বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যেই ভারতে অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনে সদস্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশজুড়ে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা।
সেনাবাহিনী জানায়, নতুন মডেলের অধীনে সব চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগের নিবন্ধন হবে অনলাইনে। জুলাই থেকে শুরু হবে নিবন্ধন।
‘অগ্নিবীররা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একটি স্বতন্ত্র পদ তৈরি করবে, যা অন্য যেকোনো বিদ্যমান পদ থেকে আলাদা হবে।’
সেনাবাহিনীতে নিয়োগের নতুন প্রকল্পের কথা ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত মঙ্গলবার জানান। ‘অগ্নিপথ’ নামে ওই প্রকল্পের অধীনে সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছরের অন্তত ৪৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে চার বছরের মেয়াদে নিয়োগ দেয়ার কথা।
প্রতিবাদে পরদিন বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় ‘অগ্নিপথ’-এর বিরুদ্ধে রোষের অগ্নিবর্ষণ। আন্দোলনকারীদের দাবি, আগের নিয়মেই বাহিনীতে নিয়োগ দিতে হবে।
বিহারের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্তত আট রাজ্যে। পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে বৃহস্পতিবার। বিহার, হরিয়ানা, নয়াদিল্লি, জম্মু এবং ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকটি অংশে রেল ও সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা। আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক জায়গায়। সোমবার দিনব্যাপী ভারত বনধের ডাক দেন বিক্ষুব্ধরা।
পশ্চিমবঙ্গে কর্মসূচি রুখতে বিভিন্ন শহরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয়া হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি প্রস্তুত ছিল রাপিড অ্যাকশন ফোর্স।
বাড়তি সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে টালিগঞ্জ, শ্যামবাজার উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায়। শিয়ালদহ, উল্টোডাঙ্গা, কলকাতা, যাদবপুর রেলস্টেশন, শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে, মৌলালি, পাক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট, রাজাবাজার হেস্টিংস, হাজরায় বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কলকাতা শহরের ৫৮টি এলাকায় মোতায়েন রাখা হয়েছে কিউ আর টিম।
দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কেরালায় প্রস্তুত ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঝাড়খণ্ডে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, নবম এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।
তবে দেশজুড়ে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। জনজীবনেও এই বনধের কোনো প্রভাব পড়েনি।
অগ্নিপথ বিক্ষোভের জেরে সোমবার প্রায় ৫৩০টি ট্রেনযাত্রা বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৮টি সাধারণ যাত্রীবাহী ট্রেন এবং ১৮১টি মেল/এক্সপ্রেস ট্রেন। এ ছাড়া চারটি মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন এবং ছয়টি যাত্রীবাহী ট্রেনযাত্রা আংশিক বাতিল হয়েছে।
সোমবার যন্তর-মন্তরে জড়ো হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা সত্যাগ্রহ করতে। এতে অংশ নেন আসামের কংগ্রেস নেতারাও।
সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক অজয় মাকেন জানান, তারা অগ্নিপথ প্রকল্পটি ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে প্রথমে তরুণদের সঙ্গে এবং সংসদে আলোচনা করা উচিত।’
তবে সামরিক নেতৃত্ব রোববার অগ্নিপথ প্রকল্প ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিনের সত্যাগ্রহে আসামের কংগ্রেস নেতারাও অংশ নেন।
আরও পড়ুন:১০ বছর পর শুরু হয়েছে কলকাতা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ভোটগ্রহণ।
রোববার ভারতীয় সময় সকাল ৭টা থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ।
পশ্চিমবঙ্গের এই পাহাড়ের ভোট গ্রহণে এখন পর্যন্ত বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
তবে তুমুল বৃষ্টিতে ভোটারের উপস্থিতি কম।
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ৪৫ টি আসনের প্রত্যেকটিতে প্রার্থী দিয়েছে হামরো পার্টি। তারা প্রথমবার ভোটে লড়ে দার্জিলিং পৌরসভার ক্ষমতায় আসে।
ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাও ৪৫ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। সিপিএম ১২টি, তৃণমূল কংগ্রেস ১০টি এবং কংগ্রেস ৫ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এবারের জিটিএ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ২৭৭ প্রার্থীর মধ্যে ২১০ স্বতন্ত্র প্রার্থী ।
এদিকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বা জিজেএম এবার জিটিএ নির্বাচনে অংশ নেননি । জিজেএম’র সভাপতি বিমল গুরুং জানিয়েছেন, তিনি ভোট দেবেন না। প্রতিবাদস্বরূপ তার এই অবস্থান। জিটিএ-র বিরোধিতা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন গুরুং।
তবে পাহাড়ের একসময়ের প্রধান বিমল সামনে না এসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন করছেন পাহাড়ের রাজনীতিবিদরা। তাদের ধারণা বিমল তার সমর্থকদের কোন একটি দলকে সমর্থনের নির্দেশ দিতে পারেন ।
এবারের জিটিএ নির্বাচনের লড়াই মূলত অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি এবং অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মধ্যে।
ভারতের সাংবাদিক ও সমাজকর্মী তিস্তা সেতলবাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গুজরাট পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (এটিএস) মুম্বাইয়ের বাড়ি থেকে শনিবার বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করে।
