কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা ইয়াসিন মালিকের আজীবন সশ্রম কারাবাসের রায় দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। রায়ের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তার অনুসারীদের মধ্যে। বিচ্ছিন্ন কিছু হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
দিল্লির বিশেষ আদালতের বিচারপতি প্রবীণ সিং বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজকর্ম পরিচালনা ও প্রচারণার। তার সংগঠনকে আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। বিভিন্ন সময় ইয়াসিন মালিককে গৃহবন্দি করে রাখা হলেও তার প্রভাববলয় কমেনি। জঙ্গিদের মদত দেয়ার অভিযোগে দুই বছর আগে তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তার পর থেকে তিনি জেলে আছেন।
বিচার চলাকালে এনআইএ ইয়াসিন মালিকের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে। বিচারকের কাছে ইয়াসিনের আইনজীবী যাবজ্জীবন জেল দেয়ার ব্যাপারে আর্জি জানান।
ইয়াসিন আদালতকে জানান, তিনি ১৯৯৪ সালে অস্ত্র ছেড়েছেন। তার পর থেকে অহিংস পথেই চলেছেন। এরপর তিনি আর রাজনীতি করবেন না। তাই আদালত যদি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, তাতে তিনি আপত্তি করবেন না। নতুন আবেদন জানাবেন না।
দিল্লির এনআইএ আদালত গত ১৯ মে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলেও বিচারক শাস্তির সিদ্ধান্ত রিজার্ভ রাখেন। তা বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় ঘোষণা করা হয়। দুটি মামলায় ইয়াসিনকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি, ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর উপত্যকায় জোর ধরপাকড় শুরু করে ভারতীয় সেনা। তখনই ইয়াসিন মালিকসহ বেশ কিছু নেতার জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আসে। সে সময় গ্রেপ্তার করা হয় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ইয়াসিন মালিককে।
উগ্রপন্থিদের আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা দেয়ার অভিযোগ তদন্তের পর ইয়াসিনকে চলতি মাসেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একই মামলায় লস্কর-ই-তাইয়েবার হাফিজ শাহিদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সৈয়দ সালাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা ছাড়াও ফৌজদারি দণ্ডবিধির ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ইয়াসিনের সাজা ঘোষণার সংবাদে শ্রীনগরের পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দোকান-বাজার। আলোচিত এ উপত্যকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ইয়াসিনের সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের শফিউদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় অপর তিন আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছেন অন্য একজন।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামসহ তিন সদস্যদের ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়।
মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাজুল ইসলাম, জাহেদ মিয়া ও ছালেক মিয়াকে। খালাস পেয়েছেন সাব্বির আহমেদ।
এর আগে গত ১৭ মে মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষ করে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ও গাজী তামিম।
২০১৮ সালের ২১ মার্চ এ মামলায় পাঁচজনের নামে তদন্ত সম্পন্ন করে তদন্ত সংস্থা। পরে তারা প্রসিকিউটশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রসিকিউশন আসামিদের বিরুদ্ধে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে দুটি অভিযোগ আনে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে রায়ের জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল।
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় নববধূকে বাবার বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নালিতাবাড়ী পৌর এলাকার কালিনগর মহল্লায় বুধবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জড়িতের অভিযোগে পুলিশ স্থানীয় রহুল আমিন নামের এক যুবক ও তার ভাবিকে গ্রেপ্তার করেছে। ২৫ বছরের রহুল মাদক সেবন করতেন বলে জানা গেছে।
১৮ বছরের দিতি খাতুন কালিনগর মহল্লার মুছা মিয়ার মেয়ে।
মেয়েকে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে হত্যা মামলা করেন মুছা মিয়া।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বলেন, ‘আসামিদের আজ দুপুরে আদালতে তোলা হবে।’
স্বজনদের বরাতে ওসি জানান, এক সপ্তাহ আগে গত বৃহস্পতিবার উপজেলার চেল্লাখালী সন্যাসীভিটা এলাকার খাইরুল ইসলামের সঙ্গে দিতির বিয়ে হয়। বিয়ের পর দিতিকে তার বাবার বাড়ি কালিনগর রেখে খাইরুল কর্মস্থল ঢাকায় চলে যান।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে একই এলাকার রহুল আমিন তার ভাবি রাহেলাকে নিয়ে দিতিদের বাড়িতে যান। এ সময় রাহেলার ডাক শুনে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে রহুল দা দিয়ে দিতির মাথায় কুপিয়ে পালিয়ে যান।
পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে পরামর্শ দেন। ময়মনসিংহ নেয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নকলা উপজেলায় দিতির মৃত্যু হয়।
ওসি বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাহেলাকে আটক করে ও রহুল আমিনকে খুঁজতে থাকে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রহুল আমিন নিজেই ঘটনাস্থলে পুলিশের কাছে এসে হত্যার কথা স্বীকার করে।’
এ ঘটনায় দিতির মা মনোয়ারা বেগম জানান, রাতের খাওয়া শেষে তারা ঘুমাতে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাহেলা এসে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। দিতি দরজা খোলা মাত্রই রহুল তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যান। পরে রাহেলাও চলে যান। তখন পুলিশে খবর দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘কী কারণে তারা আমার মেয়েডারে মারল আমরা জানি না। আমার মেয়ের খুনিদের বিচার চাই।’
