চীনের উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ শিনকিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কিছু ছবি ও তথ্য ফাঁস হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের শিনকিয়াং সফরের সময় ছবিগুলো হ্যাক হয়েছিল। ছবিগুলোতে চীন সরকারের ‘কারাবন্দি কর্মসূচির’ চিত্র প্রকাশ্যে আসে।
এই ছবিগুলো হাতে পেয়েছে বিবিসি। এতে তথাকথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ শিবিরসহ উইঘুরদের গণআটকের প্রমাণ আবারও স্পষ্ট হলো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাক করা ফাইলগুলোতে পুলিশের তোলা পাঁচ হাজারের বেশি উইঘুরের ছবি আছে। তাদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি বন্দি সশস্ত্র রক্ষীর কড়া পাহারায় আছেন।
উইঘুরদের বেশির ভাগই মুসলিম। চীনের উত্তর-পশ্চিমের শিনকিয়াং অঞ্চলে অন্তত এক কোটি উইঘুর সম্প্রদায়ের লোক বাস করে।
আত্মপরিচয়ের বেলায় তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক ও জাতিগতভাবে মধ্য এশিয়ার লোকজনের কাছাকাছি বলে মনে করেন। তাদের ভাষা তুর্কির কাছাকাছি।
গত কয়েক দশকে চীনের সংখ্যাগুরু হান জাতি সেই অঞ্চলে বাস করতে শুরু করে। এতে উইঘুর সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
তিব্বতের মতো শিনকিয়াং কাগজে কলমে স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হলেও, বেইজিং-এর বাইরেও তারা নিজেদের মতো করে অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এই দুই এলাকা চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।
চীন সরকারের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ আছে। যদিও এসব প্রত্যাখ্যান করতে দেরি করে না বেইজিং।
তথ্যগুলো প্রকাশের পর বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক কথা বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে। আলাপে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ছবিগুলোতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ রয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আটক দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের বয়স ১৫ বছর; সবচেয়ে বয়স্ক নারী ৭৩ বছর বয়সী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকজনকে মুসলিম হওয়ার কারণে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সফরের কারণে আটক করা হয়েছে।
Detainee photos and ‘shoot-to-kill’ policy revealed in China hackhttps://t.co/JTnXjiPuuI
— BBC News (World) (@BBCWorld) May 24, 2022
“১০ হাজারের বেশি ছবি ও তথ্য হাতে পেয়েছে বিবিসি। সেই সঙ্গে চীনের শীর্ষ নেতাদের ‘বিশেষ বক্তব্য’, পুলিশের ব্যক্তিগত তথ্য এবং তাদের প্রতি নির্দেশনামূলক ডকুমেন্ট রয়েছে।”
বিবিসি আরও জানিয়েছে, শিনকিয়াংয়ের পুলিশের সার্ভার থেকে ২০১৮ সাল থেকে সংরক্ষণ করা ফাইলগুলো হ্যাক হয়েছিল। এগুলো চীন সরকারের বরখাস্ত কর্মকর্তা অ্যাড্রিয়ান জেনজের তত্ত্বাবধানে ছিল।
পুলিশের প্রতি নির্দেশনায় বলা আছে, আটক ব্যক্তিদের কেউ হাতকড়া বা শিকলসহ পালানোর চেষ্টা করলে সরাসরি ‘গুলি করে হত্যা’ করতে পারবে রক্ষীরা।
আরও পড়ুন:
করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আগে আগে সরকার আবার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি ঘোষণা করলেও ভ্রুক্ষেপ নেই সাধারণের। মাস্ক পরছে খুব কমসংখ্যক মানুষই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নির্দেশনা দিলেই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে না। এই নীতি বাস্তবায়নে প্রশাসনকে মাঠে থাকতে হবে।
গত ১৬ জুন থেকে প্রতি দিনই পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার টানা ১৪ দিন ৫ শতাংশের বেশি হওয়ায় এরই মধ্যে বাংলাদেশের করোনার চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
যেদিন চতুর্থ ঢেউয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়, তার আগের দিন মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়, তাতে ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান, শপিং মল, বাজার, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরকার আবার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি ঘোষণা করলেও ভ্রুক্ষেপ নেই সাধারণের। মাস্ক পরছে খুব কমসংখ্যক মানুষই। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
তবে বুধবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো নমুনা চোখে পড়েনি। নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাউকে মাঠেই পাওয়া যায়নি।
এটাও ঠিক, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা যতটা প্রাণঘাতী ছিল, তৃতীয় ঢেউয়ে ছিল না ততটা। চতুর্থ ঢেউ যেদিন নিশ্চিত হয়, সেদিনসহ পর পর তিন দিন রোগী পাওয়া গেছে দুই হাজারের বেশি। তবে এই রোগীদের মধ্যে জটিলতা কম। হাসপাতালে চাপ কম, রোগীর মৃত্যুও প্রথম তিন ঢেউয়ের তুলনায় অনেক কম।
