ক্যাপিটলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি। ঘটনা তদন্তে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সদস্যকেও কমিটির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতের এক জুরি বোর্ড ট্রাম্পের সাবেক সহযোগী স্টিভ ব্যাননকে কংগ্রেস অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করেছে। ক্যাপিটল দাঙ্গা নিয়ে চলা তদন্তে প্রথম দোষী সাব্যস্ত হলেন তিনি।
এর আগে ক্যাপিটলে হামলার তদন্তকারী কংগ্রেস কমিটির তথ্য দেয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি এবং প্যানেলের সামনে হাজির হতেও তিনি অস্বীকার করেন। তাই জুরি বোর্ড ব্যাননকে দুটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
কমিটির পক্ষ থেকে ব্যাননকে গত বছর ৭ অক্টোবর কিছু নথি সরবরাহ করার অনুরোধ করা হয় এবং ১৪ অক্টোবর ব্যক্তিগতভাবে কংগ্রেসনাল কমিটির মুখোমুখি হওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ব্যানন এ দুটির একটিও করেননি।
ব্যাননকে এখন ন্যূনতম ৩০ দিন ও ১ বছর পর্যন্ত জেলে থাকতে হতে পারে।
তবে হাল ছাড়ছেন না ব্যাননের আইনজীবীরা। এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করবেন তারা।
এদিকে রায়ের পর ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের স্টিভ ব্যানন বলেন, ‘আমরা হয়তো আজ এখানে একটি যুদ্ধে হেরেছি, কিন্তু আমরা এই যুদ্ধে হারতে যাচ্ছি না।’
ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর হামলা চালানো হাদি মাতার লেখকের বিতর্কিত উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের কেবল দুই পৃষ্ঠা পড়েছিলেন। হামলার পর লেখকের বেঁচে যাওয়ায় তিনি ভীষণ অবাক হয়েছেন। কারাগার থেকে নিউ ইয়র্ক পোস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব জানান ২৪ বছরের হাদি।
তিনি বলেন, “বইটির ‘পৃষ্ঠা দুয়েক’ পড়েছিলাম। উনাকে আমি পছন্দ করি না। আমার মনে হয় না সে খুব ভালো মানুষ। তিনি এমন একজন যিনি ইসলামকে আক্রমণ করেছেন, তাদের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধকে আঘাত করেছেন। হামলা থেকে বেঁচে গেছেন শুনে অবাক হয়েছি।”
নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে গত সপ্তাহে বক্তব্য রাখার সময় রুশদির ওপর ছুরি হামলা চালান হাদি মাতার। ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয় হাদিকে। শাটোকোয়া কাউন্টি জেলে বন্দী আছেন তিনি।
১৯৮৮ সালে রুশদির বিখ্যাত এবং বিতর্কিত উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হয়। এটির বিষয়বস্তুতে ক্ষুব্ধ হয় মুসলিম বিশ্ব। ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৯৮৯ সালে রুশদির মৃত্যুদণ্ডের জন্য ফতোয়া জারি করেন।
হামলার সঙ্গে আশির দশকে ইরানের জারি করা ফতোয়ার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা নিশ্চিত করেননি হাদি। তিনি বলেন, ‘আমি আয়াতুল্লাহকে সম্মান করি। আমি মনে করি তিনি একজন মহান ব্যক্তি।’
চলতি সপ্তাহের শুরুতে হাদির মা বলেছিলেন, তিনি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছেন।
‘আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করেছি। তাকে আমার কিছুই বলার নেই।’
হামলায় রুশদির লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি এক হাত ও চোখের স্নায়ু বিচ্ছিন্ন গেছে। শনিবার তাকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
রুশদির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাণঘাতী হামলার পরও বুকার পুরস্কার বিজয়ী লেখক তার সহজাত ও অদম্য রসবোধ হারাননি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী রকেট ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম’ বা এসএলএস চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে ২৯ আগস্ট।
আর্টেমিস প্রোগ্রামের আওতায় ফ্লোরিডা থেকে যাত্রা শুরু হবে মনুষ্যবিহীন রকেটটির।
৫২ বছর আগে ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ অভিযানের মাধ্যমে প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠায় নাসা। ওই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নিল আর্মস্ট্রং প্রথম চাঁদে পা রাখেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ১২ নভোচারী চাঁদে হাঁটতে সক্ষম হন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভিহিকেল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিং থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে লঞ্চিংপ্যাড কেনেডি স্পেস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় ৩৩২ ফুট লম্বা ৩৫ লাখ পাউন্ড ওজনের রকেটটিকে। পরীক্ষার সময়, রকেটের মূল অংশে মাত্র সাত সেকেন্ডে দেড় মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি শক্তি তৈরি করা গেছে।
গ্রিক দেবী আর্টেমিসের নামে রাখা এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য এসএলএস রকেটের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা। মহাকাশে অতি গতির ঘর্ষণ এবং তীব্র গরমের আঘাত সয়ে যেতে সাড়ে ১৬ ফুট পুরু তাপ-নিরোধক হিটশিল্ড রয়েছে এতে। ফলে এটি পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসার কঠিন যাত্রা সইতে পারবে।
