তুরস্ক সফর করছেন সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমান। পশ্চিমা দুনিয়ায় তিনি এমবিএস নামে পরিচিত। সফরে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে।
তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগজিকে হত্যার পর আঙ্কারা-রিয়াদ সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ওই ঘটনার পর এই প্রথম তুরস্ক সফরে এলেন সৌদির ভবিষ্যৎ বাদশাহ।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, সফরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ননে জোর চেষ্টা চালাবেন।
সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যায় সরাসরি মোহাম্মদ বিন সালমানকে দুষেছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবরাজ সালমান।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছে তুরস্ক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সহায়তার সন্ধানে আছে এরদোগান সরকার। এই পরিস্থিতিতে আঙ্কারা সফর করছেন সৌদি যুবরাজ।
জ্যেষ্ঠ এক তুর্কি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘সফরটি “সম্পূর্ণ স্বাভাবিককরণ এবং প্রাক-সংকট সময়ের পুনরুদ্ধার” নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুই নেতা শক্তি, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা বিষয়ে চুক্তি করেছেন।’
বহু বছরের উত্তেজনা পাশ কাটিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে সৌদি আরব।
মধ্যপ্রাচ্যে হালকা হয়ে পড়া প্রভাব পুনরুদ্ধারে জোর দিচ্ছেন সৌদি যুবরাজ সালমান। সাফ জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাতে চান তিনি।
মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহে জর্ডান এবং মিসর গিয়েছিলেন সালমান। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। খাশোগজি হত্যায় সৌদি শাসকদের এক হাত নিয়েছিলেন বাইডেন।
জামাল খাশোজগি সৌদি শাসকদের ঘোর সমালোচক ছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্টের হয়ে কলাম লিখতেন তিনি। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটের ঢুকে নিখোঁজ হন খাশোজগি।
পরে জানা যায়, তাকে ধরে সৌদি আরবে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠানো হয়েছিল। তারা ভুলবশত খুন করে ফেলেন খাশোগজিকে। পরে মরদেহ টুকরো টুকরো করে রাসায়নিকের সাহায্যে গলিয়ে ফেলা হয়েছিল।
হত্যার এক বছর পর সৌদির একটি আদালত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়ার অপরাধে পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে সাজা কমিয়ে করা হয় ২০ বছরের কারাদণ্ড। আরও তিনজনকে ৭ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মামলা হয় ইস্তানবুলের আদালতেও। মামলায় অভিযুক্ত যুবরাজ সালমানের দুই সহযোগীসহ ২৬ সৌদি নাগরিকের তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার চলছিল। গত মাসের শেষ দিকে এই বিচার বন্ধ করে দেয়া হয়। তার তিন সপ্তাহ পর আঙ্কারা সফরে এলেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
বিচারক জানিয়েছেন, মামলাটি সৌদি আরবের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সৌদি সরকার সন্দেহভাজনদের হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছিল।
এদিকে সাংবাদিক খাশোগজির বাগদত্তা চেঙ্গিজ যুবরাজ সালমানের তুরস্ক সফর নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। জানিয়েছেন, ন্যায়বিচারের লড়াই চলবে।
টুইটে তিনি লেখেন, ‘ তিনি (সালমান) প্রতিদিন একটি ভিন্ন দেশে সফরের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন করছেন, তা এই সত্যকে পরিবর্তন করবে না যে তিনি একজন খুনি।’
None of the diplomatic engagements would legitimize the unfairness and the injustice.
