তাজমহলের বন্ধ ২২টি ঘরের দরজা খোলা নিয়ে এক বিজেপি নেতার দাখিল করা আবেদন পত্রপাঠ খারিজ করে দিলো এলাহাবাদ হাইকোর্ট। আর শুধু আবেদন খারিজ করাই নয়, আবেদনকারীর কঠোর সমালোচনা করলেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার আবেদনের শুনানির সময় আদালত বলেছে, জনস্বার্থবাহী আবেদন বা পিআইএল ব্যবস্থাকে উপহাসের বিষয় করে তুলবেন না।
তাজমহলের ২২টি তালাবদ্ধ কক্ষের পিছনে ‘সত্যের সন্ধান’ করার জন্য পিটিশনটি গত সপ্তাহে হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চের সামনে দাখিল করা হয়েছিল বিজেপির অযোধ্যা ইউনিটের মিডিয়া ইনচার্জ রজনীশ সিংয়ের পক্ষে।
পিটিশনে কিছু ইতিহাসবিদ ও হিন্দু গোষ্ঠীর দাবি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সমাধিটি আসলে একটি পুরানো শিব মন্দির। পিটিশনে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অভ ইন্ডিয়াকে (এএসআই) তালাবদ্ধ কক্ষগুলো পরীক্ষা করার জন্য এবং জনসাধারণের কাছে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
রজনীশ সিং বলেন, দাবি তাজমহলকে মন্দির বানানোর নয়, সামাজিক সম্প্রীতির স্বার্থে বিষয়টির সত্যতা প্রকাশ করার। তিনি বলেন, এই ধরনের বিতর্কের অবসানের একমাত্র উপায় হলো বন্ধ দরজা খুলে পরীক্ষা করা।
বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু হওয়ার পর বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় এবং সুভাষ বিদ্যার্থী আবেদনকারীকে প্রশ্ন করেছিলেন তার আবেদন কী?
আবেদনকারী বলেন, তিনি চান আদালত আদেশের একটি রিট জারি করুক। তখন আদালত বলে, ‘আপনি আমাদের কাছ থেকে কী রায় চান? তাজমহল কে নির্মাণ করেন, তার সন্ধান? ঐতিহাসিক তথ্যে যাবেন না... অধিকার লঙ্ঘিত হলেই নিম্ন আদালতের প্রতি উচ্চ আদালতের হুকুমনামা জারি করা যেতে পারে। আপনার কোন অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে ?’
আবেদনকারী বলেন, তিনি ইস্যুটির একেবারে গোড়ায় যাওয়ার জন্য একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করার জন্য বলছেন এবং তাজমহল সম্পর্কে ‘সত্য’ প্রকাশ হওয়া দরকার বলে ২২টি কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবি করছেন। নাগরিকদের জানতে হবে কেন স্মৃতিস্তম্ভের একাধিক কক্ষ ‘নিরাপত্তার কারণে’ তালাবদ্ধ করা হয়েছে।
আদালত কড়া জবাব দিয়ে বলে, ‘আপনি কার কাছ থেকে তথ্য চাইছেন? আপনি যদি সন্তুষ্ট না হন যে নিরাপত্তার কারণে কক্ষগুলি বন্ধ করা হয়েছে, তাহলে সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে আইনের প্রতিকার ব্যবহার করুন। আগে কিছু গবেষণা করুন– এমএ, পিএইচডি করুন, কোথাও নিজেকে নথিভুক্ত করুন। পিআইএল ব্যবহার করে একটা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করবেন না।’
একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে একে হিন্দুদের মন্দির বলে আসছে। কেউ একে শিবমন্দির বলে, আবার কেউ ‘তেজো মহালয়া’ বলে। তাজমহলের যে ২২টি কক্ষের জন্য পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল, তা কয়েক দশক ধরে বন্ধ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকরা বলছেন, তাজমহলের মূল সমাধি ও জুঁই তলার নিচে ২২টি কক্ষ রয়েছে, যেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, মুঘল আমল থেকে এসব কক্ষ বন্ধ রয়েছে।
শেষবার এই কক্ষগুলি ১৯৩৪ সালে খোলা হয়েছিল। তারপর এখানে শুধু পরিদর্শন করা হয়। এরপর থেকে সেগুলো বন্ধ রয়েছে। তাজমহলে, জুঁই তলায় যমুনার তীরে দুটি ধাপ রয়েছে। ওপরে লোহার জাল বসিয়ে এসব সিঁড়ি বন্ধ করা হয়েছে। কথিত আছে, ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে এখানে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও পরে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তাজমহলে শিবমন্দির নিয়ে বহুদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। আগে তেজোময় বা তেজোমহালয় নামে একটি মহাদেবের মন্দির ছিল। অনেক ঐতিহাসিক দাবি করেন, মোগল সম্রাট শাহজাহান মন্দির ভেঙে তার জায়গায় তাজমহল তৈরি করেছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে, ইতিহাসবিদ পুরুষোত্তম নাগেশ ওক-এর বই ‘দ্য ট্রু স্টোরি অব তাজ’ বের হওয়ার পর থেকে তাজমহল বা তেজো মহালয়া বিতর্ক শুরু হয়। ওক তার বইতে তাজমহলের আগে সেখানে একটি শিব মন্দির থাকা নিয়ে অনেক দাবি করেছেন। ওই বইতে রাজা জয় সিংয়ের কথা বলা হয়েছে। ওই সময় তাজমহলে গণেশ, পদ্মফুল ও সাপের আকৃতির অনেক মূর্তি দেখা গেছে বলে দাবি করা হয়।