এদিকে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন ও ওসি বাদল।
ওসি বছির আহমেদ বাদল বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। কী কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে দ্রুতই আমরা আসল ঘটনা উদ্ধার করতে পারব।
‘মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।’
আরও পড়ুন:নড়াইলে কলেজশিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারই রিটটি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী পূর্ণিমা জাহান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা রিট দায়েরের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। আজকেই রিটটি দায়ের করে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে।’
এর আগে গত ২৮ জুন এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন এই আইনজীবী। পরে বিষয়টি নিয়ে রিট করতে পরামর্শ দেয় হাইকোর্ট।
প্রেক্ষাপট
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশের পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।
শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
পুলিশের সামনে এমন ঘটনায় দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা দিয়ে অপদস্থ করার ঘটনায় কারও দায়িত্বে গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বপন কুমারকে জুতার মালা পরানোর পর তার আশপাশে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ বাহিনীর অন্তত ১০ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে যেখানে দাঁড় করিয়ে জুতার মালা পরানো হয়, তার তিন-চার হাত দূরেই দৃশ্যত নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিলেন নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবীর।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের ভাইকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪৫ বছর বয়সী মমিনুল হক মুরাদপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আকবর হোসেনের বড় ভাই। মমিনুল পেশায় কৃষক ছিলেন।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বনিক এসব তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মমিনুল হক ছেলে ও ভাতিজাকে নিয়ে গরু কিনতে গিয়েছিল। ফেরার পথে বাংলাবাজারে চলন্ত রিকশায় তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
তার ওপর কারা, কেন হামলা করেছে তা পুলিশ বের করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনায় ইউপি সদস্য আকবর হোসেন বলেন, ‘এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যা। সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে কুপিয়ে চলে গেছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী বিশেষ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স হওয়ার আগে অভিভাবকের সম্মতিতে বিয়ের অনুমতির জন্য কোন আদালতে যেতে হবে, তা নির্ধারণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
এ-সংক্রান্ত রিটে সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে আইনসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইলিয়াস আলী মণ্ডল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ইলিয়াস আলী জানান, বয়স নির্ধারণে বিশেষ প্রেক্ষাপটে ছাড় পাবেন এমন বিধান রেখে সংসদে ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭’ হয়েছে। তাতে নারীদের মতো পুরুষরাও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করার সুযোগ পাবেন।
বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে ওঠে ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়।
কী বলা হয়েছে বিলে
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এবং বাবা-মার সম্মতি অনুযায়ী বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ে হলে তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
যা আগে অপ্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে শুধু নারীদের কথা উল্লেখ ছিল। এ ছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত রাখা হয়েছে।
আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এতে ক্ষেত্রবিশেষে ১৮ বছরের আগেও বিয়ে দেওয়া যেতে পারবে।
বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এবং বাবা-মার সম্মতি অনুযায়ী বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ের কার্যক্রম হলে তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
আইনজীবী ইলিয়াস আলী বলেন, ‘এখন তাহলে প্রশ্ন হলো এখানে কোন আদালত তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এখন অভিভাবকরা কোন আদালতে যাবেন। নারী-শিশু আদালত, বিশেষ আদালত নাকি কোথায়। আবার এ বিষয়ে কোনো বিধিও করা হয়নি। তা হলে যদি কেউ তার সন্তানকে বিয়ে দিতে বা করাতে চান কোন আদালতে যাবেন, সেই প্রশ্নে রিট করা হয়।’
আইনটি ২০১৭ সালের ১১ মার্চ গেজেট প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন:নড়াইলে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা দিয়ে অপদস্থ করার সময় পুলিশের নির্লিপ্ততা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। পুলিশের উপস্থিতিতে এই কাজ আতঙ্কজনক বলে মন্তব্য করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনটি।
বুধবার সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর যুগ্ম প্রচার সম্পাদক মুঈদ হাসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বলা হয়, ‘সাভারে একজন শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা ও নড়াইলে আরেক শিক্ষককে পরিকল্পিতভাবে নিগ্রহ করার ঘটনায় চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। সংগঠনের পক্ষ থেকে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হচ্ছে।’