— Hatice Cengiz / خديجة (@mercan_resifi) June 22, 2022
We are in a fight to advocate and stand up for the morality and the humanitarian values that we uphold against the world leaders who ignore our most fundamental human rights, #justiceforjamal
সালমানের সফর নিয়ে নিজ দেশেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। বিরোধী রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা কামাল কিলিকদারোগ্লু বলেন, ‘খুনের নির্দেশদাতাকে আলিঙ্গন করা প্রেসিডেন্টের উচিত হয়নি।
গত এপ্রিলে এরদোগান সৌদি আরব সফর করেছিলেন। সে সময় প্রকাশ্যে যুবরাজ সালমানকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী ও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মধ্যে নতুন কোনো সামরিক সংঘাতের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের ক্ষেপণাস্ত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দখলদার সত্তাকে ধ্বংস করে ফেলবে।
ইরানের সংবাদমাধ্যম পার্স টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস প্রধান লেবাননে এক সমাবেশে রোববার বক্তব্য দেয়ার সময় সম্ভাব্য ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েল সামরিক সংঘাত নিয়ে এই মন্তব্য করেন।
সেই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে কিছু আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার তীব্র নিন্দাও জানিয়েছেন হানিয়াহ।
ইসমাইল হানিয়াহ বক্তব্য দেয়ার সময় আরও বলেন, ’৭৪ বছর আগে থেকেই লেবানন ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল। আজ আমরা আল-আকসা মসজিদের (আসন্ন মুক্তি) দেখতে পাচ্ছি, কারণ আমরা বিজয় এবং উন্নয়নের পথে আছি, যার গতিপথ আমাদের জাতি ও আমাদের প্রতিরোধ দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ভবিষ্যৎ যুদ্ধের ক্ষেত্রে ১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ৫ মিনিটেরও কম সময়ে ইহুদিবাদী সরকারকে ধ্বংস করবে।
আল-কুদস ও আল-আকসায় ইহুদিবাদী ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের কোনো স্থান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লেবানন থেকে আমি আপনাদের বলছি, যে আমরা আপনার স্বপ্নকে ধ্বংস করে দেব এবং আল-কুদস আর আল-আকসায় আপনাদের কোনো স্থান নেই।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ তেলআবিব ও আরব মিত্রদের সমন্বিত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইরানবিরোধী আঞ্চলিক সামরিক ফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব দেয়ার পরই এমন আক্রমণাত্মক মন্তব্য করলেন হানিয়া।
আরও পড়ুন:করোনার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে চালানো রাশিয়ার ‘বিশেষ অভিযানে’ ব্যাহত হচ্ছে পণ্য রপ্তানি। কৃষ্ণ সাগর অনেকটায় অচল করে রেখেছে মস্কো।
এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছেন সৌদি আরবের পরবর্তী বাদশাহ মোহাম্মদ বিন সালমান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক চুক্তি করছে ইসরায়েল।
এবার প্রতিবেশী ইরান সফর করছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-কাদিমি। এর আগে রিয়াদ ঘুরে আসেন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোববার তেহরানে পৌঁছান মোস্তফা আল-কাদিমি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আল-কাদিমি বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন এবং অন্যদের সঙ্গে রাজধানীর সাদাবাদ প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন কাদিমি।
জেদ্দায় শনিবার রাতে সংক্ষিপ্ত সফরে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ব্যক্তিগতভাবে ইরাকি নেতাকে স্বাগত জানানোর পর এই সফর হলো।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলছে, কাদিমি এবং যুবরাজ সালমান শান্ত ও গঠনমূলক সংলাপের চেষ্টা করছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করেছেন।
ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর সফরটিকে আঞ্চলিক শত্রু তেহরান এবং রিয়াদের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে। ইয়েমেন ইস্যুতে সাত বছর ধরে ইরান-সৌদি পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছে।
আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে রাইসি এবং কাদিমি সৌদি আরবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ না করলেও অঞ্চলজুড়ে সম্পর্কোন্নয়নে জোর দিয়েছেন। ইয়েমেনে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনায় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথাও জানান তারা।
ইয়েমেন ইস্যুতে দুই নেতাই বলেছেন, ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ না, সংলাপই কেবল যুদ্ধের সমাধান করতে পারে।’
দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রশংসা করেন বলেন, ‘ আর্থিক লেনদেনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা, ধর্মীয় তীর্থযাত্রা সহজতর করা, ইরানের শালামচেহ এবং ইরাকের বসরাকে সংযুক্ত করে এমন একটি রেলপথের কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’
