পাকিস্তানের গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে একটি সেতু ধসে হ্রদের পানিতে ভেসে গেছে।
কারাকোরাম হাইওয়ের হাসনাবাদ সেতুটি শনিবার বন্যার পানির তোড়ে ধসে যায়। সেতু ধসে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় হাজারো মানুষের সঙ্গে অনেক পর্যটক আটকা পড়ে যান।
হুসেনাবাদ জেলার একটি গলিত হিমবাহ থেকে আকস্মিক বন্যার কারণে কারাকোরাম মহাসড়কের সেতুটি ধসে যায়।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র দাবদাহে পাকিস্তানের হিমশৈলগুলোর বরফ দ্রুত গলতে থাকায় প্রায় আকষ্মিক বন্যা দেখা দিচ্ছে। তেমনই এক বন্যায় পানির তোড়ে সেতুটি ধসে যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বন্যার পানির প্রবল স্রোত সেতুর কংক্রিটের পিলারে আছড়ে পড়ছে। এক পর্যায়ে সেতুটি ধসে যায়।
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে হিমালয়, হিন্দুকুশ ও কারকোরাম পর্বতশ্রেণীর হিমবাহগুলো সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহের কারণে দ্রুত গলছে। যার ফলে হাসনাবাদে উত্তর পাকিস্তানে হাজার হাজার হিমবাহী হ্রদ তৈরি হয়েছে।
আসিরি ম্যাগপাই নামের একটি দোয়েলের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এটি সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিম পাহাড়ে থাকে। এই প্রজাতি করভিডে পরিবারের সদস্য।
তায়েফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শোব্রাক বলেছেন, ‘এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে। কেউ যদি এটিকে সংরক্ষণ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
শোব্রাক আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ায় পরিযায়ী পাখির সংরক্ষণ সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক বিষয়ক কমিটির সদস্য।
বিলুপ্তপ্রায় দোয়েলটির বৈজ্ঞানিক নাম পিকা এ্যসিরেনসিস। ২০০৩ সালে প্রকাশিত পাখিদের জিনের উপর একটি গবেষণার মাধ্যমে এটিকে আলাদা প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, ম্যাগপাই অন্যান্য পাখির প্রজাতি থেকে আলাদা এবং বিশ্বের কোথাও এটিকে পাওয়া যাবে না।
শোব্রাক বলেছেন, ‘স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চিহ্নিত করা পাখিটি উঁচু অঞ্চলে বাস করে। এটি অন্য পাখিদের মত শীতকালে জায়গা বদলায় না।’
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওয়াইল্ডলাইফের সাথে সৌদি আরামকোর স্পনসর করা এটিই সর্বশেষ গবেষণা। এর বসবাসের জন্য পরিবেশের ৮০ শতাংশই অনুপযুক্ত হয়ে গেছে এবং ২০ শতাংশ বাকি রয়েছে।
দোয়েলটির সংখ্যা এভাবে কমে যাওয়াই এটিকে বিশ্বের বিরল পাখিদের কাতারে ফেলেছে।
শোব্রাক বলেন, ‘সংখ্যা কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ, যেমন- শহরের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাখির বাসস্থানের ওপর এর প্রভাব, গাছের মৃত্যু। এসবই এই পাখির বেঁচে থাকার ওপর প্রভাব ফেলে।’
শোব্রাক আরও বলেন, ‘অন্য সব পাখির মতোই আসিরি ম্যাগপাইয়ের প্রজনন এবং পুষ্টি গ্রহণ করে বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী পরিবেশের প্রয়োজন। পাখিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে হবে।’
তিনি জানান, এটি একমাত্র সৌদি পাখি; যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না।’
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের সম্ভাব্য রায়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছেন হাজারও নারী।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং শিকাগো শহরসহ কমপক্ষে ৩৮০টি স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন হাজারও নারী।
১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের ‘রো বনাম ওয়েড’ নামের ঐতিহাসিক রায়ে আমেরিকান নারীদের গর্ভপাতে বৈধতা দেয়া হয়। সেই সঙ্গে গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয় এই রায়ে।
সমাবেশে গর্ভপাতের পক্ষে অধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, ডানপন্থি বিচারকদের প্রাধান্য থাকা উচ্চ আদালতের এখতিয়ার নেই নারীর গর্ভপাতের অধিকার হরণ করার।
স্থানীয় সময় শনিবার গর্ভপাতের অধিকার দাবিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে ওয়াশিংটন মনুমেন্টের সামনে। এরপর তারা সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করতে এগিয়ে যান। তবে পুলিশি বাধায় থেমে যায় তাদের পদযাত্রা।
উইমেন্স মার্চ-এর প্রধান নির্বাহী রাচেল কারমোনা বলেন, ‘নিজের শরীরের ওপর অধিকার আদায়ের এই সংগ্রাম তারা সাদরে গ্রহণ করেছেন। অধিকার রক্ষার এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবেন।’
এই বিক্ষোভ-সমাবেশ আয়োজনে আরও ছিল প্লানড পেরেন্টহুড, আল্ট্রাভায়োলেট ও মুভঅনসহ বিভিন্ন অধিকারবিষয়ক সংগঠন।
