শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারকে লক্ষ্য করে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে তারা ভারতবিরোধী স্লোগানও দেন।
বিক্ষোভের সময় নিয়মিতই শোনা যায় ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশকে বেচে দিও না’, ‘ভারত: শ্রীলঙ্কা দূরের রাষ্ট্র নয়’, ‘শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির সুযোগ নিও না ভারত’ ধরনের স্লোগান।
ভারতবিরোধী এমন মনোভাব এখনও আছে শ্রীলঙ্কানদের মধ্যে, তবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত দেশটিতে ভারতবিরোধী অবস্থানে পরিবর্তন আসতে পারে।
গভীর ও নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, যা দেশটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ উসকে দিয়েছে। সে বিক্ষোভের জেরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে পদত্যাগ করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া।
বছর বছর ঋণের বোঝা ভারী করেছে শ্রীলঙ্কা। এ পর্যায়ে এসে দেশটি খাদ্য, জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা পরিস্থিতির জন্য গত সপ্তাহে পালিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়া গোতাবায়া ও তার পরিবারকে দায়ী করে আসছেন। এমন বাস্তবতায় বুধবার রনিল বিক্রমাসিংহকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছেন শ্রীলঙ্কার আইনপ্রণেতারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারতের উপস্থিতিকে সবসময় সন্দেহের চোখে দেখেছে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিকদের একাংশ। সিংহলি জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থি দলগুলোর বেশির ভাগ বিগত বছরগুলোতে বেশ কিছু ভারতবিরোধী বিক্ষোভ করেছে, তবে কয়েক মাস আগে শ্রীলঙ্কা গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে।
বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রতিবেশী দেশটিতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের আর্থিক সহায়তা চায় শ্রীলঙ্কা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো দেশ কিংবা প্রতিষ্ঠান ভারতের মতো সহায়তা করেনি দ্বীপরাষ্ট্রটিকে। যদিও বিপদে পড়া শ্রীলঙ্কাকে বরাবরই সাহায্য করেছে ভারত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ১৫ বছর ধরে ঋণ ও অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থ সহায়তার মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কায় অনুপ্রবেশ করেছে চীন।
আর্থিক সহায়তার জন্য মরিয়া অবস্থা দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশটিতে প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে দিল্লিকে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দল সমাজি জনা বালাউইগায়ার নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বিবিসিকে বলেন, ‘ভারত বিশেষত সংকটময় এ মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশ হিসেবে আমরা বড় ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে গেছি এবং ভারত সামনে এসে আমাদের সাহায্য করেছে।’
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক বন্ধন শত শত বছরের। কলম্বোর বাণিজ্যের বড় অংশীদার দিল্লি।
শ্রীলঙ্কা থেকে খাদ্যপণ্যের মতো অনেক ধরনের সামগ্রী আমদানি করে ভারত। দ্বীপরাষ্ট্রটির সংখ্যালঘু তামিল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর জনগণের গভীর সাংস্কৃতিক ও গোষ্ঠীগত বন্ধন রয়েছে।
২০০৫ সালে মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ভারতীয় বলয় থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে শ্রীলঙ্কা। তার দ্বিতীয় মেয়াদে বিষয়টি আরও পোক্ত হয়। সে সময় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে চীনের সঙ্গে বেশ কিছু চুক্তি হয় শ্রীলঙ্কার। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হাম্বানটোটায় বন্দর নির্মাণ।
নথি ঘেঁটে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দিয়েছে চীন, যা দ্বীপরাষ্ট্রটির বৈদেশিক ঋণের প্রায় ১০ শতাংশ।
জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে শ্রীলঙ্কা যখন আরও ঋণ চাইছে, চীন তখন নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। বিপরীতে ঋণ ও মুদ্রাবিনিময় বাবদ প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কাকে দিয়েছে ভারত।
নমনীয় ঋণের অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অতি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি তেল, খাদ্য ও সারের বেশ কিছু চালান শ্রীলঙ্কায় পাঠিয়েছে ভারত।
কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের নেতৃত্বাধীন তামিলনাড়ু সরকার শ্রীলঙ্কায় খাদ্য ও ওষুধের চালান পাঠিয়েছে। তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দলগুলো মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক আহ্বান করতে দিল্লিকে তাগিদ দেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দেয়ার মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার জনগণের মনোভাবে পরিবর্তন আনছে ভারত।
