ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করতে চায় বলে সোমবার পার্লামেন্টকে জানিয়েছে সরকার।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট বাজার ভারতে নতুন একটি ডিজিটাল সম্পদ হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়গুলোতে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করে এমন কথা জানানো হয়েছে।
প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্র্যাঞ্চের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সোমবার ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ‘একটি দেশের আর্থিক এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রভাব’ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে এই খাতে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন তিনি।
সীতারমণ বলেন, ‘আইবিআই মনে করে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করা উচিত।’
সে সঙ্গে তিনি বলেছেন, ক্রিপ্টোর জন্য আইন প্রণয়নে প্রয়োজন হবে ‘উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।’
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ভারতের নিম্নকক্ষ লোকসভার সংসদ সদস্য থোলকাপিয়ান থিরুমাবলাভানের একগুচ্ছ প্রশ্নের জবাবে সরকার তাদের পক্ষ থেকে এসব যুক্তি দিয়েছে।
সীতারমণ বলেন, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির সংজ্ঞা অনুসারে সীমানাহীন এবং নিয়ন্ত্রক সালিশ রোধ করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন। তাই নিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞার জন্য যেকোনো আইন শুধুমাত্র ঝুঁকি ও সুবিধার মূল্যায়ন। সেই সঙ্গে অভিন্ন শ্রেণিবিন্যাস ও মানদণ্ডের বিবর্তনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরেই এটি কার্যকর থাকতে পারে।’
ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বোর্ড, রেগুলেটর বডি, ট্রেজারি অফিস এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ভারতের অন্তত ২০টি অর্থনৈতিক গ্রুপ চলতি মাসের শুরুর দিকে এই বছরের অক্টোবরের মধ্যে একটি শক্তিশালী আইনের প্রস্তাব করে।
সীতারমণের এসব মন্তব্যের পর দেশটিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আরও বড় চ্যালেঞ্জ দেখা যাবে বলে বলছেন অনেকেই।
বছরের শুরুতে ক্রিপ্টো ট্রেডিং সম্পর্কিত কর লেনদেন এবং মুনাফার বিষয়ে ভারতের পদক্ষেপকে ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্রুত বর্ধনশীল নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে শুরু করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, ভারতীয় ব্যাংকগুলো শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের ভিন্ন ধরনের সংকেত পাঠায়।
ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান আর্মস্ট্রং, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ‘অনানুষ্ঠানিক চাপের’ কারণে এই বছরের শুরুতে কয়েনবেস ভারতে ট্রেডিং পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। স্থানীয় কর আইনের কারণে স্থানীয় এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য ক্রিপ্টো সংস্থাগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রেডিংয়ের পরিমাণ খুব কমে গেছে।
এর আগে ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া, ১৮ বছর বয়সী লবি গ্রুপ ক্রিপ্টোর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে এই খাতে অনেকটাই অনিশ্চিয়তা শুরু হয়। যার সবশেষ প্রতিফলন ভারতের পার্লামেন্টে দেখা গেল।
আরও পড়ুন:শ্রীলঙ্কা বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘পাবলিক ইউটিলিটি কমিশন অব শ্রীলঙ্কা’ (পিইউসিএসএল) বিদ্যুতের দাম ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে।
পিইউসিএসএল চেয়ারম্যান জনকা রথনায়েক বুধবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘৯ বছরে সব পণ্য এবং পরিষেবার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা তিন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির খরচ বেড়েছে আড়াইশ শতাংশের বেশি।
‘আমরা বিদ্যুতের হার স্থিতিশীল রাখতে পেরেছি। ৯ বছরে এক মেট্রিক টন কয়লার দাম ১৪৩ ডলার থেকে বেড়ে ৩২১ ডলার হয়েছে। লঙ্কান মুদ্রায় তা বেড়েছে ৫৫০ শতাংশ। এক লিটার ডিজেলের দাম ১২১ থেকে ৪৩০ রুপি (শ্রীলঙ্কান মুদ্রা) হয়েছে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ ২৫৫ শতাংশ। এক লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ২০১৩ সালে ছিল ৯০ রুপি। যা এখন মিলছে ৪১০ রুপিতে।
রথনায়েক বলেন, ‘নতুন শুল্ক সংশোধনের পরও ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যদিও সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের দাবি, সামগ্রিক খরচের ওপর মাসিক ফি নেয়া অন্যায্য।
‘তাই পিইউসিএসএল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের মোট খরচ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ বাদ দিয়ে নেট খরচের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট চার্জ নির্ধারণ করা হবে।
‘এসব বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।’
এর আগে গত ৪ আগস্ট ডিজেল ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য এলপি গ্যাসের দাম কমায় শ্রীলঙ্কা সরকার। তার এক সপ্তাহের মাথায়ই বিদ্যুতের দাম ৭৫ শতাংশ বাড়াল রনিল বিক্রমাসিংহ নেতৃত্বাধীন সরকার।
আরও পড়ুন:পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলা ডলারের দৌড় থামাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও কমছে না মুদ্রাটির তেজি ভাব, কাটছে না সংকট।
ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে কয়েক মাস ধরে। বেড়েই চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। কমছে টাকার মান। দুই মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ মাস ৮ দিনে (১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট) বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ১৫০ কোটি (দেড় বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবারও রাষ্টায়ত্ত জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন সংস্থা বাংলাাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তেল আমদানি এবং বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খুলতে ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
এ হিসাবে এই ১ মাস ৮ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৪ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনোই এত কম সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে এত বেশি ডলার বিক্রি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি উল্লম্ফন ও আমদানি ব্যয় কমায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই চাহিদা পূরণের জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার ছাড়া হচ্ছে। আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ এটি। যখন বাজারে ডলারের ঘাটতি দেখা দেবে তখন ডলার বিক্রি করা হবে। আবার যখন সরবরাহ বেশি হবে তখন কেনা হবে।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে, এখন বেশি বিক্রি করা হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তাণ্ডবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব দেশের মতো আমাদেরও আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সে কারণেই বেশি ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। রিজার্ভের ওপরও চাপ পড়ছে।
‘তবে সুখের খবর হচ্ছে, আমদানি কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্সও বাড়ছে। শিগগিরই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
এদিকে কিছুদিন ‘স্থির’ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা।
এর আগে সবশেষ ২৫ জুলাই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
অন্যদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে সোমবার ডলারের দর উঠেছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা।
ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও বেশি দামে বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এসআইবিএল থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক সোমবার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়। জনতা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা। আর সোনালী ব্যাংক নিয়েছে ১০২ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ শতাংশের মতো। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১২ শতাংশ।
খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, ব্যাংকগুলোতে তার চেয়ে ৭ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০৫ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেক ব্যাংক ১১০ টাকা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
এদিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক। সোমবার ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লেখা চিঠিতে এই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনার পর এবার ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার
ডলার বিক্রির কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসের ৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
১২ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির ফলে আরও কমে গেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর বেনাপোল বন্দরে ট্রাক ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সংকটও দেখা দিয়েছে।
এভাবে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে গিয়ে আমদানিকারক, পরিবহন এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আমদানিকারকরা জানান, তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্রাকমালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। আগে বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৮ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা। এখন সে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
এমন অবস্থায় ট্রাক সংকটে অনেকে আমদানি পণ্যের শুল্ক পরিশোধ করেও বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারছেন না বলে জানান তারা।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের রোজ ট্রেডিং নামের আমদানিকারক ফায়জুর রহমান বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্টিং কালি ভারত থেকে আসে। তার কয়েকটি পণ্যের চালান গত সপ্তাহে বেনাপোল বন্দরে এসেছে। কাস্টমস বন্দরের সব কার্যক্রমও শেষ। সোমবার ট্রাক ভাড়া করতে গেলে ভাড়া এক লাফে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হয়। অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ার কারণে তিনি পণ্য ফ্যাক্টরিতে নিতে পারছেন না।
একই কথা জানান ঢাকার মগবাজারের মাইশা ট্রেডিং নামের আমদানিকারক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ায় আমদানি করা কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে নিলে লাভ তো দূরে থাক, আসলও উঠবে না।’
যশোরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিপন অটোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, ‘গত মাসেও আমরা বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকায় ট্রাকে করে পণ্য এনেছি। কিন্তু গতকাল থেকে সেই ট্রাক ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ১২ হাজার টাকা। এতে লোকসানের শিকার হতে হবে। কেননা প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানো যায় না।’