এ সময় ড্রাম বাজিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে তারা উত্তাল করে তোলেন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। তাদের স্লোগানের অন্যতম ছিল, ‘আমার শরীর, আমার পছন্দ।’ ব্যানারগুলোতে লেখা ছিল প্রতিবাদী নানা স্লোগান- ‘নিজের জরায়ুর প্রতি মনোযোগ দিন’, ‘গর্ভপাত ব্যক্তিগত পছন্দ, আইনি বিতর্ক নয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘নারীর শরীরের ওপর চাপিয়ে দেয়া যেকোনো ধরনের শর্ত ও আঘাতকে হটিয়ে দিতে চাই আমরা। আমরা চাই নারীর শরীর হবে সব ধরনের নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে। আমরা চাই এই ডেমোক্রেটিক সরকার আমাদের অধিকার আদায়ের পক্ষে থাকবে।’
গর্ভপাতের অধিকার বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট যদি মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের আদালতের দেয়া পর্যবেক্ষণের প্রতি মিল রেখে রায় দেয়, তবে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য-পশ্চিমের অন্তত ২৬ রাজ্যে নিষিদ্ধ হবে গর্ভপাত।
তখন নারীদের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত করাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে মুনাফালোভী চিকিৎসকের দারস্থ হতে হবে। এতে করে যেমন ওই নারী শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি গর্ভপাত করানোর অভিযোগে চিকিৎসক ও সেবিকারাও বিচারের আওতায় চলে আসবেন।
এর আগে, গত বছর ২ অক্টোবর, গর্ভপাতের ওপর বিধিনিষেধ বাড়ানোর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন হাজারও নারী।
স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গর্ভপাতের অধিকারের দাবিতে ৬৬০টি বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের বিক্ষোভটি ছিল অন্যতম।
নারীদের এই বিক্ষোভ শুরু সম্প্রতি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাতবিষয়ক পাস হওয়া একটি আইন ঘিরে। এই আইনে কারও গর্ভধারণের সময় ছয় সপ্তাহের মতো হয়ে গেলে তাদের গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়।
পরের মাস থেকে কার্যকর হয় এই আইন। এটি যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতবিষয়ক সবচেয়ে কঠিন আইন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভটি ছিল বিশাল। সুপ্রিম কোর্টের আশপাশের সড়কগুলো ছিল পূর্ণ। গর্ভপাতবিরোধী আইনের সমালোচনামূলক বিভিন্ন ব্যানার ছিল নারীদের হাতে।
অনেককে পরতে দেখা যায় ‘১৯৭৩’ লেখা টি-শার্ট, যা মনে করিয়ে দেয় ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের ‘রো বনাম ওয়েড’ নামের ঐতিহাসিক রায়ের বিষয়টি। যাতে আমেরিকান নারীদের গর্ভপাতে বৈধতা দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন:সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার দেশটির রাজধানী আবুধাবির আল বাতিন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয় বলে জানিয়েছে খালিজ টাইমস।
এর আগে আবুধাবির শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আবুধাবির প্রথম মসজিদে জায়েদ খলিফা বিন জায়েদের জানাজায় অংশ নেন। এ সময় তারা প্রয়াত প্রেসিডেন্টের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
এ ছাড়া মাগরিবের নামাজের পর দেশজুড়ে মসজিদে মসজিদে প্রেসিডেন্টের জন্য দোয়া করা হয়।
শুক্রবার ৭৩ বছর বয়সে মারা গেছেন আবুধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে ৪০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় পতাকা রাখা হবে অর্ধনমিত। মন্ত্রণালয়সহ সব ধরনের অফিস বন্ধ থাকবে তিন দিন।
১৯৪৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জায়েদ আল নাহিয়ান। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। ২০০৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি আবুধাবির শাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আমিরাতের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পৃথক দুই শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তারা তার পরিবার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আরও পড়ুন:চীনের বিমানবন্দরে তিব্বত এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়নের সময়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে পরে। মুহূর্তে আগুন ধরে যায় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটিতে। তবে সব যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর চংকিং থেকে ৯ ক্রু ও ১১৩ যাত্রী নিয়ে তিব্বতের নিংচি শহরের দিকে যাত্রা শুরুর সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এয়ারলাইনসটি বিবৃতিতে জানায়, চংকিং জিয়াংবেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় পাইলট উড়োজাহাজটিতে ‘অস্বাভাবিকতা’ বুঝতে পেরে উড্ডয়ন থামিয়ে দেন। দ্রুতগতিতে জেটটি রানওয়ে অতিক্রম করে এবং এতে আগুন ধরে যায়।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের ছবিগুলোতে দেখা গেছে, আতঙ্কিত যাত্রীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেটের ডানায় আগুন ধরে যায়।
তিব্বত এয়ারলাইনস বিবৃতিতে জানিয়েছে, সব যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আহত যাত্রীরা সবাই সামান্য আঘাত পেয়েছেন। চিকিৎসার জন্য তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চংকিং জিয়াংবেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আলাদা বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফ্লাইট টিভি-৯৮৩৩ উড্ডয়নের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। উড়োজাহাজটির সম্মুখভাগের (নোজের) বাম পাশে আগুন ধরে যায়।