শ্রীলঙ্কার বেসরকারি খাতের কর্মী তিরোন্নি সেবাস্তিয়ান বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের কাছে জ্বালানি তেল ও খাদ্য পাঠিয়ে ভারত সময়োচিত সহায়তা দিয়েছে। ভারতের সহায়তা ছাড়া শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি আরও কঠিন হতো।’
লঙ্কান সমাজকর্মী মেলানি গুনাতিলক বলেন, অবাক করা সংহতি ও সমর্থনের জন্য ভারতের জনগণের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ।
বিপদে শ্রীলঙ্কাকে ভারতের অর্থ সহায়তা দেয়ার কৌশলগত তাৎপর্যও রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। একে ভারতের উদ্দেশ্য সাধনের কৌশল হিসেবে দেখছেন তারা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের প্রথম দিককার ঋণ ঘোষণার সময় দুই দেশ শ্রীলঙ্কার ত্রিনকোমালি পোতাশ্রয়ে নির্মিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ৬১টি বিশাল তেলের ট্যাংক যৌথভাবে পরিচালনায় সম্মত হয়। গত ৩০ বছর ধরে ভারত ব্রিটিশ আমলের তেলক্ষেত্রগুলোতে প্রবেশাধিকার চাইছিল।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রুপ কৌশলগত কলম্বো বন্দরের পশ্চিম কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার সিংহভাগ দায়িত্ব পায়।
ভারতের স্বার্থের বিষয়ে শ্রীলঙ্কার বামপন্থি দল ন্যাশনাল পিপল’স পাওয়ার অ্যালায়েন্সের এমপি হরিণী অমরাসুরিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘বিনিময় ছাড়া কোনো দেশ আমাদের সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি না। ভারত অবশ্যই তাদের স্বার্থ খুঁজবে।’
অমরসুরিয়ার ভাষ্য, ভারতের মতো শ্রীলঙ্কারও নিজেদের সর্বোচ্চ স্বার্থ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। দ্বীপরাষ্ট্রকে নিজেদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত জায়গাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে কি না, সেটাও দেখার বিষয়।
বিশ্লেষকদের মতে, শ্রীলঙ্কার জাতিগত সংখ্যালঘু তামিল ও তাদের অধিকারের দাবি ভারতের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক দর-কষাকষিতে প্রভাব ফেলবে।
আশির দশকে শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহীদের অনেক পক্ষ ভারতে আশ্রয় নেয়ায় কূটনৈতিক সম্পর্ক তিক্ত হয়। দিল্লি শ্রীলঙ্কায় তামিলদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র চাওয়া বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেয় বলে অভিযোগ করে কলম্বো।
২০০৯ সালের মে মাসে তামিল বিদ্রোহীদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। যুদ্ধের সময় শ্রীলঙ্কা সরকারের পক্ষে ছিল ভারত।
এর আগে ১৯৮৭ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কা শান্তিচুক্তি করে, যাতে তামিল অধ্যুষিত লঙ্কার সব প্রদেশকে নিজস্ব কিছু ক্ষমতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু সে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখনও করেনি শ্রীলঙ্কা।
এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার এমপি অমরাসুরিয়া বলেন, ‘অতীতে এ বিষয়ে সবসময় দুশ্চিন্তা ছিল যে, ভারত রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।’
বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটে ভারতকে নিয়ে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক উদ্বেগ থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এরই মধ্যে বেশ কিছু লঙ্কান, বিশেষত তামিল সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা প্রতিবেশী ভারতের তামিলনাড়ুতে আশ্রয় চেয়েছেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যাটা বাড়তে পারে।
শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলিম সম্প্রদায় সবসময়ই সংকটে এবং সম-অধিকার ইস্যুতে ভারতের দ্বারস্থ হয়েছে। অতীতের তিক্ততার পরও সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি জনগোষ্ঠীর লোকজন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতের সাহায্যের প্রশংসা করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মী মোহাম্মদ সুফিয়ান বলেন, ‘লঙ্কা-ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন এখনও কিছু (জ্বালানি) সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে, যা দিয়ে আমরা টিকে আছি।
‘ভারত এগিয়ে না এলে দেশজুড়ে আমাদের জ্বালানি তেলের স্টেশনগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেত।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত করার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ঘিরে রোনেন বারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরায়েল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইএসএ পরিচালক রোনেন বারকে বরখাস্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোনেন বারের উত্তরসূরি নিযুক্ত হওয়ার পর অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এর আগে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, তার ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। তাকে এ পদে রাখা যাবে না। তাই বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বার ১৯৯৩ সালে শিন বেতে যোগ দিয়েছিলেন।
