সার্বিয়া থেকে যাত্রা করার পর গ্রিসে বিধ্বস্ত কার্গো বিমানটি গোলাবারুদ নিয়ে বাংলাদেশে আসছিল।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোজসা স্টেফানোভিচ এ তথ্য জানিয়েছেন বলে রোববার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যম।
মন্ত্রী নেবোজসা বলেছেন, আন্তনভ এএন-১২ বিমানটি সার্বিয়ার তৈরি প্রায় ১১ টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছিল। বিধ্বস্ত হওয়ার পর এ বিমানের আট আরোহীর সবাই মারা গেছেন।
জর্ডান, সৌদি আরব ও ভারত হয়ে এই বিমানের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, বিমানের ক্রুদের প্রত্যেকেই ইউক্রেনের। কেউই সার্বিয়ার নন। এর চেয়ে আর বেশি তথ্য নেই আমার কাছে।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় কাভালা শহরে ওই বিমান বিধ্বস্ত হয় হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইআরটি তাৎক্ষণিকভাবে জানায়, কার্গো বিমানটিতে সব মিলিয়ে ১২ টনের মতো মালামাল ছিল। এই দুর্ঘটনা বিপজ্জনক।
এএফপি বলছে, ইউক্রেনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের ওই বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় পাইলট এটিকে কাভালা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করাতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আর রানওয়েতে যেতে পারেননি তিনি।
নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে বিমানটিকে বিধ্বস্ত হতে দেখা গেছে। দেখা যায়, মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর কার্গোটিতে আগুন ধরে যায়। একপর্যায়ে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে বিকট শব্দ শুনে বাইরে এসে দেখি বিমানটি আগুনে পুড়ছে। পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে সাতটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি দুর্ঘটনাস্থলে নেয়া হয়। তবে বিস্ফোরণের কারণে সেখানে গাড়িগুলো পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়।
অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহনকারী বিমানটি যে এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে, তার দুই কিলোমিটারের মধ্যে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সবাইকে ঘর থেকে বাইরে বের না হতে বলা হয়েছে।
রোববার সকালে ধ্বংসস্তূপের স্থানটি পরীক্ষা করতে পাঠানো হয় ড্রোন।
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, স্থানটি নিরাপদ মনে না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকা পরিদর্শনে যাবে না দেশটির সেনাবাহিনী, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল এবং পরমাণু শক্তি কমিশন।
গ্রিসের থেসালোনিকিতে ইউক্রেনের দূত ভাদিম সাবলুক দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নিহতদের পরিচয় কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বিমানটি বাংলাদেশে যাচ্ছিল।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যবশত কিছু সংবাদমাধ্যম অনুমান করেছে, বিমানটি ইউক্রেনের উদ্দেশে অস্ত্র বহন করছিল। কিন্তু এ তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য।
আরও পড়ুন:АN-12 aircraft, owned by an Ukrainian company, that crashed in Greece yesterday, took off from the Nis airport and was transporting Serbian military industry shipment towards its end buyer - Ministry of Defense of Bangladesh.
