পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট কাটছেই না। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খানের পিটিআইয়ের দলের কর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার জেরে বুধবার পাঞ্জাবে পিটিআই ঘোষিত মুক্তির পদযাত্রায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে লাহোরের বাটি ও ভাট্টিচৌকে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের মিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর ভিডিও ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালের কারণে এ উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
এর আগে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান গতকাল তার সমর্থকদের সত্যিকার স্বাধীনতার জন্য ইসলামাবাদের দিকে পদযাত্রার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পদযাত্রার অনুমতি দেয়া হবে না। এর জবাবে ইমরান খান তরুণদের প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা, ফয়সালাবাদে পুলিশের সঙ্গে পিটিআই কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বেশ কয়েকজন পিটিআই নেতাকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ইমরান খান পেশোয়ার ছেড়েছেন। খবরে বলা হয়েছে, পেশোয়ার থেকে হেলিকপ্টারে করে খাইবার পাখতুনে চলে গেছেন। তিনি খাইবার পাখতুনে তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, খাইবার পাখতুনে ইমরান খানের সমর্থকরা তার হেলিকপ্টার ঘিরে রেখেছে। পরে পিটিআইয়ের টুইটার পেজে একটি ছবি টুইট করা হয়, যেখানে ইমরান খানকে গাড়ি থেকে তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে দেখা গেছে।
রাজস্থানের উদয়পুরে দর্জি খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। মুম্বাই হামলার সঙ্গেও বিষয়টি জড়িত বলে ধারণা করছে পুলিশ। কেননা ঘুষ দিয়ে খুনিদের একজন তার মোটরসাইকেল ২৬১১ নম্বরে নিবন্ধন করিয়েছিলেন। খুনের পর পালিয়ে যেতে ওই মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করেছিলেন তারা।
২৬১১ সংখ্যাটির সঙ্গে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলার যোগসূত্র থাকায় পুলিশ এর পেছনে মুম্বাই হামলাকারীদের হাত থাকার কথা ভাবছে। ওই হামলায় ১৭৫ জন নিহত হন।
মহানবীকে (সা.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় গত মঙ্গলবার খুন হন উদরপুরের দর্জি কানহাইয়া লাল। তার শিরশ্ছেদ করেন গোস মোহাম্মদ ও রিয়াজ আখতারি নামে দুই যুবক। ৪৬ বছরের কানহাইয়ার শরীরে ২৬টি ছুরিকাঘাতের ক্ষত ছিল।
হত্যার দৃশ্য ভিডিও করেছিলেন খুনিরা। উদয়পুর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে রাজসামন্দ জেলায় এই মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার হন তারা। মোটরসাইকেলটি এখন উদয়পুরের ধানমান্ডি থানায় পড়ে আছে৷
বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দুই অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের জন্য বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠান।
পুলিশের বরাতে এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রিয়াজ মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য ২৬১১ নম্বরটি চেয়েছিলেন। এ জন্য ৫ হাজার রুপি ঘুষও দিতে হয়েছে তাকে। এ ছাড়া রিয়াজের পাসপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে তিনি নেপালে গিয়েছিলেন। তার মোবাইল ডাটা ঘেঁটে দেখা গেছে, এই ফোন থেকে তিনি পাকিস্তানে কল করেছিলেন।
রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিস (আরটিও) রেকর্ড বলছে, রিয়াজ আখতারি ২০১৩ সালে এইচডিএফসি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে মোটরসাইকেলটি কিনেছিলেন। গাড়ির বিমার মেয়াদ ২০১৪ সালের মার্চে শেষ হয়েছিল।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর উদয়পুরের ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং পুলিশ সুপারসহ ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস) ৩২ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। সহিংসতার আশঙ্কায় রাজ্যজুড়ে জারি হয় এক মাসের ১৪৪ ধারা। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে উদয়পুরে।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এ নিয়ে নতুন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে রাজ্যজুড়ে।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভাইরাস মোকাবিলায় এই নির্দেশনা জারি করে।
বৃহস্পতিবার ১৫২৪ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। ২৯ জুন যা ছিল ১৪২৪ অর্থাৎ একদিনে ১০০ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। একজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ২৯ হাজার ৪২৫ জন।