পুরুষোত্তম নাগেশ ওক ভারতের একজন সংশোধনবাদী ইতিহাসবিদ ছিলেন। তার প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল খ্রিস্টান এবং ইসলাম উভয়ই হিন্দু ধর্ম থেকে উদ্ভূত। ভ্যাটিকান সিটি, কাবা, ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে এবং তাজমহল একসময় শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হিন্দু মন্দির ছিল এবং পোপ পদটি ছিল মূলত একটি বৈদিক যাজকত্ব।
এলাহাবাদ হাইকোর্টে দাখিল করা পিটিশনের আবেদনকারী রজনীশ সিংয়ের আইনজীবী রুদ্র বিক্রম সিংয়েরও তাজমহল নিয়ে ভিন্ন যুক্তি রয়েছে। তিনি বলেছেন, ১৬০০ সালে ভারতে আসা লোকেরা তাদের ভ্রমণের বর্ণনায় তাজমহলের জায়গায় মানসিংহের প্রাসাদের উল্লেখ করেছিলেন।
এরপর ১৬৫৩ সালে তাজমহল নির্মিত হয়। এরই মধ্যে একটি চিঠিও বার বার আলোচনায় উঠে এসেছে। ১৬৫১ সালে লেখা সেই চিঠিতে আওরঙ্গজেব লেখেন যে ‘আম্মির সমাধি’ মেরামত করা দরকার।
তাজমহল নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে জয়পুরের প্রাক্তন রাজপরিবারের সদস্য এবং রাজসমন্দের বিজেপি সাংসদ দিয়া কুমারী একটি চিত্তাকর্ষক দাবি করেছেন। দিয়া কুমারী বলেছেন, তাজমহল জয়পুর রাজপরিবারের সম্পত্তি এবং তৎকালীন মুঘল শাসক শাহজাহান সেটি অধিগ্রহণ করেছিলেন। সাংসদ বলেন, সে সময় দেশে মুঘলদের শাসন ছিল এবং এ নিয়ে কোনো আপিল শুনানি হয়নি।
সাংসদ দিয়া কুমারী তাজমহলের বন্ধ কক্ষ খোলার জন্য দায়ের করা আবেদনে খুশি প্রকাশ করে বলেন, ‘এমনটা করা উচিত, যাতে জানা যায় সেখানে কী ছিল। তাজমহল সম্পর্কিত সমস্ত নথি জয়পুরের প্রাক্তন রাজপরিবারের পুঁথি খানায় সুরক্ষিত রয়েছে এবং যদি কোনো আদালত এই নথিগুলি সরবরাহ করতে বলে তবে আমরা সেগুলি উপলব্ধ করব। আমরা এর জন্য প্রস্তুত।’
কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বিতর্কের প্রাথমিক পর্বেই জল ঢেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হ্যাটট্রিক তথা টানা তৃতীয় জয়ের সম্ভাবনার মধ্যে শুক্রবার দেশটিতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের ২১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে আজ ভোট হচ্ছে।
সাত ধাপের এ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সব আসনে ভোট হচ্ছে তামিলনাড়ু (৩৯), রাজস্থান (১২), উত্তর প্রদেশ (৮), উত্তরাখণ্ড (৫), অরুণাচল প্রদেশ (২), মেঘালয় (২), আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (১), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), পুদুচেরি (১), সিকিম (১) ও লাক্ষাদ্বীপে (১)। এর বাইরে আসাম ও মহারাষ্ট্রের পাঁচটি করে আসনে, বিহারের চারটি, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি, মণিপুরের দুটি এবং ত্রিপুরা, জম্মু-কাশ্মীর ও ছত্রিশগড়ের একটি করে আসনে ভোট হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই চার রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমে আজ ভোট।
ভারতে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের জন্য বড় পরীক্ষার এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে ৩৭০টিতে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স তথা এনডিএ ৪০০টি আসনে জয়ী হোক, এমনটি চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লোকসভায় ৩৫৩টি আসন পায় এনডিএ, যেখানে বিজেপির একক আসনের সংখ্যা ৩০৩টি।
লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোট ১ জুন।
আরও পড়ুন:ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। লোকসভার ৫৪৩টি আসনে সাত দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে ৪২টি আসন। শুরুর দিনে এই রাজ্যে তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। আসন তিনটি হলো-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার।
বাকি ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একইসঙ্গে এদিন ভোটগ্রহণ হবে অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভার ৬০টি ও সিকিমের ৩২টি আসনে।
ভারতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো হলো- পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, সিকিম, রাজস্থান, পদুচেরি, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০৩, কংগ্রেস ৫২, সমাজবাদী পার্টি ৫, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ ও টিডিপি ২টি আসনে জয় পেয়েছিল।
গত নির্বাচনে গোটা দেশে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির ৪০ জন, তৃণমূলের ৯ জন, কংগ্রেসের ৬ জন, ওডিশার বিজেডির ৫ জন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৮ জন।
