বিশ্বের সুউচ্চ ১৪টি পর্বতের চূড়া দুবার করে জয়ের রেকর্ড গড়েছেন নেপালি শেরপা সানু।
আট হাজার মিটার উচ্চতার বেশি এই ১৪টি চূড়ায় দুইবার করে উঠেছেন ৪৭ বছর বয়সী সানু শেরপা।
পূর্ব নেপালের সাংখুয়াসভা জেলার বাসিন্দা ৪৭ বছর বয়সী সানু বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের গাসেরব্রাম-টু শৃঙ্গে ওঠার মধ্য দিয়ে নতুন এ রেকর্ড গড়েন। ৮০৩৫ মিটার উচ্চতার এই পর্বতশৃঙ্গটি পৃথিবীর ১৩তম।
কাঠমাণ্ডুতে তার পর্বতারোহী প্রতিষ্ঠান পাইওনিয়ার অ্যাডভেঞ্চার এমনটি নিশ্চিত করেছে।
কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক নিভেশ কারকি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘শেরপা সানু হচ্ছেন বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৪টি সুউচ্চ পর্বতের চূড়া সফলভাবে দুবার করে চড়েন।’
সর্বোচ্চ আট হাজার ৮৪৮ মিটার উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের চূড়াসহ ১৪টি সুউচ্চ শৃঙ্গের মধ্যে ৮টি নেপালে, অন্য ৬টি পাকিস্তান ও চীনের তিব্বত অঞ্চলে অবস্থিত।
সংবাদমাধ্যম এভারেস্ট ক্রনিকলকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে শেরপা স্মরণ করেন কীভাবে তিনি পর্বতাভিযানের শুরুতে একজন সহযোগী (পোর্টার) হিসেবে কাজ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুধুই পর্বতারোহণ পছন্দ করি, পাহাড়ে থাকতে খুব ভালো লাগে।’
এভারেস্টসহ যেকোনো সুউচ্চ ও দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ জয় করার সময় পর্বতারোহীদের সঙ্গে থাকেন দক্ষ শেরপারা। অভিযাত্রীদের সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি তাদের পথ দেখিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার মহান দায়িত্ব পালন করে থাকেন এই শেরপারা।
স্থলভাগের হাজারো গলিপথের মতো শেরপাদের কাছে পর্বতের শৃঙ্গে পৌঁছে যাওয়ার অধিকাংশ পথই চেনা থাকে। পর্বতারোহীরা শৃঙ্গে পৌঁছে নিজ নিজ দেশের পতাকা পুঁতে দেন সেখানে। তবে শেরপারা সে তুলনায় যোগ্য সম্মান পাওয়া থেকে হন বঞ্চিত।
কিছু শেরপা থাকেন যাদের কাছে দুর্গম শৃঙ্গ জয় করাটা পেশার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
তেমনই আরেকজন শেরপা হলেন কামি রিটা। একবার-দুইবার নয়, এই নিয়ে ২৬ বার এভারেস্টের চূড়া জয় করে ফিরে আসেন তিনি।
৫২ বছরের কামি প্রথমবারের মতো ১৯৯৪ সালের ১৩ মে এভারেস্ট জয় করেন। এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই তিনি এভারেস্ট জয় করেন। কামির বাবাও ছিলেন একজন সুদক্ষ শেরপা।
আরও পড়ুন:ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) একটি নতুন রকেট (এসএসএলভি) উৎক্ষেপণ করেছে। অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্রের লঞ্চ প্যাড থেকে রোববার সকালে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। তবে অভিযানটি সফল হয়নি।
উৎক্ষেপণের ৬ ঘণ্টা পরই ইসরো কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে ‘এসএসএলভি-ডি ১’ তাদের বৃত্তাকার কক্ষপথের পরিবর্তে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে স্থাপন করায় উপগ্রহগুলো আর ব্যবহারযোগ্য নয়।
‘ইওএস ০২’ এবং ‘আজাদীস্যাট’ স্যাটেলাইটগুলোও এই ছোট স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেলে পাঠানো হয়েছিল। সফল উৎক্ষেপণ শেষে উভয় উপগ্রহকে তাদের নির্ধারিত কক্ষপথে আনার পর রকেটটি আলাদা হয়ে যায়। এরপর মিশন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলোতে উপগ্রহ থেকে তথ্য পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রাথমিক পর্বে ইসরো প্রধান এস. সোমনাথ বলেন, ‘মিশন কন্ট্রোল সেন্টার ইসরো ক্রমাগত ডেটা লিঙ্ক পাওয়ার চেষ্টা করছে। লিংক স্থাপিত হলেই আমরা জানাব।’
স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ৭৫০ জন স্কুল ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা ‘আজাদিস্যাট’ তৈরি করা হয়েছে। শ্রীহরিকোটার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে ‘এসএসএলভি ডি ১’ উৎক্ষেপণের সময় স্যাটেলাইটটির নকশা করা শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