বাদদাদের মধ্যস্থতায় ২০২১ সালের এপ্রিলে তেহরান-রিয়াদ সরাসরি আলোচনা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত পাঁচ দফা আলোচনা হলেও ২০১৬ সালে ছিন্ন হওয়া আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়, সে বিষয়ে এখনও কোনো চুক্তিতে আসতে পারেনি তারা।
সেই সময়ে বিক্ষোভকারীরা সৌদি আরবের পর ইরানে সৌদি কূটনৈতিক মিশনে হামলা চালায়। প্রখ্যাত এক শিয়া ধর্মীয় নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় সেখানে।
এখন পর্যন্ত এই আলোচনার একমাত্র অর্জন, জেদ্দাভিত্তিক অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনে ইরানের প্রতিনিধি অফিস পুনরায় চালু করা।
আরও পড়ুন:হজের সময় ভিক্ষা করার অপরাধে এক বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে সৌদি পুলিশ। পরে বাংলাদেশ হজ মিশনের হস্তক্ষেপে মুচলেকা নিয়ে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
কাউন্সিলর (হজ) জহরুল ইসলামের বরাতে বাংলা ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম মতিয়ার রহমান, বাড়ি মেহেরপুর জেলায়। ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে হজ করতে সৌদি গিয়েছিলেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ জুন মতিয়ার মদিনায় ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তিনি সবাইকে বলছিলেন, তার মানিব্যাগটি ছিনতাই হয়ে গেছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, মতিয়ার সৌদিতে কোনো হোটেল বুক করেননি। তাকে গাইড করার মতো কোনো মোয়াজ্জেমও ছিল না।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রাণলয় ইতোমধ্যে ওই হজ এজেন্সিকে নোটিশ পাঠিয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাদের বিরুদ্ধে হজ ও ওমরাহ আইন, ২০২১-এর ১৩ ধারার অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না।
উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
হজ অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি শাহাদাত হোসেন তাসলিম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে জননিরাপত্তার অধীনে এক সৌদি নাগরিকসহ ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সৌদি পুলিশ। এদের বেশির ভাগের সৌদিতে থাকার বৈধতা নেই।
তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া হজ প্রচার চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। ভুয়া হজ ও ওমরাহ প্রচার কার্যালয় পর্যবেক্ষণের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে তারা গ্রেপ্তার হন।
সৌদি গ্যাজেটের খবরে বলা হয়, রিয়াদের চারটি স্থান এবং আল-কাসিম অঞ্চলের দুটি এলাকায় জাল হজ প্রচারণার বিজ্ঞাপন এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা। তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছিল।
প্রসিকিউশন জানিয়েছে, গ্রেপ্তার অবৈধ বিদেশিদের মধ্যে ১১ জন মিসরীয়, ১০ জন সিরিয়ান, ২ জন করে পাকিস্তানি ও সুদানি এবং একজন ইয়েমেনি ও বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের জোট সরকার দেশ চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এক ঘোষণায় সোমবার সরকার জানায়, আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্ট (নেসেট) ভেঙে দেবে তারা। আর এমনটা হলে, তিন বছরের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচনে যাবে ইসরায়েল।
অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ ইসরায়েলে কেন কোনো সরকার থিতু হতে পারছে না? তার মানে কি নেতানিয়াহু সরকার ফের ক্ষমতায় আসছে?
ইসরায়েলের বর্তমান সরকার ডানপন্থি, মধ্যপন্থি এবং ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দলসহ আটটি দলের মিশ্রণ। মাত্র এক বছর আগে সরকার গঠন করে তারা।
প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট তার জোটসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিডের সঙ্গে মিলে দুই বছরের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ২০২১ সালের জুনে জোট গঠন করেছিলেন। অবসান ঘটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডের।
তবে বছর না কাটতেই জোটে দেখা দিয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। কয়েক সপ্তাহের জল্পনার অবসান ঘটে সোমবার। জানিয়ে দেয়, দেশ আর চালাবে না নাফতালি বেনেট সরকার।
ক্ষমতাসীন এই জোটকে একত্রিত রেখেছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিরোধিতা। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না।
কী নিয়ে জোটে অন্তর্দ্বন্দ্ব
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, পশ্চিম তীর দখল এবং ধর্ম ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে বিবাদে জড়িয়ে জোটের অনেক শীর্ষ নেতা সরকার ত্যাগ করেছেন। সেই থেকেই পতনের শুরু।
বেনেটের ডানপন্থি ইয়ামিনা পার্টির সদস্য ইডিট সিলম্যান সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে গত এপ্রিলে ইসরায়েলের ১২০ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় জোটটি। এতে আইন পাস করানোর ক্ষমতা হারায় বেনেট সরকার। এই অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে কতদিন টিকবে এই সরকার।