চতুর্থ ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার দিন দুই হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হলেও ২৪ ঘণ্টায় শূন্য মৃত্যুর স্বস্তিদায়ক তথ্যও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তবে জনগণের এমন উদাসীনতা চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে প্রভাতী উচ্চ বিদ্যানিকেতন ও ইস্পাহানী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঘুরে ছাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি বললেই চলে।
ইস্পাহানীর দশম শ্রেণির ছাত্রী তাহমিনা বিনতে রশিদ বলে, ‘এখন তো করোনা কমে গেছে। আর আমার করোনার টিকাও দেয়া হয়েছে, তাই মাস্ক তেমন একটা পরা হয় না।’
প্রভাতীর সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মারুফ হোসাইন বলে, ‘টিকা দেয়ার পর এখন আর করোনাকে ভয় পাই না। তাই সব সময় মাস্ক পরা হয় না।’
মাস্ক পরার বিষয়ে জনগণের এমন উদাসীনতা চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বাহন পরিবহনে’ উঠে দেখা যায় অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। এ বিষয়ে কাউকে চিন্তিতও দেখা গেল না।
মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে একজন যাত্রী মুখ ভেংচিয়ে বলেন, ‘এমনি’।
করোনা বাড়ছে বলার পর তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরলে গরম লাগে।’
এটুকু বলেই মুখ উল্টোদিকে ঘুরিয়ে নিলেন।
একটি পরিবহন সার্ভিসের টিকিট কালেক্টর মোহাম্মদ তাওহীদ বলেন, ‘মানুষ বেশির ভাগই তো দেখি মাস্ক পরে না।’
তাওহীদ নিজেও মাস্ক পরেননি। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘আমার মাস্ক পরার সময় নাই। আগে কাজ করতে হবে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার একটি নির্দেশনা দিয়েছে, তবে তার বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি। নো মাস্ক, নো সার্ভিস নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকাকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন হতে হবে।’
করোনার সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরার বিষয়ে অনেকেরই এমন উদাসীনতা রয়েছে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেনের ধারণা করোনার চতুর্থ ঢেউ এবার বেশিদিন স্থায়ী হবে না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রনের যে সংক্রমণ আমরা দেখেছি, সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংক্রমণ চূড়ায় উঠে আবার দ্রুত নেমে গেছে। করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে ওমিক্রনের যে দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, এটি আরও দ্রুত সংক্রমিত করতে সক্ষম। আমার ধারণা, এই হার জুলাইয়ের মধ্যে নেমে যাবে।’
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময় ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মাস্ক পরা ছাড়া করোনাসংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। তবে জনগণের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে অনীহার বিষয়টি আবার দেখা যায়।
আসন্ন কোরবানি ঈদে যশোরে চাহিদার চেয়েও পশুর সরবরাহ বেশি বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর। এতে কোরবানির পরও জেলায় ৪ হাজারের বেশি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি হওয়ায় দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার পশু খামারিরা। পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু মোটাতাজাকরণে তাদের ব্যয় বেড়েছে অনেক। সেই অনুযায়ী দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে যশোর জেলায় গবাদি পশুর চাহিদা রয়েছে ৯১ হাজার ১৮৮টি। এর মধ্যে গরু ২৭ হাজার ৯৫৫টি, ছাগল ৬২ হাজার ৬৭৬টি ও ভেড়া ৫৫৭টি।
বিপরীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৯৫ হাজার ৭১০টি পশু। এর মধ্যে গরু ২৯ হাজার ১৭০, ছাগল ৬৫ হাজার ৯৮৩ এবং ভেড়া ৫৫৭টি। উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৫২২টি। এর মধ্যে ১ হাজার ২১৫টি গরু আর ছাগল ৩ হাজার ৩০৭টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর আরও জানিয়েছে, যশোরের ৮ উপজেলায় মোট ২১টি পশুহাট রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে এই হাটগুলোতে মোট ২৪টি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। রোগাক্রান্ত ও অসুস্থ পশু যেন হাটে বিক্রি না হয়, তার দেখভাল করবে এই টিমগুলো।
যশোর সদরের বাহাদুরপুর গ্রামের খামারি জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি কোরবানির জন্য ৫টি গরু মোটাতাজাকরণ করেছেন। প্রতিদিন একটি গরুর পেছনে তার ব্যয় হচ্ছে ১৭০-২০০ টাকা।
গতবার চাহিদা অনুযায়ী পশু বিক্রি করতে পারেননি দাবি করে তিনি বলেন, ‘করোনা না থাকায় আশা করছি এবার ভাল দামে গরু বিক্রি করতে পারবো।’
