ভারতের কাশ্মীরে বারামুল্লা জেলার উরি এলাকায় চিতাবাঘের হামলায় তিন শিশু নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার চিতাবাঘটিকে মানুষ-খেকো উল্লেখ করে বারামুল্লার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সৈয়দ সেহরিশ আসগার সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তর কর্তৃপক্ষকে একত্রিত হয়ে চিতাবাঘটি ধরার নির্দেশ দেন। জীবন্ত ধরতে না পারলে চিতাটিকে হত্যার নির্দেশও দেন তিনি।
মানুষের জীবন বাঁচাতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিসি এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন সরকারি এক কর্মকর্তা।
শিশু হত্যার তিনটি আলাদা ঘটনা উত্তর কাশ্মীরের জেলা উরির কালসান ঘাঁটি এবং বোনিয়ার এলাকায় হয়েছে।
ডিসি আসগর বলেন, তার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের সময় এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। যাতে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে সমন্বয় করার পাশাপাশি প্রয়োজনে সামরিক/আধাসামরিক বাহিনীর সহায়তা নেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। যাতে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিতাটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
চিতাটি ধরা না পরা পর্যন্ত স্থানীয় মানুষকে তাদের সন্তানদের একা এবং অপ্রয়োজনে লোকালয় থেকে দূরে বা বনে যেতে না দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর শ্রীনগরে ৮ বছরের একটি ছেলে শিশুকে আক্রমণ করে একটি চিতাবাঘ। শিশুটিকে কামড়ে টেনে-হিঁচড়ে বনে নিয়ে যায় বাঘটি। পরে স্থানীয়রা তাড়া দিলে পালিয়ে যায় চিতাটি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
দেশটির চা বাগানে, এমনকি লোকালয়ে চিতাবাঘ ঢুকে পড়া নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেল সপ্তাহে মেটেলি ব্লকের ইনডং চা বাগানে এক নারী চা শ্রমিকের ওপর হামলা চালায় চিতা। এই ঘটনায় গুরুতর জখম হন তিনি। পরে অন্য শ্রমিকরা এগিয়ে এলে চিতাটি বনের দিকে পালিয়ে যায়।
দেশটিতে বছরে কত মানুষ চিতাবাঘের হামলায় নিহত হয় তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভারতে প্রায় ১৪ হাজার চিতাবাঘ রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যপ্রাণী রক্ষা দপ্তর। বছরে প্রায় ৫০০ চিতাবাঘ হত্যার শিকার হয়।
চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত বা রিজিউম এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কীভাবে লিখবেন, কী লিখবেন এতে তা নিয়ে দ্বিধার শেষ নেই। সবচেয়ে ভালো হয়, ভালো একটি চাকরি করেন- এমন কারো জীবনবৃত্তান্ত দেখা গেলে। এ দিয়েই হয়তো একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বানিয়ে ফেলা যায় জুতসই কোনো রিজিউম!
সে সুযোগই এসে গেল কী এবার? হ্যাঁ, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটস প্রথম জীবনে দীর্ঘ ৪৮ বছর আগে যে রিজিউম বানিয়েছিলেন, তাই চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য প্রকাশ্যে এনেছেন। অবশ্য তার মতে, এই জীবনবৃত্তান্তের চেয়ে এখনকার যেকোনো চাকরিপ্রত্যাশীর জীবনবৃত্তান্ত অনেকটাই ভালো।
শুক্রবার লিংকড ইনে ৬৬ বছর বয়সী বিল গেটস তার জীবনবৃত্তান্ত শেয়ার করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এই ধনকুবের লিখেছেন, আপনি সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন বা কলেজ থেকে ড্রপআউট হন, আমি নিশ্চিত ৪৮ বছর আগে নিজের যে জীবনবৃত্তান্ত বানিয়েছিলাম তার চেয়ে আপনার জীবনবৃত্তান্ত অনেক ভালো।
হার্ভার্ড কলেজের প্রথম বর্ষের তথ্য দিয়ে জীবনবৃত্তান্ত শুরু করেছেন উইলিয়াম হেনরি গেটস; এখন যার নাম বিল গেটস। এতে তিনি অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট ও কম্পিউটার গ্রাফিক্সে কোর্স করার তথ্য যুক্ত করেছিলেন।
বিল গেটসের ৪৮ বছর আগের জীবনবৃত্তান্ত দেখতে পেয়ে অনেকেই তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ফোর্বস সাময়িকীর সম্পদশালীদের তালিকায় ২০২১ সালের অক্টোবরের হিসেবে বিল গেটসের নিট সম্পদের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। প্রতিদিন যদি তিনি এক কোটি ডলার করে খরচ করেন, তবে ১৩ হাজার ৫৪০ দিন, অর্থাৎ ৩৭ বছরের বেশি লাগবে সে অর্থ ফুরাতে।
