যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় নিশ্চিতের পর ক্যাপিটল হিলে এক নারকীয় তান্ডব চালিয়েছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা। যার তদন্ত এখনও চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন সহকারী ক্যাসিডি হাচিনসন ৬ জানুয়ারি ২০২১-এর দাঙ্গা তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেয়ার সময় জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলকে উল্টে দিতে ২০২০ সালে সমর্থকদের ক্যাপিটলে ঝড় তোলার আহ্বান যখন জানিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প, তিনি তখন জানতেন যে তার সমর্থকদের কাছে অস্ত্র আছে।
হাচিনসন জানান, শুধু ট্রাম্পই নন, হোয়াইট হাউসের অনেক শীর্ষকর্তাও সহিংসতার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন।
তিনি বলেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও ক্যাপিটলে মিছিলে যোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।
হাচিনসন জানান, ট্রাম্প সে সময় বলেন, ‘তারা এখানে আমাকে আঘাত করতে আসেনি, ওদের ভেতরে (ক্যাপিটল হিলে) যেতে দাও।’
সে সময় ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর জন র্যাটক্লিফ হোয়াইট হাউসকে বলেন, এমন ঘটনা প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকারের (জো বাইডেন) জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের কৌঁসুলি প্যাট সিপোলোন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, দেখে মনে হচ্ছে হোয়াইট হাউস দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে।
ট্রাম্প সমর্থকেরা কীভাবে ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের অফিস ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ করেছিল সে বিষয়ে কংগ্রেসের একটি কমিটি এখনও তদন্ত করছে।
এই প্রথমবারের মতো তদন্তকারীরা সেই দাঙ্গার সময় হোয়াইট হাউসের ভেতরে ঠিক কী চলছিল সেই বিষয়ে ধারণা পেলেন হাচিনসনের সাক্ষ্য থেকে।
তবে ডনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই তার বিরুদ্ধে করা হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের সিলেক্ট কমিটির তদন্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:নিজের ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়ে নিউ ইয়র্ক স্টেটের নাগরিক তদন্তের অংশ হিসেবে শপথ নিয়ে সাক্ষ্য দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রতিষ্ঠানের সম্পদ মূল্যায়নে ঋণদাতা এবং কর কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে নিউ ইয়র্কের তদন্ত দল।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট-ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের সঙ্গে বুধবার দেখা করবেন তিনি।
জেমস সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রতিষ্ঠানের সম্পদের মূল্য ভুলভাবে বর্ণনা করেছে কি না, তা তদন্ত করছেন। জেমসের কার্যালয় জানুয়ারিতেও ট্রাম্পকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল।
এফবিআই এজেন্টরা মঙ্গলবার ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের মার-এ-লাগো এস্টেটে অভিযান চালায়। এরপর ট্রাম্পের অসংখ্য আইনি জটিলতাগুলো আবার লাইমলাইটে চলে আসে। এদিন ট্রুথ সোশ্যালে প্রায় চার মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার প্রশাসনকে একহাত নেন খ্যাপাটে ট্রাম্প। আভাস দেন আগাম নির্বাচনে প্রতিযোগিতার।
এফবিআইয়ের দাবি, ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় গোপনীয় কিছু তথ্য সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এমন ধারণাই এখন স্পষ্ট।
ট্রাম্প জানান, আজ রাতে নিউ ইয়র্ক সিটিতে আছি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ উইচ হান্টের ধারাবাহিকতার কারণে আগামীকাল বর্ণবাদী এনওয়াইএস অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দেখা হচ্ছে!