অভয়নগর উপজেলার মশরহাটি গ্রামে রয়েছে পরশ অ্যাগ্রো লিমিটেডের ২০২টি গরু। কোরবানির পশুহাটে গরুগুলো বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বাণিজ্যিকভাবে গরু লালন-পালন করি। আমাদের খামারের সব গরু দেশি প্রজাতির। ক্রেতাদের পছন্দ হবার পর আমরা দরদাম করে গরু বিক্রি করব।’
খামারিরা জানিয়েছেন, গত দুই বছর করোনার মধ্যে কোরবানি ঈদ হয়েছে। ফলে লকডাউনসহ অর্থনৈতিক কারণে কোরবানি কম হয়েছে। পশু বিক্রি কম হওয়ায় খামারিদের লোকসানও গুণতে হয়েছে। এ বছর করোনামুক্ত ঈদ হওয়ায় তারা আশায় বুক বেঁধেছেন।
খামারিরা আরও জানান, অধিকাংশ খামারি নিজেদের গচ্ছিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে কুরবানির পশু পালন করছেন। আবার অনেকের রয়েছে ব্যাংক ও এনজিওর ঋণ। চাহিদার উদ্বৃত্ত থাকায় দেশি পশুতেই এবার কোরবানি হবে। কিন্তু সেটির প্রভাব দামের উপরে পড়ে কিনা তা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে।
এদিকে, পশুখাদ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় গরু ছাগল লালন পালনে খরচও অনেক বেড়েছে। ব্যাপারীরা ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ছাগল দেখছেন। কিন্তু তারা দাম বলছেন চাহিদার তুলনায় কম। ফলে দাম নিয়ে শঙ্কা থাকলেও খামারিরা আশা করছেন, পুরোদমে হাট শুরু হলে ভাল দাম পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক বলেন, ‘যশোর জেলায় এবার কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে গরু-ছাগল উদ্বৃত্ত থাকবে। ইতোমধ্যে কোরবানির পশুহাট শুরু হয়েছে। জেলার হাটগুলোর জন্য ২৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সুস্থ ও সবল পশু ক্রয়-বিক্রয়ে সহযোগিতার জন্য এই টিমগুলো হাটে কাজ করছে। আমরা খামারিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখভাল করছি।’
আরও পড়ুন:মূল্যস্ফীতির পারদ ঊর্ধ্বমুখী। অস্থির মুদ্রাবাজার। ডলার লেনদেন হচ্ছে এক শ টাকার আশপাশে। রয়েছে করোনার ধাক্কা। পাশাপাশি বৈশ্বিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সংকটকালে টিকে থাকতে কর্মসংস্থান আর বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার মধ্যে নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে আসছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় আগামী অর্থবছরের জন্য এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন তিনি।
করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়।
আলোচনা আছে সব ধরনের ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের যে ঊর্ধ্বসীমা রয়েছে তা তুলে দেয়ার ঘোষণা থাকতে পারে নতুন মুদ্রানীতিতে। তবে একেবারে বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে নতুন করে একটি সীমা দেয়া হতে পারে।
বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার বেশি- এমন আলোচনার মধ্যে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর হয়। সেই সঙ্গে আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ঠিক করা হয় ৬ শতাংশ।
তবে পরে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার আড়াই শতাংশ পর্যন্ত নামিয়ে আনে। ফলে মূল্যস্ফীতি হিসাব করে দেখা গেছে, ব্যাংকে টাকা রাখলে আসলে তার মূল্যমান এক বছর পরে কমে যায়।
এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার আমানতের সুদহার নিয়ে নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে আমানতের সুদহার এখন ৬ শতাংশের সীমায় রাখা যাচ্ছে না।
গত বছরের ৮ আগস্ট এক নির্দেশে আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও গত মে মাসে তা উঠেছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ব্যাংকগুলোকে যদি আমানতের বিপরীতে সুদহার এরচেয়ে বেশি রাখতে হয়, তাহলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে রাখা কঠিন।
আবার মূল্যস্ফীতি ক্রমেই বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কমাতে চাইছে। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে।
ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রবৃদ্ধি অর্জন দুটি দিক সামনে রেখেই মুদ্রানীতি দেয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী রেপোর সুদহার আরও বাড়ানো হতে পারে। সম্প্রতি রেপোর সুদ বেসিস পয়েন্ট ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রনীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয় ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত এপ্রিল পর্যন্ত ঋণ বেড়েছে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। আগামী অর্থবছরের জন্যও একই রকম প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হতে পারে।
সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে তা ঠিক সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