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, ‘তেলের দাম বাড়লে তো ট্রাক ভাড়া বাড়বে। সেটি গত শনিবার থেকেই নেয়া হচ্ছে। বর্তমান বাড়তি তেলে কমপক্ষে একটি ট্রাকে ১০ হাজার টাকা তেল বেশি লাগবে। সে কারণে বেনাপোল বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে।’
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, ‘আগে বেনাপোল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৮ থেকে ২৩ হাজারের মধ্যে। একই ট্রাকের ভাড়া এখন বেড়ে হয়েছে ২৮ থেকে ৩২ হাজার টাকা।
‘একইভাবে কাভার্ডভ্যানের ভাড়া ২৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এত বেশি ভাড়া দেয়া সত্ত্বেও ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মিলছে না। ফলে পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘পরিবহন সংকটের জন্য ট্রাক ভাড়া এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। কাঁচা পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পণ্য খালাস করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন স্বাভাবিক সময়ে সাড়ে ৩০০ ট্রাকে পণ্য আমদানি ও আড়াই শ ট্রাকে পণ্য রপ্তানি হয়। গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এসব পণ্য ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে পরিবহন করা হয়। তেলের দাম বাড়ায় বেনাপোল থেকে ট্রাক ভাড়া ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে সমস্যায় পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের।’
যশোর চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘জ্বালানি তেলের সঙ্গে পরিবহনের সম্পর্ক। তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে ট্রাকের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শিল্পের ওপর চাপ পড়বে। খরচ বেড়ে যাবে, যা সবশেষ ভোক্তার ওপর গিয়ে পড়বে।’
আরও পড়ুন:প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক।
দেশি পাঁচ ব্যাংক হচ্ছে- ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ও সাউথইস্ট ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সোমবার রাতে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘ট্রেজারি অপারেশনে অতিরিক্ত মুনাফা করায় পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় জরুরিভিত্তিতে ওই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণ করতে সোমবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
এদিকে কিছুদিন ‘স্থির’ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা।
এর আগে সবশেষ ২৫ জুলাই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
অন্যদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে সোমবার ডলারের দর উঠেছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা।
ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও বেশি দামে বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এসআইবিএল থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক সোমবার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়। জনতা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা। আর সোনালী ব্যাংক নিয়েছে ১০২ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে টাকা-ডলার বিনিময় হার ঠিক হয়ে থাকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী। সোমবার ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৯৫ টাকা। আর এটাই আজকের আন্তব্যাংক দর।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ শতাংশের মতো। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১২ শতাংশ।
খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, ব্যাংকগুলোতে তার চেয়ে ৭ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০৫ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেক ব্যাংক ১১০ টাকা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
আরও পড়ুন:চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শনের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি বিভাগ থেকে এক সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ বা অফশোর ট্যাপ অ্যামনেস্টি বিধান সংক্রান্ত বিধিবিধান শাখা পর্যায়ে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি গ্রাহকদের মধ্যে তা বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।’
চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থ আইনের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা যুক্ত করে সরকার করদাতাদের বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ আয়কর রিটার্নের মাধ্যমে প্রদর্শনের সুযোগ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, করদাতারা তাদের বিদেশে থাকা নগদ টাকা, ব্যাংকের আমানত, যেকোনো ধরনের ব্যাংক নোট এবং কনভার্টেবল সিকিউরিটিজ বা ইনস্ট্রুমেন্ট দেশের আয়কর রিটার্নে বিনা প্রশ্নে দেখাতে পারবেন। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এসব অর্থ দেশে আনতে হবে। এজন্য তাদের ঘোষিত অর্থের ৭ শতাংশ কর দিতে হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অর্থবছর কার্যকর হওয়ার শুরুর দিন ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত কেউ অবশ্য এ সুযোগ নেননি।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র ২ হাজার ৩১১ জন করদাতা ঘোষণা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করেছেন। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ১ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর হিসেবে পেয়েছে ১১৬ কোটি টাকার কিছু বেশি।
আরও পড়ুন:বেশ কিছুদিন স্থির থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা।