আরও পড়ুন:বিদেশি বস্তুর সংস্পর্শে উত্তর কোরিয়ায় করোনা ছড়িয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। সংক্রমণ এড়াতে দক্ষিণ সীমান্ত থেকে উড়ে আসতে পারে এমন বস্তুর বিষয়ে সতর্ক থাকতেও নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে।
কয়েক বছর ধরে দক্ষিণের কর্মীরা লিফলেট এবং মানবিক সাহায্য পাঠাতে সীমান্তের ওপারে বেলুন উড়িয়ে আসছে। উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, এসবের কিছু একটাতে করেই উত্তরে ভাইরাস পাঠানো হয়েছে।
এসব অভিযোগ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তারা জানিয়েছে, ভাইরাস এভাবে ছড়ানোর কোনো আশঙ্কাই নেই।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তের কাছে অজ্ঞাত সামগ্রীর সংস্পর্শে এসেছিলেন দুই ব্যক্তি। পরে তাদের করোনা শনাক্ত হয়।
এপ্রিলের শুরুতে ইফো-রিতে একটি পাহাড়ে বস্তুগুলো খুঁজে পাওয়ার পর একজন ১৮ বছর বয়সী সৈনিক এবং পাঁচ বছর বয়সী শিশু ভাইরাসের জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা করেছিল, এটি রিপোর্ট করেছে।
এপ্রিলের শুরুতে ১৮ বছরের এক সেনাসদস্য ও পাঁচ বছরের এক শিশুর করোনা শনাক্ত হয়। তারা দাবি করে, ইফো-রির একটি পাহাড়ে কিছু বস্তুর সংস্পর্শে এসেছিলেন তারা। এর পর থেকে দ্রুত গোটা দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি সামলাতে সীমান্তরেখা, সীমান্ত এলাকায় আবহাওয়া এবং বেলুনের মাধ্যমে আসা বস্তু থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। অদ্ভুত কোনো বস্তুর দেখা পেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানানোর নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
এপ্রিলের শেষ দিক থেকে উত্তর কোরিয়ার জনগণ এক ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হতে থাকে। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির ৪৭ লাখ মানুষ এখন লড়াই করছে। কিম জং উন এই প্রাদুর্ভাবকে ‘দেশের সবচেয়ে বড় অশান্তি’ বলে বর্ণনা করেছেন।
আরও পড়ুন:গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের (ডিআর কঙ্গো) দুটি সশস্ত্রগোষ্ঠীর সদস্যরা এক কঙ্গোলিজ নারীকে দুবার অপহরণ করেন। পালা করে তাকে ধর্ষণ করা হয়। ওই নারীকে দিয়ে মানুষের মাংস রান্না করিয়ে তা খেতে বাধ্য করানো হয়।
স্থানীয় সময় বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে এমনটি জানিয়েছে দেশটির অধিকারবিষয়ক একটি সংগঠন।
নারী অধিকারবিষয়ক সংগঠন ফিমেল সলিডারিটি ফর ইন্টিগ্রেটেড পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এসওএফইপিএডিআই) প্রেসিডেন্ট জুলিয়েন লুসেঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য দেয়ার সময় ওই নারীর বিভীষিকাময় কাহিনি তুলে ধরেন।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের সামনে তিনি সংঘাতে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত পূর্ব কঙ্গোর এই দেশটি নিয়ে বক্তব্য দেন।
নিরাপত্তা পরিষদ কঙ্গো সম্পর্কে একটি নিয়মিত ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। গত মে মাসের শেষের দিকে ডিআর কঙ্গোর সশস্ত্র বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে ভয়াবহ লড়াই ও সহিংসতা ব্যাপকহারে বেড়ে যায়।
লুসেঞ্জ বলেন, যে নারীকে সশস্ত্রগোষ্ঠী কোডেকোর সদস্যরা অপহরণ করেন তিনি অপহৃত আরেকজনের জন্য মুক্তিপণ দিতে গিয়েছিল।
অধিকার সংগঠনকে ওই নারী বলেন, অপহরণের পর তাকে বারবার পালা করে ধর্ষণ এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
অপহরণের শিকার নারী বলেন, ‘সশস্ত্রগোষ্ঠীর সদস্যরা আমার সামনে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা করেন। তার নাড়িভুঁড়ি টেনে বের করে ফেলে দেন। দেহটি কেটে টুকরো টুকরো করেন এবং আমাকে সেগুলো রান্না করতে বলেন। এ সময় তারা আমাকে দুটি রান্নার পাত্রও এনে দেন। পরে তারা সব বন্দিকে মানুষের রান্না করা মাংস খেতে দেন।’
নিরাপত্তা পরিষদের সামনে এভাবে ওই নারীর বীভৎস স্মৃতির কথা তুলে ধরেন লুসেঞ্জ।
লুসেঞ্জ বলেন, ‘কয়েক দিন পর ওই নারীকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাড়ি ফেরার সময় অন্য একটি মিলিশিয়া গ্রুপ তাকে আবারও অপহরণ করে। ওই সশস্ত্রগোষ্ঠীর সদস্যরাও তাকে পালা করে ধর্ষণ করেন।’