রোববার বিকেল ৩টার দিকে ইসরো এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, এই মিশনের যে লক্ষ্য ছিল তা আর পূরণ করা সম্ভব হবে না। একাধিক টুইট করে এ বিষয়ে বার্তা দিয়েছে ভারতের এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
‘এসএসএলভি-ডি ১’ রকেটটি ৩৫৬ কিলোমিটার সার্কুলার কক্ষপথের পরিবর্তে ৩৫৬ কিলোমিটার x ৭৬ কিলোমিটার এলিপ্টিক্যাল কক্ষপথে পৌঁছে দিয়েছে স্যাটেলাইটগুলোকে। সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না। সেন্সরের ব্যর্থতা ধরতে না পেরে উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্যই এই কক্ষচ্যুতি ঘটেছে।
ইসরোর এই ক্ষুদ্রতম রকেট বা স্মল স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেলটি লম্বায় (এসএসএলভি) ৩৪ মিটার। এর ভেহিকেল ডায়ামিটারের দৈর্ঘ্য ২ মিটারের বেশি নয়।
ইসরোর সাবেক প্রধান ড. মাধবন নায়ার মিশনটিকে বেশ জটিল বলেই দাবি করেছিলেন। খুব অল্প সময়ে রকেটটি বানানো হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি। উৎক্ষেপণের তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে গিয়ে সবকিছু ভণ্ডুল হয়ে যায়।
এক-দু বছর নয়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পাকিস্তানে আটকে আছেন এক নারী। অথচ রান্নার চাকরি নিয়ে দুবাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। ভারতের এই অধিবাসীর ভাগ্যের পরিহাস রীতিমতো সিনেমার কাহিনিকেও হার মানিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে প্রকাশ্যে এসেছে হামিদা বানুর বয়ে বেড়ানো জীবনের নির্মম গল্প। এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তিনি। তবে স্বজনদের কাছে যেতে উদগ্রীব হলেও কাগজপত্রের জটিলতায় দ্রুতই হয়তো তার ফেরা হচ্ছে না।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে রোববার এ নিয়ে জানানো হয়েছে বিস্তারিত তথ্য।
২০০২ সালে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ভারত থেকে দুবাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল হামিদার। চুক্তি অনুযায়ী সে দেশে রান্নার চাকরি করতে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে অবৈধভাবে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
হামিদার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দুই দশক ধরে তাকে খুঁজছিলেন তারা। তবে কোনোভাবেই সন্ধান মিলছিল না। একপর্যায়ে তার সন্ধান মিলেছে। এর পেছনে আছেন ভারতের একজন ও পাকিস্তানের একজন।
সীমান্ত নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সংকট দীর্ঘদিনের। হুমকি-ধমকি আর উত্তেজনা ছড়ায় প্রায়ই। এই সংকট ছুঁয়েছে হামিদাকেও। সীমান্তের দ্বন্দ্ব তার দেশে ফেরার পথে বেশ জটিলতাও তৈরি করে।
তবে এই ভারতীয় নারীর জীবন একটা বাঁক নেয় গত জুলাইতে। ওয়ালিউল্লাহ মারুফ নামের পাকিস্তানের এক ব্যক্তি তার সাক্ষাৎকার নিয়ে তা আপলোড করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ওই ভিডিও শেয়ার করেন মুম্বাইয়ে বাস করা ভারতের সাংবাদিক খালফান শেখ। এরপর খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। অনেকেই শেয়ার করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত এর মাধ্যমেই হামিদার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।
ভারতের খালফান আর পাকিস্তানের ওয়ালিউল্লাহ মিলে আয়োজন করেন ভিডিও কলের। অবশেষে এর মাধ্যমেই ২০ বছর পর আবারও মেয়ে ইয়াসমিন শেখের সঙ্গে কথার বলার সুযোগ পান হামিদা বানু। ভার্চুয়াল এই মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে দেখাও হয় তাদের।
আবেগঘন ভিডিও কলে ইয়াসমিনকে বলতে শোনা যায়, ‘কেমন আছ? তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ? এত বছর কোথায় ছিলে?’