এদিকে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভে ইসরায়েলি পুলিশের হামলা, পশ্চিম তীরে অভিযানের নামে গুলি করে ফিলিস্তিনি হত্যার মতো ঘটনায় আরব বিশ্বে এক ধরনের হুমকিতে আছে ইসরায়েল। যদিও জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।
দল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ইয়ামিনা পার্টির আরেক সদস্য নির অরবাচ গত মাসেই সরকার পতনের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেনেটকে।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে দুই সপ্তাহ আসে। সেদিন অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের জন্য ইসরায়েলি নাগরিক আইন সংস্কারের একটি বিল পার্লামেন্টে আটকে যায়।
সেটলার আইনের বিষয়ে সাধারণত ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যায় ইসরায়েলের পার্লামেন্টে। গত পাঁচ দশকে বহুবার এটির সংস্কার হয়েছে। সরকার ও বিরোধীদের ক্রমবর্ধমান তিক্ততার কারণে সেদিন তা ব্যর্থ হয়।
কী ঘটতে যাচ্ছে
পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করতে মঙ্গলবার বৈঠক করবে দেশটির সরকার।
যদি পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হয় তবে জোট গঠনের চুক্তির শর্ত হিসেবে নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাপিড।
কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, অন্য নির্বাচনে না গিয়ে একটি বিকল্প সরকার গঠনের সুযোগ রয়েছে ইসরায়েলের। কারণ ডানপন্থি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিবেচনায় ইসরায়েলের সরকার ও বিরোধীদের দূরত্ব ডানপন্থি দলগুলোকে পার্লামেন্টে চাপের মধ্যে রাখবে।
এ ছাড়া অনেক ইসরায়েলি নির্বাচন নিয়ে ক্লান্ত। বছর ঘুরতে না ঘুরতে আরেকটি নির্বাচনে তাদের উৎসাহী না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
যাই হোক, যদি দেশটি নতুন সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায়, তবে তা পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে হবে। ২৫ অক্টোবরের সম্ভাব্য তারিখ ইতোমধ্যেই আলোচনায় আছে।
নেতানিয়াহুর ফেরার মঞ্চ হতে পারে নতুন ভোট
নেতানিয়াহু আগেই জানিয়েছিলেন, দায়িত্বে ফিরবেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মনে হয় বাতাস বদলে গেছে। আমি এটা অনুভব করতে পারছি।’
নেতানিয়াহু শিবির এখন পার্লামেন্টের স্বতন্ত্র সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন দলকে গোছানোর চেষ্টা করছে।
জনমত জরিপের পূর্বাভাস বলছে, নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থি লিকুদ আবারও বৃহত্তম একক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে। তবে নতুন সরকার গঠনের জন্য তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে পারবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
জনমত জরিপ পূর্বাভাস দিয়েছে যে নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থি লিকুদ আবারও বৃহত্তম একক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে। তবে নতুন সরকার গঠনের জন্য তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে পারবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন:
অধিকৃত পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরে কালকিলিয়া শহরে রোববার এ ঘটনা ঘটে।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা বলছে, নিহত ব্যক্তির নাম নাবিল আহমেদ ঘানেম। জলজুলিয়া গ্রামের কাছে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৫৩ বছরের নাবিল পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলীয় শহর নাবলুসের বাসিন্দা ছিলেন।
ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বেড়া অতিক্রম করার সময় নাবিলকে গুলি করা হয়। তিনি পশ্চিম তীরের হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মতো, যারা নিয়মিত ইসরায়েলে কাজ খোঁজেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, ‘সন্দেহভাজন একজনকে গুলি করা হয়েছে। তিনি নিরাপত্তা বেড়া ভাঙচুর করেছেন।’
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, হত্যার জন্যই তার ওপর গুলি চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা এবং অনেক অধিকার সংগঠন এই বেড়াকে ‘বর্ণবাদের প্রাচীর’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বেআইনি ঘোষণা করে ইসরায়েলকে বেড়াটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি তেল আবিব।
ফিলিস্তিনি শ্রমিক ইউনিয়ন বলছে, প্রতিদিন অন্তত ১ লাখ ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি পারমিট নিয়ে ইসরায়েলে কাজের জন্য প্রবেশ করে। কারও কারও কাছে ইসরায়েলে কাজ করার অনুমতি আছে; অনেকে আবার অনুমোদন ছাড়াই ইসরায়েলে ঢুকতে চায়।
নাবিলের কাছে চেকপয়েন্ট অতিক্রমের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল কি না তা স্পষ্ট নয়। তার মরদেহ ইসরায়েলের কেফার সাবার মেইর মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ।
