ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আলোচিত নেত্রী নূপুর শর্মাকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। হুমকির পর তার নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ তুলে নূপুরকে সম্প্রতি এই হুমকি দেয়া হয় বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
হুমকি পাওয়ার পর অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন নূপুর। এরপরই তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বাড়ায় পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে সহায়তার জন্য টুইটার কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
গত ২৭ মে নয়াদিল্লি পুলিশের সাইবার বিভাগে একটি অভিযোগ দেন বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নূপুর। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে আরেকটি অভিযোগ করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, নূপুর শর্মা সম্প্রতি এক টেলিভিশন বিতর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তার স্ত্রী হজরত আয়েশাকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
তার সহকর্মী জিন্দাল মহানবীকে নিয়ে একটি টুইট করলে অনেকে ক্ষুব্ধ হন। পরে টুইটটি মুছে দেন তিনি। একই সঙ্গে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নূপুর শর্মাও। পরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় দুজনকেই।
নূপুর শর্মার এ ঘটনা নিয়ে শুধু ভারত নয়, বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশ থেকে প্রতিবাদ এসেছে। নিঃশর্তভাবে তার বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়ে টুইটারে বিবৃতি দিয়ে নূপুর দাবি করেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্য তার ছিল না।
গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের পর এবার ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেন ঘাটালের সাংসদ, টালিগঞ্জের জনপ্রিয় নায়ক দীপক অধিকারী ওরফে দেব।
মঙ্গলবার দিল্লিতে ইডির সদর দপ্তরে ৫ ঘণ্টা ধরে গরু পাচার ইস্যুতে একাধিক বেআইনি আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে দেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। গত সপ্তাহে তাকে সদর দপ্তরে হাজির হতে নোটিশ দেয় ইডি। কার্যত সবাইকে অন্ধকারে রেখেই তিনি দিল্লিতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন।
ইডির সূত্রে জানা গেছে, তাকে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক প্রশ্ন করেছেন এবং তিনি প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন। এখন দেবের জবাবে কোনো অসংগতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তে অভিযুক্ত এনামুল হক দেবকে দামি ঘড়ি উপহার দিয়েছেন। সেই সব উপহার দেব কি জেনেবুঝে নিয়েছেন? তিনি আদৌ এনামুল হককে চিনতেন।
দেব বরাবরই বলে এসেছেন, গরু পাচারের অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হককে তিনি চেনেন না। তিনি নির্দোষ। তবে তদন্তের স্বার্থে তার হাজিরা দিতেও আপত্তি নেই।
গরু পাচারের অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হক জিজ্ঞাসাবাদে অভিনেতা দেবের নাম উঠে আসে। কয়েকজন সাক্ষীও দেবের নাম বলেছেন বলে দাবি সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের।
ইডির আগে, ১৫ ফেব্রুয়ারি গরু পাচারের বিষয়ে কলকাতা সিবিআইয়ের দপ্তরে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:গুজরাট দাঙ্গায় ২০০২ সালে সহিংসতায় নিহত কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অব্যাহতি দেয়া এক রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি আর্জি নাকচ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে মোদির অব্যাহতিই বহাল রাখা হয়েছে।
৮৪ বছর বয়সী জাকিয়া জাফরি গুজরাট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নতুন তদন্ত চেয়েছিলেন। তার মতে, এটি ছিল একটি বড় চক্রান্ত, যেখানে রাজনীতিবিদ, পুলিশ জড়িত ছিল।
জাকিয়া জাফরির স্বামী এহসান জাফরি একজন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ। গুজরাট দাঙ্গার সময় দাঙ্গাকারীরা তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করে।
জাকিয়া বলেছিলেন, দাঙ্গাকারীদের আক্রমণের আগেই তিনি সাহায্যের জন্য পুলিশ কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের ফোন করেন, কিন্তু তার ফোনের উত্তর দেয়া হয়নি।
বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) ঘটনার ১০ বছর পরে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি রিপোর্ট জমা দেয়, যেখানে ‘কোনো বিচারযোগ্য প্রমাণ’ না থাকায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্য ৬৩ জনকেও অব্যাহতি দেয়া হয়।
তবে জাকিয়া জাফরির আইনজীবী এই কপিল সিবল জানিয়েছিলেন, এসআইটি তদন্ত করেনি, অভিযুক্তদের রক্ষার চেষ্টা করেছিল।