হামিদা বানু তখন এর উত্তরে শুধু এটুকুই বলছিলেন, ‘জানতে চেয়ো না, কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি। তোমাদের খুব মনে পড়ে। ইচ্ছা করে আমি এখানে আসিনি। আমার কোনো বিকল্প ছিল না।’
পাকিস্তানে ওয়ালিউল্লাকে দেয়া যে ভিডিওতে হাসিনা বানুর পরিচয় মিলেছে, তাতে তিনি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর ভারতে তার চার সন্তানকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছিলেন হামিদা। দোহা, কাতার, দুবাই এবং সৌদি আরবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই রান্নার কাজ করেছেন তিনি।
২০০২ সালে রাঁধুনির চাকরি নিয়ে দুবাইয়ে যেতে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন হামিদা। এ জন্য ২০ হাজার রুপি দিতে হয় তাকে।
ভিডিওতে হতভাগ্য এই নারী জানান, দুবাইয়ে নেয়ার কথা বলে পাকিস্তানের হায়দরাবাদে নেয়া হয় তাকে। এরপর একটি ঘরে তিন মাস ধরে আটকে রাখা হয়।
এর ক বছরের মাথায় করাচির এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় হামিদার। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে স্বামীর মৃত্যু হয়। এখন তার সৎ ছেলের সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি।
ইয়াসমিন জানান, আগে যখন তার মা অন্য দেশে ছিলেন, তখন মাঝেমধ্যেই ফোন করতেন। তবে শেষবার দেশ ছাড়ার পর আর ফোন করেননি। খবর না পেয়ে একপর্যায়ে তারা রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাতেও কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন যোগাযোগ করেছি, তখন বলা হয়েছে মা ভালো আছেন। তবে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান না। একদিন দেখি সেই এজেন্সিও আর নেই।’
হামিদার ভিডিও সাক্ষাৎকার নেয়া পাকিস্তানি ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘১৫ বছর আগে প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার সময় প্রথম হামিদা বানুর সঙ্গে দেখা হয় আমার। ছোটবেলা থেকে তাকে দেখছি। তাকে সব সময়ই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হয়।’
বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে পাকিস্তানে আছেন, এমন নারীদের সাহায্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু বছর ধরে চেষ্টা করেন ওয়ালিউল্লাহ। এ তথ্য জেনে স্বামীর মৃত্যুর পর হামিদা বানু ওয়ালিউল্লাহর মায়ের কাছে তার ফেরার ব্যাপারে সহায়তা করতে তাকে অনুরোধ করেন।
হামিদার কথা শুনে তার প্রতি সহানুভূতি আসে ওয়ালিউল্লাহর। তবে দমে যান ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের উষ্ণ সম্পর্কের কথা চিন্তা করে।
ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘ভারত থেকে দূরে থাকতে উপদেশ দিয়েছিল আমার এক বন্ধু। সে বলল, এটা ঝামেলা বাধাবে। তার জন্য খারাপই লাগতে লাগল।’
সাক্ষাৎকারে হামিদা তার মুম্বাইয়ের ঠিকানা এবং সন্তানের নাম বলেন। এতে তার স্বজনদের খুঁজে পাওয়াটা একটু সহজ হয়। ভিডিওটি একপর্যায়ে হামিদার নাতি অর্থাৎ ইয়াসমিনের ছেলে আমানের চোখে পড়ে।
ওয়ালিউল্লাহ জানিয়েছেন, ভিডিও দেখে পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে হামিদা বানুর বিস্তারিত জানিয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তবে কবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে তা এখনও অজানা।
সন্তানদের সঙ্গে আর কখনও দেখা হবে, দেশে ফিরতে পারবেন, এটা ভুলেই গিয়েছিলেন হামিদা। এখন অবশ্য কিছুটা আশা ফিরছে তার বুকে।
মেয়ে ইয়াসমিন বলছেন, ‘দেশ-সীমা সে যতই আলাদা হোক, আবেগটা আসলে একই। ২০ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:এক শতাংশ বাড়িয়ে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধার ঘোষণা দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
