ফিলিপাইনের ১৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র, বংবং নামেও পরিচিত। তার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ফিলিপাইনে দুতার্তে যুগের অবসান হলো।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৬ বছর পর মার্কোস পরিবারের কেউ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ মালাকাংয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন।
এর আগে মে মাসে দেশটিতে হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেন মার্কোস।
১০ জন প্রার্থী ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও মার্কোসের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লেনি রব্রিদোর থেকে তিনি প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছিলেন।
মার্কোস পেয়েছিলেন ২ কোটি ১৭ লাখ ভোট এবং লেনি রব্রিদো পেয়েছিলেন ১ কোটি ৩ লাখ ভোট।
অথচ ২০১৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে এই লেনি রব্রিদোর কাছেই হেরেছিলেন মার্কোস।
নির্বাচনি প্রচারণায় তিনি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কমিয়ে আনা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লেনি রব্রিদো, যিনি দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার প্রতিশ্রুতি ছিল, দেশটির গণতন্ত্রের স্বার্থে আরও জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ সরকার প্রতিষ্ঠা করার।
ফিলিপিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরিয়েস আরুগে আল জাজিরাকে বলেছিলেন, ‘এই নির্বাচন মূলত ভালো ও খারাপের প্রচারণা। এটি স্পষ্ট যে দুতার্তে ছিলেন রাজতান্ত্রিক, স্বৈরাচার ও দায়মুক্তির প্রতিনিধি, সেখানে রব্রিদো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এর বিপরীত: সততা, দায়বদ্ধতা ও গণতন্ত্র।’
কে এই ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র?
ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র। যিনি ‘বংবং’ নামে পরিচিত। তার বাবা ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়র ফিলিপাইনের সাবেক স্বৈরশাসক। ১৯৮৬ সালে মার্কোস সিনিয়রকে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
৬৪ বছর বয়সী মার্কোস পড়াশোনা করেছেন ইংল্যান্ডের সাক্সেসের প্রাইভেট ওর্থ স্কুলে। তার অফিশিয়াল বায়োগ্রাফিতে তিনি নিজেকে একজন অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট দাবি করলেও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি নিশ্চিত করেছে, তিনি কেবল ১৯৭৮ সালে সোশ্যাল স্টাডিজে ডিপ্লোমা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি তার পড়াশোনা শেষ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, এই ডিপ্লোমা কখনই গ্র্যাজুয়েশনের ডিগ্রির সমতুল্য নয়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক ফিলিপিনো ছাত্রদের সংগঠন অক্সফোর্ড ফিলিপিন্স সোসাইটিও জানিয়েছিল, মার্কোসের অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েশনের দাবি সত্য নয়। এমনকি সংগঠনটি একজন হেভিওয়েট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মিথ্যা দাবিতে উদ্বেগও জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন:চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে রেল সংযোগ-সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ভারত সরকার। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দেশটির সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশকে এড়িয়ে এখন নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা করছে মোদি সরকার।
এই সিদ্ধান্তে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ চলমান প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে ও ৫টি সম্ভাব্য প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। এসব প্রকল্প মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছিল।
বন্ধ হওয়া প্রধান প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ১. আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত রেল সংযোগ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি ভারত সরকারের প্রায় ৪০০ কোটির অনুদানে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ও ত্রিপুরার অংশ ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। এতে ত্রিপুরা ও আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সংযোগ বাড়ার কথা ছিল।
২. খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্প। এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি, যা ভারত সরকারের কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা ভারতের ব্রডগেজ রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতো।
এই প্রকল্পের আওতায় মোংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেইসঙ্গে এই বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকারও থাকার কথা ছিল ভারতের।
