আল জাজিরায় কাজ করা ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর জেনিন থেকে রিপোর্ট করার সময় ১১ মে সকালে মাথায় গুলির আঘাতে নিহত হন। তিনি সে সময় ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) একটি অভিযান কভার করছিলেন। ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার মাঝে এটি ছিল জেনিনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পরিচালিত কয়েকটি অভিযানের অন্যতম। আইডিএফের কয়েকটি অভিযানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
সাংবাদিক শিরিন হত্যার পরের ঘটনার ভিডিও দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিশৃঙ্খল মুহূর্তগুলো দেখা যায় ভিডিওতে। দেখা গেছে, অন্যরা তার মরদেহের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
ভিডিও থেকে প্রমাণিত, শিরিনের মাথায় গুলি লেগেছিল।
ভিডিওতে যেমনটা দেখা গেছে, সে সময় শিরিন আরেকজন সাংবাদিকের সঙ্গে ছিলেন। তার পরনে পরিষ্কার অক্ষরে ‘প্রেস’ লেখা নীল রঙের ভেস্ট ও মাথায় হেলমেট ছিল।
শিরিন নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট দাবি করেন, ‘সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে তার মারা যাওয়ার ‘সম্ভাবনা আছে’। তবে পরে এক সংবাদ সম্মলনে ইসরায়েলের ডিফেন্স মিনিস্টার বেনি গান্টজ বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে, আবার দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পক্ষের গুলিতেও তার মৃত্যু হতে পারে। আমরা বিষয়টির তদন্ত করছি।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও আল জাজিরা এ ঘটনায় সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়, শিরিন কাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন সেটা ‘পরিষ্কার’ নয়।
ভিডিও, অডিও বিশ্লেষণ করে পুরো বিষয়টিকে দেখার চেষ্টা করেছে নেদারল্যান্ডসের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাইট বেলিংক্যাট। তাদের প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
শিরিন হত্যার সময় তার সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের দাবি, আইডিএফ সৈন্যরা কোনো সতর্ক বার্তা ছাড়াই তাদের ওপর গুলি চালায়। সাংবাদিকদের বিশ্বাস, তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা হয়েছে।
এ হত্যায় আইডিএফ নিজেদের সৈনিকের দায় স্বীকার করে নিলেও, ১৩ মে তারা যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে শিরিনের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
উন্মুক্ত সোর্সের ছবি ও ভিডিওতে দেখে কার গুলিতে শিরিন নিহত হয়েছেন পূর্ণাঙ্গভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে এগুলো থেকে বোঝা সম্ভব, ঘটনা কী ঘটেছিল এবং সেগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিবৃতির তুলনা করা যেতে পারে।
আইডিএফের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের সৈন্য ও শিরিনের মাঝখানে অন্য যোদ্ধা থাকতে পারে। এতে আরও বলা হয়, একজন ইসরায়েলি সৈন্যের বুলেট অসাবধানতাবশত তাকে আঘাত করে। তবে আইডিএফ ও সাংবাদিকদের মাঝে ওই রাস্তায় অন্য কোনো সশস্ত্র ব্যক্তির অস্তিত্ব ভিডিও ফুটেজে নেই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সমস্ত প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকরা সরু ওই রাস্তায় এমন কোনো যোদ্ধাকে দেখেননি বা দেখলেও সেটা বলেননি। তাদের বক্তব্য তাই ইসরায়েলি সৈন্যদের থেকে আলাদা।
আইডিএফের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বন্দুকধারীরা আইডিএফ বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ওইভাবে শিরিন আঘাত পেতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বন্দুকধারীরা একটি গলিপথ থেকে আইডিএফ সৈন্যদের দিকে দ্রুত গুলি ছুড়ছে।
শিরিনের মৃত্যুর পর মুহূর্তে যখন এক ব্যক্তি তার মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, সে সময় যে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে তা উদ্দেশ্যহীন নয়, বরং তা ধীরগতির ও ইচ্ছাকৃত। এ থেকে বোঝা যায়, একঝাঁক গুলি না করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে গুলি করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওগুলোতে চিত্রিত বন্দুকধারীদের অবস্থান আইডিএফ সৈন্যদের তুলনায় শিরিনের কাছ থেকে অনেক দূরে। অথবা তারা অবস্থান শিরিনকে দেখার বা লক্ষ্য করার মতো অবস্থানে নেই।
অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ইমেজ ও ভিডিও আর সেই সঙ্গে বেলিংক্যাটের করা একটি অডিও বিশ্লেষণও সাক্ষীর সাক্ষ্যের দিকগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়।