২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গা নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে তিস্তার বিরুদ্ধে। শনিবারই মামলা করা হয় তার নামে।
পুলিশ জানিয়েছে, তিস্তার সঙ্গে আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাট এবং গুজরাটের সাবেক ডিজিপি আরবি শ্রীকুমারের বিরুদ্ধে আগেই জাল নথি তৈরি করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করেছিল আহমেদাবাদ পুলিশের অপরাধ বিভাগ। কুমারকেও গ্রেপ্তার করেছে এটিএস।
এর আগে শুক্রবার গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে রায়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রসঙ্গে বলে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সাজানোতে তিস্তার ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।
মুম্বাইয়ের সাংবাদিক তিস্তা সেতলবাদ ভারত সরকারের পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত একজন সমাজকর্মী। গুজরাট দাঙ্গার পর ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এনজিও সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস (সিজেপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি এবং সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার কাজের একটি ক্ষেত্র ছিল দাঙ্গার শিকার ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা দেয়া।
গুজরাটে দাঙ্গার শিকার ব্যক্তিদের পক্ষে মামলা করার জন্য প্রথম কর্মীদের মধ্যে ছিলেন তিস্তা। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তদল গঠনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ওই মামলার ফলেই দাঙ্গার ছয় বছর পর সাবেক সিবিআই ডিরেক্টর আর কে রাঘবনের অধীনে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে শনিবার একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নাম না করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে একহাত নেন। তিনি বলেন, এরাই প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে মামলা করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
জানা গেছে, সেতলবাদ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন ২০০৭ সালের মার্চে। তিনি মোদির বিরুদ্ধে তখন সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানান।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে উদযাপন করা হয়েছে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে। শনিবার একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এই উদযাপন করা হয়।
সকালে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাউন্সেলর (শিক্ষা ও ক্রীড়া) রিয়াজুল ইসলাম ও কাউন্সেলর বশির উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, গবেষক, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার; কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক স্নেহাশীষ শুর এবং প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ ও অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থে তৈরি পদ্মা সেতু বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে উচ্চতর মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।’
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ভাষণে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সফল পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের কথাও তুলে ধরেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন ও কলকাতা করপোরেশনের সৌজন্যে কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনসংক্রান্ত খবর জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়।
স্থানীয় মানুষের মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহও দেখা যায় বেশ। বাংলাদেশের এই অর্জনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বাংলাদেশিদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুন:দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দোতলা সেতু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পদ্মা সেতু। এত দিন ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে লম্বা দ্বিতল সেতুর তকমা ছিল আসামের বগিবিল সেতুর।
৪ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বগিবিল সেতুটিতে একসঙ্গে রেল ও গাড়ি চলাচল করে।
আসামের ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর তৈরি করা হয় সেতুটি। এটি ভারতের দীর্ঘতম দোতলা সেতু। ২০১৮ সালে সেতুটি উদ্বোধন করে কয়েক মিনিট সেখানে হেঁটে বেড়ান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অন্যদিকে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের ভায়াডাক্ট বা সংযোগ সেতু মিলিয়ে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।
শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুপুর ১২টার একটু আগে মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী গাড়িতে চড়ে যান সেতুর জাজিরা প্রান্তে। এই সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৩ হাজার ১৯৩ হাজার কোটি টাকা। উদ্বোধনের পরের দিন দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে চার লেনে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
