করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই নতুন বৈশ্বিক আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মাঙ্কিপক্স। আফ্রিকায় আবির্ভাব হওয়া এই রোগটি এরই মধ্যে ১১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সর্বমোট ৮০ জনের দেহে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাসটি। ডব্লিউএইচও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সম্ভাব্য সন্দেহভাজন ৫০ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যক্তিরা কোন দেশের, তা জানানো হয়নি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ‘নাইজেরিয়া ভ্রমণ করে ফেরা’ এক ব্যক্তির দেহে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয় যুক্তরাজ্যে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজেদ জাভিদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ২০ জন মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও ইতালি, সুইডেন, স্পেন, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায়ও শনাক্ত হয়েছে মাঙ্কিপক্স।
১৯৮০ সালে নির্মুল হওয়া গুটিবসন্তের কাছাকাছি এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। তবে এর লক্ষণগুলো অনেকটা চিকেনপক্সের মতো। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও ক্লান্তি। এর ফুসকুড়িগুলো মুখে ওঠা শুরু করে, পরে পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
এর লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে এবং পরের দুই থেকে ৪ সপ্তাহ তা স্থায়ী হয়। যদিও মাঙ্কিপক্সের কোনো প্রতিষেধক নেই, তবে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছে, এর মৃত্যুর হার হবে ৩ থেকে ৬ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসের ড্রপলেট এবং সংক্রমিত রোগীর ত্বকের ক্ষতের সংস্পর্শে এলে।
মাঙ্কিপক্সকে এর আগে কখনো যৌন সংক্রামক রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, হয় তারা সমকামী নয়তো উভকামী পুরুষ। স্পেনে ও পর্তুগালের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, দেশ দুটিতে শনাক্ত হওয়া প্রায় সব রোগীই সমকামী। কানাডার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, শনাক্ত হওয়া প্রায় সবাই সমকামী পুরুষদের সঙ্গে জড়িত।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এজেন্সির গবেষক মাতেও প্রোচাজকা মঙ্গলবার বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডে বর্তমান মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে সমকামী ও উভকামীদের যৌন নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।’
একাধিক দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যেসব ঘটনা তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, তার মধ্যে মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে যুক্ত ক্ষতগুলো মূলত পুরুষ রোগীদের যৌনাঙ্গে দেখা যাচ্ছে। ফলে তারা ধারণা করছেন যৌনতার মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে।
যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। একজন শীর্ষ রুশ কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘রাশিয়াকে শায়েস্তার চেষ্টা হলে বিশ্বে গজব পড়বে।’
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, ইউক্রেনকে দেয়া পশ্চিমা কামান অবশেষে রাশিয়ার অগ্রসর সেনাদের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, রাশিয়ান বাহিনী বুধবার দোনেৎস্ক অঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালায়। গত সপ্তাহে তীব্র লড়াইয়ের পরে রাশিয়ার বাহিনীর ফের হামলার শঙ্কা রয়েছে।
রাশিয়া ইতোমধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছে।
সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন তারা দোনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে অগ্রসর হচ্ছে। ঠিক যে কৌশলে লুহানস্ক দখল করেছিল রুশ বাহিনী ঠিক সে পথেই দোনেৎস্ক অঞ্চল দখল নিতে এগোচ্ছে তারা।