শিরিনের মৃত্যুর প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আইডিএফ বাহিনী এমন একটি অবস্থানে পৌঁছেছে, যা ১৯০ থেকে ২৫০ মিটার দক্ষিণে প্রসারিত। ওই অবস্থান থেকে শিরিনকে গুলি করা হয়েছিল। এটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ টুইটারে পোস্ট করা অন্য একটি ভিডিওর অডিও বিশ্লেষণ থেকে অনুমান করা যায়, শিরিনের মৃত্যুর পর তার সহকর্মীদের দিকে ১৭৭ থেকে ১৮৪ মিটার দূর থেকে গুলি করা হয়েছিল। একই ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে, বন্দুকের গুলিগুলো দক্ষিণে শুরু হয়েছে যখন পূর্বোক্ত ব্যক্তি শিরিনের দেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
শিরিনকে যে স্থানে গুলি করা হয়েছিল তার দক্ষিণে আইডিএফ সৈন্যদের আবির্ভাবের সঠিক সময় ফেসবুক ভিডিওটি থেকে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ও ক্যামেরা অপারেটরদের ধারণ করা ফুটেজ থেকে মেটাডেটা বা আইডিএফের ভিডিও এ বিষয়ে আরও স্পষ্টতা তৈরি করতে পারে। এটি শিরিনের মৃত্যুর সময় সৈন্যদের অবস্থানের সম্ভাবনাকে আরও নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হবে।
ঘটনাস্থল
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিরিনের সহকর্মীরা একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যাতে জেনিনে গুলি চালানোর পরের ঘটনাগুলো দেখা যায়।
শহরের পশ্চিমে বালাত আল শুহাদা রাস্তায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নিচের স্ক্রিনশটটি শিরিনের শুটিংয়ের পর নেয়া একটি ভিডিও থেকে নেয়া হয়েছে। এটি টুইটারে আল জাজিরার একজন প্রযোজক শেয়ার করেন। এটি ড্যাশবোর্ড ও ছাদে অবস্থিত ক্যামেরা থেকে রাস্তার চিত্র সংগ্রহ করা ক্রাউড সোর্সিং সাইট ম্যাপিলারির এক ব্যবহারকারীর ২০২০ সালের ওই স্থানের তোলা একটি ছবির সঙ্গে মিলে যায়।
হত্যার সময়
একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, শিরিন পড়ে আছেন। সেগুলোর ছায়ার দৈর্ঘ্য বিশ্লেষণ করে বের করা সম্ভব এ হত্যাকাণ্ড কখন ঘটেছে।
বেলিংক্যাট গোলাগুলির প্রথম যে ভিডিওটি পেয়েছে সেটি টেলিগ্রামে শেয়ার করা হয় স্থানীয় সময় সকাল ৬.৩৬ মিনিটে। শিরিনের সঙ্গে থাকা আরেক সাংবাদিক আলি আল-সামুদি, যিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হন, তিনি ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পুরো সময় লাইভ স্ট্রিম করেন। তার লাইভ স্ট্রিম শুরু হয় সকাল ৬.৩৩ মিনিটে।
এই ভিডিওতে ছায়ার দৈর্ঘ্য বিশ্লেষণ করে ভিডিওটি কখন ধারণ করা হয়েছে সেই সময় নির্ণয় করা সম্ভব। ওপরে উল্লেখিত ভিডিও যেটি আল জাজিরার প্রযোজক শেয়ার করেছেন সেখানে ক্যামেরা বালাত আল শুহাদা সড়ক বরাবর পশ্চিম দিকে মুখ করা। এরপর ক্যামেরা ঘোরানো হয় দক্ষিণ দিকে যেখানে আবু আকলেহর মরদেহ পড়ে ছিল। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মানুষজন ও রোড সাইনের ছায়া পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিম দিকে পড়েছে।
জেনিনে সকালের সংঘর্ষ
ওইদিন সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয় সকাল ৬টা নাগাদ। টেলিগ্রামে ৫.৫৯ মিনিটে শেয়ার করা একটি ভিডিও শিরিন মারা যাওয়ার স্থানের প্রায় ১২০ মিটার পূর্বদিকে রেকর্ড করা হয়। সেখানে গুলির শব্দ শোনা যায় এবং দূরের বিল্ডিংয়ের ওপর সাদা ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
শিরিনের মৃত্যুর পর, কয়েকজন ইসরায়েলি ভাষ্যকার জেনিনে অদেখা লক্ষ্যবস্তুতে সশস্ত্র লোকজন গুলি চালাচ্ছেন এমন বেশ কয়েকটি ভিডিওর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অন্য একটি ভিডিওতে (‘ভিডিও টু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) দেখা যায়, একটি গলিপথে একজন লোক রাইফেল দিয়ে গুলি করছেন৷ ইসরায়েলি মিডিয়া রিপোর্ট ও আইডিএফ জানিয়েছে, অভিযানের সকালে এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়। যিনি গুলি করার অংশটি ভিডিও করেছেন তিনি অন্য সশস্ত্র ব্যক্তিদের দলের অংশ। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী শুরুতে বলেন, এই ভিডিওতে যে গুলি চালানো হয়েছে তাতেই শিরিন নিহত হয়েছেন। তবে, ফুটেজ বিশ্লেষণে এ ধরনের দাবি সঠিক বলে মনে হয়নি।
ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বিটিসেলেম, ভিডিও টু ধারণের জায়গায় গিয়েছিল। তারা একটি ভিডিও করে যেখানে ওই জায়গাটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ওই ভিডিওর মাধ্যমে বেলিংক্যাট ভিডিও টুর জিওলোকেশন নিশ্চিত হয়েছে। শিরিন যেখানে নিহত হন সেখান থেকে ওই লোকেশন ২৭০ মিটার দূরে।
বিটিসেলেমের ভিডিওতে আরও দেখা যায়, সশস্ত্র লোকটি যে গলিতে গুলি চালাচ্ছিল সেটির শেষে একটি প্রাচীর রয়েছে। শিরিন যেখানে নিহত হয়েছেন সেটি এ জায়গা নয়। অর্থাৎ, ভিডিও টু-তে গুলি করতে থাকা ব্যক্তিটির গুলি চালিয়ে শিরিনকে হত্যা করা সম্ভব নয়। যদিও সোশ্যাল মিডিয়াতে এর উল্টোটা চাউর হয়েছে।