রাজধানী ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে রোববার সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে এ ঘোষণা দেন সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে চীন আরও ১ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সে কারণে এখন থেকে চীনের বাজারে ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পপণ্য রয়েছে।’
বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, ‘এক চীন’ নীতিতে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চীনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তাইওয়ানের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে ‘এক চীন’ নীতিতে অটল থাকায় ঢাকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বেইজিং।
চীনের প্রবল বিরোধিতার মুখেও গত মঙ্গলবার তাইওয়ান সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। নিজেদের অংশ মনে করা ভূখণ্ডে পেলোসির এ সফরকে ‘এক চীন’ নীতির প্রতি হুমকি হিসেবে দেখেছে বেইজিং। এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে তাইওয়ান ঘিরে সামরিক মহড়া শুরু করে চীন, যা শেষ হয় রোববার।
এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ সফরে আসেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই। আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে দুই দেশ চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে সই করে। এগুলো হলো পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতুর হস্তান্তর সনদ, দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, ২০২২-২৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অফ ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।
আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ওয়াং ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখান থেকে তিনি সরাসরি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান।
সকাল সাড়ে ১০টায় বিমানবন্দরে ওয়াং ইকে বিদায় জানান মোমেন।
দুই দিনের সফরে শনিবার বিকেলে ঢাকায় আসেন ই। কম্বোডিয়ার নমপেনে আসিয়ান সম্মেলনে থেকে সরাসরি ঢাকায় আসেন তিনি।
ঢাকা থেকে সরাসরি মঙ্গোলিয়ার উলানবাতোরে যাবেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে নাকাল শ্রীলঙ্কায় কমানো হয়েছে ডিজেল-পেট্রলসহ জ্বালানি তেলের দাম। সেই সঙ্গে গ্যাসের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
মূলত বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমার পর গত সপ্তাহে দেশটিতে ডিজেল-পেট্রলের দাম কমানো হয়েছে। আর সোমবার মধ্যরাত থেকে কমছে এলপিজির দাম।
জ্বালানির দাম কমানোর পর গত বৃহস্পতিবার থেকে শ্রীলঙ্কায় বাস ভাড়াও কমিয়েছে সরকার। এবার দেশটি নিত্যপণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম সিলন টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শ্রীলঙ্কায় বাস ভাড়া কমানোর কথা জানিয়েছেন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট কমিশন (এনটিসি)।
দেশটির জাতীয় পরিবহন কমিশনের মহাপরিচালক ড. নীলান মিরান্ডা বলেছেন, এনটিসি এবং পরিবহনমন্ত্রীর সুপারিশের পর দেশটিতে ন্যূনতম বাস ভাড়া ৩৪ রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের চেয়ে কমেছে ১১ শতাংশের বেশি।
এই সিদ্ধান্ত বেসরকারি খাতের বাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে দেশটি।
শ্রীলঙ্কা পেজের প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানির দাম কমানোর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অন্য খাতেও।
শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকারবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বলছে, সোমবার মধ্যরাত থেকে কমানো হবে এলপি গ্যাসের দাম। সেখানে সাড়ে ১২ কেজির এলপিজির দাম কমানো হবে ২০০ রুপি।
