যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের একটি সুপার মার্কেটে এক শ্বেতাঙ্গ যুবকের বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন ১০ জন। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে চালানো ওই হামলায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। হতাহতের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত বাফেলো শহরের একটি সুপার মার্কেটে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থল থেকে আধা-সামরিক পোশাক পরা ১৮ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ যুবককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেলসহ আটক করা হয়েছে।
হতাহতদের মধ্যে রয়েছেন ১১ কৃষ্ণাঙ্গ ও দুই শ্বেতাঙ্গ। টপস ফ্রেন্ডলি মার্কেটের এই হামলার পেছনে বর্ণবিদ্বেষী ও সহিংস চরমপন্থী মনোভাবকে দুষছেন স্থানীয় প্রশাসন।
বন্দুকহামলায় ১০ জন নিহতের ঘটনায় টপস ফ্রেন্ডলি মার্কেটের সামনে জড়ো হয় স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: এপি
দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের বাফেলো ফিল্ড অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পেশাল এজেন্ট স্টিফেন বেলঙ্গিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “এই গুলির ঘটনাকে ‘ঘৃণাজনিত অপরাধ এবং জাতিগতভাবে সহিংস চরমপন্থী মামলা’ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।’’
বাফেলোর পুলিশ কমিশনার জোসেফ গ্রামাগলিয়া বলেন, ‘ওই সন্দেহভাজনের হামলায় ৯ ক্রেতা এবং সুপার মার্কেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
‘সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী ওই পুলিশকর্তা বন্দুকধারীকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি চালিয়েছিলেন। তবে বন্দুকধারীর গুলিতে তিনি নিহত হন।’
একটি দোকানের ভেতরে ওই নিরাপত্তারক্ষীর মুখোমুখি অবস্থানে এলে সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজের গলায় বন্দুক তাক করেন। এ সময় পুলিশ তাকে অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন, পুলিশ কমিশনার যোগ করেন।
সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে বাফেলোর প্রায় ২০০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে কনক্লিন অঞ্চলের বাসিন্দা পেটন গেনড্রন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুই কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এপিকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের একটি সুপার মার্কেটে শ্বেতাঙ্গ যুবকের বন্দুকহামলায় হতাহতদের মধ্যে রয়েছেন ১১ কৃষ্ণাঙ্গ ও দুই শ্বেতাঙ্গ। ছবি: এপি
কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার অনুমতি দেয়া হয়নি এবং নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা তা করেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ পিয়েরে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘটনা ও এর তদন্তের বিষয়ে নিয়মিত খবর নিচ্ছেন। এই ঘটনায় জো বাইডেন ফার্স্ট লেডিকে সঙ্গে নিয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা ও তাদের প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করেছেন।’
আরও পড়ুন:কানাডার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ অন্টারিও এবং কুইবেকে ভয়াবহ ঝড়ের কবলে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা হাইড্রো ওয়ান অ্যান্ড হাইড্রো-কুইবেকের তথ্যমতে, প্রবল ঝড়ের কবলে এই দুই প্রদেশে শনিবার রাতে প্রায় ৯ লাখ বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সময় শনিবার অন্টারিও ও কুইবেক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রীষ্মের একটি শক্তিশালী বজ্রঝড়ের কারণে চার জন মারা গেছেন এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঝড়ের সময় পাকিং করা লরির ওপর গাছ পড়লে তার ভেতরে থাকা এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। ঝড়ের মধ্যে ৭০ বছরের বেশি এক নারী গাছের নিচে পড়ে পিষ্ট হন।
ফেডারেল রাজধানী অটোয়াতে ঝড়ের আঘাতে আরও একজনের প্রাণ গেছে। তবে স্থানীয় পুলিশ তার পরিচয় প্রকাশ করেনি।
চতুর্থ শিকার পঞ্চাশ বছর বয়সী এক নারী। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিবিসি জানিয়েছে, ঝড়ের সময় অটোয়া এবং কুইবেককে বিচ্ছিন্ন করা অটোয়া নদীতে তার নৌকা ডুবে গেলে তার মৃত্যু হয়।
কানাডার জনবহুল প্রদেশ অন্টারিওতে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বসবাস। কুইবেকে প্রায় ২০ শতাংশ।
প্রায় চার কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এদের একটি বড় অংশ অন্টারিও ও কুইবেকের বাসিন্দা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের টুইটার হ্যান্ডেলে ফলোয়ার ২ কোটি ৩০ লাখ। তবে এসব ফলোয়ারের অর্ধেকের বেশি নাকি ভুয়া!
