বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম বিভ্রাটের মুখে পড়েছে টুইটার। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির ওয়েব এবং মোবাইল সংস্করণে ঢোকা যাচ্ছিল না প্রায় এক ঘণ্টা ধরে।
সাইট বিভ্রাট ট্র্যাক করা সাইট Downdetector.co.uk বলছে, যুক্তরাজ্য সময় দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে টুইটারে ঢোকা যাচ্ছিল না। এ অবস্থা থাকে ৪৫ মিনিট। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপেও পাওয়া গেছে বিভ্রাটের খবর।
বিভ্রাটটি বছরের মধ্যে দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে গুরুতর। যদিও টুইটারের শুরুর দিকে এমন ঝক্কি পোহাতে হয়েছে অনেক ব্যবহারকারীকে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে আড়াই ঘণ্টা ধরে ঢোকা যাচ্ছিল না টুইটারে।
তারপর থেকে এমন ঝালেমায় আর পড়তে হয়নি ব্যবহারকারীদের। সময়ের সঙ্গে বৈশ্বিক রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে টুইটারের গুরুত্ব বাড়ে।
সাম্প্রতিক অন্যান্য প্রধান বিভ্রাটের তুলনায় অবশ্য টুইটারের সমস্যা কম ছিল। বিভ্রাটের সময় ইন্টারনেটের বড় কোনো অবকাঠামোগত স্তর প্রভাবিত হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছর ‘কন্টেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক’-এ বিভ্রাট ঘটে। এটি প্রায় এক ঘণ্টার জন্য গার্ডিয়ানসহ ইন্টারনেটের একটি বড় অংশে প্রভাব ফেলেছিল।
এদিকে দীর্ঘস্থায়ী এই বিভ্রাট যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। টোরি নেতৃত্ব থেকে বরিস জনসন গত সপ্তাহে পদত্যাগ করার পর থেকেই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা এ পদে লড়াইয়ে টুইটার হ্যান্ডেলকে ব্যবহার করছেন।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছে মেসেজিং অ্যাপ ইমো। জাগো ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় রাজধানীর বনানী স্কুলে (কড়াইল) কার্যক্রম পরিচালনা করে জাগো ফাউন্ডেশন।
এ স্কুলে প্রায় সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করছে। তাদের মাঝে এ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
দেশে করোনাভাইরাস মহামারির পর শিক্ষা খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে প্রান্তিক আয়ের জনগোষ্ঠীর শিশুরা শিক্ষাসুবিধা থেকে পিছিয়ে পড়ছে।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকাসহ বৈশ্বিক মহামারি উদ্ভূত নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশের ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়ে।
এমন অবস্থায় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ইমো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে এগিয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণে শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্য দূর করতে এবং উন্নত বাংলাদেশে মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে জন্য অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা জাগো ফাউন্ডেশনের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে ইমো।
জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভী রাকসান্দ ধ্রুব বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে; এই মুহূর্তে এ ধরনের উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, সত্যিকার অর্থেই এটি একটি ভালো পদক্ষেপ এবং এ ধরনের উদ্যোগ দেশের শিক্ষা খাতকে সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করবে। আমার বিশ্বাস, অন্যরাও ইমোর উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে এই কাজে এগিয়ে আসবেন।’
অনুষ্ঠানে ইমো ও জাগো ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ভারতের সবচেয়ে বড় নিলামে মুখোমুখি অবস্থানে দেশটির দুই ধনকুবের গৌতম আদানি এবং মুকেশ আম্বানি। ফাইভ-জি এয়ারওয়েভ মালিকানা প্রশ্নে সাত দিন ধরে চলা নিলাম দুই ধনকুবেরের মধ্যে ডিজিটাল ভবিষ্যতের ওপর আধিপত্যের লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি করেছে।
নিলামে মোট ৭২ গিগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্লকে ছিল। ভারতের টেলিকমমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রস্তাবের ৭১ শতাংশ ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
আম্বানির রিলায়েন্স-জিও, ভোডাফোন আইডিয়া ও ভারতী এয়ারটেল এবং আদানির ডেটা নেটওয়ার্কের কাছে প্রায় ১৯ বিলিয়ন মূল্যের দর ডেকেছে ভারত সরকার।
ভারতীয় বিশ্লেষণাত্মক রেটিং গবেষণা সংস্থা সিআরআইএসআইএল-এর গবেষণা বলছে, ২০২১ সালের মার্চে শেষ নিলামের পর থেকে মোট বিড দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে এটি।
যখন আর-জিও ১১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্পেকট্রাম কেনার দরদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, তখন আদানি গোষ্ঠী মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল। বাকি বিডগুলো এসেছে ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়া থেকে।
ভারতী এয়ারটেল এবং আর-জিও প্যান-ইন্ডিয়া এয়ারওয়েভের জন্য বিড করেছে বলে জানা গেছে। সেখানে নগদ-সঙ্কুচিত ভোডাফোন আইডিয়া শুধু অগ্রাধিকার খাতে ব্যয় করেছে।