কেমন হবে মুদ্রানীতি? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হতে পারে। বাড়তে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদহার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘করোনার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডকে যাতে নিরুৎসাহিত না করা হয়, সেদিকে মুদ্রানীতির দৃষ্টি থাকবে। এবারের মুদ্রানীতি হবে সতর্কতামূলক। পুরোপুরি সংকোচন বা সম্প্রসারণমূলক নয়।’
গভর্নরের জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একদিকে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে বিনিয়োগও বাড়ানো– এ দুই বিষয় ভারসাম্য বজায় রাখাটা মুদ্রানীতির বড় চ্যালেঞ্জ।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানীর সঙ্গে শরীয়তপুরের যোগাযোগ যতটা সহজ হবে ভাবা হয়েছিল, হয়নি তা। ৭০ কিলোমিটার পথ পারি দিতে সময় লাগছে চার ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি।
সেতু চালু হওয়ার আগেও এই পথ পারি দিতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টাই লাগত। এ কারণে শহরের বাসিন্দারা ভীষণ হতাশ।
এর কারণ জেলা শহর থেকে সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়কটি একেবারেই সরু। বিপরীত দিক থেকে আসা রিকশাকে সাইড দিতেও বাসগুলোকে সড়কের এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ কারণে পুরো পথই চলতে হয় ধীরগতিতে।
জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ২৭ কিলোমিটার সড়ক পার হতেই সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা আর সংযোগ সড়ক থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৪৩ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে ঢাকা পৌঁছতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও কম।
এই সমস্যা হতে পারে ভেবে ২০২০ সালের শুরুতেই এই সড়কটি চওড়া করার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে দেয় সরকার। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেই প্রকল্প এগিয়ে নিতে পারেনি। এখন তারা দোহাই দিচ্ছে করোনার। বলছে, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরে সড়কটি চওড়া করা হবে।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুর পুরোপুরি সুফল পেতে শরীয়তপুরবাসীর লাগবে আরও দুই বছর।
২৬ জুন থেকে সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর আশাভঙ্গের বেদনা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন জেলা সদরের সুমি আক্তার।
প্রথম দিনই সেতু পাড়ি দিয়ে রাজধানীতে যেতে শরীয়তপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চেপে বসেন তিনি। আশা করছিলেন, ৭০ কিলোমিটার সড়ক দেড় ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছবেন। কিন্তু খানাখন্দে ভরা সরু সড়কের যানজট অতিক্রম করে ঢাকা পৌঁছতে সুমির সময় লেগেছে ৪ ঘণ্টারও বেশি।
সুমি আক্ষেপ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুর পুরাপুরি সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। শরীয়তপুর অংশের সরু সড়কের যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। এত সরু সড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে কয়েকবার দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। কষ্ট লাগে এই ভেবে আমাদের জেলায় পদ্মা সেতু হলেও আমরাই শতভাগ সুবিধা পাচ্ছি না।’
পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে ১৮ বছর পর শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার যাত্রী রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছে এসব বাসে।
কিন্তু শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত ২৪ ফুট ও কাজিরহাট থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ১২ ফুট চওড়া সড়ক দিয়ে এসব বাসকে চলতে হচ্ছে। বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চালকদের।
ফলে যানবাহনের চাপ কম থাকলেও এই ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সরু সড়কে চালাতে গিয়ে গত ৩ দিনে ছোট বড় অন্তত চারটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের উজ্জ্বল মাঝি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হয়েছে অথচ আমরা সুফল পাচ্ছি না। চার বছর আগে প্রকল্প অনুমোদন হলেও এত দিন কাজ হয়নি। চলতি মাসে কেবল কাজ শুরু করেছে। ঢাকা যেতে শরীয়তপুর অংশের সড়কের মধ্যে থাকা অবস্থায় সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গেলে রাস্তা ছেড়ে গাড়ির চাকা মাটিতে নেমে যায়। বর্ষার দিনে খুবই ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে।’