— Небојша Стефановић (@NesaStefanovic) July 17, 2022
ইউক্রেনে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক মঙ্গলবার বিষয়টি জানিয়েছেন।
দুজারিক বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার লাভিভে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন (জাতিসংঘের) মহাসচিব।’
গুতেরেসের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরের দিন শুক্রবার কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর ওডেসায় যাবেন জাতিসংঘের মহাসচিব ও দুই প্রেসিডেন্ট। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চুক্তি অনুযায়ী ওডেসা দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়।
এমন বাস্তবতায় জাতিসংঘ ও তুরস্কের সঙ্গে গত ২২ জুলাই আলোচিত চুক্তিতে সই করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে যায় শস্যবাহী জাহাজ।
ইউক্রেনে জাতিসংঘ মহাসচিবের কর্মসূচি নিয়ে দুজারিক আরও বলেন, জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন গুতেরেস। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধান নিয়েও আলোচনা করবেন তিনি।
সামরিক অভিযান শুরুর পরপরই জাপোরিজ্জা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দখল নেন রুশ সেনারা। পূর্ব ইউক্রেনের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গোলাবর্ষণের জন্য পরস্পরকে দায়ী করে আসছে ইউক্রেন ও রাশিয়া।
আরও পড়ুন:ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়া যুক্তরাজ্য এবার বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও খরচ কমাতে স্কুলের ছুটি বাড়িয়ে সপ্তাহে ৪ দিন করার চিন্তা করছে।
গ্যাসের সংকট ও নদীতে পানির স্তর কমে যাওয়ায় ইউরোপে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। এরই মধ্যে সংকটে পড়েছে অনেক দেশ। যুক্তরাজ্যেও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুতের দাম।
সেপ্টেম্বর থেকেই যুক্তরাজ্যের স্কুলশিক্ষকদের বেতন বাড়ছে, একই সঙ্গে আশঙ্কা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল এরই মধ্যে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে স্কুলের খরচ সামাল দেয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
ক্রিয়েটিভ ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী মার্ক জর্ডান বলেছেন যে বিদ্যুৎ বিলের খরচ কমাতে স্কুলে সপ্তাহে তিন দিন ক্লাসের বিষয়ে আলোচনা করতে তিনি শুনেছেন।
জর্ডানের ক্রিয়েটিভ এডুকেশন ট্রাস্ট যুক্তরাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম মিডল্যান্ডস ও নরফোকের ১৭টি স্কুল পরিচালনা করে যেখানে পড়াশোনা করছে ১৩ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী।
তিনি নিজের ট্রাস্ট সম্পর্কে বলেছেন, এরই মধ্যে তারা খরচ কমাতে একটি শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করছে এবং স্কুল ভবনগুলোর একটি পরিকল্পিত প্রকল্প বাতিলে বাধ্য হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলো পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পাচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষকও খরচ কমাতে সাপ্তাহিক স্কুলের দিনের সংখ্যা কমিয়ে আনার পক্ষপাতি।
এসেক্সের সাউথেন্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষ ড. রবিন বেভান বলেছেন, ‘যদি এরই মধ্যে চার দিন স্কুল খোলা রাখার পরিকল্পনা না করা হয়, তবে অবশ্যই তা বিবেচনা করা হবে।’
শুধু স্কুলই নয়, যুক্তরাজ্যে সামনের শীতে জানুয়ারিতে শিল্প-কারখানা ও সাধারণ পরিবারগুলোর জন্যও সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ বিষয় মাথায় রেখে সরকারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার পরও সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ছয় ভাগের এক ভাগ ঘাটতি থাকবে।
আরও পড়ুন:পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতিতে শুকিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নদ-নদী,খাল-বিলসহ পানির উৎস, তৈরি হচ্ছে শুষ্ক অবস্থা। এ প্রেক্ষাপটে প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এই মুহূর্তে বড় ধরনের সংকটে না পড়লেও আগামী দিনে আসলে যুক্তরাজ্য এবং ওই সব দেশের বিদ্যুতের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে প্রতিদিনই।
পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যবহার করা হয় পানি; পানি নিয়ে সংকটময় সময় পার হওয়ার এই সময়ে এ উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ ভাগ কমে এসেছে যুক্তরাজ্যে। খরাময় অবস্থা শুধু যে বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে তা-ই নয়, এই সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে অন্য ক্ষেত্রেও।