লিট্রো গ্যাস কোম্পানির চেয়ারম্যান মুদিতা পেইরিস বলেছেন, তাদের কাছে এখন পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত রয়েছে। এ ছাড়া যে পরিমাণ গ্যাস আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাতে আগামী তিন মাস কোনো সংকট হবে না।
এসব পণ্যের দাম কমানোর খবরে নিত্যপণ্যের দামও কমতে শুরু করেছে দেশটিতে। রাজধানী কলম্বোর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আলু, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, মরিচের মতো জিনিসপত্রের দাম এরই মধ্যে অনেকটা কমে এসেছে।
আরও পড়ুন:বিশ্বে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারক হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারতের অবস্থান। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা সরাসরি প্রভাব ফেলেছে দেশটির জ্বালানির দরে।
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ব বাজারে কমলেও বিশ্বে গত কয়েকমাসে দামের উর্ধ্বমুখী প্রবণতায় প্রভাব পড়েছে ভারতেও।
স্বস্তায় রাশিয়া থেকে ভারত জ্বালানি তেল আমদানি করলেও বিগত ছয় মাসে দাম উল্টো বেড়েছে।
দেশটিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি রুপির দাম পড়ে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে নাজেহাল সাধারণ ভারতীয়রা। ডলারের বিপরীতে রেকর্ড দাম কমেছে রুপির। ফলে দেশটিতে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ও গণপরিবহনে যাতায়াতের ভাড়া।
টানা চার মাস ধরে একটু একটু করে দাম বেড়ে এরই মধ্যে লিটারে ১০০ রুপি ছাড়িয়েছে পেট্রলের দাম, ১০০ ছুঁইছুঁই ডিজেলের দামও। যদিও গত ২ মাস যাবৎ পেট্রল ও ডিজেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবশেষ শনিবার কলকাতায় লিটার প্রতি পেট্রল ছিল ১০৬.০৩ রুপি ও ডিজেলের দাম ৯২.৭৬ রুপি। ইন্ডিয়ান ওয়েলের তরফ থেকে শনিবার সকাল ৭ টায় এই দাম জানানো হয়েছে।
ভারতের অন্যান্য শহরে আজকের জ্বালানি তেলের দাম দিল্লিতে লিটারে পেট্রল ৯৬.৭২ রুপি, ডিজেল ৮৯.৬২ রুপি। মুম্বাইতে পেট্রল ১০৬.৩ রুপি, ডিজেল ৯৪.২৭ রুপি। চেন্নাইতে পেট্রল ১০২.৩ রুপি, ডিজেল ৯৪.২৪ রুপি।
এদিকে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শুক্রবার সন্ধ্যার প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়। অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।
শতকরা হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ৫১ শতাংশ।
জ্বালানি তেলের বর্ধিত এ দাম কার্যকর হয় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। এর আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি তেল নিতে পেট্রল পাম্পে ভিড় জমান গাড়িচালকরা, তবে অনেক জায়গায় বন্ধ করে দেয়া হয় পেট্রল পাম্প।
আরও পড়ুন:ভারতের নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য শনিবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সংসদ ভবনে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স (এনডিএ) উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখরকে মনোনীত করেছে।
জগদীপের বিপরীতে বিরোধী দলের যৌথ প্রার্থী মার্গারেট আলভা। ৮০ বছর বয়সী আলভা কংগ্রেসের একজন সিনিয়র নেতা এবং রাজস্থানের রাজ্যপাল ছিলেন।
মার্গারেট আলভার নাম ঘোষণার আগে ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টার কথা উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস ভোট প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকার ঘোষণা দিয়ে কংগ্রেসকে ধাক্কা দিয়েছে।
একই সঙ্গে আলভাকে সমর্থন ঘোষণা করেছে টিআরএস, আম আদমি পার্টি এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএমও মার্গারেট আলভাকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছে।