শহরের বাসিন্দা সোহাগ সুজন মোল্লা বলেন, ‘রাস্তা ভাঙা ও সরু থাকার কারণে ভালো কোনো কোম্পানি এই রুটে বাস চালাতে চাইছে না। ফলে আমরা ভালো মানের সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। গতকাল ঢাকা যাওয়ার সময় অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে আমাদের গাড়িটি হেলে গিয়েছিল। সব যাত্রীই আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছি।’
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস বাসের চালক মো. হাবিব বলেন, ‘শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত কোনো রকমে যেতে পারলেও ওখান থেকে মাত্র ১২ ফুট চওড়া রাস্তা দিয়ে পরের ১০ কিলোমিটার যেতে হয়। একটি রিকশাকে সাইড দিতেও গাড়ির চাকা সড়কের বাইরে চলে আসে। সড়কটি উন্নয়ন হয়ে গেলে মাত্র দেড় ঘণ্টায় যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছে দেয়া যাবে।’
এমন হওয়ার কথা ছিল না
শরীয়তপুরবাসীর এই ভোগান্তি হওয়ার কোনো কারণই ছিল না। কারণ সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বাড়বে, এই অবশ্যম্ভাবী বিষয়টি ধরে নিয়ে সরকার প্রায় আড়াই বছর আগেই একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে দেয়। কিন্তু সেটি এগিয়ে নেয়ার কাজ শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।
যাত্রী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে সবাই গাফিলতি করেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন আরও দুই বছর সময় চাইছে।
পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার ২৮ মাস আগেই ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নয়নের প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি একনেক।
১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১ হাজার ২৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সড়ক ও ২৭টি কালভার্ট উন্নয়নে ৩৯১ কোটি ও দুটি সেতু নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয় ৫৯ কোটি টাকা।
তিনটি প্যাকেজে ভাগ করা প্রকল্পে প্রথম প্যাকেজে ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা শহর থেকে জাজিরা পর্যন্ত ১৩.৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ শুরুও হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই অংশের কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ।
দ্বিতীয় প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত কোটাপাড়া ও কাজিরহাট এলাকায় নির্মাণাধীন দুটি সেতুর অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। তৃতীয় প্যাকেজে থাকা জাজিরা থেকে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত ১৩.৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের টেন্ডার কেবল শেষ হয়েছে।
চার লেনের সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলেও প্রাথমিকভাবে ৩৪ ফুট প্রস্থ্যের দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ জন্য অধিগ্রহণ করতে হবে ১০৫ হেক্টর জমি।
২২টি এলএ কেসের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ কাজ করছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে যৌথ তদন্ত হয়েছে ৭টির। একটির ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর ও একটির চেক হস্তান্তর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাকিগুলোর কার্যক্রম চলমান।
চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূইয়া রেদওয়ানুর রহমান নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি অনুমোদনের পর করোনা মহামারিতে আশানুরূপ কাজ করা সম্ভব হয়নি।
‘তাছাড়া প্রথম বছর অর্থ বরাদ্দও ছিল অনেক কম। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করি আগামী দুই বছেরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি একেবারে সমানে সমান।
নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়া ২৮টি দলের মধ্যে ১৪টি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে, বাকি ১৪টি দল মনে করে এই যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়।
অবশ্য এই ২৮টি দলের বাইরে আরও ১১টি দল রয়েছে, যারা দৃশ্যত ভোটে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে। কিন্তু তারা নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়নি। তাদের সবার মত এলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।
দেশে ব্যালটে ভোটের পাশাপাশি ইভিএমের ব্যবহার চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এর ব্যবহার নিয়ে ভাবছে নির্বাচন কমিশন। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আর বিষয়টি নিয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর মতামত নিয়েছে তারা।
মোট তিন দফায় ৩৯টি দলের সবগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের মত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে আওয়ামী লীগ ও সমমনারা সবাই ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। বিএনপি ও সমমনারা সংলাপ বর্জন করেছে। কোনো বলয়ে নেই, এমন দলগুলোর অনেকেই ইভিএম ব্যবহার না করতে বলেছে।