সহিংসতা বাড়ছে
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলতি বছর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে মার্চ থেকে ফিলিস্তিনি হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন।
ওয়াফার প্রতিবেদন বলছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর-পশ্চিমে তুলকারমের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি সামরিক চেকপয়েন্টের কাছে রোববার সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পাঁচ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন জেনিনের দক্ষিণ-পশ্চিমে বারতা শহরে অভিযান চালিয়ে আরও ১৩ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি বাহিনী।
জেনিনে প্রিজনার্স ক্লাবের পরিচালক মনতাসার সামুর ওয়াফাকে বলেন, ‘অভিযানটি একটি আবাসিক ভবনকে ঘিরে পরিচালিত হয়েছিল।
গত মাসে আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ জেনিনে একটি অভিযান কভার করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে খুন হন। ৫১ বছরের শিরিন আল জাজিরা আরবি টেলিভিশনের একজন সিনিয়র সংবাদদাতা ছিলেন। চ্যানেলটি চালু হওয়ার এক বছর পর ১৯৯৭ সালে সেখানে যোগ দেন তিনি।
ফিলিস্তিনের অনেকেই শিরিনকে ২০০০ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহের সময় পশ্চিম তীরের প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বড় বড় হামলা কভার করার জন্য মনে রাখবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই হত্যার নিন্দা জানিয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির জেরে ভারতের সঙ্গে আরব বিশ্বের টানাপড়েনের মধ্যেই দিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে কুয়েত সিটি। জয়পুরভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান দেশটিতে দেশি গোবর রপ্তানি করছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোয় বলা হয়, কুয়েতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লামোর ১৯২ টন গোবর আমদানির অর্ডার দিয়েছে। ভারতের জৈব কৃষক প্রযোজক সমিতির জাতীয় সভাপতি অতুল গুপ্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জয়পুরের সানরাইজ এগ্রিল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ প্রাইভেট লিমিটেড এ আদেশ পেয়েছে।’
ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার পর কুয়েতসহ অন্তত ১৫ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল। কুয়েতবাসীও ভারতীয় পণ্য বয়কটের দাবি জানায়। কিছু সুপার মার্কেটের তাক থেকে সরিয়ে দেয়া হয় ভারতীয় পণ্য।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের পর নূপুর শর্মাকে বরখাস্ত করেছে বিজেপি। আর এমন প্রেক্ষাপটেই এলো কুয়েতে গোরব রপ্তানির খবর।
সানরাইজ এগ্রিল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত চতুর্বেদী বলেন, ‘সম্ভবত এই প্রথম ভারত থেকে দেশি গরুর গোবর আমদানি করছে কুয়েত। জয়পুরের টঙ্ক রোডের শ্রীপিঞ্জরাপোল গোশালায় অবস্থিত সানরাইজ অর্গানিক পার্কে শুল্ক দপ্তরের তত্ত্বাবধানে কনটেইনারে গোবর প্যাক করার কাজ চলছে।
‘প্রথম চালানটি ১৫ জুন কনাকাপুরা রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাঠানো হয়েছে।’
অতুল গুপ্ত বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে পশু পণ্যের রপ্তানি হয়েছিল ২৭ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার রুপির। প্রতিনিয়ত বাড়ছে জৈব সারের চাহিদা। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কেবল ফসলের উৎপাদন বাড়ায় না, এর থেকে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করলে মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’
দেশি গোবরে বাড়ছে আগ্রহ
জৈব সারের উপকারিতার কারণে দিনে দিনে বাড়ছে চাহিদা। ভারত থেকে জৈব সারসহ দেশি গোবর আমদানি শুরু করেছে অনেক দেশ।
অতুল গুপ্ত বলেন, ‘কুয়েতের কৃষিবিজ্ঞানীরা ব্যাপক গবেষণার পর খেজুর ফসলে গুঁড়া আকারে দেশি গোবর ব্যবহারের উপকারিতা খুঁজে পেয়েছেন। এটির ব্যবহারে ফলের আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনও আশানুরূপ বেড়েছে।
জৈব চাষে কুয়েতের বাজি
জলবায়ু ও পানির সংকটে কুয়েতের কৃষিকাজ প্রায় অসম্ভব। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) অন্যান্য দেশের মতো তাই কুয়েতকেও খাদ্য চাহিদা মেটাতে আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হয়।
তবে বাস্তবতা বুঝতে পেরেছে কুয়েত সরকার। আগে যেখানে কুয়েতে কৃষিকাজকে শখের কাজ হিসেবে দেখা হতো, সেই কুয়েত গত কয়েক বছরে বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে।
কৃষিবিষয়ক এবং মৎস্য সম্পদের জন্য পাবলিক অথরিটির জৈব কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপক আব্দুল রহমান আল-ফ্রাইহ বলেন, ‘দেশের আবহাওয়ায় চাষাবাদের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে কৌশল শেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য