৩. ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ প্রকল্প। এটি ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ৫০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি অর্থ-সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল। তবে অর্থ ছাড় ও প্রশাসনিক অনুমোদনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫টি প্রকল্পে অবস্থান জরিপ কাজ চলছিল, যা এখন স্থগিত রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ ও লাগাতার বোমাবর্ষণ চলছে। আর এ কারণে গাজার শিশুরা এখন এক বেলার খাবারও পাচ্ছে না। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১২টি প্রধান আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি মানবিক সংস্থার নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা এখন ‘পুরোপুরি ভেঙে পড়ার’ পথে। ইসরায়েলের ১৮ মাসব্যাপী সামরিক অভিযান ও গত মাসে আরোপিত পূর্ণ অবরোধ পরিস্থিতিকে চরম সংকটময় করে তুলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৪৩টি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সাহায্য সংস্থার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই তাদের কার্যক্রম স্থগিত অথবা সীমিত করে দিয়েছে, কারণ গাজার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নির্বিচার বোমাবর্ষণের কারণে চলাচল করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অক্সফামের নীতিনির্ধারক বুশরা খালিদি বলেন, শিশুরা এখন এক বেলার কম খাবার খাচ্ছে ও তাদের পরবর্তী খাবারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবাই কেবল টিনজাত খাবার খাচ্ছে এবং অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের জরুরি সমন্বয়কারী আমান্দে বাজেরল বলেন, সাহায্যকর্মীরা অত্যন্ত সীমিত রসদের মধ্যে সহায়তা দিতে গিয়ে নিরুপায়ভাবে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুর দৃশ্য দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। এটি শুধু মানবিক ব্যর্থতা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা একটি জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার অধিকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
গাজা শহর থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, উপত্যকাটিতে শিশুখাদ্য বা বেবি ফর্মুলার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। নবজাতক ও শিশুদের জন্য উপযুক্ত দুধ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার ও ফার্মেসিগুলোতে এসব পণ্য প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে।
দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসার জন্য আসা ফাদি আহমেদ বলেন, ‘আমার ছেলের ফুসফুসে সংক্রমণ হয় ও রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত অপুষ্টি ও দুর্বলতার কারণে সে আর লড়াই করতে পারেনি।’
এক দাদি ইনতিসার হামদান জানান, তার নাতি দুধের অভাবে তিন দিন না খেয়ে থাকার পরে মারা গেছে। এমন দৃশ্য দেখে বেঁচে থাকাটাও কঠিন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানে বর্তমানে অন্তত ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মানবিক কর্মীদের জন্য গাজা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ স্থান। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০-রও বেশি সাহায্যকর্মী ও ১ হাজার ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এসব সংস্থা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো যেন সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি গাজায় বাধাহীনভাবে সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে সামরিক অভিযানের নামে গাজায় রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১ হাজার ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।
তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা চাপা পড়েছে তাদেরও নিহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রায় ১৮ মাস ধরে সংঘাত চলছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার ভূখণ্ডে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে অংশ নিতে নতুন করে ৩০ হাজার তরুণ যোদ্ধাকে নিয়োগ দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। তাদের সামরিক শাখা ইজ আদ-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের অধীনে এ যোদ্ধাদের যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়ার বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের গোপন সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যদিও তাদের সামরিক দক্ষতা শহুরে যুদ্ধ, রকেট হামলা ও বিস্ফোরক স্থাপন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ- এমনটাই দাবি করেছে আল-আরাবিয়া। যোদ্ধাদের কবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই তারা দলে যুক্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। শুরু থেকেই গাজা দখলের জন্য ব্যাপক হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি সেনারা। এখন পর্যন্ত গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হলেও তারা সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকা দখল করে সেখানকার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে ‘বাফার জোন’ তৈরি করেছে। এসব এলাকায় ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে তারা। পাশাপাশি হামলার নামে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চালানো গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে গাজা পরিণত হয়েছে এক মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রে।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কচ্ছপ খাচ্ছে গাজাবাসী
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ খাদ্যসংকটের কারণে অনেক ফিলিস্তিনি বাসিন্দা এখন বেঁচে থাকার তাগিদে সামুদ্রিক কচ্ছপের মাংস খাচ্ছে। বিশেষ করে গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের এক তরফা স্থল ও বিমান হামলা শুরুর পর ত্রাণ প্রবেশ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উপত্যকাবাসী। আরব নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবার না পেয়ে অনেক পরিবার এখন বিকল্প প্রোটিনের উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপ রান্না করে খাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ আগে কখনো কচ্ছপ দেখেননি, এমনকি ভয় পেতেন- তবুও ক্ষুধার তীব্রতায় বাধ্য হয়ে তারা এই নিষিদ্ধ প্রাণীকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছেন।
গাজাবাসী মাজিদা জানান, তিনি এখন খান ইউনিস শহরের একটি তাঁবুতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, রান্নার হাঁড়িতে কচ্ছপের মাংস ফোটাতে ফোটাতে বলেন, বাচ্চারা কচ্ছপকে ভয় পেত। তাই আমরা বলেছিলাম, এটা বাছুরের মাংসের মতোই সুস্বাদু। কেউ কেউ খেয়েছে, কেউ খায়নি।
৬১ বছর বয়সি মাজিদা বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই তৃতীয়বার তিনি কচ্ছপ রান্না করছেন। বাজারে কিছুই নেই, বিশেষ করে মাংস তো নেই-ই। তিনি বলেন, দুই ব্যাগ ছোট সবজি কিনতেও ৮০ শেকেল (২২ ডলার) খরচ করতে হয়।
সাধারণত কচ্ছপের খোলস ছাড়ানোর পর, মাংস কেটে সেদ্ধ করে তা পেঁয়াজ, টমেটো, গোলমরিচ ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে রান্না করা হয়। তবে এই প্রাণী আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত ও বিপন্ন হিসেবে পরিচিত। তবুও গাজার উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়লে এসব কচ্ছপকেই বর্তমানে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আবদেল হালিম কানান নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, আমরা কখনই কচ্ছপ খাওয়ার কথা ভাবিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর খাবারের এতই সংকট হয়েছে যে, আমাদের কোনো উপায় নেই। আমরা ইসলামী নিয়ম মেনেই কচ্ছপ জবাই করছি। যদি দুর্ভিক্ষ না হতো, তাহলে কচ্ছপ ছেড়ে দিতাম। তবে এখন আমাদের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে।
বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছে, এখানে দুর্ভিক্ষ এখন কেবল সম্ভাবনা নয়, বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।
ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ, বাজারে পণ্যশূন্যতা এবং ক্রমবর্ধমান দামে সাধারণ মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে কেউ কেউ পশুখাদ্য, ঘাস, এমনকি পচা পানি পান করতেও বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থায় কচ্ছপের মতো একটি বিপন্ন প্রজাতি হয়ে উঠেছে গাজাবাসীর শেষ আশার উৎস- একটি প্রোটিনের বিকল্প, যা তারা কখনো ভাবেননি যে একদিন খেতে হবে। ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে, জীবনধারণের এই ত্যাগ-তিতিক্ষার দৃশ্য এখন গাজার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা নিয়োগ দিল মেটা
হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকের মালিক মেটা এখন দখলদার ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক নীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করছে। একজন আমেরিকার বিশ্লেষক মেটা কোম্পানি এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার মতে, আমেরিকান লেখক এবং বিশ্লেষক নেট বেয়ারের ‘ডু নট প্যানিক’ ব্লগে প্রকাশিত এবং তারপর গ্রেজোন গবেষণা ডাটাবেস দ্বারা পুনঃপ্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে ইসরায়েলের সঙ্গে মেটার গভীর সম্পর্কের আরও বিভিন্ন দিক প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ জনেরও বেশি সাবেক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা এবং গুপ্তচর যার মধ্যে ইউনিট ৮২০০-এর সঙ্গে যুক্ত গোয়েন্দা বাহিনীও রয়েছে, বর্তমানে মেটাতে কাজ করছেন।
