সম্প্রতি বিজেপি নেতাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মুসলিম বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইরান, কুয়েত ও কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে তাদের দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করে জবাব চেয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ড. দীপক মিত্তালকে ডেকে এ ঘটনার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। একইসঙ্গে দেশটির সরকার এ ঘটনায় বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের বরখাস্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
ভারতীয় রাষ্ট্রদূতরা সংশ্লষ্ট দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, বিতর্কিত মন্তব্যগুলো ভারত সরকারের মতামতকে প্রতিফলিত করে না।
এর আগে জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা, বিজেপি মুখপাত্র নূপুর ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন।
ইসলাম সম্পর্কেও তার কিছু মন্তব্যের জেরে দেশটিতে মুসলিম সমাজে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। নূপুর শর্মার বক্তব্যের প্রতিবাদে গত শুক্রবার কানপুরে বনধ পালনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শুধু নূপুর শর্মাই নন, ইসলামের নবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বিজেপির আরেক মুখপাত্র নবীন কুমার জিন্দাল।
এ ইস্যুতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে থাকায় বিজেপির পক্ষ থেকে রোববার নূপুর ও নবীনকে ৬ বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়।
বর্তমান সংকটকে ঘিরে নূপুর শর্মা এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘কাউকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। টিভি বিতর্কে আমার ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কথা বলা হচ্ছিল, যা আমি সহ্য করতে পারিনি। এই ক্ষোভে আমি আপত্তিকর কিছু বলেছি, যা আমি নিঃশর্তভাবে ফিরিয়ে নিচ্ছি।’
নবীনও বলেছেন, কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্য তার ছিল না।
এদিকে বিজেপির তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের ঐক্য যাতে বজায় থাকে সে জন্য বিজেপি নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।
দলটির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং-এর স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিজেপি কোনো ধর্ম কিংবা সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করার মতো অবস্থানকে সমর্থন করে না, উৎসাহিতও করে না।
‘ভারতের সংবিধান দেশের প্রতিটি নাগরিককে তার পছন্দের যেকোনো ধর্ম পালন করার এবং প্রতিটি ধর্মকে সম্মানের অধিকার দিয়েছে।
‘ভারত যেহেতু স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে, তাই ভারতকে মহান দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেখানে সবাই সমান এবং মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করে। যেখানে সবাই একতা ও অখণ্ডতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবাই একসঙ্গে দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ফল ভোগ করে।’
ভারতীয় পার্লামেন্টে বিরোধী দল কংগ্রেসের তরফ থেকে এ ঘটনায় বলা হয়েছে, বিজেপির ভুল স্বীকার করা উচিত এবং ভারতের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
বিজেপির দুই মুখপাত্রের বহিষ্কারের ঘটনায় কংগ্রেস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের চাপে বিজেপি এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ এসব দেশের সঙ্গে আমাদের ব্যাবসায়িক যোগাযোগ রয়েছে। সেখান থেকে আমরা তেল পাই।
দলটি আরও বলেছে, এ ইস্যুতে দেশে আওয়াজ উঠলে ভালো হতো, তবেই নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেত।
— Nupur Sharma (@NupurSharmaBJP) June 5, 2022আরও পড়ুন:
ভারতের উদয়পুরে কানহাইয়া লাল নামের এক দর্জিকে হত্যার দুই আসামিকে শনিবার জয়পুর আদালতে নেয় পুলিশ। সেখানে তাদের ওপর হামলা করে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। আদালতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও টানাহেঁচড়ায় আসামিদের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে হামলাকারীরা।
পরে পুলিশের তৎপরতায় আসামিদের একটি ভ্যানে তুলে সেখান থেকে কারাগারে পাঠানো হলে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়।
গত মঙ্গলবার উদয়পুরে কানহাইয়া লাল নামের ওই ৪৮ বছর বয়সী ব্যক্তিকে খুন করা হয়। সে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও করেন দুজন প্রত্যক্ষদর্শী।