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান- স্পার্কটোরোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ তথ্য। বুধবার খবরটি প্রকাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে।
টেসলার মালিক ইলন মাস্ক টুইটার কেনার বিষয়টি স্থগিতের সিদ্ধান্তের মধ্যেই এ প্রতিবেদন প্রকাশ হলো। ৪৪ বিলিয়ন ডলারে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি কেনার প্রস্তাব করেছিলেন মাস্ক। এতে রাজিও হয়েছিল টুইটার কর্তৃপক্ষ। তবে শেষমেশ কেনার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন ইলন মাস্ক।
টুইটারে ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে উদ্বেগের কারণে মাস্ক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভুয়া এসব অ্যাকাউন্ট থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রপাগান্ডা ছড়ানোয় ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই তো টুইটার কেনার প্রস্তাবের আগে মাধ্যমটির সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছিলেন মাস্ক।
স্পার্কটোরোর বিশ্লেষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল @POTUS-এর প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ফলোয়ারের অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয়। এটি হোয়াইট হাউসে (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয়) বাইডেনের মোট ফলোয়ারের ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ!
ভুয়া বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলো কোন জায়গা থেকে খোলা হয়েছে, সেগুলোর প্রোফাইল ছবি, তার মধ্যে কতগুলো নতুন বা পুরোনো এসবের মাপকাঠির ভিত্তিতে সমীক্ষাটি চালিয়েছে স্পার্কটোরো।
যেসব অ্যাকাউন্টের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বা যেগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার হচ্ছে না, রোবটচালিত বা স্প্যাম, সেগুলোকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাইডেনের পূর্বসূরি বারাক ওবামা প্রথমবারের মতো অনলাইনে লাখ লাখ আমেরিকানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য @POTUS অ্যাকাউন্ট চালু করেছিলেন। ক্ষমতা ছাড়ার আগে ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অ্যাকাউন্টটি হস্তান্তর করেছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের @POTUS45- অ্যাকাউন্টটি নিরীক্ষা করে দেখা যায়, তার অনুসারীর ৪২ দশমিক ৪ শতাংশই ভুয়া।
তবে বাইডেনের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টটি প্রেসিডেন্টের হ্যান্ডেলের চেয়ে যে খুব স্বচ্ছ, তা কিন্তু নয়। @JoeBiden-এ ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে বাইডেনের; যেগুলোর ৪৩ শতাংশই ভুয়া। @POTUS- অ্যাকাউন্ট থেকে এখানে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ বেশি ভুয়া অনুসারী রয়েছে।
টুইটার বলছে, তাদের দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা অন্তত ২২৯ ব্যবহারকারী। কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫ শতাংশের কিছু বেশি ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ভুয়া।
টেসলার মালিক মঙ্গলবার এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই ধনকুবের দাবি করেছেন, ২০ শতাংশ টুইটার অ্যাকাউন্ট ভুয়া। টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পরাগ আগারওয়াল তাদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
টুইটে মাস্ক লেখেন, ‘আমার অফারটি টুইটারের এসইসি ফাইলিং সঠিক হওয়ার ওপর ভিত্তি করে ছিল। তবে টুইটারের সিইও প্রকাশ্যে ৫ শতাংশের প্রমাণ দেখাতে অস্বীকার করেছেন।
‘যতক্ষণ তারা এর প্রমাণ দেখাতে পারবে না, ততক্ষণ কোনো চুক্তি হবে না।’
কদিন আগে স্পার্কটোরোর সমীক্ষায় উঠে আসে, টেসলার মালিক ইলন মাস্কের টুইটার ফলোয়ারদের মধ্যে ২৩ শতাংশের বেশি অ্যাকাউন্টই ভুয়া।
আরও পড়ুন:খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে সুপরিচিত ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের কারণে আগামী কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