১১ মে সকালে জেনিনে অভিযানের সময় রেকর্ড করা ভিডিও টুর সমর্থনে বেশ কিছু তথ্য আছে। প্রথমত, বেলিংক্যাট প্রথমে ভিডিও পায় ১১ মে সকাল ৬টা ৪১ মিনিটে টেলিগ্রামে। এই ভিডিওর ফ্রেমের একাধিক রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানের পর তা থেকে ওই সময়ের আগে কোনো ফল পাওয়া যায়নি৷
দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলি রাজনীতিক ও মিডিয়ার দাবিতে যে ভিডিওটি রেকর্ড করা হয় সেখানে বিটিসেলেমের টিম গিয়েছিল। ওই ভিডিওর বন্দুকধারী শিরিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে এমনটা দাবি ছিল ইসরায়েলের। সবশেষে, আইডিএফের বডি ক্যামের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সৈন্যরা একটি সমান্তরাল গলিপথে নেমে যাচ্ছে, যেখানে ভিডিও টুর বন্দুকধারী তার অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ছিল।
‘সকালে জেনিনে আইডিএফ সৈন্যদের সকালের কার্যক্রম’ শীর্ষক আইডিএফ প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সৈন্যরা বিটিসেলেমের ভিডিওতে যে গলি দেখা গেছে সে রকম একটা গলিপথ দিয়ে যাচ্ছে। এই দুই ভিডিওর তুলনা করলে দেখা যায়, ভিডিও টুর সশস্ত্র ব্যক্তিরা ও আইডিএফ সৈন্যরা সমান্তরাল গলিপথে অবস্থান করছিল। শিরিন যখন নিহত হন তখন ওই দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি চলছিল।
আইডিএফের বডিক্যাম ভিডিওর শেষে দেখা গেছে সৈন্যরা একটি রাস্তায় দৌড়ে বেরিয়ে আসে। সেখানে তখন পাঁচটি সাঁজোয়া যান অপেক্ষা করছিল। আইডিএফের এই অবস্থানটি ছিল, যেখানে শিরিনকে গুলি করে হত্যা করা হয় সেখান থেকে একই রাস্তার দক্ষিণে। কনভয়ের সামনের গাড়িটি শিরিনকে গুলি করার স্থান থেকে প্রায় ১৯০ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। আর পেছনের গাড়ির দূরত্ব ছিল ২৫০ মিটার।
ফেসবুকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আপলোড করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একই আইডিএফ গাড়ির কনভয় যাচ্ছে ও একই স্থানে এসে থামছে, যে স্থানটি আইডিএফের বডি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে। আপলোডের সময়টি আইডিএফ সৈন্যরা কখন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে তার একটি উচ্চসীমা বেঁধে দেয়। অন্য কথায়, ভিডিওটি অবশ্যই ৬টা ৪০ মিনিটের আগে রেকর্ড হয়েছে। কারণ ওই সময় সেটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়।
ভিডিওটি বাড়ির ভেতর থেকে রেকর্ড করা হয়েছে বলে যে ব্যক্তি এটি রেকর্ড করেছেন তার নিরাপত্তার স্বার্থে বেলিংক্যাট এটির সঙ্গে কোনো লিঙ্ক রাখেনি।
বডিক্যাম ভিডিওর শেষে আইডিএফের অবস্থান একজন ক্যামেরা ক্রু প্রায় ১০০ মিটার উত্তরে ছয়টি ভিডিওর একটি সিরিজে রেকর্ড করেন। তার অবস্থান ছিল আইডিএফের অবস্থান এবং শিরিনকে গুলি করা স্থানের মধ্যে। এই ভিডিওগুলো টেলিগ্রামে পোস্ট করা হয়।
আইডিএফ বডি ক্যামেরার ফুটেজ ও টেলিগ্রাম ভিডিওগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, শিরিনকে যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় সে জায়গার প্রায় ২০০ মিটার নিচে রাস্তার একটি অংশ আইডিএফের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভিডিও থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, তার পাশের রাস্তাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণের জন্য সংঘর্ষ হচ্ছিল। এমন কোনো ফুটেজ বা ছবি পাওয়া যায়নি, যা থেকে বোঝা সম্ভব আইডিএফ সৈন্য ও শিরিনের মধ্যে কোনো ফিলিস্তিনি যোদ্ধা অবস্থান করছিল।
তবে আরেকটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওতে (‘ভিডিও থ্রি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) কাছাকাছি রাস্তার কোণে একদল ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে৷ তাদের গোলাগুলি করতে দেখা যাচ্ছে। আইডিএফ সাঁজোয়া কনভয়ের দক্ষিণে আনুমানিক এক ব্লক দূরত্বে ভিডিওটির নেয়া হয়েছে (ম্যাপিলারিতে যা দেখা যাচ্ছে)।
ভিডিওতে স্বল্প বিরতি দিয়ে পরপর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ভিডিও টু, ভিডিও থ্রি ও আইডিএফ বডি ক্যাম ভিডিও একসঙ্গে বিবেচনায় নিলে জেনিনে ওইদিন সকালে ভিডিওতে ধারণ করা দুটি পক্ষের অবস্থানের একটি আনুমানিক চিত্র পাওয়া যায়।
ভিডিও থ্রি ঠিক কোন সময়ে ধারণ করা হয়েছে সেটা বের করা সম্ভব হয়নি।
তবে লক্ষণীয় বিষয়, যে ভিডিওটি আল জাজিরার এক সাংবাদিক পোস্ট করেছেন যেখানে শিরিনের সহকর্মীকে গোলাগুলির মুখে পড়তে দেখা যাচ্ছে; সেখানে শটগুলো লক্ষ্য করে ও ইচ্ছাকৃতভাবে করা হচ্ছে বলে মনে হয়। উদ্দেশ্যহীন ও একাধারে গুলি ছোড়া হয়নি। গুলি ছোড়ার এই প্যাটার্নটি ক্রসফায়ারের নয়, বরং সাংবাদিকদের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করে করার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। ভিডিও থ্রির ব্যক্তিদের অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে আইডিএফ কনভয়ের দক্ষিণে ও শিরিনের অবস্থান থেকে বেশ খানিকটা দূরে।