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই দুই দুঃখজনক ঘটনা এবং সাম্প্রতিকালের আরও কিছু উদ্বেগজনক উগ্র সাম্প্রদায়িক ঘটনা প্রমাণ করে, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই রাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতা আজ কতটা বিপন্নের মুখোমুখি। এসব ঘটনা আরও প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশকে কোনো মহল পরিকল্পিতভাবে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করছে।
‘আরও উদ্বেগজনক যে, নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর চরম অমানবিক ঘটনাটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের উপস্থিতিতে ঘটেছে। অন্যদিকে একজন ছাত্রের বর্বরতায় প্রাণ হারিয়েছেন আরেক শিক্ষক।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পালাক্রমিক এসব ঘটনা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির সুচতুর ও পরিকল্পিত অপচেষ্টা। অনেক ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততা ও দায়িত্বে অবহেলা আরও বেশি আতঙ্কজনক, যা উগ্র সাম্প্রদায়িক ও অনৈতিক শক্তিকে উৎসাহিত করবে। ‘সব ধর্মের সহাবস্থান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
‘আশুলিয়ায় শিক্ষক হত্যা ও নড়াইলে কলেজ অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনার দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ দাবি করছি। একইসঙ্গে দোষীদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নির্বাহী সভাপতি মো. নুরুল আলম, সহ-সভাপতি ম. হামিদ ও অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, মহাসচিব হারুন হাবীব, যুগ্ম-মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, আব্দুল মাবুদ ও শাহজাহান মুখ্য বেনু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী সিকদার (অব.), কোষাধ্যক্ষ ডা. মনসুর আহমদ, কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক লায়লা হাসান ও ইফফাত আরা নার্গীস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস লাকি, বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি প্রদীপ কুমার ঘোষ, খুলনার বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক খয়রাত হোসেন, রাজশাহীর বিভাগীয় সভাপতি আবুল হাসান খন্দকার এবং কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য সচিব বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার।
আরও পড়ুন:নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রহমত উল্লাহ রনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ নিয়ে মামলায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর বুধবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খুলনা থেকে বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয় রনিকে।
তিনি আরও জানান, অধ্যক্ষ স্বপনকে জুতার মালা পরানোর ঘটনার ভিডিওতে কালো টিশার্ট পরা যুবকই হলেন রহমত উল্লাহ রনি।
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় গত সোমবার দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।
দণ্ডবিধির ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এরপর রোববার রাতেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে আছেন কলেজের পাশের মির্জাপুর বাজারে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাওন খান। লাল গেঞ্জি পরা ৩০ বছর বয়সী শাওনকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ভিডিওতে চিহ্নিত করা গেছে।
শাওনের মা হোসনেয়ারা বেগম মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল রাতে আমার ছেলেকে দেখা করতে বলে মির্জাপুর ক্যাম্প পুলিশ। দেখা করতে গেলে তাকে আটকায় দিছে।’
হোসনেয়ারা বেগম দাবি করেন, তার ছেলে ঘটনার দিন শিক্ষক বা অভিযুক্ত ছাত্রকে বিক্ষুব্ধ লোকজনের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। এর পরেও ‘বিনা কারণে’ পুলিশ তাকে নিয়ে গেছে। তবে স্বপন কুমারকে জুতা পরানোর ভিডিওতে শাওনকে শনাক্ত করেন হোসনেয়ারা।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আরও দুজন হলেন মির্জাপুর মধ্যপাড়ার মো. মনিরুল ইসলাম এবং মির্জাপুরের সৈয়দ রিমন আলী।
যা ঘটেছিল
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্ত হওয়ার ঘটনায় তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ। তবে পুলিশের দাবি, শিক্ষকের গলায় জুতা পরানোর ঘটনা তারা ‘দেখেননি’।
যদিও ভিডিওতে শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর সময় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে সদর থানার ওসিকে।
নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাহুল দেবের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কলেজে সহিংসতা ও শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় কোনো মামলা বা জড়িতদের চিহ্নিত করার বিষয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা ছিল না। এরই মধ্যে স্বপন কুমারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার তোড়জোড় শুরু করে কলেজ পরিচালনা কমিটি।
বিষয়টি নিয়ে রোববার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
শিক্ষক স্বপন কুমারকে নিয়ে নিউজবাংলার প্রতিবেদনটি নজরে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সোমবার নিউজবাংলাকে জানান, স্বপন কুমারকে তার চলতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এমন চেষ্টা করলেও মাউশি তাতে অনুমোদন দেবে না।
স্বপন কুমার ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়া নড়াইলের প্রশাসনও এরপর নড়েচড়ে বসে। ঘটনার ৯ দিন পর কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় মামলা করে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য