বিশ্বে মোট গম উৎপাদনের ৩০ শতাংশ হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ায়। আর ভুট্টা উৎপাদনের ২০ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই দুই দেশে। যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে এই দুই দেশ থেকে গম ও ভুট্টাসহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলনিয়সের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন সব তথ্য।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, ‘ইউক্রেনে রুশ হামলার কারণে আগামী কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে।’
স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কে বিশ্বসংস্থাটির মহাসচিব এমন সর্তকতার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধের ফলে দ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।’
মহাসচিব বলেন, ‘ইউক্রেন যদি যুদ্ধ শুরুর আগের মাত্রায় রপ্তানি আবারও শুরু করতে না পারে, তা হলে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে; আর সেই দুর্ভিক্ষ কয়েক বছর ধরে চলবে।’
এই যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বন্দর দিয়ে সংঘাতের আগে বিপুল পরিমাণ সূর্যমুখীর তেল, ভুট্টা ও গমের মতো খাদ্যশস্য রপ্তানি হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী এসব নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং এর বিকল্প পণ্যগুলোর দামও বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই বছর বিশ্বে খাদ্যের দাম ৩০ শতাংশের বেশী বেড়েছে।
গুতেরেস বলেন, এই সংঘাত কমপক্ষে এক কোটি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। এর ফলে অপুষ্টি, গণক্ষুধা এবং দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিও দেখা দিতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যদি এখন থেকে একযোগে কাজ শুরু করতে পারি, তবে পৃথিবীতে খাদ্যের সংকট দেখা দেবে না। এ সমস্যা যদি আমরা শিগগিরই সমাধানে ব্যর্থ হই তবে সামনের মাসগুলোতেই আমরা খাদ্য ঘাটতির মুখোমুখি হতে পারি।’
আরও পড়ুন:গম রপ্তানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে খাদ্যশস্যটির দাম।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বেঞ্চমার্ক ইনডেক্সে বিশ্বে গমের মূল্যসূচক বেড়ে গেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরের মাস মার্চে প্রচণ্ড গরম আর তাপদাহে ভারতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গমের ফলন। এতে দেশটির অভ্যন্তরে প্রধান খাদ্যশস্যটির দাম বেড়ে যায় রেকর্ড পরিমাণ। এমন বাস্তবতায় গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিশ্ববাজারে গমের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এতে গম থেকে উৎপাদিত রুটি, নুডুলসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়।
গত শুক্রবার অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত সংস্থা (ডিজিএফটি) স্থানীয় সময় শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়।
শুক্রবারের ঘোষণার আগে লেটার অফ ক্রেডিট (এলওসি) ইস্যু হয়েছে এমন সব রপ্তানির চালান সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হবে। এর বাইরেও কোনো দেশের অনুরোধে গম রপ্তানি করা যাবে।
ডিজিএফটির ঘোষণায় আরও বলা হয়, দেশের সার্বিক খাদ্যসংকট নিয়ন্ত্রণে নয়াদিল্লি গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবেশী ও অন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রয়োজনে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে ভারত।
চীনের পর গমের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ ভারত। তবে উৎপাদিত গমের অধিকাংশই ভারতকে ব্যবহার করতে হয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে গমের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ভারতের দ্বারস্থ হন ক্রেতারা।
ভারত সরকার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আগে ইস্যু করা রপ্তানির আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন দেশকে গম পাঠানো অব্যাহত রাখবে নয়াদিল্লি। আর যে সব দেশ তাদের খাদ্যনিরাপত্তার চাহিদা মেটাতে ভয়াবহ সংকটের মুখে রয়েছে, তারাও ভারতের গম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।
ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারাও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয় এবং এটি সংশোধন করা যেতে পারে।