এ ছাড়া বেলিংক্যাটের করা একটি অডিও বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, শিরিনের মৃত্যুর পরপর তার অবস্থানের দিকে গুলি চালানো হয়েছিল ভিডিও থ্রি-তে সশস্ত্র লোকদের অবস্থানের কাছ থেকে।
বুলেটের গতি ও শব্দ
যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক রবার্ট সি. মারের সঙ্গে কথা বলেছে বেলিংক্যাট। মার অডিও ফরেনসিক বিশ্লেষণ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও আইডিএফ ও অন্য অস্ত্রধারীদের অস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে শুটার ও শিরিনের কাছে থাকা ক্যামেরাধারীর দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য তাকে অনুরোধ করে বেলিংক্যাট। ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যায়, শিরিন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও দক্ষিণ দিক থেকে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ হতে থাকে।
বেলিংক্যাটকে করা ই-মেইলে মার লেখেন, ‘ভিডিওতে থাকা অডিও শুনে যা বোঝা যাচ্ছে তা হলো, ১ মিনিট ৫৬.২৫ সেকেন্ড ও ২ মিনিট ১৯.৫৩৮ সেকেন্ডে দুইবার গুলির শব্দ পাওয়া যায়। দুটি শব্দের ক্ষেত্রেই শুরুতে একটি শক্তিশালী ক্র্যাক সাউন্ড ও ৩০০ মিলিসেকেন্ড (.৩ সেকেন্ড) পর একটা দুর্বল শব্দ পাওয়া যায়।
‘আমার মতে, শুরুর শব্দটা কোনো সুপারসনিক বুলেটের শক ওয়েভ ক্যামেরার মাইক অতিক্রম করার সময়ের শব্দ। পরের শব্দটা বন্দুকের নলের বিস্ফোরণের।’
ঘটনার সময় আইডিএফ বা ফিলিস্তিনিদের ব্যবহৃত অধিকাংশ অস্ত্রগুলোকে উপরোক্ত ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে। সেগুলো এম ফোর বা সিআর ফিফটিন সিরিজের ৫.৫৬ মিলিমিটার রাইফেল। যেগুলো ব্যারেলের দৈর্ঘ্য ছিল ২৯২ থেকে ৩৬৮ মিমি। ২০১০ সালে সুইডেনের ন্যাটো ওয়েপনস অ্যান্ড সেনসরস ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি প্রেজেন্টেশনে ৫.৫৬ মিমি গুলির ক্ষেত্রে নলের গতি ও ব্যারেলের দৈর্ঘ্যের একটি তুলনা প্রকাশ করে।
সেখানে বলা হয়, ন্যাটোর ব্যবহৃত গুলি এসএস ওয়ানওনাইন ৫.৫৬ মিমি ব্যবহার করলে বুলেটের গতি দাঁড়াবে প্রতি সেকেন্ডে ৮২০ থেকে ৮৬৬ মিটার। এ থেকে বোঝা যায়, ওপরের ভিডিওতে ক্যামেরা থেকে রাইফেল ১৭৭ থেকে ১৮৪ মিটার দূরত্বে ছিল।
মার এই হিসেবের সঙ্গে সাবধানতা ও সতর্কতার একটি নোট যোগ করেন। তিনি লেখেন, ‘দূরত্বের অনুমান বাতাসের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে, যেহেতু এটি শব্দের গতিকে প্রভাবিত করে।’
বুলেটের ক্যালিবার বিশ্লেষণ করা প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে শিরিনকে যে বুলেটটি হত্যা করে সেটি ছিল ৫.৫৬ মিমি।
মার উল্লেখ করেছেন, বুলেটের অনুমিত গতিতে সামান্য পার্থক্যের ফলে গণনায় পরিবর্তন হতে পারে। তিনি যোগ করেন, ‘সম্ভবত বড় প্রশ্ন হল বুলেটের গতি সম্পর্কে আমার অনুমান। যদি বুলেটটি ধীর সুপারসনিক গতিতে ছোটে তবে দূরত্বের অনুমান দীর্ঘ হবে। আর যদি বুলেটটি দ্রুত সুপারসনিক গতিতে ছোটে, তবে দূরত্বের অনুমান কম হবে।’
দৃষ্টিরেখা
ওই অঞ্চলের ছবি থেকে আরও কিছু ক্লু পাওয়া যায়। যা থেকে ধারণা করা সম্ভব শিরিন ও অন্য সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ওই শুটার কোথায় অবস্থান করছিল।
জেনিন ক্যাম্প টেলিগ্রাম চ্যানেলে শেয়ার করা একটি ছবি তোলা হয়েছে যেখানে শিরিন নিহত হয়েছেন। এটি অনেকগুলো ছবির একটি, যেখানে ফিলিস্তিনিরা তার মৃত্যুর স্থানে ফুল দিচ্ছেন। ক্যামেরাটি সরাসরি দক্ষিণ দিকে মুখ করা, যা আইডিএফ কনভয় এবং সশস্ত্র লোকদের অবস্থান থেকে দৃষ্টি রেখা কী হতে পারে সেটার একটা আনুমানিক ধারনা দেয়।
আইডিএফের কনভয় ও ভিডিও টু এবং ভিডিও থ্রিতে সশস্ত্র লোকদের অবস্থান থেকে উত্তরে দৃষ্টিসীমা/রেখা একটি কবরস্থানের প্রাচীর দ্বারা আংশিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। কবরস্থান ও এর প্রাচীরের কারণে রাস্তাটি একক একটি সরু লেনের রাস্তায় পরিণত হয়।
এই প্রাচীরটি স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবির পাশাপাশি ওইদিনের ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যমান।
কবরস্থানের প্রাচীরই শুধু রাস্তার উত্তরে দেখার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। সারা সকাল জুড়ে, রাস্তার পশ্চিম দিকে গাড়ি পার্ক করা ছিল, যা আইডিএফ কনভয়ের রাস্তার স্তরের অবস্থান থেকে উত্তরে গুলি করা ও ভিডিও টু এবং ভিডিও থ্রিতে সশস্ত্র লোকদের গুলি করাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
টেলিগ্রামে শেয়ার করা আরেকটি ছবিতে কবরস্থানের প্রাচীর ও হলুদ গাড়ির কারণে দৃষ্টিসীমার বাধা স্পষ্ট। ছবিটি রাস্তার দক্ষিণ দিকে একটি পাহাড় থেকে তোলা হয়েছে। যেখান থেকে শিরিন নিহত হওয়ার অবস্থান উত্তরে।
ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আইডিএফ অবস্থান থেকে আবু আকলেহকে যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় সেখানে দৃষ্টিসীমা সংকীর্ণ।
এটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তি যিনি শিরিনকে সাহায্য করতে গেছেন, তার আচরণ থেকে বোঝা যায়, তাদের দিকে তখনও দক্ষিণ থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। যেমনটা ভিডিওতে দেখা গেছে। ভিডিওর ১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড ও ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডে শিরিনকে তোলার চেষ্টার সময় ওই ব্যক্তি রাস্তার কেন্দ্রের দিকে পূর্ব দিকে সরে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন। উভয় সময় আমরা একটি করে গুলির শব্দ শুনতে পাই, যা লোকটির যথেষ্ট কাছাকাছি। যার ফলে তিনি রাস্তার পশ্চিম দিকের একটি দেয়ালের সঙ্গে নিজেকে চেপে আড়াল হতে বাধ্য করে। ওপরের ছবিতে দেখা হলুদ গাড়ি ও নিচের ছবিতে গাছটি দেয়ালের কাছাকাছি দাঁড়ালে তার আড়াল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আইডিএফ অবস্থানের সামান্য পশ্চিমে একটি উঁচু ভবন থাকায় শুটার একটি উঁচু অবস্থান থেকে গুলি চালাতে পারে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। এটি শিরিন ও তার সহকর্মীরা গাছের আড়াল থেকে ও প্রাচীর থেকে দূরে সরে গেলে তা দেখার একটি অবস্থান তৈরি করে।
ওপেন সোর্সের সারসংক্ষেপ
বর্তমানে ওপেন সোর্স ভিডিওগুলো থেকে শিরিনকে হত্যা করার নির্দিষ্ট মুহূর্ত বা তাকে গুলি করার বিশদ বিবরণ পাওয়া সম্ভব নয়। তবে, একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য আইডিএফ সৈন্যদের দিকে ইঙ্গিত করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ভিডিওগুলো তাদের দাবিকে নাকচ করার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি তাদের সমর্থন করে বলে মনে হয়।
ওপেন সোর্স ভিডিওতে দেখা যায়, আইডিএফ সৈন্যরা ও সশস্ত্র গোষ্ঠী রাস্তায় লড়াই করার সময় শিরিন রাস্তায় পড়ে ছিলেন। সে সময় আইডিএফের একটি স্পষ্ট গতিপথ ছিল ও যেখানে তাকে গুলি করা হয় তারা সেটার কাছে অবস্থান করছিল। এটি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জন্য আরও বাধাগ্রস্ত ও দূরবর্তী অবস্থান।
বডিক্যাম ফুটেজে দেখা আইডিএফ সাঁজোয়া যানবাহনের নেতৃস্থানীয় যানটি শিরিনকে গুলি করার স্থান থেকে প্রায় ১৯০ মিটার দূরে অবস্থান করছিল। ভিডিও থ্রিতে রাস্তায় গুলি চালাতে দেখা গেছে যে সশস্ত্র দলটিকে তারা ছিল প্রায় ৩০০ মিটার দূরে।
শিরিন হত্যার পর ধারণ করা একটি ভিডিওর প্রাথমিক ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বন্দুকের গোলাগুলি প্রায় ১৭৭ থেকে ১৮৪ মিটার দূরে শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে যে অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা হয়েছে তা ওই এলাকায় আইডিএফ ও সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ব্যবহৃত অস্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই অনুমান আইডিএফের অবস্থান এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবস্থানের চেয়ে সাংবাদিক হত্যার স্থানের মধ্যে আনুমানিক দূরত্বের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
৫১ বছর বয়সী শিরিন আবু আকলেহকে ১৩ মে পূর্ব জেরুজালেমের মাউন্ট জায়ন প্রোটেস্ট্যান্ট কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬২ জন। এর মধ্যে গতকাল রোববার ভোর থেকে চালানো হামলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে ফের হামলা শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ শিশু নিহত হচ্ছে।
গাজার ১০ লাখেরও বেশি শিশু এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পাচ্ছে না বলেও সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। গাজায় আগ্রাসনের সময় চলতি বছরের ২৩ মার্চ ১৫ জন জরুরি চিকিৎসা কর্মীকে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাতে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল আইডিএফ।
হত্যার শিকার রেফাত রাদওয়ানের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি প্রকাশের পর বিষয়টি সামনে আসে। ত্রাণবাহী একটি দল নিহত চিকিৎসা কর্মীদের মরদেহগুলো খুঁজে পায়। এ সময় তারা রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও উদ্ধার করেছিল।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসাকর্মী ও ত্রাণকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে, যা নতুন প্রকাশিত একটি ভিডিওতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এটি আন্তর্জাতিক আইনে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