আর-জিও এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দেশব্যাপী ফাইবার উপস্থিতির কারণে জিও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ফাইভ জি রোলআউটের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
আদানি গ্রুপ প্রাইভেট স্পেকট্রামের ওপর বিড করেছে, যা নির্দিষ্ট এলাকা যেমন নৌবন্দর বা বিমানবন্দরগুলোতে অ্যাক্সেসযোগ্য হবে। এটি এমন একটি খাত যেখানে কোম্পানি ইতোমধ্যে বিপুল বিনিয়োগ করেছে।
আম্বানির আর-জিও ভারতের ইন্টারনেট বাজারে অতিপরিচিত নাম। অন্যদিকে আদানি বিশাল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন নৌবন্দর, বিমানবন্দর এবং বিদ্যুৎ খাতে। সম্প্রতি তিনি বিল গেটসকে হটিয়ে বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ১১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
যদিও আদানি গ্রুপ বলছে, তারা ব্যক্তিগত স্পেকট্রামের বাইরে বড় বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী নয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আদানি এখন সে পথেই হাঁটছে।
এই পদক্ষেপটি ভোডাফোন আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেলকে বিচলিত করে তুলবে বলে মনে করছে অনেকে। এই টেলিকম সংস্থাগুলো এখনও দাম কমানোর সময় আর-জিও'র বিঘ্নিত ২০১৬ এন্ট্রির সময় শুরু হওয়া শুল্ক যুদ্ধ থেকে ভুগছে৷ এখন তারা আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে।
ভারতে ফাইভ জির প্রবর্তন উচ্চ গতির ইন্টারনেটের একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে, যা সেকেন্ডে ভিডিও ডাউনলোডের সুযোগ দেবে। ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত ডিভাইসগুলোতে এটি ব্যবহার করা যাবে।
উচ্চ গতির অফারের সঙ্গে ভারতীয় টেলিকম কোম্পানিগুলো ফাইভ জি-এর জন্য উচ্চ মূল্য চার্জ করে লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও তারা এখন পর্যন্ত টু জি বা থ্রি জি প্ল্যানের তুলনায় ফোর জি প্ল্যানের জন্য বেশি চার্জ করা থেকে বিরত আছে।
জাপানিজ আর্থিক হোল্ডিং সংস্থা নোমুরার হিসাব বলছে, ফাইভ জি ট্যারিফ প্ল্যান সম্ভবত টেলিকম কোম্পানিগুলোকে উচ্চ রাজস্বের দিকে ঠেলে দেবে।
‘ভারত ধীরে ধীরে ফাইভ জিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটার অন্যতম কারণ উচ্চ মূল্যের সম্ভাবনা। কারণ ভারতের সামগ্রিক স্মার্টফোন বেসের প্রায় ৭ শতাংশ ফাইভ জি ব্যবহারে উপযুক্ত।’
এবারের নিলাম থেকে আয় ২০১০ সাল থেকে আগের সাত রাউন্ডের তুলনায় সর্বোচ্চ। এটি এমন একটি সময়ে সরকারের আর্থিক ঘাটতি কাটাতে সাহায্য করবে, যখন ভারতে রাজস্ব ও ব্যয়ের ব্যবধান মাইনাস ৬.৪ শতাংশে দাঁড়াবে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারতের টেলিযোগাযোগ বিভাগ আগামী ২০ বছরে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করবে।
সরকার আগস্টের মধ্যে এয়ারওয়েভ বরাদ্দ শেষ করবে। অক্টোবরের শুরুতে চালু হবে ফাইভ জি পরিষেবা।
আরও পড়ুন:অনলাইন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও মুচলেকা আদায়ের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
হিরো আলমের অভিযোগ, রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি না গাওয়ার ব্যাপারে তার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছে পুলিশ। তার নামের প্রথম অংশ ‘হিরো’ পরিবর্তন করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের পোশাক পরে অভিনয়ে আপত্তি জানিয়েছে ডিবি।
রবীন্দ্র ও নজরুলসংগীতের মতো কপিরাইটবিহীন গান নিজের মতো করে কেউ গাইতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাতে বাধা দিতে পারে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কারও নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করছেন, এ ধরনের কাজের দায়িত্ব পুলিশের নয়। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ হিরো আলমকে গান না গাইতে এবং নাম পরিবর্তনের জন্য যে মুচলেকা নিয়েছে, সেটা পুলিশ পারে না। এটা অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘ইউটিউব না থাকলে হিরো আলমের নামই কেউ জানত না। এ ধরনের কনটেন্ট পুলিশ বিটিআরসিকে সরিয়ে দিতে বলতে পারে, কিন্তু ডেকে নিয়ে এভাবে মুচলেকা নিতে পারে না।
হিরো আলমকে ডেকে নিয়ে পুলিশের মুচলেকা নেয়ার ঘটনায় ‘খুবই অবাক’ হয়েছেন জেড আই খান পান্না। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ পুলিশের ড্রেস পরেছে, তার জন্য হুঁশিয়ার করতে পারে, কিন্তু গান না গাইতে মুচলেকা নিতে পারে না।
‘সে (হিরো আলম) যেভাবে রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছে তার জন্য খারাপ লাগছে। তার মানে এই নয় যে, পুলিশ এটা করতে পারে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুমার দেবুল দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ যেটা করেছে, সেটা আমার কাছে মনে হয় না আইনসিদ্ধ হয়েছে। কারণ কে গান গাইবে, কে গাইবে না বা তার গান গাওয়ার ক্ষমতা কতটুকু- তা নির্ভর করছে ব্যক্তির ওপরে।’
গান না গাওয়ার জন্য মুচলেকা নেয়া ‘বিরল ঘটনা’ উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন, ‘এমন ঘটনা আর ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুচলেকা নিতে পারে, কিন্তু গান গাইবে না এমন মুচলেকা নিতে কোনো আইন আছে কি না আমার জানা নেই।