সামান্য আহত কমপক্ষে ৪০ যাত্রীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, যোগ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর চংকিং বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। ‘দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে,’ জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছর মার্চ মাসে কুনমিং থেকে গুয়াংজু যাওয়ার পথে চীনের একটি উড়োজাহাজ ২৯ হাজার ফুট ওপর থেকে পাহাড়ে আছড়ে পরে। এতে সেই ফ্লাইটে থাকা ১৩২ যাত্রী ও ক্রুসহ সবাই নিহত হন।
প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে চীনের সবচেয়ে ভয়াবহ এই বিধ্বস্তের কারণ এখনও জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:এখন থেকে চাইলেই কোনো সরকারি কর্মকর্তা বিদেশে যেতে পারবেন না। বিশেষ প্রয়োজন হলেই কেবল সরকার তাদেরকে এই অনুমতি দেবে।
নানা প্রকল্পে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনে বিদেশ সফরের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বেড়ে গেছে বলে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে অনুমতি দেয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারি কর্মকর্তাদের এখন থেকে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে না। তবে বিশেষ কোনো প্রয়োজন হলে অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশ যেতে পারবেন।’
এখন যারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদেরকে আগেই অনুমতি দেয়া হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নতুন করে কাউকে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।’
কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'সময়ে সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কঠিন সিদ্ধান্তে নিতে হয়। আমরা এতদিন যেভাবে চলছিলাম, সারা বিশ্বের যে অবস্থা, তাতে লাগাম টেনে ধরতে হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বের যে সামগ্রিক অবস্থা, তা বিবেচনায় নিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’
সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আগের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হওয়ায় দেশে রিজার্ভে টান পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিলাসদ্রব্যের আমদানি কমাতে চাইছে সরকার।
চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার নিয়েও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। যারা এই হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে দ্বিমত করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হিসাব নিরূপণে পদ্ধতির পরিবর্তন করিনি। আগে নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। কাজেই, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপির যে হিসাব করেছে তা সঠিক বলে আমি মনে করি।
‘আন্তর্জাতিক মহলে যারা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জিডিপি হিসাব নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি। কাজেই আমাদের হিসাব সঠিক।’
মঙ্গলবার বিবিএসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে এই তথ্য নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা দ্বিমত প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে তিনি বসতে চান। বলেন, ‘
তাদের পরামর্শ শুনব। আমরা সবাই এ দেশের মানুষ।’
ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বাণিজ্য ঘাটতি ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতি ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
আর এর ফলে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবারও যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেই এখন এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে।
ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে সাড়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে; ৯২ টাকা থেকে সাড়ে ৯২ টাকায়। খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৩ টাকায়।
মহামারি করোনার প্রভাব আপাতত নেই। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ চাপ সামলাতে নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার।
এসব পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ ও কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