‘আমার বিশাল কোম্পানি এবং আমাকে চারদিক থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে।’
চলতি বছরের মে মাসে অ্যাটর্নি জেনারেলের তদন্ত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জানিয়ে তদন্ত শেষ করতে ট্রাম্পের একটি মামলা খারিজ করেছিলেন এক বিচারক।
জেমস একজন ডেমোক্র্যাট, সোচ্চার ট্রাম্প সমালোচক। আদালতের ফাইলিংয়ে তিনি জানিয়েছেন, তার অফিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে। ট্রাম্পের কোম্পানি ‘লোন, বিমা কভারেজ এবং ট্যাক্সসহ প্রচুর অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য সম্পদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। তাই তদন্তের মাধ্যমে জড়িত পক্ষের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
এর আগে ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়র এবং ইভাঙ্কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ট্রাম্পের সাক্ষ্য ম্যানহাটন জেলা অ্যাটর্নি অফিস ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অফিসও ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির তদন্তে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন এবং ফিন্যান্স চিফ অ্যালেন ওয়েইসেলবার্গের বিরুদ্ধে কর জালিয়াতির অভিযোগ আছে। তবে তিন বছর ধরে চলা তদন্তটি যখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের দিকে মনোযোগী বলে মনে হচ্ছিল, তখন (জানুয়ারিতে) নতুন অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ দায়িত্ব নেন। এরপর তদন্তের গতি মূলত স্থবির হয়ে পড়ে।
তদন্তের একজন সাবেক প্রসিকিউটর তখন থেকে বলে আসছেন যে ব্র্যাগের ধারণা তারা যে প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন, তার ভিত্তিতে সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এফবিআই এবং নিউ ইয়র্কে তদন্তের বাইরে জর্জিয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে হারের পর রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলকে ভোটের জন্য চাপ দেয়ার ঘটনাটি নির্বাচনি জালিয়াতি বা অন্য কোনো অপরাধে পড়েছে কি না তা তদন্ত হচ্ছে জর্জিয়ায়।
এ ছাড়া ট্রাম্প এলি ম্যাগাজিনের সাবেক লেখক ই জিন ক্যারলের করা মানহানির মামলারও মুখোমুখি হয়েছেন। ১৯৯০-এর দশকে নিউ ইয়র্ক সিটির একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ক্যারলকে ট্রাম্প ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুধু যে রাজ্যে রাজ্যে তদন্ত হচ্ছে তা না, কংগ্রেসের একটি প্যানেল গত বছরের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে ৪ মুসলিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের হাতে আটক ৫১ বছর বয়সী মুহাম্মদ সাইদের বিরুদ্ধে ২ জন মুসলিমকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, অন্য ২ হত্যাকাণ্ডেও সাইদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনতে কাজ করছে তারা।
অভিযুক্তের বাড়ি থেকে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এর আগে ৪ মুসলিমের হত্যাকে বিদ্বেষপ্রসূত হামলা হিসেবে ধারণা করা হয়েছিল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসও এই হামলার নিন্দা জানানোর সময় একে বিদ্বেষপ্রসূত হামলার কথাই বলেন।
যদিও পুলিশ একে বিদ্বেষমূলক হামলা বলেনি।
আল বুকার্ক পুলিশপ্রধান হ্যারল্ড মেডিনা মঙ্গলবার বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তারা আগেই একটি গাড়ি শনাক্ত করেছিল। রুপালি রঙের সেই ভক্সওয়াগন গাড়িটি সম্পর্কে তথ্য দিতে শহরবাসীর প্রতি আহ্বানও জানায় পুলিশ।
তদন্তকারীরা বলছেন, সম্ভবত ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণেই হত্যাগুলো ঘটেছে। সন্দেহভাজন আফগান নাগরিক কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন।
পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত মুহাম্মদ সাইদ একজন সুন্নি মুসলিম। তিনি পুলিশকে বলেছেন, তিনি আশঙ্কা করছিলেন তার মেয়ে শিয়া কোনো মুসলিমকে বিয়ে করতে পারে।
তবে পুলিশ বলছে, এটিই সত্যিকার কারণ কি না তা স্পষ্ট নয়। আরো অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
