কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা ইয়াসিন মালিকের আজীবন সশ্রম কারাবাসের রায় দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। রায়ের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তার অনুসারীদের মধ্যে। বিচ্ছিন্ন কিছু হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
দিল্লির বিশেষ আদালতের বিচারপতি প্রবীণ সিং বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজকর্ম পরিচালনা ও প্রচারণার। তার সংগঠনকে আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। বিভিন্ন সময় ইয়াসিন মালিককে গৃহবন্দি করে রাখা হলেও তার প্রভাববলয় কমেনি। জঙ্গিদের মদত দেয়ার অভিযোগে দুই বছর আগে তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তার পর থেকে তিনি জেলে আছেন।
বিচার চলাকালে এনআইএ ইয়াসিন মালিকের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে। বিচারকের কাছে ইয়াসিনের আইনজীবী যাবজ্জীবন জেল দেয়ার ব্যাপারে আর্জি জানান।
ইয়াসিন আদালতকে জানান, তিনি ১৯৯৪ সালে অস্ত্র ছেড়েছেন। তার পর থেকে অহিংস পথেই চলেছেন। এরপর তিনি আর রাজনীতি করবেন না। তাই আদালত যদি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, তাতে তিনি আপত্তি করবেন না। নতুন আবেদন জানাবেন না।
দিল্লির এনআইএ আদালত গত ১৯ মে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলেও বিচারক শাস্তির সিদ্ধান্ত রিজার্ভ রাখেন। তা বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় ঘোষণা করা হয়। দুটি মামলায় ইয়াসিনকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি, ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর উপত্যকায় জোর ধরপাকড় শুরু করে ভারতীয় সেনা। তখনই ইয়াসিন মালিকসহ বেশ কিছু নেতার জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আসে। সে সময় গ্রেপ্তার করা হয় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ইয়াসিন মালিককে।
উগ্রপন্থিদের আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা দেয়ার অভিযোগ তদন্তের পর ইয়াসিনকে চলতি মাসেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একই মামলায় লস্কর-ই-তাইয়েবার হাফিজ শাহিদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সৈয়দ সালাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা ছাড়াও ফৌজদারি দণ্ডবিধির ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ইয়াসিনের সাজা ঘোষণার সংবাদে শ্রীনগরের পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দোকান-বাজার। আলোচিত এ উপত্যকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ইয়াসিনের সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা।
আরও পড়ুন:ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড থেকে ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আটজনের জড়িত থাকার সত্যতা খুঁজে পায়নি পুলিশ। তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের কোতোয়ালি জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আগামী ২৭ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আদালতের শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অব্যাহতির সুপারিশ করা অন্যরা হলেন- ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ওবায়দুল্লা খন্দকার, কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার একেএম শোয়েব বাশুরী ওরফে হাবলু, আজিজুল করিম তারেক ও মনিজুর রহমান ওরফে মানিক।
পুলিশের অব্যাহতির আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাদী ২০০৭ সালের ৩০ জুন দরখাস্ত মারফত মামলার এজাহারে বর্ণিত চাঁদার টাকার পরিমাণ ভুল উল্লেখ করে তা সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৭ মে বাদী নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য একখানা হলফনামা সম্পাদন করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি বিশেষ মহলের চাপে বাধ্য হয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারভুক্তদের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই এবং তিনি মামলা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নন।
এছাড়াও তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাদী তার হলফনামায় বর্ণিত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান যে, তখনকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে পড়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং এজাহারনামীয় অপরাপর আসামিকে তিনি চিনতেন না। এজাহারে বর্ণিত চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
চাঁদাবাজির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তারেক রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদের মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ সময় তাদের ব্যবহৃত দুটি বোট ও ১৩টি নৌকাসহ জালও নিয়ে গেছে তারা।
সোমবার বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অদূরে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে ওইসব জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘আবারও বাংলাদেশের জলসীমানায় প্রবেশ করে মাছ ধরার ১৫টি নৌকাসহ ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি।
‘এর আগে মিয়ানমারের নৌবাহিনী বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সে সময় একজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এসব ঘটনায় টেকনাফে জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনটি বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারসহ ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবহিত হয়েছি। এ ঘটনায় আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে নাফ নদ মোহনা হয়ে বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক জায়গায় মাছ ধরতে যাওয়া ১৫টি নৌকা মাছ শিকারে যায়। এ সময় মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সদস্যরা ওইসব নৌকা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে। এতে জেলেদের পরিবারের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ বলেন, ‘আমার এলাকার ১৫টি নৌকা নাফ নদে মাছ ধরতে গেলে তাদের ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। নৌকার মালিক পক্ষ থেকে প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’
