ক্ষমতা নেয়ার ১৮ মাসের মাথায় মধ্যপ্রাচ্য সফর করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এ সফর শুরু হয়েছে গত বুধবার। চার দিনের সফরে তিনি প্রথমে যান ইসরায়েলে। এরপর গেছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে। সৌদি আরবও সফর করেছেন বাইডেন।
শুরু থেকেই তার এই সফর নিয়ে নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছিল। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইডেন দূরত্ব বজায় রেখে ওইসব দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং হাতও মেলাবেন না।
তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকের যেসব ছবি সামনে এসেছে তাতে হোয়াইট হাউসের এ বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
জেদ্দায় সৌদি যুবরাজের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় বাইডেনকে বেশ উৎফুল্ল দেখা গেছে ছবিতে।
বাইডেনের এ সফর নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। তার দেশেরই অনেকে বলছেন, প্রেসিডেন্ট তার নীতির সঙ্গে আপস করেছেন।
কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারদের অন্যতম রিয়াদ। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে-পরে বাইডেনের অঙ্গীকারের সঙ্গে তার এই সফরের কোনো সামঞ্জস্য নেই বলে মনে করছেন অনেকে।
ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে জো বাইডেন ক্ষুব্ধ ছিলেন। এরপর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যা নিয়েও তিনি যুবরাজ সালমান এবং সৌদি রাজপরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
এর আগে ২০১৮ সালে তুরস্কের আঙ্কারায় ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যার পেছনে সৌদি যুবরাজের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র।
খাশোগজির হত্যার পর নির্বাচনি প্রচারে বাইডেন বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি সৌদি শাসকদের ‘একঘরে’ করে ছাড়বেন।
এরপর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়েও তিনি সৌদি যুবরাজের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে অস্বীকার করেন। পরে অবশ্য সৌদি বাদশাহ অসুস্থ হলে বাইডেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ক্ষমতা নেয়ার ১৮ মাসের মাথায় এসে বাইডেন কেন উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছেন, তা নিয়ে চলছে জোর বিতর্ক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে প্রধান কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
সফরের আগে মত বদলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন বাইডেন। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এক নিবন্ধও লিখেছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসনের পাল্টা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমাদের শক্ত অবস্থান প্রয়োজন। এ কারণে সেসব দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করতে হবে, যারা আমাদের সাহায্য করতে পারে। সৌদি আরব তেমনই একটি দেশ।’
এরপর শুক্রবার দুই নেতা বৈঠক করেন। তবে বৈঠকে বাইডেন ফের খাশোগজি হত্যার বিষয়টি তোলেন।
এ সময় সৌদি যুবরাজ পাল্টা ইস্যু হিসেবে ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার বিষয়টি তুলে আনেন। এ হত্যার তদন্ত না করা এবং ইরাকের আবু গারেব কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ‘ভণ্ডামি’ করার অভিযোগ আনেন তিনি।
বাইডেন সৌদি আরবে যাওয়ার আগে ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীর সফর করেন।
সফরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত থামাতে দ্বিরাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নিজের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন বাইডেন। ইসরায়েলি নেতাদের একদিকে খুশি করেছেন তিনি, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের হতাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শান্তি আলোচনার জন্য ফিলিস্তিন এখনও তৈরি নয়।
সৌদি রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি শিহাবি বলেছেন, ‘বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের উদ্দেশ্যই ছিল সৌদি যুবরাজের সঙ্গে দেখা করা।
‘এটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু তেল নয়, এই সফরের পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। বাইডেন দেরিতে হলেও উপলব্ধি করেছেন, সৌদি আরব কেবল আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল নয়, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও দেশটির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এই দেশগুলো অস্ত্র বিক্রি করে এবং ইরানের ওপর এদের প্রভাব রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। মোট কথা আপনি যদি মধ্যপ্রাচ্যে কিছু করতে চান, তবে আপনি সৌদি আরবকে উপেক্ষা করতে পারবেন না।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ৪০ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটিতে পেট্রল, খাদ্য ও বাসা ভাড়া বেড়েছে। জুনে বেশি বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এটি বেড়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ১৯৮১ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।
বাইডেনের কাছে মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি সামনে নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের সরাসরি প্রভাবিত করছে।
তেল মজুতের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ সৌদি আরব। তেলের দাম সহনীয় থাকবে নাকি রেকর্ড মাত্রায় ছাড়িয়ে যাবে, তা দেশটি অনেকাংশেই নির্ধারণ করতে পারে।
বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সুরাহা করতে না পেরে শনিবার সৌদি আরবেই চলে গেলেন বাইডেন।