রাজ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা ও প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪ শতাংশের নিচে নামলে করোনা পরীক্ষা ও হাসপাতালে ভর্তি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সাধারণ সামাজিক দূরত্ব বিধি, মাস্ক পরার পাশাপাশি নিয়মিত স্যানিটাইজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নাক বা মুখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীদের করোনা পরীক্ষা আবশ্যক বলে রাজ্য নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, করোনার চতুর্থ ঢেউ শিগগিরই শুরু হতে পারে। তবে টিকাদানের জন্য আক্রান্তরা দ্রুত সেরে উঠবেন বলেও মত তাদের।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর চিকিৎসক সুজিত কুমার সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আসলে সাধারণ মানুষ করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ঠিকমতো মানছেন না। আর সে কারণেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমাদের অবিলম্বে মাস্ক পরা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখা উচিত।
আরও পড়ুন:
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে টুইটার ইন্ডিয়াকে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ম মেনে চলার শেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে।
২৭ জুন ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে পাঠানো নতুন এক নোটিশে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকে ৬ ও ৯ জুন পাঠানো নোটিশ মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে টুইটার।
নোটিশে বলা হয়েছে, সরকারের সব শর্ত মানতে হবে টুইটারকে। অন্যথায় ভারতে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা হারাবে। ফলে যাবতীয় পোস্টের জন্য দায় নিতে হবে টুইটারকেই।
ভারত সরকার অভিযোগ করে আসছে, ‘তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ধারা ৬৯-এর অধীনে কিছু বিষয়বস্তু প্ল্যাটফর্মটি থেকে সরিয়ে নেয়ার নোটিশগুলোতে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি।’
ভারতের টুইটারের চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসারকে উদ্দেশ করে দেয়া এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘যদি টুইটার তথ্য ও প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন করতে থাকে, তাহলে আইনের অধীনেই এর প্রতিক্রিয়া পাবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যবহারকারী অপরাধমূলক কিংবা অবমাননাকর কোনো কিছু পোস্ট করলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে। সেটা টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ যেকোনো প্রতিষ্ঠানই হতে পারে।
এখন পর্যন্ত ভারতে ব্যবসা পরিচালনা করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ‘মধ্যস্থতাকারী’র সুবিধা পেয়ে এসেছে। বিতর্কিত ও অনৈতিক কোনো পোস্টের দায় সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়েনি।
ভারত সরকার এবার জানিয়ে দিয়েছে, এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হতে পারে।
এর আগে চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে টুইটারের অভ্যন্তরীণ কিছু তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক অ্যাকাউন্ট ও টুইট ব্লক করতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ফ্রিডম হাউস, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে কিছু টুইট।
তবে সরকারের নির্দেশনা টুইটারের পক্ষ থেকে মানা হয়েছিল কি না তা জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:ইতিহাস বিকৃতি হলে, ইতিহাসে সত্য সাধনা না হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে শিক্ষকদের ঝুঁকি নিতে হবে বলে মনে করেন ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
বৃহস্পতিবার কলকাতার সল্টলেকে অমর্ত্য সেন রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও হার্ভাড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অমর্ত্য সেন।
সেখানে প্রতীচি ট্রাস্টের একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভারতের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। এ সময় ভারতের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
একজন স্কুলশিক্ষক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও হার্ভাড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে প্রশ্ন করেন, যেভাবে সিলেবাস থেকে ইতিহাসের নানা অধ্যায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে একজন শিক্ষকের ভূমিকা কী?