এ বছর ভারতে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন (১৮-১৯ বছর বয়সী) এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার।
ঝড়ের সময় বজ্রপাত ও প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় সীমান্তবর্তী দুই দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে কমপক্ষে ৮৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে আল জাজিরা।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানজুড়ে ঝড়ে কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ প্রাণহানি হয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায়, যেখানে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ভূমিধসে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উপড়ে যায় গাছ।
দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিতে ধসে যায় বিপুলসংখ্যক বাড়িঘর।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র জানান, অঞ্চলটিতে বৃষ্টিজনিত কারণে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও বৃষ্টি হতে পারে।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও ব্যাপক বৃষ্টি হয়। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে বন্যায় সাতজন প্রাণ হারান।
বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ার এবং বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কুয়েটার সড়ক।
এমন বাস্তবতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন।
আফগানিস্তানে বন্যা
দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, মৌসুমি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ৩৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দেশটিতে আহত হয়েছেন ২৭ জন।
তিনি জানান, বন্যায় ছয় শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ২০০ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে।
ওই মুখপাত্র জানান, বন্যায় বিপুল কৃষিজমির পাশাপাশি ৮৫ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন:ঈদের দিন সকালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে একটি স্কুলবাস উল্টে ৬ শিশু নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০ জন।
মহেন্দ্রগড় জেলার কানিনা শহরের কানিনা-দাদরি সড়কে বৃহস্পতিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বাসটি জিএল পাবলিক স্কুল নামের স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের ছিল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ঈদের দিন সরকারি ছুটি থাকা সত্ত্বেও স্কুলটি খোলা ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতকের খবরে বলা হয়, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো শিশু ছিল। দুর্ঘটনার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ৬ জনকে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৫ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি একজনকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণ পর তারও মৃত্যু হয়।
বাসচালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায় পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগের পর চালক মদ্যপ ছিলেন কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১২ আহত শিক্ষার্থীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রোহতকের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মহেন্দ্রগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ধারণা, বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা মারে। তিনি মদ্যপ থাকার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মহেন্দ্রগড় জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা আরশ ভার্মা বলেছেন, ‘বাসচালকের (মদ্যপ থাকার) বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার একটি মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে।’
সরকারি নথি থেকে এনডিটিভি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পরে তা আর নবায়ন করা হয়নি।
দুর্ঘটনার খবরে শোক প্রকাশ করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সাইনি।
এক এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কানিনায় স্কুলবাস দুর্ঘটনায় আমি শোকাহত। যারা নিষ্পাপ শিশুদের হারাল, ওইসব পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