বিবিসি বলছে, পারমাণবিক স্থাপনায় যেখানে নদীর পানি ব্যবহার করে ঠান্ডা পরিবেশ তৈরি করা হয়; সেখানেও পানির ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের মতো দেশেও সামনের শীতে জানুয়ারিতে শিল্প-কারখানা ও সাধারণ পরিবারগুলোর জন্যও সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ বিষয় মাথায় রেখে সরকারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার পরও সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ছয় ভাগের এক ভাগ ঘাটতি থাকবে।
এদিকে টেমস নদী আগের থেকে অনেক বেশি শুকিয়ে গেছে। বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে খরা। এ অবস্থায় দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্ব ইংল্যান্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে খরা পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে ব্রিটিশ সরকার। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল গ্রিড বিদ্যুৎ বিপর্যয় এড়াতে বিশালসংখ্যক গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ইউরোপে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি। কিন্তু নদী ও জলাশয়ে পানির অভাব এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ফেলছে।
ইতালিতে মোট বিদ্যুতের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পাওয়া যায় পানিবিদ্যুৎ থেকে। অথচ গত ১২ মাসে এই উৎসের বিদ্যুৎ কমে এসেছে ৪০ ভাগ।
প্রায় একই অবস্থা স্পেনেও। এ দেশে উৎপাদন কমেছে ৪৪ ভাগ। পানি বিদ্যুৎ নিয়ে সংকটে পড়েছে নরওয়েও।
বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা করা ফ্যাবিয়ান রনিনগেন বলেছেন, এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমবেশি হতে পারে। তবে উৎপাদন ৪০ ভাগ কম মানে হলো, চরম পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, পানিবিদ্যুৎ নিয়ে এই পরিসংখ্যান শুধু ইউরোপের একটি অংশে কার্যকর তা নয়। এমন ঘটনা ঘটেছে সব বড় বড় পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশগুলোতেও। সব জায়গায়ই বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে।
এটি সত্যিই একটি বড় প্রভাব, মন্তব্য করেন ফ্যাবিয়ান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুৎ নিয়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। একই সঙ্গে যদি দুই দেশ বিদ্যুৎ সংকটে পড়ে তাহলে আসলে কী ঘটবে কেউই তা জানে না।
আরও পড়ুন:ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জা রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। কিয়েভের দাবি, সেখানে সমরাস্ত্র জমা করে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে রুশ সেনারা। পাল্টা অভিযোগ করে কিয়েভ বলছে, ইউক্রেনীয় সেনারা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গোলা নিক্ষেপ করছে।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, কিয়েভের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড বিশ্বকে বড় পারমাণবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার আমাদের পশ্চিমা সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছি যে, তারা কিয়েভের সঙ্গে কথা বলতে ব্যর্থ হলে এটি সবচেয়ে জঘন্য ও বেপরোয়া পদক্ষেপ নেবে, যার পরিণতি ইউক্রেনের বাইরেও পড়বে।’
ভ্যাসিলি এ সময় পশ্চিমাদের উদ্দেশে বলেন, যেকোনো পারমাণবিক বিপর্যয়ের জন্য কিয়েভের পশ্চিমা সমর্থকদেরই দায় বহন করতে হবে।
তার মতে, পারমাণবিক অবকাঠামোতে কিয়েভের অপরাধমূলক আক্রমণ বিশ্বকে একটি পারমাণবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে, যা চেরনোবিলের মতো ঘটনার জন্ম দেবে এবং ইউরোপকে সবচেয়ে বড় তেজস্ক্রিয় দূষণের দিকে নিয়ে যাবে। এর প্রভাব রাজধানী কিয়েভসহ অন্তত আটটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক ছাড়াও মলদোভা, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও বেলারুশেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নেবেনজিয়া আরও বলেন, এই ধরনের মাত্রার পারমাণবিক বিপর্যয় কল্পনা করা কঠিন।
রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনীয় শহর এনারগোদারে অবস্থিত জাপোরিজ্জা প্ল্যান্টটি গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ ধারাবাহিক হামলার শিকার হচ্ছে।
চীন সমস্যা সমাধানে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতির জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করছে।
গত ৬ আগস্ট ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার রাশিয়ার রকেট হামলায় পারমাণবিক স্থাপনার গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তিনটি তেজস্ক্রিয় শনাক্তকরণ যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যেকোনো তেজস্ক্রিয় লিকের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় তা শনাক্তকরণ ও বিকিরণ প্রতিরোধ অসম্ভব হয়ে গেছে।