এর আগে ৯ অক্টোবর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে মাছ ধরার ছয়টি ট্রলারে ৫৮ জন জেলে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় জেলে ও মাঝি-মাল্লাদের অপহরণ করে সে দেশের নৌবাহিনী। সে সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত একটি স্পিডবোট থেকে বাংলাদেশি একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে এক জেলে নিহত ও দুই জেলে আহত হন। পরে আটক অন্য জেলেদের ফেরত দেয়া হয়। ওই ঘটনায় সে সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।
এছাড়া ১৫ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইনে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে ফেরত আনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আরও পড়ুন:রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের প্রকৃত সত্য বের করতে স্বাধীন কমিশন গঠন প্রশ্নে রুল জারি করে এ সংক্রান্ত আবেদনটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।
আগামী ১০ দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন অপর আবেদনকারী বিপ্লব কুমার পোদ্দার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
তানভীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত গণহত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী ও নেপথ্যে কারা ছিল সে বিষয়ে জাতীয়ভাবে পূর্ণাঙ্গ কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভুক্তভোগী পরিবার ও তৎকালীন সেনা কর্মকর্তারা ওই ঘটনা নিয়ে নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন।
‘কেউ কেউ বলেছেন, তদন্তে সরকার তেমন সহায়তা করেনি। এমন প্রেক্ষাপটে জনসমক্ষে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে গণহত্যা তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়। পাশাপাশি শহীদ সেনা দিবস ঘোষণার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) বরাবর আবেদন করা হয়।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে বিদ্রোহের নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। সেই লোমহর্ষক ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় আনা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।
হত্যাযজ্ঞের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেয় বিচারিক আদালত। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি এবং ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১০ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন।
বিচারিক আদালতে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেয়। রায়ে ফাঁসি বহাল রাখা হয় ১৩৯ জনের। যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান ৪৫ জন।
উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে। পাশাপাশি আসামি পক্ষেও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।
দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে বৃহত্তম এই মামলায় বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আসামি করা হয়েছিল। এ মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়েছিল। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অবশ্য পিন্টুর এই মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন:নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার কারণে এক কিশোরী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
প্রাণ হারানো কিশোরীর বয়স ১৭ বছর।
পরিবারের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিশোরীর ছবি ও ভিডিও ছড়াচ্ছিলেন তার সাবেক স্বামী হেলাল উদ্দিন সরদার (২৭)।
কিশোরীর বাবা জানান, আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় সোমবার রাতে অভিমান করে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিশোরী। পরে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দুইটার দিকে মারা যায় সে।
কিশোরীর বাড়ি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মালশন গ্রামে। অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন সরদারের বাড়ি একই উপজেলার আঁকনা গ্রামে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আঁকনা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী হেলাল উদ্দিন সরদারের সঙ্গে একই এলাকার মালশন গ্রামের ওই কিশোরীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সাত মাসের মাথায় কলহের জেরে গত ৭ জুলাই তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়। তারপর থেকেই হেলাল ফেসবুকে একটি আইডি খুলে সেখানে তার সাবেক স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন।
পরিবার ও স্থানীয়রা আরও জানায়, শুধু ফেসবুকই নয়, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন হেলাল। এমনকি সাবেক স্ত্রীর হোয়াটসআ্যপে এসব ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে তাকে উত্যক্ত করেন তিনি। পরে কিশোরী তার ব্যবহৃত ফোনটি ভেঙে ফেলেন।
ঘটনাটি পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে অভিমান করে সোমবার রাত আটটার দিকে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিশোরী। পরে পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে রাত দুইটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
কিশোরীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই হেলাল নানাভাবে বিরক্ত ও উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তার নামে ফেসবুক আইডি খুলে নানা রকম ছবি ও ভিডিও পোস্ট করত। আমার মেয়েকেও হোয়াটসঅ্যাপে সেসব দিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বলত, ‘তোর জীবন শেষ করে দিব।’ এসব জানাজানি হলে আমার মেয়ে সবার অজান্তে ঘরে বিষ খায়।
“হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মেয়েটা মারা যায়। এসব ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। অপমান ও অভিমানে মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে। হেলালসহ যারাই জড়িত থাক, তাদের সবার কঠিন শাস্তি চাই। আমরা থানায় মামলা করব।’
এদিকে ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন সরদারের পরিবারের লোকজন। গ্রামের বাড়ি আঁকনাতে গিয়েও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত মালয়েশিয়াপ্রবাসী হেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফজলুল হক নয়ন বলেন, ‘(কিশোরীকে) বিষ পান করার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা প্রদান করেছি।
‘পরবর্তীতে রাজশাহী বা বগুড়া নিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলাম, তবে এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাণীনগর থানার ওসি তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘মালশন গ্রামের একজন বিষ পান করে। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
‘যেহেতু নওগাঁ সদর হাসপাতালে মারা গেছেন, যার কারণে সদর থানা পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় পর মঙ্গলবার থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির সাজেকের পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কারণে সাজেক পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করেছে প্রশাসন। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই।
‘খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো মঙ্গলবার থেকে উন্মুক্ত হবে। ফলে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক ভ্রমণ করতে পারবেন।’
এর আগে গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কয়েক দফায় সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। এতে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় সাজেকে পর্যটকদের প্রবেশ।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, সাজেকে মোট ১২০টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকশূন্য থাকার কারণে রিসোর্ট-কটেজের অধিকাংশ কর্মচারী সাজেক ছেড়ে চলে গেছেন।
এ ছাড়া সহিংসতার জেরে ৮ অক্টোবর খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলার সব পর্যটন কেন্দ্র গমনে বিরত থাকার অনুরোধ জানায় প্রশাসন।
পর্যটন কেন্দ্র উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘এখানকার পর্যটন খাতের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় এ খাতে অনেকে বেকার হয়ে পরেছে। পর্যটন চালু হওয়ায় খাত সংশ্লিষ্টদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।’
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে খাগড়াছড়ি জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। সাজেকে যেহেতু খাগড়াছড়ি জেলা সড়ক হয়ে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে মঙ্গলবার থেকে সাজেকেও পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারবেন।’
তিনি আরও জানান, এক মাস পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ খাতে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৫ কোটি টাকার।
আরও পড়ুন:গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারিতে এক হাজার ছয় শর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘গুম সংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ জমা দেয়ার সময় শেষ হয়েছে গত ৩১ অক্টোবর। এই সময়ের মধ্যে ১৪০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে।’
কমিশনের সম্মেলনকক্ষে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে গাইডলাইন অনুসরণ করেনি। গুমের সঙ্গে কারা সংশ্লিষ্ট, সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গুমের সঙ্গে বাহিনীর কতজন সদস্য সংশ্লিষ্ট, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেই সংখ্যাটা এখনও বলা যাবে না। ৭ তারিখ থেকে বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। আমরা সমন ইস্যু করে দিয়েছি। প্রথম দিন সাতজনকে ডাকা হয়েছে। তারপর তিনজন, সাতজন, পাঁচজন এভাবে চলতে থাকবে।
‘এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ডিজিএফআইয়ের সদস্য রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআই, র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি, পুলিশ তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে ছুরিকাঘাতে আহত যুবক শুভ বেপারির (২৩) মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সোমবার রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত শনিবার রাত ১২টার দিকে রামগোপালপুর এলাকায় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ওই যুবক।
নিহত শুভ মিরকাদিমের কালিন্দীপাড়া এলাকার মুকুল বেপারীর ছেলে।
তার বাবা মুকুল বেপারি ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘শনিবার রাতে আমাদের সাথে বাড়িতেই অবস্থান করছিল শুভ। তখন স্থানীয় নাজমুল নামে একজনকে কয়েকজন আটকে রেখেছে, এ রকম খবর পেয়ে আমার ছেলে রামগোপালপুর চিশতী বাড়ির সামনে যায়। সেখানে ফয়সাল নামের একজন তাকে ছুরি দিয়ে পেটে আঘাত করে।
‘পরে ছুরিকাঘাতের খবর পেয়ে আমরা উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিই। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার ছেলে মারা যায়। ওর পেটে ছুরির আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে কাপড়ের ব্যবসা করত। কারও সাথে শত্রুতা নাই।
‘কারা, কী কারণে এ ঘটনা ঘটাল, আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি খলিলুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে পরিবারের অভিযোগ সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য