অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
শ্রীলঙ্কাভিত্তিক ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তিনি দায়িত্ব বুঝে নেন।
দেশটির পাঁচবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) এই নেতা বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তাকে শপথ পড়ান।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেন বিক্রমাসিংহে। এরপরই জানা যায় তিনিই হচ্ছেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী।
২২৫ আসন বিশিষ্ট দেশটির পার্লামেন্টে তার দলের আসন মাত্র একটি।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন এলএলপিপি, প্রধান বিরোধী দল এসজেপির একটি অংশ এবং কয়েকটি দল সংসদে বিক্রমাসিংহের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখানোর জন্য তাদের সমর্থন দিয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে, মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।
এ অবস্থায় ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। এক পর্যায়ে রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
সরকারবিরোধী আন্দোলন গত সোমবার আরও বড় রূপ ধারণ করে। সেদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে বসা বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। এতে বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে সরকারদলীয় এমপি, পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন নয়জন। আহত হন দুই শতাধিক।
আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
আরও পড়ুন:ভারতের নেয়া গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল, দেশটি থেকে গম কেনা পশ্চিমাদেশগুলো। ভারত সেই প্রতিবাদের জবাবে জাতিসংঘে বলেছে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মত গমের বণ্টনের ক্ষেত্রে যাতে অসাম্য না হয় এবং খাদ্যের মূল্য যাতে অযৌক্তিকভাবে না বাড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে সবাইকে।
জাতিসংঘে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরণ বলেছেন, ‘কিছু সংখ্যক নিম্ন-আয়ের দেশ আজ বাড়তে থাকা ব্যয় এবং খাদ্য শস্য সংগ্রহের অসুবিধার জোড়া চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এমন কি ভারতের মতো যাদের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, তারাও খাদ্যের দাম অযৌক্তিক বৃদ্ধি দেখেছে। এটা স্পষ্ট যে মজুদ ও ফাটকা-র কারণে কৃত্রিম সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। আমরা এমনটা চলতে দিতে পারি না। এর প্রতিরোধ করতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সভাপতিত্বে ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি কল টু অ্যাকশন’ বিষয়ে বৈশ্বিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বক্তৃতা করেছিলেন ভি মুরলীধরণ।
প্রচন্ড গরমের কারণে গমের ঘাটতির কারণে এর উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারত গত শুক্রবার গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।
গমের বৈশ্বিক মূল্যের হটাৎ বৃদ্ধি ভারতের উদ্বেগের কথা জানিয়ে মুরলীধরন বলেন, ‘গমের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের (ভারতের) খাদ্য নিরাপত্তা, আমাদের প্রতিবেশী ও অন্যান্য দূর্বল অর্থনীতির দেশকেও ঝুঁকিতে ফেলছে।
‘আমাদের নিজস্ব সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য, প্রতিবেশী ও অন্যান্য দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলির চাহিদাগুলোকে সমর্থন করার জন্য আমরা ২০২২-এর ১৩ মে গম রপ্তানি সংক্রান্ত কিছু ব্যবস্থা ঘোষণা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে খাদ্য নিরাপত্তার উপর এই ধরনের প্রতিকূল প্রভাব কমিয়ে আনা হবে এবং বিশ্ব বাজারে আকস্মিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোকে রক্ষা করা হবে।’
খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে সুপরিচিত ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের কারণে আগামী কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
বিশ্বে মোট গম উৎপাদনের ৩০ শতাংশ হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ায়। আর ভুট্টা উৎপাদনের ২০ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই দুই দেশে। যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে এই দুই দেশ থেকে গম ও ভুট্টাসহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলনিয়সের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন সব তথ্য।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, ‘ইউক্রেনে রুশ হামলার কারণে আগামী কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে।’