সরকারি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে এই দুটি বিষয়ে খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যে আমদানি ব্যয় কমাতে বিলাস পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ১১ এপ্রিল জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন রাখার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার সে নির্দেশনায় পরিবর্তন এনে সব ধরনের গাড়ি, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আমদানির এলসি খুলতে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মার্জিন রাখতে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি ১ কোটি টাকার একটি গাড়ি আমদানি করতে চাইলে তাকে ৭৫ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে। বাকি ২৫ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ দিয়ে এলসি খুলবে।
সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে অর্থনীতির চাকা সচল হওয়ার পর বাংলাদেশের রপ্তানি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ বিলাস পণ্যের আমদানি।
রপ্তানির চেয়ে আমদানি ব্যয় অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। এতে চাপ পড়ছে রিজার্ভে। আর ডলার সংকটে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই মুদ্রার দাম যাচ্ছে বেড়ে। এতে আবার খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দেশে আনার ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির একটি কারণ।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির একটি কারণ বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬ হাজার ১৫২ কোটি ৪০ লাখ (৬১.৫২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।
তবে রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি আয়ের দশ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি। এই দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা আমদানিতে লাগামের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এই যুদ্ধ কবে থামবে আমরা কেউ জানিনা। সেজন্য খরচের লাগাম টেনে ধরতে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
‘বিলাস পণ্য আমদানি উৎসাহিত করা হয়েছে। অবশ্য এটা কিছু সময়ের জন্য। এছাড়া যেসব প্রকল্পে এখন অর্থায়ন না করে ৬ মাস পর করলে চলবে- এমন প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তবে এসব প্রকল্পে অর্থায়নের সময় পিছিয়ে দেয়ার কারণে অর্থনীতিতে কোন ক্ষতি হবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক কর্মকর্তা বিদেশ যেতে পারেনি। তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এজন্য এ খাতে কিছুটা ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নতুন করে আর অনুমতি দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন করে সরকারি খরচের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২.২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।
ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ধর্মকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহারের প্রক্রিয়া অব্যাহত। আর এই প্রক্রিয়ায় দুশ’ বছরের ব্রিটিশ দাসত্ব ধামাচাপা দিয়ে ‘মুসলিম দাসত্বের’ প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে।
বিজেপির দিল্লি প্রদেশ কমিটি দাবি করেছে, জাতীয় রাজধানীর সড়কগুলোর নাম ‘মুসলিম দাসত্বের প্রতীক’। তাই এসব নাম বদলানো উচিত। এর মধ্যে রয়েছে তুঘলক রোড, আকবর রোড, আওরঙ্গজেব লেন, হুমায়ুন রোড ও শাহজাহান রোডের নাম।
দিল্লি বিজেপির সভাপতি আদেশ গুপ্ত নয়াদিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনকে চিঠি লিখে তুঘলক রোডের নাম পরিবর্তন করে গুরু গোবিন্দ সিং মার্গ, আকবর রোডকে মহারানা প্রতাপ রোড, আওরঙ্গজেব লেনকে আবদুল কালাম লেন, হুমায়ুন রোডকে মহর্ষি বাল্মিকি রোড এবং শাহজাহান রোডকে প্রয়াত জেনারেল বিপিন রাওয়াতের নামে করার পরামর্শ দিয়েছেন। আদেশ গুপ্ত আরও বলেছেন, বাবর লেনের নামকরণ করা হোক স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসুর নামে।
এদিকে ইউনাইটেড হিন্দু ফ্রন্ট ও জাতীয়তাবাদী শিবসেনার সদস্যরা মঙ্গলবার কুতুব মিনার কমপ্লেক্সের বাইরে হনুমান চালিসা পাঠ করেন এবং এখানে আইকনিক স্মৃতিস্তম্ভের নাম পরিবর্তন করে ‘বিষ্ণু স্তম্ভ’ করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ৩০ জনের বেশি আন্দোলনকারীকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ইউনাইটেড হিন্দু ফ্রন্টের আন্তর্জাতিক কার্যনির্বাহী সভাপতি ভগবান গোয়েল দাবি করেছেন, “কুতুব মিনার একটি ‘বিষ্ণু স্তম্ভ’ ছিল, যা ‘মহান রাজা বিক্রমাদিত্য’ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু পরে কুতুবউদ্দিন আইবেক এর কৃতিত্ব নিয়েছিলেন। কমপ্লেক্সে ২৭টি মন্দির ছিল যা আইবেক দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল। এসবের প্রমাণ পাওয়া যায়। কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে এখনও হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি দেখা যায়।”
বিক্ষোভকারীরা কুতুব মিনারের নাম পরিবর্তন করে বিষ্ণু স্তম্ভ করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘মসজিদের ভেতরে গণেশের মূর্তিগুলো সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করছে।’
এই নেতারা সম্প্রতি দাবি করেছিলেন যে ২৭টি হিন্দু-জৈন মন্দির ভেঙে প্রাপ্ত সামগ্রী থেকে মিনারটি তৈরি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য