নাসার পরিচালিত বাণিজ্যিক স্পেসফ্লাইট কোম্পানিগুলোর এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠানো হবে।
নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘মহাকাশ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চালাতে আর্টেমিস-ওয়ান সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি ক্রুসহ আর্টেমিস-টু পাঠানোর আগে পর্যাপ্ত তথ্য দেবে এটি। এ ছাড়া চাঁদে মানুষের অবস্থানের ক্ষমতা সম্প্রসারণেও আর্টেমিস-ওয়ান সহায়তা করবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবা ও করসংক্রান্ত ৭৪ হাজার কোটি ডলারের বিলটি সই করে আইনে পরিণত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এর মধ্য দিয়ে চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কৌশলগত বড় জয় হলো ডেমোক্রেটিক পার্টির।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে বিলটিতে সেই করেন বাইডেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট’ (মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন) নামের আইনটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
আইনটিতে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প উৎসগুলোতে ৩৭ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকার জনগণ জিতেছে এবং বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হেরেছে।
‘এ বিল জলবায়ু ইস্যুতে সব সময়ের জন্য এগিয়ে যাওয়ার বৃহত্তম পদক্ষেপ।’
আইনে ৭৪ হাজার কোটি ডলারের প্যাকেজের মধ্যে ৪৪ হাজার কোটি ডলার নতুন করে ব্যয় করা হবে। ৩০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হবে ঘাটতি কমাতে।
বিলটি পাস হওয়াকে কংগ্রেসে এখন পর্যন্ত বাইডেনের সবচেয়ে বড় জয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টির আশা, বিলটিকে আইনে পরিণত করার মধ্য দিয়ে মৌলিক প্রতিশ্রুতি পূরণে দলটি যে সক্ষম, সে বার্তা জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যে প্রাথমিক নির্বাচনে হেরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘চির শত্রু’ হিসেবে পরিচিত তারই দলের হয়ে কংগ্রেস সদস্য হওয়া লিজ চেনি।
স্থানীয় সময় বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নতুন ও ট্রাম্প সমর্থিত প্রার্থী হ্যারিয়েট হেগম্যানের কাছে পরাজিত হয়েছেন চেনি। নির্বাচনে তার এমন পরাজয়ে রাজনীতি হিসাব-নিকাশ অনেকটাই বদলে গেছে।
তিন মেয়াদে কংগ্রেস সদস্য থাকা চেনি একসময় উঠতি রিপাবলিকান তারকা ছিলেন। সাবেক ভাইসপ্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে তিনি। ট্রাম্পের বিদ্বেষের মুখে পড়া ১০ রিপাবলিকান নেতার শেষজন হলেন এই চেনি।
বিবিসি বলছে, গত বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর তাকে অভিশংসিত করার পক্ষে ভোটাভুটি হয়। সে সময় যে ১০ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ভোট দেন, এদের প্রত্যেককেই প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু হতে হয়।
এখন পর্যন্ত ওই ১০ জনের চারজন রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। আর চেনিসহ চারজন হেরেছেন ট্রাম্প সমর্থিত প্রার্থীর কাছেই।
তবে দুজন এখনও অবশ্য টিকে আছেন। প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে আগামী নির্বাচনের টিকিট পেয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন:সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডা এস্টেটের মার-এ-লাগোতে তল্লাশি চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অস্থিরতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো বুলেটিনে ট্রাম্প ইস্যুতে বাড়তে থাকা হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছে।
বুলেটিনে বলা হয়, ফ্লোরিডায় তল্লাশি পরোয়ানা কার্যকর করার পর এফবিআই ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সদস্য, বিচার বিভাগ ও সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংস হুমকির মাত্রা বেড়েছে। এমনকি এফবিআই সদর দপ্তরের সামনে বোমা পেতে রাখার হুমকিও রয়েছে।
বুলেটিনে মার-এ-লাগোতে তল্লাশিতে জড়িত কর্মকর্তাদের হত্যা, তল্লাশি পরোয়ানা অনুমোদনকারী বিচারকের প্রতি হুমকির মতো বিষয়ও রয়েছে।
এ ছাড়া বুলেটিনে ১১ আগস্টের একটির ঘটনার বিষয়েও বলা হয়েছে। সেই দিন এক ব্যক্তি এফবিআইয়ের সিনসিনাটি ফিল্ড অফিসে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেন।
দায়িত্বরত এফবিআই কর্মকর্তারা বাধা দিলে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যান এবং পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও এফবিআই এজেন্টদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বাসায় গত ৯ আগস্ট তল্লাশি চালিয়ে অতি গোপনীয়সহ মোট ১১টি নথি উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই)।
গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনসহ তিনটি অভিযোগে এই অভিযান চালানো হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য বলছেন, এই তল্লাশির উদ্দেশ্য রাজনৈতিক।
