গম রপ্তানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে খাদ্যশস্যটির দাম।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বেঞ্চমার্ক ইনডেক্সে বিশ্বে গমের মূল্যসূচক বেড়ে গেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরের মাস মার্চে প্রচণ্ড গরম আর তাপদাহে ভারতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গমের ফলন। এতে দেশটির অভ্যন্তরে প্রধান খাদ্যশস্যটির দাম বেড়ে যায় রেকর্ড পরিমাণ। এমন বাস্তবতায় গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিশ্ববাজারে গমের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এতে গম থেকে উৎপাদিত রুটি, নুডুলসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়।
গত শুক্রবার অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত সংস্থা (ডিজিএফটি) স্থানীয় সময় শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়।
শুক্রবারের ঘোষণার আগে লেটার অফ ক্রেডিট (এলওসি) ইস্যু হয়েছে এমন সব রপ্তানির চালান সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হবে। এর বাইরেও কোনো দেশের অনুরোধে গম রপ্তানি করা যাবে।
ডিজিএফটির ঘোষণায় আরও বলা হয়, দেশের সার্বিক খাদ্যসংকট নিয়ন্ত্রণে নয়াদিল্লি গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবেশী ও অন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রয়োজনে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে ভারত।
চীনের পর গমের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ ভারত। তবে উৎপাদিত গমের অধিকাংশই ভারতকে ব্যবহার করতে হয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে গমের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ভারতের দ্বারস্থ হন ক্রেতারা।
ভারত সরকার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আগে ইস্যু করা রপ্তানির আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন দেশকে গম পাঠানো অব্যাহত রাখবে নয়াদিল্লি। আর যে সব দেশ তাদের খাদ্যনিরাপত্তার চাহিদা মেটাতে ভয়াবহ সংকটের মুখে রয়েছে, তারাও ভারতের গম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।
ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারাও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয় এবং এটি সংশোধন করা যেতে পারে।
তবে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত গ্রুপ অফ সেভেন-জি৭ভুক্ত দেশগুলোর বৈঠকে কৃষিমন্ত্রীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷
জার্মান খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী সেম ওজদেমির বলেন, ‘ভারতের মতো অন্য দেশগুলো যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা বাজার বন্ধ করতে শুরু করে, তবে এই সংকট আরও তীব্রতর হয়ে দেখা দেবে।’
জি৭ হলো বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম ও উন্নত অর্থনীতির একটি সংগঠন, যার আধিপত্য রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায়। জি৭ভুক্ত দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ, তবে এটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ নয়। কারণ এর বেশির ভাগ উৎপাদিত শস্য অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়।
এদিকে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের গম রপ্তানিতে ধস নামে। খরা ও বন্যার হুমকিতে থাকা দেশগুলো নিজেদের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।
নিষেধাজ্ঞা দেয়ার এক সপ্তাহ আগে, ভারত চলতি বছর রেকর্ড ১০ মিলিয়ন টন গম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে গমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত একাই তা মেটাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের সঙ্গে মিল রেখে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোটা বিশ্ববাসীকে খাবার সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারত।
তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে নিজের অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে যায় নয়াদিল্লি, এমন মন্তব্য করেছেন সংবাদমাধ্যম বিবিসির ভারতবিষয়ক সম্পাদক ভিকাস পান্ডে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রায় নির্বিচারে গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এরই মধ্যে এই ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিকাগো বন্দুক হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ম্যানচেস্টার থেকে রবার্ট ই ক্রিমো থ্রি নামের ২২ বছর বয়সী এক যুবককে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, তারা বিশ্বাস করে এই হামলার জন্য ক্রিমোই দায়ী।
এর আগে শিকাগোর ইলিনয় শহরের হাইল্যান্ড পার্কে একজন অস্ত্রধারী ছাদ থেকে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ লক্ষ্য করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাইফেল দিয়ে গুলি ছোড়ে।
স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে এই হামলা চালানো শুরু হয়, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত হন এবং আরও একজন হাসপাতালে নেয়ার সময় মারা যান।