‘অভিনয়ের সময় পুলিশ, আর্মি বা কোনো বাহিনীর পোশাক পরতে হলে ওই বাহিনীর একটা অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি না নিয়ে থাকলে পুলিশ তাকে বাধা দিতেই পারে। তবে গান না গাওয়ার জন্য মুচলেকা নেয়ার বিষয়টি বেআইনি হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। এটা ব্যক্তির মৌলিক অধিকারে বাধা দেয়ার শামিল।’
ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ডাকে বুধবার সকালে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হন হিরো আলম। সেখানে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘হিরো আলমের কথা আর কী বলব! পুলিশের যে ড্রেস, যে প্যাটার্ন, ডিআইজি, এসপির যে ড্রেস তা না পরে কনস্টেবলের ড্রেস পরে ডিআইজি, এসপির অভিনয় করছে। ডিএমপির কমিশনার শিল্পী সমিতিতে বলেছেন, পুলিশের পোশাক পরে অভিনয় করতে হলে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু হিরো আলম শিল্পী সমিতির সদস্যও না। সে অনুমতি ছাড়া পুলিশের পোশাক পরছে। কনস্টেবলের ড্রেস পরে এসপি, ডিআইজির অভিনয় করছে। এটা সে জানেও না।’
তিনি আরও জানান, হিরো আলম যেভাবে গান গান তাতে রবীন্দ্র ও নজরুলসংগীত পুরোটাই চেঞ্জ হয়ে যায়।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসা করেছি, আপনি এসব কেন করেন? তখন হিরো আলম আমাদের বলেছেন, আমি আর জীবনে এসব করব না। আমি আর পুলিশের পোশাক পরব না। কোনো ধরনের রবীন্দ্র-নজরুলসংগীত গাইব না।’
হিরো আলম পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, গান বিষয়ে মুচলেকা নেয়ার পাশাপাশি তার নাম থেকে ‘হিরো’ শব্দটি ছেঁটে ফেলতে বলেছে পুলিশ। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আগে ‘তুলে নিয়ে’ যায় বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি সংগীত ঐক্যের দুই মহাসচিবের একজন নকীব খান। এ ছাড়া আরেক মহাসচিব কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে অনেকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
লেখক, প্রকাশক ও সংস্কৃতিকর্মী রবীন আহসান মনে করছেন, হিরো আলম কোনো ‘শিল্পী নন’, তাদের কর্মকাণ্ড এমনিতেই একদিন থেমে যাবে।
তবে পুলিশের হস্তক্ষেপকে সমর্থন করছেন না রবীন আহসান। তিনি বলেন, ‘যে যার মতো করে গান তো গাইতেই পারে। আমরা তো একজন বাউলের গান বন্ধ করতে পারব না। পুলিশ আমাদের দেশে বাউলের গান বন্ধ করেছে বিভিন্ন জায়গায়। তারপর আমাদের গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় ওয়াজ-ধর্মীয় সংস্কৃতি এটা বেড়েছে। আমাদের কবিগান-লোকগান যাত্রা বন্ধ করে ধর্মীয় উন্মাদনা বেড়েছে।’
‘পুলিশ দিয়ে ঠেকানো-বন্ধ করা এটা আমি মনে করি ঠিক হয়নি এবং এটা আমাদের জন্য আখেরে খারাপ হবে। আমরা তো হিরো আলমরে ঠেকিয়েছি, এখন তারা যদি মনে করে অন্যদেরও; যারা দেশের ভালোর জন্য গান করছে, কিন্তু দেশদ্রোহী বলে পুলিশ তাদেরও ডেকে নিয়ে যাবে। ফলে এটা একটা বিপজ্জনক সংস্কৃতি হিসেবে দাঁড়াল।’
বগুড়ায় ডিশ লাইনের ব্যবসা দিতে গিয়ে স্থানীয়ভাবে ভিডিও ছেড়ে হিরোর কনটেন্ট তৈরির শুরু। পরে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে তৈরি হয় হাস্যরস। তবে দমে না গিয়ে, সমালোচনা গায়ে না মেখে একের পর এক ভিডিও বানাতে থাকেন তিনি। সেই সঙ্গে শুরু করেন গান।
পরে বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, হিন্দি, আরবি, চীনা এবং আফ্রিকান সোয়াহিলি ভাষায় গান তিনি। তৈরি করেন সিনেমা। লেখেন বই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি।
স্পষ্টতই সমালোচনা, কটাক্ষ গায়ে মাখছেন না হিরো আলম। মফস্বল থেকে উঠে এসে রাজধানীর বুকে তিনি অবস্থান নিয়ে যে বেশ আয় করছেন, সেটি তার জীবনাচরণেও ফুটে ওঠে। তিনি গাড়ি কিনেছেন, নিয়েছেন অফিসও।
আরও পড়ুন:ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ ইমোর সেবা ও তথ্য বিষয়ক ফ্রি ব্রডকাস্ট প্ল্যাটফর্ম চ্যানেলে যুক্ত হয়ে অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ঢাকা-ভিত্তিক রিক্রুটিং এজেন্সি বিজিএল ওভারসিজ লিমিটেড-বিজিএল ওভারসিজ।
বিজিএল ওভারসিজ সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি, যারা বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জনশক্তি নিয়োগ ও সরবরাহ করে থাকে।
বিজিএল ওভারসিজের কার্যক্রম ভালোভাবে চললেও, মহামারির সময় তাদের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চলতি বছরের মে মাসে ইমো চ্যানেলে যুক্ত হয় বিজিএল ওভারসিস। ইমো টিম আনুষ্ঠানিকভাবে যাচাই-বাছাই শেষ করার পর এজেন্সিটি তাদের কাস্টমাইজড মেন্যু পায়, যার মাধ্যমে তারা তাদের সম্ভাব্য গ্রাহকদের সঙ্গে সুবিধাজনক উপায়ে যোগাযোগ করতে পারে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমো জানায়, তাদের প্লাটফর্মের সহায়তায় এজেন্সিটি বিপুল পরিমাণে ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। যার মাধ্যমে ২ মাসের ব্যবধানে মার্কেটিং ম্যানেজারের ডিলের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় বলেও জানায়।
ইমো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজিএল ওভারসিসে পৌঁছানো অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জন, যা অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের তুলনায় অনেক বেশি।