আসামের ডিব্রুগড় থেকে অরুণাচলের ধেমরাজীকে সংযুক্তকারী এই সেতুটি তৈরি করতে খরচ হয় ৫ হাজার ৯০০ কোটি রুপি। ১২০ বছর মেয়াদি এই সেতুটির প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ৩ হাজার কোটি রুপি। পরে এর খরচ ৮৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের দীর্ঘতম সেতু মালির রিভার ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হওয়া এই সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১২ কোটি রুপি। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য কোনো রোড-কাম-রেল সড়ক নেই। শাহ ফয়সাল শহরের সঙ্গে করোঙ্গি, লানধিকে সংযুক্তকারী এই সেতুটি বর্তমান অবস্থা নাজুক। ২০১৬ সালে এই সেতুটি মেরামতের অংশ হিসেবে কয়েক সপ্তাহ বন্ধ থাকে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানে উল্লেখযোগ্য কোনো দোতলা সেতু নেই। এই দেশগুলোর সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতুর দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটারের নিচে।
১৯৯৮ সালে বগিবিল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ২০০২ সালে রেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। সেতুটি তৈরি করতে ২১ বছর সময় লাগে।
আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির মিশেলে ব্রহ্মপুত্রের ওপর তৈরি করা হয় বগিবিল সেতু। দোতলা এই সেতুর ওপরের তলা দিয়ে চলে বাস, লরি, ট্রাকসহ বিভিন্ন যান; আর নিচ দিয়ে চলাচল করে ট্রেন।
দোতলা পদ্মা সেতু ও বগিবিল সেতুর নকশায় কিছুটা মিল থাকলেও এদের নির্মাণ ব্যয় ও অর্থনৈতিক গুরুত্বে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রমাণ: ভারত
মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর সফল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সফলভাবে শেষ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারত সরকার ও জনগণের পক্ষে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছে ভারতের দূতাবাস।
অভিনন্দন বার্তায় পদ্মা সেতুকে যুগান্তকারী অবকাঠামো উল্লেখ করে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, বহুল প্রতীক্ষিত এই মেগা প্রকল্পের সফল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়।
‘এই সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তের প্রমাণ দেয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ যখন এই প্রকল্পটিকে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আমরা একে অবিচলভাবে সমর্থন জানিয়েছি,’ বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে।
বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু শুধু আন্ত বাংলাদেশ যোগাযোগকেই উন্নত করবে না, এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অভিন্ন অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করা ও বাণিজ্য বাড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা দেবে। সেতুটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে জোরালো ভূমিকা রাখবে।’
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অসাধারণ অনন্য এক স্থাপনা
পদ্মা সেতু শুধু একটি যোগাযোগের বড় মাধ্যম নয়, এটা এক আবেগ ও ভালোবাসারও নাম। এটা টেকনিক্যালই চ্যালেঞ্জিং ছিল বাংলাদেশের জন্য। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও বটে।
এ এলাকার ভৌগোলিক অবস্থাও একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশে রূপান্তরকামী একটা চেতনা। বলতে পারি, পদ্মা সেতু দেশ রূপান্তরকারী একটি প্রকল্প, এটা এখন সক্ষমতার প্রতীক, এমনটি বলেন বুয়েটের অধ্যাপক ও যোগযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. সামছুল হক।
তিনি বলেন আমাদের একটা প্রবণতা ছিল- কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দাতাদের দিকে তাকিয়ে থাকা। এ প্রকল্পে কিন্তু সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে মনে হয়। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা কতটা এগিয়েছি সেটার পরিচয়ও সেতুটি বহন করে।
অবকাঠামোগতভাবে এটা বাংলাদেশের জন্য এক অসাধারণ অনন্য স্থাপনা।
যেসব স্থাপনায় রড ব্যবহৃত হয় সেখানে পানি পেলে রড ফুলে যায় এবং ক্ষয় হতে থাকে, সঙ্গে থাকা অন্য উপাদানেরও ক্ষতি করে থাকে। সে জন্য সেগুলোর স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে মোটামুটি ১০০ বছর ধরা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে সেখান থেকে জানা জানা যায়, এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এ ব্রিজের মধ্যে যে উন্নত ইলোকট্রনিক প্রযুক্তির মনিটরিং সেল ও সেল্ফ সেন্সর রয়েছে সেটি জানান দেবে এ স্থাপনাটির স্বাস্থ্যগত কোনো পরিবর্তন ঘটছে কি না। কোন জায়গায় কতটুকু চাপে আছে? ভূমিকম্প বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে কি না তা জানান দেবে। সংগত কারণেই এটার নির্মাণকৌশল ও প্রযুক্তিগত কারণে একে টেকসই করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখেবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি এবং আমার বিশ্বাস, যে প্রযুক্তি ও কৌশল পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা হলো- তাতে এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি হবে।
আরও পড়ুন:
সারদা চিটফান্ড প্রতারণা মামলার মূল হোতা সুদীপ্ত সেনকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারীর গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষ।
শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় কুণাল ঘোষ বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীকে টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন। তাহলে কেন শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেপ্তার করা হবে না? কেন হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করা হবে না?’