কিয়েভ বলছে, এবার ভাগ্যক্রমে পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলেও বার বার ভাগ্য সহায়ক হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে আইএইএ প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি বলেছেন, ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গোলাগুলির খবরে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
জাতিসংঘের আণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএইএ) ইউক্রেনের জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে যেকোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গ্রসি বলেছেন, শুক্রবারের হামলা পারমাণবিক বিপর্যয়ের সত্যিকারের ঝুঁকি তৈরি করেছে, যা ইউক্রেন এবং এর বাইরে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
আমরা বারবার আমাদের পশ্চিমা সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছি যে, তারা কিয়েভের সঙ্গে কথা বলতে ব্যর্থ হলে এটি সবচেয়ে জঘন্য ও বেপরোয়া পদক্ষেপ নেবে, যার পরিণতি ইউক্রেনের বাইরেও পড়বে।
তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় কর্মীদেরর অবশ্যই হুমকি ও চাপ ছাড়াই তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে এবং আইএইএকে প্রযুক্তিগত সহায়তার অনুমতি দেয়া উচিত।
গ্রসি আরও বলেন, ইউক্রেন এবং অন্যত্র একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক দুর্ঘটনা থেকে জনগণকে রক্ষা করার স্বার্থে আমাদের মতভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তবে মস্কোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
জাপোরিজ্জায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রুশ প্রধান ইয়েভজেনি বালিতস্কি রোবরার টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেলের মজুত লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে নিরপেক্ষভাবে কিয়েভ ও মস্কোর দাবির সত্যতাই যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
যেহেতু পারমাণবিক প্রকল্পটি রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে এবং সেখানে রুশ সেনারাই অবস্থান করছে, তাহলে ঠিক কী কারণে রুশ সেনারাই সেখানে হামলা চালাবে তা স্পষ্ট করেনি কিয়েভ।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘পারমাণবিক প্রকল্পে যেকোনো বোমা হামলা নির্লজ্জ অপরাধ, সন্ত্রাসের কাজ।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত সপ্তাহের শুরুর দিকে অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর জন্য এই প্ল্যান্টটিকে নিরাপদ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা থাকায় ইউক্রেনীয় সেনারা সেখানে গোলা বর্ষণ করতে পারবে না।
গত মার্চে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের মধ্যেই দেশটিতে অবস্থিত ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জাতে হামলা চালায় রুশ সেনারা। ইউক্রেন সে সময় দাবি করে, রুশ গোলার আঘাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আগুন ধরে যায়।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছিলেন, এই কেন্দ্রের চুল্লি গলে যাওয়া চেরনোবিলের থেকে ১০ গুণ বেশি ভয়াবহ হতে পারে।
এর আগে ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিলে সোভিয়েত আমলে এক পারমাণবিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পারমাণবিক প্রযুক্তির ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ২০ বছরে তেজস্ক্রিয়তার পরোক্ষ প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:মাত্র এক মাস আগেই ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা দিয়ে বিলাসবহুল একটি প্রমোদতরী কিনেছিলেন ইতালিয়ান ধনকুবের পাওলো স্কুডিয়ারি। ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ ফরমেন্তেরার পশ্চিম উপকূলে ক্যালা সাওনায় এটি ভাসছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আগুন ধরে যায় প্রমোদতরীতে।
আরিয়া এসএফটি নামে প্রমোদতরীর আয়তন ১৫০ ফুট। আগুন লাগার সময় এটিতে ৯ যাত্রী এবং সাতজন ক্রু ছিলেন। স্প্যানিশ দুটি উপকূলরক্ষী জাহাজ তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে এটা স্পষ্ট নয় তাদের মধ্যে প্রমোদতরীর মালিক স্কুডিয়ারি ছিলেন কি না।
আগুনের কারণে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া প্রতিবেশী দ্বীপ ইবিজা থেকেও দেখা গেছে। আগুনের কারণ জানা যায়নি এখনও।
ইতালির নেপলসে জন্ম শিল্পপতি স্কুডিয়ারির। গাড়ির অভ্যন্তরীণ উপাদান প্রযোজক গ্রুপো অ্যাডলারের চেয়ারম্যান তিনি, যার আনুমানিক মূল্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। ১৯৫৬ সালে তার বাবা অ্যাচিল এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
এ ছাড়া ট্যুরিজম এবং বেশ কিছু নামকরা রেস্তোরাঁর মালিক ৬২ বছর বয়সী পাওলো স্কুডিয়ারি।
ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ বাড়াতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। বার্লিনে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেন, ‘নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইনের জন্য মেরামত করা টারবাইন নিয়ে যান আপনারা (রাশিয়া)। এরপর ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বাড়ান।’
কানাডায় রক্ষণাবেক্ষণের পর নর্ড স্ট্রিম ১ গ্যাস টারবাইন নিয়ে রাশিয়া এবং জার্মানির শীতল যুদ্ধ চলছে। মে মাসে রাশিয়ার পাইপলাইনের কম্প্রেসার স্টেশনে যুক্ত করা হয়েছিল এ টারবাইন, যেন ইইউতে গ্যাসের পূর্ণ প্রবাহ থাকে।
তবে ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে টারবাইনটি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায় কানাডা। যদিও কয়েক সপ্তাহ দেরি করে সেটি জার্মানির কাছে হস্তান্তত করা হয়।
রাশিয়ান জ্বালানি জায়ান্ট গ্যাজপ্রম বলছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে টারবাইন ফেরত নিতে বাধা দিচ্ছে জার্মানি। তবে জার্মানির দাবি, কাগজ-পত্র ঠিক না থাকায় ফেরত দেয়া হচ্ছে না টারবাইন।
গ্যাজপ্রম জোর গলায় বলছে, টারবাইনটি রাশিয়ায় পাঠানোর পরও ঝুঁকি থাকে যাবে। কারণ এটিকে চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে দেখবে কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ। জবাবে নিজেদের মাটিতে টারবাইন রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ বন্ধ করে দেবে অটোয়া।
নর্ড স্ট্রিম ১-এর মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ গত মাসে তাদের সর্বোচ্চ স্তরের ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। কারণ বর্তমানে ছয়টি টারবাইনের মাত্র একটি চালু আছে। বাকিগুলোর মেরামত প্রয়োজন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর পুতিনের ক্ষমতা ধসে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ছয় মাস পর উল্টো ফল দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া জ্বালানি গ্যাস ও তেলের জোগান কমিয়ে দিয়ে ইউরোপকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে এক নিবন্ধে জ্বালানি ও পণ্যবিষয়ক প্রতিবেদক হাভিয়ের ব্লাস লিখেছেন, চলমান লড়াইয়ে পুতিনের জয়কে নিশ্চিত করছে দেশটির বিপুল জ্বালানি সক্ষমতা। নিবন্ধটি ভাষান্তর করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
যেভাবেই দেখা হোক না কেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জ্বালানি বাজারে জিতে যাচ্ছেন। মস্কো তেলের খনি থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ ডলার আয় করছে। এই মুনাফা তারা ইউক্রেনে সামরিক অভিযান ও নিজ দেশে যুদ্ধের প্রতি সমর্থন অর্জনের পেছনে খরচ করছে।
রাশিয়ান বাণিজ্যের ওপর নভেম্বরে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে জ্বালানি সংকট নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোর বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে ভোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলো তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়তে পারে।
জ্বালানি তেলের বাড়তি চাহিদার কারণে পুতিন ইউরোপে গ্যাসের সাপ্লাই কমিয়ে দেবেন। এর ফলে অক্টোবর থেকে ঘরে ও অফিসে বিদ্যুতের দাম অনেক বেড়ে যাবে। যুক্তরাজ্যে দাম বাড়বে প্রায় ৭৫ শতাংশ আর জার্মানিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়বে শতভাগেরও বেশি।
জ্বালানিকে রাশিয়া সাফল্যের সঙ্গে অস্ত্রে পরিণত করেছে। পশ্চিমা সরকারগুলো গৃহস্থালি খরচের ভর্তুকি দিতে শত শত কোটি ডলার খরচের চাপে পড়বে। এ সমস্যা নিয়ে ফ্রান্স এরই মধ্যে সমস্যায় পড়েছে।
তীব্র জ্বালানি সংকট
পুতিন যেভাবে জ্বালানি তেলের সুবিধা নিজের দিকে ঘুরিয়েছেন তা রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। গত মাসে দেশটির উৎপাদন যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ ব্যারেল উৎপাদন হচ্ছে, যা ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগে জানুয়ারিতে উৎপাদিত ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল থেকে সামান্য কম। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত তেলের উৎপাদন ওই হারের চেয়েও বেশি।
এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। জুলাইয়ে টানা তৃতীয় মাসের মতো তেলের উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরেছে। চলতি বছর এপ্রিলে ইউরোপীয় দেশগুলো তেল কেনা বন্ধ করে দেয়ার পর উৎপাদন ১ কোটি ব্যারেলে নেমে এসেছিল। মস্কো তখন বাধ্য হয়ে নতুন ক্রেতা খোঁজায় মনোযোগী হয়।
উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া