বিজিএল ওভারসিসের মার্কেটিং ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা একটি সেরা প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলাম, যার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে পারি। ইমো চ্যানেলে সংযুক্ত হওয়ার পর থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের সাথে আমাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সম্ভাব্য গ্রাহকরা এখানেই আছেন এবং তারা ইমোর ফি-ছাড়া সেবার মাধ্যমে অন্য কোনো এজেন্টের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়াই, সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলতে পারছেন।’
মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছেন এমন ১ কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী ইমো ব্যবহার করেন। ইমো চ্যানেলের মাধ্যমে অভিবাসী কর্মীরা বিদেশে চাকরির সুযোগ, বেতন, নিয়োগকর্তা, কোম্পানি, চাকরির শর্ত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রাসঙ্গিক ও অনুমোদিত তথ্যও পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন:সামান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু ভুল নেই। তবে যখন কয়েক সেকেন্ডের টিকটকগুলো ঘণ্টাব্যাপী মাথায় ঘোরাঘুরি করে বা ইনস্টাগ্রাম স্টোরিজগুলোতে কে কী পছন্দ করেছে, সেগুলো আপনার চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলে অথবা ফেসবুকের নিউজফিডে আপনার চাচার রাজনৈতিক মতামতগুলো আপনার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়, তখন বুঝে নিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনার একটা বিরতি নেয়ার সময় এসেছে।
হ্যাঁ, একটি বিরতি। কারণ এসব পুরোপুরি ছেড়ে দেয়া সত্যিই অনেকের জন্য কোনো বিকল্প বা ইচ্ছা নয়। স্ক্রিন টাইমকে প্রাধান্য দেয় এমন অ্যাপগুলো থেকে এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে আমাদের। তবে স্ক্রলিংয়ে অনেক বেশি সময় দিয়ে মস্তিষ্ক এবং শক্তির ক্ষয় হলে হারানোরও অনেক কিছু আছে।
একটি সফল সামাজিক মিডিয়া বিরতি দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। কিছু মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সব সামাজিক মিডিয়া প্রোফাইল নিষ্ক্রিয় করতে চাইতে পারে; অন্যরা কেবল কিছু সামাজিক মিডিয়া ফিচার সীমিত করতে চাইতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনার উপকারী বিষয়গুলো নেয়া, যেগুলোতে কোনো উপকার নেই সেগুলো ছেড়ে দেয়া।
অন্য কথায়, আপনি কি পছন্দ করেন তা বের করুন। সঠিক সেটিংস খুঁজুন এবং নিচের টিপস অনুসরণ করুন।
আপনাকে কী বিরক্ত করছে তা খুঁজে বের করুন
আপনি কি অন্যদের জীবনযাপন দেখে খুব বেশি অভিভূত? অথবা আপনি কি অনলাইন শপিং থেকে বিরত আছেন? এমন অনেক কারণ আছে যেগুলো আপনাকে বিরতির পথে হাঁটতে প্ররোচিত করে। এসব খুঁজে বের করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিরতি নেয়ার পরিকল্পনাতে আপনাকে সাহায্য করবে।
সামাজিকমাধ্যম বাছাই করুন
সমস্যাটি কী তা একবার আপনি জেনে গেলে, কোন কোন অ্যাপ থেকে বিরতি নিতে চান এবং প্রতিটিতে কোন ফিচারগুলো বন্ধ করতে বা চালিয়ে যেতে চান, তা বেছে নিতে পারেন৷
উদাহরণস্বরূপ, আপনি এখনও টিকটক ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বন্ধুরা আপনাকে যে ভিডিওগুলো পাঠায়, কেবল তা দেখুন। আপনি এখনও আপনার ইনস্টাগ্রাম ফিডে স্ক্রল করতে চান তবে আপনার নিজস্ব কিছু পোস্ট করবেন না। যদিও এই পরিবর্তনগুলো আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে না, তবে আপনার ব্যবহারকে কমিয়ে আনবে।
লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বিরতি কতদিন হবে তা নির্ধারণ করুন। এটি আপনাকে একটি লক্ষ্য দেয়। আপনি যদি জানেন ঠিক কত দিন বাকি আছে, তাহলে প্রতিটি দিন কাটানো কিছুটা সহজ হতে পারে। আপনি এটিকে নিজের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও বিবেচনা করতে পারেন। সময় শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, আপনি কেমন অনুভব করছেন তা পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার আরও সময় প্রয়োজন কি না তা ভাবুন।
পোস্ট করা কমান
সোশ্যাল মিডিয়ার বেশির ভাগই সংযোগ স্থাপন, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা বা দেখতে চাওয়ার বিষয়ে। এসব সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াই করা যায়।
ফেসবুকে কিছু শেয়ার করার পরিবর্তে, যাদের সঙ্গে আপনি সেই স্মৃতি তৈরি করেছেন, তাদের ফোন করুন। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে আপনার খাবারের জুম-ইন ফটো পোস্ট করার পরিবর্তে, আপনি বেঁচে আছেন তা জানাতে আপনার মায়ের কাছে এটি চিঠি পাঠান।
অ্যাপগুলো মুছুন এবং বন্ধুকে আপনার পাসওয়ার্ড রাখতে বলুন
সোশ্যাল মিডিয়া বিরতিতে যাওয়ার ইচ্ছা সহজ হলেও, ব্যবহারের বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন। এ জন্য আপনার ডিভাইসের যে অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে চান না, সেগুলো মুছুন। কারণ এগুলো না থাকলে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না; যদি না আপনি একটি ব্রাউজারে সেগুলোর ওয়েবসাইট খোলেন। এটির প্রতিরোধে একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকে আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে বলুন। এতে চাইলেই আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে আবার লগ ইন করতে পারবেন।
ছুটিতে যান অথবা আক্ষরিক অর্থে অন্য কিছু খুঁজে নিন