গত ৯ মাসে এই হত্যার ঘটনাগুলো ঘটেছে। তবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মারা গেছেন ৩ পাকিস্তানি। যারা একই মসজিদে জমায়েত হতেন। তাদের কোনো সতর্কতা ছাড়াই হত্যা করা হয়।
অন্য আফগান ব্যক্তি মোহাম্মদ আহমাদিকে গত নভেম্বরে হত্যা করা হয়।
তবে হত্যাকাণ্ডগুলো কী একই ভাবে করা হয়েছে কি না তা জানায়নি আল বুকার্ক পুলিশ।
আরও পড়ুন:অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ২৮ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেয়া একটি আইনে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
প্রযুক্তি খাতে চীনের এগিয়ে যাওয়ার শঙ্কার মধ্যে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার আইনটিতে সই করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
প্রযুক্তি খাতে বিপুল বিনিয়োগ নিশ্চিতের এ আইনে যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার চিপ উৎপাদন কারখানা নির্মাণকারী কোম্পানিগুলোর করে ছাড় দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর অংশ হিসেবে আরও সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়ে আসছিল বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী। মাইক্রোচিপের বৈশ্বিক স্বল্পতা তাদের এ আহ্বানকে আরও জোরালো করে।
আইনটির বিষয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার বলেন, এটি পটপরিবর্তন করে দেবে, যা আগামী শতকে আমেরিকার নেতৃত্ব ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কথা উল্লেখ না করে শুমার বলেন, ‘আমাদের পিছিয়ে পড়তে দেখে কর্তৃত্ববাদীরা উল্লসিত ছিল এবং ভেবেছিল আমরা নির্বিকার বসে থাকব। চিপস অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাক্ট পাসের মধ্য দিয়ে আমরা আরেকটি মহান আমেরিকান শতক নিশ্চিতের বিষয়টি খোলাসা করে দিচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের মোট সেমিকনডাক্টরের ১০ শতাংশের মতো জোগান দেয়। গাড়ি থেকে মোবাইল ফোনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এই সেমিকনডাক্টর। ১৯৯০ সালে সেমিকনডাক্টরের বৈশ্বিক জোগানের প্রায় ৪০ শতাংশ দিত যুক্তরাষ্ট্র।
এ খাতে হারানো প্রভাব ফিরিয়ে আনতেই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের পথ তৈরি করল বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন।
আইনটিতে সমর্থন দিয়েছে বিরোধী রিপাবলিকান পার্টিও।
আরও পড়ুন:বাসভবনে এফবিআইয়ের অভিযান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে জবাব দিতে চাইছেন তিনি। তাই তো অভিযানের কয়েক ঘণ্টা মধ্যেই, নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে নির্বাচনি প্রচারের আদলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন এ রিপাবলিকান।
ফক্স নিউজের খবরে বলা হয়, তিন মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওটি ফ্লোরিডার পাম বিচের বাড়িতে ফেডারেল এজেন্টদের অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় আপলোড করা হয়। একাধিক সূত্রের বরাতে ফক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত বাসভবনে যে সামগ্রী নিয়ে এসেছেন, অভিযান সেসবের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ন্যাশনাল আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল। অভিযানে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাসভবন থেকে অন্তত ১৫ বাক্সে গোপনীয় তথ্য-সামগ্রী মিলেছে বলে জানিয়েছে এফবিআই।
ভিডিওর শুরুতে আমেরিকাকে ‘পতনশীল জাতি’ বলে বর্ণনা করেন ট্রাম্প। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার থেকে শুরু করে আকাশছোঁয়া জ্বালানির দাম, এমন অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি জাতি যারা রাশিয়াকে একটি দেশ (ইউক্রেন) ধ্বংস করার অনুমতি দিয়েছি। তারা সেখানে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
‘আমরা এমন একটি জাতি যারা বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারীদের লেলিয়ে দিয়েছি, যা আগে কখনও হয়নি।’