স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কে বিশ্বসংস্থাটির মহাসচিব এমন সর্তকতার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধের ফলে দ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।’
মহাসচিব বলেন, ‘ইউক্রেন যদি যুদ্ধ শুরুর আগের মাত্রায় রপ্তানি আবারও শুরু করতে না পারে, তা হলে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে; আর সেই দুর্ভিক্ষ কয়েক বছর ধরে চলবে।’
এই যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বন্দর দিয়ে সংঘাতের আগে বিপুল পরিমাণ সূর্যমুখীর তেল, ভুট্টা ও গমের মতো খাদ্যশস্য রপ্তানি হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী এসব নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং এর বিকল্প পণ্যগুলোর দামও বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই বছর বিশ্বে খাদ্যের দাম ৩০ শতাংশের বেশী বেড়েছে।
গুতেরেস বলেন, এই সংঘাত কমপক্ষে এক কোটি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। এর ফলে অপুষ্টি, গণক্ষুধা এবং দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিও দেখা দিতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যদি এখন থেকে একযোগে কাজ শুরু করতে পারি, তবে পৃথিবীতে খাদ্যের সংকট দেখা দেবে না। এ সমস্যা যদি আমরা শিগগিরই সমাধানে ব্যর্থ হই তবে সামনের মাসগুলোতেই আমরা খাদ্য ঘাটতির মুখোমুখি হতে পারি।’
আরও পড়ুন:সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলি বিমান বাহিনী দেশটির অভ্যন্তরে প্রায়ই হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, সিরিয়ার অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে চলে এসেছে ইরান। সিরিয়ার সেনারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বরাবরই ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে।
এবার তাসনিম নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলা প্রতিহত করতে সিরিয়ায় থাকা রুশ সেনারা এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের পর এস-৩০০ দিয়ে এটিই ছিল ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার সরাসরি হস্তক্ষেপ।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর এফ-১৬এস যুদ্ধবিমান মাসিয়াফ ও বানিয়াস বন্দরের সিরিয়ার বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের দিকে ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। একটি ইসরায়েলি ড্রোনও এ সময় ভূপাতিত করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সিরিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি। ৬টি বিমান ইসরায়েল সীমান্তের ভেতর থেকেই সিরিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
রাশিয়া বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ৩ জন সিরীয় সেনা ও ২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। হামলায় গবেষণাকেন্দ্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন অনেকটাই কমে এসেছে তখন ইউরোপে পাওয়া গেছে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ার খবর। আক্রান্তের ঘটনাগুলোতে নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এবার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের এক বাসিন্দা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার দেশটির সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) ও ম্যাসাচুসেটসের জনস্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি কানাডা ভ্রমণে গিয়েছিলেন। তাকে এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা স্থিতিশীল এবং তিনি ভালো অবস্থায় আছেন।
কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা কারা এসেছেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বোর্ড বলছে, সাধারণ মানুষের কোনো ঝুঁকি নেই। সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী প্রথম দেখা গেছে। মাদ্রিদে এরই মধ্যে ২৩ জনের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করে। আক্রান্তদের মধ্যে ৮ জন সমকামী পুরুষ রয়েছে। মাদ্রিদের আঞ্চলিক স্বাস্থ্য বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মাদ্রিদে ভাইরাসটি ফ্লুইড কনটাক্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ইউরোপে শুধু স্পেনই নয়, লিসবন এবং আশেপাশের এলাকায় পর্তুগিজ যুবকদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার ২০ টি সন্দেহভাজন ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।