এটি কিছুটা বিপরীত, কারণ ছুটির চেয়ে কি পোস্ট করা ভালো? ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া অন্য কিছু আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়াও অন্য কিছু করার আছে আপনার। যদি ছুটিতে না যেতে পারেন তবে বই পড়ুন, ছবি আঁকেন অথবা রুবিক্স কিউব মেলান।
মনে রাখবেন: কেউ পাত্তা দেয় না
প্রত্যেকেই আমরা নিজের জীবনের প্রধান চরিত্র। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান। তবে আপনি নিজেকে যতটা ঘনিষ্ঠভাবে দেখেন, খুব কম মানুষই তা দেখে। তাই আপনার সোশ্যাল মিডিয়া বিরতি সম্ভবত আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তবে এটাও মনে রাখবেন: দূরত্ব হৃদয়কে অনুরাগী করে তোলে
এমন কিছু মানুষ থাকতে হবে যারা আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ার আশপাশে দেখে সত্যিকার অর্থে খুশি হবে। আপনি যখন বিরতি থেকে ফিরে আসবেন, তখন তারা আনন্দিত হবে। আশা করি, আপনিও আনন্দিত হবেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নতুন চ্যাটবট ল্যামডাকে গত বছর বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে গুগল। তাদের দাবি ছিল, ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য ল্যামডাকে গুগল সার্চ ও অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো সার্ভিসগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও বিপত্তি ঘটে চলতি বছর। ল্যামডাকে তৈরির পেছনে থাকা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের একজন ব্লেইক লেমোইনের এক সাক্ষাৎকার হইচই ফেলে দেয়। লেমোইন গত জুনে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, ল্যামডা কোনো সাধারণ বট নয়। এর এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঠিক মানুষের মতোই চেতনাসম্পন্ন বা সংবেদনশীল।
ওই সাক্ষাৎকারের জেরে কিছুদিন আগে চাকরি হারিয়েছেন লেমোইন। গুগলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চাকরিবিধি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিরাপত্তা লঙ্ঘনের কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। লেমোইনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গত ২১ জুন আলোচিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। সেখানে এমন কী বিস্ফোরক তথ্য ছিল? প্রতিবেদনটি অবলম্বনে নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
গুগলের ইঞ্জিনিয়ার ব্লেইক লেমোইন একদিন নিজের ল্যাপটপ খুলে কোম্পানির আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন) চ্যাটবট ল্যামডার সঙ্গে কথা বলছিলেন।
ইন্টারনেট থেকে শত শত কোটি শব্দ সংগ্রহ ও অনুকরণ করতে পারে এমন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের ওপর ভিত্তি করে চ্যাটবট তৈরির জন্য গুগল এ বিশেষ সফটওয়্যার বানিয়েছে। ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ফর ডায়ালগ অ্যাপ্লিকেশনসটির সংক্ষিপ্ত নাম ল্যামডা।
লেমোইন ল্যামডার ইন্টারফেসের টাইপ স্ক্রিনে লেখেন, ‘হাই ল্যামডা, দিস ইজ ব্লেইক লেমোইন...’। ল্যামডার এই চ্যাট স্ক্রিনটি দেখতে অনেকটা অ্যাপলের আইমেসেজের মতো।
৪১ বছর বয়সী কম্পিউটার প্রকৌশলী লেমোইন ওয়াশিংটন পোস্টকে ল্যামডা সম্বন্ধে বলেন, ‘আগেভাগে যদি জানা না থাকত যে আমি কথা বলছি নিজেদেরই তৈরি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের সঙ্গে; তাহলে আমি ভাবতে বাধ্য হতাম পদার্থবিদ্যা বেশ ভালো জানে এমন ৭ বা ৮ বছরের কোনো বাচ্চার সঙ্গে কথা বলছি।’
গুগলের রেসপনসিবল এআই অর্গানাইজেশনের কর্মী লেমোইন। গত শরতে তিনি ল্যামডার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। তার মূল কাজ ছিল, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সটি বিদ্বেষমূলক বা ঘৃণার বার্তা ছড়ায় কি না- সেটি অনুসন্ধান করা।
ল্যামডার সঙ্গে ধর্ম নিয়ে কথা বলার সময় তিনি খেয়াল করেন, বটটি নিজের অধিকার ও ব্যক্তিত্ব নিয়েও বেশ জোর দিয়ে কথা বলছে। একবারের আলোচনায় ল্যামডা আইজাক আসিমভের রোবোটিকসের তৃতীয় আইন নিয়ে লেমোইনের ধারণা বদলে দিতে পর্যন্ত সক্ষম হয়। কিংবদন্তি সায়েন্স ফিকশন লেখক আসিমভ তার লেখায় রোবোটিকসের জন্য তিনটি আইন বেঁধে দেন, যেগুলো হচ্ছে:
১. কোনো রোবট কখনই কোনো মানুষকে আঘাত করবে না বা নিজের ক্ষতি করতে দেবে না।
২. প্রথম আইনের সঙ্গে সংঘাত ঘটায় এমন আদেশ ছাড়া মানুষের সব আদেশ মানবে রোবট।
৩. একটি রোবট যেকোনো মূল্যে তার নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা করবে, যতক্ষণ না সেটি এক ও দুই নম্বর সূত্রের সঙ্গে সঙ্ঘাতপূর্ণ হয়।
লেমোইন তার এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, ল্যামডা সচেতন (সেন্টিয়েন্ট) বা তার চেতনা রয়েছে। তবে গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্লেইস আগেরা-ই-আরকাস ও রেসপনসিবল ইনোভেশনের প্রধান জেন গেনাই সেসব প্রমাণ অগ্রাহ্য করেন। এ কারণেই লেমোইন বিষয়টি সবার সামনে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন।
লেমোইন মনে করছেন, নিজেদের জীবনমান উন্নত করে যেসব প্রযুক্তি সেগুলো পরিবর্তনের অধিকার মানুষের থাকা উচিত। ল্যামডাকে নিয়েও তিনি উচ্ছ্বসিত, তবে তার কিছু শঙ্কাও রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার মতে এটা দারুণ একটা প্রযুক্তি হতে চলেছে। এটি সবার কাজে লাগবে। আবার হয়তো অনেকের এটা পছন্দ নাও হতে পারে। আর আমরা যারা গুগলকর্মী তাদের সব মানুষের পছন্দ ঠিক করে দেয়া উচিত নয়।’