মার্চ ও এপ্রিলে রাশিয়ার তেলের উৎপাদন দ্রুত কমে যায়। তবে এখন তা ইউক্রেন আক্রমণের আগের অবস্থার কাছাকাছি পর্যায়ে ফিরে এসেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পর তাদের কাছে প্রতিদিন এক লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি করতে পারছিল না মস্কো। তবে এখন তারা নতুন ক্রেতা খুঁজে পেয়েছে।
রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের (ক্রুড অয়েল) ক্রেতা এখন এশিয়া, বিশেষ করে ভারত। মধ্যপ্রাচ্য ও তুরকিয়েকেও তারা নতুন ক্রেতা হিসেবে পেয়েছে। ইউরোপেও নভেম্বরে আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার আগে কিছু দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনেছে।
যারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, রাশিয়ার তেলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে, তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন।
দ্বিতীয় সূচকটি হলো, রাশিয়ান তেলের দাম। প্রাথমিকভাবে মস্কো ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে বিভিন্ন দেশের কাছে বিশাল ছাড়ে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করেছে। এরপর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্রেমলিন একটি আঁটসাঁট বাজারের সুবিধা নিয়ে মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে।
নতুন এ ধারার ভালো উদাহরণ হচ্ছে ইএসপিও ক্রুড। এটি বিশেষ এক ধরনের তেল, যা রাশিয়ার দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আসে। এ বছরের শুরুর দিকে এটি এশিয়ার তেলের বেঞ্চমার্ক দুবাই ক্রুডের কাছে ব্যারেল প্রতি ২০ ডলারের বেশি ছাড়ে বিক্রি করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি ইএসপিও ক্রুড অয়েল দুবাইয়ে তেলের সমতায় পরিবর্তন এনেছে।
রাশিয়ার মধ্যবর্তী ও ইউরোপের নিকটবর্তী উরাল অঞ্চলের ক্রুড অয়েল ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত মস্কো। এখন আর উরাল ক্রুড অয়েল থেকে ইএসপিওর মতো লাভ হচ্ছে না। কারণ এর মূল ক্রেতা ঐতিহ্যগতভাবে জার্মানির মতো দেশ। তবে সম্প্রতি এর দামও আগের মতো হয়ে আসছে।
মস্কো নতুন পণ্যের বাজারও খুঁজছে। এসব বাজার মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় এবং যেখানে রাশিয়া অর্থায়ন করে। এরা রাশিয়ার ক্রুড অয়েল কিনতে ও চাহিদার বাজারে পাঠাতে ইচ্ছুক। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি থাকা ও রাশিয়া বিপুল ছাড় দিতে সক্ষম হওয়ায় ক্রেমলিনে প্রচুর অর্থ আসছে। ফলে আপাতত জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা কাজ করছে না।
রাশিয়ান সাফল্যের সবশেষ সূচকটি সরাসরি বাজার সম্পর্কিত নয়, সেটি রাজনৈতিক। মার্চ ও এপ্রিলে পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের আশা ছিল, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বে ওপেক রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। অথচ বাস্তবে উল্টোটা ঘটেছে।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রিয়াদ সফরের পরেও পুতিন ওপেক প্লাস জোটে তার প্রভাব বজায় রেখেছেন। বাইডেন সৌদি আরব থেকে চলে যাওয়ার পরপরই ওপেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী মূল ব্যক্তি রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক সৌদি আরবে যান। তার কয়েক দিন পর ওপেক বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের ওপর চাপ বজায় রেখে তেলের উৎপাদন সামান্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়।
জ্বালানি বাজারে জয়ের অর্থ হল পুতিন ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি সীমাবদ্ধ করে বার্লিন, প্যারিস ও লন্ডনের ওপর চাপ সৃষ্টির সক্ষমতা রাখেন। এসব দেশ এবারের শীতে রেশনিং হতে পারে এমন খুচরা জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য ঘাটতির জন্য প্রস্তুত। মস্কো তেল বিক্রি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করছে। এ জন্য রাশিয়া পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ সীমিত করে দিলেও বিশেষ ক্ষতির মুখে পড়বে না।
শীতল আবহাওয়া, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও বছরের শেষ দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সব মিলিয়ে ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের সমর্থন কমিয়ে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। ইউরোপীয় রাজনীতিকরা এতদিন কিয়েভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্তর্জাতিক প্রশংসা পেতে আগ্রহী ছিলেন। এখন তারা ভোটারদের জ্বালানি সংকটে পড়া ঠেকাতে নিজের দেশে পণ্যমূল্য বাগে আনতে চাইবেন।
জনসমক্ষে ইউরোপীয় সরকারগুলো রাশিয়ান শক্তি থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য দৃঢ়সংকল্পে অটুট। তবে গোপনে তাদের স্বীকার করতেই হচ্ছে, এমন অবস্থান অর্থনীতিতে আঘাতের হুমকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য