স্লোভিয়ানস্ক, ক্রামতোর্স্ক এবং বাখমুত এখন রাশিয়ার মূল লক্ষ্য। স্লোভিয়ানস্কেই প্রথম আঘাত করবে রাশিয়ান বাহিনী।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্লোভিয়ানস্ক ঘিরেই রাশিয়া-ইউক্রেনের পরবর্তী যুদ্ধ হবে।
এদিকে লুহানস্ক অঞ্চলটির গভর্নর বলেছেন, লুহানস্কের জন্য যুদ্ধ ‘এখনও শেষ হয়নি।’
অঞ্চলটির সামরিক প্রশাসনের প্রধান সের্হি হাইদাই বুধবার বলেছেন, লুহানস্ক অঞ্চলটি পুরোপুরি দখলে নিতে পারেনি রাশিয়া। এলাকার উপকণ্ঠে লড়াই এখনও চলছে।
বৃহস্পতিবার ফেসবুকে তিনি আবার বলেছেন, ‘লুহানস্ক অঞ্চলের জন্য যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি।’
লুহানস্ক অঞ্চলের উপকণ্ঠে লড়াই চলছে। রাশিয়ান বাহিনী লুহানস্কের লিসিচানস্ক এলাকা এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুতের মাঝামাঝিতে যুদ্ধ করছে। তারা এই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহী অধ্যুষিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এর তিন দিন পর ইউক্রেনে অভিযান চালায় রুশ বাহিনী।
২০১৪ সালের ১১ মে পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে গণভোটের আয়োজন করে। এতে স্বাধীনতার পক্ষে রায় হলেও তা মেনে নেয়নি ইউক্রেন। এর প্রায় আট বছর পর ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এই আট বছরে ওই অঞ্চলে সংঘাতে মারা পড়েছেন ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জলবায়ুবান্ধব বিনিয়োগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। প্রস্তাবটি নিয়ে বুধবার ভোটাভুটিতে পক্ষে ২৭৮ ভোট ও বিপক্ষে ৩২৮ ভোট পড়েছে। ৩৩ সদস্য ভোট দেননি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এই ভোট এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) করা প্রস্তাবটিকে আইনে পরিণত করার পথ খুলে দিয়েছে। এটি এখন ঠেকাতে হলে ইইউর ২৭ সদস্য দেশের মধ্যে অন্তত ২০টি দেশের বিরোধিতা প্রয়োজন, যার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।
প্রস্তাবটি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তোলার পর প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশের বিরোধিতার মুখে পড়ে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া জার্মানি প্রস্তাবের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়। তবে ফ্রান্সের নেতৃত্বে প্রস্তাবটির পক্ষে রয়েছে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ।
পরিবেশবাদী কয়েকটি সংস্থা ও ইইউর কয়েকজন নীতিনির্ধারক জীবাশ্ম জ্বালানি (গ্যাস) ও পরমাণু জ্বালানিকে ‘গ্রিন এনার্জি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হলে হলে অস্ট্রিয়া ও লুক্সেমবার্গ ইইউর বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণাও দিয়েছে।
এর পরও ইইউ পার্লামেন্টের বৃহত্তম আইনপ্রণেতা দল মধ্য-ডানপন্থি ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেয়েছে প্রস্তাবটি। মধ্যপন্থি রিনিউ ইউরোপ গ্রুপও প্রস্তাবের পক্ষে সায় দিয়েছে। মূলত সবুজপন্থি ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা এর বিরোধিতা করেন।
রাশিয়ার সুবিধা পাওয়ার আশঙ্কা
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। এর পাল্টা পদক্ষেপে প্রাকৃতিক গ্যাস ও পরমাণু জ্বালানিকে ‘পরিবেশবান্ধব’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস।
গ্রিনপিসের ইইউ সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ক্যাম্পেইনার আরিয়াদনা রদ্রিগো বলেন, ‘এটা নোংরা রাজনীতি। গ্যাস ও পরমাণু জ্বালানিকে নিরাপদ ও সবুজায়ন করার মানে হচ্ছে পুতিনের যুদ্ধ তহবিলে আরও টাকা ঢালা। আমরা বিষয়টি নিয়ে আদালতে লড়াই করব।’
এ পরিকল্পনার পেছনে রাশান জ্বালানি কোম্পানি গাজপ্রম ও রজনেফটের লবিং রয়েছে- এমনটা দাবি করেছেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ডাচ নীতিনির্ধারক পল টাংখ। এক বিবৃতিতে তিনি এ পদক্ষেপকে প্রাতিষ্ঠানিক ‘গ্রিনওয়াশ’ আখ্যা দেন।
টাংখ বলেন, ‘জলবায়ু নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্য আছে যে দেশগুলোর, তাদের জন্য একটি নজির স্থাপন করতে এ পরিকল্পনা প্রতিরোধ করা এখন গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে এ পদক্ষেপের পক্ষেও আছেন অনেকে। রিনিউ গ্রুপ ও ইইউএর ফরাসি নীতিনির্ধারক জাইলস বোয়ের মতে, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি দীর্ঘমেয়াদি একটি সমাধান। এটি দিয়ে এ মুহূর্তের জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।’