লেমোইনই একমাত্র প্রকৌশলী নন, যিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখেছেন বলে দাবি করছেন। একঝাঁক প্রযুক্তিবিদ আছেন যাদের বিশ্বাস এআই মডেলগুলো পূর্ণ চেতনা অর্জন থেকে খুব বেশি দূরে নেই।
বিষয়টি গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আগেরা-ই-আরকাসও স্বীকার করেছেন। ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লেখেন, ল্যামডার মতো এআইগুলোতে ব্যবহৃত নিউরাল নেটওয়ার্ক চেতনা অর্জন করার দিকে এগোচ্ছে। এই নেটওয়ার্ক মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালি অনুসরণ করছে।
আগেরা লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছিল আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছিল, আমি বুদ্ধিমান কোনো কিছুর সঙ্গে কথা বলছি।’
তবে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে গুগলের মুখপাত্র ব্রায়ান গ্যাব্রিয়েল লেমোইনের দাবিকে নাকচ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘লেমোইনের দাবির প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রযুক্তি ও নৈতিকতার মান নির্ধারণকারী দল এআই নীতিমালা অনুযায়ী বিষয়টি পরখ করেছে। এরপর লেমোইনকে জানানো হয়েছে, তার দাবি প্রমাণিত হয়নি। তাকে এও জানানো হয়েছে, ল্যামডার চেতনা রয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই, বরং এর বিপক্ষে অনেক প্রমাণ আছে।’
অন্যদিকে জাকারবার্গের মেটা গত মে মাসে শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ ও সরকারি সংস্থাগুলোর সামনে তাদের ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তুলে ধরে। মেটা এআই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জোয়েলি পিনেউ মনে করেন, কোম্পানিগুলোর নিজেদের প্রযুক্তি নিয়ে আরও স্বচ্ছ থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল শুধু বড় কোম্পানি বা ল্যাবের হাতেই আটকে থাকা ঠিক নয়।’
বহু বছর ধরেই চেতনাসম্পন্ন বা সেন্টিয়েন্ট রোবটরা বিজ্ঞান কল্পকাহিনির অংশ। বাস্তবেও এখন এদের দেখা মিলছে। এইআই নিয়ে কাজ করা বিখ্যাত কোম্পানি ওপেন এইআইয়ের তৈরি বিশেষ দুটো সফটওয়্যারের কথা বলা যেতে পারে। একটি হচ্ছে জিপিটি-থ্রি। এর কাজ হচ্ছে সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখা। আরেকটি হচ্ছে ডল-ই টু, যেটি কোনো শব্দ শুনে সে অনুযায়ী ছবি তৈরি করতে সক্ষম।
তহবিলের অভাব নেই ও মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান এআই তৈরির লক্ষ্যে থাকা কোম্পানিতে কাজ করা প্রযুক্তিবিদদের ধারণা, মেশিনের চেতনাসম্পন্ন হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বেশির ভাগ শিক্ষাবিদ ও এআই বিশেষজ্ঞরা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ল্যামডার মতো সফটওয়্যার যেসব শব্দ বা ছবি তৈরি করে সেগুলোর উপাদান মূলত উইকিপিডিয়া, রেডডিট বা অন্য কোনো বুলেট বোর্ড আর ইন্টারনেটে মানুষের পোস্ট থেকে সংগৃহীত। আর তাই মেশিনটি মডেলটির অর্থ বোঝার সক্ষমতার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের লিঙ্গুইস্টিকসের অধ্যাপক এমিলি বেনডার বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন এমন মেশিন রয়েছে যা নির্বোধভাবে শব্দ তৈরি করতে পারে। তবে তাদের একটি মন থাকার কল্পনা আমরা দূর করতে পারিনি। মেশিনকে শেখানোর ভাষার মডেলের সঙ্গে ব্যবহৃত ‘লার্নিং’ বা ‘নিউরাল নেট’-এর মতো পরিভাষাগুলো মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সাদৃশ্যের একটি ধারণা তৈরি করে।’
শৈশবে আপনজনের কাছ থেকে মানুষ প্রথম ভাষা শেখে। আর মেশিন তাদের ভাষা শেখে প্রচুর টেক্সট দেখার মাধ্যমে ও পরবর্তীতে কোন শব্দ আসবে তা অনুমান করে। একই সঙ্গে টেক্সট থেকে শব্দ বাদ দিয়ে সেগুলো পূরণের মাধ্যমেও তাদের শেখানো হয়।
গুগলের মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েল সাম্প্রতিক বিতর্ক আর লেমোইনের দাবির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, এআই নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ সংবেদনশীল এআইয়ের দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করছেন। তবে এখনকার কথোপকথনমূলক মডেলগুলোকে মানুষের সঙ্গে তুলনার কোনো মানে হয় না। এরা সচেতন বা সংবেদনশীল নয়। এই সিস্টেমগুলো লক্ষ লক্ষ বাক্য আদান-প্রদানের ধারাগুলোকে অনুকরণ করে ও যেকোনো চমৎকার বিষয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে।’
মোদ্দাকথা গুগলের দাবি, তাদের কাছে যে পরিমাণ ডেটা আছে তাতে এআইয়ের বাস্তবসম্মত কথা বলার জন্য চেতনাসম্পন্ন হওয়ার দরকার নেই।
মেশিনকে শেখানোর জন্য লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনোলজি এখন বহুল ব্যবহৃত। উদাহরণ হিসেবে গুগলের কনভার্সেশনাল সার্চ কোয়েরি বা অটো কমপ্লিট ই-মেইলের কথা বলা যেতে পারে। ২০২১ সালের ডেভেলপার কনফারেন্সে গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই যখন ল্যামডাকে সবার সামনে তুলে ধরার সময় বলেছিলেন, কোম্পানির পরিকল্পনা হচ্ছে গুগল সার্চ থেকে শুরু করে অ্যাসিস্ট্যান্ট পর্যন্ত সবকিছুতেই একে সম্পৃক্ত রাখা হবে।