যুক্তরাজ্যেও মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ৭ ব্যক্তি সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪ জন সমকামী পুরুষ। দেশটিতে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি নাইজেরিয়ায় গিয়েছিলেন, ধারণা করা হচ্ছে সেখানেই তিনি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হন।
একসময় গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যেত। এই ভাইরাসটি ১৯৮০ সালে পুরোপুরি নির্মূল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে চিকেন পক্স, এটিকে সাধারণত শৈশবের রোগ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এতে আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা এবং শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। চিকেন পক্স পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। কয়েক দিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়।
বর্তমানে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে গুটি বসন্ত ও চিকেন পক্স উভয়েরই মিল রয়েছে।
মাঙ্কিপক্সের দুটি রূপ রয়েছে। একটি পশ্চিম আফ্রিকান স্ট্রেন এবং অপরটি মধ্য আফ্রিকান স্ট্রেন। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঙ্কিপক্স হালকা ওয়েস্ট আফ্রিকান স্ট্রেনের।
এর আগে গত বছরও যুক্তরাষ্ট্রে দুজন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়, এই দুজনই সে সময় নাইজেরিয়া ঘুরতে গিয়েছিলেন।
তবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া কঠিন। এর সংক্রমণ সাধারণত ফ্লুইড ট্রান্সফার, ঘা, দূষিত পোশাক বা দীর্ঘস্থায়ী মুখোমুখি যোগাযোগ কিংবা সহাবস্থানের মাধ্যমে ঘটে, যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। জ্বালানির জন্য আরও দুদিন অপেক্ষা করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা। তারপরও পেট্রোল পাম্পগুলোর সামনে দেখা গেছে মানুষের দীর্ঘ লাইন।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর বোরেল্লা এলাকার বাসিন্দা এম জিফরি। মোটরসাইকেল নিয়ে জ্বালানির জন্য অপেক্ষা করছিলেন একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে। সেখানে শতাধিক মোটোরসাইকেলচালক জিফরির মতো অপেক্ষায় আছেন এক দিনের বেশি সময় ধরে।
দুই সন্তানের বাবা ৩৫ বছরের জিফরির রুটিরুজির মাধ্যম এই মোটরসাইকেল। উবারে বাইক চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করেন তিনি। জ্বালানি সংকটে তার পরিবারে হাঁড়ি চলার পথও বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
ব্রিটিশদের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর জিফরির মতো লাখো শ্রীলঙ্কান এখন নিত্যপণ্যের চরম সংকটে ধুঁকছে। পণ্যের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোটা তাদের নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জিফরি বলেন, ‘পেট্রোল নিতে পাম্পে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছি কয়েক মাস। এখন অবস্থা আরও খারাপ। এক দিনের বেশি হয়ে গেছে, এখনও পেট্রোল পাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। আমি ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত।’
পেট্রোলের জন্য লাইনে দাঁড়ানো জিফরি এক দিনের বেশি সময় কিছু খাননি। কারণ, একবার লাইন থেকে সরে গেলে আবার তাকে দাঁড়াতে হবে সবার পেছনে।
‘অন্য কেউ আমার জায়গা নেবে এবং তারপর আমাকে আবার নতুন করে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে।’
রান্নার গ্যাস, খাবার, ওষুধ এবং জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বৈদেশিক মুদ্রা নেই শ্রীলঙ্কা সরকারের হাতে।
আমদানিনির্ভর দ্বীপরাষ্ট্রটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী পর্যাপ্ত পেট্রোল মজুত না থাকার বিষয়টি আগেই সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘পাম্পের লাইনে আপনারা দাঁড়াবেন না। কারণ সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়েছে।’
পার্লামেন্টে বুধবার মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা বলেন, ‘লাইনে দাঁড়াবেন না। আগামী দুই দিন আমরা সরবরাহ করতে পারব না। আগামী দুই দিন আপনারা ধৈর্য ধরুন।’
এই ইস্যুতে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও। পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে রনিল জানান, আমদানির জন্য এক মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রাও নেই সরকারের কাছে।
‘জ্বালানি আমদানির জন্য এই মুহূর্তেই ৫৩০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংক ১৬০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে কীভাবে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা যায় তা ভাবছে সরকার।’