এনডিএ প্রার্থী, জগদীপ ধনখর, শাসক জোটের বাইরে থাকা বিএসপি এবং এআইএডিএমকের সমর্থন পেয়েছেন। ওয়াই এস আর সি পি এবং বিজু জনতা দল উভয়েই ৫২ ভোট নিয়ে ধনখরের পক্ষে তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছে। উভয় দলই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন করেছিল।
সংসদের উভয় সদনের (লোকসভা ও রাজ্যসভা) ৭৮৮ জন এমপি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এদিনই ভোট গণনা হবে এবং সন্ধ্যার মধ্যে ভারতের নতুন উপরাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণা করা হবে।
উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে এম ভেঙ্কাইয়া নাইডুর মেয়াদ ১০ আগস্ট শেষ হবে এবং নতুন উপরাষ্ট্রপতি ১১ আগস্ট শপথ নেবেন।
আরও পড়ুন:অর্থনৈতিকসহ নানা সংকটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের সামনে আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী মিফতা ইসমাইল।
করাচিতে পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
মন্ত্রী বলেন, সরকার আগামী তিন মাসের জন্য পণ্য আমদানি বন্ধ রাখবে। এভাবে কোনো দেশ চলতে পারে না। পরিস্থিতি না বদল হলে পাকিস্তানে আরও খারাপ দিন আসতে চলেছে।
এই সংকটের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফকে দায়ী করেন মিফতা। বলেন, কোনো দেশ এত বেশি আর্থিক ঘাটতি নিয়ে উন্নতি করতে পারে না। শুধু রাজকোষ ঘাটতি নয়, ঋণের পরিমাণও ৮০ শতাংশ বেড়েছে।
পাক অর্থমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) আমলে দেশের বাজেট ঘাটতি ছিল ১৬০০ বিলিয়ন ডলার। গত চার বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৩৫০০ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থতিতে কোনো দেশই উঠে দাঁড়াতে পারে না। দেশের ঋণ যখন বাজেটের ৮০ শতাংশ হয় তখন কিছুই করার থাকে না।
মন্ত্রী বলেন, আমরা সঠিক পথে আছি, কিন্তু স্পষ্টতই খারাপ দিন দেখতে পাচ্ছি। আমরা যদি তিন মাসের জন্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করি তবে বিভিন্ন উপায়ে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে পারব।
অবশ্য পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বললেও বাস্তবে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে কমছে পাকিস্তানি রুপির দাম। তার ওপর আইএমএফের আর্থিক সাহায্য় পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
অর্থনৈতিকসহ নানা সংকটে পড়েছে এশিয়ার এই দেশ। রিজার্ভ কমে এসেছে। খাবার, জ্বালানি, বিদ্যুৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। বিলাসদ্রব্যের আমদানিতে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতির হুমকি দিয়েছেন। এ ছাড়া আটার দাম কমানোর পরামর্শ দিয়ে জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে নিজের জামা-কাপড় বিক্রি করে কম দামে আটা খাওয়াবেন।
বিভিন্ন নাটকীয়তার পর গত ৯ এপ্রিল মধ্যরাতের অনাস্থা ভোটে পাকিস্তানে ৬৯ বছর বয়সী ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান ঘটে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতা ইমরান দেশটির ২২তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
পরে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে আবার ভোটাভুটিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ। ক্ষমতায় এসেই নানা বিষয়ে ইমরান খানের ওপর দায় চাপিয়েছেন তিনি।
দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ শরিফ অভিশংসিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে চার দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান। তার সরকারের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য