পরে দুই হত্যায় অংশ নেয়া রিয়াজ আখতারি এবং গোস মোহাম্মদ আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সে ভিডিওতে দেখা যায়, কানহাইয়া লালকে হত্যার বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে। সে সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দেন তারা।
হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর আখতারি ও মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়। কানহাইয়ার দোকানের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহকারী আরও দুজনকে পরে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ দাবি করে, তারাও হত্যাকাণ্ডের কথিত ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত চার জনকে শনিবার জয়পুরের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) আদালতে পাঠানো হয়। সে সময় আদালত প্রাঙ্গণে কঠোর পুলিশি ব্যবস্থা ছিল। কয়েকজন আইনজীবী ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ এবং ‘কানহাইয়ার খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দাও’ স্লোগান দেন।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা বিজেপির বরখাস্ত মুখপাত্র নূপুর শর্মার পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন উদরপুরের দর্জি কানহাইয়া লাল। তার শিরশ্ছেদ করেন গোস মোহাম্মদ ও রিয়াজ আখতারি নামে ওই দুই যুবক। কানহাইয়ার শরীরে ২৬টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।
এনডিটিভির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, কানহাইয়া লাল হত্যাকাণ্ডের আগে দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্যে এক সন্ত্রাসবিরোধী রসায়নবিদকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। সে ঘটনাটিও এখন সামনে এসেছে। সরকার সে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়ার দাবি করেছে। যার তদন্ত চলছে।
মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মার মন্তব্যকে সমর্থন করায় ওই রসায়নবিদকে খুন করা হয় বলে দাবি করা হয় সে প্রতিবেদনে।
বিজেপি বলেছে ‘উমেশ কোলহে নামে অরেক ব্যক্তি কানহাইয়া লালের মতো নূপুর শর্মার সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। মহানবী (সা.) সম্পর্কে এমন মন্তব্য ‘দেশব্যাপী প্রতিবাদ এবং বিশ্বব্যাপী নিন্দার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’
শনিবার আদালত এনআইএ-র কাছে ১২ জুলাই পর্যন্ত খুনিদের হেফাজত মঞ্জুর করেছে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার ভারতের ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট অল্ট নিউজের সহপ্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়েরের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
শনিবার নতুন করে তার নামে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং প্রমাণ ধ্বংসের এ অভিযোগ আনা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এ দিনই জুবায়েরকে পাঞ্জাবের পাতিয়ালা আদালতে তুলে তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে পুলিশ। তবে শুনানি শেষে আদালত এই সাংবাদিককে রিমান্ডে না নিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
জুবায়ের অল্ট নিউজের সহপ্রতিষ্ঠাতা। এই সংবাদমাধ্যমটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনার জন্য বেশ পরিচিত।
২০১৮ সালে জুবায়ের টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবির সঙ্গে করা মন্তব্যে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের দেবতাকে অপমান’ করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় চলতি মাসে পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৬ জুন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। পরে দুই দফায় পাঁচ দিন রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে।
অল্ট নিউজের সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিন্হা জানান, ২০২০ সালে অন্য একটি মামলায় জুবায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। এ মামলায় আদালত ইতোমধ্যে তাকে যাতে গ্রেপ্তার করা না হয় তার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তাকে আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের দাবি, যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে নিয়েই জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অল্ট নিউজ একটি অলাভজনক ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ সংবাদমাধ্যম। এই ওয়েবসাইটে মূলত খবরের সত্য-মিথ্যাকে বিশ্লেষণ এবং যাচাই করে প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন:ভারতে গত ৩ মাসে ৫৩ লাখ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের কারণেই এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
