ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় সময়ের সঙ্গে উত্তাপ বেড়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পরও বিক্ষোভে উত্তাল পুরো দেশ। চলমান বিক্ষোভে সোমবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাদের। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে দেখামাত্র গুলি করারও নির্দেশ পেয়েছে তারা।
প্রেসিডেন্টের দেয়া বিশেষ ক্ষমতা ইতোমধ্যে প্রয়োগ শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের গুলিতে সোমবার থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানায়, সরকারি সম্পত্তি লুটপাট বা জীবনহানি ঘটালে যে কাউকে গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। তবে অবস্থাদৃষ্টে ধারণা করা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি ক্ষমতা প্রয়োগেও বিক্ষোভকারীরা পিছু হটছে না। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগ দাবিতে তারা অনঢ়।
গত কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে, মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।
এ অবস্থায় ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। এক পর্যায়ে রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
বিক্ষোভ দমাতে এপ্রিলের শুরুতে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপ বিক্ষোভ দমাতে ব্যর্থ হয়। উল্টো মাত্রা আরও তীব্র হয়।
বিক্ষুব্ধরা গত শুক্রবার পার্লামেন্ট ভবনে হামলার চেষ্টা করে। অনেক মন্ত্রী-এমপির বাড়ির সামনেও অবস্থান নিতে দেখা গেছে প্রতিবাদকারীদের।
সরকারি দলের সমর্থকরা এদিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে অন্তত ৭০ জন আহত হয়। এদিন রাতে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা জারি হয় শ্রীলঙ্কাজুড়ে।
এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সোমবার পদত্যাগ করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। রাজধানী কলম্বোর তিন অংশে জারি হয় কারফিউ।
এই পর্যায়ে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হন এক এমপি। অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপির বাড়ি ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। কারফিউ অমান্য করে মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে আবারও প্রতিবাদ শুরু করেন বিক্ষুব্ধরা।
শুরুর দিকে বিক্ষোভ অবশ্য শান্তিপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে তারা রাজাপাকসে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিল।
পুলিশের মুখপাত্র নিহাল থালডুয়া বলেন, কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হলেও মঙ্গলবারের পরিস্থিতি অনেকাংশে শান্ত হয়েছিল। সোমবার সংঘর্ষে অন্তত ২০০ জন আহত হন।
কলম্বো থেকে আল জাজিরার মিনেল ফার্নান্দেজ মঙ্গলবার বলেন, ‘রাজধানী শহরে বড় ধরনের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। রাস্তায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একাধিক তল্লাশি চৌকিতে আমাদের থামতে হয়েছে।’
গোতাবায়া সরকারের সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেনাবাহিনী আটকদের পুলিশে হস্তান্তরের আগে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে রাখতে পারবে। যে কোনো সময় কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাশি চালাতে পারবে।
মঙ্গলবার সরকারের এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার যে কোনো ব্যক্তিকে নিকটস্থ থানায় নেয়া হবে। সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এটি করার জন্য ২৪ ঘণ্টা বেঁধে দেয়া হয়েছে।’
নিরাপত্তা বাহিনী ক্ষমতার অপব্যবহার করলে তা দেখবে কে?
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া বিশেষ ক্ষমতা অপপ্রয়োগের আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক। কলম্বোভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভস থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের ভাবানি ফনসেকা বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে যেখানে জরুরি অবস্থা ও কারফিউ দুই-ই কার্যকর, সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রশ্ন হলো, অপব্যবহার যে হবে না তা নিশ্চিত করবে কে?’