ডানপন্থি ল অ্যান্ড ও জাস্টিস পার্টির (পিআইএস) ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পোলিশ সদস্য বোগদান রিয়োনকা বলেন, ‘কম ধনী ইইউ দেশগুলোর কয়লা নির্ভরশীলতা কমাতে গ্যাস ও পারমাণবিক শক্তিতে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন।’
চেক প্রধানমন্ত্রী পেটর ফিয়ালা বলেছেন, বুধবারের এ ভোট ইউরোপের জন্য ‘চমৎকার খবর’। এক টুইটবার্তায় তিনি লেখেন, ‘এটি জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথ প্রশস্ত করেছে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
অবশেষে পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। রাজনৈতিক টানাপড়েনে একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগ ও এমপিদের সমর্থন হারানোর পর, পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন জনসন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন জনসন।
তিনি বলেন, ‘এটি কনজারভেটিভ এমপিদের ইচ্ছা। তারা একজন নতুন নেতা চাইছেন। ওয়েস্টমিনস্টারও এটি চাইছে। পার্টির নেতৃত্বে থাকার আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।’
ইতোমধ্যে জনসন একটি নতুন মন্ত্রিসভা নিয়োগ দিয়েছেন। এতে লেভেলিং আপ সেক্রেটারি গ্রেগ ক্লার্ক এবং ল্যাঙ্কাস্টারের ডাচির চ্যান্সেলর কিট মল্টহাউস।
আগামী সপ্তাহে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে বলেও জানিয়েছেন জনসন।
তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছিলাম কারণ ব্যক্তিগতভাবে আমি ভোটারদের ম্যান্ডেট দিতে আগ্রহী।
‘কনজারভেটিভ পার্টির ১৯২২ কমিটির প্রধান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডির সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলেছি, নতুন নেতা খোঁজার প্রক্রিয়া এখনই শুরু করা উচিত। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে কাজ করার দিন-তারিখ ঠিক করা হবে।’
যেসব মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, সেসব মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার কথাও জানিয়েছেন জনসন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে সেরা কাজটি ছেড়ে দেয়ায় আমি অত্যন্ত দুঃখিত। তবে বিষয়টি মেনে নিয়েছি।’
যৌন অসদাচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত এমপি ক্রিস পিঞ্চারকে কদিন আগে সরকারে নিয়োগ দিয়েছিলেন জনসন। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল দেখা দিলে গত সপ্তাহে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে এমপিত্ব হারান পিঞ্চার।
প্রধানমন্ত্রী জনসন নিজের ভুলও স্বীকার করেন। জানিয়েছিলেন, পিঞ্চার যে সরকারি চাকরির জন্য যোগ্য নন, তা বুঝতে তার দেরি হয়েছে।
তবে এতেও শেষ রক্ষা হলো না। অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
ওয়েলশ সেক্রেটারি সাইমন হার্ট বুধবার পদত্যাগ করেন। এদিন কেবিনেট সভায় বেশির ভাগ এমপি পদ ছাড়ার জন্য জনসনকে চাপ দেন। পরদিন নর্দান আয়ারল্যান্ডের সেক্রেটারি ব্র্যান্ডন লুইস সাইমনকে অনুসরণ করেন।
শুধু নিজ দলেই নয়, বিরোধী লেবার পার্টির তোপের মুখে ছিলেন ৫৮ বছরের এই ব্রিটিশ রাজনীতিক। লেবার পার্টি সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, জনসন প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকলে তারা পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব তুলবে।
আরও পড়ুন:সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি হয়েছে সাউথ আফ্রিকা। দিনে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন, দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