তবে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত গ্রুপ অফ সেভেন-জি৭ভুক্ত দেশগুলোর বৈঠকে কৃষিমন্ত্রীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷
জার্মান খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী সেম ওজদেমির বলেন, ‘ভারতের মতো অন্য দেশগুলো যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা বাজার বন্ধ করতে শুরু করে, তবে এই সংকট আরও তীব্রতর হয়ে দেখা দেবে।’
জি৭ হলো বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম ও উন্নত অর্থনীতির একটি সংগঠন, যার আধিপত্য রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায়। জি৭ভুক্ত দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ, তবে এটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ নয়। কারণ এর বেশির ভাগ উৎপাদিত শস্য অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়।
এদিকে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের গম রপ্তানিতে ধস নামে। খরা ও বন্যার হুমকিতে থাকা দেশগুলো নিজেদের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।
নিষেধাজ্ঞা দেয়ার এক সপ্তাহ আগে, ভারত চলতি বছর রেকর্ড ১০ মিলিয়ন টন গম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে গমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত একাই তা মেটাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের সঙ্গে মিল রেখে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোটা বিশ্ববাসীকে খাবার সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারত।
তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে নিজের অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে যায় নয়াদিল্লি, এমন মন্তব্য করেছেন সংবাদমাধ্যম বিবিসির ভারতবিষয়ক সম্পাদক ভিকাস পান্ডে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের সম্ভাব্য রায়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছেন হাজারও নারী।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং শিকাগো শহরসহ কমপক্ষে ৩৮০টি স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন হাজারও নারী।
১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের ‘রো বনাম ওয়েড’ নামের ঐতিহাসিক রায়ে আমেরিকান নারীদের গর্ভপাতে বৈধতা দেয়া হয়। সেই সঙ্গে গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয় এই রায়ে।
সমাবেশে গর্ভপাতের পক্ষে অধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, ডানপন্থি বিচারকদের প্রাধান্য থাকা উচ্চ আদালতের এখতিয়ার নেই নারীর গর্ভপাতের অধিকার হরণ করার।
স্থানীয় সময় শনিবার গর্ভপাতের অধিকার দাবিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে ওয়াশিংটন মনুমেন্টের সামনে। এরপর তারা সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করতে এগিয়ে যান। তবে পুলিশি বাধায় থেমে যায় তাদের পদযাত্রা।
উইমেন্স মার্চ-এর প্রধান নির্বাহী রাচেল কারমোনা বলেন, ‘নিজের শরীরের ওপর অধিকার আদায়ের এই সংগ্রাম তারা সাদরে গ্রহণ করেছেন। অধিকার রক্ষার এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবেন।’
এই বিক্ষোভ-সমাবেশ আয়োজনে আরও ছিল প্লানড পেরেন্টহুড, আল্ট্রাভায়োলেট ও মুভঅনসহ বিভিন্ন অধিকারবিষয়ক সংগঠন।
এ সময় ড্রাম বাজিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে তারা উত্তাল করে তোলেন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। তাদের স্লোগানের অন্যতম ছিল, ‘আমার শরীর, আমার পছন্দ।’ ব্যানারগুলোতে লেখা ছিল প্রতিবাদী নানা স্লোগান- ‘নিজের জরায়ুর প্রতি মনোযোগ দিন’, ‘গর্ভপাত ব্যক্তিগত পছন্দ, আইনি বিতর্ক নয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘নারীর শরীরের ওপর চাপিয়ে দেয়া যেকোনো ধরনের শর্ত ও আঘাতকে হটিয়ে দিতে চাই আমরা। আমরা চাই নারীর শরীর হবে সব ধরনের নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে। আমরা চাই এই ডেমোক্রেটিক সরকার আমাদের অধিকার আদায়ের পক্ষে থাকবে।’
গর্ভপাতের অধিকার বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট যদি মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের আদালতের দেয়া পর্যবেক্ষণের প্রতি মিল রেখে রায় দেয়, তবে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য-পশ্চিমের অন্তত ২৬ রাজ্যে নিষিদ্ধ হবে গর্ভপাত।