জ্বালানির এই তীব্র সংকটের মধ্যে বুধবার আরও খারাপ সংবাদ দিয়েছে দেশটির প্রধান এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিট্রো। তারা জানিয়েছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্টক আনলোড করতে দেরি হওয়ায় তা বিতরণে প্রভাব ফেলেছে। এ অবস্থায় জনসাধারণকে এলপিজির লাইনেও না দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন লঙ্কান বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী উইজেসেকেরা ।
দুই সন্তানের মা এস ইয়োগা লেচ্ছামি পশ্চিমের মিরিহানা অঞ্চলের বাসিন্দা। তিনি জানান, প্রন ওয়াডে (একটি রাস্তার খাবার) কার্ট নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। তবে এলপিজির সংকটের কারণে ফিরে আসতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকজন গ্রাহককে পরিবেশন করার পর রান্নার গ্যাস ফুরিয়ে গেল। গ্যাসের বা কেরোসিন তেলের খোঁজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার স্বামী ঘুরে বেড়ালেও খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে।
‘সবকিছুই এখন দামি। দিন দিন চিংড়ির দাম বাড়ছে। কীভাবে সন্তানদের খাওয়াব, ব্যবসা চালাব? আমি আর কী করব জানি না।’
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সরকারের ওপর গত কয়েক মাস ধরে ক্ষুব্ধ দেশটির সাধারণ নাগরিকরা। চলছে বিক্ষোভ। তা দমাতে দুই দফায় জারি হয়েছে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা। এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় দেয়া হয় কারফিউ। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে।
সবশেষ জ্বালানি ও রান্নার গ্যাসের সংকট জনগণের ক্ষোভে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বলে খবর দিচ্ছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন শহরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ শ্রীলঙ্কানরা।
প্রধান বিরোধী দল সামগী জনা বালাওয়েগায়া পার্টির সংসদ সদস্য এরান বিক্রমরত্নে বলছেন, ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা; একটি গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য সরকার।
‘আমাদের এখনও তা নেই। নতুন সরকার এখনও গঠন হয়নি। আমরা রাজাপাকসের বাইরে সরকার গঠন করতে পারব না।
‘মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা হয়নি। গত আড়াই বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এই সরকারের রদবদল দরকার। শ্রীলঙ্কায় হৈচৈ হচ্ছে, রাজাপাকসেদের যেতে হবে।’
দুদিন আগে (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে সতর্ক করেছিলেন, আগামী দুই মাস শ্রীলঙ্কার জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর ওই আহ্বানের বিষয়ে লেচ্ছামি জানান, তার এবং তার পরিবারের আর কত ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুণা কুলাতুঙ্গা অবশ্য আলো দেখছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি ও বিরোধী নেতা হার্শা ডি সিলভা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। এ সপ্তাহের শেষে তারা ঋণ পুনর্গঠনে একটি আইনি ও আর্থিক আলোচনা দল নিয়োগে কাজ করবেন।
‘ঋণ পুনর্গঠনের পাশাপাশি পর্যটন থেকে প্রবাহ এবং প্রবাসী আয়ও ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই ইতিবাচক পদক্ষেপে অর্থনীতির বেশির ভাগ খাত স্বল্প মেয়াদে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু যতক্ষণ না বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক সংস্কার আসবে, দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার অনিশ্চিতই থেকে যাবে।’
আরও পড়ুন:অর্থনীতির দিক বিবেচনায় বর্তমান শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের তুলনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। টুইটে রাহুল দাবি করেছেন, বেকারত্ব, জ্বালানির দাম এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ক্ষেত্রে দুই দেশের চিত্র একই রকম।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার তিনটি করে মোট ছয়টি গ্রাফ শেয়ার করেছেন রাহুল গান্ধী। লিখেছেন, ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করে বাস্তব ঘটনাগুলোর পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। ভারতের অবস্থা অনেকটা শ্রীলঙ্কার মতো।’
শেয়ার করা একটি গ্রাফে দেখা গেছে, ২০১৭ থেকে দুই দেশেই বেকারত্ব বেড়েছে। ২০২০ সালে তা অনেকটাই উর্দ্ধমুখী। ওই বছর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন দিয়েছিল মোদি সরকার। পরের বছর লকডাউনের শিথিলতায় তা কিছুটা নিম্নমুখী হয়।
গ্রাফের দ্বিতীয় জোড়া ভারত ও শ্রীলঙ্কায় পেট্রলের দামের তুলনা করেন কংগ্রেস নেতা। ২০১৭ সাল থেকে বাড়তে শুরু করে। ২০২১ সালে তা আরও গতি পায়।