পাশাপাশি এই হামলায় ২৪ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইলিনয়ের গভর্নর জে রবার্ট প্রিটজকার বলেছেন, নির্বিচার গুলি যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্য হয়ে যাচ্ছে।
শিকাগোর নির্বিচার গুলির ঘটনা এমন সময় ঘটল যখন এ ধরনের নির্বিচার গুলির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটির কংগ্রেস বন্দুক নিয়ন্ত্রণে অস্ত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে দেশটি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকিতে পারিবারিক সহিংসতায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে গুলিতে পুলিশের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার অঙ্গরাজ্যটির পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি অংশে অধিবাসী অধ্যুষিত ছোট শহর অ্যালেনের এ ঘটনায় আরও চারজন আহত হয়েছেন বলে রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
পুলিশের অভিযানের সময় একটি কুকুরও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। পরে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত ৪৯ বছর বয়সী ল্যান্স স্টোরজকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ফ্লয়েড কাউন্টির শেরিফ জন হান্ট বলেছেন, অভিযুক্তের বাড়ি পৌঁছানোর পর পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘নিখাদ নরকের’ মুখোমুখি হতে হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার আদালত স্টোরজের স্ত্রীকে পারিবারিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দেয়ার আদেশ দিয়ে একটি পরোয়ানা জারি করে। ওই পরোয়ানা নিয়ে রাত ৭টার দিকে তার বাড়িতে যান পুলিশ সদস্যরা।
বাড়িতে ঢোকার মুহূর্তেই গুলি ছোড়া শুরু হয়। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে গোলাগুলিতে পুলিশের তিন সদস্য নিহত হন। পরে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, স্টোরজের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ফেলে যাওয়া একটি লরি থেকে ৫৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মানব পাচার আইনে চালকসহ দুইজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
টোক্সাসের বাসিন্দা হোমেরো জেমোরানো নামের ওই চালককে লরির পাশে একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তিনি পুলিশকে অভিবাসনপ্রত্যাশী হিসেবে পরিচয় দেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।
মেক্সিকোর অভিবাসনবিষয়ক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেমোরানো প্রথমে নিজেকে বেঁচে যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশী হিসেবে পরিচয় দেন।
মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার অন্যজন হলেন ক্রিসচিয়ান মারটিনেজ। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
লরিটির নিবন্ধনের ঠিকানার সঙ্গে এই দুই ব্যক্তির নাম-পরিচয়ের মিল রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও মামলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিজ ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, গ্রেপ্তার দুইজনের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
আবদ্ধ লরিতে অতিগরমে হিটস্ট্রোক এবং পানিশূন্যতায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। যাদের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ২৭ জন মেক্সিকোর নাগরিক, ১৪ জন হন্ডুরাস , সাতজন গুয়াতেমালা ও দুইজন আল-সালভাদরের নাগরিক।
স্থানীয় সময় গত সোমবার টেক্সাসের সান আন্তোনিওতে একটি লরির ভেতর থেকে ৫৩ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মারা যাওয়া সবাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিল।
সান আন্তোনিও ডিস্ট্রিক্ট-৪ সিটি কাউন্সিলের প্রতিনিধি আদ্রিয়ানা রোচা গার্সিয়া জানিয়েছেন, পুলিশপ্রধান উইলিয়াম ম্যাকম্যানাস তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
রোচা গার্সিয়া আরও জানিয়েছেন, আরও ১৬ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করেছে যে হাসপাতালে নেয়া ১৬ জনের মধ্যে চার শিশুও রয়েছে।
এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লরিটিতে কোনো ধরনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি ভেতরে খাওয়ার পানিও ছিল না।
মেথোডিস্ট হেলথ কেয়ারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেখানে তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।
বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা গরম, হিটস্ট্রোকে ভুগছিলেন।
সান আন্তোনিওর পুলিশপ্রধান জানিয়েছেন, এ ঘটনার তদন্ত এখন ফেডারেল এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তিনজনকে এরই মধ্যে হেফাজতে রাখা হয়েছে।
সান আন্তোনিও, যা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্ত থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। অভিবাসীদের পাচার করার জন্য একটি প্রধান ট্রানজিট রুট। লরিটি সান আন্তোনিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে রেললাইনের পাশেই পাওয়া যায়।
টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এই মৃত্যুর জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করেছেন এবং এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নেয়া অতি উন্মুক্ত সীমান্ত নীতির ফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় নিশ্চিতের পর ক্যাপিটল হিলে এক নারকীয় তান্ডব চালিয়েছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা। যার তদন্ত এখনও চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন সহকারী ক্যাসিডি হাচিনসন ৬ জানুয়ারি ২০২১-এর দাঙ্গা তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেয়ার সময় জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলকে উল্টে দিতে ২০২০ সালে সমর্থকদের ক্যাপিটলে ঝড় তোলার আহ্বান যখন জানিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প, তিনি তখন জানতেন যে তার সমর্থকদের কাছে অস্ত্র আছে।
হাচিনসন জানান, শুধু ট্রাম্পই নন, হোয়াইট হাউসের অনেক শীর্ষকর্তাও সহিংসতার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন।
তিনি বলেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও ক্যাপিটলে মিছিলে যোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।
হাচিনসন জানান, ট্রাম্প সে সময় বলেন, ‘তারা এখানে আমাকে আঘাত করতে আসেনি, ওদের ভেতরে (ক্যাপিটল হিলে) যেতে দাও।’
সে সময় ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর জন র্যাটক্লিফ হোয়াইট হাউসকে বলেন, এমন ঘটনা প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকারের (জো বাইডেন) জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের কৌঁসুলি প্যাট সিপোলোন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, দেখে মনে হচ্ছে হোয়াইট হাউস দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে।
ট্রাম্প সমর্থকেরা কীভাবে ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের অফিস ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ করেছিল সে বিষয়ে কংগ্রেসের একটি কমিটি এখনও তদন্ত করছে।
এই প্রথমবারের মতো তদন্তকারীরা সেই দাঙ্গার সময় হোয়াইট হাউসের ভেতরে ঠিক কী চলছিল সেই বিষয়ে ধারণা পেলেন হাচিনসনের সাক্ষ্য থেকে।
তবে ডনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই তার বিরুদ্ধে করা হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের সিলেক্ট কমিটির তদন্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় একটি মোটেলে বন্দুক নিয়ে খেলার সময় গুলিতে এক বছর বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ওই শিশুটির দুই বছর বয়সী বোন। বন্দুকটি ছিল আট বছর বয়সী একটি ছেলেশিশুর বাবার।
এ ঘটনায় ওই ছেলেশিশুর বাবা রোডেরিক ডায়নে র্যানডেলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এসক্যাম্বিয়া কাউন্টির পুলিশপ্রধান চিপ সাইমন্স বলেন, ‘একজন আসামির বন্দুক রাখার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৫ বছর বয়সী র্যানডেলকে। তার বিরুদ্ধে অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ নষ্ট করা, আগ্নেয়াস্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা ও হেয়ালিপনার অভিযোগ আনা হয়েছে।’
ঘটনার বর্ণনায় পুলিশপ্রধান জানান, ফ্লোরিডার একটি মোটেলের রুমে আট বছরের এক শিশুর হাতে ছিল তার বাবার বন্দুক। গুলিভর্তি বন্দুকটি নিয়ে অন্য দুই শিশুর সঙ্গে খেলায় মেতেছিল সে। এ সময় হঠাৎ একটি গুলি সরাসরি বিদ্ধ হয় এক বছরের একটি শিশুর শরীরে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। আহত হয় তাদের সঙ্গে খেলারত দুই বছরের আরেকটি শিশু।’
গুলির সময় মোটেলের অন্য কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন র্যানডেল ও তার বান্ধবী।
আট বছরে ছেলেশিশুটির বাবা হলেন র্যানডেল। আর এক ও দুই বছর বয়সী কন্যাশিশু দুটির মা হচ্ছেন র্যানডেলের বান্ধবী। গুলিতে নিহত শিশুটির নাম ‘কাচে ব্যাস’।
পুলিশ জানায়, ওই দুই শিশুর মাকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়নি।
র্যানডেল তার অস্ত্রটি শিশু তিনটি যে রুমে খেলছিল সেখানে একটি আলমারিতে রেখেছিলেন। র্যানডেলের ছেলে অস্ত্রটি খুঁজে পায় এবং অন্য শিশু দুটির সঙ্গে তা দিয়ে খেলতে শুরু করে। এ সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
গুলির শব্দ শুনে র্যানডেল শিশুদের রুমটিতে আসেন এবং অস্ত্রটিসহ এক ব্যাগ সন্দেহভাজন মাদক সেখান থেকে সরিয়ে ফেলেন।
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘এভাবে অবহেলায় আমরা আমাদের সন্তানদের প্রতিপালন করতে চাই না, তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে চাই না। এটি খুবই হতাশাজনক এবং অপ্রত্যাশিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘র্যানডেলের বিরুদ্ধে রয়েছে ১২৯ পৃষ্ঠার অপরাধের দলিল। এগুলোর মধ্যে ১৪টি বড় ধরনের অপরাধ। ৪১ হাজার ডলার বন্ড দিয়ে জামিনে রয়েছেন তিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ‘শিশুর প্রতি অন্যায় ও খামখেয়ালির অপরাধে গত সপ্তাহে এক মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ওই মা তার এক বছর বয়সী ছেলেসন্তানকে গাড়িতে আটকিয়ে রেখে বারে যান। এ সময় গাড়ির সব উইন্ডোজ বন্ধ ছিল। ম্যাডিসন হ্যালি হার্ট নামের ২৭ বছর বয়সী ওই নারীকে সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুরতার অপরাধে কারাগারে পাঠানো হয়।’