তীব্র শীতের মধ্যে অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহে নাকাল দেশটির মানুষ। রুম হিটার চালু, রাতের খাবার রান্না এমনকি ফোন চার্জ করতেও সমস্যা হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি ‘এসকম’ একে বলছে স্টেজ সিক্স লোডশেডিং। বিদ্যুৎ না থাকায় অচল ট্রাফিক সিগনাল লাইট। এতে রাস্তায় তৈরি হচ্ছে যানজট। কর্মক্ষেত্র এবং বাড়িতেও তৈরি হয়েছে দুর্বিষহ অবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো বিরক্ত সাউথ আফ্রিকার প্রধান শহর জোহানেসবার্গের বাসিন্দা জর্জ ল্যান্ডন। দেশ ছাড়ার ইচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে আমার একটি চাকরির ইন্টারভিউ রয়েছে। আমি আগামীকাল ফ্লাইট বুক করছি। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, তবে দেশকেও তো আমাদের ভালোবাসতে হবে।’
এসকম-এর দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির জন্য সাউথ আফ্রিকায় দিন দিন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
গত বছরে দেশটির জাতীয় গ্রিডে চাহিদার চেয়ে ২৫২১ গিগাওয়াট ঘণ্টা কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আর এ বছরের কেবল জুলাই মাসেই এসকম জাতীয় গ্রিডে ২২৭৬ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ কম বিদ্যুৎ দিয়েছে।
দিনে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন রাখার ব্যপারে এসকম বলছে, কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে কোনো এলাকা বাছাই করা হচ্ছে না। যে কোনো এলাকায় যে কোনো সময়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হতে পারে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক টানাপড়েন একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগ ও এমপিদের সমর্থন হারানোর পর কনজারভেটিভ পার্টির নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদও হারাতে হবে তাকে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গ্রীষ্মেই কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত করা হবে এবং অক্টোবরেই দলীয় সম্মেলনে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঠিক করা হবে।
এর আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বরিস জনসন।
যদিও এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও পার্টি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু এখন পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে ঋষি সুনাকের স্থলাভিষিক্ত হওয়া সদ্য দায়িত্ব পাওয়া অর্থমন্ত্রী নাদিম জাহাভিসহ তার মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা তাকে পদত্যাগ করে মর্যাদার সঙ্গে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট থেকে পদত্যাগের বিবৃতি দেবেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্য চালায় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। এরপরও রাজপরিবার এখনও বহাল তবিয়তেই রয়েছে দেশটিতে। এখনও রানির নিরাপত্তার জন্য রয়েছে কুইন্স গার্ড। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার নামেই যুক্তরাজ্যে জারি হয় রাষ্ট্রীয় আদেশ।
যুক্তরাজ্যে আইনের দৃষ্টিতে রানির অবস্থান সব কিছুর ঊর্ধ্বে। এ ক্ষেত্রে তিনি অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করেন। তাকে দেওয়ানি ও ফৌজদারি তদন্তের অধীনে বিচার করা যাবে না, এমনকি কোনো অপরাধেই তাকে আটক করা যাবে না।
গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রেও রানির কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে না। বাধা লাগে না সিটবেল্ট। ট্রাফিকের গতিসীমাও তাকে মানতে হবে না। যদি তিনি গতিসীমা লঙ্ঘনও করেন, পুলিশের কিছুই করার নেই। কারণ তার বিরুদ্ধে নেয়া যাবে না কোনো আইনানুগ পদক্ষেপ।
দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের কোনো পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না। কারণ যুক্তরাজ্যে তার নামেই ইস্যু হয় পাসপোর্ট। তাই তার কোনো পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই।
রানিকে কোনো ধরনের ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয় না, এমনকি রাজপরিবারের কোনো আয়েও ট্যাক্স দিতে হয় না। তবে রানি অফিশিয়াল কাজে ব্যবহার হয় না এমন সম্পদের ক্ষেত্রে তিনি নিজ ইচ্ছায় ট্যাক্স দেন। যদিও তা দিতে তিনি বাধ্য নন।
কিন্তু যদি তিনি খুনের মতো অপরাধ করেন, তাহলে কী হবে?