গাজায় ১৫ জন চিকিৎসা ও ত্রাণকর্মীর হত্যাকাণ্ডকে ‘নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধাপরাধ’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক সাবেক প্রধান এবং মেডিয়েশন গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মার্টিন গ্রিফিথস। ওই ঘটনায় আটজন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ছয়জন দমকল কর্মী ও একজন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হন। রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এ সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে বেশির ভাগ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়টির দেওয়া হিসাবে বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধার আলাদা হিসাব দেওয়া হয়নি। তথ্যমতে নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করলেও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
চলমান এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করেছে। বেশির ভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার মাত্রা এত বেশি যে, ভূখণ্ডটির জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
রাফাকে গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইসরায়েল
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি নতুন সামরিক করিডোর স্থাপনের কাজ শুরু করেছে ইসরায়েল। তারা এর নাম দিয়েছে ‘মোরাগ করিডোর’। ২০০৫ সালে উচ্ছেদ করা একটি অবৈধ ইসরায়েলি বসতির নামানুসারে করিডোরটির নামকরণ করা হয়েছে। এই করিডোর রাফাহ শহরকে গাজার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি জানিয়েছেন, রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি সেনারা যে কাউকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। তিনি ওই এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
খোদারি বলেন, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের জন্য একমাত্র খোলা পথ হলো উপকূলীয় রাস্তার আল-রাশিদ করিডোর। এর মানে হলো, আরও বেশি ফিলিস্তিনিকে খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং ইসরায়েল আরও বেশি ভূমি দখলের চেষ্টা করছে।
রাফা শহর কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যকার প্রধান বাণিজ্য পথ ‘কারেম আবু সালেম’ ক্রসিংয়ের প্রধান পথ এই শহরটির ভেতর দিয়েই গেছে। পাশাপাশি এটি রাফাহ সীমান্ত দিয়ে বাইরের জগতের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের অন্যতম প্রধান সংযোগস্থলও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই করিডোর নির্মাণ গাজার ভূখণ্ড ভাগ করে ফেলার একটি পরিকল্পিত কৌশল, যা মানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
১৫ স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে হত্যা
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গত ২৩ মার্চ দক্ষিণ গাজায় জরুরি বিভাগের ওই কর্মীদের হত্যা করা হয়। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে তাদের সৈন্যরা ভুল করে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
রাফার কাছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি অগ্নিনির্বাপক ট্রাকে গুলি চালানো হয়।
ইসরায়েল প্রথমে দাবি করেছিল, হেডলাইট বা কোনো ধরনের আলো ছাড়াই অন্ধকারে ‘সন্দেহজনকভাবে’ গাড়ি বহর এগিয়ে আসার কারণে সৈন্যরা গুলি চালিয়েছিল। যানবাহনের চলাচলের আগে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি বা তাদের সম্মতি নেওয়া হয়নি।
কিন্তু নিহত হওয়া প্যারামেডিকদের একজনের মোবাইলের ফুটেজ খুঁজে দেখা গেছে যে, আহতদের সহায়তা দেওয়ার সময় যানবাহনগুলোতে আলো জ্বলছিল। অর্থাৎ ইসরায়েলি বাহিনীর ওই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী জোর দিয়ে বলছে, কমপক্ষে ছয়জন চিকিৎসক হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তারা এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। তারা এটাও স্বীকার করেছে যে, সৈন্যরা যখন গুলি চালায় তখন জরুরি বিভাগের ওই কর্মীরা নিরস্ত্র ছিল।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
এ হামলায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার এক নেতাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
হাসপাতালটিতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও গার্ডিয়ান এমন তথ্য দিয়েছে।
খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালের অস্ত্রোপচার ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এমন এক সময়ে হামলা চালানো হয়েছে, যখন হতাহতে পরিপূর্ণ ছিল ভবনটি।
হামলার ঘটনাটি নিশ্চিত করে ইসরায়েল বলছে, একজন হামাস সদস্য সেখান থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন বলে তারা এ অভিযান চালিয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের খবর বলছে, হামলায় হামাসের রাজনৈতিক নেতা ও চিকিৎসকসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হন।
গেল মঙ্গলবার থেকে নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৭ মাসের যুদ্ধে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনটিতে চার শতাধিক মানুষ নিহত হন।
