আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরিফে সিরিজ বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কাবুল
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাবুলে বুধবার রাতে মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে দুজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন, তবে রাজধানী শহরের একটি হাসপাতালের টুইটে বলা হয়েছে, মসজিদে বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত ও ২২ জন আহত হন।
হতাহতের এ সংখ্যা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি আল জাজিরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর আহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে মসজিদে ছুটে যায় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স।
কাবুলে তালেবান পুলিশের মুখপাত্র খালিদ জাদরান বলেন, হজরত জাকারিয়া (আ.) মসজিদে ‘মাগরিবের নামাজের জন্য লোকজন জড়ো হলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।’
মাজার-ই-শরিফ
বালখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফে মিনিবাসগুলো হামলার শিকার হয় বলে জানিয়েছেন তালেবান নিযুক্ত প্রাদেশিক মুখপাত্র মোহাম্মদ আসিফ ওয়াজিরি।
তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় তিনটি মিনিবাসে বিস্ফোরক ডিভাইস রাখা হয়েছিল।
আসিফ আরও জানান, বিস্ফোরণে ৯ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হন।
আরও পড়ুন:ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। দেশের নাগরিকদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি।
দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে নাগরিকদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করতে অনেক কোম্পানি বিনামূল্যে খাবার থেকে শুরু করে ফ্রিতে ট্যাক্সি পর্যন্ত অফার করেছে।
প্রতিবারই কম ভোটার উপস্থিতির জন্য খবরের শিরোনাম হয় কর্ণাটক রাজ্যের শহর বেঙ্গালুরু। তাই ভোটারদের ভোটের মাঠে আকৃষ্ট করতে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি কোমর বেঁধে নেমেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। ভোট দেয়ার পুরস্কার হিসেবে সেখানে হোটেল, ট্যাক্সি পরিষেবা এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রণোদনা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসব সুবিধার মধ্যে ফ্রি বিয়ার, বিনামূল্যে ট্যাক্সি রাইড এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো সুবিধাকে উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বিবিসি।
এছাড়া আঙুলে ভোটের কালি দেখাতে পারলে অনেক হোটেল ক্রেতাদের বিনামূল্যে খাবার খাওয়াবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন না করার শর্তে স্থানীয় হোটেল মালিক সমিতিকে ফ্রিতে বা বিশেষ ছাড়ে খাবার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে ব্যাঙ্গালুরুর হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি পিসি রাও ডেইলি মিররকে বলেন, ‘ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে হোটেলগুলো বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছে। কেউ কেউ বিনামূল্যে কফি, ডোসা দেবে। আবার কেউ কেউ গরমে ভোটারদের জুস খাওয়াবে। কিছু হোটেল তো খাবারের ওপর বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্ণাটক রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে দক্ষিণ ব্যাঙ্গালুরুতে। সেবার ওই নির্বাচনি এলাকার মোট ভোটারদের ৫৩.৭ শতাংশ নাগরিক ভোট দিয়েছিলেন।
ব্যাঙ্গালুরুর জনপ্রিয় পার্ক ‘ওয়ান্ডারলা’ ভোটারদের জন্য টিকিটে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে ভোট দিয়ে আসা প্রথম পঞ্চাশ জন ক্রেতাকে বিনামূল্যে বিয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘ডেক অফ ব্রুস’ নামের একটি পানশালা।
স্থানীয় রাইড শেয়ার অ্যাপ ‘ব্লু-স্মার্ট’ ভোটকেন্দ্রের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোটারদের রাইডে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। এছাড়া ‘র্যাপিডো’ নামের ট্যাক্সি শেয়ারিং কোম্পানি ভোটারদের বিনামূল্যে রাইড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মিস্টার ফিলি’স নামের একটি ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ প্রথম ১০০ জন ভোটারকে বার্গার ও মিল্কশেকের ওপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘এটি আসলে নাগরিকদের ভোটের গুরুত্ব বোঝানো এবং আমাদের গণতন্ত্র উদযাপনের উপায়।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, এই উদ্যোগটি ব্যাঙ্গালুরুর নাগরিকদের মধ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও পরিবর্তন আনতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।’
উল্লেখ্য, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ২১টি রাজ্যের ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রথম দফা নির্বাচনে সব রাজ্যে গড়ে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় দেশটির ১৩ রাজ্যের ৮৯টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরালা, আসাম, বিহার, মণিপুর, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু-কাশ্মীরে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হবে।
এবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে সাত ধাপে, চলবে প্রায় দুই মাস ধরে। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হবে আগামী ১ জুন এবং ৪ জুন ভোটের ফল ঘোষণা হবে।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা সরকারের জন্য বেকারত্ব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বার্তা সংস্থাটি অর্থনীতিবিদদের ওপর চালানো জরিপের ফল বুধবার এক প্রতিবেদনে তুলে ধরে।