ওই নারী বলেন, ‘অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তারা আমাকে আবারও মানুষের মাংস রান্না করতে বলেন। আমাকে তা খেতে বাধ্য করেন। অবশেষে সেখান থেকে আমি পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হই।’
লুসেঞ্জ তার কাউন্সিল ব্রিফিংয়ের সময় দ্বিতীয় সশস্ত্রগোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করেননি। মন্তব্যের জন্য কোডেকোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলেও জানান তিনি।
কোডেকোসহ বেশ কয়েকটি সশস্ত্রগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে কঙ্গোর খনিজসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলের জমি এবং সম্পদ দখলে নিতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে। এমন সংঘাতে গত এক দশকে কয়েক হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
কঙ্গোর সেনাবাহিনী গত মে মাস থেকে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১২-১৩ সালে এই গোষ্ঠী দেশটির বড় কয়েকটি অঞ্চল দখল করে নেয়।
২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট AltNews-এর প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের ও সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি একটি অপদার্থ দল।’
আসানসোলে মঙ্গলবার এক কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলেন।
বিজেপি নেতৃত্বকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘যখন আপনাদের নেতারা ধর্ম নিয়ে মিথ্যা বলেন, ঘৃণা ছড়ান, তখন আপনারা তাদের গ্রেপ্তার করেন না। আর আমরা কথা বললে খুনি বানিয়ে দেন। জুবায়েরকে কেন গ্রেপ্তার করলেন? তিস্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? ওরা কী করেছেন? গোটা দুনিয়া এর নিন্দা করছে।’
AltNews-এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়েরকে সোমবার গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন খবরকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন এই জুবায়ের। দিল্লি পুলিশের তরফে বলা হয়, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলে জুবায়েরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে গুজরাট এটিএস মুম্বাইয়ের বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মহানবীকে (সা.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার নাম উল্লেখ না করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমি নাম নেব না। আমরা নাম নিতে চাই না। কিন্তু যারা ধর্ম তুলে গালাগালি করেন, তাদের আপনারা গ্রেপ্তার করেন না কেন? তবে আমাদের সরকার তাকে সমন পাঠিয়েছে। আমরা ছাড়ব না।’
আরও পড়ুন:জার্মানির এলমাউতে জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলো এবং ভারতসহ এর পাঁচটি অংশীদার দেশ সোমবার ‘২০২২ রেজিলিয়েন্স (সহনশীলতা) ডেমোক্রেসি স্টেটমেন্ট’-এ স্বাক্ষর করেছে। এতে ‘সুশীল সমাজের স্বাধীনতা ও বৈচিত্র্য রক্ষা’ এবং ‘অনলাইন ও অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ থাকার কথা ঘোষণা রয়েছে।
ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক টুইটারকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক অ্যাকাউন্ট ও আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ফ্রিডম হাউস, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং কৃষকদের বিক্ষোভের সমর্থকদের কিছু টুইট ব্লক করতে বলা হয়েছিল।
২৬ জুন টুইটারের প্রকাশ করা এক নথিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। লুমেন ডাটাবেজে দাখিল করা নথি অনুসারে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২৯ ডিসেম্বর এসব অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
খবরটি প্রথম ‘এনট্র্যাকার’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে খবরটি প্রথম প্রকাশ পায়। তাতে দাবি করা হয়েছে, বিষয়বস্তু অপসারণে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধগুলো ২৪ ব্যাচে এসেছিলো। কিন্তু রোববার টুইটারে তা প্রকাশ করা হয়েছে (দৃশ্যত প্রয়োগ করা হয়েছে)।
অনলাইন তথ্য বা পোস্ট অপসারণের অনুরোধগুলো ট্র্যাক করে লুমেন ডাটাবেজ৷ এই ডাটাবেজে গুগল, ফেসবুক ও টুইটারের মতো নেতৃস্থানীয় ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর ওয়েব লিঙ্ক বা অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