এ সময়ে বেশ কয়েকজন হামাস নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে।
গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে এ কয়েক দিনে নিহত হন ৬০০ জনের বেশি মানুষ, যার মধ্যে দুই শতাধিক শিশু রয়েছে।
১৫ মাস যুদ্ধের পর গাজা উপত্যকায় কিছুটা শান্তির দেখা মিলেছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছুড়ে ফেলে দিয়ে ফের সর্বাত্মক হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
এর আগে শনিবার খান ইউনিসে ইসরায়েলের আরেক হামলায় হামাসের আরেক নেতা সালাহ বারদাইল নিহত হন।
ইসমাইল ও সালাহ দুজনই হামাসের ১৯ সদস্যের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ইউনিটের সদস্য। ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ ইউনিটের আরও ১১ সদস্য নিহত হন।
উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় রবিবার সকাল থেকেই বিস্ফোরণের শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এসব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
দক্ষিণ ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ঢুকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের হামলাকে কেন্দ্র করে গাজায় ১৮ মাসব্যাপী এ যুদ্ধের সূচনা হয়। এ বছরের ১৯ জানুয়ারিতে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। তারপরও এ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।
আরও পড়ুন:পরিবার নিয়ে ভোর রাতে সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল গাজার বাসিন্দারা, তখনই মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণে কেঁপে ওঠে উপত্যকা। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) হামলা থেকে আবাসিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শরণার্থী শিবির—কিছুই রেহাই পায়নি।
অন্তত চার শতাধিক ফিলিস্তিনি মঙ্গলবারের এই বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছে আরও অনেকে। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের।
ইউনিসেফের মুখপাত্র রোসালিয়া বোলেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় ১০ লাখের বেশি (ফিলিস্তিনি)শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। তাদের যুদ্ধের ধকল সহ্য করতে হচ্ছে। শিশুদের জীবন এভাবে হুমকিতে পড়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
গাজা সিটির কেন্দ্রস্থলে আত-তলিবিন নামের একটি স্কুলে বাস্তুহারা নারী ও শিশুরা আশ্রয় নিয়েছিল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় মাটিতে মিশে গেছে স্কুলটি। এ সময় ঘটনাস্থলেই নারী-শিশুসহ অন্তত ২৫ জন প্রাণ হারান বলে মিডল ইস্ট আইয়ের খবর থেকে জানা গেছে।
গাজায় ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করায় দুমাসের অস্ত্রবিরতি চুক্তি ভেঙে গেছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খবর বলছে, হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্ত করতে আরও বলপ্রয়োগের হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালিয়ে ২৫০ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে হামাস, তাদের মধ্যে ৫৯ জন এখনও সশস্ত্র গোষ্ঠীটির কাছে রয়েছে। হামাস অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করার পর এই ঘটনা ঘটল।
এই হামলার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে হামাস। এর মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি চুক্তির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের।
এদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই হামলাকে ‘নিবৃত্তিমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছে আইডিএফ।
হামাসের ‘মাঝারি সারির’ সামরিক কমান্ডার, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও বিভিন্ন অবকাঠামো হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।
পুরোনো শত্রু হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার শপথ নিয়েছেন নেতানিয়াহু। স্থল হামলার পাশাপাশি আকাশ থেকে অবিরত বোমা ফেলা হচ্ছে।
গাজা সিটি ছাড়াও উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণে অবস্থিত বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ি ও শরণার্থী শিবিরেও নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজা সিটির বাসিন্দা রাবিহা জামাল (৬৫) বলেন, ‘এটা যেন রাতের গভীরতা ভেদ করে নরকের আগুন জ্বলে উঠেছে। যুদ্ধের প্রথম দিনের মতোই হামলা করা হয়েছে।’
পাঁচ সন্তানের মা এই নারী বলেন, ‘সেহরি খাওয়ার জন্য আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন বিস্ফোরণ শুরু হয় এবং ভবনগুলো কেঁপে উঠতে শুরু করে। ভেবেছিলাম যুদ্ধ শেষ, কিন্তু তা আবার ফিরে এলো!’