নিজের আমেরিকান ফার্স্ট নীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরোক্ষ সমালোচনা করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি জাতি যারা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেয়া ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যবহারে চীনকে অনুমতি দিচ্ছি। এই অর্থ দিয়ে তারা (চীন) সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে।
দুঃখ প্রকাশ করে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি জাতি যারা গত দুই বছরে সারা বিশ্বে নিজেদের সম্মান খুইয়েছি। আমেরিকা বিভিন্ন কারণে এখন হাসির পাত্র হয়ে গেছে। তবে পরিশ্রমী দেশপ্রেমিকরা আমেরিকাকে রক্ষা করবে।
‘এমন কোনো পর্বত নেই যেখানে আমরা আরোহণ করতে পারি না। এমন কোনো চূড়া নেই যেখানে আমরা পৌঁছাতে পারি না। এমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই যা আমরা মোকাবিলা করতে পারি না। আমরা মচকাব না, ভাঙবও না।
‘আমরা যে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তাদের পরাজয় নিশ্চিত। কারণ আমেরিকানরা ঈশ্বর কেবল ঈশ্বরের কাছেই নতজানু হয়। আমাদের এই মহানুভবতা আবার শুরু করার সময় এসেছে।’
ভিডিওটি একটি উদ্ধৃতি পড়ার মাধ্যমে শেষ হয়। ট্রাম্প বলেন, ‘সেরাটা এখনও আসতে বাকি।’
আরও পড়ুন:কারও হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘ট্রাম্পকে আমরা বিশ্বাস করি’, কারও হাতে ‘মেইক আমেরিকা, গ্রেট এগেইন’, আবার কারও হাতের প্ল্যাকার্ডে ‘ফেইক নিউজ সিএনএন’। দূর-দূরান্ত থেকে তারা এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার রিসোর্ট ও বাড়ি মার-এ-লাগোর সামনে। করছেন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই) ডনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়িতে অভিযান চালাতে পারে এমন খবর পেয়ে গত শুক্রবার থেকে তারা সাবেক প্রেসিডেন্টের সমর্থনে হাজির হয়েছেন।
সেখানেই তারা ট্রাম্পের পক্ষে নানা ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ও টিশার্ট পরে দাঁড়িয়েছেন।
ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, শুক্রবার থেকেই সমর্থকরা বাড়ির সামনে দাঁড়ালেও ট্রাম্পের বাড়িটিতে এফবিআই তল্লাশি শুরু করে সোমবার।
প্রেসিডেন্ট দপ্তরের কিছু নথিপত্র সরিয়ে ট্রাম্প নিজের ফ্লোরিডার রিসোর্টে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে অভিযোগের তদন্ত চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এর অংশ হিসেবে তার বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থাটি তল্লাশি চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার ট্রাম্প তার বাসাটিতে অভিযানের কথা জানালেও বিস্তারিত কিছু বলেননি।
অবশ্য তার আগেই একবার তার রিসোর্টটিতে অভিযান চালানো হতে পারে বলে জানান ট্রাম্প, আর সেই খবরেই সমর্থকরা আগেই হাজির হয়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
দুইবার অভিশংসনের শিকার হওয়া ট্রাম্পের সমর্থনে শুক্রবার যেসব সমর্থক ফ্লোরিডার রিসোর্টটির সামনে হাজির হন তারা অনেকেই সেখানে ক্যাম্প করে থাকছিলেন।
সোমবার রাতে তল্লাশির সময় সেখানে দেখা যায়, অনেকেই ট্রাম্পের সমর্থন করলেও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের নামে ক্রসচিহ্ন দিয়ে রেখেছেন।
এক তরুণকে দেখা যায়, যিনি ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে নিজেকে গর্বিত বলে দাবি করেন।
ট্রাম্পপন্থি অনেক প্রতিবাদকারীকে দেখা গেছে, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের স্লোগান, ‘মেইক ভোট, কাউন্ট এগেইন’, ‘কিপ আমেরিকা গ্রেট এবং ট্রাম্পকে আমরা বিশ্বাস করি’, লেখা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারের প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। তিনি ভোটের ফলাফল কারচুপি হয়েছে অভিযোগ করে পুনর্গণনার দাবি করেন।
যখন ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসায় এফবিআই অভিযান চালাচ্ছে, তখনও সেখানে তার সমর্থকরা ভোট গণনার দাবি করছেন। জো বাইডেনকে ডিকটেটর অ্যাখ্যা দিয়ে টিশার্ট পরে দাঁড়িয়েছেন, ‘নট মাই ডিকটেটর’।
এক প্রতিবাদকারী তো রীতিমতো সিএনএনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদকের পাশে দাঁড়িয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দেখাচ্ছেন, ‘ফেক নিউজ ইজ সিএনএন’।