পশ্চিম ভারতে ২০০২ সালে হওয়া গুজরাট দাঙ্গা তিন দিন ধরে চলেছিল। যে দাঙ্গায় ১ হাজারের বেশি মুসলিম মারা যান। সে সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানে পাকতিকা প্রদেশে ৬.১ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ৫০০ বাড়িঘর ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে। এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে যারা বেঁচে গেছেন, তাদের খাবার নেই, আশ্রয় নেই। সম্ভাব্য কলেরা প্রাদুর্ভাবেরও আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষ করে আহত ব্যক্তিদের অবস্থা দুর্বিষহ, কারণ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে কাছের বড় শহরে যেতেও তিন ঘণ্টা গাড়িতে যাওয়া লাগে এবং রাস্তাটিও দুর্গম, ফলে আহত ব্যক্তিদের পরিবহন কঠিন হয়ে গেছে। আহত কয়েকজনকে তালেবানের সামরিক হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া আহতদের চিকিৎসা দিতে সরঞ্জাম ও ওষুধেও ঘাটতি রয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাকতিকা প্রদেশের চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘তাদের অঞ্চলে ব্যথানাশক ও অ্যান্টিবায়োটিকের তীব্র ঘাটতি রয়েছে।’
ভূমিকম্পের ফলে অনেক পরিবারই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হলো আশ্রয়। কিন্তু পর্যাপ্ত আশ্রয়ের ব্যবস্থা সেখানে করা যাচ্ছে না।
টোলো নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত খোস্ত ও পাকতিকা থেকে আহত মানুষদের গজনি ও কাবুলের মতো অন্যান্য প্রদেশে নিয়ে যাচ্ছে তালেবান। পাকতিকা প্রদেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
আফগানিস্তানে এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সম্ভাব্য কলেরা প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্ক করেছে। এরই মধ্যে সংস্থাটি বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার কাছে ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে।
জীবিত ও উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রাম, রাস্তাঘাট ও মোবাইল টাওয়ারের কথা জানিয়েছে।
দুই দশকের মধ্যে দেশটিতে হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা বর্তমান তালেবান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত আগস্টে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটি মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটে আছে। তালেবানের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আব্দুল কাহার বলখি আফগান সরকারের সীমাবদ্ধতাও স্বীকার করে নিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আর্থিকভাবে জনগণকে যতটা সহায়তা দেয়া প্রয়োজন ততটা দিতে অক্ষম বর্তমান প্রশাসন।‘
বলখি জানিয়েছেন, সাহায্য সংস্থা, প্রতিবেশী দেশ ও বিশ্বশক্তিগুলো সাহায্য করছে। কিন্তু তার মতে, সহায়তা আরও বাড়ানো দরকার, কারণ এটি একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্প, যা কয়েক দশকের মধ্যে হয়নি।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল পাকতিকার খোস্ত শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে, ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইএমএসসি জানিয়েছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পাশাপাশি পাকিস্তানের ইসলামাবাদেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে পাকতিকার গায়ন ও বারমাল জেলায়। গায়নের একটি গ্রাম পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে।
পাকতিকার একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে মোবাইল টাওয়ারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যোগাযোগ করা আরও কঠিন হয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আফগানিস্তান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। দেশটির অবস্থান টেকটোনিকভাবে সক্রিয় অঞ্চলে।
জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের রিপোর্ট অনুসারে, গত এক দশকে দেশটিতে ভূমিকম্পে ৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। দেশটিতে ভূমিকম্পে বছরে গড়ে মারা যায় ৫৬০ জন।
গত জানুয়ারিতেও দেশটির পশ্চিমে ভূমিকম্পে ২০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায় ও শতাধিক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সু চিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর নেপিদোর একটি কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে। এতদিন গৃহবন্দি ছিলেন সু চি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী তার নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। সে সময় গ্রেপ্তার হন শান্তিতে নোবেল জয়ী ৭৭ বছরের সু চি। এক বছর ধরে তাকে রাজধানীর অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছিল।
সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কয়েকটি মামলা করে জান্তা সরকার। এসবের কয়েকটিতে ইতোমধ্যে ১১ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন তিনি। যদিও সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সু চি। বলেছেন, এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এর আগেও গৃহবন্দিত্ব কাটিয়েছেন সু চি। দেশটির সামরিক শাসকরা তাকে ১৫ বছর বন্দি রেখেছিল। এ সময়ে সু চি হয়ে ওঠেন গণতন্ত্রের আইকন। তবে জেল-হাজতে পাঠানোর ঘটনা এটাই প্রথম।
ধারণা করা হচ্ছে, জনপ্রিয় এই নেতা কারাগারের ভেতরে স্থাপিত একটি বিশেষ আদালত থেকে বিচারের শুনানিতে অংশ নেবেন।
আদালতের বরাতে বিবিসি বার্মিজ বলছে, সু চিকে বুধবার কারাগারের ভেতর বিশেষভাবে নির্মিত আবাসনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তার সহকর্মী ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট একই রকম নির্জন কারাবাসে আছেন।