এই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন হলেন মেটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতির প্রধান শিরা অ্যান্ডারসন যার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার ইতিহাস রয়েছে। অ্যান্ডারসন আগে দখলদার শাসকগোষ্ঠীর সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কমান্ডার দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেছিলেন এবং পরে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আইনি সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হন।
ইউক্রেনে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে এই ঘোষণা দেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার থেকে এক পার্শ্বিক এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। যা আগামী সোমবার (২১ এপ্রিল) মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। এ সময় ইউক্রেনে সবধরনের হামলা বন্ধ রাখবে রুশ সেনারা।
ক্রেমলিন আরও জানিয়েছে, তাদের প্রত্যাশা ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে এবং ইস্টারের সময়টায় হামলা থেকে বিরত থাকবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পুতিন নিশ্চিত করেছেন এই সময়টায় তিনি তার সেনাদের সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে ইউক্রেন যদি কোনো ধরনের উসকানি দেয় অথবা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে তাহলে তার সেনারা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘মানবিক দিক থেকে দেখে, আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার-সোমবার পর্যন্ত রাশিয়া ইস্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছে। আমি নির্দেশ দিয়েছি এই সময়টায় সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি ইউক্রেনীয়রা আমাদের এই ঘোষণাতে সম্মত হবে। একই সময়ে, যুদ্ধবিরতির যে কোনো ধরনের লঙ্ঘন অথবা শত্রুদের যে কোনো ধরনের উসকানি প্রতিরোধে আমাদের সেনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক হামলার নির্দেশ দেন পুতিন। ওইদিন ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার হাজার হাজার সেনা। প্রাথমিক অবস্থায় ইউক্রেনে তিনদিনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢুকেছিল রুশ সেনারা। তাদের লক্ষ্য ছিল রাজধানী কিয়েভ দখল করে ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাত করা। তবে এতে ব্যর্থ হয় রুশ সেনারা। পরবর্তীতে তারা ইউক্রেনের দুটি বড় অঞ্চল লুহানেস্ক ও দোনেৎস্ক দখল করার দিকে মনোযোগ দেয়। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে রুশ বাহিনী এ দুটি অঞ্চলের প্রায় পুরোটি দখল করে ফেলেছে।
মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ। এটি ভেঙে সেখানে ইহুদি মন্দির স্থাপনের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা। হিব্রু ভাষার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে তারা। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। গতকাল শনিবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ব্যাপারে সতর্কতা দিয়ে ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয় এক্সে একটি পোস্ট করেছে। এতে তারা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তারা বলেছে, আল-আকসা মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনাকে আমরা দখলকৃত জেরুজালেমে ইসলামিক এবং খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থানে পদ্ধতিগত উসকানি হিসেবে বিবেচনা করি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং এ বিষয় সংক্রান্ত জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে এই উসকানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব নিয়ে দেখা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
ইসরায়েলি অবৈধ বসতিস্থাপনকারীরা প্রায়ই মুসলিমদের পবিত্র এ স্থানে গিয়ে তাণ্ডব চালায়। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তারা সেখানে ধর্মীয় প্রার্থনা করে। এতে তাদের সরাসরি সহায়তা করে দখলদার ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এসব অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত ভূমিতে জোরপূর্বক বাস করে। তারা দখলদার ইসরায়েলি সরকার থেকে সবধরনের সুরক্ষা পেয়ে থাকে।
গত সপ্তাহেও আল-আকসা মসজিদে কয়েক ডজন ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারী (সেটলার) জোর করে ঢুকে ধর্মীয় আচার পালন করে। জেরুজালেমের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চুক্তি অনুযায়ী, ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচিত ওই মসজিদ চত্বরে অমুসলিমদের কোনো ধরনের ধর্মীয় আচার পালনের অনুমতি নেই।