জরিপে অংশ নেয়া অর্থনীতিবিদদের আশা, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বড় অর্থনীতিগুলোর তুলনায় দ্রুততম গতিতে ভারতের প্রবৃদ্ধি হলেও বিপুল ও ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি।
গত ১৬ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ২৬ জন অর্থনীতিবিদের ওপর জরিপ চালায় রয়টার্স, যাদের মধ্যে ১৫ জনই বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের জন্য বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হবে বেকারত্ব।
অন্যদিকে আট অর্থনীতিবিদ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটির গ্রামাঞ্চলে ভোগকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন। অন্যদিকে দুজন অর্থনীতিবদ মূল্যস্ফীতি এবং একজন দারিদ্র্যকে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দল বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল। চলতি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারে দলটি।
বিজেপির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেকারত্বের হার পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন:ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা শেষ হতে না হতেই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথম দফায় ভোটের হার আশানুরূপ না হওয়ায় তিনি সরাসরি ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হাঁটছেন বলে মত বিরোধীদের।
বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত দলগুলো বলছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট টানতে ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিচ্ছেন মোদি।
বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য এখন পর্যন্ত এ অভিযোগের কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি।
রোববার রাজস্থানের একটি জনসভায় গিয়ে মোদি বলেন, ‘সরকারে থাকাকালীন কংগ্রেস বলেছিল, দেশের সম্পদের ওপর মুসলিমদের অধিকার সবার আগে। অর্থাৎ দেশের সম্পদ বণ্টন করা হবে তাদের মধ্যে, যাদের পরিবারে বেশি সন্তান রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দেয়া হবে দেশের সম্পদ।’
তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের ইশতেহারেই বলা হয়েছে, মা-বোনদের সোনার গহনার হিসাব করে সেই সম্পদ বিতরণ করা হবে। মনমোহন সিংয়ের সরকার তো বলেই দিয়েছে, দেশের সম্পদে অধিকার মুসলিমদেরই। আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও বাদ দেবে না।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড় বইছে ভারতজুড়ে।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘প্রথম দফার ভোট শেষ হতেই হতাশ হয়ে পড়েছেন মোদি। তার মিথ্যাচারের মাত্রা এতটাই নিচে নেমেছে যে এখন মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছেন।’
রাহুল লিখেছেন, ‘কংগ্রেসের এবারের ইশতেহার বৈপ্লবিক। এ বিপ্লবের প্রতি বিপুল জনসমর্থন উঠতে শুরু করেছে। এবার মানুষ তার পরিবার, কর্মসংস্থান, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোট দেবে। অন্য ভাবনায় বিচ্যুত হবে না ভারতের জনগণ।’
আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘স্বৈরশাসকের আসল চেহারা আবারও উন্মোচিত হয়েছে। এটি জনগণের নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার কেড়ে নেয়া বাবা সাহেব আম্বেদকারের সংবিধানকে ধ্বংস করার আরেকটি পদক্ষেপ। আমি আবারও বলছি- এটা শুধু সরকার গঠনের নির্বাচন নয়, এটা দেশ বাঁচানোর নির্বাচন, সংবিধান রক্ষার নির্বাচন।’
মোদিকে তোপ দেগেছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসিও।
তার কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী বলেছেন। আসলে ২০০২ সাল থেকে মুসলিমদের নির্যাতন করেই ভোট পেয়ে আসছেন মোদি। আমরা যদি দেশের সম্পদের কথা বলি, তাহলে মোদি সরকারের আমলে দেশের সম্পদের ওপর প্রথম অধিকার তার ধনকুবের বন্ধুদের।
‘ভারতের এক শতাংশ মানুষ আজ দেশের সম্পদের ৪০ শতাংশ খেয়ে ফেলছে। সাধারণ হিন্দুদের মুসলমানদের ভয় দেখানো হচ্ছে, অথচ সত্য এই যে, আপনার টাকায় অন্য কেউ ধনী হচ্ছে।’
এদিকে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতে ২০০৬ সালে মনমোহন সিংয়ের বক্তব্যের একটি ভিডিওর ২২ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ ছড়িয়ে দেয় বিজেপি। এর জবাবে পরে ওই ভাষণের ১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ প্রচার করে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের প্রকাশিত ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মনমোহন বলেছিলেন ক্ষমতায়নের কথা, অথচ মোদি বলেছেন মানুষের সম্পদ কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বাঁটোয়ারা করে দেয়ার কথা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় স্কুলে শিক্ষক এবং কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনায় একটি বড় নিয়োগ বাতিল হচ্ছে।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের দেয়া এ রায়ের ফলে সবমিলিয়ে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেছে। ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রায় দেয় এ বেঞ্চ। শুধু একজনকে বিশেষ কারণে চাকরিচ্যুত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালত।