অস্ত্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন এভরিটাউন ফর গান সেফটির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর ১৮ বছরের নিচের শিশুদের মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে কমপক্ষে ৩৯২টি গুলির ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের সান আন্তোনিওতে একটি লরির ভেতর থেকে ৪৬ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মারা যাওয়া সবাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীপ্রত্যাশী ছিল।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সান আন্তোনিও ডিস্ট্রিক্ট-৪ সিটি কাউন্সিলের প্রতিনিধি আদ্রিয়ানা রোচা গার্সিয়া জানিয়েছেন, পুলিশপ্রধান উইলিয়াম ম্যাকম্যানাস তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
রোচা গার্সিয়া আরও জানিয়েছেন, আরও ১৬ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করেছে যে হাসপাতালে নেয়া ১৬ জনের মধ্যে চার শিশুও রয়েছে।
এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লরিটিতে কোনো ধরনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি ভেতরে খাওয়ার পানিও ছিল না।
মেথোডিস্ট হেলথ কেয়ারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেখানে তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।
বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা গরম, হিটস্ট্রোকে ভুগছিলেন।
সান আন্তোনিওর পুলিশপ্রধান জানিয়েছেন, এ ঘটনার তদন্ত এখন ফেডারেল এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তিনজনকে এরই মধ্যে হেফাজতে রাখা হয়েছে।
সান আন্তোনিও, যা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্ত থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। অভিবাসীদের পাচার করার জন্য একটি প্রধান ট্রানজিট রুট। লরিটি সান আন্তোনিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে রেললাইনের পাশেই পাওয়া যায়।
টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এই মৃত্যুর জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করেছেন এবং এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নেয়া মারাত্মক উন্মুক্ত সীমান্ত নীতির ফলাফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যে লাখ লাখ নারী গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার হারাতে যাচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ বছর পর সুপ্রিম কোর্ট ‘রো বনাম ওয়েডের’ সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা গর্ভপাতের অধিকার হারাতে যাচ্ছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় দেশটির অন্যান্য রাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার পথ প্রশস্ত করবে। এই রায়ে উচ্ছ্বসিত যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল নাগরিকরা।
একজন গর্ভপাতবিরোধী কর্মী বিবিসিকে বলেছেন, এই দেশে আইনই যথেষ্ট নয়, জীবনে এই বিষয়টিকে (গর্ভপাত) অচিন্তনীয় করে দিতে হবে।
মিসিসিপির গভর্নর টেট রিভস এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে আরও হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হবে, আরও রিপোর্ট কার্ড দেয়া হবে, আরও লীগ গেমস খেলা হবে এবং আরও বেশি জীবন ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। এটি একটি আনন্দের দিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ‘রো বনাম ওয়েডের’ একজন সমালোচক। তিনি গর্ভপাতবিরোধী সমর্থকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, প্রতিটি রাজ্যে আইনের মাধ্যমে ‘জীবনের পবিত্রতা’ সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত থামা যাবে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেয়াকে একটি ‘দুঃখজনক ত্রুটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং রাজ্যগুলোকে গর্ভপাত পদ্ধতির অনুমতি দেয়ার জন্য আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
গর্ভপাত প্রদানকারী স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা প্ল্যান্ড প্যারেন্টহুডের গবেষণা অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর প্রজননে সক্ষম ৩ কোটি ৬০ লাখ নারীর গর্ভপাতের সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলায় ১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, একজন নারীর গর্ভপাতের অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত।
সেই রায় দেশটির নারীদের গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে (ত্রৈমাসিক) গর্ভপাতের নিরঙ্কুশ অধিকার দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী ৩ মাসে ছিল বিধিনিষেধ। ৬ মাস পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য