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ও ইডিকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপি ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তুলে কুনাল দাবি করেন, ‘নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে না বলেই শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’
তার দাবির সমর্থনে কুনাল এদিন সাংবাদিকদের সামনে সুদীপ্ত সেনের পেশ করা অভিযোগের আদালতের সার্টিফায়েড কপি দেখান।
জয়ন্ত বেরা নামের সারদা চিট ফান্ডের এক এজেন্ট সুদীপ্ত সেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে হাওড়া সাঁতরাগাছি থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল। ওই মামলার শুনানিতে শুক্রবার কলকাতার বিধাননগর এমপি-এমএলএ আদালতে হাজিরা দিতে আসেন সুদীপ্ত সেন।
সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীকে কবে, কোথায়, কত টাকা দিয়েছি, তা বিস্তারিত আদালতকে জানিয়েছি। পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন প্ল্যান পাস করার জন্য টাকা দিয়েছিলাম। ব্ল্যাকমেইল করে অনেক টাকা নিয়েছেন শুভেন্দু।’
শুধু সাংবাদিকদের সামনে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক এই অভিযোগ করা নয়, সুদীপ্ত সেন আগেই এ বিষয়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন।
এরপর সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দুর গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন কুনাল।
যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে। তবে কারা এ বিষয়ে যুক্ত, আমরা ছবিতে দেখেছি। জেলেও গিয়েছিলেন কয়েকজন। কারা যুক্ত, কোথায় টাকা গেছে, বাংলার মানুষ সব জানেন।’
সুকান্তের দাবি, ‘সুদীপ্ত সেনকে ভয় দেখিয়ে তার মুখ দিয়ে শুভেন্দুর নাম বলানো হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:মা গ্রামীণ শিশু যত্ন কেন্দ্র অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী, বাবা কৃষক অথচ ছেলে বিশাখ মণ্ডল গুগল ও ফেসবুকে বার্ষিক দুই কোটি টাকা বেতনের চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন। সব ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরে লন্ডনে কাজে যোগ দেবেন তিনি।
যদিও ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতক এই যুবক এখনও সিদ্ধান্ত নেননি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেবেন।
ছেলের এই কৃতিত্বে খুশি মা শিবানী দেবী। তিনি বলেন, ‘আমরা দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছেও কৃতজ্ঞ। কারণ ছেলে যদি বিবেকানন্দ স্কলারশিপ না পেত, তাহলে ওকে কলকাতায় রেখে পড়াতে পারতেন না।’
তিনি আরও বলেন, 'ছেলেবেলা থেকে জানতাম, ছেলের মধ্যে একটা আলো আছে। তা নিয়ে অনেকের সঙ্গে আমার বিবাদ হয়েছে। কিন্তু ছেলের কোনো অসুবিধে হতে দিইনি।‘
বিশাখ বলেন, ‘ছেলেবেলা থেকে দেখছি, মা কত কষ্ট করছেন। তাও আমাকে কখনও বলেননি বড় চাকরি পেতে হবে। সব সময় বলেছেন বড় মানুষ হতে হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য।’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বিশাখের এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘এটা আমাদের গর্বের মুহূর্ত। বিশাখ আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা যে সেরা এবং আইআইটির থেকে পিছিয়ে নেই, এটা তারই প্রমাণ।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ অপেক্ষার পর উদ্বোধনের চূড়ান্ত ক্ষণে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এরই মধ্যে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুরো বাংলাদেশের পাশাপাশি স্বপ্নের এই সেতু উদ্বোধনে উচ্ছ্বসিত ভারতের গণমাধ্যমও। উদ্বোধনের অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজারের ফেসবুক পেজে। ভিডিওতে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি রিঅ্যাক্ট ও ৩০০-এর বেশি মন্তব্য এরই মধ্যে পড়েছে।
এর আগে রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০টার দিকে তিনি মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সুধী সমাবেশে। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন। সমাবেশস্থল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায় নিরাপত্তাকর্মীদের।
সমাবেশস্থলের কাছাকাছি আসতেই অতিথিদের পথ চেনাতে ব্যতিব্যস্ত দেখা যায় তাদের। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গেই পাঠানো হয় গাড়িতে ব্যবহারের বিশেষ স্টিকার। লালরঙা বা সবুজরঙা স্টিকার দেখে নিরাপত্তাকর্মী অতিথিদের চিনিয়ে দিচ্ছিলেন সুধী সমাবেশস্থলে প্রবেশমুখ।
এ সময় তৎপরতা দেখা গেছে পর্যটন করপোরেশনের কর্মীদেরও। আমন্ত্রিত অতিথিদের গাড়িতে তারা তুলে দিচ্ছিলেন সকালের খাবার। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায়। তাদের মধ্যে আছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীসহ অনেকে।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান। অন্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কয়েকজন নেতাকে।
জমকালো এই আয়োজনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সাত নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসবেন না বলে আগেই জানিয়েছেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আছেন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য