ভারতে মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রতিদিন গড়ছে নতুন রেকর্ড। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এপ্রিলের পাইকারি মূল্যস্ফীতি ১৫.০৮-এ পৌঁছেছে; যা প্রায় এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গ্রাফের তৃতীয় সেটটি দেখা গেছে, দুই দেশে ২০২০-২১ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চরমে পৌঁছেছে।
গ্রাফগুলো তৈরি করা হয়েছে সশস্ত্র সংঘাতের অবস্থান, ইভেন্ট ডেটা প্রকল্প, লোকসভার আনস্টার্ড প্রশ্ন, সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই), পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেল, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ শ্রীলঙ্কা এবং শ্রীলঙ্কা পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-এর পরিসংখ্যান থেকে৷
তীব্র খাদ্য এবং বিদ্যুতের ঘাটতির সঙ্গে লড়াছে শ্রীলঙ্কা। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে কোভিডের সময় সার্বিক লকডাউনের কারণে পর্যটন খাত থেকে আয় শূন্যের কোটায় পৌঁছে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার বিপুল ঘাটতি দেখা দিয়েছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে।
এ ছাড়া মহামারী, ক্রমবর্ধমান তেলের দাম এবং জনমোহিনী ট্যাক্স ছাড়ের কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ঘাটতি দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় সরবরাহে।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলি আগ্রাসনে পশ্চিম তীরে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাসাফের ইয়াত্তায় অন্তত ১২০০ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেল আবিব, তা যুদ্ধাপরাধের সামিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এ বিষয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত।
এক যৌথ বিবৃতিতে সোমবার জাতিসংঘের তিন বিশেষজ্ঞ জানান, মাসাফের ইয়াত্তা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেয়ার নীতি বহাল রেখেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত নিপীড়নের চর্চাকে স্থায়ী করতে ইসরায়েলি বিচার ব্যবস্থাও সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
জোরপূর্বক উচ্ছেদের অনুমতি দেয়ার জন্য আদালতের সিদ্ধান্তটি ‘আরও বেশি উদ্বেগজনক’। কারণ অঞ্চলটি ইসরায়েলি সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নেয়া হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কীভাবে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের ওপর অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে? ইসরায়েল এলাকাটি খালি করার জন্য কোনো ‘অবশ্যকীয় সামরিক প্রয়োজনীয়তা’ দেখায়নি।
ইসরায়েলি হাইকোর্ট অফ জাস্টিস চলতি মাসের শুরুতে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত অঞ্চলটি অধিগ্রহণের পক্ষে রায় দেয়। এতে অন্তত ৫০০ শিশুসহ ১২০০ ফিলিস্তিনি আশ্রয়হীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
গত ৪ মে ইসরায়েলের হাইকোর্ট উচ্ছেদ ঠেকাতে মাসাফের ইয়াত্তার বাসিন্দাদের আপিল খারিজ করে দেয়। এই রায়ে কার্যকরভাবে ফিলিস্তিনিদের দুই দশকের আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হেব্রনের দক্ষিণের এই অঞ্চলকে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘোষণা করেছে। নাম দিয়েছে-ফায়ারিং জোন ৯১৮।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যে খ্রিবেত আল ফাখিয়েত এবং আল-মারকেজের মাসাফের ইয়াত্তা সম্প্রদায়ের কাঠামো ভেঙে দিয়েছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ বলেন, ‘১৯০৭ হেগ রেজ্যুলেশন এবং চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।
‘তার বদলে অধিকৃত অঞ্চলে ইহুদি বসতি স্থাপনে জোর দিচ্ছে ইসরায়েল। সেখানে বাস করা ফিলিস্তিনের তাড়িয়ে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘনের চেষ্টা চলছে। এটা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে।’
জাতিসংঘের হিসাবে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত আবাসিক, শিক্ষা, ব্যবসায়িক এবং চিকিৎসা অবকাঠামোসহ অন্তত ৮ হাজার ৪১৩টি ফিলিস্তিনি ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। এসবের কারণে ১২ হাজারের বেশি বাসিন্দা বাস্তচ্যুত হয়েছেন; পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৪ জন ফিলিস্তিনি।
এ ছাড়া ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৩০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। পাল্টা হামলায় প্রাণ গেছে ২৬৮ ইসরায়েলির।
মন্তব্য