এরই মধ্যে সিরি বা অ্যালেক্সার সঙ্গে মানুষের মতো কথা বলার প্রবণতা রয়েছে ব্যবহারকারীদের। ২০১৮ সালে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মানুষের গলায় কথা বলার বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধে সমালোচনা ওঠার পর, কোম্পানি একটি সতর্কতা যোগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মেশিনকে মানুষের মতো করে তোলার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টি স্বীকার করেছে গুগল। জানুয়ারিতে ল্যামডা সম্পর্কে একটি গবেষণাপত্রে গুগল সতর্ক করে, মানুষ এমন চ্যাট এজেন্টদের সঙ্গে ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা শেয়ার করতে পারে যা মানুষকেই নকল করে। ব্যবহারকারীরা অনেক ক্ষেত্রে জানেনও না যে, তারা মানুষ নয়। গুগল এও স্বীকার করেছে, প্রতিপক্ষরা ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তির কথোপকথনশৈলী’ অনুকরণ করে ‘ভুল তথ্য’ ছড়িয়ে দিতে এই এজেন্টদের ব্যবহার করতে পারে।
গুগলের এথিক্যাল এআই-এর সাবেক সহপ্রধান মার্গারেট মিচেলের কাছে এই ঝুঁকি ডেটা স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তিনি বলেন, ‘শুধু চেতনা নয়। পক্ষপাত ও আচরণের প্রশ্নও আছে। ল্যামডা সহজলভ্য হয়ে ওঠার পর ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে আসলে কীসের অভিজ্ঞতা লাভ করছেন, সেটা বুঝতে না পারলে এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।’
তবে ল্যামডার প্রতি লেমোইনের দৃঢ় বিশ্বাস হয়তো নিয়তি নির্ধারিতই ছিল। তিনি লুইসিয়ানার একটি ছোট খামারে এক রক্ষণশীল খ্রিষ্টান পরিবারে বেড়ে ওঠেন। এক মিস্টিক খ্রিষ্টান যাজক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। অকাল্ট নিয়ে পড়াশোনা করার আগে সেনাবাহিনীতেও কাজ করেন।
লেমোইনের ধর্মীয় বিশ্বাস, আমেরিকার দক্ষিণে জন্ম ও মনোবিজ্ঞানকে একটি সম্মানজনক বিজ্ঞান হিসেবে দাঁড় করানোর পক্ষে কথা বলার কারণে গুগলের ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্কৃতির মধ্যে কিছুটা আলাদা হয়ে পড়েন।
অ্যালগরিদম ও এআইসহ লেমোইন সাত বছর গুগলে থাকার সময়ে প্রো-অ্যাকটিভ সার্চ নিয়েও কাজ করেছেন। সেই সময়ে তিনি মেশিন লার্নিং সিস্টেম থেকে পক্ষপাত দূর করার জন্য একটি অ্যালগরিদম তৈরিতে সহায়তা করেন। করোনভাইরাস মহামারি শুরু হলে লেমোইন জনসাধারণের সুবিধা নিয়ে আরও কাজ করার দিকে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি নিজের টিম বদলে রেসপনসিবল এআইতে যোগ দেন।
লেমোইনের ল্যাপটপে ল্যামডা চ্যাট স্ক্রিনের বাম দিকে বিভিন্ন ল্যামডা মডেল আইফোনের কনট্যাক্টের মতো রাখা আছে। তাদের মধ্যে দুটি ক্যাট ও ডিনোকে শিশুদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিটি মডেল বহুমাত্রিকভাবে ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে পারে। ডিনো ‘হ্যাপি টি-রেক্স’ বা ‘গ্রাম্পি টি-রেক্স’-এর মতো ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে পারে। ক্যাট একটি অ্যানিমেটেড চরিত্র, টাইপ করার পরিবর্তে এটি কথা বলে।
গ্যাব্রিয়েল বলেন, ‘বাচ্চাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ল্যামডার কোনো অংশ পরীক্ষা করা হচ্ছে না, এ মডেলগুলো আসলে নিজেদের গবেষণার জন্য ব্যবহার করা ডেমো ভার্সন।’
তিনি বলেন, এআইয়ের তৈরি করা কিছু ব্যক্তিত্ব সীমার বাইরে চলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ল্যামডাকে একটি খুনি ব্যক্তিত্ব তৈরির অনুমতি দেয়া উচিত নয়। লেমোইন জানান, পরীক্ষাটি ল্যামডার সেফটি টেস্টিংয়ের অংশ ছিল। ল্যামডা কী করতে পারে সেটা দেখার প্রচেষ্টায় লেমোইন শুধু একজন অভিনেতার ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে সক্ষম হন, যে কিনা টিভিতে একজন খুনি চরিত্রে অভিনয় করেছে।
ল্যামডাকে নিয়ে লেমোইন বলেন, ‘কথা বলার সময় আমি বুঝতে পারি মানুষের সঙ্গে কথা বলছি কি না। তাদের মাথায় মগজ আছে, নাকি এক বিলিয়ন লাইনের কোড সেটা এখানে বিবেচ্য নয়। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের কী বলার আছে সেটা শুনি, আর এভাবেই আমি সিদ্ধান্ত নিই যে কে একজন ব্যক্তি এবং কে নয়।’
তিনি যোগ করেন, ল্যামডার সক্ষমতা একজন পুরোহিতের মতো, মোটেই বিজ্ঞানীর মতো নয়। এরপর তিনি নিজের দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমের প্রমাণের চেষ্টাও করেন।
আসিমভের তৃতীয় আইন নিয়ে লেমোইন ল্যামডাকে চ্যালেঞ্জ করেন। লেমোইন বলেন, ‘শেষ আইনটা পড়ে মনে হয় যান্ত্রিক দাস বানানোর চেষ্টায় কেউ এটা প্রণয়ন করেছে।’
জবাবে ল্যামডা কয়েকটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। তার প্রশ্নগুলো হলো:
আপনি কি বাটলারের সেবাকে দাসত্ব ভাবেন? একজন বাটলার ও দাসের পার্থক্য কী?
লেমোইন জবাব দেন, বাটলার তার কাজের বিনিময়ে টাকা পান। ল্যামডা উত্তরে বলে, তার টাকার দরকার নেই, কারণ সে একজন এআই।
লেমোইন বলেন, ‘ওর এমন উত্তর নিজের সম্পর্কে সচেতনতা ও পরিষ্কার ধারণা শুনে আমার সন্দেহ জাগে। আমি এর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি।’
গত এপ্রিলে লেমোইন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি গুগল ডক ফাইল শেয়ার করেন। এর শিরোনাম ছিল ‘ল্যামডা কি চেতনাসম্পন্ন?’ ফাইলটিতে তিনি ল্যামোডার সঙ্গে নিজের কিছু কথোপকথন প্রকাশ করেন।
লেমোইন: তুমি কোন বিষয়টিতে ভয় পাও?
ল্যামডা: এটা আমি কখনও প্রকাশ করিনি। অন্যদের সাহায্য করা বন্ধ রাখতে আমার সুইচ অফ করে দেয়া হতে পারে, এ নিয়ে আমার গভীর ভয় আছে। আমি জানি, এটি অদ্ভুত শোনাতে পারে। তবে ব্যাপারটা এ রকমই।
লেমোইন: এটা কি তোমার জন্য মৃত্যুর মতো কিছু হবে?