ট্রাম্পের সমর্থনে অসংখ্য সমর্থক দাঁড়ালেও কিন্তু ট্রাম্পবিরোধী একজনকে সেখানে দেখা গেছে। সাবেক প্রেসিডেন্টকে গালি দিয়ে লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করছেন তিনি।
কিউবায় নির্বাসিত এক নারী এনবিসিসিক্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি বুঝতে পারছেন না কেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এফবিআই তদন্ত করছেন। কেন ‘হান্টার’ বাইডেন কিংবা ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর বিরুদ্ধে নন।
বাড়িতে অভিযানের তথ্য জানালেও তার বিস্তারিত কিছু বলেননি ডনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ ও সহায়তার পরও আমার বাড়িতে অঘোষিত তল্লাশির দরকার ছিল না; এটা সমীচীনও নয়। এমনকি তারা আমার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে।’
এ বিষয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। ওয়াশিংটন ডিসিতে এফবিআই সদর দপ্তর ও ফ্লোরিডার মায়ামিতে সংস্থাটির আঞ্চলিক কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তাও এ নিয়ে মুখ খোলেননি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় রিসোর্ট ও বাড়ি মার-এ-লাগোতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এফবিআই) কর্মীরা তল্লাশি চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় সোমবার এ তল্লাশি চালানো হয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট দপ্তরের কিছু নথিপত্র সরিয়ে ট্রাম্প নিজের ফ্লোরিডার রিসোর্টে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে অভিযোগের তদন্ত চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এর অংশ হিসেবে তার বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থাটি তল্লাশি চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ভাষ্য, এফবিআই কর্মীদের বিশাল একটি দল তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। ওয়াশিংটন ডিসিতে এফবিআই সদরদপ্তর ও ফ্লোরিডার মায়ামিতে সংস্থাটির আঞ্চলিক কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তাও এ নিয়ে মুখ খোলেননি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউস থেকে কয়েক বাক্স নথিপত্র সরিয়ে ফ্লোরিডার বাড়িতে রেখেছেন ট্রাম্প।
তল্লাশির কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, তার রিসোর্টটি অবরোধ ও দখলে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ ও সহায়তার পরও আমার বাড়িতে অঘোষিত তল্লাশির দরকার ছিল না; এটা সমীচীনও নয়। এমনকি তারা আমার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে।’
কেন তল্লাশি চালানো হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:কলম্বিয়ার এক সময়ের বামপন্থী গেরিলা নেতা গুস্তাভো পেত্রো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেত্রোর শপথের মধ্যে দিয়ে প্রথম কোনো বামপন্থী নেতা কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেন।
সশস্ত্র বামপন্থী গোষ্ঠী এম-নাইন্টিনের সাবেক এই সদস্য দেশটির রাজধানী বোগোতার বলিভার প্লাজায় রোববার বিকেলে শপথ নিয়েছেন এবং শপথ অনুষ্ঠানে তিনি বৈচিত্রের এই দেশটিতে বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ, বিদ্রোহী ও অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।
এর আগে গত ১৯ জুন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন গুস্তাভো পেত্রো।
৬২ বছর বয়সী এই সিনেটর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রোদোলফো হার্নান্দেজও তার জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
নির্বাচনে পেত্রোর বিজয়ের পর হার্নান্দেজ বলেছিলেন, ‘কলম্বিয়ার নাগরিকরা আমাকে ছাড়া অন্য একজনকে বেছে নিয়েছেন, তবুও আমি ফল মেনে নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, গুস্তাভো পেত্রো ভালো জানেন কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার আপসহীন সংগ্রাম সম্পর্কে আমার বিশ্বাস রয়েছে।’
পেত্রোর রানিংমেট ফ্রান্সিয়া মার্কেজ যিনি একজন ‘সিঙ্গেল’ মা এবং সাবেক গৃহকর্মী, তিনি দেশটির প্রথম আফ্রিকান বংশোদ্ভূত নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য