টুইটারে প্রকাশ করা নথি অনুসারে, সামাজিক নেটওয়ার্কটিকে সরকার আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ফ্রিডম হাউসের টুইটগুলোকে ব্লক করতে বলেছিল- যা বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেটে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা এবং সমর্থন করে। নথি অনুসারে, সরকার টুইটারকে বিধায়ক জার্নাইল সিংসহ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির সদস্যদের টুইটগুলো ব্লক করার অনুরোধ করেছিল।
কিষাণ একতা মোর্চার অ্যাকাউন্ট ব্লক করতে সরকার টুইটারকে অনুরোধ করেছিল। সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, কৃষক ইউনিয়নগুলোর যৌথ মঞ্চ সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা (এসকেএম) তাদের টুইটগুলো ব্লক করতে সরকারের অনুরোধের তীব্র সমালোচনা ও আপত্তি জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে কিষাণ মোর্চা বলেছে, ‘সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা কোনো সতর্কবাণী ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত টুইটার অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করার তীব্র বিরোধিতা করছে৷ টুইটার ভারতে প্রায় এক ডজন টুইটার অ্যাকাউন্ট আটকে রেখেছে, যার মধ্যে @kisanektamorcha খামার আন্দোলনে যুক্ত টুইটার হ্যান্ডেল রয়েছে।’
সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কমিটি ফর প্রটেকশন অফ জার্নালিস্ট’ সাংবাদিক রানা আইয়ুব ও সিজে ওয়ারলেম্যানের টুইট ব্লক করার ভারত সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জার্মানিতে জি-৭ সম্মেলনে অংশ নেয়ার পর এক বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘জার্মানি, আর্জেন্টিনা, কানাডা, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের গণতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে।
‘উন্মুক্ত গণ বিতর্ক, স্বাধীন ও বহুত্ববাদী মিডিয়া এবং অনলাইন ও অফলাইনে তথ্যের অবাধ প্রবাহ সক্ষম করে, যা নাগরিক এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য বৈধতা, স্বচ্ছতা, দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে।
দুটি খবরে মোদি সরকারের দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
আরও পড়ুন:ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট AltNews-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছে এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া। ভারতের প্রেস ক্লাবও জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে।
এডিটরস গিল্ড মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘AltNews-এর সতর্ক নজরদারি সমাজে মেরুকরণের হাতিয়ার হিসেবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ব্যবহারকারী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব জাগিয়ে তোলার কাজে সংশ্লিষ্টদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।
‘২০২০ সালের এক মামলায় জুবায়েরকে দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। এই মামলায় গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে সুরক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। জুবায়ের যখন সমনের জবাব দিয়েছিলেন, তখন চলতি জুন মাসের শুরুতে শুরু হওয়া একটি অপরাধমূলক তদন্তের ক্ষেত্রে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জুবায়েরের ২০১৮ সালের একটি পোস্ট ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে- এমন একটি বেনামি টুইটার হ্যান্ডেল-এর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
গিল্ড দাবি করেছে, দিল্লি পুলিশ অবিলম্বে জুবায়েরকে মুক্তি দিক। কারণ জার্মানিতে জি-৭ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো জোরদার করতে অনলাইন ও অফলাইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করে একটি স্থিতিস্থাপক গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য এটি প্রয়োজন।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন গিল্ডের সভাপতি সীমা মুস্তাফা, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কাপুর ও কোষাধ্যক্ষ অনন্ত নাথ।