মেটা-মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে ১ মে থেকে ৩১ মের মধ্যে ১৯ লাখ ১০ হাজার অ্যাকাউন্ট ব্যান করা হয়েছে।
গত এপ্রিলেও ১৬ লাখের বেশি অ্যাকাউন্ট ও মার্চে ১৮ লাখ ৫ হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট ব্যান করা হয়েছে।
নিয়ম বিরুদ্ধ কাজের জন্যই এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে হোয়াটসঅ্যাপের একজন মুখপাত্র।
তিনি জানান, ইন্টারনেট দুনিয়ায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের নিগ্রহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ।
হোয়াটসঅ্যাপের এই মুখপাত্র বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমরা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখতে ধারাবাহিকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্সে বিনিয়োগ করেছি।’
এর আগে হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, অশালীন মেসেজ, ভুয়া খবর, রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বার্তা, দেশবিরোধী বার্তা ও ভিডিও আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোর হবে তারা।
বিশেষ করে যে ধরনের বার্তাগুলো অসংখ্যবার ফরোয়ার্ড করা হয়েছে এবং যেই মেসেজগুলোর জন্য গণ-অসন্তোষ তৈরি হতে পারে, সেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ।
আরও পড়ুন:উড়ন্ত স্পাইসজেটের ক্রুরা কেবিনে ধোঁয়া লক্ষ করার পর ভারতের জালালপুরের উদ্দেশে উড়ে যাওয়া বিমানকে দেশটির রাজধানী দিল্লিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, কেবিন ক্রুরুরা যখন ধোঁয়া দেখতে পান তখন ফ্লাইটটি ৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ছিল।
স্পাইসজেটের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই যাত্রীদের নিরাপদে নামানো হয়েছে।
এএনআইয়ের টুইট করা ভিডিওতে ধোঁয়াভর্তি কেবিন দেখা গেছে।
১৫ দিনের মধ্যে স্পাইসজেট বিমানের এটি দ্বিতীয় বারের মতো জরুরি অবতরণ। এর আগে ১৯ জুন ১৮৫ জন যাত্রী নিয়ে দিল্লিগামী একটি বিমান টেক-অফের ঠিক পরই পাটনায় জরুরি অবতরণ করে। সে সময় বিমানের ইঞ্জিনে পাখির আঘাতে আগুন ধরে যায়।
স্পাইসজেট একটি বিমান পরিবহন সেবা প্রদানকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। ভারতে কম খরচে এয়ারলাইনস সেবা দেয়ার জন্য এর পরিচিতি রয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজস্থানের উদয়পুরে দর্জি খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। মুম্বাই হামলার সঙ্গেও বিষয়টি জড়িত বলে ধারণা করছে পুলিশ। কেননা ঘুষ দিয়ে খুনিদের একজন তার মোটরসাইকেল ২৬১১ নম্বরে নিবন্ধন করিয়েছিলেন। খুনের পর পালিয়ে যেতে ওই মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করেছিলেন তারা।
২৬১১ সংখ্যাটির সঙ্গে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলার যোগসূত্র থাকায় পুলিশ এর পেছনে মুম্বাই হামলাকারীদের হাত থাকার কথা ভাবছে। ওই হামলায় ১৭৫ জন নিহত হন।
মহানবীকে (সা.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় গত মঙ্গলবার খুন হন উদরপুরের দর্জি কানহাইয়া লাল। তার শিরশ্ছেদ করেন গোস মোহাম্মদ ও রিয়াজ আখতারি নামে দুই যুবক। ৪৬ বছরের কানহাইয়ার শরীরে ২৬টি ছুরিকাঘাতের ক্ষত ছিল।
হত্যার দৃশ্য ভিডিও করেছিলেন খুনিরা। উদয়পুর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে রাজসামন্দ জেলায় এই মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার হন তারা। মোটরসাইকেলটি এখন উদয়পুরের ধানমান্ডি থানায় পড়ে আছে৷
বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দুই অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের জন্য বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠান।
পুলিশের বরাতে এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রিয়াজ মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য ২৬১১ নম্বরটি চেয়েছিলেন। এ জন্য ৫ হাজার রুপি ঘুষও দিতে হয়েছে তাকে। এ ছাড়া রিয়াজের পাসপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে তিনি নেপালে গিয়েছিলেন। তার মোবাইল ডাটা ঘেঁটে দেখা গেছে, এই ফোন থেকে তিনি পাকিস্তানে কল করেছিলেন।
রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিস (আরটিও) রেকর্ড বলছে, রিয়াজ আখতারি ২০১৩ সালে এইচডিএফসি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে মোটরসাইকেলটি কিনেছিলেন। গাড়ির বিমার মেয়াদ ২০১৪ সালের মার্চে শেষ হয়েছিল।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর উদয়পুরের ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং পুলিশ সুপারসহ ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস) ৩২ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। সহিংসতার আশঙ্কায় রাজ্যজুড়ে জারি হয় এক মাসের ১৪৪ ধারা। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে উদয়পুরে।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এ নিয়ে নতুন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে রাজ্যজুড়ে।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভাইরাস মোকাবিলায় এই নির্দেশনা জারি করে।
বৃহস্পতিবার ১৫২৪ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। ২৯ জুন যা ছিল ১৪২৪ অর্থাৎ একদিনে ১০০ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। একজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ২৯ হাজার ৪২৫ জন।
রাজ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা ও প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪ শতাংশের নিচে নামলে করোনা পরীক্ষা ও হাসপাতালে ভর্তি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সাধারণ সামাজিক দূরত্ব বিধি, মাস্ক পরার পাশাপাশি নিয়মিত স্যানিটাইজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নাক বা মুখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীদের করোনা পরীক্ষা আবশ্যক বলে রাজ্য নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, করোনার চতুর্থ ঢেউ শিগগিরই শুরু হতে পারে। তবে টিকাদানের জন্য আক্রান্তরা দ্রুত সেরে উঠবেন বলেও মত তাদের।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর চিকিৎসক সুজিত কুমার সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আসলে সাধারণ মানুষ করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ঠিকমতো মানছেন না। আর সে কারণেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমাদের অবিলম্বে মাস্ক পরা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখা উচিত।
আরও পড়ুন:
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে টুইটার ইন্ডিয়াকে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ম মেনে চলার শেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে।
২৭ জুন ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে পাঠানো নতুন এক নোটিশে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকে ৬ ও ৯ জুন পাঠানো নোটিশ মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে টুইটার।
নোটিশে বলা হয়েছে, সরকারের সব শর্ত মানতে হবে টুইটারকে। অন্যথায় ভারতে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা হারাবে। ফলে যাবতীয় পোস্টের জন্য দায় নিতে হবে টুইটারকেই।
ভারত সরকার অভিযোগ করে আসছে, ‘তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ধারা ৬৯-এর অধীনে কিছু বিষয়বস্তু প্ল্যাটফর্মটি থেকে সরিয়ে নেয়ার নোটিশগুলোতে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি।’
ভারতের টুইটারের চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসারকে উদ্দেশ করে দেয়া এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘যদি টুইটার তথ্য ও প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন করতে থাকে, তাহলে আইনের অধীনেই এর প্রতিক্রিয়া পাবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যবহারকারী অপরাধমূলক কিংবা অবমাননাকর কোনো কিছু পোস্ট করলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে। সেটা টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ যেকোনো প্রতিষ্ঠানই হতে পারে।
এখন পর্যন্ত ভারতে ব্যবসা পরিচালনা করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ‘মধ্যস্থতাকারী’র সুবিধা পেয়ে এসেছে। বিতর্কিত ও অনৈতিক কোনো পোস্টের দায় সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়েনি।
ভারত সরকার এবার জানিয়ে দিয়েছে, এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হতে পারে।
এর আগে চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে টুইটারের অভ্যন্তরীণ কিছু তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক অ্যাকাউন্ট ও টুইট ব্লক করতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ফ্রিডম হাউস, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে কিছু টুইট।
তবে সরকারের নির্দেশনা টুইটারের পক্ষ থেকে মানা হয়েছিল কি না তা জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য