১৯৬৭ সালে আল-আকসা নিজেদের দখলে নেয় ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী, সেখানে মুসলমানরা নামাজ আদায় করতে পারেন। ইহুদিরা প্রবেশ করতে পারেন, তবে প্রার্থনার অনুমতি নেই তাদের। এরপরও সেখানে অবস্থিত ‘টেম্পল মাউন্টে’ প্রার্থনা করে থাকেন ইহুদিরা।
আল-আকসায় ইহুদিদের প্রবেশ বাড়ছে
ইসরায়েল এক দিনে এক হাজারের বেশি ইহুদি পুন্যার্থীকে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি দলে সর্বোচ্চ ১৮০ জন করে ইহুদি প্রবেশ করেছেন। সংখ্যার দিক থেকে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রবেশের ঘটনা। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পাহারায় এ প্রবেশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ইহুদিদের কাছে এ স্থান ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত।
ইসরায়েল এত দিন পর্যন্ত একসঙ্গে ৩০ জনের বেশি ইহুদি প্রবেশে অনুমতি দিত না। কিন্তু এবার সে নীতি থেকে সরে এসে একসঙ্গে বৃহৎ পরিসরে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। আল-আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধানে থাকা ইসলামিক ওয়াক্ফ জানায়, গত বুধবার এক দিনে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি ইহুদি মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। পাসওভারের ছুটি শুরুর পর এ সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে বলে দাবি তাদের।
ওয়াক্ফের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক আউনি বাজবাজ বলেন, ‘গত কয়েক দিনে যা ঘটেছে তা নজিরবিহীন। এটি অত্যন্ত ভীতিকর পরিস্থিতি। ২০০৩ সালে যেখানে ২৫৮ জন প্রবেশ করেছিল, এখন তা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এমন চিত্র আগে দেখিনি।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আল-আকসা মসজিদকে ভাগ করে ফেলার বিষয়টি ক্রমেই বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি অনেকটাই হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের পুনরাবৃত্তি।’ তিনি যোগ করেন, ‘গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।’
স্থিতাবস্থার প্রশ্নে বিতর্ক
ঐতিহাসিকভাবে ১৭৫৭ সালের উসমানীয় ফরমান অনুযায়ী, অমুসলিমদের আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং ইহুদিদের শুধুমাত্র ওয়েস্টার্ন ওয়াল বা দেয়াল সংলগ্ন এলাকায় প্রার্থনার অনুমতি ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও বারবার বলেছেন, ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় থাকবে।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের প্রবেশ ক্রমেই নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। অনেক রক্ষণশীল ইহুদি নেতা টেম্পল মাউন্টে উপাসনার দাবি জানিয়ে আসছেন, যদিও তাদের ধর্মীয় নেতারা ‘পবিত্রতা রক্ষা না হওয়া পর্যন্ত’ সেখানে প্রার্থনার অনুমতি দেননি।
সরকারের কট্টর ডানপন্থি সদস্য ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বারবার আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদি উপাসনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি তাকে বেশ কয়েকবার মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করতেও দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ভিসা বাতিল হওয়াদের মধ্যে অর্ধেক শিক্ষার্থীই ভারতীয়। গতকাল শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের অভিযোগে সরব হয়েছে কংগ্রেস। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএলএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ৩২৭টি ভিসা বাতিলের ঘটনার মধ্যে ৫০ শতাংশই ভারতীয়। এই পরিসংখ্যানে উদ্বেগ প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ইস্যুটি কি মার্কিন প্রতিরূপের সঙ্গে আলোচনায় তোলা হবে?
এআইএলএর বক্তব্য অনুযায়ী, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (ডিওএস) এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিবাসন আইনের কঠোর প্রয়োগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিশানা করছে। এতে করে ভিসা বাতিল, পড়াশোনার স্ট্যাটাস বাতিল এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। সংস্থাটি ৩২৭টি কেস সংগ্রহ করেছে, যার অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এর পরই আছে চীন। দেশটির ১৪ শতাংশ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশ।
রমেশ এক্স (টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, ভিসা বাতিলের কারণ অস্পষ্ট এবং এলোমেলো। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ও আশঙ্কা ছড়াচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন? এআইএলএর দাবি, বিক্ষোভে জড়িত নয়- এমন শিক্ষার্থীদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। অনেকের এসইভিআইএস স্ট্যাটাস বাতিল করা হচ্ছে, যা পড়াশোনা ও থাকার অনুমতির মূল ভিত্তি।
৪০ সেকেন্ডের মধ্যে আবেদন বাতিল!