টানেলের শেষে নেই আলো
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর এই ‘বিজয়’ উদযাপনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও দ্রুতই পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বিক্ষোভকারীরা কলম্বোর কেন্দ্রস্থলে রাজাপাকসের বাসভবন টেম্পল ট্রিসের গেটগুলো ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। মঙ্গলবার সকালে সেখানে ভাঙা কাঁচ এবং ফেলে যাওয়া জুতা রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
করোনা মহামারির জন্য ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনায় দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান মাধ্যম পর্যটন খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের পাশাপাশি এশিয়ান জায়ান্ট ভারত ও চীনের সহায়তা চাইছে শ্রীলঙ্কা।
এমপিদের আটকাতে বিমানবন্দরে বিক্ষুব্ধদের অবস্থান
গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর শ্রীলঙ্কার সংসদ সদস্যদের দেশত্যাগ ঠেকাতে বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
শ্রীলঙ্কাভিত্তিক ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদল বিক্ষুব্ধ তরুণ কাতুনায়েকে মুক্তবাণিজ্য জোনে (এফটিজেড) অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অবস্থান নেয়া সড়কটি দিয়েই বন্দরনায়েক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে প্রবেশ করতে হয়।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর যাতে সংসদ সদস্যরা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য তারা বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।
হেলিকপ্টারে ‘পালিয়েছেন’ মাহিন্দা রাজাপাকসে
শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়া মাহিন্দা রাজাপাকসের খোঁজ মিলছে না। সপরিবারের তিনি কোথাও পালিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
সোমবার পদত্যাগ করেন মাহিন্দা, এরপর থেকে রাজধানী কলম্বোতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনেই ছিলেন তিনি। তবে মঙ্গলবার ভোরে সূর্য ওঠার আগেই সেনাবাহিনী তাকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ত্রিনকোমালিতে একটি নৌ ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন মাহিন্দা ও তার পরিবারের সদস্যরা। হেলিকপ্টারে করে সেখানে পৌঁছেছেন তারা।
কলম্বো থেকে ২৭০ কিলোমিটার দূরের এ নৌ ঘাঁটিতে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা যখন আশ্রয় নেন, তখন ঘাঁটিটির সামনে চলছিল বিক্ষোভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পদ ছাড়ছেন না প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া
সংকটের মুখে পড়ে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের জায়গায় নতুন একজনকে নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
ফিন্যানশিয়াল টাইমস মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
নিজে পদে থেকেই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। এর মাধ্যমে তার পদ ছাড়া নিয়ে যে দাবি উঠেছে, তাতে তার সাড়া না দেয়ার স্পষ্ট বার্তা এলো।
সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য, এমন ব্যক্তিই শ্রীলকে নতুন মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছেন গোতাবায়া রাজপাকসে।
আরও পড়ুন:‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হারনাই জেলায় শুক্রবার শ্রমিক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
দেশটির কোয়েটা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা শাহজাদ জাহরি এএফপিকে জানান, হারনাই জেলায় এ বোমা বিস্ফোরণে ১০ খনিশ্রমিক নিহত হন।
একই জেলার আরেক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সেলিম তারিন এএফপিকে বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজের জায়গা থেকে বাজারে কেনাকাটার জন্য যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তাদের গাড়িটি আক্রমণের শিকার হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ছিল একটি আইইডি বিস্ফোরণ।আমরা হামলার তদন্ত করছি।’
হারনাই দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জেলা।
কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে বেলুচ লিবারেশন আর্মি প্রায়ই অন্যান্য প্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বা পাকিস্তানিদের, বিশেষ করে বেলুচিস্তানের পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক হামলার দাবি করে।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সেনাবাহিনীর আলাদা তিন অভিযানে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী প্রদেশের লাক্কি মারওয়াত, কারাক ও খাইবার জেলায় অভিযান চালায়।
এতে আরও বিবৃতিতে বলা হয়, লাক্কি মারওয়াতে অভিযানে ১৮ সন্ত্রাসী নিহত ও ছয়জন আহত হন। কারাক জেলায় আরও ৮ সন্ত্রাসী নিহত হন।
সেনাবাহিনী আরও বলেছে, তাদের তৃতীয় অভিযানটিতে গোষ্ঠীটির নেতাসহ ৪ সন্ত্রাসী নিহত ও দুজন আহত হন।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
এলাকায় অন্য সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নির্মূল করতে একটি ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালানো হচ্ছে।
সেনাবাহিনী বলেছে, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিপদ নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
আরও পড়ুন:ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে।
তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
পুলিশ জানায়, একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহকর্মীর কাজ করতেন ওই নারী। বৃহস্পতিবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
বাহিনীটি আরও জানায়, শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা একটি নির্জন এলাকায় নারীর মৃতদেহ দেখতে পান। তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেন।
কর্ণাটক থেকে পিটিআই শনিবার এ খবর জানায়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রাণ হারানো নারী বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি ছয় বছর ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন।