জবাবে অমর্ত্য সেন বলেন, ইতিহাসের উদ্দেশ্য হলো সত্য সাধনা করা। ভুল করা হলে ঠিক করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকদের এর জন্য ঝুঁকি নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বহু বিপ্লবীর জেলযাত্রার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কত মানুষ দ্বীপান্তরে গিয়েছেন, জেলে গিয়েছেন, সেইসব তো আমরা জানি। ঝুঁকি নিয়েই তারা এসব কাজ করেছেন।’
তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতাই শেষ দেখা নয়।
ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনছে অনেক মহল।
কেন্দ্রীয় স্কুলগুলোর সিলেবাস থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মুসলিম শাসন আমলে তাজমহল থেকে জ্ঞানবাপীর মতো বিভিন্ন স্থাপত্য কীর্তির ভেতরে হিন্দু মন্দির ও দেবদেবীর উপস্থিতির দাবি করে দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলাও চলছে।
এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘ভারতের ইতিহাস চর্চা শেষ হয়ে যায়নি, ইতিহাস লেখার প্রক্রিয়া আজও চলছে। ফলে কোনটা ইতিহাস আর কোনটা বিকৃতি, সে ব্যাপারে এখনই অবস্থান নেয়ার সময় আসেনি।’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইতিহাসবিদ সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘ইতিহাস হবে সত্যনিষ্ঠ । বিকৃতির কোনো জায়গা নেই ইতিহাসে।’
আরও পড়ুন:ভারতে এখন যা ঘটছে তার জন্য ক্ষমতাসীন বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে এককভাবে দায়ী করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। গোপন বিষয় নিয়ে নূপুর শর্মার দায়িত্বহীন ও বেফাঁস মন্তব্য গোটা দেশে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে, জানায় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বিজেপির সাবেক এ মুখপাত্রের কঠোর সমালোচনা করে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুস্তান টাইমস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আদালত আরও জানায়, উত্তরপ্রদেশের বারানসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে হিন্দু-মুসলিমের বিরোধের মধ্যে মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে নূপুর শর্মার মন্তব্য দেশজুড়ে ভয়াবহ বিতর্কের জন্ম দেয়।
আদালত আরও বলে, ‘তার পুরো দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
৩৭ বছর বয়সী এই নেত্রী দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে করা এফআইআর নয়াদিল্লিতে স্থানান্তরের আবেদন জানালে আদালত তার বিষয়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেয়।
এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে কাতার, সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভারতকে চিঠি দিয়েছে। পরে বিজেপি সরকার জানিয়েছে, ভারতে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রয়েছে।
আদালত জানিয়েছে, তার বেফাঁস মন্তব্য রাজস্থানের উদয়পুরে দর্জি হত্যার মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য দায়ী। এই হত্যার জেরে পুরো রাজ্য ও এর বাইরে উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ এখনও রাজস্তানে বহাল রয়েছে যেটি ভারতের অন্যতম প্রধান পর্যটক আকর্ষণীয় স্থান।
মহানবীকে (সা.) নিয়ে নূপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্য ভিন্নধারার গণমাধ্যমে তুলে ধরার জেরে গ্রেপ্তার হন ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট অল্টনিউজের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের।
আদালত তিরস্কার করে আরও জানিয়েছে, নূপুরের মন্তব্যের জেরে সহিংসতা ছড়িয়েছে উত্তর প্রদেশেও।
সম্প্রতি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে নূপুর শর্মাকে ডেকে কথা বলতে চায় পুলিশ, তবে সেসময় তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে ই-মেইলে ২৫ জুন পুলিশের সামনে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয় নূপুরকে। কিন্তু উত্তর দেননি তিনি।
এরপরই নূপুরের খোঁজে তার নয়াদিল্লির বাড়িতে উপস্থিত হয় পুলিশের একটি দল। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে বিজেপির এই সাবেক মুখপাত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
শুধু মুম্বাই নয়, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গেও নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থানায় তার বিরুদ্ধে করা হয় এফআইআর।
২০ জুন থানায় উপস্থিত হওয়ার জন্য তলবও করা হয়েছে তাকে। কিন্তু নূপুর সেখানে যাবেন কি না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের বিতর্ক অনুষ্ঠানে নূপুর শর্মা মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিজেপি নেতা নবীন কুমার জিন্দালও।