সংবাদের নিরপেক্ষতা, সংবাদমাধ্যমের ঋজু অবস্থান, সাংবাদিকতার মৌলিক দর্শন যখন প্রশ্নের মুখে তখন বিকল্প সংবাদের ধারণা তৈরিতে কাজ করছিল AltNews। ফ্যাক্ট চেকিং জার্নালিজমকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে এই প্রতিষ্ঠান। তা নিয়ে যখন জাতীয় রাজনীতি নতুন করে আন্দোলিত হচ্ছে তখন জুবায়ের সম্পর্কে আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে।
পুলিশি হেফাজতে থাকা এই সাংবাদিকের নাম রয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সম্ভাব্যদের তালিকায়। নরওয়ের রাজধানী অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট চলতি বছরের মে মাসে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সম্ভাব্যদের নিয়ে যে তালিকা করেছে তাতে জুবায়েরের নাম রয়েছে। AltNews-এর আরেক প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহার নামও রয়েছে ওই তালিকায়। সে সঙ্গে ভারত থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পিআরআইও-এর সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম রয়েছে বিশিষ্ট সমাজকর্মী হর্ষ মন্দারের।
ভারতের রাজনৈতিক মহলেও জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের বিরোধিতায় একাধিক নেতা সরব হয়েছেন। সোমবার তাকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে টুইট করে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সত্যের একটি কণ্ঠকে গ্রেপ্তার করলেও আরও হাজার হাজার কণ্ঠের জন্ম হবে।’
কংগ্রেস এমপি শশী থারুর জুবায়েরের গ্রেপ্তারকে ‘সত্যের ওপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তার মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘AltNews একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দিয়ে আসছে।’
কংগ্রেসের আরেক এমপি জয়রাম রমেশ বলেন, ‘সাংবাদিক জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ প্রতিহিংসামূলক কাজ করেছে। কারণ AltNews সরকারের বানোয়াট দাবিগুলোকে তুলে এনেছে।’
আইনজীবী-কর্মী প্রশান্ত ভূষণও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা ঘৃণাত্মক বক্তব্য প্রকাশ করছে, এই সরকার তাদের অনুসরণ করছে। জুবায়েরকে গ্রেপ্তার সত্যের ওপর আক্রমণ। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে।’
জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই নোবেল শান্তি পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকার প্রসঙ্গ টানছেন। কেউ কেউ বলছেন, এটাই ভারত। যেখানে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিকে জেলে ঢোকানো হয়।
এখানে বলে রাখা ভালও, পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর সঙ্গে নোবেল কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কেবল সুপারিশ করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে AltNews-এর যাত্রা শুরু হয়। এটি বিশ্বের প্রথম সারির ফ্যাক্ট-চেকিং আউটলেটগুলোর একটি। এর প্রতিষ্ঠাতারা বছরের পর বছর ধরে অনলাইন ট্রোলিং ও পুলিশি মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন:জর্ডানের লোহিত সাগরের আকাবা বন্দরে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাসের পাত্র ছিদ্র হয়ে ১১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবারের এ দুর্ঘনায় আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্যাস ভর্তি কন্টেইনার সরাতে দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২৫ থেকে ৩০ টনের কন্টেইনারটি জিবুতিতে যাচ্ছিল।
সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, উপরের দিকে তোলা হচ্ছে কন্টেইনার। এরপর হঠাৎ তা নিচে পড়ে যায়। এরপর কন্টেইনার থেকে গ্যাস বের হতে থাকে। ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিক।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহত ১৯৯ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
বন্দর থেকে ১০ মাইল দূরে আকাবা শহরের বাসিন্দাদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘর-বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে বলে কর্তৃপক্ষ।
ক্লোরিন গ্যাস সাধারণত শিল্প এবং গৃহস্থালি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রা এবং চাপে এই গ্যাস দেখতে হলুদ-সবুজ। শ্বাস বা কোনোভাবে শরীরে প্রবেশ কিংবা ত্বকের সংস্পর্শে আসলে ক্লোরিন শরীরের কোষ ক্ষতিগ্রসন্ত করে। এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য