তার কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তবে তার স্বামীর বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে এবং তিনি মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।
ওই নারী বৃহস্পতিবার তার সহকর্মীকে বলেছিলেন, তার কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে এবং দেরি হতে পারে। তাই সহকর্মীকে বলেন তাকে ছাড়াই চলে যেতে। তবে বাড়ি ফিরতে নারীর দেরি হলে তার স্বামী রামমূর্তি নগর থানায় অভিযোগ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী স্বেচ্ছায় কোনো নির্জন জায়গায় গিয়েছিলেন পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার মাথায় গুরুতর জখমের চিহ্ন ছিল।
তথ্য পাওয়ার পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পূর্ব বিভাগ পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) দেবরাজ।
আরও পড়ুন:ভারতের মধ্যাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১২ মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।
নয়াদিল্লি মাওবাদীদের দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা দমনে পদক্ষেপ জোরদার করেছে। শুক্রবার পুলিশ এই খবর জানায়।
কয়েক দশকের মাওবাদী সহিংসতায় ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হন।
বিদ্রোহীদের দাবি, তারা প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সহিংসতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছত্রিশগড়ের বিজাপুর জেলার বন-জঙ্গলে বৃহস্পতিবার এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পি. এএফপিকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১২ মাওবাদী নিহত হয়েছে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই শতাধিক মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সরকার আশা করছে ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্রোহীদের দমন করা সম্ভব হবে।
বিদ্রোহীরা গত কয়েক বছরে সরকারি সেনাদের টার্গেট করে বেশ কিছু প্রাণঘাতী হামলা চালায়।
চলতি মাসের গোডার দিকে রাস্তায় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ৯ ভারতীয় সেনা নিহত হন।
আরও পড়ুন:ভারতের মুম্বাইয়ে নিজ বাসায় অনুপ্রবেশকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সাইফ আলী খান।
স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রাত আড়াইটায় একজন অনুপ্রবেশকারী বাসায় ঢুকে সাইফ আলীকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করে। বর্তমানে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার চলছে।
হাসপাতালকর্মীরা বলছেন, সাইফ আলী খান এখন বিপদমুক্ত। রাতে তার নিউরো সার্জারি করা হয়েছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি চলছে।
এ ঘটনায় বান্দ্রা থানায় একটি এজাহার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, সাইফ আলী যখন বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন একজন অনুপ্রবেশকারী চুপিসারে তার বাসায় ঢোকেন। এ সময়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সাইফের হাতাহাতি হয়।
এরপর সাইফ আলী খানকে ছয়বারের বেশি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান অনুপ্রবেশকারী।
এক বিবৃতিতে লীলাবতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয়টি আঘাতের মধ্যে দুটি তার মেরুদণ্ডের কাছে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
এরই মধ্যে তার বাসার তিন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত করছে মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
এক বিবৃতিতে সাংবাদিক ও ভক্তদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে সাইফ আলী খান টিম।
এতে বলা হয়, ‘এটি এখন পুলিশের কাজ। আমরা আপনাদের হালানাগাদ তথ্য জানিয়ে দেব।’
কারিনা কাপুর খান টিমও একই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো আছেন।’
আরও পড়ুন:নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই শনিবার বলেছেন, তিনি তার জন্মভূমি পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে ‘অভিভূত’ ও ‘আনন্দিত’।
ইসলামি বিশ্বে নারী শিক্ষাবিষয়ক বিশ্বব্যাপী এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।
ইসলামাবাদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ২০১২ সালে স্কুলছাত্রী মালালাকে পাকিস্তানি তালেবানরা গুলি করে এবং এরপর তিনি বিদেশে চলে যান। বিদেশে যাওয়ার পর মাত্র কয়েকবার তিনি দেশে আসেন।
রাজধানী ইসলামাবাদে সম্মেলনে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে আমি সত্যিই সম্মানিত, অভিভূত ও আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দুই দিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন শনিবার সকালে। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একত্রিত হবেন।
স্থানীয় সময় রোববার ইউসুফজাইয়ের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এক্সে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমি সকল মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকার রক্ষার বিষয়ে কথা বলব। আফগান নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য কেন তালেবান নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে, সে ব্যাপারেও বলব।'
দেশটির শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্দিকী এএফপিকে জানান, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তালেবান ইসলামাবাদের এ আমন্ত্রণে কোনো সাড়া দেয়নি।
আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে কঠোরভাবে ইসলামী আইন আরোপ করেছে। জাতিসংঘ একে ‘লিঙ্গ বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তান তীব্র শিক্ষা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। দেশটিতে দুই কোটি ৬০ লাখের বেশি শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে। তাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যের কারণে স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রত্যন্ত সোয়াত উপত্যকার একটি স্কুল বাসে ২০১২ সালে পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের হামলার পর ইউসুফজাই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।
পরবর্তী সময়ে তিনি নারী শিক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য