বারের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার শিন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এক বছর আগেই তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করল।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা চালানোর আগে থেকেই রোনেন বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত ৪ মার্চ হামাসের হামলার ওপর শিন বেতের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফিলিপাইন সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হংকং থেকে দেশে আসার পর আইসিসির নির্দেশে পুলিশ দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের চালানো অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।
আইসিসি দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাওয়ের মেয়র থাকার সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
দুতার্তে প্রশাসন ২০২১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। আইসিসির আদালত হলো সর্বশেষ অবলম্বন।
আইসিসির আর বিচার করার এখতিয়ার নেই—এমন যুক্তি দিয়ে সে সময় তার প্রশাসন বলেছিল, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন‘ নামের একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের গাজা নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও পরিকল্পনার কারণে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের সমর্থকরা। এরই জেরে এ হামলা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনের সদস্যরা।
টার্নবেরি রিসোর্টটি ভাঙচুর করার পাশাপাশি রিসোর্টের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। রিসোর্টের সবুজ মাঠে লাল রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’।
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, ট্রাম্প গাজাকে নিজের সম্পত্তির মতো মনে করে, যা খুশি তাই করতে পারে না। তারই প্রতিবাদ এটা।
তারা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রতিরোধ থেকে তার নিজের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনিনের এই হামলাকে ট্রাম্প ‘শিশুসুলভ, অপরাধমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ ঢেলে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ উদ্যোগ পৌঁছেছে ইরানের দ্বারপ্রান্তেও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় না বসলে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছি, আশা করি আপনি আলোচনায় বসবেন। কারণ, এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় তেহরানের কল্যাণে সমঝোতাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
যদিও ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নয় তারা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ট্রাম্পের চিটি পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি শুক্রবার এএফপিকে বলেন, শক্তি প্রয়োগ করলে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
আরও পড়ুন:ইরান ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াবে চীন।
নতুন টার্মিনাল ও জাহাজ চালু হওয়ায় মার্চ থেকে চীন তেল আমদানি বৃদ্ধি করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সত্ত্বেও চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অয়েল প্রাইস’ নামের ওয়েবসাইট।
অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শনিবার এ খবর জানায়।
কয়েকজন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানান, চীন তেল ট্যাংকারগুলোতে পরিবর্তন এনেছে যাতে সেগুলো আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। এর ফলে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে বেইজিং। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই দুই দেশ থেকে চীন বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে। এ আমদানি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা চীনা তেল ট্যাংকারগুলো এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহার কাউন্টিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের সদরদপ্তরে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জয়শুল আজল।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন তৈরি এবং হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এ খবর জানায়।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের দপ্তরে সাউন্ড বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে।
প্রাদেশিক প্রসিকিউটর মেহদি শামসাবাদি জানান, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তিনি জানান, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলো এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিস্ফোরণে ভবনটির একাংশের ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশে বিগত বছরগুলোতে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় অনেকবার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যেসব গোষ্ঠী এসব হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের তাফতান কাউন্টির গোহার কুহ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই হামলারও দায় এ সংগঠন স্বীকার করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য