সূত্র আরও জানিয়েছে, নতুন জায়গায় ভালো আছেন সু চি। তার দেখভালে তিনজন নারী কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সামরিক সরকারের সংক্ষিপ্ত বিবৃতি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়, মিয়ানমারের ফৌজদারি আইন অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ‘গোপন বিচারকে’ প্রতারণা বলে নিন্দা জানিয়েছে। কারণ শুনানিতে জনসাধারণ এবং সংবাদকর্মীদের উপস্থিত থাকতে দেয়া হয় না। কেবল তা-ই নয়, সু চির আইনজীবীদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলাও নিষেধ।
বিবিসির জোনাথন হেড বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে উধাও হয়ে যাওয়া সু চি কতদিন নির্জন কারাবাসে থাকবেন তা স্পষ্ট নয়। যদিও তার গৃহবন্দিত্বের অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি। তবে তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিল বলে জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, সু চির গৃহকর্মী এবং তার কুকুর তাকে কারাগারে রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি।
উসকানি, দুর্নীতি, কোভিড নিয়ম লঙ্ঘন এবং টেলিযোগাযোগ আইন ভঙ্গের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন সু চি। আরও কয়েকটি মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি। সব অভিযোগ প্রমাণ হলে, ১৯০ বছরের বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ড পেতে পারেন সু চি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা হলো, মিয়ানমারের জান্তা অং সান সুচির প্রতি আরও বেশি কঠোর হচ্ছে।
‘জান্তা সরকার স্পষ্টতই তাকে এবং তার সমর্থকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।’
সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সাধারণ নির্বাচনে বড় জয় পেলেও, কয়েক মাসের মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে অভ্যুত্থান ঘটে।
সামরিক বাহিনী সু চির বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। যদিও স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলেছিলেন অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। সে সময় সু চির সঙ্গে গ্রেপ্তার হন তার কমপক্ষে ১৪ হাজার নেতা-কর্মী, ভক্ত।
অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (বার্মা) বলছে, ‘ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন অভিযানে অন্তত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন:কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ত্রিপুরার চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় ভোট দেয়া নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধীরা।
তারা নির্বাচন কমিশনে এ পর্যন্ত ১৬টি অভিযোগ দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ভাষ্য, ভোটে বিজেপির সন্ত্রাসে পুলিশ নীরব রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের সময় সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হল। চার কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে ভোটারদের যেতে বাধা দেয়া, বুথ জ্যাম করা, অন্য দলের কর্মীদের মারধরসহ নানা অভিযোগ লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে বিরোধী দলগুলো।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৫ কোম্পানি প্যারামিলিটারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ২২১টি পোলিং বুথের মধ্যে চারটি গুরুতর এবং ৫৯টি স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ত্রিপুরার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক বলেন, ‘এখানে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, তা আগেই আমরা বলেছিলাম। আবারও তা প্রমাণ হলো। এখানে শাসক দল ভয় পেয়েছে। তারা জানে, অবাধ-শান্তিপূর্ণ ভোট হলে তারা জিততে পারবে না। তাই ভোটের আগে থেকেই এখানে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিজেপির এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পুলিশ নীরব দর্শক।’
বুধবার রাতে ত্রিপুরার সুরমা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্জুন নমশূদ্রের ওপর লাঠি, রড, বাঁশ দিয়ে বিজেপির দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, ভোটের দিন সমর্থকদের নিয়ে জমায়েত করলে প্রাণে মারার হুমকি দেয়া হয় বলে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে।
উপনির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার মুখ্যমন্ত্রিত্ব বাঁচানোর লড়াই। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব হঠাৎ পদত্যাগ করায় মানিক সাহাকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
নির্বাচিত না হয়েও কোনো সাংবিধানিক পদে বসলে ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী তাকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ের পর তিনি আর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন না।
ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরায় বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করেনি বলে বিরোধীদের অভিযোগ রয়েছে। ত্রিপুরায় বিপ্লবের নেতৃত্বও প্রশ্নের মুখে। সেখানে বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছিল। বিজেপি ছেড়ে অনেকেই অন্য দলে যোগ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসায়।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানে পাকতিকা প্রদেশে ৬.১ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। অনেক বাড়িঘর ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে। এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরই মধ্যে বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তা চেয়েছে তালেবান।
এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকতিকা প্রদেশে উদ্ধারকর্মীদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে।
তালেবান এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছি না। নেটওয়ার্ক খুব দুর্বল।
পাকতিকা প্রদেশের মুখপাত্র আমিন হুজাইফা এএফপিকে বলেছেন, ‘গত রাতে ভারি বৃষ্টির কারণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছানো উদ্ধারকারীদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
ভূমিকম্পে দক্ষিণ-পূর্ব পাকতিকা প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জরুরি আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ শুরু করেছে।
ধসে পড়া ভবনের নিচে অনেকেই চাপা পড়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত ও পর্যাপ্ত লজিস্টিকের অভাবে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।
জীবিত ও উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রাম, রাস্তাঘাট ও মোবাইল টাওয়ারের কথা জানিয়েছে।
দুই দশকের মধ্যে দেশটিতে হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা বর্তমান তালেবান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতে ১৮ জুলাই অনুষ্ঠেয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী করা হয়েছে সাঁওতাল রাজনীতিক দ্রৌপদী মুর্মুকে।
ওড়িশার ৬৪ বছর বয়সী সাবেক এ শিক্ষক বিজেপির সঙ্গে যুক্ত কয়েক দশক ধরে। দায়িত্ব পালন করেছেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গভর্নর হিসেবেও।
নির্বাচিত হলে দ্রৌপদী হবেন ভারতের সর্বোচ্চ পদে আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম ব্যক্তি।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। যদিও এ পদে থাকা ব্যক্তি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না।
দেশটিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর বিধানসভার সদস্যদের ভোটে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ভোট রয়েছে বিজেপি মনোনীত প্রার্থীর।
নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তার বিশ্বাস দ্রৌপদী হবেন ‘মহান রাষ্ট্রপতি’।
গত মঙ্গলবার বিজেপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা শেষে দলের সভাপতি জে পি নদ্দা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বিজেপি ও মিত্রদের বাছাইকৃত ২০টি নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে দ্রৌপদীকে প্রার্থী ঠিক করা হয়।
একনজরে দ্রৌপদী মুর্মু
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে আলোচনায় আসেন দ্রৌপদী। সে সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তার নামও রয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে। দ্রৌপদী তখন ঝাড়খণ্ডের গভর্নরের দায়িত্বে।
ওড়িশার ময়ূরভাঁজ জেলার বায়দাপোসি গ্রামে ১৯৫৮ সালের ২০ জুন জন্ম দ্রৌপদীর। গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধানের এ মেয়ে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনা করেন রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের রমাদেবী উইমেন’স কলেজে।
ওড়িশা সরকারের করণিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন দ্রৌপদী মুর্মু। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ মেয়াদে তিনি রাজ্যের সেচ ও জ্বালানি বিভাগে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ওড়িশার রায়রংপুরের অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে শিক্ষকতা করেন এ রাজনীতিক। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। সে বছর রায়রংপুরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি।
রায়রংপুর আসনে ২০০০ ও ২০০৯ সালে বিজেপির পক্ষে দাঁড়িয়ে ওড়িশা বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন দ্রৌপদী।
২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজু জনতা দল ও বিজেপির জোট সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাঁওতাল এ রাজনীতিক। শুরুতে বাণিজ্য ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলেও পরবর্তী সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় তাকে।
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তফসিলি সম্প্রদায়ের বিজেপির রাজ্য শাখার সভাপতি ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০১৫ সালে ওড়িশার পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেন তিনি।
ওড়িশার প্রথম আদিবাসী হিসেবে গভর্নর নিযুক্ত হন দ্রৌপদী। ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত সে পদে ছিলেন তিনি।
ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে কর্মরত বিবিসি হিন্দির রিপোর্টার রবি প্রকাশের মতে, রাজ্যের গভর্নর হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুড়ান দ্রৌপদী। তার সময়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল গভর্নরের কার্যালয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য