উদ্ধার হওয়া নথিগুলো কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। একটি তালিকা ‘টিএস/এসসিআই’ বা অতি গোপন/সংবেদনশীল তথ্যের জন্য সংরক্ষিত। এ নথির তালিকায় ‘অতি গোপন নথির চার সেট’, ‘গোপন নথির তিনটি সেট’ এবং ‘গোপনীয়’ নথির তিনটি সেট করা হয়েছে।
এফবিআইয়ের উদ্ধার করা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ২০টি বাক্স, ফটো বাইন্ডার, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট’ সম্পর্কে লেখা এবং ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক পরামর্শদাতা রজার স্টোনের পক্ষে লেখা একটি চিঠি।
তবে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক বিবৃতিতে বলেছেন, উদ্ধার হওয়া সবকিছু ‘শ্রেণিবদ্ধ’ এবং ‘নিরাপদে’ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এসব জিনিস জব্দ করার কিছু নেই। রাজনৈতিক নাটক না করে, বাসায় না তল্লাশি চালিয়েও এগুলো তারা নিতে পারতেন।
এফবিআইয়ের দাবি, ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় গোপনীয় কিছু নথি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগের দিকে এগোচ্ছে, এমন ধারণাই এখন স্পষ্ট।
এর আগে ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়র এবং ইভাঙ্কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
নানা নাটকীয়তার পর গত বছরের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়েন ট্রাম্প। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আবার লড়বেন বলে আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন:ভয়ঙ্কর হামলার পর হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসাধীন সালমান রুশদি। জটিল অস্ত্রোপচারের পর মাত্র কথা বলার সক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। এর মধ্যেও সহজাত ও অদম্য রসবোধ হারাননি আলোচিত এই ঔপন্যাসিক।
এক টুইটে রোববার এ কথা জানান রুশদির ছেলে জাফর রুশদি।
জাফর লিখেছেন, ‘আমার বাবা জীবন বদলে দেয়া আঘাত সহ্য করেছেন। তবু তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন।’
A family statement… @SalmanRushdie #SalmanRushdie pic.twitter.com/tMrAkoqliq
— Zafar Rushdie (@ZafRushdie) August 14, 2022
এর আগে লেখকের এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি জানিয়েছিলেন, সালমান রুশদির চিকিৎসা চলছে। সময় লাগবে সেরে উঠতে। কারণ আঘাতগুলো গুরুতর।
নিউ ইয়র্কে শুক্রবার সকালে এক অনুষ্ঠানে হামলার শিকার হন ৭৫ বছরের সালমান রুশদি। লেবানিজ বংশোদ্ভূত যুবক হাদি মাতার মঞ্চে উঠে তার ঘাড়ে ও পেটে ১০-১৫ বার ছুরি দিতে আঘাত করে। পরে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয় হাদিকে।
রুশদির ছেলে শুক্রবার এক টুইটে লিখেছিলেন, ‘হামলার পর আমার বাবা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
শনিবার রুশদিকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেয়ার পর জাফর বলেছিলেন, ‘স্বস্তি পাচ্ছি। বাবা কিছুটা কথা বলতে পেরেছেন।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়।
১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন এই লেখক। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস তার রুশদির চতুর্থ উপন্যাস। এই বই লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়।
পরাবাস্তববাদী ও উত্তর-আধুনিক এই উপন্যাসটি কিছু মুসলিমের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। ইরান ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে বইটি নিষিদ্ধও করা হয়। বইটি প্রকাশের এক বছর পর, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আহ্বান জানান । তার মাথার জন্য ৩০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন খোমেনি।
তারপরও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন রুশদি। এক পর্যায়ে ইরান সরকার সরে আসে খোমেনির ডিক্রি থেকে।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশনার পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ছিলেন উপন্যাসটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকও। রুশদির ব্রিটিশ এবং আমেরিকান নাগরিকত্ব রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে একজন সোচ্চার কণ্ঠ তিনি।
আরও পড়ুন:ছুরিকাঘাতের এক দিন পর ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি এখন কথা বলতে পারছেন।
হামলাস্থল নিউ ইয়র্কের চৌতাউকা ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট মাইকেল হিল এমনটি নিশ্চিত করেছেন।
টু্ইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘সালমান রুশদিকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং তিনি কথা বলছেন। সবার কাছে প্রার্থনার আবেদন রইল।’
শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে সালমান রুশদি হামলার শিকার হন এবং অস্ত্রোপচারের পর তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
রুশদির এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমকে স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে জানিয়েছিলেন, লেখক একটি চোখ হারাতে পারেন।