বিতর্ক কী নিয়ে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও সমমনারা এই যন্ত্রের বিরোধিতা করে আসছে শুরু থেকেই। তাদের দাবি, এই যন্ত্র দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
যদিও ইভিএম ব্যবহার হয়েছে, এমন ভোটে এসব অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি বিরোধীরা। বরং ইভিএমে ভোটার নিজে উপস্থিত না হলে ভোট দেয়া সম্ভব নয়। এখানে যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে সেটি হলো আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর অন্য কেউ গোপন বুথে গিয়ে বাটন চেপে দিয়েছে।
এভাবে গোপন বুথে থেকে অন্যের ভোট যারা দিয়ে দেয়, তাদের একজন নির্বাচন কমিশনার নাম দিয়েছেন ‘গোপন বুথে ডাকাত’। এই ডাকাত ঠেকাতে কেন্দ্রের ভেতর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও বসানো হয়েছে।
তবে কমিশনের এসব উদ্যোগেও ইভিএম নিয়ে অবস্থান পাল্টায়নি এর বিরোধীরা।
নির্বাচন কমিশনের সংলাপ কী নিয়ে
বর্তমান কমিশন ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ জুন প্রথমবার যে ভোটের পরীক্ষা দেয় তাতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং শতাধিক ইউনিয়নে ব্যবহার করা হয় ইভিএম। এর মধ্যে হাতিয়ার দুটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সব এলাকায় ভোট হয় শান্তিপূর্ণ। ইভিএম নিয়ে অন্য কোথাও কোনো কারচুপির অভিযোগ ওঠেনি, তবে আঙুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় শনাক্তে অনেক ভোটারকে গলদঘর্ম হতে হয়েছে। ভোটগ্রহণে ধীরগতিও দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকায়।
নির্বাচন কমিশনের সংলাপে দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসতে। তবে বেশির ভাগ দলই যন্ত্রটি যাচাইয়ে টেকনিক্যাল পার্সন বা প্রযুক্তিবিদ নিয়ে আসেনি।
প্রথম দফায় অংশ নেয়া ১০টি দলের কেউ টেকনিক্যাল পার্সন আনেনি। দ্বিতীয় দফায় উপস্থিত আটটি দলের মধ্যে চারটি রাজনৈতিক দল নিয়ে আসে বিশেষজ্ঞদের। তৃতীয় দফায় ১০টি দলের মধ্যে কেবল জাকের পার্টি টেকনিক্যাল পার্সন নিয়ে উপস্থিত হয়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৮টি দলের মধ্যে ৫টি প্রযুক্তিবিদ নিয়ে ইসির ডাকে সাড়া দেয়।
সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল তার সিদ্ধান্ত জানাননি। বলেছেন, সব দলের মতামত তারা লিপিবদ্ধ করেছেন। এরপর তারা নিজেদের সামর্থ্য পর্যালোচনা করবেন। তার পর হবে সিদ্ধান্ত।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আলমগীর নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের হাতে ১ লাখ ৫৪ হাজার যন্ত্র রয়েছে। এসব যন্ত্র দিয়ে ১০০ আসনের বেশি ভোট করা যাবে না।
ইভিএমের পক্ষে যারা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। তার জোটের শরিক জাসদসহ কয়েকটি দল ইভিএমের পক্ষে বললেও এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে যন্ত্রটি ব্যবহার করে জনমত গঠনের পরামর্শ দিয়েছে।
অন্য যে দলগুলো ইভিএমের পক্ষে বলেছে, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শরিক দলই বেশি। এগুলো হলো: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকল্প ধারা।
এর বাইরে জাকের পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশও ইভিএমের পক্ষে বলেছে। এরা আওয়ামী লীগের শরিক না হলেও দলটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলে।
বিএনপির জোট থেকে বের হয়ে আসা ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপিও ইভিএমের পক্ষে বলেছে।
ইভিএমবিরোধী যারা
যেসব দল ইভিএমের বিরোধিতা করেছে, তাদের মধ্যে কেবল একটি দলের জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে। সেটি হলো জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
অন্য দলগুলো হলো মুসলিম লীগ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক অন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ কংগ্রেস, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, ইসলামিক ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ফ্রন্ট, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
যেসব দলের ইসির সভা বর্জন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি তার জোটের শরিক দলগুলো এই সংলাপে আসেইনি।
দলগুলো হলো এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।
২০ দল থেকে বের হয়ে যাওয়া আন্দালিব রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিও সংলাপে অংশ নেয়নি।
গত নির্বাচনের আগে করা বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্ট থেকে বের হয়ে আসা আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ কমিশনের সংলাপ বর্জন করে।
বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখা চরমোনাইয়ের পিরের ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদও আলোচনায় আসেনি।
ইসির হাতে কত ইভিএম
বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বুথ থাকতে পারে আড়াই লাখের মতো। সব দলের অংশগ্রহণে এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩, কক্ষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭, ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন।
দশম সংসদ নির্বাচনে দেশে ভোট হয়েছে অর্ধেকের মতো আসনে। বাকিগুলোতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট হওয়ায় সেখানে কেন্দ্রসংখ্যা ছিল কম।
সব দলের অংশগ্রহণে গত সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। আর বুথ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি, ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এখন ভোটার ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। বছরে বাড়ে গড়ে ১৫ লাখের মতো। সেই হিসাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটার হতে পারে সাড়ে ১১ কোটির বেশি। ফলে ওই নির্বাচনে কেন্দ্র আর বুথের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।
প্রতিটি বুথে গড়ে ১.৫টি করে ইভিএম থাকে। অর্থাৎ প্রতি ১০টি ইভিএমের বিপরীতে পাঁচটি থাকে ব্যাকআপ হিসেবে। এই হিসেবে কমিশনের কাছে যে দেড় লাখ ইভিএম আছে, সেগুলো আসলে এক লাখ বুথে ব্যবহার করা যাবে। আগামী নির্বাচনে বুথ হতে পারে ২ লাখ ৪০ হাজার। সব বুথে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে কমিশনের হাতে থাকতে হতো ৩ লাখ ৬০ হাজার ইভিএম।
আরও পড়ুন:বিশ্বব্যাংককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবং বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে নিজস্ব অর্থে নির্মাণ করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ইতিহাসে স্থান করে নেয়া বাংলাদেশের অহংকারের এই সেতু নির্মাণে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বিশাল অঙ্কের এই অর্থ দেশের অভ্যন্তর বা ভেতর থেকে জোগান দেয়া হয়েছে। কোথা থেকে, কীভাবে এলো এই টাকা? কীভাবে খরচ হলো?
অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ১ শতাংশ সুদে সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগকে ঋণ দেয়া হয়েছে এই অর্থ। সেতু কর্তৃপক্ষ ১৪৭ কিস্তিতে সুদসহ এই অর্থ পরিশোধ করবে।’
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, ১৭ বছরে উঠে আসতে পারে পদ্মা সেতুর এই ব্যয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার যে ব্যয় হয়েছে, তা পাঁচটি প্যাকেজে হয়েছে। প্যাকেজ পাঁচটি হচ্ছে: সেতু নির্মাণ, নদীশাসন, জাজিরা অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, মাওয়া অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং দুই পাশের সার্ভিস এরিয়া। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হার সুদে সরকারকে (অর্থ মন্ত্রণালয়) ফেরত দিতে হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে বলা হয়েছে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে, কারণ মোংলা পোর্ট এত শক্তিশালী হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে, সেগুলো কিন্তু ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি।
‘সেতুর টোল থেকে যে আয় হবে, তা দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণ পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।’
পাঁচটি প্যাকেজে কোথায়, কী খরচ
পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার যে ব্যয় হয়েছে, তা পাঁচটি প্যাকেজে হয়েছে। প্যাকেজ পাঁচটি হচ্ছে: সেতু নির্মাণ, নদীশাসন, জাজিরা অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, মাওয়া অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং দুই পাশের সার্ভিস এরিয়া।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক শামীম–উজ–জামান বসুনিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। নদীশাসনের পেছনে খরচ ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, দুই দিকে সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আর ভ্যাট, ট্যাক্স, বিলসহ অন্যান্য খরচ ৩ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে।’
বিদেশি মুদ্রা সরবরাহ করেছে অগ্রণী ব্যাংক
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি কেনাকাটায় যে খরচ হয়েছে, তার সবই রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করেছে। একক ব্যাংক হিসেবে তারা এই প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিয়েছে।