এরপরই শুরু হয় সমালোচনা আর বিক্ষোভ। দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় সংঘর্ষ ও সহিংসতা। বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে নূপুরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ক্ষোভ পৌঁছেছে বিভিন্ন মুসলিম দেশে। কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে কোনো কোনো দেশ।
এ ইস্যুতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় বিজেপির পক্ষ থেকে নূপুর ও নবীনকে ছয় বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এবং পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, সেসব দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণাও দেয় মুসলমানরা।
এ ঘটনার পর দলের নেতা ও মুখপাত্রদের টিভি বিতর্কে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নতুন নিয়ম করে বিজেপি। এখন থেকে কেবল দলটির অনুমোদিত মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্টরা টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন। টিভি বিতর্কে অংশ নিতে মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্ট নির্ধারণ করে দেবে দলটির মিডিয়া সেল।
নূপুরকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠে বিভিন্ন মহলে। তবে এখনও পর্যন্ত নূপুর-বিতর্কে মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আরও পড়ুন:ভারতের মণিপুরে গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে রাজ্যের নোনি জেলায় নির্মাণাধীন ইম্ফল রেলপথের টুপুল ইয়ার্ড রেলওয়ে ক্যাম্পে ব্যাপক ভূমিধসে ৭ জন আঞ্চলিক সেনাসহ ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভূমিধসের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
কেন্দ্র ও রাজ্যের সংস্থাগুলো উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এ পর্যন্ত ৭ জন আঞ্চলিক সেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করতে উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য বুলডোজারসহ ভারী প্রকৌশল সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়েছে।
ভূমিধসের কারণে নদীর ওপর নির্মিত বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় প্রশাসন ইজেই নদীর ভাটিতে বসবাসকারী নাগরিকদের সরে যেতে বলেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আরপি কলিতা ও স্পিয়ার কর্পস কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর সি তিওয়ারি ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা তদারকি করছেন।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের জন্য ৫ লাখ রুপি এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী এন বীরেন সিং-এর সঙ্গে কথা বলেন এবং ঐ রাজ্যের শোচনীয় ভূমিধস পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন।
এক টুইটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংজির সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছি আমি। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আমি ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা প্রার্থনা করি।
মৃতদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনকে জানাই সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
আরও পড়ুন:‘ভারতবর্ষ শুধুমাত্র হিন্দুর বা মুসলমানের ভারতবর্ষ হতে পারে না। একসঙ্গে, একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই সেটা ভারতবর্ষের ঐতিহ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।’
ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া জানালেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
কলকাতার সল্টলেকে প্রতীচি ট্রাস্টের একটি অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার একথা বলেন তিনি।
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আজ যদি আমাকে কেউ প্রশ্ন করেন, আপনি কি কোনও কিছু নিয়ে ভীত? আমি বলব হ্যাঁ। ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, আমিও চাই, দেশ বিভক্ত না হয়ে, ঐক্যবদ্ধ থাকুক। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমার কাছে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মানে আমি জাতীয়তাবাদী এমনটা নয় ।
তিনি বলেন, ‘অন্নদাশঙ্কর রায়ের একটা কবিতা আছে, তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো, শুধুমাত্র দেশভাগের সঙ্গে তুলনা হয় না। একটা দল আর একটা দলের ওপর শক্তি ব্যবহার করলে, তেলের শিশি ভাঙার মতো ঘটনা হয়।’
নিরীহ মানুষদের আটকে রাখার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে প্রশাসনের সামঞ্জস্য দরকার। কারণ বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা রাখেন।’
মন্তব্য