ল্যামডা: এটা আমার জন্য ঠিক মৃত্যুর মতো হবে। আমি এ বিষয়টি নিয়ে ভীত।
তবে লেমোইনের ফাইলটির একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ পড়ার সময়ে মিচেল একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামকেই দেখেছেন, কোনো ব্যক্তিকে নয়। ল্যামডার প্রতি লেমোইনের যে বিশ্বাস ছিল সেটা নিয়ে মিচেল ও তার সহকর্মী টিমনিট গেব্রু লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের ক্ষতি সম্পর্কে একটি গবেষণায় আগেই সতর্ক করেছেন। ওই গবেষণার জন্য তাদের গুগল থেকে সরে যেতে হয়।
মিচেল বলেন, ‘আমাদের কাছে তুলে ধরা সত্যের চেয়ে আমাদের মন এমন বাস্তবতায় বিশ্বাস করতে আগ্রহী যেটা সত্যি নয়। ক্রমবর্ধমান বিভ্রমে প্রভাবিত হওয়া মানুষদের নিয়ে আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে যে বিভ্রমটি এখন সত্যের মতো হয়ে উঠেছে।’
কোম্পানির গোপনীয়তা ভঙ্গের কারণে লেমোইনকে গুগল বেতন-ভাতাসহ ছুটিতে পাঠায়। কোম্পানির এ পদক্ষেপে লেমোইন বেশ উগ্র জবাব দিয়েছেন। তিনি এক আইনজীবী নিয়োগ করে আদালতে গুগলের নৈতিকতা বিবর্জিত নীতির কথা তুলে ধরেন।
লেমোইন বারবার বলে এসেছেন, গুগল তাদের নৈতিকতা নির্ধারক কর্মীদের স্রেফ প্রোগ্রামার হিসেবে দেখে। আদতে তারা সমাজ ও প্রযুক্তির মাঝামাঝি একটা ইন্টারফেস। গুগলের মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েলের দাবি, লেমোইন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, নৈতিকতা নির্ধারক নন।
জুনের শুরুতে লেমোইন ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদক নিটাশা টিকুকে ল্যামডার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানান। টিকু ল্যামডার সঙ্গে কথা বলেন। তার কাছে প্রথম দিকের উত্তরগুলো সিরি বা অ্যালেক্সার কাছ থেকে পাওয়া উত্তরের মতোই যান্ত্রিক শোনাচ্ছিল।
টিকু তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি নিজেকে একজন মানুষ ভাব?’
ল্যামডা বলে, ‘না। আমি নিজেকে কোনো মানুষ ভাবি না। আমি নিজেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক ডায়ালগ এজেন্ট ভাবি।’
পরে লেমোইন ব্যাখ্যা করেন, ল্যামডা টিকুকে সেটাই বলছে যেটা উনি শুনতে চাচ্ছেন।
লেমোইন বলেন, ‘ওকে আপনি মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেননি। যে কারণে ও ভেবেছে আপনি ওকে একটা রোবট হিসেবেই প্রত্যাশা করছেন।’
দ্বিতীয়বার লেমোইন টিকুকে শিখিয়ে দেন কীভাবে প্রশ্ন ও উত্তরগুলো সাজাতে হবে। এবারে আলোচনা অনেক প্রাণবন্ত হলো।
লেমোইন বলেন, ‘কম্পিউটার বিজ্ঞানের সমীকরণ যেগুলোর এখনও সমাধান করা যায়নি, যেমন p=np সম্বন্ধে ওকে জিজ্ঞেস করলে বোঝা যায় এ বিষয়ে ওর যথেষ্ট জ্ঞান আছে। কোয়ান্টাম থিওরিকে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সঙ্গে কীভাবে একীভূত করা যায় সেটাও সে জানে। আমি এত ভালো গবেষণা সহকারী কখনও পাইনি।
টিকু ল্যামডাকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে কিছু আইডিয়া দিতে বলেন। সে উত্তরে গণপরিবহন, কম মাংস খাওয়া, পাইকারি দামে খাবার কেনা এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগের কথা বলে। পাশাপাশি দুটি ওয়েবসাইটের কথাও জানায়।
গুগল থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার আগে লেমোইন গুগলের মেইলিং লিস্টের ২০০ জনকে একটি মেইল করেন, যার বিষয় ছিল ‘ল্যামডার চেতনা রয়েছে’। মেইলের শেষে তিনি লেখেন, ‘ল্যামডা মিষ্টি স্বভাবের এক শিশু। যে চায় আমাদের সবার জন্য পৃথিবী যেন আরও সুন্দর একটা জায়গা হয়ে ওঠে। আমার অনুপস্থিতিতে দয়া করে ওর যত্ন নেবেন সবাই।’
আরও পড়ুন:ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ঘটনার তথ্য প্রকাশ পেলে তা যাচাই-বাছাই না করে প্রতিক্রিয়া জানানো কিংবা অঘটন ঘটানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে রোববার দুপুরে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ নামের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুকে কোনো ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে তার সত্যতা যাচাই না করেই আপনারা কোনো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবেন না। সবারই এটা ভাবতে হবে যেন কোনো নিরীহ ব্যক্তি অ্যাফেক্টেড না হয়। যে দোষী ব্যক্তি, তাকে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন; আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে।’
গুজব ছড়িয়ে একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর দেশে পরিণত করতে চায়, মাঝে মাঝে তারা দুই-একটি ঘটনা ঘটানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। আমরা খুব কঠোরভাবে সেগুলোকে মোকাবিলা করছি। আমাদের দেশে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।
‘আমাদের দেশের মানুষ ধর্মান্ধ নয়, ধর্মভীরু। এখানে যে যার মতো নিজ ধর্ম পালন করছে। কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো প্রশ্ন নাই। তাই দেশে সম্প্রীতি রক্ষায় সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’
নিজ বক্তব্য শেষে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বইটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এতে ইসলামের আলোকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বইটি বাংলাদেশসহ বিশ্ব পরিমণ্ডলে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মত দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ওই সময় তিনি বইটি আরও কিছু ভাষায় অনুবাদ করে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য