এর আগে সবশেষ ২৫ জুলাই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে টাকা-ডলার বিনিময় হার ঠিক হয়ে থাকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী। সোমবার ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৯৫ টাকা। আর এটাই আজকের আন্তব্যাংক দর।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এদিকে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে আরও চড়া দামে। সোমবার খোলাবাজারে ডলারের দর ১১৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, ব্যাংকগুলোতে তার চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০১ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক প্রতি ডলারে ১০০ টাকা দিয়েও প্রবাসী আয় পাচ্ছে না।
বাজার ‘স্থিতিশীল’ করতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন:সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পরিদর্শনের নামে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের প্লাস্টিক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা।
সোমবার মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে প্লাস্টিক, রাবার, মেলামাইন ও পিভিসি পণ্য বিষয়ক এফবিসিসিআই’র স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বৈঠকে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিদুর্ঘটনার পর থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে না। এর ফলে সব আইনি শর্ত মেনে চলা বৈধ কারখানাগুলোও অবৈধ হয়ে পড়ছে।
আর এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলো পরিদর্শন ও অভিযানের নামে বিভিন্ন কারখানাকে জরিমানা ও মামলা করছে। এভাবে হয়রানির শিকার হয়ে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে প্লাস্টিক পল্লী স্থাপনের কথা থাকলেও এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তাই পুরান ঢাকার কারখানাগুলো স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হয়নি। প্লাস্টিক পল্লী স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়নের দাবি জানান তারা।
বৈঠকে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘দেশে কর্মসংস্থান, রপ্তানি আয় ও শিল্পায়নের বিকেন্দ্রীকরণে ভূমিকা রাখছে প্লাস্টিক শিল্প। ২০২৩ সাল নাগাদ মহামন্দার বৈশ্বিক পূর্বাভাস রয়েছে। এই মন্দা মোকাবিলা করতে হলে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। সেজন্য প্লাস্টিক খাতের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’
এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী জানান, রপ্তানি বাড়াতে ভারতের কলকাতা, গুয়াহাটি ও ত্রিপুরায় তিনটি মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে এফবিসিসিআই। এসব মেলায় প্লাস্টিক, মেলামাইনসহ এ খাতের সম্ভাবনায় পণ্যগুলো প্রদর্শনী করা যেতে পারে। ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশি এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ আবু মোতালেব বলেন, ‘প্লাস্টিক খাত শুরু থেকেই নানা ষড়যন্ত্রের শিকার। তা এখনো চলছে। এ খাতের কর সংক্রান্ত সমস্যা, পরিবেশ বিষয়ক সমস্যা সমাধানে স্ট্যান্ডিং কমিটি কাজ করবে।’
শিল্প কারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধব উপায়ে পণ্য উৎপাদনের আহ্বান জানান তিনি।
কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লাস্টিক খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারলে বিশ্ববাজারের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে।
‘প্লাস্টিক পণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার ৬০০ বিলিয়ন ডলার। অথচ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাত থেকে দেশ আয় করে মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। দেশে প্লাস্টিক খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। তাই রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার খোঁজা জরুরি।
‘দেশে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্যের বাজার রয়েছে। প্রতিবছর ২০ শতাংশ করে এ বাজার বাড়ছে। তাই এ শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’
প্লাস্টিক পণ্যের সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে এ শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী।
প্লাস্টিক শিল্পে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধের দাবি জানান পরিচালক হাফেজ হারুন।
এফবিসিসিআইর পরিচালক মোহাম্মেদ বজলুর রহমান প্লাস্টিক শিল্পের সমস্যাগুলো এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানান।
মুক্ত আলোচনায় মেলামাইন পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকরা জানান, নেপালে বাংলাদেশি মেলামাইন পণ্য রপ্তানিতে ৩৫ শতাংশ শুল্ক গুনতে হয়। বিপরীতে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ১০ শতাংশ। ভারতের মতো বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক কমিয়ে আনতে পারলে নেপালে মেলামাইন পণ্য রপ্তানি করে বিপুল বিদেশি মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
এছাড়াও কমিটির সদস্যরা পিভিসি খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাতিল করে ৩ শতাংশ পুনর্বহাল, প্যাকেজ ভ্যাট আরোপ, রাবার পণ্যকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, খেলনা তৈরির খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে আলাদা এইচএস কোড নির্ধারণের দাবি জানান।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম (মিন্টু), মো. আবুল খায়ের, নাজমুল হোসাইন, এফবিসিসিআই’র উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ এবং কমিটির অন্যান্য সদস্য।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য