প্রতিবেদন বলছে, গত তিন বছরে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা বিষয় নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলা। স্কুলে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে বহু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। টেট (প্রাথমিক স্কুল) এবং এসএসসির (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক) দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে অভিযোগ। টেট মামলা আপাতত সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সোমবার এসএসসির চাকরি বাতিলের মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।
রায় অনুযায়ী, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। সুদের হার হবে বছরে ১২ শতাংশ। চার সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরত দিতে বলেছে আদালত।
লোকসভা ভোটের মাঝে এসএসসি মামলার এই রায় রাজ্য সরকারের কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনেক ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যে আপলোড করা হয়েছে। যেগুলো এখনও আপলোড করা হয়নি, সেগুলো দ্রুত আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
উত্তরপত্র জনগণ যাতে দেখতে পান, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে কমিশনকে। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, এই মামলার তদন্ত চালিয়ে যাবে সিবিআই। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির জন্য চাইলে সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
সবার চাকরি বাতিল করা হলেও একজনের চাকরি থাকছে। সোমা দাস নামের একজন ক্যানসারে আক্রান্ত। মানবিক কারণে তার চাকরি বাতিল করেনি হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে এসএসসি নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলা। এই মামলায় প্রথমে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চেও সেই নির্দেশ বহাল থাকে।
এর পর মামলা গিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেখান থেকে মামলাগুলি হাইকোর্টে আবার ফেরত পাঠানো হয়। মে মাসের মধ্যে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চকে শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণা করতে বলেছিল শীর্ষ আদালত।
সাড়ে তিন মাসের মধ্যে শুনানি শেষ হয়ে যায়। সোমবার রায় ঘোষণা করল আদালত। ২৮১ পৃষ্ঠার রায় আদালতে পড়ে শোনান বিচারপতি বসাক।
মালদ্বীপে রোববার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান নেয়া প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর দল পিপল’স ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)।
দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজধানী মালেভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সান জানায়, ভোটে ক্ষমতাসীন পিএনসি পার্লামেন্টের ৬০টির বেশি আসনে জয়ী হয়।
মালদ্বীপের পার্লামেন্টের ৯৩টি আসনের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৩২৬ প্রার্থী। এতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের দেশটির দুই লাখের বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন পিএনসির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৯০ আসনে। এর বাইরে মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) ৮৯, দ্য ডেমোক্র্যাটসের ৩৯, জুমহুরি পার্টির (জেপি) ১০, মালদিভস ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্সের (এমডিএ) চার, আদালত পার্টির (এপি) চার, মালদিভস ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) দুই এবং স্বতন্ত্র থেকে দাঁড়ানো ১৩০ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
প্রাথমিক ফলে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ আসনে এককভাবে জয়ী হয় পিএনসি। এর বাইরে দলটির সমর্থনপুষ্ট স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ক্ষমতাসীন জোটের দুই দল এমএনপি ও এমডিএর প্রার্থীরাও জয়ী হন।
এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন জোট এমডিপি ৬৪টি আসনে জয়ী হয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছিল।
আরও পড়ুন:ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হ্যাটট্রিক তথা টানা তৃতীয় জয়ের সম্ভাবনার মধ্যে শুক্রবার দেশটিতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের ২১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে আজ ভোট হচ্ছে।
সাত ধাপের এ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সব আসনে ভোট হচ্ছে তামিলনাড়ু (৩৯), রাজস্থান (১২), উত্তর প্রদেশ (৮), উত্তরাখণ্ড (৫), অরুণাচল প্রদেশ (২), মেঘালয় (২), আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (১), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), পুদুচেরি (১), সিকিম (১) ও লাক্ষাদ্বীপে (১)। এর বাইরে আসাম ও মহারাষ্ট্রের পাঁচটি করে আসনে, বিহারের চারটি, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি, মণিপুরের দুটি এবং ত্রিপুরা, জম্মু-কাশ্মীর ও ছত্রিশগড়ের একটি করে আসনে ভোট হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই চার রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমে আজ ভোট।
ভারতে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের জন্য বড় পরীক্ষার এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে ৩৭০টিতে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স তথা এনডিএ ৪০০টি আসনে জয়ী হোক, এমনটি চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লোকসভায় ৩৫৩টি আসন পায় এনডিএ, যেখানে বিজেপির একক আসনের সংখ্যা ৩০৩টি।
লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোট ১ জুন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য