা ঠেকানো।
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মূল পৃষ্ঠপোষক রাশিয়া। উত্তর সিরিয়ার আকাশসীমার বেশির ভাগ অংশে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটির।
আরও পড়ুন:খাদ্যশস্য বোঝাই আরও তিনটি জাহাজ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছাড়বে শুক্রবার। গত সোমবার শস্যবোঝাই ১৬টি জাহাজ দেশটির ওডেসা বন্দর ছেড়ে যায়।
জাতিসংঘের সমঝোতায় ও তুরকিয়ের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের নৌযানের ওপর রাশিয়ার দেয়া অবরোধ তুলে নেয়ার পর শুরু হয় রপ্তানির প্রক্রিয়া।
তুরকিয়েভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদৌলু এজেন্সির বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
তুরকিয়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘শুক্রবার এই তিনটি জাহাজ ইউক্রেন থেকে যাত্রা শুরু করবে। প্রথম জাহাজটি ২৬ হাজার টন ভুট্টা নিয়ে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ইস্তানবুল হয়ে লেবাননের উদ্দেশে যাবে।’
সিয়েরালিয়নের পতাকাবাহী রাজনি নামের জাহাজটি বসফরাস প্রণালি পাড়ি দেয়ার সময় বুধবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার পরিদর্শকদল এটিকে পর্যবেক্ষণ করবে।
জাহাজের যাত্রার পুরো পথটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদল, তুরকিয়ে ও জাতিসংঘের সদস্যরা নজরদারিতে রাখবেন।
পর্যবেক্ষকদল জানিয়েছে, এই জাহাজের সফল ও নিরাপদ যাত্রাই বলে দেবে যুদ্ধরত দুই পক্ষ তাদের মধ্যকার চুক্তির বিষয়ে কতটা শ্রদ্ধাশীল।
তুরকিয়ে জানিয়েছে, এই চুক্তির যথাযথ কার্যকারিতাই পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সহায়তা করবে।
তুরকিয়ের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আজ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। এ সময় যুদ্ধবিরতির বিষয় জোর প্রচেষ্টা চালাবেন এরদোয়ান।
এ সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেন জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী খাদ্যশস্য বোঝাই ১৬টি জাহাজ ওডেসা বন্দর ছেড়ে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। প্রথমটি গত সোমবার ওডেসা বন্দর ছেড়ে যায়। তবে হামলার ভয়ে এসব জাহাজের যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় ইউক্রেন থেকে গমসহ খাদ্যপণ্য রপ্তানি। এই দেশ দুটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। এতে বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়ে যায় গোটা বিশ্ব।
তবে ২২ জুলাই বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট সমাধানে প্রতীক্ষিত এক চুক্তিতে পৌঁছায় রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই চুক্তির আওতায় কৃষ্ণসাগরে অবরোধ তুলে নেয় রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্য রপ্তানির পথে আর কোনো বাধা নেই।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির কার্যালয় জানিয়েছে, খাদ্যশস্য নিয়ে ওইসব জাহাজ যেকোনো সময় রওনা হতে পারে।
গত ২২ জুলাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শস্যপণ্য রপ্তানি নিয়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সব মিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য পাঠানো হবে ইউক্রেন থেকে।
এসব খাদ্যশস্য যাবে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাহাজগুলোর জন্য নিরাপদ চ্যানেল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার ওডেসার চেরনোমর্স্ক বন্দর পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। খাদ্যশস্য বহনের দায়িত্বে থাকা নাবিকদের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেন উপকূলের কাছে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া নৌ অবরোধ দিলে মুখ থুবড়ে পড়ে ইউক্রেনের রপ্তানি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন বেশ কয়েকটি জাহাজে খাদ্যশস্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ইউক্রেনের পক্ষে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে এসব জাহাজ রওনা হতে না পারলে খাদ্যসংকেটে ভোগা দেশগুলো আরও দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে পারে।
খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দুই দেশের হওয়া চুক্তিটি ১২০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। চুক্তির মেয়াদ আরও আলোচনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
যুদ্ধে বহু মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এরই মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে চুক্তি হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও।
আরও পড়ুন:আটলান্টিকে উল্টে যাওয়া নৌকার ভেতরের বাতাসের বাবল ব্যবহার করে ৬২ বছর বয়সী এক ফরাসী নাবিক ১৬ ঘণ্টা বেঁচেছিলেন।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে যাত্রা শুরু করা ১২ মিটারের লম্বা নৌকাটি সোমবার সন্ধ্যায় স্পেনের উত্তর পশ্চিম গ্যালিসিয়া অঞ্চলের কাছে সিসারগাস দ্বীপপুঞ্জের থেকে ১৪ মাইল (২২.৫ কিলোমিটার) দূরে সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৮টা ২৩ মিনিটে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে একটি বিপদসংকেত পাঠায়।
স্প্যানিশ কোস্ট গার্ড সঙ্গে সঙ্গেই নৌকার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে এবং নৌকাটিকে আটলান্টিকে উল্টো অবস্থায় ভাসমান দেখতে পায়।
পাঁচ ডুবুরি নিয়ে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ও ৩টি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
একজন ডুবুরি নৌকা আরোহী বেঁচে আছেন কি না তা জানতে উল্টে যাওয়া নৌকায় লাফ দিয়ে পড়েন। সেই নাবিকও ভেতর দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সাড়া দেন।
কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। সমুদ্র তখন উত্তাল এবং সূর্যও ডুবে গেছে। ফলে সেই ফরাসি নাবিককে উল্টো নৌকাতেই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
নৌকাটি যাতে উত্তাল ঢেউয়ে ডুবে না যায় সেই জন্য কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারীরা নৌকাটিতে বেলুন সংযুক্ত করেছিল।
কোস্ট গার্ড ডুবুরিরা বলছেন, নাবিকের বেঁচে থাকার বিষয়টি ছিল প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভবটাই সম্ভব হয়েছে।
পরের দিন সকালে নৌকা উল্টানোর ১৬ ঘণ্টা পরে দুজন ডুবুরি সাঁতরে তার কাছে গেলে তিনি নিজেই উল্টে থাকা নৌকা থেকে বের হয়ে আসেন।
কোস্ট গার্ড ফরাসি নাবিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তবে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
এই ঘটনার বিষয়ে এক টুইটবার্তায় স্পেনের মেরিটাইম সেফটি অ্যান্ড রেসকিউ সোসাইটি বলেছে, ‘প্রতিটি জীবন বাঁচানোই আমাদের জন্য বড় পুরস্কার।’
মন্তব্য