তার এই সফরের আরেক কারণ হতে পারে আগামী মাসে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর (ওপেক) শীর্ষ সম্মেলন। ওপেকের নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব। যেকোনো সংকটে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে দেশটির।
এই সম্মেলনে সুখবরের আশায় সৌদি আরব সফর করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলি সৈন্যরা অভিযান চালিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা গাজার দুটি প্রধান হাসপাতালে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। সেসব গণকবরের স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্বস্ত তদন্তকারীদের অবশ্যই স্থানগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। গাজার প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার জন্য আরও সাংবাদিকদের নিরাপদে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ‘গাজা শহরের আল শিফা মেডিক্যাল সেন্টার ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল ধ্বংস এবং ইসরায়েলিরা চলে যাওয়ার পর ওইসব স্থাপনার আশপাশে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে আমি আতঙ্কিত।’
এই হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দায়মুক্তির বিদ্যমান পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে এতে আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
ভলকার তুর্ক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে হাসপাতালগুলো বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী। আর যুদ্ধে অংশ নিতে অক্ষম এমন বেসামরিক নাগরিক, বন্দি ও অন্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা যুদ্ধাপরাধ।’
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল হাসপাতালগুলোতে গণকবরের খবরকে অবিশ্বাস্যভাবে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইসরায়েলি সরকারের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ থামাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে প্রশাসন।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে (এনওয়াইইউ) বিক্ষোভকারীদের একটি ক্যাম্প ভাঙতে সোমবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দিনের শুরুতে ইয়েল থেকে বহুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি সশরীরে ক্লাস বাতিল করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানোর উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
গাজার শাসক দল হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালানোর পর সাঁড়াশি হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সেই থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভ ও উত্তপ্ত বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বেড়েই চলেছে।
উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরাই বলছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি-বিদ্বেষ ও ইসলাম-বিদ্বেষ উভয় ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ গত সপ্তাহে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডেকে এনে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করার পর এই বিক্ষোভ-আন্দোলনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
এরপর থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। এনওয়াইইউ এবং ইয়েল ছাড়াও বার্কলের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি), ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান, এমারসন কলেজ এবং টাফ্টসে ক্যাম্প স্থাপন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা-হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।
অন্যান্য বিক্ষোভকারীর মতো এনওয়াইইউ-এর বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে ইসরায়েলি দখলদারত্বে আগ্রহী অস্ত্র প্রস্তুতকারক এবং সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আর্থিক অনুদান না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আলেহান্দ্রো তানন নামের এক শিক্ষার্থী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি সংকটময় মুহূর্তে রয়েছে। এই বিক্ষোভ ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিক্ষোভের সঙ্গে তুলনীয়।’
এক বিক্ষোভকারী সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্যালেস্টাইনের পাশে আছি এবং সব মানুষের মুক্তির পক্ষে।’
এনওয়াইইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিজনেস স্কুলের বাইরে মূল ক্যাম্পে ৫০ জন ছিল। তারা এই বিক্ষোভকে অননুমোদিত বলে বর্ণনা করে বলেছে, এর ফলে ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার শুরু করে। তবে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে কানেক্টিকাটের নিউ হ্যাভেনের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিল। তাদের অনেকেই বিক্ষোভস্থল থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সোমবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানিমূলক আচরণের উল্লেখ করে ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। সেখানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:ইরানের মাটিতে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, আরেকবার ‘ভুল’ করলে তেহরানের জবাব হবে বিপর্যয়কর।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নমেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটি লাহোরে (জিসিইউএল) মঙ্গলবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সংস্কৃতি ও শিক্ষাঙ্গনের প্রভাবশালীদের সঙ্গে বৈঠকে রাইসি এ বার্তা দেন বলে জানায় প্রেস টিভি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, বক্তব্যে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে সম্প্রতি ইসরায়েলের মাটিতে তেহরানের আক্রমণের বিষয়টি তুলে ধরেন রাইসি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দামেস্কে ইসরায়েলের হামলাটি ছিল সব আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের বিরোধী। এ কারণে ইসরায়েলকে শাস্তি দিয়েছে ইরান।