তখন নারীদের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত করাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে মুনাফালোভী চিকিৎসকের দারস্থ হতে হবে। এতে করে যেমন ওই নারী শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি গর্ভপাত করানোর অভিযোগে চিকিৎসক ও সেবিকারাও বিচারের আওতায় চলে আসবেন।
এর আগে, গত বছর ২ অক্টোবর, গর্ভপাতের ওপর বিধিনিষেধ বাড়ানোর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন হাজারও নারী।
স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গর্ভপাতের অধিকারের দাবিতে ৬৬০টি বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের বিক্ষোভটি ছিল অন্যতম।
নারীদের এই বিক্ষোভ শুরু সম্প্রতি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাতবিষয়ক পাস হওয়া একটি আইন ঘিরে। এই আইনে কারও গর্ভধারণের সময় ছয় সপ্তাহের মতো হয়ে গেলে তাদের গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়।
পরের মাস থেকে কার্যকর হয় এই আইন। এটি যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতবিষয়ক সবচেয়ে কঠিন আইন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভটি ছিল বিশাল। সুপ্রিম কোর্টের আশপাশের সড়কগুলো ছিল পূর্ণ। গর্ভপাতবিরোধী আইনের সমালোচনামূলক বিভিন্ন ব্যানার ছিল নারীদের হাতে।
অনেককে পরতে দেখা যায় ‘১৯৭৩’ লেখা টি-শার্ট, যা মনে করিয়ে দেয় ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের ‘রো বনাম ওয়েড’ নামের ঐতিহাসিক রায়ের বিষয়টি। যাতে আমেরিকান নারীদের গর্ভপাতে বৈধতা দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন:কলম্বিয়ায় মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে খুন হয়েছেন প্যারাগুয়ের শীর্ষ আইনজীবী মার্সেলো পেচি। বারু শহরে একটি পর্যটন দ্বীপের সমুদ্রসৈকতে আততায়ী তাকে গুলি করে। মাদকের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের জন্য আলোচিত ছিলেন মার্সেলো।
এই ঘটনার মাত্র ২ ঘণ্টা আগে মার্সেলোর স্ত্রী তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানিয়েছিলেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা।
মার্সেলোর স্ত্রী সাংবাদিক ক্লডিয়া আগুইলেরা বলেন, ‘গুলি করার আগে সৈকতে দুজন লোকের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। তারা কোনো হুমকি হতে পারে, এমনটা ভাবিনি।’
‘সেখানে তারা মার্সেলোর ওপর হামলা চালায়। আততায়ীদের মধ্যে একজন কোনো কথা ছাড়াই দুবার গুলি করে; একটি মুখে, অন্যটি তার পিঠে লাগে। মনে হয়, ছোট নৌকা বা জেট স্কিতে করে ওরা এসেছিল।’
ডেকামেরন হোটেলে অবস্থান করছিলেন মার্সেলো দম্পতি। হোটেল কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে জানায়, খুনিরা সমুদ্রসৈকতে এসেছিল। আমাদের একজন অতিথির ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে।
মার্সেলোর সহকর্মী অগাস্টো সালাস বলেন, ‘হামলাটি মাফিয়ারা চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সত্য উদ্ঘাটন না হওয়া পর্যন্ত আমি এটাই বিশ্বাস করব।’
কলম্বিয়া পুলিশের প্রধান এবং প্যারাগুয়ের তদন্তকারীরা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনা তদন্তে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন কলম্বিয়ার পুলিশপ্রধান জেনারেল জর্জ লুইস ভার্গাস।
মার্সেলো সংঘটিত অপরাধ, মাদক পাচার, মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নে একজন বিশেষজ্ঞ। তারকা ফুটবলার রোনালদিনহোর বিরুদ্ধে একটি মামলায় ২০২০ সালে কাজ করেছিলেন তিনি। জাল পাসপোর্ট নিয়ে প্যারাগুয়েতে আসায় সে সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাবেক ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রোনালদিনহো।
প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট মারিও আবদো বেনিতেজ এ ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত হত্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন। টুইটে তিনি লেখেন, ‘কলম্বিয়ায় প্রসিকিউটর মার্সেলো পেচির কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড প্যারাগুয়েবাসীকে শোকাহত করেছে।
‘আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনার নিন্দা জানাই। সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি দ্বিগুণ করি।’
মন্তব্য