ছুটির দিনেও কেন স্কুলটি খোলা ছিল, তার তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী সীমা ত্রিখা।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে মাজারে যাওয়ার পথে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রাক খাদে পড়ে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে বেলুচিস্তানের হাব জেলায় শাহ নুরানী মাজারে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জিও নিউজ জাানিয়েছে।
বেলুচিস্তান সরকারের একজন মুখপাত্র জি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
সিন্ধুর ঠাট্টা থেকে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী ট্রাকটি খুজদার জেলার শাহ নুরানি মাজারে যাওয়ার সময় হাব জেলায় খাদে পড়ে যায়।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি জেলা প্রশাসনকে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মিয়ানমারে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার প্রায় সাত বছর পর এখন তাদেরই সাহায্য নিচ্ছে দেশটির সামরিক জান্তা।
রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিবিসি সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে সাম্প্রতিক সপ্তাহে যুদ্ধরত জান্তার পক্ষে লড়াই করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে বিবিসি।
৩১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ভীত ছিলাম, কিন্তু আমাকে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।’
রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছের একটি শিবিরে থাকেন তিনি। এক দশক ধরে বাস্তুচ্যুত অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা এ ধরনের শিবিরে থাকছেন।
গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একদিন রাতে মোহাম্মদের কাছে আসেন এক শিবিরনেতা। তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে জানান ওই নেতা।
মোহাম্মকে তখন বলা হয়েছিল, এটা সেনাবাহিনীর আদেশ। আদেশ পালন না করলে তার পরিবারের ক্ষতি করা হবে।
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, সেনা কর্মকর্তারা শিবিরগুলোর (ক্যাম্প) আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। তারা তরুণ রোহিঙ্গাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীতে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
২০১২ সালে রাখাইনের বসতি থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়। এরপর অনেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন শিবিরে থাকতে শুরু করেন। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও নিধন অভিযান শুরু করলে ওই সময় সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
ওই সময় মিয়ানমারে হাজারো রোহিঙ্গা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
সম্প্রতি আরাকান আর্মি নামক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে রাখাইনে বিশাল এলাকা হারানোর পর একই সেনাবাহিনী এখন রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করছে।
দেশটির অন্য অংশে বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জান্তাও বিপুল সংখ্যক সৈন্য হারিয়েছে। তারা নিহত ও আহত হয়েছে এবং অনেক আত্মসমর্পণ করেছে।
আরও পড়ুন:দাবদাহ মোকাবিলায় ভারতের মুম্বাইয়ের নগর কর্তৃপক্ষ শহরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীদের জন্য কোল্ড রুমের ব্যবস্থা করেছে এবং সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ হিট স্ট্রোকের ওষুধ মজুত রেখেছে।
তীব্র দাবদাহ ও গরম বাড়তে পারে এমন শঙ্কা থেকে কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে শুক্রবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়।
কোল্ড রুম এমন একটি কক্ষ যেটি কম তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী শহর মুম্বাইয়ের গভর্নিং সিভিক বডি বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বলছে, তারা শহরের ১০৩টি ওষুধের দোকান শীতাতপনিয়ন্ত্রীত করা হয়েছে।
সিভিক বডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হিট স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৪টি বড় হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের কোল্ড রুমে দুটি করে শয্যা থাকবে। হিট স্ট্রোক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য মেডিক্যাল অফিসার এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এপ্রিল এবং মে থেকে তুলনামূলকভাবে গরম বাড়তে থাকে। তাই এ সময় হিট স্ট্রোকের প্রবণতাও বেড়ে যায়।
নাগরিক সংস্থাটি হিট স্ট্রোক এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য