ইসরায়েলকে ফের ভুল না করার বিষয়ে সতর্ক করে রাইসি বলেন, ‘জায়নবাদী সরকার যদি আরেকবার ভুল করে ইরানের মাটিতে আগ্রাসন চালায়, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে এবং এই শাসনব্যবস্থার কতটা অবশিষ্ট থাকবে, তা পরিষ্কার নয়।’
গত ১৩ এপ্রিল ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নামে অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েক শ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ কাজে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র রাষ্ট্রগুলো।
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ায় একটি সামরিক মহড়ার সময় মাঝ আকাশে নৌবাহিনীর দুটি উড়োজাহাজের সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলভার সাড়ে ৯টার দিকে মালয়েশিয়ার লুমু শহরে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, রয়্যাল মালয়েশিয়ান নৌবাহিনীর কুচকাওয়াজের জন্য একটি সামরিক মহড়া চলাকালীন মাঝ আকাশে নৌবাহিনীর ওই দুই উড়োজাহাজের সংঘর্ষ হয়। পরে বিধ্বস্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যায় বাহন দুটি। কেউই বেঁচে নেই।
নানা মাধ্যমে এর ফুটেজও প্রকাশিত হয়েছে।
রয়্যাল মালয়েশিয়ান নৌবাহিনী জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই ১০ জনকে মৃত বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। লুমুত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে মরদেহ শনাক্তের জন্য। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
যে দুটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে এর মধ্যে একটি হলো এইচওএম এম৫০৩-৩। এতে সাতজন আলোরী ছিলেন। চলমান ট্র্যাকে বিধ্বস্ত হয়েছে এই উড়োজাহাজটি। অন্যটি ফেনেক এম৫০২-৬। এতে ছিলেন তিনজন আরোহী। এটি বিধ্বস্ত হয় কাছাকাছি একটি সুইমিং পুলে।
রাজ্যের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার বিষয়য়ে সতর্ক করা হয়েছিল।
এর আগে গত মার্চ মাসে একটি মালয়েশিয়ান কোস্ট গার্ড উড়োজাহাজ প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের সময় মালয়েশিয়ার আংসা দ্বীপের কাছে সাগরে বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনার পর পাইলট, কো-পাইলট এবং এতে থাকা দুই যাত্রীকে জেলেরা উদ্ধার করেন।
এক রাতে ৮০ বারেরও বেশি ভূমিকম্পে দফায় দফায় কেঁপে উঠল তাইওয়ান। স্থানীয় সময় সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এসব কম্পন অনুভূত হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তীব্রতার ভূমিকম্পের উৎপত্তি পূর্বাঞ্চলীয় হুয়ালিয়েনে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশিমক ৩।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া প্রশাসনের বরাত দিয়ে বাসস জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে প্রথম যে ভূমিকম্প আঘাত হানে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশিমক ৫। রাজধানী তাইপেতেও এ কম্পন অনুভূত হয়। এরপর দফায় দফায় কম্পন অনুভূত হতে থাকে। বিশেষ করে মঙ্গলবার সকালে আঘাত হানা দুটি ভূমিকম্প ছিল তীব্র।
রিখটার স্কেলে প্রথমটির তীব্রতা ছিল ৬.০ এবং দ্বিতীয়টির ৬.৩।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল। এতে অন্তত ১৭ জন মারা গেছে। অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তীব্র এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল হুয়ালিয়েন শহরের ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে।
তাইওয়ানে গত ২৫ বছরের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর আগে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প তাইওয়ানে আঘাত আনে। তাতে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যায়।
এদিকে নতুন এ ভূমিকম্পের পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ঘটনাস্থলে অগ্নিনির্বাপক দলকে পাঠানো হয়েছে।
কেউ হতাহত হয়নি বলে তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বলে তাইওয়ানে ঘন ঘন ভূমিকম্প আঘাত হানে।
আরও পড়ুন:কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর এবার ভারি বৃষ্টিপাতের কবলে পড়েছে আরেক মরুর দেশ সৌদি আরব। রাজধানী রিয়াদের কিছু অঞ্চলসহ দেশটির অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাটও।
সৌদি আরবের আবহাওয়া বিভাগ সতর্কতা জারি করে বলেছে, আগামী কয়েকদিন বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। সতর্কতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, শনিবার থেকে রাজধানী রিয়াদসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা। বৃষ্টিতে ভেসে গেছে বেশ কয়েকটি গাড়ি। ভারী বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে রাজধানী রিয়াদ ছাড়াও দিরিয়াহ, হুরায়মালা, ধুর্মা থেকে কুয়াইয়াহ পর্যন্ত।
আবহাওয়ার চলমান এ পরিস্থিতি মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এই সময়কালে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে সতর্কতার অংশ হিসেবে সৌদি আরবের বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃষ্টির সময় উপত্যকা ও জলাবদ্ধ এলাকা থেকে নাগরিকদের দূরে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সবশেষ গেল সপ্তাহে অতি বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখা যায় দুবাই ও শারজাহতে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য