ব্রিটিশ হেরিটেজ ট্রাভেল একটি প্রতিবেদন করেছে, যার শিরোনাম ছিল, ‘কী হবে যদি রানি কাউকে খুন করেন?’
যেকোনো খুনের বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব নেন একজন পুলিশ সদস্য। যুক্তরাজ্যে একজন কনস্টেবল হিসেবে দায়িত্ব নিতে গেলে রানির আনুগত্য ও সেবার শপথ নিতে হয়।
এমনকি আদালতের রায় পাঠ করা হয় রানির পক্ষ থেকে।
রানি আইন মানতে বাধ্য নন, কারণ তিনিই আইন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো পুলিশের সাধ্য নেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তিনি শুধু পুলিশকে বলবেন, এখান থেকে চলে যাও। পুলিশকে চলে যেতে হবে। কোনো কোর্টের মুখোমুখিও তাকে হতে হবে না।
তবে পার্লামেন্ট একটি উদ্যোগ নিতে পারবে, একজন খুনি রানিকে রাজক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য বিল উত্থাপনের মাধ্যমে। তবে এখানেও সমস্যা রয়েছে, কারণ সেই বিল কার্যকর হতেও রানির অনুমোদন লাগবে।
এখন কথা হচ্ছে, রাজপরিবারের সবার ক্ষেত্রেই কী এমনটা প্রযোজ্য। এর উত্তর হল ‘না।’, তবে অবশ্য রানি চাইলে ভিন্ন কথা। কারণ রানির কথাই যুক্তরাজ্যে আইন।
সৌভাগ্যবশত যুক্তরাজ্যের মানুষের সেবার দিকেই রানির মনোযোগ। এমন কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে তার সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
রাজপরিবারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যদিও আইন মানতে বাধ্য নন রানি। এর পরও তার সব কার্যক্রম যাতে আইনের মধ্যে থাকে, তা নিশ্চিত করতে তিনি সতর্ক থাকেন।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানজুড়ে বৃষ্টি সম্পর্কিত ঘটনায় গত ৩ সপ্তাহে ৭৭ জন মারা গেছেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শেরি রেহমান বুধবার এমনটাই জানিয়েছেন।
বর্ষার ভারি বৃষ্টিতে দেশটির বাড়িঘর, রাস্তা, সেতু ও বিদ্যুৎকেন্দ্রেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মন্ত্রী শেরি রেহমান জানিয়েছেন, নিহত ৭৭ জনের মধ্যে বেলুচিস্তানেই মারা গেছেন ৩৯ জন।
টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে, বেলুচিস্তানের যানবাহন পর্যন্ত পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।
বেলুচিস্তান প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, বেলুচিস্তানের কোয়েটায় রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে।
রাজধানী ইসলামাবাদ ও পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশেও ভারি বৃষ্টি হয়েছে।
প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
শেরি রেহমান বলছেন, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত দেশটির গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় ৮৭ শতাংশ বেশি। তিনি এই পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন এবং একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, পাকিস্তানকে আরও বন্যার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, কারণ দেশের হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।
কয়েক বছর ধরে প্রতিবছরই পাকিস্তানের শহরগুলোকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সরকারি পরিকল্পনায় ঘাটতির কারণে পরিস্থিতি প্রতি বছরই জটিল আকার ধারণ করছে।
এদিকে দক্ষিণ পাকিস্তানের পরিস্থিতি এর পুরোপুরি উল্টো। সেখানে এ বছর দেখা দিয়েছে খরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য