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য বি১/বি২ ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করেছিলেন ভারতের এক নাগরিক। ভারতে তার স্থিতিশীল চাকরি এবং সুস্পষ্ট ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও সাক্ষাৎকারের মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে তার আবেদন বাতিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই অভিজ্ঞতা সামাজিকমাধ্যম রেডিটে শেয়ার করেছেন তিনি, যা মার্কিন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার সাধারণ সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ওই ব্যক্তি ফ্লোরিডায় দুই সপ্তাহের ছুটি কাটাতে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি ডিজনি ওয়ার্ল্ড এবং ইউনিভার্সাল স্টুডিওর মতো জনপ্রিয় স্থান ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন দূতাবাসে তার সাক্ষাৎকার মাত্র তিনটি প্রশ্নের পরই শেষ হয়ে যায়।
দূতাবাস তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনি কেন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে চান?’, ‘আপনি কি এর আগে কখনো ভারতের বাইরে সফর করেছেন?’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রে কি আপনার বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যদের কেউ থাকে?’ এর পরই তাকে ২১৪(বি) ধারার অধীনে ভিসা প্রত্যাখ্যানের নোটিশ দেওয়া হয়।
জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এর আগে কখনো ভারতের বাইরে সফর করিনি। তবে ফ্লোরিডায় আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে এবং তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ এই জবাবের পরপরই তার আবেদন বাতিল করা হয়।
রেডিটে একজন ব্যবহারকারী এই পরিস্থিতির সারাংশ তুলে ধরে বলেন, ‘আপনার আবেদন সঠিকভাবেই বাতিল হয়েছে, যদিও এটা দুর্ভাগ্যজনক। আপনার কোনো বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড নেই এবং আপনার প্রেমিকা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক এবং ভারতে ফেরার কোনো শক্তিশালী কারণ না থাকার ইঙ্গিত দেয়।’
মার্কিন ভিসা প্রত্যাখ্যানের অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিজ দেশের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক প্রমাণে ব্যর্থতা। এই সম্পর্কের মধ্যে থাকতে পারে স্থিতিশীল চাকরি, সম্পত্তি বা পারিবারিক দায়বদ্ধতা। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর স্থিতিশীল চাকরি থাকা সত্ত্বেও বিদেশে ভ্রমণের রেকর্ড না থাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রেমিকার উপস্থিতি তার সেখানে অতিরিক্ত সময় থাকার ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
ভিসা আবেদনকারীদের উচিত তাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা। ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে ভুল বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দেওয়া বা ভ্রমণের উদ্দেশ্য পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে এবং আবেদন বাতিল হতে পারে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও অনেকে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ইসরায়েলি বিমান হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের বারাকা পরিবারের একটি আবাসিক বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমান। এতে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া একটি নাপিতের দোকানে বিমান হামলার পর দুই শিশু ও এক নারীসহ আরও ৬জন নিহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘খান ইউনিসে একাধিক হামলায় ৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে আরও দুজন নিহত হয়েছেন।’
বাসাল বলেন, উত্তরে, তাল আল-জাতার এলাকায় মাকদাদ পরিবারের বাড়িতে বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাজা শহরের দুটি বাস্তুচ্যুত তাঁবুতে বিমান হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
সংবাদ বিবৃতিতে সিভিল ডিফেন্স সতর্ক করে দিয়েছে, জ্বালানি সংকটের কারণে আগামী দিনে তাদের জরুরি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতির জন্য তারা সাহায্য এবং জ্বালানি প্রবেশের উপর ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইডিএফ সৈন্যরা গাজায় সশস্ত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করছে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করছে।
আইডিএফ আরও জানায়, ‘ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজা জুড়ে প্রায় ৪০টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এরমধ্যে সন্ত্রাসী, সামরিক কাঠামো এবং অস্ত্র সংরক্ষণাগার রয়েছে।’
মন্তব্য