রুশদিকে ছুরিকাঘাত করা সন্দেহভাজন যুবক হাদি মাতারের নামে শনিবার হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
নিউ ইয়র্কের চৌতাউকা কাউন্টির প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, হামলাকারী হাদি মাতারকে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সব ধরনের জামিন বাতিল করা হয়েছে।
মাতারের বিরুদ্ধে একটি স্থানীয় শিক্ষাকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠান মঞ্চে দৌড়ে সালমান রুশদি এবং তার সাক্ষাৎকারকারীর ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত রুশদির অস্ত্রোপচারের পর তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। সেখানে লেখকের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল।
৭৫ বছর বয়সী সালমান রুশদি তার উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য বছরের পর বছর হত্যার হুমকি পেয়ে এসেছেন। বইটিকে অনেক মুসলমান ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা বলে মনে করেন।
চৌতাউকা ইনস্টিটিউশনে হামলার কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ থেকে মাতারকে আটক করা হয়।
হামলার পরদিন স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হয় তাকে। এ সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। সন্দেহভাজন হাদি মাতারের মুখে মাস্ক ও পরনে ছিল কারাগারের পোশাক।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেসন এসমিডট একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘এটি একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায় মাত্র।’
রুশদির ওপর হামলায় জড়িত অভিযোগে হাদি মাতারকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করে পুলিশ।
তার বইয়ের এজেন্ট এন্ড্রু ওয়াইলি জানিয়েছেন, সম্ভবত তিনি এক চোখ হারিয়েছেন। রুশদির অবস্থা ভালো নয়।
আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পুলিশের হাতে আটক হাদি মাতারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় হলেও তিনি নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ এলাকায় বসবাস করছিলেন।
হাদির জন্মের আগে তার বাবা-মা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ইয়ারুন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান। ইয়ারুন পৌরসভার প্রধান আলী কাসেম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লেবাননের সংবাদপত্র ডেইলি আন-নাহারকে তিনি বলেন, হাদির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, তিনি কখনও ইয়ারুনে আসেননি।
হাদির বিরুদ্ধে এখনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ বলছে, রুশদির অবস্থা দেখে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হবে হাদির বিরুদ্ধে।
হাদি মাতারের আগের রেকর্ড জানতে এবং হামলার উদ্দেশ্য বের করতে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহায়তা চেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।
নিউ ইয়র্ক পুলিশের মেজর ইউজিন স্ট্যানিসজেউস্কি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ছুরিকাঘাতের উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাদির অ্যাকাউন্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি শিয়া চরমপন্থা এবং ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রতি সহানুভূতিশীল।
হাদির ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়েও তথ্য পেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।
নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনের শুক্রবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় সালমান রুশদির ওপর হামলা চালান হাদি মাতার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রুশদিকে ২০ সেকেন্ডে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়। হামলার পর রুশদি তৎক্ষণাৎ মেঝেতে পড়ে যান। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে লেখককে ঘিরে ফেলেন। অনুষ্ঠানে আনুমানিক আড়াই হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘রুশদিকে মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয় এবং তিনি তার রক্তের ওপরই লুটিয়ে পড়েন।’
হামলায় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হেনরি রিসও মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছেন। রিস একটি অলাভজনক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা; যা নিপীড়নের হুমকির মধ্যে থাকা নির্বাসিত লেখকদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন এই লেখক।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস রুশদির চতুর্থ উপন্যাস। এই বই লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশনার পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ছিলেন উপন্যাসটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকও।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য