এ জন্য গর্বিত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। মাথা উঁচু করে রাখার মতো বিষয়। জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। তারই যোগ্য উত্তরসূরি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতার ফলে এই সেতু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।’
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি কেনাকাটায় যে খরচ হয়েছে, তার সবই রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করেছে। একক ব্যাংক হিসেবে তারা এই প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিয়েছে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
‘বিশ্বব্যাংককে “না” করে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। সে অবস্থায় সেতুর ফরেন কারেন্সি (বিদেশি মুদ্রা) আসবে কোথা থেকে, সে বিষয়ে তখন আলোচনা চলছিল। অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমরা বলেছিলাম, আমরা সব ডলার সরবরাহ করব। পুরো প্রকল্পে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এখন পর্যন্ত আমরা ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছি। একক ব্যাংক হিসেবে শুরু থেকে আমরা সব ফরেন কারেন্সি সরবরাহ করেছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার গভর্নর ড. আতিউর রহমানের ভূমিকাকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফরেন কারেন্সি সরবরাহের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের নীতি সহায়তা দিয়েছে। আমরা যখন প্রস্তাবে রাজি হয়েছি, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। তবে অগ্রণী ব্যাংক একাই এই অর্থ নিশ্চিত করতে পারায় দেশের রিজার্ভে কোনো প্রভাব পড়েনি।’
২০১২ সালে অগ্রণী ব্যাংকে পদ্মা সেতুর জন্য এফসি (ফরেন অ্যাকাউন্ট) হিসাব খোলা হয়। ডলার সরবরাহ শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। এখন পর্যন্ত মোট ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে ব্যাংকটি। আরও অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার এই প্রকল্পে জোগান দিতে হবে। সেই বৈদেশিক মুদ্রাও রাষ্ট্রায়ত্ত এই বাণিজ্যিক ব্যাংক সরবরাহ করবে বলে জানান শামস-উল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, বিশেষ করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত দক্ষতার সঙ্গে আমাদের সহায়তা করেছেন। তার সঠিক নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।’
আরও পড়ুন:স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে স্থাপন হয়েছে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের মাধ্যমেই তৈরি হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন।
এ লক্ষ্যে সেতু থেকে দুই কিলোমিটার ভাটিতে ইতোমধ্যে আলাদা সাতটি পিলার নির্মাণ শেষ করেছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তবে এর জন্য সরকারের আলাদা কোনো অর্থ খরচ হয়নি।
মূল সেতুর জন্য বরাদ্দ ১২ হাজার কোটি টাকা থেকেই নদীর গভীরের এই পিলারগুলো তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ পিলারটি ৯ জুন সেতু বিভাগ হস্তান্তর করেছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
পদ্মা সেতুসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঠামো স্টিলের হওয়ায় সেখান দিয়ে ৪০০ কেভি হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন টানা সম্ভব নয়। তাই মূল সেতু থেকে দুই কিলোমিটার ভাটিতে আলাদা করে সাতটি পিলার নির্মাণ করে বিদ্যুতের তার টানা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের জন্য যে শক্তিশালী হ্যামার বাংলাদেশে আনা হয়েছিল, সেটি দিয়েই বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য এসব পিলার তৈরি করেছে সেতু বিভাগ।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই সাতটি পিলারের সবগুলোর কাজ শেষ করে ৯ জুন আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি। তিন-চার মাস আগে আমরা পাঁচটি পিলার বিদ্যুৎ বিভাগকে হস্তান্তর করেছিলাম। সেগুলোতে ইতোমধ্যে ইস্পাতের টাওয়ার নির্মাণ শেষ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।’
তিনি বলেন, ‘এই সাতটি পিলারের তিনটিতে চারটি করে আর চারটিতে ছয়টি করে মোট ৩৬টি খুঁটি নদীর তলদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে। একটি পিলার থেকে আরেকটির দূরত্ব ৮৩০ মিটার। এসব পিলারে বসানো টাওয়ারের মাধ্যমে পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার যাবে দক্ষিণবঙ্গের দিকে।’
দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের জন্য জার্মানি থেকে যে হ্যামার আনা হয়েছিল, সেটি দিয়েই এই সাতটি পিলারের ৩৬টি পাইলিংয়ের কাজ করা হয়েছে। পিলারের প্ল্যাটফর্ম থেকে টাওয়ারগুলোর উচ্চতা ১২৬ মিটার। আর নদীর তলদেশে পাইলিং করা হয়েছে অন্তত ১১০ মিটার।’
এর লাইনের মাধ্যমে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য