নতুন দফায় এই হামলায় নিহতদের মধ্যে হামাসের রাজনৈতিক শাখার দীর্ঘদিনের সদস্য ইসাম আল-দালিসও রয়েছেন। গাজার সরকারের প্রশাসনিক কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। এছাড়া উপ-বিচারমন্ত্রী আহমেদ আল-হাত্তা, উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আবু ওয়াতফাও নিহত হয়েছেন।
ব্যাপক পরিসরে এই হামলায় রমজান মাসেও নতুন করে প্রাণ সংকটে পড়ে গেল গাজাবাসী।
আরও পড়ুন:হামাসের সঙ্গে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন।
আল জাজিরা জানায়, উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস ও রাফাহ, উত্তরাঞ্চলীয় গাজা সিটি এবং মধ্যাঞ্চলীয় দেইর এল-বালাহসহ বিভিন্ন স্থানে এসব হামলা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে এখন পর্যন্ত ৩২৬ শহিদকে নেওয়া হয়েছে। এখনও অনেক ভুক্তভোগী ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে।
গাজার শাসক দল হামাস মনে করছে, ইসরায়েলের এ হামলা গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে একতরফা সরে আসার শামিল।
অন্যদিকে গাজার আরেক সংগঠন প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) অভিযোগ, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সব ধরনের প্রচেষ্টা ইচ্ছাকৃতভাবে নস্যাৎ করছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগতদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী একটি গোষ্ঠী এমন তথ্য দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবর অনুসারে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির ১৪ বছরে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা এটি।
ব্রিটিশভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, ৭৪৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৫ সদস্য ও আসাদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠীর ১৪৮ জন নিহত হন। খুব কাছ থেকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়।
এ ছাড়া লাতাকিয়া শহরের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও খাবার পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এ সংঘাতের শুরু হয়েছে, যা সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে মাস তিনেক আগে সিরিয়ার কর্তৃত্ব গ্রহণ করে বিদ্রোহীরা।
সরকার জানিয়েছে, আসাদ বাহিনীর অবশিষ্টাংশের হামলার জবাব দিচ্ছে তারা। আর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার জন্য ব্যক্তিগত হামলার ঘটনাকে দায়ী করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় রবিবার জানিয়েছে, পবিত্র রমজান মাস ও এপ্রিলের মাঝামাঝি ইহুদিদের বসন্তকালীন উৎসব ‘পাসওভার’ ছুটির দিন পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ইসরায়েল।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতের ঠিক পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে ইসরাইল, যা মার্চের শেষের দিকে শেষ হবে এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আট দিনের ইহুদি পাসওভার পালন করা হবে।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শনিবার শেষ হয়েছে। এর পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সায় থাকার কথা জানানো হলো।
এই চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্দেশ্য ছিল গাজায় এখনও থাকা কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া এবং যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের পথ প্রশস্ত করা।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের মতে, ইসরায়েল ও হামাস আলোচনার অচলাবস্থায় রয়েছে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তাবলীতে তাৎক্ষণিকভাবে তারা একমত হতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে উইটকফ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
আরও পড়ুন:আরও জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় চলমান ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করেছে ইসরায়েল।
স্থানীয় সময় রবিবার সকালে ইসরায়েল এ ঘোষণা দেয়।
এর আগে শনিবার হামাস ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল প্রায় ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে বলে আশা করা হয়েছিল। তিন ধাপের চুক্তির প্রথম ধাপে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও জীবিত জিম্মিদের মধ্যে এ ছয়জনই ছিল শেষ দল।
এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘লজ্জাজনক অনুষ্ঠান ছাড়াই পরবর্তী জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শনিবারের নির্ধারিত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমাদের জিম্মিদের অসম্মান করে এমন লজ্জাজনক (জিম্মি মুক্তি) অনুষ্ঠান এবং প্রচারণার উদ্দেশ্যে জিম্মিদের নিন্দনীয় ব্যবহারসহ বারবার (চুক্তি) লঙ্ঘন করেছে হামাস।’
হামাস ও ইসরায়েল উভয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য বন্দিদের ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
হামাস মঞ্চে জিম্মিদের ওঠায়। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের পরিহিত ব্রেসলেট ও টি-শার্টে অবমাননাকর লেখা সংযুক্ত করে এবং অসম্মানজনক ভঙ্গিতে তাদের ছবি তোলে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি তথ্য অনুযায়ী, মোট ৬৩ জন জিম্মি গাজায় রয়ে গেছে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য